এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কুলদা রায়ের গল্প : গিন্নিবিবির পন্নিকথা

    কুলদা রায়
    অন্যান্য | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ৫৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কুলদা রায় | 34.90.91.2 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০১:১১573625
  • গন্নিবিবির পন্নিকথা
    কুলদা রায়

    আমাদের ঠাকুরদার কোনো জুতা ছিল না। জীবনের শেষে দিকে তিনি প্রায়ই জুতার কথা বলতেন। যেদিন আমাদের পুকুরে সত্যিকারের জ্যোৎস্না ফুটত—রজনীগন্ধ্যা জুটতো, সেদিনই ঠাকুরদা চুলে ঘন করে চিরুনি করতেন। তারপর ঝেড়ে কাশতেন। বলতেন, ভাইসগোল, যেদিন আমাগো চরে প্রিন্স অব ওয়েলসের বার্থডে উপলক্ষ্যে ব্যান্ডপার্টি বাইজা উঠল, সিকদার বাবুগো গদিঘরে গন্নিবিবি ঝননে ঝনেন ঝা বলে পা দিয়া দাপানি তুলল—হ্যার আগের দিনই একজোড়া পাম্পসু কেনা হইছিল।

    কাহিনী এইটুকু। এরপরে আর খুব বেশী জানা নেই। এইটুকু শুনেই দিদি বা ছোটো বোন হা করে চেয়ে থাকত। এ সময় ঠাকুরদা চক্ষু বুজে গান ধরতেন, কেনো চেয়ে আছ মা।
    ঠাকুরদার উপর্যুক্ত ভাষ্য থেকে দুটো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে–
    ১. গন্নিবিবি সিকদারবাবুদের গদিঘরে পা রেখেছিল। গান গেয়েছিল। পা দাপিয়ে নেচেওছিল।
    ২. একজোড়া পাম্প-সু জুতা কেনা হয়েছিল।

    জুতা কেনার সময়টাও বলে দেয়া আছে। গন্নিবিবি যেদিন গদিঘরে গেয়েছিল–নেচেছিল, তার আগেরদিনই কেনা হয়েছিল জুতাজোড়া। প্রশ্নটা হল, পাম্প সু জুতা কার জন্য কেনা হয়েছিল? ঠাকুরদার নিজের জন্য? কিন্তু আমাদের ভূভারতে কেউ কখনো পাম্প সু পরেনি। আমার ঠাকুরদাও পরে নি। আমার বাবাও না। বংশধারা মানলে আমিও না। সত্য হল সেকালে প্রজাসাধারণের জুত পরার সামর্থ্য ছিল না। শতকরা ২/১ একজন যাদের কিঞ্চিৎ সামর্থ্য অর্জিত হলেও তাদের জন্য জুতা পরা অনুমোদিত ছিল না। পরলে তাদের জুত নামক নরক নির্ধারিত ছিল। তাহলে প্রশ্ন ওঠে কার জন্য এই পাম্প সু জুতা কেনা হয়েছিল–সিকদার বাবুর জন্য? না, সেন্ট মথুরানাথ সরকারের জন্য?

    এই পাম্প সু বিষয়ে আমাদের বাড়িতে তেমন কোনো নথিপত্র কখনো পাওয়া যায় নাই। পাওয়ার কথাও নয়। আমাদের থাকার মধ্যে পুরনো একটি সিন্দুক বড় ঘরের এক কোনে ছিল বটে। রটনা ছিল—জলের তলা থেকে তোলা হয়েছিল সিন্দুকটা। এই হেতু সারা গায়ে জং ধরা। সেটায় বিশ্বকর্মা পূজার দিনই কেবল তেল সিন্দুর পড়ত। আর সারা বছর সিন্দুকটার উপর বসে বসে পা দোলাতে দোলাতে বলেছি, খুল খুল সিম যা। আমাদের ছোটো ছোটো পায়ের আঘাতে যেদিন সত্যি সত্যি লোহার সিন্দুকটির দরোজা সামান্য একটু খুলে গেল, আমরা কজন মিলে পুরোটা খোলার জন্য দরোজা ধরে টান মেরেছি, মড় মড় শব্দ করে সেদিন দরোজাটি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল। উঁকি মেরে দেখা গেল সিন্দুরটার মধ্যে শুধু পুরনো অন্ধকার—আর কিছু নেই। সেই অন্ধকার একটু সয়ে গেলে বোঝা গেল ওটা ঠিক অন্ধকার নয়, গন্ধের ছায়া। ঠিক ছায়াও নয়–এক ধরনের মায়া। একে আমরা বাসি গন্ধ বলি। আর টিকটিকির ডিমের দুটো খোসা। কোনো নথিপত্র নেই।। তবে একটা জিনিস। সেটা পরে বলব।
    তাহলে কি আমার ঠাকুর মার জন্য কেনা হয়েছিল সু-জুতাটি? অথবা অন্য কোনো মহিলার জন্য?

    ২. তার আগে ঠাকুরমা :
    আমাদের ঠাকুরমার মাথায় কিছু ঝামেলা ছিল। সারাদিন গজগজ করে যেত। তাঁর অর্থ কোনো ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে এই গজগজানি শুনে আমাদের মা জননী কিছুটা সূত্র আন্দাজ করতে পেরেছিল। তার একটি ছোটো খাটো তালিকা নিম্নরূপ—
    ১. সত্যি সত্যি ঠাকুরদা একজোড়া পাম্প সু কিনেছিল।
    ২. মেইড ইন চায়না। ১০০% লেদার।
    ৩. প্রাপ্তিস্থান, চিনে বাজার। ক্যালকাটা।
    ৪. জুতা উইদাউট লেস। ব্লাক। একে জুতা নয়—মোকাসিন কয়।
    ৫. ‘জুতা পরিলে ধুলো লাগিতে পারে’—এই হেতু ঠাকুরদা কর্তৃক জুতা কদাপি পরিহিত হয় নাই। কর্তৃক শব্দটির ফন্ট কালার আদার দ্যান ব্লাক।
    ৬. জুতাটা নিয়ে ঠাকুরদা ঘুমুতে যেতেন। আর ‘তার জীবিত ছোটি বহু জাগিয়া থাকিতেন বিছানার পার্শ্বে। তাহার চক্ষু নিমীলিত। এইভাবে বেশীদিন নহে—মাত্র একযুগ’। জনশ্রুতি আছে ঠাকুমার সিঁথির সিন্দুর অক্ষয় হয়েছিল। তার হাতের নোয়া- শাঁখা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত টিকে ছিল।
    ৭. এই জুতাটার জেন্ডার ইস্যু নিয়ে পরে ঠাকুরমার একটা সন্দো হয়েছিল। জুতাটা কার ? জুতাটা কি পুরুষের? না, মহিলার? মহিলাদের?—না, পুরুষদের?
    ৮. জুতাটি নিয়ে যে ঠাকুরদা বিছানায় যেতেন—সে জুতাটি কিন্তু কেউ দেখে নি। সবাই একটা অনুমান থেকে কথা বলছে। একালে কে না জানে অনুমান সিদ্ধান্ত হয় না। কিছু অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে প্রমাণে যেতে হয়।
    আমাদের কোনো প্রমাণ নেই– সম্বল কেবল আমাদের ঠাকুরদা স্বর্গীয় শ্রী বিদু রায়ের সেই মৌখিক বয়ানটি। গল্পচ্ছলে তিনি একদিন এই বয়ানটি আমাদের বলেছিলেন। তখন তিনি বয়েসের ভারে অনেক ন্যুব্জ। জীবনে অনেক বেদনার ভার তাকে বহন করে যেতে হয়েছে। তার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। কখন কি বলে বসেন ঠিক নেই। ফলে তার কথা আমলে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। এই জুতা জোড়া ঠাকুরদাও দেখেছেন কিনা সে প্রশ্নটাও সন্দেহমুক্ত নয়। অথচ জুতাটি না দেখলে ঠাকুরমা জুতাটার জেন্ডারত্ব নিয়ে সন্দো করল কিভাবে? কেনো সন্দো করল? এ প্রশ্নের উত্তরে ঠাকুরমার কণ্ঠ থেকে উদ্ধার করা যেত—হিরি হিরি।
    ৯. ঠাকুরমাকে দেখে শুনে কেসির মা ডায়াগনোসিস করেছিল, নন কিউরেবল মাথা খারাপ। ওরফে ক্লাসিক্যাল ডিপ্রেশন।
    ডিপ্রেশনের কারণটা ঠিক স্পষ্ট নয়। কেসির মায়েদের চিকিৎসা ভুবনে ডায়াগনোসিস কালচারটা নেই। তাদের সব কিছুই ধ্যানে আসে—জ্ঞানে আসে। এই জ্ঞানকে দর্শনে স্বজ্ঞান বলে। ফলে কার কথা আমরা বিশ্বাস করব—হিরি কিরি ঠাকুর মাকে, না স্বজ্ঞানী কেশীর মাকে?
    ১০. দ্যাটস ইট।
    বি.দ্র. আমাদের মা জননী যে ঠাকুরমার গজগজানি থেকে এই তালিকা উদ্ধার করেছিলেন তা কিন্তু প্রমাণ হয় না। আমাদের মা সে রকম কিছু স্বীকার করেননি। ওটা জনশ্রুতিরই পুনর্বয়ান ধরা যেতে পারে।

    কিন্তু অই জনপদের জনচিত্তে এর ঘটনাগুলো চিরকাল গুপ্ত থেকেছে। ঘটনা নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নাই। তারা চৈত্র সংক্রান্তির দিনে ঢাক-ঢোলাদির বাদ্যসহযোগে আমাদের বাড়িতে আগমণ করেছে। ছোটোখাটো মেলাও বসেছে। তার নাম ছিল সু-এর মেলা। এ মেলায় আমার ঠাকুরদার সেই ঐতিহাসিক সু-র একটা কাঠের রেপ্লিকা তৈরি করে দিয়েছিলেন তৎকালীন বিশিষ্ট সমাজসেবক সেন্ট মথুরানাথ সরকার। শুধু একটিমাত্র শর্ত ছিল। সমাগত পাপীদিগে সদাপ্রভু যীশুখ্রিস্টের সুসমাচার বিনামূল্যে বিতরিত হবে। উইথ চা ও কুড়মুড় ভাজা। খ্রিস্টের কাছে না হলেও সু-জোড়ার কাছে মানত করে কেউ কখনো ব্যর্থ হয় নাই। এ মেলায় কেউ সু বা জুতা পরে না। নগ্ন পদেই ঠাকুর দর্শনে আসে। যদি কেউ ভুল করে জুতা এনে বসে তাহলে সু-এর রেপ্লিকার প্রতি শ্রদ্ধাবশতঃ সেটা বগলে রাখে। তাই হে ভাই ও বেরাদরে মিল্লাত–
    শুন সবে ভক্তি ভরে করি নিবেদন।
    জুতা বাবার শক্তিধারা করিব বর্ণন।।

    ৩. এক যে ছিল গন্নি বিবি
    গন্নিবিবির রিলেশন পাওয়া যায় মতিবিবির সঙ্গে। মতি বিবির সেকালে মাসে হাজার টাকা দর ছিল। বৃটিশ ইতিহাসে উল্লেখ আছে– প্রিন্স দ্বারকানাথ তাকে ইংলন্ডে নিয়েছিলেন। সপ্তসিন্ধু পার হয়ে ইংলন্ডে যাওয়ার পরে একদিন ভোরবেলা তিনি নিত্য পূজোয় বসেছেন। এর মধ্যে রাজবাড়ির এক লর্ড এসে হাজির। বলল, বাবুকো বোলাও। বাবুর গেটম্যান লর্ড সাহেবকে সোজা হাকিয়ে দিয়ে বলল, পরে আসো। এখন নো এন্ট্রেন্স।
    অন্য লোক হলে লর্ড ক্ষেপে যেত। একটা বিদিকিচ্ছিরি কান্ড কারখানা হত। কিন্তু এখানে সেটা করল না। প্রিন্স দ্বারকানাথ মহারাণীর পেয়ারা লোক। মহারাণী তার ব্যক্তিগত ডাইরীতে দ্বারকানাথ প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, ব্রাহ্মণ ভদ্রলোক বেশ ভাল ইংরেজি বলেন এবং তিনি একজন বুদ্ধিমান ও চমৎকার মানুষ।

    সেবার তাঁর বিলেতের সফরসঙ্গী ছিলেন ইউরোপীয় চিকিৎসক ডা. ম্যাকগাওয়ান, তাঁর ভাগনে চন্দ্রমোহন চ্যাটার্জী, ব্যক্তিগত সহকারী পরমানন্দ মৈত্র, তিন জন হিন্দু ভৃত্য ও একজন মুসলমান বাবুর্চি। আরও কজন এসেছিলেন। তার নাম সুস্পষ্টভাবে লিখিত পাওয়া যায় না।
    বিলেতে প্রিন্স দ্বারকানাথকে রাজকীয় সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রবার্ট পীল, বোর্ড অব কন্ট্রোল এর প্রেসিডেন্ট লর্ড ফিটজার্যাল্ড, প্রিন্স এলবার্ট, কেন্ট-এর রাজকুমারী এবং রানী ভিক্টোরিয়া। প্রিন্স ভারত থেকে বিস্তর ভেট এনেছেন। তাঁকে একটু খাতির না করে উপায় নেই। তাই ঝামেলা না করে লর্ড সোজা বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে রইল।
    ঠিক এক ঘটিকা পার হলে প্রিন্সবাবু দরোজার বাইরে এলেন। হেসে বললেন, আইসেন। আইসেন হে লর্ড মহোদয়। কখন আইসাছেন? অধিক সময় নহে তো?

    বহির্বাটিতে অবস্থানকালে উৎপাদিত ক্ষোভ লর্ড বিলক্ষণ চেপে গেল। তখন তার নজর গবাক্ষপথে। সেখানে তাকিয়ে থাকায় ক্ষণে ক্ষণে তার শিহরণ হচ্ছে। লর্ড বলল, ডোন্ট অরি। আমি এইমাত্র আসিয়াছি।

    প্রিন্স একটু হেসে বললেন, সহি বাত। তবে কিনা পূজার সময় আমি দেবদ্বিজেও দেখা দেই না। তারপর মাংস আহার করি। কিঞ্চিৎ মদ্যপান।
    সাহেবও হেসে কহে, জানি, জানি হে প্রিন্স। আপনি কদাপি দেখা না দিলেও চলিবে। বাই দি বাই, আপনার মিসেস কি আসিয়াছেন?
    এই প্রশ্নে প্রিন্স একটু বিস্মিত হলেন। এইভাবে প্রাইভেট বিষয়াদি নিয়ে প্রশ্ন করাটা সুসভ্য ইংরেজ সহবতে থাকার কথা নয়। তবু প্রিন্স নিজের সহবত হারালেন না। বললেন, তিনি আমার সঙ্গে সহবাস করেন না।
    এবার লর্ড তার বাপ-দাদার কাছ থেকে অর্জিত জ্ঞানের বান ছাড়ল, সহমরণ তো করিবেন তিনি?

    এই প্রশ্নে কঠিনভাবে তাকিয়ে রইলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ। সাহেব তাঁর আদি ক্ষতে দাগা দিয়েছে। তাঁর মদ্য, মাংস ও মহিলা আসক্তির কারণে তার স্ত্রী তাঁর স্পর্শদোষ বাঁচিয়ে চলেন। ফলে প্রিন্সকে আলাদা বাটিতে বসত করতে হয়। অসংখ্য নারী সঙ্গ করেও এই দুঃখ তাঁকে অহর্নিশি তাড়া করে ফেরে। এই দুঃখ ভুলতে তিনি দেশ ত্যাগ করে এই ম্লেচ্ছ দেশে এসেছেন। ঠিক করেছেন, এই জীবনে আর বঙ্গদেশে ফিরিয়া জাইবেন না। ফিরিয়া লাভ কি?
    সাহেব কিঞ্চিৎ সহানুভূতিসূচক স্বরে বলে বলল, ডোন্ট অরি, ডোন্ট অরি প্রিন্স মহোদয়। সময় নির্ধারণ করিবে কে কাহার সহিত জাইবে। তবে—
    –তবে?
    –তবে, আপনার রত্নটির সাক্ষাৎ পাইতে যাঞ্চা করিতেছি। তাহা হইলে কিঞ্চিৎ ক্লেশ দূর হইবে।
    –নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই। আমাদিগের রত্নের অভাব নাই।

    অতপর প্রিন্সের খানসামা চাকরাদি নানাবিধ মনিমুক্তা হাজির করিল। সাহেব যাহা যাহা দেখে তাহা তাহা দেখে কহে, আর কুছু, আর কুছু।
    ঘণ্টা খানেক দেখিয়েও যদাবধি লর্ডের কুছু কুছু থামল না, খানসামা ঘেমে গেল, চাকরাদি কম্পিত হল, তখন প্রিন্স খাঁটি প্রিন্সের মত হেসে বললেন, বুঝেছি। মুক্ত নয়, মতি চাহিতেছেন। খাঁটি মতিবিবি আইস।

    প্রিন্সের অলিখিত সফরসঙ্গী মতিবিবি গবাক্ষ হতে সেই আলোঅন্ধকারে সশরীরে নেমে এল। তার পরণে হিরে মতির সাজ পোষাক। পদযুগল ঝিকিমিকিয়ে ওঠে। শোনা যায় এই পদাভরণ পারস্য দেশ থেকে প্রিন্স অর্ডার মাফিক আনিয়েছেন। মতিবিবি বিলোল কটাক্ষে যখন হাতের কাছে তার চম্পাকলির মত আঙুল রেখে গান ধরল, আ আ আ..আও মে গিরিধারি লাল, তখন সাহেব কুছ কুছ হোতা হ্যায়। কহিল, গ্রেট। গ্রেট। ইহাতে একঘণ্টা কেন, আপনার দরোজায় এক যুগও দাঁড়াইয়া থাকিতে ক্লেশ হইবে না। জীবন সদর্থক। প্রভুর মহিমা অপার।

    মতিবিবির এরপর কী হল–দেশে ফিরেছিল, না কি বিলেতে থেকে গিয়েছিল, তার কিছুই জানা যায় না। শুধু বিলেত হতে একপাটি জরিদার মতিপূর্ণ ফিমেল জুতা ন্যাশনাল মিউজিয়ামে রাখার জন্য ইন্ডিয়ায় এসেছিল। প্রিন্স দ্বারকানাথ দেশে আর ফিরে আসেন নাই। শোনা যায় তিনি একটি গ্রামে উপাসনারত অবস্থায় সাধনোচিত ধামে গমন করেছিলেন। রাজকীয় জার্নালে লেখা আছে—প্রিন্স অন্তকালে কামনা-শুন্য হয়ে গিয়েছিলেন। কোনো নারী সেকালে তাঁর নিকটে ছিল না। ছিলেন নিঃসঙ্গ।

    তবে বিলেত থেকে ইন্ডিয়ায় আগত জুতোজোড়া কোনো মিউজিয়ামে গিয়েছিটল বা আদৌ গিয়েছিল কিনা—সুস্পষ্ট তথ্য নেই। শুধু কদিন পরে তদিয় পুত্র দেবেন্দ্রবাবুর নিকট টেলিগ্রাম আসিয়াছিল, প্রিন্স এক্সপায়ার্ড। বিলেতে মানুষ মরে না–এক্সপায়ার্ড করে– এই দুঃখে দেবেন্দ্রবাবু বহুদেশ ঘুরলেও বিলেতে যান নাই। তার পিতার সমাধি দর্শন করেন নাই। সমাধি দর্শনও পুতুল পূজার সামিল। বুৎপরোস্তি নৈব নৈব চ।
    সেই মতিবিবির নাতিনি-লো-নাতিনি ওরফে গন্নিবিবি যখন আমাদের পাড়াগাঁয়ে সিকদার বাবুর বায়নায় পাড়া দিলেন, তখন চারিদিকে গগণ ঢুলি ঢেড়া পিটিল, ‘গন্নি আইসাছে। গন্নি আইসাছে।‘

    মুকিমপুর পরগণার পত্তনিদার সিকদারবাবুর তখন সবে নতুন দোতলা উঠেছে। কার্নিশে ঢেউ খেলানো পদ্মপাতা খাড়া হয়েছে। সিঁড়িতে সিংহচিহ্ণিত আসন। এটা সিকদারবাড়ি। গুইড়ে পট্টিতে বিল্ডিংটির অবস্থান হওয়ায় এর সামনে গুড়ের হাট বসে। একজন দুজন করে যেসব হাটুরে এলো বা আসার কথা ছিল তারা দেখতে পেল, গদিঘর সাফসুতোরো করা হচ্ছে। ঝালর লাগানো হচ্ছে। একটা ঝাড়বাতিও এসেছে। তবে পড়ে গিয়ে ভেঙে যেতে পারে এই আশঙ্কায় সেটা লাগানো হয় নাই। একটি বাঁশের আগায় ঝোলানো হয়েছিল বাড়ির সামনে। লাল শালু টানানো হয়েছিল—রাজপুত্র প্রিন্স অব ওয়েলস শুভাগমন উপলক্ষ্যে মাইফেল। তারিখ ২৩ ডিসেম্বর, ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ। কোনো হাটুরে এই বাক্যটি পড়তে পারে নাই। সেরকম এলেম তাদের কভি নেভি। তবে লাল রঙের শালু কাপড় দেখে তাদের কৌতুক জেগেছিল।
    এই ঝাড়বাতি দেখের আমাদের বিলা এলাকার লোকজন জীবনে প্রথমবারের মতো শুনেছিল গন্নিবিবি আইছে। তারা শুধাল, গন্নিবিবি কি মাতা বসুমতি?
    সিকদার বাবুর ম্যানেজার লালা বাবু বললেন, তিনি লখনৌর গন্নিবিবি।

    এই গাঁও গেরামের হাভাতে মানুষ তাদের বাপ-দাদা চৌদ্দ গুষ্ঠীর কেউ গন্নি বিবির নাম শোনে নাই। তারা খুব বেশী হলে শুনেছে বানারীপাড়ার নট্ট কোম্পানীর যাত্রা পালার কানু রানীর নাম। এখানে প্রকাশ থাকে যে, কানু রানী কোনো ফিমেল নন, তিনি কানু নামে এক যুবক। পালাগানে ফিমেল পার্ট করে বলে কানু রানী নামে আখ্যা-প্রাপ্ত। তাঁর স্ত্রীর নাম বিনোদিনী। বাড়ি কুড়িয়ানা। স্বরূপকাঠী। জিলা—বরিশাল। কানু রানী পাঁচটি সন্তানের জনক।

    ফলে লোকে অবাক হয়ে জানতে চায়, গন্নিবিবি কী করে?
    লালু বাবু হাতটি ঘুরিরে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ঝা না না ঝা না না করে।
    –এইটা কি জিনিস?
    এটা লালু বাবুও ঠিক জানেন না। এটা ব্যাখ্যাতীত।

    যে বা যিনি ব্যাখ্যার অতীত সে বা তিনি মনুষ্য নয়—দেবী গন্নিবিবি ধা করে লোকের অভাব দূর করতে পারে বলে লোকজনের প্রবল বিশ্বাস হল। এইটুকু। এইটুকুতেই এলাকার লোকজন ঢাক ঢোল সহযোগে সিকদারবাড়ির সামনে এসে পড়ল। তাদের এলাকায় গন্নিবিবির আগমণহেতু দুই দিন ঢপকেত্তনের আয়োজন হল। লোকে পথের উপর কলস কলস জল ঢেলে কাদামাটি করে নেচে গেয়ে ফিরে গেল। এই পর্যন্ত। মাইফেলে কারো মতি নাই। সকলে সন্ধ্যাকালে নিন্দ পাড়ে। আর স্বপ্ন দেখে—মা গন্নিবিবি চারি হস্ত বিস্তার করে তাদের অভয় দিচ্ছে। তাই দেখে তারা মাতোম তুলে বলে, জয় মা গন্নিবিবি।

    সিকদার বাবুর গদিঘরে গন্নিবিবির আসর বসার মত লোক আর পাওয়া গেল না। মাইফেল ব্যর্থ হতে দেখে সিকদার বাবু এলাকার চেতা লোকদের খবর দিলেন। তারা এসে হাত জোড় করে বলল, বাবু, আমরা চাষা-ভুষো মানুষ। আমাগো পোলাপাইন হ্যাগো মা জননীর মাই টাইন্যা বাঁচে। আমরা ভাতে বাঁচি।। অভাবে পড়লে কচু-ঘেচু খাই। কিন্তু বুইড়াকালে পোলাপাইনের কামে শরম লাগে। খ্যামা দ্যান গো কত্তা মশাই।
    সিকদার বাবু পেয়াদা দিয়ে প্রজাদের মাইফেলে হাজীর করার হুকুম দেবেন দেবেন করছেন ঠিক তখন সিকদারবাবুর ডাক পড়ছে অন্দর মহলে। তিনি হন্তদন্ত করে ছুটে গেছেন। তার ছোটো তরফ ঘরে খিল দিয়েছেন। ভেতর থেকে কিল পেড়ে বলছেন, গন্নিবিবিরে আনছ ক্যান?

    সিকদার বাবু কোঁচা সামলাতে সামলাতে জবাব দিলেন, ট্যাকা পয়সা হইছে। এখন বিবি-বাই না আনলে রাজপুত্রের মান থাকে ক্যামনে?
    ছোট তরফের বাড়ি মাধবপাশা, বরিশাল। অতি সুশ্রী –কিন্তু তার বাপ-ঠাকুরদারা চিরস্থায়ী ঘর জামাই বলে কপর্দক শুন্য। ফলে পরিবারে লেখাপড়া কম। ছোট তরফ সেকালের রাজপুত্র-কোটালপুত্রের গপ্প জানেন বটে, কিন্তু একালের রাজপুত্রের খবর জানে না। তার কোল জুড়েও এখনো সে রকম কেউ আসেনি। ফলে তিনি একটু ভ্রু কুঁচকে বললেন, রাজপুত্র কেডা?
    সিকদার বাবু উত্তর করলেন, মহারানী ভিক্টোরিয়ার বড় পোলা।
    ছোট তরফ এই প্রথম ভিক্টরিয়ার নাম শুনেছেন। কিন্তু তার হাল-সাকিন জানেন না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাগো বাড়ি কই—কাড়ারগাতি, না, ডোমরাসুর?
    –বিলেইত।
    –বিলেতে কি আছে?
    –সাহেব আছে।
    এই সাহেব কথাটিও তার কাছে নতুন। তিনি সাহাদের চেনেন। তারা বড় সুদ খোর। তিনি আবার শুধালেন, সাহেবে কি করে?
    –দণ্ড চালায়।
    –দণ্ড মানে কি?
    –দণ্ড মানে লাঠি।
    লাঠির কথা শুনে বউ ঢোক গিলল। বউ সোজা সাফটা বলে দিল, গন্নি বিবিরে আনছ আনছ। মানসে দেখুক। তুমার যাইয়া কাম নাই।
    হুট করে দরোজা খুলে গলে। এবং তখনি সিকদারবাবুসমেত অন্দর বন্ধ হল। ক্লোজ সাইনে ডাই। বাইরে যাওয়া নিষেধ।

    ৪. সোনার তরী : একখানি সর্প সঙ্গীত
    লক্ষ্ণৌর গন্নিবিবি বঙ্গদেশের বিলা পাড়াগাঁয়ে এসেছেন। কিন্তু তার মাইফেল নাই। তার তবলচিরা পড়ে পড়ে ঘুমায়। সারেঙ্গিদার নাক ডাকে। গন্নিবিবি বজরায় থেকে থেকে ক্লান্ত। মাঝিমাল্লারা বহুদিন পরে পুটিমাছ ধরতে ব্যস্ত। একদিন গন্নিবিবি বজরা হতে বের হলেন। বাইরে ঝুকি ঝুকি চাঁদ উঠেছে। চারিদিকে থৈ থৈ জল। এর মধ্যে পদ্ম ফুটেছে। দূরে ধান ক্ষেত। সবকিছু সাফসুতোরো। এর মধ্যে কে একজন গান গেয়ে তরী বেয়ে ওপারে যাচ্ছে। গন্নিবিবি কানটি খাড়া করে শুনলেন, সেই কে একজন গাইছে—
    কী সাপে কামড়াইল আমায় রে সাপুড়িয়া
    জ্বলিয়া পুড়িয়া মইলাম বিষে
    আমার বিষগুণে জ্বলেছে এ বিষ
    জুড়াইব কিসে।।
    হাসনা হেনা হাসতেছিল সন্ধ্যার আকাশে
    দাড়িয়ে ছিলাম কত আমি তার তরে
    ও সেই সাপ ছিল সেই রে ঝোপের আড়ে
    ওঝার পরে মিশে।।

    গাইতে গাইতে তরী বেয়ে ওপারে চলে গেল। আর সেই সুর শুনে গন্নিবিবির সম্মোহন দশা। জলের মধ্যে পা ফেলতে যাবে আনমনে, বিপদ হতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনি বজরা্রবড় মাঝি পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠল, মাইজি।
    মাইজি থেমে গেল। তার পা থেকে জলের মধ্যে পড়ে গেল জরিদার মতিচিহ্ণিত জুতা। জলের মধ্যে ভাসতে ভাসতে জুতা ডুবে গেল। সেদিকে তাকিয়ে গন্নিবিবি শুধু বলে উঠল, মুঝে সাপ নে কাটা হ্যায়।
    –হা ভগওয়ান। সাপ কাটনে সে জীবন খতম। আর্তনাদ করে বড় মাঝি এক পাল্লা তাগা নিয়ে নিয়ে এলো। তাগাটা পায়ে বাঁধবে, না, হাতে বাঁধে দিশা পেল না। শুধু বলল, সাপ কাহা হ্যায় মাইজি?
    গন্নিবিবির বক্ষদেশ ফাঁকা। সেখানে নিলা দাগ। সাপ এই বক্ষদেশে দংশন করেছে। সেখানে তাঁগা দেয়ার সুযোগ নেই।
    গান গাইতে গাইতে গন্নিবিবির সাপ তরী বেয়ে দূরে চলে যাচ্ছে।
    গন্নিবিবি নীলা হতে হতে চেঁচিয়ে আদেশ করল, অই সাপকো বোলাও।
    তখন তবলচি সারেঙ্গীদাররা ঘুম থেকে উঠে ছুটল সাপকে খুঁজতে।

    চারিদিকে জল করে খল খল। চারিদিকে সাপ নয়–সর্প উধাও। তাঁদের খুজতে দেখে লোকসকল শুধায়, কারে খোঁজেন গো কত্তা?
    তবলচি বলে, সাপ ঢুঁড রহি হুঁ।
    লোকে বলে, তাইলে নাগপুরে যান। এইহানে ক্যান।
    সারেঙ্গীদার কেতা করে বলে, ইয়ে ঠিক সাপ নহি হ্যায়—সর্প-গায়ক।
    লোকে হেসে বলে, অ বুজছি। সর্প-গায়ক। উনি আমাগো কৃষ্ণ ঠাকুর। ঢপ কেত্তনে কৃষ্ণ সাইজা গান করেন। আদতে নাম…
    সেটা শোনার মতো তাগোদ নাই। তবলচি আর সারেঙ্গীদার কৃষ্ণ ঠাকুরকে চেনে। পাড়াগার বিদু-সিধু-গেদুদের চেনে না। তারা একটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য জানতে চাইল, কৃষ্ণ ঠাকুর?

    লোকে বলে, পাগল কিসিমের গায়ক। মন চাইলে গাইতে পারে। থামাথামি নাই। তিনি গাইলে ঘরে ঘরে রাধাদের নিন্দ টুটে যায়। তারা মাথা নেড়ে বলল, ঠিক ঠিক। ঘরে থাকা দায়।
    তবলচিরা বলল, ইস কৃষ্ণ ভগবান কো হমারে নাও মে লে আইয়ে। গন্নি বিবি ইন্তেজার কর রহি হ্যায়।

    তবলচিদের আকাংখিত কৃষ্ণ ঠাকুর তখন চাঁই দিয়ে মাছ ধরার ধান্ধা করছিল। আজ তার দুটো কচুর লতি দিয়ে খাওয়ার হাউস। পায়ে কাদা। কোমরে লেংটি। উর্ধাঙ্গ নাঙ্গা। এই রূপে এসে বললেন, আমি রেডি। বলল, তাইলে চলেন যাই।
    কৃষ্ণ ঠাকুরের তর সইছিল না। যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েই আছে। তবলচিরা তাকে অপাঙ্গে দেখে শুনে বলল, এ্যয়সে লেংটি প্যহনকে আপ জা নহি সক্তে?
    কৃষ্ণ ঠাকুর এই লেংটি বস্ত্রের অধিক কিছু জানে না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাইলে কি লেংটি খুইল্যাই যামু?

    সারেঙ্গীদাররা চোস্ত স্বরে বলে দিল, রয়েল ড্রেস–রয়েল । কপরা চাহিয়ে । রাজকীয় কপরে কে বিনা গন্নি বিবি কে পাস জা নহি সকতে।
    গন্নিবিবির কাছে বিনা রয়েল ড্রে্সে যাওয়া নিষেধ। ফাইনাল। অনেক খুঁজে পেতে সখের যাত্রার দল থেকে যোগাড় হল রয়েল ড্রেস। মাথার একটা মুকুটও জুটল। তার আগায় হাসপাখির পালক ফরফর করছে। কিন্তু সমস্যা হল, জুতো পায়ে লাগে না, সাইজে ছোটো কিংবা বড় । আটে না। জুতো ছাড়া রাজবেশে যায় কি প্রকারে! সব দেখে শুনে তবলচিরা বলল, তো কোলকাতা জাইয়ে কৃষ্ণ ভগওয়ান।
    কোলকাতায় কখন কৃষ্ণ ঠাকুর যায়নি। এই নামে একটা শহর আছে বলে এলাকায় জনশ্রুতি আছে। সেখানে সিকদার বাবুর প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় তরফ সন্তানাদি নিয়ে বসত করেন। এই গাঁও গেরামের হাভাতে প্রজাগণের প্রদত্ত ট্যাক্স থেকে তাদের খরচাপাতি যায়। কৃষ্ণ ঠাকুর তাদের জিজ্ঞেস করলেন, জাইলে তো যাওনই যায়। কিন্তু ট্যাকা দেবে কেডা?

    এলাকার লোকজন মুখ চাওয়া করতে লেগেছে। জমিতে ফসল পুড়ে গেছে। গোলা ঘরে ধান নাই। ট্যাকসো দেওয়ার উপায় নাই। সিকদারবাবু অন্দরে আটকা পড়ছেন। সভ শেষ ভরসা সেন্ট মথুরানাথ সরকার। মুখে শুভ্র দাড়ি। তার একহাতে বাইবেল—অন্যহাতে ছাই বেল। ছাইয়ে পোড়া বেল খেতে খেতে তিনি অতি কোমল করে শুধালেন, কী যাঞ্চা করিতে আগমণ?
    লোকে খিন্নশীর্ণ কণ্ঠে হাত জোড় করে বলল, জুতা। জুতা। একজোড়া সু-জুতা কিন্যা দেন।
    –তোমাদিগের জুতা ক্রয়ের হেতু কি?
    –কৃষ্ণ যাবে রাধার কুঞ্জে—জুতা ছাড়া যায় ক্যামনে। মান আছে না!
    সেন্ট মথুরানাথ মাথা নাড়লেন। বললেন, ওকে। ডোন্ট অরি। কিন্যা দিতে আছি। শুধু তোমাদিগের প্রভুর মহিমাকীর্ত্তন করিতে হইবে। রাজী?
    –রাজী। রাজী।
    এই রাজীর কথায় সেন্ট মহাশয়ের মুখে বড় হতাশা জাগে। তিনি প্রভুর কীর্ত্তন করতে সুদুর শ্রীরামপুর থেকে এসেছেন। এসে এখানে উপসনালয় খুলেছেন। সেখানে প্রভুর কিরতন ছাড়াও বিদ্যাচর্চার ব্যবস্থা রেখেছেন। মুক্তহস্তে দরিদ্র প্রজা সাধারণের সাহায্য করেন। শুধু তার দাবী এই আদি পাপে নিমজ্জিত মেষগুলি প্রভুর খোঁইয়াড়ে ধুকুক। তারা কখনো না করে না। সব বিষয়েই বলে রাজী। কিন্তু তারা ধরা দেয় না। এটা তার কোমল চিত্তে ব্যথা দেয়। তিনি তার উর্দ্ধতন পাদ্রিদের কাছে মুখ দেখাতে পারেন না। তিনি আগত লোকদের বিমর্ষ চিত্তে বললেন, তোমরা তো সকল সময়েই রাজী রাজী। কিন্তু কখনো তো কাজের কাজী হইতেছো না বৎসগণ। প্রভুর কথাতো কেহ বলে না।
    লোকে আরো জোরে বলে, রাজী। রাজী।

    সেন্ট মথুরানাথ সরকারের নিকট থেকে জুতো কেনার টাকা পেয়ে কৃষ্ণঠাকুর সেই রাজবেশ খুলে রওনা হলেন কোলকাতায়। কিছুটা নৌকায়। কিছুটা হেঁটে। কিছুটা স্টিমারে। তিনি জীবনে এই প্রথম কোলকাতায় গেলেন।
    এদিকে দিন যায়। রাত যায়। গন্নিবিবি বজরায় বাইরে বসে থাকেন। ভেতরে ঢোকেন না। পায়ে নূপুর। মাথার ভেতরে সেই সুর—কী সাপে কামড়াইল রে। আহার নাই। নিদ্রা নাই। তিনি অপেক্ষা করছেন একদিন তার কৃষ্ণ ঠাকুর জরিদার জু্তো পায়ে দিয়ে আসবেন। তার বজরায় বসবেন। তিনি তাকে মুজরো করে শোনাবেন—ক্যা করু সজনি আয়ে না বালাম।

    এদিকে কৃষ্ণ ঠাকুরের খবর নাই। শোনা যায়– তিনি তখন চিৎপুর রোডে যাত্রাপালা দেখতে ব্যস্ত। একদিন তাদের সঙ্গে তিনি ভিড়ে গেছেন। তাদের সতী বেউলা পালায় বিবেকের গায়কের কাজ নিয়েছেন। শ্রীমতি মিস টুয়েনটি নাইন বেউলা সুন্দরী। তারপর আর কোনো খবর জানা যায় না। মিস টুয়েনটি নাইনের একটা গান তখন বাজারে প্রচলিত ছিল, কালা তোর তরে কদম তলে চেয়ে থাকি। শুধু কেউ কেউ সন্দেহ করে থাকেন দক্ষিণে সতী বেউলার পালা করতে গিয়ে মিসেস টুয়েন্টি নাইন আর কৃষ্ণ ঠাকুর উধাও হয়ে যান। তাদের বিহনে আর কখনো সতী বেউলা পালা অভিনীত হয়নি। এই তথ্যটি অধুনার বিশিষ্ট যাত্রা গবেষক ডঃ তপনকুমার বাগচী তাঁর পিএইচডি’র থিসিসে উলেখ করেছেন।

    এদিকে গন্নিবিবির মাথার উপর দিয়ে চাঁদ ওঠে। চাঁদ ডোবে। শিশির ঝরে। তারা খসে। সূর্য ওঠে। গণগণে আগুন ঝরিয়ে সূর্য ডুবে যায়। আর ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। তবলচিরা সারেঙ্গিদাররা চেঁচিয়ে বলে, মাইজি, ভিতরে আইসেন। মাইজী ভিতরে আসেন না। তাকে কাল-সাপে কেটেছে। অঙ্গ নীলা হয়ে গেছে। সেই সাপ বিনা এই বিষ জাইবে না। সাপ আসিলে তার ভাও মিলিবে। তিনি তখন ভিতরে জাইবেন।
    এইভাবে গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত, শীত বসন্ত ঘুরে ঘুরে আসতে লাগল। আর বজরাটিও ধীরে ধীরে জলের মধ্যে মাটিবৎ গলে গলে পড়তে লাগল। বজরার লোকজনও কোনো মতে সাঁতরে উঠতে উঠতে ডুবে মরল। কিন্তু গন্নিবিবি জলে ডোবে না– জলের উপরে সেই ভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। দিন যায় আর গন্নিবিবি কায়া থেকে ছায়া—ছায়া থেকে মায়ায় উঠে গেলেন। লোকে এই দৃশ্য দেখে ধন্যি ধন্যি করতে লাগল। বলল, গন্নি মাইকী জয়।
    গন্নি মায়ের কথা অমৃত সমান।
    কুলদা রায় ভনে শুনে পূণ্যবান।।

    ৫. একটি সম্বাদপত্রের সংবাদ : ১৮৭৬ সালের জুন মাসের ১৫ তারিখ
    এই ঘটনাটি ঢাকাপ্রকাশ পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছিল। এটা ঢাকা শহরের প্রথম বাংলা সংবাদপত্র যা বাংলা তারিখ ২৫ ফাল্গুন, ১২৬৭ (মার্চ ৭, ১৮৬১) প্রথম প্রকাশিত হয়। ঢাকার বাবুবাজারে প্রতিষ্ঠিত ‘বাঙ্গলাযন্ত্র‘ নামে বাংলা মুদ্রণযন্ত্র বা প্রেস থেকে ঢাকাপ্রকাশ প্রকাশিত হয়।
    ঘটনাটি শ্রবণপূর্বক ঢাকাপ্রকাশের সাপ্তাহিকীর সম্পাদক কাম প্রকাশক মহাশয় সশরীরে মুকিমপুর পরগণায় এসেছিলেন। ঢাকা হতে অকুস্থলে পৌঁছাতে পঞ্চ দিবস লেগেছিল। চোখের উপরে চশমার কাঁচ পুটুলীতে ঘষে ঘষে তিনি দেখেছিলেন দূরে দূরে দ্বীপের মত ছাড়া ছাড়া বাড়ি জেগে আছে। আর তার চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা। পথ নাই। ঘাট নাই। লোকজন—হাট নাই। তেজা কোনো ঠাই নাই। তার মধ্যে রাজগঞ্জ বাজার। রাজগঞ্জের লোকজন গেছে কোথায়?
    তারা সবাই গেছে মধুমতির পাড়ে।
    সেবার ঢাকা প্রকাশে লেখা হয়েছিল—মুকিমপুর পরগণার বিলে বজরার সলিল সমাধি। আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা মারফৎ জানিতে পারা গেল, ঐ বিল এলাকায় দীর্ঘদিবসযাবৎ একখানি বজরা নৌকা ভাসিতেছিল। দীর্ঘকাল জলে ভাসিয়া থাকিবার ফলে বজরাটির নাটবল্টু খুলিয়া গিয়াছিল। একদিন নিশীথকালে বজরাটি যাত্রীসমেত জলের মধ্যে খণ্ড খণ্ড হইয়া ভাঙ্গিয়া পড়ে এবং নিশীথমধ্যে তাহা ডুবিয়া যায়। বজরাটিকে আর কেহ দেখিতে পায় নাই। তবে যাত্রীদের পরিচয় পাওয়া যায় নাই।
    এই খবরটাতে কিছু ঝামেলা আছে। দেখা যাচ্ছে—খবরটা প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭৬ সালের জুন মাসের ১৫ তারিখ। তখন বর্ষা শুরু হয়েছে। সে সময় এলাকায় কৃষ্ণপালা খ্যাত আমার ঠাকুরদা বিদু রায়ের জন্ম হওয়ার কথা নয়। তার পিতাঠাকুর স্বর্গীয় সিধু রায়ের জন্ম হলেও হতে পারে। তবে ঠাকুরদার যে সময়ে জন্ম আর ঢাকাপ্রকাশের প্রকাশিত খবরের যে তারিখ তাতে সিধু রায় নন, উনি সিধু রায়ের পিতাঠাকুর—অর্থাৎ আমার ঠাকুরদার ঠাকুরদা গেদু রায় হতে পারেন সেই কৃষ্ণঠাকুর। তবে আমাদের পরিবারে কোনোকালে কোষ্ঠি করার চল ছিল না—এখনো নাই। আমাদের জন্ম যথাতথা, বিয়ে হেথাসেথা, মৃত্যু আধা ধাঁধাঁ। আমরা এমনি এসে ভেসে যাই। সুতরাং এই উল্লেখিত কৃষ্ণ লোকটা যে কে, তিনি ঠিক আমাদের কোন ঠাকুরদার ঠাকুরদা তা ঠিক ঠিক জানা যায় না। ডঃ তপন বাকচির অনুমান তার নাম রাম শাম যদু মদুও হতে পারে। লোকমুখে শোনা যায়—তিনি ভালো গীত গাইতে পারতেন। একটা গীত পরবর্তীকালেও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। জহির রায়হান সাহেব ১৯৭০ সালে তার বেউলা সুন্দরী সিনেমাতে ব্যবহার করেছিলেন। গায়িকার নাম –নীনা হামিদ। গানটি নিম্নরূপ—
    কী সাপে দংশিলো লখাইরে হে বিধির কী হইলো…
    সুতানলি সাপোরে ছিল
    ও তার কৃষ্ণবরণ দেহ
    সুতাসম ছিদ্র দিয়া হায় রে
    বাসরে পশিল
    ও বিধি কী হইল।।
    রাত্রি নিশাকালে রে সর্প
    ও ঘুমে সুযোগ নিল,
    সিথান হইতে কালিয়া নাগ রে
    পৈথানে আসিল–
    পৈথানে আসিয়া সর্প পতিরে কাটিল
    ও বিধি কী হইল। ।
    এই গানটি আমার ঠাকুরদা বিদু রায় বেশ মনপ্রাণ দিয়ে আমাদের গেয়ে শোনাত। আমার বাবাকেও গাইতে শুনেছি। আমার বোনসকল ভালোভাবেই গাইতে পারত। এই বিদেশ-বিভূঁইয়ে আমারও কিছু কিছু স্মরণে আছে। একদিন আমার কন্যাদের গেয়ে শোনাতে হয়েছে।
    লক্ষ্যণীয় : দুটোই সর্পসঙ্গীত। কিন্তু দুরকম। দুরকম হাহাকার। কিন্তু এই ঠাকুরদা পর্বে কোনো জুতা কাহিনীর উল্লেখ পাওয়া যায় না। এটা রহস্যজনক।
    অথচ নানা কায়দায় আমরা একটা জুতা কাহিনীই বলার চেষ্টা করছি।

    ৬. ট্রেজারিতে রক্ষিত আত্মজীবনী থেকে : প্রভু অপার মহিমাময়
    সেন্ট মথুরা নাথ সরকারের আত্মজীবনীর একটি হাতে লিখিত কপি ফরিদপুরস্থ কাছারিতে রক্ষিত আছে। ফরিদপুর জেলার জেলাপ্রশাসক (এই নামে কোনো অনুমোদিত শব্দ নাই, উহা ডেপুটি কমিশনার) মুহাম্মদ আহকাম উল্লাহ পাটোয়ারী সাহেবের পারমিশনপূর্বক ডাইরিটি দেখার সুযোগচ আমাদের হয়েছে। ডাইরিটির ১১৯ পৃষ্ঠায় লেখা আছে—
    মধুমতী অত্র এলাকার ভয়ঙ্কর স্রোতোস্বিনী নদী। বর্ষাকালে মাঝে মাঝে কুম্ভীরের উৎপাত দৃষ্ট হয়। ইহার অন্তর্গত মানিকদহ এলাকায় একটা ঘূর্ণিস্রোত রহিয়াছে। উহাকে দহ কহে। মাঝেমধ্যে অইখানে নৌকা ডুবিবার খবর পাওয়া যায়। প্রতিবৎসর শস্যহানি হয়। গতকাইল শোনা গিয়াছে, একখানি বিদেশী বজরা নৌকার সন্ধান মিলিতেছে না। জলের উপর হইতে উধাও হইয়া গিয়াছে।
    আত্মজীবনীটি লেখা হয়েছিল ১৮৭৩ সালে। আর তেমন কিছু জানা যায় নাই। এরপরের পৃষ্ঠায় শুধু লেখা আছে–প্রভু অপার মহিমাময়। তাহার সুসমাচার জগতে ব্যক্ত হোক। তবে ১২০ পৃষ্ঠার পরে আর কোনো পৃষ্ঠা নাই। কালের গর্ভে ছিড়ে গেছে।
    সেন্ট মথুরানাথ সরকারের আদি বাড়ি ছিল যশোহরে। জন্ম ১৮৪৩ সালে। ১৮৬০ সালে হিন্দু কলেজ হতে স্নাতক হয়েছিলেন। সে সময়ের ফরিদপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. ওয়ারলেস কলকাতা মিশন কর্তৃপক্ষকে এ এলাকায় একজন মিশনারি পাঠানোর আবেদন জানান। কিন্তু কেউই তখন এখানে এ কাজে আসতে রাজি হননি। অবশেষে মথুরানাথ বোস এ গণ্ডগ্রামে আসতে রাজি হন। তিনি কলকাতার ভবানীপুরে লন্ডন মিশনারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে ১৮৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমে নৌকাযোগে রওনা হয়ে পনের দিন পর গোপালগঞ্জে এসে পৌঁছান।
    মুকিমপুর পরগণায় দরিদ্র নমশুদ্রপূর্ণ বিল এলাকায় তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন—পাপীতাপীদের উদ্ধারের মানসে। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সেখানে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছিল। একটির নাম মিশন স্কুল। এইখানে পরবর্তীকালে ‘শেখ মুজিবর নামে টুঙ্গিপাড়া হইতে একটি কিশোর’ লেখাপড়া করতে এসেছিল। ১৯৭২ সালে সেই কিশোরের নামেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম হয়-বঙ্গবন্ধু মহাবিদ্যালয়।। মথুরানাথের নামে নয়।
    সেন্ট মথুরানাথের স্থাপিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পিছন দেষ্টে একটি সমাধিক্ষেত্র আছে। সেখানে লেখা আছে—সেন্ট মথুরানাথ সরকার। জন্ম ১৮৪৩ খ্রী। মৃত্যু ১৯০২ খ্রী। একটি এপিটাফও ছিল। সেটা মুছে গেছে। তবে সমাধীক্ষেত্র সংলগ্ন উপসনাগৃহে এখন কতিপয় রমণীরত্ন থাকে। তারা গীত করে—আমার যেমন বেনী তেমন রবে চুল ভেজাবো না। পুরোটা মাগনা শোনা নিসেদ। এখানে ছোট্ট সাইনবোর্ড খাড়ানো আছে– ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল’।
    আমাদের কড়িও নেই। তেল মাখাও নেই। আমরা সখের গবেষক। আমাদের উদ্দেশ্য সেন্ট মথুরানাথ সরকার।
    সমাধীক্ষেত্রে মথুরানাথ একটু দীর্ঘ বিশ্রামেই ছিলেন। তার চুলে ও দাড়িতে ধুলো মাটি। মাথার কাছে একটি শতবর্ষী হাসনুহেনার ঝাড়। সেখানে দুটো টুনটুনি পাখি ঘুরছে। আর চিড়িক চিড়িক করছে। মথুরানাথ সরকার আমাদের দেখে নড়ে চড়ে বললেন, কী চাহ বৎস?
    আমাদের কৌতুহল ছিল—তাঁর ডাইরীর আত্মজীবনীতে উল্লেখিত ঘটনার বাকী অংশ জানা। দীর্ঘ দিন সমাধী ক্ষেত্রে বসবাসের ফলে তাঁর গলা কিছুটা মাটিচাপা ধরনের বসা ছিল। তিনি জানালেন, গন্নিবিবির ঘটনাটি তিনি শুনেছিলেন। তবে তিনি গন্নিবিবি কিনা স্মৃতি ধুসরতা হেতু নিশ্চিত নন। এলাকায় কথিত আছে—বজরাটি ডুবে যাওয়ার পরে জলের তলা থেকে ভেসে উঠল গন্নিবিবির সেই জরিদার মতিপূর্ণ সু-জুতো। কিছুটা শ্যাওলা লেগে সবুজ হয়ে গেছে। ধরতে গেলে ধরা যায় না। পিছলে পিছলে যায়। দূরে দূরে সরে যায়। ডুবে যায়।
    জুতাটি ধরার নিমিত্তে কেউ কেউ মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। নদীকুল হতে ঘূর্ণির নিচে ডুব দিল। সেখান হতে জুতাটি পাওয়া গেল না। পাওয়া গেল একটি সিন্দুক। তার গায়ে আকা বাঁকা অক্ষরে লেখা—ঝা না না ঝা না না ঝা।
    ফলে এলাকার লোকসকল গভীরভাবে মর্মাহত। আশাহত। আমার নিকট তাহারা আসিল। বলিলাম, ওহে প্রভুর মেষশাবক দল, তোমরা আমার নিকট আসিয়াছ কেন? সিকদারবাবুর কাছে যাও। তিনিই তোমাদেগর পত্তনীদার। তোমরা তাহাকে ট্যাকস দেও। তোমাদের হিত-অহিত দেখিভার ভার তাহার উপরে বর্তায়।
    তাহারা বলিল, সিকদারবাবু অন্দরে আছেন। সদরে আসিবার সামর্থ্য নাই্। আপনিই আমগো নিদান। আপনি আমাগো ব্যাদোনা তাড়ান।
    বলিলাম, ব্যাদোনা নহে—উহাকে পাপ কহ। উহা পাপ। তোমরা প্রভুর পদতলে আশ্রয় লও। পাপ হইতে তিনি তারণ করিবেন।
    তাহারা কাঁদিয়া কহিল, প্রভু কেডা আমরা চিনি না। আপনেরে চিনি। বিপদে আপদে আপণাকে আমরা পাই। আপনি বিনা আমাগো গতি নাই।
    শুনিয়া তৃপ্তি হইল। বলিলাম, আজ কী প্রয়োজন?
    তারা কাঁদিয়া বলিল, গন্নিবিবির জুতা আইন্যা দেন।
    –আনিব কি প্রকারে। আমার সাইধ্য নাই। উহা জুতা নহে—ব্ল্যাক ম্যাজিক। ব্লাক ম্যাজিক প্রভুর না-পছন্দ।
    –তাইলে আপনে কী করিতে পারেন?
    সেন্ট মথুরানাথ বয়স হেতু এইটুকু বলে দম নিলেন। আমাদেরকে বললেন, তাহারা পাপীতাপী হইলেও উহাদের আত্মাসকল পীড়িত হইয়া পড়িয়াছে। তাহাতে আমার ক্লেশ লাগিল। কহিলাম, তোমাদিগের প্রশান্তির জন্য একখানা কাষ্ঠনির্মিত সু-জুতা নির্মিত তৈরীর ব্যবস্থা করিতেছি। আর সঙ্গে প্রভুর ক্রুশকাঠি।
    তাহারা আমার নামে জয়ধ্বনি করিয়া উঠিল। উহারা অভয় বানীতে তুষ্ট। শধু আরেকটি দাবি করিল। জুতা জোড়ায় একটু রঙ করিয়াও দিয়েন। তাইলে জল-হাওয়া হইতে রক্ষা পাইবে।
    তখন বাকেরগঞ্জের বিখ্যাত সুতারমিস্ত্রী অনন্ত ঘরামি আসিল। তাহার প্রকৃত বাড়ি পাদ্রী শিবপুর। যথাযথ পরিপক্ক সেগুন কাঠ আনা হইল। তাহা কুদিয়া কুদিয়া তৈরী হইল নৌকাসদৃশ সু-জুতা।
    সেদিন ছিল প্রভুর পবিত্র ভোজ পরবের দিবস। বহুদিন পরে এলাকার লোক সকলে পেট পুরিয়া চাটিয়া পুটিয়া ভোজন করিল। উহারা সু-জুতা জোড়াকে স্থানীয় বটতলায় স্থাপন করিল। সকলে বটতলায় আসিয়া ধ্বনিতে লাগিল—জুতা মইকী জয়।
    সে দিবসে সেখানে প্রভুর ক্রুশপ্রতীকটি লইয়া প্রবেশ করিতে পারিলাম না। বৃদ্ধ বয়সে সর্বত্র যাওয়া করা যায় না। মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখিলাম—লোকে আত্মহারা। তাহাদের বসুমাতা জাগিয়াছে। বসুমতির কল্যাণে একবেলা ভালোমন্দ আহার জুটিয়াছে। ব্যাদোনা জাইলেও জাইতে পারে। বুঝিলাম প্রভুর স্বরূপ বহুবিধ। এই জুতারূপে তিনি এইখানে আবির্ভূত হয়েছে। পাপীতাপিদের হৃদয়ে শান্তি দিতেছেন। ইহার মহিমা অপার। আমার চক্ষুদ্বয় হইতে অশ্রু নির্গত হইতে লাগিল। অগোচরে বলিয়া উঠিলাম—জুতা মাই কী জয়।
    মথুরানাথ থামলেন। একসঙ্গে বহু কথা বলেছেন বলে তার গলা ঘড় ঘড় করতে লেগেছে। একটু খুস খুস করে কাশলেনও। বয়স হচ্ছে। আমাদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন।
    রমণীরত্নবৃন্দ এসময় পরিত্যাক্ত উপসনাগৃহ হতে বের হয়ে এল। তাদের চক্ষে কাজল টানা। তাহাতে তাকানো মানা। পায়ে মতিসদৃশ্য জরিদার জুতা। ঠোটে রং। হাতে চুরি ঝন ঝন করতে করতে বলল, বৎসগণ, এইখানে ফাও আড্ডা মাইরা আমাগো বিজিনেস মাটি করতি পারো না। যাও। কাটো।
    অতপর তাহাদের সমবেত লাস্যময় গীতধ্বনী সমাধীক্ষেত্র প্লাবিত হল। এখন ঢাকা হতে পানের লঞ্চ আসার সময় হয়েছে। অনেক যাত্রী নামবে। তাদের মধ্যে কারো কারো রমণীরত্নের সেবার প্রয়োজন হতে পারে। তারা সেটা জানে বলেই প্রভুর উপসনা গৃহটিতে ছোট ছোট খুপরী ঘর তৈরি আছে। ফলে প্রভুর নাম ভজনা করতে করতে সেন্ট মথুরানাথ সমাধীক্ষেত্রে নিস্ক্রান্ত হলেন। অদ্যাবধি এই সমাধীক্ষেত্র এবং উপসনাগৃহটি প্রাচীন ইষ্টক নির্মিত। অবিশ্বাসে দর্শন প্রার্থনীয়।

    ৭. সিন্দুকপর্ব
    সেন্ট মথুরানাথ সরকারের সমাধীক্ষেত্র ওরফে ‘ফেলো কড়ি মাখো তেলগৃহ ওরফে উপসনাগৃহের অদূরেই নদী। নদীর নাম মধুমতি। মধু না মতি। জ্যোৎস্না উঠলে মতির মত ঝকমক করে। তার মধ্যে শ্রীযুক্তবাবু বিজয়কুমার সিকদার এন্ড কোং বাটি থেকে দশধাপ সিঁড়ি নেমে গেছে রাস্তায়। এখানে অরিজিনাল অর্গানিক আলু পটল উচ্ছে ঝিঙ্গে কুমড়ো বসে। কিছু ঢেপের খই। আর বসে গুড় ও দীঘা ধানের চিড়া। ঠিক সামনেই মোটা খিলান ঘেসে আইকা অলা বাঁশে পুরনো জুবুথুবু মার্কা একটা ঝাড়বাতি ঝোলে। আর পতপত করে ওড়ে লালশালু। একটু খেয়াল করলেই ঠাওর করা যায়—শালু কাপড়ে কিছু বাক্য লেখা ছিল। কালের মত্ততা হেতু আজ তা ধুসর। গদি ঘরে এখন মাছের আড়ত। জলের আষটে গন্ধ। লোকে বলে অন্দরমহলটি এখনও বন্ধ। সিকদারবাবু আর বাইরে আসেন নি। এর মধ্যে রানী ভিক্টোরিয়া প্রয়ান করেছেন। প্রিন্স দ্বারকানাথের ছোট নাতি একটা বই লিখে নোবেল পেয়েছেন। মাউন্ট ব্যাটেন ইন্ডিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। বরিশালের যোগেন নমোশুদ্র মণ্ডল জিন্নাহ সাহেবের সঙ্গে দোস্তী করেছিলেন। শেখ মুজিব জিন্নাহ সাহেবের চেলা ইয়াহিয়াকে পুর্ব পাকিস্তান ছাড়া করেছেন।
    কথিত আছে লোকে সিকদার বাবুর বাটির সামনে কিছুদিন ঘোরাফেরা করে কালো মুখে ফিরে এসেছিল। তারা আর কখন তাঁর দর্শন পায় নাই। তাঁর ম্যানেজার লালাবাবু একটু গম্ভির গলায় উত্তর দিয়েছিলেন, বড়লোকদের বড় বড় ব্যাপার। সব কিছু বুজতে চাইও না। বাবু নাই তো কি তমাগো খাজনা আদায় বাদ বাদ পড়ছে? আমরা আছি না? তাদের কাহিনী এইটুকু।
    সেন্ট মথুরানাথ সরকারের সমাধীক্ষেত্রে ঢোকা যাবে না। সেখানে ধারাবাহিক চুল ভেজাব না। এর মধ্যেই একদিন আমাদের ছোটো ছোটো পায়ের আঘাতে পুরনো সিন্দুকটির বন্ধ দরোজা সামান্য খুলে গেল। এর পরে একটু টান মারতেই দরোজাটা পুরোটা খুলে গেছে। জংধরা হেতু লোহার দরোজাটি খুলে আমাদের ছোটো ছোটো হাতের সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে। ভেঙে যাওয়ার শব্দ হয়েছে
    শব্দ শুনে রান্না ঘর থেকে জননী ছুটে এসেছে। একটু অবাক হয়ে চেয়ে দেখছে—সিন্দুকটি একবারে খোলা। সিন্দুকটিকে কেউ এর আগে খোলা দেখেছে বলে কোনো ইতিহাস নেই। এর কোনো চাবিও ছিল না। আর সিন্দুকে রাখার মত কিছু সহায় সম্পদ ছিল না। এই একটি মাত্র সিন্দুক ছিল এই রাজগঞ্জ এলাকায়। লোকে এ কারণে মান্য করে। বছরে একবার বিশ্বকর্মা পূজার দিনে তেল সিঁদুর পড়ে।
    সিন্দুকটার মধ্যে কিছু পুরনো অন্ধকার। ঠিক অন্ধকারও নয়—গন্ধের ছায়া। জননী এই ছায়া দেখে মাথা নাড়ে। আর বলে, মায়া মায়া। আর টিকটিকির দুটো খোসা কাঁপতে কাঁপতে সিন্দুকের বাইরে এসে পড়ে।
    এর মধ্যে আমাদের পাগল ঠাকুরমা পুকুর পাড় থেকে ছুটে এসেছে। কাঁপতে কাঁপতে হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে এসে সিন্দুকের উপর হামলে পড়েছে। ভিতরেটা তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখছে। পায়ের পাতায় আলতা রঙের মত রক্ত এসেছে। দেখে আমাদের বোন চেঁচিয়ে বলে, অ ঠাকুরমা, কি করতিছো। ওটার মদ্যি মাথা দিও না।
    শুধু মাথা কেন, পারলে ঠাকুরমা নিজেই সেঁধিয়ে যেতে চাইছে সিন্দুকের মধ্যে। মা জননী ঠাকুরমা হাত ধরে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ঠাকুরমাকে সরানো গেল না। নিজেই সরে এলো। কপালের একপাশটা ছুলে গেছে। মুখে কালিঝালি। দুহাতে কালো কালো গুড়োর। সেগুলোকে দেখিয়ে বহুদিন পরে সুস্থ মানুষের কথা বলে উঠল। মাকে একটু হিন্দুস্তানী টোনে শুধাল, দেখতো বউমা, জরি দেখতি পাইতিছো?
    ঠাকুরমাকে কথা বলতে দেখে মা জননী দুর্গা দুর্গা বলে কেঁদে উঠেছে। শোনা যায় ঠাকুরদার সঙ্গে পশ্চিম থেকে চলে আসার পরে এই বাড়িতে আর কথা বলে নি। গুমরে গুমরে থেকেছে। তাঁর কারণ উল্লেখ করে তপন বাকচি ‘যাত্রাপালার ট্রাজেডীর হিরোইন মিস টুয়েন্টি নাইন’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, পুবের বিলাঞ্চলে প্রেমিকের হাত ধরে যেদিন মিস টুয়েন্টি নাইন চলে এলেন, সেদিনই তাঁর মেজ জা লীলাবতী দেবী কানে কানে কয়ে দিলেন, ওলো নটির বেটি নটি, তুই কী জানিস, তোর লাঙ বেটা গন্নি বিবির লগে আসনাই করতি যাওয়ার লাইগা নিজের পায়ের জন্যি জুতো কেনবার গেছিল কোইলকেত্তায়? এই কথা শুনে মিস টুয়েন্টি নাইন দিন চারেক আহার নিদ্রা করে নাই। এই বিল প্রদেশ থেকে ফিরে যাওয়ারও কোনো উপায় জানা না থাকায় তিনি এখানেই থেকে গিয়েছিলেন। তবে তার সুললিত কণ্ঠস্বর আর কেউ কখনো শুনতে পারে নি। লোকে বিস্ময়ে বলে, বিদু বাবু শেষকালে একটা বোবা মাইয়ারে বিয়ে করে আনলো! দেশে কি আর ভালো মাইয়া ছিল না? এই ধরনের আরও কিছু রটনা প্রচলিত আছে। সেটা বড় মহলের কথা। আমরা ছোট মানুষ। তাদের নিয়েই আমাদের সকল কথাবার্তা। সুতরাং ডঃ তপন বাকচির থিসিসকে আমরা এখন বিদায় দিচ্ছি। আমাদের বাড়িতে ফিরে আসি।
    ঠাকুরমা মাকে শুধালো, দেখতো বউমা, জরি দেখতি পাইতিছো?
    আমরা জরি দেখতে চেষ্টা করি। কালো কালো গুড়ো চোখে পড়ে। মা ঠাকুরমাকে দেখতে চেষ্টা করে।
    ঠাকুরমা বলে, মতি দেখতি পাইতিছো?
    আমরা মতি খুঁজে দেখার চেষ্টা করি। তার বদলে দেখি কালো কালো গুড়ো।
    ঠাকুরমা চেঁচিয়ে বলে—জরিদার মতিপূর্ণ সু-জুতা দেখতি পাইতিছো?
    ঠাকুরমা হাতে কালো কালো গুড়ো। জরিও দেখা যায় না। মতিও না। সু-জুতার লেশমাত্র নাই। কোনোকালে ছিল কিনা বলা মুশকিল। থাকলেও শত বছরে সিন্দুকের মধ্যে থেকে থেকে কালো হয়ে গুড়ো হয়ে চিহ্ণহীন হয়ে গেছে। কিন্তু ঠাকুরমা আমাদের দিকে গভীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে। যেন আমাদের একটি জবাবের উপর নির্ভর করছে তার জীবন অথবা মরন।
    মা জননী ঠাকুরমার দুহাত ধরে বলে, হ্যা মা, ওটা জুতা। সু-জুতা। আমরা সবাই দেখতি পাইতিছি।
    ঠাকুরমা চোখের সামনে গুড়ো গুলো ধরে আবার জানতে চায়, এটা পুরুষ মাইনসের, না, মাইয়া মাইনসের জুতা?
    মা জননী বলে, ওটা মাইয়া মাইনসের জুতা।
    ঠাকুরমা চমকে ওঠে। বলে, গন্নিবিবির জুতা। তোগো ঠাকুরদার না। তাইলে তোগো ঠাকুরদা নিজের জন্যি জুতা কেনে নাই। জুতা পইরা গন্নি বিবির লেগে দেখা করতে যায় নাই। আমারে ফাঁকি দেয় নাই। তিনি আমারই সহি মজনুন ছিলেন। দুর্গা। দুর্গা।
    ঠাকুরমা একটি বড় করে শ্বাস নেয়। তার বুক থেকে বহুযুগের চেপে থাকা একটা পাথর নেমে গেছে। এইবার ঠাকুরমার কাঁপুনি থেমে যায়। বহুদিন পরে তাকে হাসতে দেখা যায়। হাসতে হাসতে গুড়ো গুলো বাতাসে ছড়িয়ে দেয়। গুড়োগুলো একটি একটু করে হাওয়ায় ওড়ে। তারপর মাটিতে ঝরে পড়ে। পায়ে পায়ে মুছে যায়।
  • nina | 78.34.167.250 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০১:৫২573626
  • কোনো ভাষা নেই মুগ্ধতা জানাবার-----মাপ ও জানা নেই--এক আকাশও ছোট হবে!
  • h | 127.194.225.127 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৮:৩৬573627
  • সলিড। কোন কথা হবে না। অন্য গুলোর থেকে ভালো না, অন্য গুলোর থেকে একটু কম ভালো। তবে ইটসেল্ফ সলিড।
  • ranjan roy | 24.96.228.44 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৯:০১573628
  • অসাধারণ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন