এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ধোয়া তুলসীপাতা

    Debashis Payin লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৫ অক্টোবর ২০১৩ | ২৩৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debashis Payin | ২৫ অক্টোবর ২০১৩ ১৫:৫৮620467
  • ডি : এই লেখাটি কোনভাবেই আমার জীবন-আলেখ্য নয়। জীবনের পথে চলতে চলতে একটি কিশোরের মনস্তাত্ত্বিক এবং অবচেতন খাগের কলম।
  • Debashis Payin | ২৫ অক্টোবর ২০১৩ ১৬:০১620468
  • ধোয়া তূলসীপাতা- ১।
    =================
    আমার প্রথম ক্রাশ ক্লাস ওয়ানে। নাম বলবনা, প্রাইভেসী এবং কনফিডেনশিয়ালিটির জন্য।
    ড্রিল পিরিয়ড। মানে, খেলার কেলাস। তা, আমিও খেলা করতাম। অল্প একটু পরেই, ক্লান্ত হওয়ার ভান করে দিদিমনির পাশে এসে দাঁড়াতাম, বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।
    সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে টলটলে দিঘীর মত আয়তচক্ষু, তেনার তাই ছিল। সেই সাথে লাল ব্লাউজ, লাল পাড় দেওয়া ক্রিমিশ-হোয়াইট শাড়ী। একটূ বেশীক্ষণ বিশ্রাম নিলেই তিনি বলতেন, অ্যাই দেবাশিস, বাকীদের সাথে খেল গিয়ে। যাও বলছি।
    আমার তখন যাওয়া! অলরেডি চলে গেছি! কোথায়, কে জানে?
    ********
    যাকগে! আমার দ্বিতীয় ক্রাশ হল গিয়ে ক্লাস ফাইভে। তখন ডিসেম্বরে অ্যানুয়াল পরীক্ষা হত। তাপ্পর লম্বা ছুটি। সেই ছুটিই গরম রুটি হয়ে আময় সেঁকে দিল। দ্বিতীয়বার!
    এক আত্মীয়বাড়ী গেছিলাম। একই বাড়ীতে ভাড়ায় থাকত একটি খুকুমনি। তিনি তখন ক্লাস থ্রী তে পড়েন।ফুল-ফুলওয়ালা ফ্রক পরে, দুইদিকে দুটি বিনুনী করে, তিনি আমায় বললেন, দেবা'দা, চল খেলতে যাই। আমি তেনাকে দেখেই ল্যাফস খেয়ে গেলাম। অর্থাৎ, Love At First Sight। সংক্ষেপে ল্যাফ্স!
    তাই, জাস্ট ধোয়া তূলসীপাতা হয়ে খেলতে চলে গেলাম !

    ক্রমশঃ

    ==================================
    ধোয়া তূলসীপাতা- ২।
    =================
    খুব ভোরে উঠে পড়তাম সপ্তমীর দিন। যদিও স্কুল খুললেই অ্যানুয়াল পরীক্ষা। জানি, মায়ের রক্তচক্ষু নেই। বাপীর স্নেহমেশানো শাসন নেই। পড়তে বসতে হবেনা। সেই খুশীতেই পাগল পাগল। পেঁজাতুলোর মত মেঘ নাই বা থাকুক। আসেপাশে শিউলী না থাকুক। তবু অনেক কিছু ছিল।
    মায়ের ইচ্ছে, দূর্গাপূজোর সময় প্রত্যেকদিন সবক'টা ঘর ধুয়ে মুছে তকতকে করা। লেগে পড়তাম সবাই মিলে। সপ্তমীর দিন থেকেই শুরু হত । খুশীমেশানো একটা যুদ্ধ শুরু হত আমদের মধ্যে। হাসিখুশী। টুকটাক খুনসুটি। এরই মধ্যে বেজে যেত বেলা দশটা। স্নান। নতূন জামাপ্যান্ট পরা। বাড়ীর পাশেই ছিল তেঁতুলতলা দূর্গামন্দির। মন চাইত ছুটে যেতে সেখানে। মায়ের নকল শাসনমেশানো বকুনি অগ্রাহ্য করে অলমোস্ট ঊড়ে যেতাম সেখানে। দেখতে পাব আমার প্রথম প্রেম। আগে খানদুই ক্রাশ হয়েছে। তবে, ঐ বয়সে ভাললাগা বলতে যা বুঝতাম, সেটা বোধহয় এই প্রথম।
    কতই বা বয়স। হয়ত ক্লাস সেভেন কি এইট। বয়ঃসন্ধির প্রথম কাউকে ভাললাগা। অনেক পরে রক্তকরবী পড়ে বুঝতে পারলাম, যাকে চিনিনা, যাকে জানিনা, তাকেই ভালবাসতে ভাল লাগে।
    আমাদের পাড়াতেই থাকতেন তিনি। কিন্তু জানিনা কেন, পূজোর ক'টাদিন ছাড়া গোটাবছর তেমনভাবে দেখতেই পেতামনা। দূর্গামন্দিরে গিয়ে দেখতাম সেও এসেছে। নিমেষে আমি হয়ে যেতাম প্রজাপতি। খুব ইচ্ছে করত ভ্রমর হয়ে গুণগুণ করে বেড়াই ওর চারপাশে।
    কেটে যেত ৩টে দিন। দশমীর সকাল থেকেই মনখারাপ। বিকেল হতেই অদ্ভূত একটা খারাপ লাগা। ঠাকুর বিসর্জন। আমার কচি মনের মাখন হৃদয়ের একাকিত্ব।
    একবছর ডাকাবুকো হয়ে ওঠার চেষ্টা করলাম। বড়ীটা চিনতাম। বিজয়ার পরের দিন সোজা চলে গেলাম ওর বাড়ী। তিনিই দরজা খুললেন। দরজা খুলতেই একটাই কথা মনে হল। বিসর্জন হয়নি।
    তিনি ভেতরে ডাকলেন। আমি গেলাম দুরুদুরু বুকে। তেনার মা হাসিমুখে গপ্প শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পরে প্লেটে এল কুচো নিমকি, গজা এবং নারকেলনাড়ু। আজও ভুলিনি সেই অনুভূতির কথা। সামনে আমার প্রতিমা। আমি বসে আছি প্রসাদ নিয়ে। আমি উদাস। জানালা দিয়ে ভেসে আসছে, একটু দূরে রফিসাহেব গাইছেন রেডিওতে।
    বাহারোঁ ফুল বর্শাও
    মেরা মেহেবুব আয়া হ্যায়।
    **************
    গল্পটা আরো কিছুটা এগিয়েছিল।
    পরের দিন তেনার দেখা নেই। তার পরের দিনও না। আমি তখন প্রাণপণে কবিতা লেখার চেষ্টা করছি। পড়ার বইয়ের ফাঁকে ফাঁকে বাংলা হোমটাস্কের খাতায়। একটাই ভরসা। যদি মা দেখেও ফেলে, নিজেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কবি হিসেবে অজুহাত দিতে পারব। এদিকে একটাও কবিতা হচ্ছেনা। মানে মানসপ্রতিমাকে উৎসর্গ করা মত নৈবেদ্য সাজাতেই পারছিনা। খুব অসহায় অবস্থা।
    দিন কেটে গেল এমনি করেই। স্কুল খোলার সময় হয়ে এল। একটা কবিতা যেমন তেমন করে দাঁড় করিয়ে ফেলেছি। মনে ভয়ংকর উত্তেজনা। অলমোস্ট জপ করে দিন কাটছে। ঐ পুচকি বয়সে যত দেবদেবীর নাম জানতাম, সব্বাইর নাম নিয়ে ফেলেছি!
    সেইসময় আমার প্রিয় কমিক্স চরিত্র ছিল ম্যান্ড্রেক, বাহাদুর আর বেলা। দিনরাত ঐসব গাঁজাখুরি গপ্প পড়তাম আর নিজেকে তাদের যায়্গায় বসিয়ে অনেক অসম্ভব কল্পনা করতাম। হায়রে অবুঝ কৈশোর!
    স্কুল খুলল। আমি অতি সন্তর্পণে বইয়ের মলাটের ভেতর লুকিয়ে রাখা আমার প্রথম প্রেমপত্র বের করে স্কুলব্যাগের এককোণে লুকিয়ে রাখলাম। মায়ের পার্ফিউমের শিশি থেকে কয়েকফোঁটা স্প্রে দিতে ভুলিনি। স্নান করে বহু কষ্ট করে নিজের চুলখানি এদিক ওদিক করে
    ম্যান্ড্রেকের লুক দিতে চাইলাম। হলনা। দুত্তোর বলে বাহাদুরের লুক দিলাম। মনে ক্ষীণ আশা, বেলা হয়ত আমার দিকে চেয়ে দেখবে।
    আধ ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকলাম রাস্তায়। কিন্তু কোথায় কি? বেলা আর এলনা। ভারক্রান্ত কিশোর স্কুলে গেল। ছুটির পর বাড়ী এল। পরদিন আবার একই রুটিন। পরদিনও তাই। দেখা আর পেলামনা। গুমরে কাঁদে অবুঝ কিশোরমন।
    অবশেষে এল সেই ভয়ঙ্কর শনিবার। হাফবেলা স্কুল হয়েই ছুটি। দুপুরে বাড়ী এসে কোনরকমে দুপুরটা কাটিয়ে বিকেলে গেলাম দূর্গামন্দিরে। তিনি নেই। একটা বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম। মর্মান্তিক একটা উত্তর এল। তেনার বাবার নাকি বদলীর চাকরী। তেনার নাকি সপরিবারে অন্য শহরে চলে গেছেন।
    ভাঙ্গা মন নিয়ে বাড়ী এসে হাত-পা ধুয়ে বই নিয়ে বসলাম।হয়ত মনের ভুল । তবে, অদ্ভূতভাবে মনে হল, রফিসাহেব আজ আর নয়। মুকেশ গাইছেন। অন্য গান।

    কাল খেল মে, হাম হো না হো,
    গর্দিশ মে তারে, রহেঙ্গে সদা,
    ভুলেঙ্গে হাম, ভুলোগে তুম,
    পর হাম তুমহারে রহেঙ্গে সদা...

    =========================
    ধোয়া তূলসীপাতা- ৩
    =================

    ধপাস করে পড়ে গেলাম! সাইকেলের বাঁ প্যাডেলে জাস্ট পা টা দিয়ে উঠতে যাব। ঐসময় দুর্ঘটনাটা ঘটে গেল।
    আমাদের পাড়ায় থাকত এক হাফ মস্তান। কচি জুনিয়র টাইপ। ক্লাস টু-থ্রীতে পড়ত হয়ত। মফস্বল শহরে, যতরকম খেলাধূলো হতে পারে, সবেতেই সে ব্যাটা আমাদের সাথে থাকত। মার্বেল, ডান্ডা-গুলি, লুকোচুরি। ইয়ার্কি-হাসি-ঠাট্টা-ধাঁধার আসর, অঙ্কের মজার মজার প্রবলেম। যাই খেলা হোক, তিনি আছেন। ব্যাপক জমে যেত। বয়সে ছোট্টটি ছিল বলেই হয়ত, একটু বেশীই স্নেহ করতাম আমরা। মানে গুরুজনেরা।
    তা, আগের দিন ঐরকমই একটা হুড়োহুড়ির বিকেল কাটিয়ে, বাড়ী ফিরে এলাম। পড়তে বসলাম। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম, পড়ায় মন নেই। মন কেন জানি দুমদাম করে উদাস হয়ে যেতে শুরু করল। মনে হল, কেউ যেন অনেক দূর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আমি অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। পারছিনা। ওদিকে সদ্য সদ্য তখন সেই ব্যাপারটা শিখেছি। এক্টু ফাঁকা যায়গা পেলেই হল। ব্যস। চেষ্টা করতাম শহীদ হয়ে যেতে। মানসিক যন্ত্রণা একসময় সহ্য করতে না পেরে, শহীদ হয়ে গেলাম। অনেকটা রিল্যাক্সড হয়ে, পরের দিনের হোমটাস্ক করতে বসলাম।
    পরের দিন ঘুম থেকে উঠেও সেই একই অবস্থা। কোথাও যেন, কিছু একটা ছন্দ কেটে যাচ্ছে। যতই পাত্তা না দেওয়ার চেষ্টা করি, পারা যাচ্ছেনা। যাই হোক। স্নান-টান করে খেতে বসলাম। আমার প্রিয়া রান্নাগুলো সেদিন সাজান। গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত। আলুপোস্ত, পটলভাজা, সজনেশাকভাজা, ডিমের ঝোল, পুদিনার চাটনি। অথচ খেতে পারছিনা।
    মা বলে, কি রে, খিদে নেই কেন?
    আমি পারলামনা ঠিক করে উত্তর দিতে।
    কোনরকমে মুখে দুটো খাবার গুঁজে, উঠে পড়লাম।
    স্কুল যাওয়ার জন্য রেডি। সাইকেলটা বের করলাম বারান্দ থেকে। মাত্র ২০ মিটার দূরে বড় রাস্তা। রোজই এইটুকু পথ সাইকেলটা হাঁটিয়ে নিয়ে গিয়ে, মেনরোডে সাইকেলে চাপি। সেদিন ঐটুকু পথই মনে হছিল আলোকবর্ষ।
    এবার পৌঁছলাম মেনরোডে। সাইকেলের বাঁ প্যাডেলে জাস্ট পা টা দিয়ে উঠতে যাব। সামনে দেখি, উজ্জ্বল কাঁচাহলুদ রঙের চুড়িদার। অফ-হোয়াইট ওড়না। কপালে এসে পড়েছে হাওয়ায় অবাধ্য চুল। আবার ল্যাফস খেলাম! এবং, ঐসময় দুর্ঘটনাটা ঘটে গেল। বাঁ পা টা প্যাডেল থেকে পড়ে গেল। আমিও ধপাস। লিটার‌্যালি। খিলখিল হাসি। আমি অসহায়।
    সেদিন স্কুলে আর মন বসে? স্কুল শেষ হতেই শাঁই শাঁই করে সাইকেল চালিয়ে, ধাঁই ধাঁই করে স্কুলের ব্যাগ ছুঁড়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
    বেশী অপেক্ষা করতে হলনা। জেনে গেলাম, উনি আমাদের গ্রুপে খেলতে আসা সেই হাফ মস্তানের দিদি! আগেও এসেছে এই পাড়ায়। হয়ত আগে দেখেওছি। কিন্তু, ধপাস যে হবে, সেটা বুঝিনি।
    সেদিনই বুঝলাম, বয়সের সাথে সাথে দেখার চোখও পাল্টে যায়। এটাও বুঝলাম, টেলিপ্যাথি, ক্লেয়ারভয়েন্স... এগুলো নির্দ্বিধায় কোনদিনই আমরা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারবনা।

    =============================================
    ধোয়া তূলসীপাতা- ৪
    =================

    একদিন স্কুলে এসে শুনি, আমার এক বন্ধু দার্জিলিঙ-শিলিগুড়ি বেড়াতে যাবে। আমি তখন ক্লাস এইট। মফস্বল শহরের তৎকালীন হাই-এন্ড আলোচনা থেকে জেনে গেছি, নর্থবেঙ্গলে ঐসব অনেককিছু পাওয়া যায়। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ছেঁকে ধরলাম ব্যাটাকে। আমাদের জন্য ঐসব জিনিস এনে দিতে হবে। বদলে, একটা পার্টি হবে নাহয়। সেই বন্ধু রাজী।
    উত্তেজনারও একটা লিমিট আছে। অনন্ত কাল ধরে তাকে বসিয়ে রাখলে কনস্টিপেশন হতে বাধ্য। আমাদেরও তাই হতে শুরু করল। ওদিকে ঐ ছেলেটি দার্জিলিঙ-শিলিগুড়িতে মস্তি করছে। আর আমরা দিনের পর দিন ভুগে চলেছি মানসিক কনস্টিপেশনে।
    অপেক্ষার অবসান হল হঠাৎ করে।
    একদিন কয়েকজন মিলে বিকেলে সাইকেলে অন্য পাড়ায় বেড়াতে গেছি। হঠাৎ দেখি, দার্জিলিঙ-ফেরৎ বন্ধুও সেখানে। সবাই মিলে ধরে ফেলা হল তাকে। জানতে পারলাম, আগের দিন ফিরে এসেছে। ঐসব জিনিসও এনেছে। কিন্তু, সেটা অন্য একজনকে দিতে এসেছিল। আমাদের আত্মসম্মনে বিপুল আঘাত লাগল। আমাদের না দিয়ে, অন্য কাউকে দেওয়া? অত সাহস? তুমুল প্যাঁদানি দেওয়া হল তাকে। হাসিমুখে সব সহ্য করে সে জানাল, পরদিন স্কুলে নিয়ে আসবে, সেই অমূল্য বস্তু।
    রাতটা কিভাবে কাটল, বলাই বাহুল্য। পরদিন স্কুলে গেলাম। ধোয়া তূলসীপাতা হয়ে প্রেয়ার করলাম। ক্লাসে গিয়েই, সেই ব্যাটাকে ধরা হল। নিরুপমার বাবার মত, কয়েকটা অস্থিপিঞ্জর বের করে দেখাল আমাদের। লালচে কমলা রঙের ট্যাবলেট। ওটা খেলেই নাকি বেদম গরম হবে শরীর। বাকিটা ইতিহাস হয়ে যেতে বাধ্য!
    বাংলাবইয়ের মলাটের ভেতরে ঢুকল সেই ট্যাবলেট। বাড়ি এল আমার সাথেই। এরপর শুধুই সুযোগের অপেক্ষা। রাত্রে খাওয়া-দাওয়া শেষ। মা-বাপী পইপই করে বলে গেল পড়াশোনা করতে। আমি তখন উত্তাল। ট্যাবলেট খেয়ে কি হবে, জানতেই হবে।
    শুনশান রাত্রি। পা টিপে টিপে চললাম ডাইনিং রুমে। গ্লাস আছে সেখানেই। জলও। নিজের দমবন্ধ। নিজেই নিজের কানটা চেপে ধরলাম। খরগোশের মত। মানে, নিজে গর্তে মাথা ঢুকিয়ে দিলেই, কেউ আর দেখতে পাবেনা।
    জল নিয়ে এলাম। মলাটের ভেতর থেকে বেরিয়ে পড়ল অমূল রতন। টপ করে খেয়ে ফেললাম।
    প্রথমে কোন এফেক্ট নেই। কিছুক্ষণ পরে শুরু হল উত্তেজনা। মনে হতে লাগল, জ্বর এসে গেছে! বাকিটা সত্যিই ইতিহাস হয়ে গেল!
    আমার জীবনের, প্রথম ভায়াগ্রা!
    ===========================
    ধোয়া তূলসীপাতা- ৫
    =================

    সেভেন- এইট- নাইন একটা ঘোরের মধ্যে কেটে যাচ্ছিল। শরীরে ট্রানজিশন, মনে ট্রানসফিউশন। বয়ঃসন্ধির অসহায় খোঁজ। কি যে খুঁজছি, নিজেই সেটা বুঝতামনা। তবে, অবচেতন মনে একটা সার্চ চলছিল ফল্গুধারার মত। আমি তখনও বেদম নিরীহ টাইপ। রীতিমত কচি কোমল টাইপ ছিঁচকাঁদুনে মন। কোনরকম ঝামেলা হলেই ঠাকুরকে ডাকার পালা গোপনে । সেইসময় আমার জীবনে হিরোর মত এন্ট্রি নিল পলাশ।

    শুক্রবার স্কুলে দেড় ঘন্টার টিফিন হত। জমে উঠত ক্রিকেট। কখনও নিজেদের মধ্যে। কোনদিন আবার অন্য সেকশন অথবা অন্য ক্লাসের সাথে।
    সেইরকম কোন এক শুক্রবার। জমে উঠেছে ক্রিকেট। একটা ছেলে গাঁতিয়ে মারছে। ধড়াদ্ধড় ছয়। চার। স্রেফ ওর জন্যই আমাদের দলটা সেদিন হেরে গেল। খেলা শেষ হতে পরিচয় হল। কে জানত, ঐ পরিচয়টাই জীবনের অন্যরকম একটা অধ্যায়ের শুরু।

    পলাশের কাছে, হলুদ মলাটের সন্ধান যেদিন প্রথম পেলাম, রাতের ঘুম উড়ে গেল। পড়াশোনার অজুহাত দিয়ে রাত জেগে গোগ্রাসে গিলতে শুরু করলাম সেদিন। পড়া শেষ হল ভোর রাতে। এবার দুশিন্তা। রাখব কোথায়। আমার বুকশেল্ফ ঝাড়াঝাড়ির দায়িত্ব মায়ের। চোখে পড়লেই হয়ে গেল। আর দেখতে হবেনা। সোজা নামের আগে চন্দ্রবিন্দু বসিয়ে ছেড়ে দেবে।
    অনেক ভেবে ভেবে উপায় বেরল সেই মলাট। জীবনের প্রথম ভায়াগ্রা লুকিয়ে রাখার ব্যাপারে আমায় সাহায্য করেছিল। একটা বড় সাইজের বই বের করলাম। সেটাকে ডাবল করে মলাট দিলাম। যাতে মলাটের ভেতর কোন বই রাখলেও চট করে বোঝা যাবেনা। এবার মলাটের ভেতর চালান করে দিলাম হলুদ দুশ্চিন্তা।
    প্রবলেমটা হল অন্য যায়গায়। পরদিন স্কুলে সে'সব গল্প বন্ধুদেরকে বলতেই ব্যস। আর দেখতে হলনা। ভাগ দিতেই হবে প্রসাদের। শুরু হয়ে গেল গোপন স্মাগলিং। প্রায় সবাই নিজেদের বই-এ মোটা মোটা মলাট দিতে শুরু করল !

    সদ্য কয়েকমাস ঘুরছি পলাশের সাথে। ঐ ক'টা মাসেই, কয়েকজনের একটা গ্রুপ তৈরী হয়ে গেল। লিড হল পলাশ। আড্ডায় গিয়ে আমরা প্রচুর হ্যাটা খেতাম। কারণ পলাশ ছাড়া কেউ তখন ধূমপান করতনা। কিন্তু, ওকে ছেড়ে আড্ডা দেওয়াও দিনের পর দিন মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। অভিজ্ঞতা তো নয়, একদম ঠাকুদ্দার ঝুলি!

    এক বিকেলে, পলাশ বলে " আজ রাত্রে টিউশনি থেকে ফেরার পর একটা যায়গায় যাব। তোরা কেউ যাবি নাকি"?
    রাজী না হয়ে উপায় ছিলনা। গেলাম।

    যায়গাটা একটু অন্ধকার অন্ধকার। কাছেই দাঁড়িয়ে ফিউজ বাল্বওয়ালা একটা ল্যাম্পপোষ্ট। আমরা দাঁড়ালাম একটা কৃষ্ণচূড়ার নীচে। অনেকটা দূর থেকে আলো এসে পাতার ফাঁক দিয়ে আমাদের মুখে পড়েছে। নিজেদের হনু হনু টাইপ মনে হচ্ছে। সবাই সাইকেলগুলো পাশে রেখেছি। কিছুক্ষণ পর দূরে কতগুলো অবয়ব ফুটে উঠল।
    ইতিমধ্যেই পলাশকে অনেক গালাগালি দিয়েছি। ব্যাটা তাও বলেনি, কেন এলাম। দূরের অবয়বগুলোকে দেখে পলাশের ঠোঁটটা বেঁকে গিয়ে একটা অদ্ভূত হাসি ফুটে উঠল।
    ছায়াগুলো ধীরে ধীরে কায়া হয়ে ওঠার মুখে পলাশ আমাদের ছেড়ে একটু এগিয়ে গিয়ে ছেলেগুলোর সাথে কথা শুরু করল। হঠৎ দেখি ওদেরই একজন পলাশকে সজোরে একটা চড় মারল। আমরা হইহই করে এগিয়ে গেলাম।
    পলাশ বাঁ হাত তুলে আমাদের থামিয়ে দিল।
    দম ছিল বটে পলাশের। অত জোরে চড় খেলে আমি যেখানে মাথা ঘুরে পড়েই যেতাম, পলা নির্বিকার দাঁড়িয়ে রইল। তারপর ধীরেসুস্থে পকেট থেকে একটা স্প্রিং নাইফ বার করে, ছুরির ফলায় হাত বোলাতে লাগল। পুরো সিনেমা। তারপর মাথা তুলে, সামনের দাদাগোছের ছেলেটার গালে একটা ঠাটিয়ে চড়।
    একটা চাপা হিসহিসে গলা পাশ থেকে ভেসে এল। "পলা, ছুরিটা ঢোকা পকেটে। খুনোখুনি করতে কেউই আসিনি আমরা।"
    পলাশ ধীরেসুস্থে বলে, "আমিও মারামারি করতে আসিনি। গাঁজা নিতে এসেছি। দাম বেশী চাইছে কেন? আমি শালা সেটা জিজ্ঞাসা করতেই চড় খেলাম। নেকস্ট টাইম খেয়াল রাখিস, হাত কার ওপরে তুলছিস। "
    কিছুক্ষণ গুজগুজ ফুসফুস। দেখলাম ওরা কিছু কাগজে মোড়া কিছু একটা পলাশের হাতে তুলে দিল। পলাশ ওদেরকে টাকা দিয়ে, আমাদের বলল, " বাপের বিয়ে তো অনেকক্ষণ দেখলি। এবার চল, কাটি। মস্ত্‌ জিনিস পেয়েছি আজ।"
    সেদিন রাতে পলাশ কোথায় যাবে, কিছুতেই বললনা। আমরা যে যার বাড়ী ফিরে গেলাম।
    আমার জীবনে, সেই প্রথম হলদেটে অস্বচ্ছ আলোর মলাটে ঢাকা অন্ধকার জগতের স্বাদ।

    =================================
    ধোয়া তূলসীপাতা- ৬
    =================

    দিনগুলো দ্রুত কেটে যাচ্ছিল এইভাবেই। ওদিকে অন্ধকার জগতের ভায়াগ্রা আর, পলাশের মিডাস টাচের মহিমায়, আনকোরা নতুন জীবনের নায়াগ্রা। এই সময়েই ঘটল আরেকটা ঘটনা।

    একদিন টিউশন থেকে ফেরার পথে আড্ডা চলছে সাহেববাঁধের পাশে। সুভাষপার্কে। আমি, নীলু, মান্তু, বাবাই আর লঙ্কা। সিকিউরিটি গার্ড এসে টর্চ দেখিয়ে গেছে বারকয়েক। কোন গান্ডু পাত্তা দেয়! তবে সে বেচারাও চাকরী করছে। মাস গেলে ক'টা টাকাই বা পায়। আমরা বলে দিলাম, বেরোবার সময় চপ আর চা খাইয়ে যাব। তিনিও সটকে পড়লেন।

    আলোচনা হতে হতে যথারীতি উঠে এল ভুতের কথা।
    মান্তু বলে, " ওসব ছেঁদো কথা রাখ। অনেক দেখা গেছে। এমনিতে মুখে বড় বড় বুলি। ওদিকে অন্ধকারে ঝিঁঝি ডাকলে প্যান্ট ভিজে যায়, এমন বহু দেখেছে। আমি ভাই ভুত বিশ্বাস করি। যা শুনেছি আমার দিদার কাছে, তার পর ভুতে বিশ্বাস না করে উপায় কি?"
    আমরা মান্তুকে চাটার লোভ সামলাতে পারলামনা। শুরু হল উত্তাল খিস্তি-খেউড়। অনেকক্ষণ সহ্য করার পর সে ব্যাটা শুরু করল, দিদার কাছে কি শুনেছে।
    মান্তুর দিদার তখন প্রথম বিয়ে হয়েছে। বয়স খুবই অল্প। সবেমাত্র দশ কি পনের। ঠিক মনে নেই। বিয়ে হয়েছিল প্রত্যন্ত এক গ্রামে। বিয়ের সময় চারদিকে গুচ্ছের খাওয়া-দাওয়া। ইয়াব্বড় বড় সব কড়াই, হাঁড়ি। পেতলের থালা। এক বয়স্ক মহিলা এসে বললেন, ওসব কিছু ধুতে হবেনা। রাত্রি ১২টার পর, পুকুরের একটা বিশেষ ঘাটে ডুবিয়ে রাখলেই হল। পরদিন সকালে এসে দেখা যাবে, অত বাসন, সব কেউ ধুয়ে-মেজে রেখেছে!
    তা, মান্তুর দিদাও সেটাই করলেন। নতুন বউ। গুরুজনের মুখের ওপর কথা বলবে কোন সাহসে।
    অবাক ব্যাপার হল, পরদিন উনি পুকুরঘাটে গিয়ে দেখেন, সত্যি সত্যিই সব বাসন কেউ মেজে-ধুয়ে রেখে গেছে। উনি শুধু সূর্যপ্রণাম করে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ী গিয়ে সবাইকে বলতেই, সব্বাই ওপরে মুখ তুলে তাকিয়ে প্রণাম। ঘটনাটা শুধু একবারই নয়। বহুবার ঘটেছে মান্তুর দিদার জীবনে।
    গল্পটা শুনলাম আমরা। বেসিক্যালি তেমন কিছু না। তবু, মান্তু এমনভাবে বলল, আমরা একটু চুপচাপ হয়ে গেলাম।

    কিচুক্ষণ পরে, প্রথম মুখ খুলল লঙ্কা। কোনরকম ভনিতা না করেই বলে, "চল, একদিন রাত্রে শ্মশানে যাওয়া যাক"।
    আমরা শুনেই স্টান্ট। গান্ডু বলে টা কি! ক্ষেপেছে নাকি? রাত্রে শ্মশান? তাও আবার বাড়ীতে না বলে? নেপোলিয়ান চুলোয় যাক। আমাদের কাছে জাস্ট ইমপসিবল!
    সমস্যার সমাধন করে দিল নীলু। বলল, "কিচ্ছু করতে হবেনা। আমার মা-বাবা গেছে আত্মীয়বাড়ী। বাড়ীতে শুরু ঠাকুমা। কিছু একটা করে ম্যানেজ করে নেব। ওটা আমার হাতে ছেড়ে দে। আমরা সবাই একটা কাজ করব। বাড়ীতে বলে আসব, বন্ধুর বাড়ী পিকনিক। রান্না কেউই করবনা। বাড়ী থেকে নিয়ে আসব। কেউ রুটি, কেউ তরকারী। তারপর দেবার পাড়ায় যে শ্মশানটা আছে, সেখানে যাব ১১টা নাগাদ। একঘন্টা থাকলেই বিশাল বড় ব্যাপার। শালা, ভুতের বাচ্ছা যদি আসে, তার মধ্যেই আসবে।"
    এমন প্রস্তাব পেলে ছাড়া যায়? কেউই ছাড়তে পারলামনা। অনেকক্ষণ নাসা-লেভেলের ব্রেনস্টর্মিং করে বেরিয়ে এসেই দেখি, সেই সিকিউরিটি গার্ড হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে! কেলোর কীর্তি! টিউশন থেকে ফেরার পর, কার কাছে কত পয়সাই বা থাকবে! ম্যানেজ হয়ে গেল। আমার ব্যাগের গুপ্ত পকেটে কিছু পাওয়া গেল। বাবাই দিল কিছু। তখনকার মত মিটে গেল ব্যাপারটা।

    প্রিপারেশন নিয়েছিলাম ২ দিন আগে। যেদিন রাত্রে বেরোতে হবে, সেদিন কোন হোমটাসKঅ বাকী রাখা চলবেনা। এই ছিল মায়ের হুকুম। সেকি দূরন্ত কঠিন অঙ্ক! তার সাথে আবার অপরাজিতা ফুলের ছবি আঁকতে হবে! দেখ কান্ড। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি, অপরাজিতের সাথে দেখা করার। আর, ঐ অবস্থায় অপরাজিতাফুলের ছবি! রাত জেগে, গুচ্ছের টাইম স্পেন্ড করে সেসব ভয়ংকর অঙ্কের সমাধান করে ফেলেছি অলরেডি। ছবিও আঁকা হয়ে গেছে। এবার কাউন্টডাউন।

    নির্দিষ্ট দিনে, সকাল থেকেই প্যালপিটিশন। দ্রুত কেটে গেল দিনটা। স্কুল থেকে ফিরে সোজা টিউশন। কচি মাথায় রীতিমত পাকা পরামর্শ হল। ঠিক হল, রাত্রিবেলায়, নিজের নিজের টিফিনবক্সে খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়ব। সোজা শ্মশানে দেখা হবে।

    কপাল ভাল, সেদিন আকাশে তুমুল মেঘ। চাঁদের নামের আগে চন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছে। আবছা আলো। ভগবান দিলে হয়ত এমনি করেই দেন। আমরা সবাই জড় হলাম শ্মশানের মেন গেটে। একটা লোক সকাল থেকে মাদুলি-তাগা-তাবিজ বিক্রী করে। সে খানকয়েক ছিলিম টেনে ঝিমোচ্ছিল। কিছু খুচরো পয়সা তার হাতে দিয়ে, তাকেই দিয়ে দিলাম আমাদের সাইকেলের দায়িত্ব। তখন সবাই অলমোস্ট শাহেন্শা টাইপ। গুলি মার সাইকেল। ঢুকে পড়লাম শ্মশান চত্ত্বরে।

    মুশকিলটা হল এইবার। খাবার সবাই এনেছি। কেউ জল আনিনি। ওদিকে খিদেও পেয়ে গেছে। কি করা যায়? দূরে একটা চিতা জ্বলছে তখনও। খানকয় চিতা থেকে ধোঁয়া। ঐ সীন দেখে, এমনিতেই চমকে চামচিকে। তার ওপর পেটে ছুঁচোর ডন।
    ভরসা একটাই। ওখানেই ছিল একটা ন্যাড়া নদী টাইপ। গ্রীষ্মকাল ছাড়া, গোটা বছরই, ব্যাংএর হিসির মত জল বয়ে যেত। ওটার পাশেই একটা তালগাছের ঝোপ দেখে বসে পড়লাম। খুলে ফেলা হল টিফিন বক্স। বুদ্ধি করে নীলু কিছু খবরের কাগজ এনেছিল। তার ওপরেই সব খাবার জমা হল। টিফিনবক্সের ঢাকায় এল পচা খালের জল। জাস্ট খেতে শুরু করব, থেমে গেলাম। বেশ কিছুটা দূর থেকে কয়েকজনএর গলা ভেসে আসছে। কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম। কিছুই শুনতে পেলামনা। খাওয়ায় মনযোগ দিলাম সবাই।

    মনের সুখে একটা পরোটা ছিঁড়ে, আলুর দমের সাথে মুখে দিতে যাব। নীলু শস্‌স্‌স্‌ শব্দ করে ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের দিকে ইশারা করল। আমরা একসাথে তাকালাম। নীলু যেদিকে তাকিয়ে ছিল। খুব একটা স্পষ্ট বুঝতে পারলামনা। তবে, মোটামুটি বুঝলাম, কয়েকজন লোক একটা বোঁচকামত কিছু একটা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে শ্মশানের কোণের দিকে।
    ভুত চুলোয় যাক। খাওয়া পড়ে রইল বিশ বাঁও জলে। দেখতেই হবে, শালারা কি করছে। ভাবতে কয়েক সেকেন্ড লাগল। খাবার গুলো একটা পেপারে ঢাকা দিয়ে সবাই চুপিচুপি উঠে দাঁড়ালাম। চারপাশে ভর্তি ছোট ছোট তালগাছ আর বাবলাগাছ । আকাশে চাঁদ কবেই ফেয়ারওয়েল নিয়ে চলে গেছে। আমরা দ্রুত পায়ে হেঁটে চললাম। তবে, সাবধানে।
    লোকগুলো যেদিকে গেছিল, সেখানে ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া অশ্বত্থ আর পলাশের ভঙ্গিল পর্বত। একটা বটগাছের নিচে ওরা দাঁড়াল। একটু দূরেই, শানবাঁধান একটা অশ্বত্থের নীচে দাঁরিয়ে পরলাম। মান্তু বলল ওর উত্তাল ভয় লাগছে। এবং যথারীতি উদ্দাম ফিসফিস করে খিস্তি খেল।

    ওদিকে লোকগুলো তখন দ্রুত মাটি খুঁড়তে শুরু করেছে। কি যে করছে, আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলামনা। ওদিকে দেখলাম, ঐ বোঁচকামত জিনিসটা ওরা খুলে ফেলেছে। একটা কিছু শোয়ানো আছে, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু, একজ্যাক্টলি সেটা কি, বুঝতে পারছিলামনা। তবে, লোকগুলো যে কিছু একটা পুঁতে দিয়ে প্রমাণ খালাসের চেষ্টা করছে, আন্দাজ করতে পারছিলাম।

    আমরা জাস্ট কয়েকটা মুহুর্ত সময় নিলাম। প্ল্যান পাক্কা। বাবাই গুঁড়ি মেরে এগিয়ে গেল নেকস্ট অশ্বত্থ গাছটার দিকে। মান্তু থাকল আমার সাথে। লোকগুলো সবাই আমাদের দিকে পেছন ফিরে। বাবাই পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল। সামনেই একটা পুটুসগাছের বিশাল ঝোপ। লুকিয়ে পড়ল। লঙ্কা দাঁড়িয়ে রইল ওখানেই। এবার অ্যাকশন।

    আমি আর মান্তু ধীরে সুস্থে এগিয়ে গেলাম। নরম মিষ্টি স্বরে জিজ্ঞাসা করে ফেলাম, "দাদা, কি হচ্ছে এখানে?"
    লোকগুলো জীবনেও কল্পনা করেনি, ঐ অবস্থায় ওদের সাথে কেউ আড্ডা মারতে আসবে। একটু থতমত খেয়ে গেল। কয়েকটা সেকেন্ড মাত্র। একটা প্যাংলা টাইপ এগিয়ে এল আমার দিকে। খরখরে গলায় বলে, " আব্বে ফোট! একটাকে যখন পুঁতে দিচ্চি, দুটোকে পুঁতে দিতে টাইম লাগবেনা"।
    মান্তু জড়সড়। আমি ঠান্ডা গলায় বললাম, "ফুটে যাব বলেই এখানে এসেছি বে। এক কাজ কর। ফুটিয়ে দে। আগুনটা তুই জ্বালবি, নাকি আমি"।
    কথাটা শুনেই বাকি লোকগুলো এগিয়ে এল। আমি দেখলাম আর হিরোগিরি মেরে লাভ নেই। নীলুকে ডাকতেই সবাই আড়াল থেকে বেরিয়ে এল। আমরা ৫ জন। ওরা ৩ জন। বুঝে গেল, হাল খারাপ। একটা বেজায় ভুঁড়িওয়াল নিরীহ টাইপ লোক এসে বলে ফেলল আসল ঘটনাটা।

    বোঁচকার মধ্যে জড়ান ব্যাপারটা আসলে একটি অকাল প্রসবিত মৃত কন্যাসন্তান। লোকটা থাকে বেশ কিছুটা দূরের একটা গ্রামে। অলরেডি দুটো মেয়ে আছে। তৃতীয়বার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট। ভ্রূণটেস্টে জানতে পেরেছে, মেয়ে হতে চলেছে। হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে মেরে ফেলেছে গর্ভের মধ্যেই। তারপর রাতের অন্ধকারে পুঁতে, প্রমাণ মায়া করে দিতে চাইছে।

    ঘটনাটা শুনে আমরা কজন টিনেজার দিশেহারা হয়ে গেলাম। রাত্রি ১২ঃ৩০। শ্মশান। ঐ অবস্থায় কি যে করা উচিৎ, মাথায় আসছিলনা। চুপচাপ ফিরে এলাম। যেখানে খাবার ঢাকা দেওয়া ছিল। চেষ্টা করলাম খাওয়া শুরু করতে। কেউই পারলামনা।

    ভুত দেখতে গিয়ে সেদিন যে অতি করূণ একটা ভবিষ্যৎ দেখে ফেলেছিলাম। অনেক পরে বুঝেছি।
    ===============================

    ধোয়া তূলসীপাতা- ৭
    ===============

    ফিসফিস করে তপন বলল, "কিন্তু, করবি কি করে? ব্যাটা এতটাই খড়ুশ পাবলিক, ঠিক ধরে ফেলবে।"
    নান্তু ফিচেল হাসি হেসে বলল, "এত কিছু প্ল্যান করার দরকার কি? বিছুটি আছে কি জন্য?"
    কথাটা হচ্ছিল জীবনবিজ্ঞানের স্যর কাঞ্চন কুন্ডুকে নিয়ে। সংক্ষেপে বলতাম কাকু। একটা ছবি এঁকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ক্লাসে। ছেঁদো একটা হোমটাস্ক। তাই সিম্পলি পাত্তা দিইনি। নান্তুও দেয়নি। তপনও। তার রেশ যে এতদূর গড়াবে, কে জানত। ক্লাসের বাইরে চেয়ার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হল সেদিন। ক্লাস শেষ হতেই উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার ধান্দায় আমরা ৩জন জড় হলাম লাস্ট বেঞ্চে। অনেক প্ল্যান করেও যখন কোনরকম সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলামনা, সে মোক্ষম সময়ে নান্তুর প্ল্যানটাই মাথায় স্ট্রাইক করল। অতয়েব, অভিযান বিছুটি।

    আমাদের স্কুলটা ছিল বিশালের থেকেও বড়। ইংরেজ আমলের স্কুল। বিল্ডিং আর অজস্র গাছের সহবাস। বিছুটি থেকে বনতূলসী, কোনকিছুরই অভাব নেই। পরদিন কাকুর ক্লাসের আগেই সংগ্রহ হয়ে গেল বেশ কিছু জলবিছুটির পাতা। কান্ড সমেত । এবার শুধু অপেক্ষা।

    কাকু এলেন। চেয়ারে বসলেন। ডেস্কে ডাস্টার আর চক রাখলেন। রোলকল শেষ হওয়ার আগেই, তুমুল লাফালাফি শুরু করলেন। আমরা চেয়ার-টেবিলের কোন অংশই বাদ দিইনি। ফল হাতেনাতে। দূর্বাসামুনি হয়ে উনি সব্বাইকে নিলডাউন হওয়ার ভয় দেখিয়েও কিছুই লাভ হলনা। আমর অপরাধের সাক্ষ্য রাখিনি। গোটা ক্লাস চুপচাপ থাকল। কাকু লাল হয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন।

    পরের পিরিয়ডটাই ছিল বাংলা স্যরের। প্রিয়তোষ বাবু। আমর শ্রদ্ধা করতামনা। ভয় পেতামনা। অফুরন্ত ভালবাসতাম। তিনিও তাই।
    ক্লাসে তিনি যখন ঢুকছেন, বিদ্যুৎচমক খেলে গেল মাথায়। আরে! ইনিও তো ঐ একই চেয়ারে বসবেন। তখন আর কিছু করার ছিলনা। এদিকে, নিজেদের অপরাধ স্বীকার করার মত মানসিক প্রস্তুতিও ছিলনা। অসহায় হয়ে দেখলাম স্যরের কষ্ট। উনি সব কিছু বুঝেও একটা কথাও বললেননা। দাঁড়িয়ে পড়াতে শুরু করলেন। এবং ক্লাস শেষ করে চলে গেলেন। আমি, তপন আর মান্তু তখন জ্বলছি। কিশোরবয়সের অপরিণত বিবেকের দংশনে।

    মনটা খারাপ ছিল সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পর। গুম হয়ে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। মা জিজ্ঞাসা করল, খেলতে যাবি না? আমি জাস্ট দায়সার গোছের একটা হুঁ দিলাম। তারপর কোন কথা না বলে ব্যাডমিন্টনের র‌্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে পড়ালাম। তপনের কাছে থাকে কর্ক। অলিখিত প্রতিশ্রুতি।
    মাঠে গেলাম। তপন অলরেডি হাজির। আমায় উদ্দাম খিস্তি দিল। আমার কথা বলার মুড ছিলনা। তবু জিজ্ঞাসা করলাম, মান্তু কোথায়। তপন মিচকে হাসি হেসে বলে, দাদুর মন খারাপ। তাই বসে আছে দূরে। চল, আমরাই খেলি।

    দুপাশে দুটো বাঁশ পোঁতা। একটা দড়ি ওপরের দিক করে বাঁধা। একটা নীচের দিকে। ওটাই আমাদের নেট। খেলা শুরু হল। তপন আজ বেশ জোরে জোরে মারছে। আমি তাল সামলাতে পারছিনা।
    তেমনই একটা শট এল । আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। এটা রিটার্ন দিতে হবে। আরো একটু পিছিয়ে গিয়ে কিসের ওপর যেন একটা পা দিলাম। পরক্ষণেই একটা ঘেউ। আর পায়ে কামড়ের জ্বালা। খেয়ালই করিনি, পিছনেই বসেছিল একটা ঘেয়ো কুকুর।
    তপন আর মান্তু হৈহৈ করে ছুটে এল। ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে।
    কামড়ের জ্বালা তেমন কিছু না। কিন্তু জ্বলাতঙ্কের ভয়ে আমি অবশ হয়ে গেলাম। র‌্যাকেট পড়ে রইল। যে বস্তুটাকে নিয়ে মারামারি করছিলাম, সেই কর্কটাও দিব্যি পড়ে রইল উদাস হয়ে। তপন আর মান্তু আমায় নিয়ে চলল বাড়ীর দিকে। আমি তখন আরেকটা ভয়ে আচ্ছন্ন। মায়ের বকুনি।

    বাড়ী গিয়ে মা কে যখন বললাম, মা কেমন যেন হয়ে গেল। বকতে ভুলে গেল। শুধু ধরা গলায় বলল, "একটু পরেই তোর বাপী আসবে। দেখি উনি কি বলেন"।
    তপন আর মান্তু চলে গেল।
    মা আমার পা টা দেখল। ক্ষত তেমন কিছু না। একটু দাঁতের দাগ। অল্প রক্তের ছোঁয়া। ডেটল এনে ধুইয়ে দিতে শুরু করল যায়গটা। ততক্ষণে বাপী চলে এল। সব শুনে গম্ভীর হয়ে গেল। অল্প কিছুক্ষণ নৈশঃব্দ। তারপর বুঝলাম, হসপিটালে যেতে হবে।

    হসপিটালে ঢুকতেই গা টা গুলিয়ে গেল। বিজাতীয় সব গন্ধ। সবাই অসুস্থ! এগিয়ে চললাম এমার্জেন্সী ওয়ার্ডের দিকে। ডাক্তার নেই। অপারেশনে গেছে। শুরু হল অনন্ত প্রতীক্ষা।
    কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার এলেন। ভাল করে আমার পা টা দেখে, কি একটা অ্যাসিড নিয়ে তুলো দিয়ে প্রথমেই কামড়ের যায়গাটা মুছে দিলেন। প্রথমে হালকা একটু জ্বলুনি। একটু পরেই তুমুল জ্বালা। চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল। সান্তনা পেলাম, একটু পরেই নাকি ঠিক হয়ে যাবে।
    একটূ পরেই যমরাজের মত উনি আদেশ দিলেন, ইঞ্জেকশন নিতে হবে। ১৪ টা।
    আমার দুঃস্বপ্নের দিনগুলো শুরু হয়ে গেল।

    আগের দিন রাত্রেই বাপী পইপই করে বলে দিয়েছিল, বেলার দিকে খুব ভীড় হয় হসপিটালে। তাই সকালেই যেতে হবে। ইঞ্জেকশনের প্রথম দিন। খুব ভোরে উঠে পড়লাম। সাজুগুজু করে , বাপীর সাথে সাইকেলে রওনা দিলাম অনিশ্চিতের উদ্দেশ্যে।

    আমি একটা বিছানায় শুয়ে। ডাক্তার এসেই নিস্পৃহ স্বরে বলে, জামাটা তুলে দাও। প্যান্টের বোতাম লুজ কর। আমি ভয়ে ভয়ে তাইই করলাম। নার্স এসে, কি একটা তরলে তুলো ভিজিয়ে পেটের ওপর ঘষে দিয়ে গেল। বাইরে অসুস্থ বাচ্চার কান্না। অধৈর্য রোগীর ঝগড়া। তার মধ্যে আমার শুভদৃষ্টি হয়ে গেল ইঞ্জেকশনের সাথে। পটাং করে নেমে পড়লাম তেল চিটচিটে বিছানা থেকে। বাড়ী চলে এলাম। এবার হালকা খেয়ে ঘুমের চেষ্টা।

    বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হলনা। একটু বাথরুম গেলাম। এসেই অনুভব করলাম, পেটে তুমুল যন্ত্রণা। তীব্রতা এতটাই, নিশ্বাস পর্যন্ত নিতে কষ্ট। মা ছুটে এল। বাপী বলল, চুপচাপ শুয়ে থাকতে। আমিও শুয়ে পড়লাম। জল খেয়ে। কিছু পরেই আবার ছটফট। মনে হচ্ছিল, পেটের থেকে কেউ ফালাফালা করে মাংস কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রণায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রইলাম। মা-বাপী দিশেহার। পাড়া-প্রতিবেশীদের ডেকে নিয়ে এল। অনেকেই এক কথা বললেন। প্রথম কয়েকদিন খুব কষ্ট হবে। সহ্য করা ছড়া উপায় নেই।

    রোজ হসপিটালে যাই। তুমুল কষ্ট নিয়ে। ফিরে আসি যন্ত্রণার বহুগুণ উপহার নিয়ে। খাওয়া দূরের কথা, নিশ্বাস নিতেই অসহ্য কষ্ট। বাড়ীতে রান্না বন্ধ হয়ে গেল ক'দিন। পাশের বাড়ীর কাকীমা খাবার পাঠাতে শুরু করলেন।
    সবাই পাশে ছিল। তবু, সেই সময়টা আমি মানসিকভাবে একা হয়ে গেলাম। ঐটুকু কৈশোরেই জীবনের প্রথম কালজয়ী উপলব্ধি এল। নিজের যন্ত্রণা নিজেকেই সহ্য করতে হয়।
    দুঃস্বপ্নের কালরাত্রিগুলো এইভাবেই কেটে যাচ্ছিল। একদিন সকালে, মানসিক যন্ত্রণাটা অনেকগুণ বেড়ে গেল।

    ইঞ্জেকশনের সাথে সংসার চলছে বেশ কয়েকদিন হল। চুপচাপ শুয়ে আছি। মা এসে বলে, তোর দু'জন স্যর দেখা করতে এসেছেন। আমি অবাক। স্যর দেখা করতে এসেছেন! কোন স্যর? মা বললা, "অতশত জানিনা। ওনাদের বৈঠকখানায় বসিয়েছি। এবার ডেকে নিয়ে আসছি। তুই জামা-কাপড় একটু ঠিক করে নে"।
    আমি ঐ অবস্থাতেই চেষ্টা করলাম, যতদূর ভদ্রস্থ হয়ে থাকা যায়। পর্দা সরতেই প্রথম চমক। কাকু! তার সাথে প্রিয়তোষবাবু!
    আমি ওঠার চেষ্টা করতেই ওনার একসাথে বলে উঠলেন, থাক থাক। আমর সব শুনেছি। তাই দেখা করতে এলাম। সামনেই তো অ্যানুয়াল পরীক্ষা। দিতে পারবে?

    আমি কোনরকমে মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ। এরই মধ্যে মা ওনাদের জন্য কিছু জলখাবার নিয়ে এলেন। খেতে চাইছিলেননা। তবু আমার আর মায়ের কথায় খাওয়া শুরু করলেন।
    কাকু, অর্থাৎ কাঞ্চন স্যর বললেন, "এই যন্ত্রণাটা ক্ষনিকের। কাল থাকবেনা। কাল থাকলেও পরশু থাকবেনা। উঠে দাঁড়াও। দরকার হলে দাঁত চেপে লড়াই কর। তুমি পারবে। "।

    আমার বুকের ভেতর তখন অপরাধবোধ, দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা। সব মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার। গলা দিয়ে কান্নার বাষ্প উঠে আসতে চাইছে। কয়েকটা ঢোক গিলে, প্রাণপণে সেটাকে আটকে দিলাম।

    ধরা গলায় বললাম, আমি পারব স্যর।

    ====================================

    ধোয়া তূলসীপাতা- ৮
    ============

    কষ্টটা শুরু হয়েছিল মেরুদন্ডের শেষমাথা থেকে। ধীরে ধীরে সর্পিল গতিতে উঠে আসতে শুরু করল। ঘাড় পেরিয়ে সেই ক্ষণজন্মা কষ্ট যখন মাথায় হাতুড়ি মারল, তখনই ফ্ল্যাশব্যাক শুরু হল।

    আমাদের স্কুল যদিও জেলাস্তরে মোটামুটি বিখ্যাত ছিল, তবু সব মিলিয়ে আমার মনে হত দুয়োরানীর জীবন কাটাচ্ছে বেচারী!

    বিশাল এরিয়া। অগুন্তি বিল্ডিং। স্কুলের প্রবেশপথে সারি সারি ইউক্যালিপ্ট্যাসের বুনো গন্ধ পাগল করে দিত বর্ষাকালে। ইউক্যালিপ্ট্যাসের শুকনো ফল কেউ দেখেছ? লাট্টুর মিনিয়েচার। আমরা সেই বামন লাট্টু দিয়ে খেলতাম। প্রার্থনা শুরু হওয়ার আগে। প্রার্থনা মানে, গতানুগতিক জন-গণ-মন।

    মনে পড়ছে, ১০টা লাইন হত। ক্লাস ওয়ান থেকে টু সকালেই চুকেবুকে যেত। রইত পড়ে, ্লাস থ্রী থেকে ১২। সর্বসাকুল্যে ১০টা ক্লাস। তাই ১০টা লাইন। প্রথমে যারা দাঁড়িয়ে থাকত, তারস্বরে চেঁচাত জন-গণ-মন। লাইনের শেষের দিকের পাকা-পাবলিক শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে যেত। অনেক পরে ভেবে দেখেছি, আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের ছবি আমার স্কুলেই দেখতে পাই। কেউ কেউ গান গায়। বাকীরা সুধু ঠোঁট নাড়িয়ে যায়। ছায়াসন্ধি!

    স্কুলের সামনে ভয়ংকর শৃংখলা। অথচ পিছনদিকটায় রীতিমত আগাছা। সেই আগাছা আর বট-অশ্বথ্ব-কাঁঠাল গাছের ফাঁকেই একদিন ৪৪০ ভোল্টের শক খেলাম।

    আমি প্রথাগতভাবে ইংজিরি শিখতে শুরু করি ক্লাস সিক্স থেকে। শিক্ষাবর্ষের তুঘলকীপনা! যাকগে।
    সকালে মা যখন ঘুম থেকে উঠিয়ে দিত, ব্রাশ করার ঠিক পরেই একটা রুটিন শুরু হল ক্লাস সিক্সে। হাতের লেখা প্র্যাকটিস। মাসের পর মাস চলতে শুরু করল সেই বিজাতীয় অভ্যাস।
    ব্যাকরণ না থাকলে জীবন বৃথা। এইকথাটা বাবা এবং মা, দু'জনেই পইপই করে হাতুড়ি মেরে মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। বাংলা ব্যাকরণে ইতিমধ্যেই সড়গড়। শিখতে হবে ইংজিরি গ্রামার। অতয়েব খোঁজ খোঁজ খোঁজ। পাওয়া গেল একজন মাস্টারপিস। ইংজিরি গ্রামার গুলে খেয়েছেন। শুরু হল দীক্ষালাভ।
    এই লেখাটা তার সম্বন্ধে নয়। শুধু প্রসঙ্গক্রমে চলে এল। গল্পটা শুরু হচ্ছে এবার।

    আমাদের ইংজিরি ক্লাসের ম্যাস্টার। জ্বয়দীপবাবু। পরে বুঝেছিলাম, গ্রামারে তিনি কচি হলেও, পরীক্ষার নাম্বার দেওয়ার ব্যাপারে তিনিই সর্বোচ্চস্তরের নির্ধারক। শুরু হল আমার জীবনে এক অসমযুদ্ধ।
    ব্যাকরণ শিখব, নাকি ব্যা-করণ শিখব ছাগলের মত। আজও ভাবলে আশ্চর্য হয়ে যাই, ঐ ক্লাস সেভেন-এইটে আমার কি করে অমন জ্ঞানচক্ষু খুলেছিল!

    যাকগে। আমি মোটামুটি চালিয়ে নিচ্ছিলাম দুটো সমান্তরাল শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে। গোলমাল বেধে গেল জ্বয়দীপবাবুর বড় মেয়েকে দেখার পর।
    আগেই বলেছি, আমাদের স্কুলটার পিছনে বিশৃংখলা। শুধু ওটা বললে ছবিটা পরিষ্কার হবেনা। আমাদের স্কুলের পিছনদিকে একটা বারোয়ারী ভাঙ্গা গেট ছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে যতবারই দেওয়াল তোলা হয়েছে, ততবারই কে বা কারা যেন ভেঙ্গে দিয়েছে!

    তো, একদিন তুমুল বৃষ্টি ক্লাস নাইন। স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। অসহায় হয়ে বৃষ্টি দেখার বান্দা ছিলামনা কোনদিনই। তুমুল বাওয়ালি চলছে লাগোয়া বারান্দায়।
    সেইসময় দেখলাম, দুদিকে দুটো বেনী ঝুলিয়ে একজন উদ্ভিন্নযৌবনা বালিকা ছপ ছপ করে জমা জলের মধ্যে হেঁটে চলেছে রাস্তায়। গন্তব্য, আমাদের স্কুলের পিছনদিকের গেট। মাথাটা ঘুরে গেল তার ভেজা পোষাক দেখে।
    বন্ধুদের দিকে তাকাতেই শুনলাম কচি মুখে পাকা ধ্যাষ্টামো। শুনতে পেলাম, উনি নাকি আমাদের জ্বয়দীপবাবুর বড় মেয়ে। শিক্ষকের কন্যা। তাই নাকি ওনার দিকে তাকাতে নেই !

    এই পর্যন্ত শুনেই গুম মেরে গেলাম। ওদিকে বৃষ্টি একটূ ধরে এসেছে। কি মনে হতে, আড্ডার বাকিদের বললাম, আমি কমন রুম থেকে একটূ ঘুরে আসি। দেখি ক্যারম খেলা হচ্ছে কি না।

    কেউ তেমন কোন আপত্তি করলনা। বেঁচে গেলাম।

    একটূ ঘুরপথে স্কুলের বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে, যেন কিছুই হয়নি, এইভাবে হাঁটতে শুরু করলাম স্কুলের পিছনদিকে। বেশীদূর যেতে হলনা।

    আতা আর কাঁঠালগাছের নীচে আসতেই শুনতে পেলাম ঝর্ণাহাসি। সেইসাথে ফিসফিস।
    একটা পুটুসঝোপ ছিল বিশাল। খুব সাবধানে তার পিছনদিকটায় দাঁড়ালাম। যেদিক থেকে কথাবার্তার শব্দ শুনেছিলাম, সেদিকে তাকালাম কয়েকটা পুটুসডাল সরিয়ে।

    বৃষ্টিভেজা কন্যা চরম আশ্লেষে জড়িয়ে ধরেছে কাউকে। কাকে জড়িয়ে ধরেছে, বুঝতে পারছিনা। নীচের দিকে তাকালাম। একটা পাথর পড়ে আছে। সজোরে লাথি মারলাম। পাথর গড়ানোর শব্দ পেয়ে দুজনে একটু একদিক ওদিকে তাকিয়ে আলাদা হল ক্ষণিকের জন্য। তারই মধ্যে দেখে নিলাম, গল্পের নায়ক

    আমার জীবনের প্রথম অ্যান্টিহিরো। পলাশ!

    দেবাশিস
    ব্যাঙ্গালোর
    ==============================
    সোমা,

    আপাতত আর তারপর নেই। অভিমুন্য হয়ে পড়েছি আমরা সব্বাই। উত্তরপাড়া সং-গীত চক্রের চক্রব্যুহের মধ্যে ;-)
    শুধু একটা জিনিস বুঝতে পারছিনা। যিনি নিরলস প্রচেষ্টায় বিজ্ঞাপণ দিয়ে চলেছেন, তিনি আসলে কি চান। টিকিট বিক্রী নাকি অন্য কিছু!

    মোটেই পড়া যাচ্ছেনা ঃ-)
    তোমার যদি গল্পের প্রতি অবিচল প্রেম থাকে, তাহলে, বইটা স্ক্যান করে, কোথাও একটা আপলোড করে, সেই লিঙ্কটা পাঠাও ঃ-)

    দেবাশিস
    ব্যাঙ্গালোর

    ======================
    ধোয়া তূলসীপাতা- ৯
    ============

    ছেলেদের কোনদিন বাপের-বাড়ী থাকেনা। থাকেনা, থাকেনা, থাকেনা। তিনসত্যি!

    জীবনের সন্ধিক্ষণের যাবতীয় গোপন রহস্য থেকে শুরু করে বিয়ের পর, ফুলশয্যায় একজ্যাক্টলি কি কি করতে হবে, সব জ্ঞান লাভ করতে হয় কয়েকজনের থেকে।
    এখন গুগল আছে। তখন ছিলনা।
    তখন যেটা ছিল, সবজান্তা দাদা, পাড়ার ঝিনচ্যাক বন্ধু, ক্লাসের অতি ঢ্যামনা কয়েকজন এবং কিছু সিনিয়র আত্মীয়।অন্তত আমাদের সময় তাইই ছিল।
    আমার কেউ ছিলনা। ছিল পলাশ। শুধু পলাশ।

    ক্লাসটিচার রোজ বলত, "দেখিতে পলাশফুল, অতি মনোহর, গন্ধ নাহি, তাই তারে লোকে করে অনাদর"। আমি ভাবতাম অন্যকথা। বলতে লজ্জা নেই, "অপরাধ", ">satyakaahinI<" ইত্যাদির ফাঁকে ফাঁকে তখনই শিব্রাম আর দাদাঠাকুর পড়ে ফেলেছিলাম।

    পলাশকে আমার মনে হত Pole-Ash। মেরু-ছাই। উত্তরমেরুর গহন গোপন ট্রেঞ্চে পুঁতে দাও। ব্যাটা ঠিক দক্ষিণমেরুতে বিছুটিগাছ হয়ে জন্ম নেবে! অলমোস্ট ফিনিক্স। ছাই থেকে পুনর্জন্ম। আমার যাবতীয় হারামীপনার দীক্ষা নিয়েছিলাম সেই পলাশের কাছেই।

    জীবনসন্ধিক্ষণের সেইসব আধাখ্যাঁচড়া অরগ্যাজম শেখার পর থেকেই, কেমন যেন হঠাৎ করে বড় হয়ে গেলাম।

    তখন আর সেই উত্তাল আর উদ্দাম বাওয়ালি নেই। কেমন যেন একটা কুচুটে শয়তানী পেয়ে বসেছিল আমায়। ঠান্ডা চোখে তাকানো, প্রচুর ওজন-ওয়ালা কথাবার্তা। চোখগুলো ইচ্ছে করে ঘষে ঘষে লালচে করে রাখতাম। আমি বড় হয়ে গেছি না!

    ক্লাস সেভেন। ঘটনা টা ঘটল ঠিক তখনই।

    ক্লাসে, ডান দিক থেকে ঠিক ৩ নাম্বার বেঞ্চে বসতাম আমরা। আমি, অংশুমান আর সৈকত। টিচার এলে, জুতোর দুম-দাম শব্দ, ডেস্ক-এর পাশে পেনের ঢাকা দিয়ে ঘষে ঘষে একঘেয়ে কুটুরকুটুর শব্দ ইত্যাদি, অনেকদিন হল পেরিয়ে এসেছি।
    তখন চলছিল শীতকাল। বাংলাস্যরের নতুন বিয়ে হয়েছে।
    যেদিন তিনি সোয়েটার পরে আসতেননা, কেন আসেননি, সেই নিয়ে তুমুল জল্পনা-কল্পনা চলে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকেই।

    সবই ঠিকঠাক চলছিল।

    ক্লাস চলার মাঝেই অংশুমান হঠাৎ বের করল একটা রঙীন ছবির বই। লুকিয়ে লুকিয়ে সেটা দেখার পরই, সোজা বাথরুম!
    ফ্রেশ হয়ে এসে, একটু চুপচাপ থাকার চেষ্টা করলাম। কোনমতে পিরিয়ড শেষের ঘন্টা বাজতেই আমি আর সৈকত এক্কেবারে সাঁড়াশি আক্রমণ।
    বইটা কোথায় পেল অংশুমান। মলাটে লেখা ডেবোনেয়ার।

    ব্যাটা অংশুমান কেবলই মিটিমিটি হাসে। অনেক বাওয়ালি করার পর উত্তর এল, অংশুমানের মাসতুতো দাদা এসেছে। তেনারই স্টক।

    সৈকত দেখলাম একটূ চুপ। তেমন কথা বলছেনা।
    আমরা জিজ্ঞাসা করলাম টুকটাক। গম্ভীরমুখে ব্যাটা বলে, "আজ তোদের জন্য একটা সারপ্রাইজ ছিল। কিন্তু অংশু আগেই ক্লাইম্যাক্স দিয়ে দিল "।

    ব্যাস। আর যায় কোথা। কি সারপ্রাইজ এনেছিস, বল বল বল।
    সৈকত বলে, স্কুলের পিছনদিকে চল।
    বুকে গুরগুর। অলরেডি যা দেখেছি, কয়েকদিন লাগবে ঘোর কাটতে। সৈকত ব্যাটা কি এমন এনেছে!

    স্কুলের পিছনদিকে গিয়ে, খুব প্রিয় আতাগাছের নীচে বসলাম আমরা তিনজন। ধীরে ধীরে সৈকত ব্যাগটা খুলে দেখাল।

    একটা রিভলভার!

    =============================
    ধোয়া তূলসীপাতা- ১০
    ============

    তখনকার সময় বলতে এটুকুই বুঝতাম, রোজকার রুটিন আর মা-বাবার কড়া শাসন। সিনেমা দেখতে দেওয়া হতনা। বলা হত, "তোর দেখার মত নয়। এটা বড়দের "!
    এক্কেবারে শেষকালে, যখন ঢিস্যুম-ঢিস্যুম ফাইটিং হত, তখন রাত্রিবেলা খাওয়ার সময় হয়ে যেত। সুতরাং, ঐটুকুই ভাগ্যে জুটত।

    তা, বাংলাই হোক আর হিন্দী। মোটামুটি একটা ট্রেন্ড ধরে ফেলেছিলাম। লাস্টের ফাইটিং সিনটা হবে একটা সাজানো গুদামে। সেখানে প্রচুর প্যাকিং বক্স থাকবে। কিছু থার্মোকলের দেওয়াল থাকবে। আর থাকবে খালি ড্রাম।

    দৃশ্যগুলোর খুব একটা ভ্যারিয়েশন ছিলনা। নায়কের মা এবং ইন্টু-মিন্টু দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকবে সেখানে। দুষ্টু লোকটা হয় কিছু একটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাদের বেঁধে রাখবে। অথবা, সম্পত্তির পুরোটাই লুটেপুটে খাওয়ার ধান্দা। কোন একটা কাগজে সই করানোর জন্য বিশাল পৈশাচিক হাসি দেবে।

    ঠিক এই সময় হিরো ঐ গুদামঘরের একটা কোন থেকে লাফিয়ে আসবে।
    প্রথমে হিরো গদাম গদাম করে ঘুঁষি চালাবে। থার্মোকলের দেওয়াল ভেঙ্গে উলটে কেৎরে পড়বে কিছু হোঁৎকা লোক। তারপর হিরো বেদম মার খাবে দুষ্টু লোকগুলোর কাছে। মার খেয়ে পড়ে থাকবে হিরো।

    ওদিকে হিরোর মা ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কেঁদে একটা জ্বালাময়ী ভাষণ দেবে। ঠোঁটের কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়া রক্ত হাতের মুঠোর পিছনদিক দিয়ে মুছে হিরো দাঁড়াবে। সব্বাইকে বেদম ক্যালাবে।
    একটু পরেই পুলিশ আসবে। ইত্যাদি প্রভৃতি।

    এই এতকিছুর মধ্যে যেটা লক্ষ্য করতাম, সেটা হল বন্দুক। গুড়ুম গুড়ুম শব্দ। আগুন। যার দিকে তাক করে বন্দুক দিয়ে আগুন বেরোচ্ছে, সে কুপোকাৎ। এই ব্যাপারটা খেয়াল করেছি সেই তখন থেকে, যখন হাফ-প্যান্টুলুন পরে মা-বাবার সাথে সিনেমা দেখতে যেতাম। তখন থেকেই একটা প্যাশন তৈরী হয়ে হয়ে গেল বন্দুকের প্রতি।

    আরেকটু বড় হয়ে জানলাম, বন্দুক অনেক রকম হয়। রাইফেল, পিস্তল, রিভলবার ইত্যাদি। নিজের হাতে সেসব নিয়ে একটু হাত বোলানোর ইচ্ছেটা ছিলই বহুদিন ধরে।
    সৈকতের স্কুল ব্যাগের মধ্যে রিভলবার দেখে রীতিমত চমকে উঠলাম।

    ব্যাটা কিছুতেই বলতে চায়না, কি করে ম্যানেজ করল। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। ঐসময় সব্বাই বড় হতে চায়। তার ওপর রিভলবারের মত একটা জিনিস যদি নিজের এক্তিয়ারে থাকে, ব্যাস!

    আমি আর অংশু প্রায় মারতে বাকি সৈকতকে। সে ব্যাটাও বলবেনা। আমরাও ছাড়বনা। এমনসময় হঠাৎ দেখি পাশেই জয়ন্ত।

    মোটামুটি সব কটা ক্লাসেই জয়ন্ত নিল-ডাউন থাকত। ওটা ছিল ওর কাছে শিল্প। একটা অদ্ভূত কায়দায় পাগুলো মুড়ে, নিল-ডাউনের কায়দায় প্রতিটা ক্লাসেই ঘুমিয়ে পড়ত। এমন বহুদিন হয়েছে, ক্লাস শেষ। ঘন্টা বাজার পর টিচার বলছেন, ওরে জয়ন্ত, এবার এসে বোস ক্লাসে। কোন সাড়াশব্দ নেই। পরে বোঝ গেল, ও ব্যাটা ঐ অবস্থাতেই ঘুমোচ্ছিল!

    ক্লাস সেভেনে-এইটে আমাদের কর্মশিক্ষা ছিল।
    ব্যাপারটা কিছুই না। মার্বেল-পেপার কেটে বিভিন্ন আকার-আকৃতির টুকরো ড্রয়িং খাতায় চেটাতে হবে। তা, একবার কর্মশিক্ষা পরীক্ষার দিন, আমাদের বলা হয়েছে, পেঁপের আকৃতি করতে হবে মার্বেল-পেপার দিয়ে। জয়ন্ত সেদিন আঠা আনতে ভুলে গেছে বাড়ী থেকে।
    সবারই কাজই শেষ। ড্রইং টিচার জয়ন্তর কাজটা নিয়ে দেখে বলে, হ্যাঁরে জয়ন্ত, পেঁপে থেকে এমন আঁশটে গন্ধ বেরোচ্ছে কেন?

    তো সেই জয়ন্ত যখন এসে বসল, আমরা এমন ভাব করলাম, যেন কিছুই হয়নি।

    কোনরকম ভনিতা ছাড়াই জয়ন্ত বলে, "অনেক তো হিট খেলি, আসলি সিন দেখবি নাকি? "

    ক্রমশঃ

    =======================
  • Debashis Payin | ২৫ অক্টোবর ২০১৩ ১৬:০৫620469
  • মাঝখানে একটা পোস্ট (সোমা কে উদ্দেশ্য করে ) ভুল করে চলে এসেছে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন