এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রাকৃভ | 125.187.33.202 | ১০ অক্টোবর ২০১২ ২২:৩৯575266
  • আজ ১০/১০/২০১২ । গজল গায়ক জগজিৎ সিং আমাদে ছেড়ে, ঠিক এক বছর আগে চলে গেছেন ।
    তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ ।

    বাঙালী জাতটা আদতে খুবই নাক উঁচু! (জানি, এক্ষুনি হই হই করে বেশ কয়েকটা প্রতিবাদী পোষ্ট পড়তেও পারে- তবে, আম্মো লাচার) ধরুন, একটা বাড়ীতে হয়, গেট টুগেদার, অনেক লোক মিলে আড্ডা, এই সব হচ্ছে! অবধারিত ভাবে, একবার না একবার গান, কবিতা, চুটকী, পি.এন. পি.সি. এইসব হবেই হবে।

    ধরুন- আমি রাজাকে ( এটা কিন্তু একটা প্রতিকী নাম) বললাম- একটা গান গাও তো হে! ও হয়তো, সুমনের গান ধরল। শোনার পর, কেউ একজন বলল- রবীন্দ্র সঙ্গীত হোক । বেশ হলো। এবার কেউ বলল- একটা হিন্দী গান হোক! অমনি- সবাই হাঁ হাঁ করে উঠবে।

    অনেক তর্ক- বিতর্কের পর, বড়জোর মহম্মদ রফি বা মান্না দের গান হবে! কিন্তু- গজল? নৈব নৈব চ!
    কারণ একটাই! এই গজলের কয়েকটা মুশকিল আছে। গলায় সুর না থাকলেও অন্য গান বাঙালী সাহস করে গেয়ে দেবে, কিন্তু গজল? ওরে বাবা! ওই গিটকিরি, তান, লয়- সবার ওপরে উর্দ্দু লব্জ, বাঙালী ঠিক বুঝতেও চায় না বা বলা ভালো বুঝতে চায় না! তার ওপর, ওই যে বললাম! নাক উঁচু! বাংলা ভাষার ধারে কাছে কেউ আছে নাকি?
    এই ধারণাটাই ভেঙেছিলেন, ঠিক এক বছর আগে, প্রয়াত জগজিৎ সিং আর জীবিত গুলজার! গজল, নগমা, গীতের পার্থক্য ভুলিয়ে দিয়ে এরা সেই প্রথাগত গজলকে ভুলিয়ে দিয়ে,আম বাঙালী তথা ভারতীয় বা বলা ভাল- সারা পৃথিবীর কাছে তুলে ধরলেন।

    শরীর থাকলেই মৃত্যু থাকবে! এটা কোনো আপ্তবাক্য নয়, প্রতিষ্ঠিত সত্য।

    প্রত্যেকেই কালের নিয়মে চলে যান! কিছু কিছু লোক থেকে যান হৃদয়ের মণিকোঠায়! এরা না থেকেও আছেন।
    শোক তো থাকবেই! ছাড়ুন সেই শোক! আসুন- অল্প আড্ডা মারি, জগজিৎ সিংকে নিয়ে।

    জগজিৎ আর দাড়ি- টাড়ি কাটবেন না বা রেওয়াজ করবেন না, আর পাঁচটা লোকের মত বা গায়কের মত, কিন্তু থেকে যাবেন, স্মৃতিচারণে, গানের সি ডিতে।

    প্রথাগত গজলের কয়েকটা নিয়ম ছিল। তবলার ভূমিকা, এস্রাজ আর হারমোনিয়াম। জগজিৎ আনলেন- গীটার। তবলাকে মেলো করে দিলেন। এলো বেহালা আর বাঁশী।প্রথমে, প্রচুর সমালোচনা হয়েছিল- কিন্তু সবাই জানে; সবসময়ই “ মৌলবাদী” আর “প্রগতিশীল” দের দল থাকে।
    এবারে কিন্তু “প্রগতিশীল” রাই দলে ভারী হলো। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হলো ভারতের প্রথম মাল্টি চ্যানেল রেকর্ডের ( আসলে,ফোর ট্র্যক ডিজিটাল সাউণ্ড) আলবাম- বিয়ণ্ড দ্যা টাইম। বেরোতেই হই হই-চই চই!
    সাউণ্ড ইঞ্জিনিয়ার, গুলজার, বাদ্যযন্ত্রী আর জগজিৎ সিং এর সমবেত প্রচেষ্টা। পরপর বেরুতে লাগল আ্যলবাম।
    তবে সাফল্য এত সহজে ধরা দেয়নি তাঁর কাছে । মুম্বাইতে প্লে-ব্যাক গেয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করতে আসেন ১৯৬১ তে কিন্তু তেমন সুবিধে না হওয়ায় আবার জলন্ধরেই চলে যান | কিন্তু নতুন উদ্যমে আবার স্বপ্নের মুম্বাইতে ফিরে আসেন ১৯৬৫ এ আরেকবার চেষ্টা করে দেখার জন্যে । HMV থেকে দুটি গজল রেকর্ড হয় । পাগড়ি ও দাড়ি ছেড়ে নতুন রূপ নেন | প্লে-ব্যাক তখন অবধি স্বপ্নই...। জিঙ্গল , ডকুমেন্টারি ইত্যাদি তে সঙ্গীত পরিচালনা করেই রুজিরোজগার চলছিল | চিত্রার সাথেও সেই সময়ে দেখা ও ১৯৭০ এ পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়া । এর পর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে ।
    তাতে সিনেমা জগতের লাভ না হলেও গজল সঙ্গীতের ক্ষয়িষ্ণু ধারা পেলো এক নবজীবন | ১৯৭৫ এ HMV র উত্সাহে তিনি চিত্রার সাথে এক অনন্য আঙ্গিকে তাঁর প্রথম গজলের LP রেকর্ড বের করলেন 'The Unfogettables' । প্রত্যেকটি গান অসাধারণ এবং বলাই বাহুল্য গানগুলি তাঁর নিজেরই সুরারোপিত । ব্যবহৃত হলো সারেঙ্গী ও তবলা ছাড়া অন্য বাদ্যযন্ত্র | সে রেকর্ড অসামান্য জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে গেল ।
    এর পর আর পেছন ফিরে দেখতে হয়নি | বের হলো প্রথম ডাবল এলবাম 'Come Alive' | এর পর আরো দুটি ডাবল এলবাম 'Live at Wembley' এবং 'Live at Royal Albert Hall', লাইভ কনসার্ট থেকে, ১৯৭৯ ও ১৯৮২ তে| জগজিত-চিত্রা জুটি ততদিনে খ্যাতির তুঙ্গে |
    ২৮ জুলাই ১৯৯০। বিবেক, মারা গেল পথ দুর্ঘটনায়। জগজিৎ আর চিত্রা সিংএর একমাত্র সন্তান!
    তার মাত্র তিন মাস আগে গানগুলো রেকর্ডিং হয়েছিল!
    বিবেক বলেছিল:- বাবা, আমি এর রিভিউ ম্যনেজমেন্ট করব।আমার একটা ফোটো যেন থাকে ওই সিডির কভারে।
    সেই সিডির কোনো নামকরণ হয় নি তখনও!
    পরে- জগজিৎ নাম দিলেন:- সামওয়ান সামহয়্যার! চিত্রার সেই শেষ সিডি- জগজিৎ এর সঙ্গে!
    তারপর অনেক ঝড়, পারিবারিক জীবনে! চিত্রা গান ছেড়ে দিলেন!
    বর্তমানে তিনি পক্ষাঘাত গ্রস্তা!
    মনে- আমাদের সেই গান:-
    আপ কো ভুল যায়েঁ হম্, ইতনে তো বেওয়াফা নহীঁ
    আপ সে ক্যা গিলা করেঁ আপ সে কুছ গিলা নহী।।
  • ranjan roy | 24.97.30.9 | ১১ অক্টোবর ২০১২ ১৭:০৬575267
  • প্রথম ওদের গান শুনি একটি EP তে। তাতে জগজিৎ-চিত্রার দ্বৈতকন্ঠে ছিল-- "বাবুল-মোরা, নৈহর ছুট যায়!" সুর সেই ভৈরবী, কিন্তু সায়গলের থেকে অন্য রকম গায়কী। অবাক হলাম। বিশ্বাস হত না, সায়গলের পর ওই গান কেউ রেকর্ড করতে সাহস করবে।
    তারপর এল ওনাদের নতুন ধরণের গজল। পদিপিসীরা যথারীতি চেঁচামেচি করলেন।
    -- গজল তো বেগম আখতার, মাস্টার মদন, মেহেদি হাসান, গুলাম আলি, নুরজাহাঁ, ইকবালবানু।
    জগজিৎ সিং? শুনলে মনে হয় গজলের ঘন রসে জল মিশিয়ে পাতলা করে দিয়েছে!
    এঁরা যাই বলুন, জগজিতের ঘরানা জনমনে স্থান করে নিল।
    এখনো কানে বাজে--" সরক্‌ তে হ্যায় রুক্‌ সে নকাব,
    আহিস্তা! জনাব, আহিস্তা!"
    ( খসে পড়ছে মুখোশ, ধীরে, বন্ধু, ধীরে!)।
    চিত্রা গাইলেন-- সিতারেঁ, তুম তো সো জাও, পরেশাঁ রাত সারি হ্যায়।"
    ( শুতে যাও তারাদল, এখনো অনেক যন্ত্রণা আছে বাকি।)
    না, ইকবাল বানুকে ছাড়িয়ে যেতে পারলেন না।
    কিন্তু জগজিৎ? একের পর এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন আম জনতাকে; গজলের রস পান করিয়ে।
    আমার মত হরিদাস পালকেও।
    ওনার জন্যে এরপর আসতে পারলেন চন্দনদাস, নীনা মেহতা, পীনাজ মাসানির দল, মধ্যমেধার ভীড়।
    আজ শুধু শোনা হয় মেহেদি হাসান, গুলাম আলি, নুরজাঁহা, ইকবাল বানু এব`ং অবশ্যই
    --জগজিৎ। নতুন পথের পথিকৃৎ।
    কাব্যের স্তরে গজলকে অপরিচিত উর্দূ শব্দের জটাজাল থেকে মুক্ত করে সাধারণ মুখের কথায় এনে জনতার দরবারে হাজির করলেন-- দুষ্যন্তকুমার ত্যাগী। সঙ্গীতে একই কাজ করলেন জগজিৎ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন