এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আমার জমানো মানুষেরা

    Lama
    অন্যান্য | ১৪ মে ২০১৩ | ২৮৫৪ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১২ জুন ২০১৩ ০০:৪৪605019
  • একদম।
  • san | 213.88.22.132 | ১২ জুন ২০১৩ ০০:৪৪605020
  • :-(
  • Lama | 127.194.240.76 | ২১ জুন ২০১৩ ২৩:০২605021
  • কর্নেল খার্কি
    ********
    এক যুগের ওপর হয়ে গেল।

    গ্যাংটকের মল এর একটা বেঞ্চে বসে আছি মধুচন্দ্রিমায় আসা নবদম্পতি। কলকাতা ফিরে যাবার আগের দিন, অল্প মন খারাপ নিয়ে। একটা ঝলমলে দিন। কি পরিষ্কার আকাশটা! অনেক কিছু বলতে চাইছি দুজনেই, কিছুই বলা হয়ে উঠছে না।

    একটু দূরে স্কুলের পোষাক পরা কয়েকটা বাচ্চা খেলছে। বেশ লাগে দেখতে! দুটো বেঞ্চ পরে, একা বসে আছেন এক নেপালী (সম্ভবতঃ) বৃদ্ধ, ময়লা দোমড়ানো টু পিস স্যুট পরণে, মাথায় রংবেরঙ্গের গোর্খা টুপি, কোটের বুকের কাছে লাগানো একগাদা মেডেল। বয়স্ক গোর্খাদের অনেকেই প্রাক্তন সৈনিক এবং সৈনিক জীবন নিয়ে তাঁদের আবেগপ্রবণতা আর গর্ব আমার কাছে নতুন নয়। এরকম দুয়েকজনকে আগেও দেখেছি, সাধারণতঃ এঁদের কাছে শোনার মত অনেক রোমহর্ষক গল্প থাকে। আবার দেখছি মাঝে মাঝে একই রকম মলিন স্যুট পরিহিত গ্রাম্য চেহারার বয়স্ক লোকজন আসা যাওয়ার পথে এঁকে ফৌজি স্যালুট করে যাচ্ছেন। এঁরা বোধ করি বৃদ্ধের ফেলে আসা সৈনিক জীবনের অধস্তন হবেন।

    এক সময়, বৃদ্ধ লোকটি নিজের বেঞ্চ ছেড়ে উঠেআমাদের পাশের বেঞ্চে এসে বসলেন। তারপর বেশ কেতাদুরস্ত ইংরেজিতে বললেন ‘আশা করি আমি তোমাদের বিরক্ত করছি না’

    ভদ্রলোক ইতিমধ্যেই আমাদের যথেষ্ট কৌতূহল জাগিয়ে তুলেছেন, তদুপরি এতটা সাহেবি ইংরেজি এঁর কাছে আশা করি নি, সমস্বরে বললাম ‘একেবারেই নয়!’

    ‘বাচ্চারা, তোমাদের বিয়ে ঠিকঠাক বয়েসে হয়েছে তো? দুজনকে দেখেই পনেরোর বেশি মনে হয় না’ বলে নিজের রসিকতায় নিজেই হো হো করে হাসতে লাগলেন।

    ততক্ষণে ওঁর কোটের বুকে লাগানো মেডেলগুলোতে চোখ বোলানো হয়ে গেছে। ইনি প্রাক্তন ফৌজি তো বটেই, অনেক কালের পুরনো সৈনিক। বললাম ‘আপনি তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়েছেন?’

    ‘আহা, খাসা ছেলে! হুঁশিয়ার ছেলে! বৌমা, তোমার পছন্দ আছে! তোমার বর আমাকে ঠিক চিনে নিয়েছে। হ্যাঁ, লড়েছি। অনেক জায়গায়, কঙ্গোতে, সুদানে, জাপানের কয়েক জায়গায়- না না ঘাবড়ে যেও না, পরমাণু বোমা পড়ার আগের কথা বলছি। পৃথিবীর কোন দেশ দেখা বাকি রইল না বোধ হয়’ এবার মাঝে মাঝে ইংরেজির সঙ্গে হিন্দি মিশে যাচ্ছে।

    বৃদ্ধ নিজের কথার তোড়ে ভেসে যাচ্ছেন। চুপ করে রইলাম। জানি, উনি নিজে থেকেই কিছু কিছু গল্প এবার বলবেন।

    ‘আমি কি আমার নামটা তোমাদের বলেছি? আমি কর্নেল খার্কি’ ভদ্রলোক বলে চলেছেন, ‘আমরা বংশানুক্রমে ফৌজি। আমার বাবাও ইংরেজদের ফৌজে সুবেদার ছিলেন। আমার ছেলে নেপালের আর্মিতে ক্যাপ্টেন ছিল- মারা গেছে।
    সেকালে ব্রিটিশ আর্মির অফিসাররা নেপালের গ্রামে শহরে আসতেন ফৌজের জন্য ছেলে জোগাড় করতে। বাছাই করা ছেলেদের সোজা জাহাজে করে লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া হত ট্রেনিংএ। ট্রেনিং এর শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী কেউ সেপাই, কেউ সুবেদার, কেউ অফিসার হয়ে ছুটি কাটাতে দেশে আসত- তারা বীরের সংবর্ধনা পেত।’

    ‘আমি কর্নেল হিসেবে রিটায়ার করেছিলাম। আমি তোমার মতই রোগাপটকা ছিলাম। কিন্তু আর্মি এমন জিনিস, মানুষকে লোহা বানিয়ে ছাড়ে। তায় আবার সেকালের বৃটিশ আর্মি। শুনেছ তো, কেউ যদি বলে সে ভয় পায় না তাহলে সে হয় মিথ্যুক নয় গোর্খা। এটা কিন্তু সত্যি কথা। আমরা কাউকে ভয় পাই না। আমি এই বয়েসেও কাউকে ভয় পাই না।

    না না বৌমা, আমার দিকে ওরকম করে তাকিও না, তোমার বরেরও খুব সাহস, আমি জানি।’

    ‘চব্বিশ ঘন্টা পেটে দানাপানি না পড়লেও যুদ্ধ করেছি, মরূভুমিতে পথ হারিয়েছি, সমুদ্রে হাবুডুবু খেয়েছি। বেয়নেট দিয়ে শত্রু সৈন্যের নাড়িভুঁড়ি বার করেছি। জানো, একবার শত্রুরা গোয়েন্দাগিরি করার জন্য দুটো বার্মিজ বাচ্চাকে পাঠিয়েছিল- দুই ভাই বোন। বোনটার পেট থেকে কথা বার করার জন্য ভাইটাকে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে দিয়েছিলাম। যুদ্ধের সময় এরকম অনেক কিছু করতে হয়।

    বৌমা, তোমার বরকে যেন কখনো যুদ্ধে যেতে না হয়।’

    বৃদ্ধ এবার একটু অসংলগ্ন কথা বলছেন, ‘পুরো ব্যাপারটাই একটা রহস্য, বুঝলে, নিশ্চয় কিছু খারাপ কাজ করেছিলাম তাই কে যেন শাস্তি দেবার জন্য এত বছর বাঁচিয়ে রেখেছে। আবার কিছু কিছু ভাল কাজও নিশ্চয় করেছি, তোমাদের সঙ্গে কাটানো এই দুপুরটা তার পুরস্কার।
    বুঝলে খোকা, কেউ একটা আছে, নির্ঘাৎ, সব হিসেব রাখে।’

    কথায় কথায় বিকেল হয়ে এল। কর্নেলের সঙ্গে করমর্দন করে বিদায় নিলাম। যদিও জানি আর কখনো দেখা হবে না, কর্নেল খার্কি তবু বললেন ‘আবার দেখা হবে।’

    তারপর থেকে নিজের হিসেব নিজেই রেখে চলেছি, কর্নেল খার্কি বর্ণিত হিসাবরক্ষকের সঙ্গে দেখা হলে একবার ক্রস চেক করে নেব।
  • byaang | 122.79.41.161 | ২১ জুন ২০১৩ ২৩:১৫605022
  • ......
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২১ জুন ২০১৩ ২৩:২২605023
  • আগের কথাগুলো আর রিপিট করতে ভালো লাগছে না। আমার তো বেশি কথা নেই।
  • siki | 132.177.146.141 | ২১ জুন ২০১৩ ২৩:৩৬605024
  • ক।
  • Lama | 160.107.178.114 | ১৬ জুলাই ২০১৪ ২৩:৩৪605025
  • রহিমা নামের সেই অকালমৃত শিশুটির কথা
    **************************************

    বাবা অফিস থেকে ফেরার পর মা বলল ‘কাজের লোক পাওয়া গেছে।’

    বাবা- ‘ও’

    মা- ‘কি মিষ্টি দেখতে বউটা। কিন্তু বড্ড গরীব। ওর নাম খেলা। খেলা বেগম না খাতুন কি যেন। দুটো বাচ্চা। বড়টা মাদ্রাসায় পড়তে যায়। ছোটটাকে সঙ্গে নিয়ে আসবে।’

    পরদিন সকালে পড়তে বসেছি। দরজার পর্দার ফাঁক দিয়ে ছোট্ট একটা কৌতূহলী মুখ দেখা গেল। নাক থেকে সিকনি গড়াচ্ছে। আমার সঙ্গে চোখাচোখি হওয়ামাত্র চিল চিৎকার জুড়ে দিল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অচেনা নারীকন্ঠে শোনা গেল ‘ও মনি, কাঁদে না। ওটা মামা তো। মামা পড়তেচে। মামাকে দেকে ভয় পায় না।’ বোঝা গেল খেলা বেগম (মতান্তরে খাতুন) কাজে যোগ দিয়েছেন। এটাও বোঝা গেল যে, এখন থেকে পড়াশোনাটা শান্তিতে নাও হতে পারে (যদিও পঠনপাঠন পন্ড হবার কিছু একটা কারণ সব সময় খুঁজতে থাকতাম সেই বয়েসে।

    তার পরদিন। যথারীতি পর্দার ফাঁকে সিকনিমাখা ছোট মুখ, চোখাচোখি ও চিল চিৎকার। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘মামা মেয়েচে, মামা মেয়েচে’। কি ধড়িবাজ বাচ্চা রে বাবা! মারা তো দূরের কথা একটা কথা পর্যন্ত বলি নি। যাক গে।

    দিন তিনেক পর দেখি নেড়া হয়ে এসেছে। আরো মজার লাগছে দেখতে। মাঝে মাঝে মজাদার নেড়ামাথাটা দেখতে পড়া ছেড়ে উঠে আসি, আমাকে দেখে পালিয়ে যায়। নেড়ামুন্ডুটা আবার দেখার জন্য লজেন্সের টোপ দিই। হাত বাড়িয়ে নেয়। ফিক করে হাসেও। কিন্তু ‘মামা মেয়েচে’ বাঁধা গৎটা আর যায় না। পড়াশোনার সময় দিনকে দিন কমতে থাকে। শিশুকন্ঠের খিলখিল হাসি আর ‘মামা মেয়েচে’ ঘনঘন শোনা যেতে থাকে। পড়ায় ফাঁকি দেবার জন্য মায়ের কাছে বকুনি খাই।

    ক্রমশ খেলারানী বেগমের জীবনবৃত্তান্ত প্রকাশ পেতে লাগল। হতদরিদ্র পরিবার। বর কখনো রিকশা চালায়, কখনো রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজ করে। প্রত্যহ বউ পেটায়। আগে দুটো বাচ্চা ছিল। প্রথমটা জ্বর হয়ে মারা যাবার পর এখনকার বড়টা জন্মায়। দ্বিতীয়টা গাড়ি চাপা পড়ে মরার পর এখনকার ছোটটা। অর্থাৎ কিনা যার মাথা নেড়া, এবং যে ‘মামা মেয়েচে’ বলে। জানা গেল, তার নাম রহিমা।

    দিন কেটে যায়। একদিন খেলারানী কাজে ডুব দেয়। দিন দুয়েকপর তার কোন এক প্রতিবেশী এসে খবর দেয় খেলারানীর জ্যেষ্ঠ্য সন্তান জলে ডুবে মারা গেছে। তার আরো দুদিন পর খেলারানী কাঁদতে কাঁদতে কাজে যোগ দেয়। সপ্তাহখানেকের মাথায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

    বছর গড়ায়। ন-দশমাস পর আবার একদিন কাজে ডুব দেয় খেলারানী। তার পরদিন সদ্যোজাত কন্যাকে কোলে নিয়ে এবং রহিমার হাত ধরে হাসিহাসি মুখে খেলাদিদি কাজে ফেরার পর জানা যায় সে এতদিন সন্তানসম্ভবা ছিল। ততদিনে রহিমা একটু বড় হয়েছে। এখন আর ‘মামা মেয়েচে’ বলে না। মাথা আর নেড়া নেই বলে আর মজার লাগে না। তবে অভ্যাসবশতঃ মাঝে মাঝে লজেন্স দিই।

    কলকাতার কলেজে পড়তে এসেছি। বাড়িতে ফোন করলে কখনোসখনো রহিমার কথা জিজ্ঞাসা করি। জানতে পারি, তার বয়েস পাঁচবছর হয়েছে। এখন তার মা আমাদের বাড়ি কাজ করতে একাই আসে। রহিমা বাড়িতে থেকে ছোট বোনের দেখাশোনা করে। ছোটটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আসমা’। বছর সাতেক বয়েস হলে তাকেও লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করতে পাঠানোর ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। তাই আসন্ন সুদিনের আশায় তাদের মা খেলারানী পুলকিত। আমার মা বাবা বোঝানোর চেষ্টা করছেন বাচ্চাদের পড়াশোনা করা উচিত। অর্থসাহায্যেরও ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।

    একবার ছুটিতে বাড়ি এসে খবর পাই, জ্বর না কি হয়ে যেন রহিমার ছোট বোনটি, আসমা- মারা গেছে। শুনে খারাপ লাগে। যদিও বাচ্চাটাকে কখনো চোখে দেখি নি। তবে, রহিমার আরেকটা বোন হয়েছে। এই বোনটারও রহিমা দেখাশোনা করে।

    ভুলে গিয়েছিলাম ওদের কথা। ইঞ্জিনিয়ারিঙের শেষ পরীক্ষার রেজাল্ট বেরনোর দিন বাড়িতে ফোন করেছি। নানা কথার পর মনে পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম ‘মা, সেই যে মামা মেয়েচে বলত- সেই বাচ্চাটা কেমন আছে?’ জানতে পারি, নেই।

    যদি ধরে নিই প্রত্যেক মানুষের অস্তিত্বের একটা উদ্দেশ্য আছে, তাহলে রহিমা নামক শিশুটির বছর সাতেকের জীবনের মানে কি? তাকে নিয়ে আমি একটা দু পাতার গল্প লিখব এই জন্যেই কি ঈশ্বর তাকে সৃষ্টি করেছিলেন?

    আচ্ছা, আমার জীবনের উদ্দেশ্যটাই বা কি? এই গল্পটা লেখার জন্যই কি ঈশ্বর আমাকে সৃষ্টি করেছিলেন?

    হতেও পারে।
  • nina | 78.37.233.36 | ১৭ জুলাই ২০১৪ ০৫:৫৪605026
  • বাপরে কি হাড় হিম করা লেখা---
  • Abhyu | 78.117.214.27 | ৩০ আগস্ট ২০১৪ ২২:৪৫605027
  • হুম
  • Ranjan Roy | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৬:৪৪605029
  • একটাই ইচ্ছে, আগামী বইমেলা বা তার কাছেপিঠে কোলকাতায় যাব-- লামার সঙ্গে দেখা করতে। গত বইমেলায় দেখা হয়েছিল। স্বভাবসিদ্ধ সুন্দর হাসিতে বলেছিল-- চিনতে পারছেন না? আমি লামা।
    --খুব চিনেছি। সেই যে কাবলিদার বাড়ি ভাটে তোমারা দু'ভাই, দুই বৌমা ও দুই বাচ্চা -- এসেছিলে। সুতো-হুতো জমিয়ে রেখেছিল। তুমি নিপুণ হাতে বাচ্চা সামলাচ্ছিলে।
    সঙ্গে প্রবাসী বন্ধু ছিল, আর কথা হতে পারে নি।
    এবার গড়িয়ার কোন পার্কে ওর পাশে বসব। ও হাসবে আর আমি বকবক করে যাব।

    তার পর ও একদিন এই পাতায় লিখবে-- রঞ্জন্দার সময় হয়েছিল, চলে গেছে। এ ভাবে আমাকে অমর করে দেবে। আর কি চাই?
  • সে | 203.108.233.65 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৬:০৩605030
  • ছি রঞ্জনদা।
  • লামার হয়ে | 132.167.200.209 | ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৯:২৭605031
  • name: Lama mail: country:

    IP Address : 160.107.179.222 (*) Date:06 Nov 2014 -- 08:56 AM

    আমার রুমমেট বগার বাড়ি ছিল দমদম এয়ারপোর্টের রানওয়ে ঘেঁষা নারায়ণপুর গ্রামে। হ্যান্ডু চেহারা, সপ্রতিভ আচরণ আর স্মার্ট চেহারা, কথাবার্তা দেখেশুনে বোঝা যেত না গ্রামের ছেলে। তার ওপর পড়াশোনার পরিধি- সবকিছু মিলিয়ে কলেজের ডন গোছের (তা সে ডন আমিও একটু আধটু চিলাম, হেঁ হেঁ, কিন্তু সে অন্য গল্প)। আর হ্যাঁ আদর্শবাদী এবং নিষ্ঠাবান এসেফাই কর্মী/ নেতা।

    গ্রাম জীবনের আকর্ষণে, কাকিমার আদরযত্ন আর খুব কাছ থেকে প্লেন দেখার লোভে ওদের বাড়ি খুব যেতাম। বিশেষতঃ আমার বাড়ি আগরতলা হওয়াতে অন্য ছেলেদের মত শনিরবিবার বাড়ি যাবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলাম, তাই ওদের বাড়ি যেতে বেশ উৎসুক ছিলাম।

    কোন বছর মনে নেই, পরীক্ষার আগে। কি একটা ব্যাপারে ক্যাম্পাসে কি একটা গন্ডগোল পাকিয়ে উঠেছে। এস এফ আই স্ট্রাইক ডাকবে শোনা যাচ্ছে। জনতা বেশ উত্তেজনার আগুন পোহাচ্ছে।

    সেরকম একটা সময়ে, কোন এক শীতের রবিবার সকাল বেলা বগা বলল 'আমার টাকাপয়সা ফুরিয়ে গেছে, তুই আমার বাড়ি গিয়ে কিছু টাকা নিয়ে আয়। আমি বাবাকে চিঠি লিখে দিচ্ছি।'

    আমি বললাম 'আমি একা যাব? তুই যাবি না?'। বলল 'আমার একটা ওয়ার্কশপের রিপোর্ট সাবমিট করার আছে। যেতে পারব না। এদিকে টাকাটা আজই দরকার। হাতে কিছু নেই।'

    আমি সরল বিশ্বাসে রাজি হয়ে গেলাম।

    তারপর বগাদের বাড়িতে চর্বচোষ্য সাঁটিয়ে পকেটে বগার জন্য হাতখরচের বান্ডিল নিয়ে ('সাবধানে যেও' কথাটা বার পঞ্চাশেক শোনার পর) সাত সমুদ্দুর তের নদী ঠেঙ্গিয়ে শীতকালের ঝুপসি অন্ধকার সন্ধ্যায় যখন ক্যাম্পাসে ঢুকলাম তখন দেখি পরিবেশ থমথমে। গুচ্ছ পুলিশ দাঁড়ানো।

    ইতোমধ্যে একটা পুলিসের গাড়ি আমাকে ওভারটেক করে কলেজ বিল্ডিং এর দিকে চলে গেল।

    আরে! পুলিশের গাড়িতে ওরা কারা? বগার বাবা আর জেঠু না? এঁদের সঙ্গ্গে তো ঘন্টাতিনেক আগেই হেসে হেসে গল্প করতে করতে মাংসভাত সাঁটালাম।

    নাঃ ডাল মে কুচ কালা হ্যায়।

    একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম কি চলছে।

    দেখি, ফার্স্ট লবিতে একটা শতরঞ্চি পেতে কিছু ছেলেপুলে বসা। তাদের মধ্যে বগা, অরিজিৎ এরা আছে। কিসের যেন দাবিতে আমরণ অনশন ইত্যাদি লেখা পোস্টার টোস্টার ঝুলছে। বগার বাবা আর জেঠু পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে চিন্তিত মুখে ফার্স্ট লবিতে উঠলেন, তারপর নিচু হয়ে বগাকে কি যেন বলছেন আর বগা চোয়াল শক্ত করে ঘাড় নাড়ছে।

    তারপর কি করে অনশন শেষ হল মনে নেই। তবে খবরের কাগজে বগার নাম বেরিয়েছিল মনে আছে।

    আর মনে আছে, রুমমেটকে অনাহারে রেখে তারই বাড়িতে চর্বচোষ্য সাঁটানোর জন্য মাস ছয়েক এমন অপরাধবোধে ভুগেছিলম যে ছ মাস মাংস খাই নি, আর বছর দুয়েক নারায়ণপুর যাই নি।

    name: lcm mail: country:

    IP Address : 118.91.116.131 (*) Date:06 Nov 2014 -- 09:14 AM
    লামা ছ মাস মাংস খায় নি - এটাই হল গপ্পের হাইলাইট্‌স

    name: Blank mail: country:

    IP Address : 69.93.199.66 (*) Date:06 Nov 2014 -- 09:15 AM

    এবং লামাদাও কভু ডন ছিল
  • সিকি | 135.19.34.86 | ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ১০:৩৫605032
  • এবং ফান্দে পড়িলেও বগা সবসময়ে কাঁদে না।
  • . | 209.7.157.40 | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ২২:০১605033
  • pi | 24.139.221.129 | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ২২:০৮605034
  • থ্যাঙ্কু, পড়তে ইচ্ছে করছিল।
  • Tim | 188.91.253.190 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৯:৩২605035
  • 7 | 109.172.117.250 | ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৭:১২605036
  • তুলে দিলাম।
  • Lama | 213.132.214.83 | ১৮ মার্চ ২০১৬ ১৬:০৭605037
  • একটু তুললাম। পরে লিখব বলে
  • Abhyu | 85.137.4.219 | ২০ মার্চ ২০১৬ ০২:০৯605038
  • হুঁ
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন