এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • “ ভিমরতি প্রাপ্তের স্মৃতি রোমোনথ

    Ramkrishna Bhattacharya
    অন্যান্য | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ | ২৩০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.139.29 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ০০:৩৬511623
  • আমি মধ্যবিত্ত সুবিধাভোগী শ্রেণীর অন্তর্গত!মানে, তথাকথিত “এলিট”!!!! চোখের সামনে, অন্যায় দেখলে পিঠ বাঁচিয়ে কেটে পড়ি। নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে, চায়ের দোকানে সবজান্তা মতামত দেই। সুবিধে পেলে, একে অপরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়ার অভ্যাসটা বেশ রপ্ত। রিক্সাওয়ালাকে ১ টাকা কম দেবার জন্য, তার সাথে গলার শির ফুলিয়ে চীৎকার করি। ফরাক্কাতে কত কিউসেক জল ছাড়া উচিত , সে সম্বন্ধে কল্পিত পরিসংখ্যান দেই।
    তবুও তো কুঁজোর চিৎ হওয়ার শখ হয়।
    মুদ্রণ এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমে একটা আলোচনা চলছে, সেটার মধ্যে যতটা না আন্তরিকতা আছে, তার চেয়েও বেশী আছে-প্রচার সংখ্যা এবং টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট বাড়ান।
    এমন একটা একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এই আলোচনা, যেখানে অনেক তাঙ্কিÄক ব্যাপার রয়েছে।অএকজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, এই সব তাঙ্কিÄক ব্যাপার স্যাপার আমার বুদ্ধির বাইরে। তবুও আমরা নিজেদের যতই বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করি না কেন, কোনো না কোন ভাবে জড়িয়ে যাই এইসব বিষয়ে। কারণ একটাই!!!!! প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এইসব ঘটনা প্রভাব ফেলে।
    ছোটোবেলায় মৃত্যু সম্বন্ধে কোনো ধারণা ছিল না। প্রথম প্রথম শুনতাম “ আকাশের তারা”। এই কথাটা ঠিক বুঝতাম না। ঐ টুইংকল টুইংকল লিটল ষ্টার সমগোত্রীয় কিছু ভাবতাম। একদিন, পাড়ার এক জেঠুকে খাটের ওপর শোয়া অবস্থায় ফুল টুল দিয়ে নিয়ে যেতে দেখে হতভম্ব। দাদারা হাঁউমাঁউ করে কাঁদছিল। ঠিক বুঝতে পারি নি। না বুঝেই মনটা কেন যেন খারাপ হয়ে গেছিল। পরে, নিজেই নিজেকে সান্তনা দিয়েছিলাম। জেঠুকে অনেকদিন না দেখে ভেবে নিয়েছিলাম- উনি আকাশের তারা হয়ে গেছেন।
    বড় হয়ে বড় রাস্তায় একদিন দেখলাম,চোখের সামনে একজনকে, বাস চাপা দিয়ে চলে গেল। থ্যাঁতলানো মাথাটা ছটফট করছিল। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ওখান থেকে এক দৌড়ে বাড়ী। মৃত্যু সম্বন্ধে ধারণার একটা আবছা ছায়া মনে ভেসে উঠেছিল। বুঝেছিলাম, মৃত্যু যন্ত্রণাদায়ক। তারপর থেকে রাস্তায় বেরুলেই একটা ঠাণ্ডা অনুভূতি শিঁরদাঁড়ায় ওঠানামা করত।
    রামায়ণ, মহাভারত বাড়ীতে ছিল। পড়ার কিছু না থাকলে ঐগুলো পড়তাম। “ মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন” বা “মৃত্যুপথযাত্রী” কথা দুটো বারবার ঘুরে ফিরে আসতো। চোখের সামনে ভেসে উঠত, চাকায় থ্যাঁতলানো ছটফটে মাথাটা।
    আরও একটু বড় হয়ে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্বন্ধে ইতিহাস, স্কুলের পরীক্ষায় পাশ করার জন্য পড়লাম। পড়েছিলাম, সিপাই বিদ্রোহের কথা। সবটাই না বুঝে মুখস্ত রাখতে হত, পরীক্ষায় পাশ করার দায়ে। আত্মত্যাগ, আত্মবিসর্জন- এইসব ভারী ভারী কথাগুলো বনবনিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দিত। পাশাপাশি, স্লোগান শুনতাম, ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়, অথবা কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না।
    খবরের কাগজে কালো কালিতে লেখা পোষ্টার দেখতাম- কালোবাজারীদের ল্যাম্পপোষ্টে ঝোলানোর প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল, নেহেরু তুমি জবাব দাও।
    আরও একটু বড় হয়ে দেখতাম, পাড়ার কোণে দুটো বাঁশের মধ্যে লম্বা চাটাই লাগানো। সাঁটানো থাকত, “স্বাধীনতা” বলে এক কাগজ। বয়সের তুলনায় অনেক লম্বা ছিলাম বলে পড়তে পারতাম। সকালে সেঁটে দিয়ে যেত। লোকে মন দিয়ে পড়ত। কেউ বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, অনেক সময় পড়ার জন্য লাইন পড়ত।
    বাবুলালের চায়ের দোকানে কিছু লোককে দেখতাম ময়লা পাজামা, পাঞ্জাবী পরা। লাল চা খেতে খেতে কিছু বিষয় নিয়ে গভীর ভাবে আলোচনা মগ্ন। টুকরো- টাকরা কথা ছিটকে আসতো। একদিন একজনকে বলতে শুনলাম-“পার্লামেন্ট শুয়োরের খোঁয়াড়, এটা মেনেই বলছি- পার্লামেন্টে যখন ঢুকেছেন তখন শুয়োরের ঘোঁতঘোঁত সহ্য করতেই হবে, দাদা।”
    উত্তেজিত ভাবে আর একজনকে উত্তর দিতে শুনেছিলাম- “তা হলে বিপ্লবের কথা আর বলা কেন?”
    আরও কয়েকটা কথা শুনেছিলাম। জনগণ তান্ত্রিক বিপ্লব, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব।
    আর এক দিন একটা নতুন কথা শুনলাম। “বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক”। ওদিকে কৈশোর বয়েস। বাস্তুহারা সম্মিলিত উদ্বাস্তু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েদের দিকেই বেশী চোখ । হ্যাফপ্যান্ট পরা থাকায় পায়ের লোম বেরিয়ে থাকতো। দিদিমাকে তাড়া দিয়ে, ফ্যানা ভাত আর আলুসেদ্ধ খেয়ে বেরিয়ে পড়তাম, স্কুলের উদ্দেশ্যে তাড়াতাড়ী । লক্ষ্য ছিল, মেয়ে দেখা।
    কিন্তু, একদিন বাবুলালের দোকানের সামনে একজন একটা খামে ভরা চিঠি দিয়ে বললেন:- এটা অমুকদাকে দিবি। অবাকই হয়েছিলাম। আয়াতোদিন চিঠি দিয়েছি দিদিদের কাছে। এই প্রথম কোনো দাদা, আমাকে চিঠি দিলো আরেক দাদাকে দিতে।
    দৌড়ে গেলাম ঐ দাদার বাড়ী। চিঠি পড়ে মুখ গম্ভীর ভাবে কিছু ভেবে নিয়ে বললেন:- একটা কাজ করতে পারবি রে?
    আমি না বুঝেই, উত্তেজনার চোটে বলে দিলাম- হ্যাঁআআ!
    আজ রাতে, তোদের পুকুর পাড়ে বসে আরো কয়েকজনকে নিয়ে জেগে পাহারা দিবি। পুলিশ যদি দেখিস, তবে লাঠি দিয়ে টিপকলের ওপর বাড়ি দিবি তিনবার! ঠং ! ঠং! ঠং!
    দাদার কাছে তো কথা দিয়ে এলাম। এখন প্রশ্ন হলো, বাড়ীতে অত রাতে ছাড়বে কেন? শান্তি বলল:- আজকাল তো চোরের উপদ্রব বেড়েছে। তাই রাত পাহারার দায়িত্ব পড়েছে আমাদের। এটা বললে, বাড়ীতে নিশ্চয়ই ছাড়বে। আর হলূ তাই। রাত ১১ টায় খাওয়া-দাওয়া সেরে আমরা ৫ জন একটা করে লাঠি হাতে বেরিয়ে পড়লাম।
    সেই সময় পানা ভর্ত্তি পুকুর চারিদিকে। কেবল ঝিঁঝির ডাক। পুলিশের জিপ আমাদের কলোনীর এবড়ো- খেবড়ো রাস্তায় আসতে পারে না ঠিকই, কিন্তু তারা হেঁটেই আসে ভেতরে।
    ঠিক রাত দুটোর সময়, আমরা টের পাওয়ার আগেই-চারজন পুলিশ ঘিরে ধরল আমাদের। টিপকলে ঠং ঠং ঠং করার বদলে নিজের বুকের ভেতরে টের পেলাম সেই শব্দ। একজন নিজের পিস্তল আমাদের দিকে তাক করে বলল:- এয়াই! তোরা এয়াতো রাতে কি করছিস এখানে? বুড়ো উত্তর দিলো:- পাড়ার তরফ থেকে রাত পাহারা দিচ্ছি।
    -থানার পারমিশান আছে তোদের কাছে?
    - না, আজই তো শুরু কোরলাম আমরা। শান্তির ঝটিতি জবাব।
    - হুম! তা ঐ কমিউনিষ্ট শালারা তোদের লাগিয়েছে বুঝি?
    বুড়ো বলল:- চোর কে তো ইংরেজীতে থিফ বলে।
    - ঐ হলো! আমরা পুলিশ! চোর আর কমিউনিষ্ট আমাদের কাছে এক।
    - মানে?
    - শোন, ক মানে হলো কপট, মি মানে হলো মিটমিটে, উ মানে .....
    - থাক, থাক! ওদের মধ্যে একজন বলে উঠল। এদের বুঝিয়ে কি হবে? তার চেয়ে চল, ওদের খুঁজি। ব্যাটারা এখনও এখানে আছে। পালাতে পারে নি। সংগঠন করছে শালারা। পেলে, গরম শিশে ঢুকিয়ে দেবো ব্যাটাদের পেটের ভেতর। .......... ব্যাটারা সংগঠন মারাচ্ছে।
    সেদিন, আবছা বুঝেছিলাম কিছু জিনিস! কিছুদিন পর শুনলাম- পার্টি নাকি ভাগ হয়েছে। আমাদের কয়েকজনকে ডেকে বীরেশদারা একটা বন্ধ ঘরে দেশের আর্থ- সামাজিক ব্যবস্থা বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিছুই বুঝলাম না। এটুকু বুঝলাম, এঁরা ভালো কিছু একটা করতে চাইছেন।
    এই করতে করতে চলে এলো যুক্তফ্রন্ট।
    যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এলো ১৯৬৭ সালের পয়লা মার্চ। ১৯৬৭ সালে, কিছুটা বোঝার মত বয়স হয়ে গেছে আমার। একজন বছর ২৩ এর যুবকের পক্ষে সব বোঝা সম্ভব না হলেও, একটা আদর্শ বোঝার বয়স অন্তত হয়ে গেছে। অনেকের নাম শুনছি তখন। অজয় মুখার্জি; প্রবীণ রাজনীতিক, স্‌ৎ এবং ভালো মানুষ হিসেবে তাঁর দারুণ সুনাম। সেই তিনি ১৯৬০-এর দশকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে তিতি বিরক্ত হয়ে বাংলা কংগ্রেস নামের একটি দল গঠন করেছেন। অবশ্য কংগ্রেসের একটা বড় ভরসা হলো, তখন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত অবস্থায় রীতিমতো মুখোমুখি।
    নির্বাচন সামনে নিয়ে সেটাকেই একমাত্র ভরসা করে নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। আন্দাজ করতে পেরেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও বড় একটা ওলটপালট হতে যাচ্ছে। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে ক্ষমতা কংগ্রেসের মুঠোয়। কুড়িটা বছর স্বাধীনতা আনার সার্টিফিকেট এবং গান্ধী-নেহরুর নাম বিক্রি করে করে রীতিমতো রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছিল কংগ্রেস। ক্ষমতাকে তারা ধরে নিয়েছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সনদ।
    ফলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়তে বাড়তে এমন একপর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, যা কমানোর উপায় ছিল না। তা ছাড়া মানুষও মুখস্থ চেহারা, মুখস্থ আচরণ এবং মিথ্যা আশ্বাসের ঝুড়ির ফাঁসে হাঁসফাঁস করছিল। ঠিক এই সময়েই নির্বাচন। সেই নির্বাচন ছিল পশ্চিমবঙ্গে প্রথম পালাবদলের নির্বাচন। কুড়ি বছরের কংগ্রেস শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এলো যুক্তফ্রন্ট সরকার। মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখার্জি, উপমুখ্যমন্ত্রী সিপিএম নেতা জ্যোতি বসু।
    আমাদের উদ্বাস্তু কলোনীতে তখন একটা দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, গাঁধীজী শুধুমাত্র নেহেরুকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য, ভারত ভাগ মেনে নিয়েছিলেন। পরে, এই ধারণাটা সত্যে পরিণত হয়েছিল, তবে সেটা সুযোগ এবং সময়মত, পরে আলোচনা করা যাবে।
    এর আগে ১৯৬৪ সালে সি পি আই ভেঙ্গে সি পি আই (এম) গঠিত হয়েছিল। সি পি আই (এম)-এর পার্টি কর্মসূচির ১১২ নং ধারায় বলা হয়েছিল, “বর্তমান শাসকশ্রেণীগুলিকে ক্ষমতাচ্যুত করে শ্রমিক-কৃষকের দৃঢ় মৈত্রীর ওপর প্রতিষ্ঠিত জনগনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার স্থাপনের কর্তব্যকে সামনে রেখেও পার্টি যদি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় যে, কোনো অঙ্গরাজ্যে জনগণের আশু সমস্যাবলী প্রশমনের এক বিনম্র কর্মসূচিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এক সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে, তাহলে পার্টি নিশ্চয়ই সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে। অবশ্যই এই ধরনের সরকার জাতির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যাবলী মুলগতভাবে সমাধান করবে না”। ঐ কর্মসূচির ১১৩ নং ধারায় বলা হয়েছিল রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়ে শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষকের দৃঢ় মৈত্রীর ভিত্তিতে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করার কথা।
    সি পি আই ভেঙে সি পি আই (এম) গঠনের সময় তাদের কর্মসূচিতে চালু শোষণমূলক ব্যবস্থাটির আমূল পরিবর্তন, শ্রমজীবী জনগণের নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম ইত্যাদি বিপ্লবী কর্তব্যের উল্লেখ ছিল। এগুলৈ বামপন্থার মূল কথা বলে তখন বীরেশদারা বলেছিলেন। তার সঙ্গেই তারা এনেছিল অঙ্গরাজ্যে অন্তর্বর্তীকালীন চরিত্রের সরকার গঠন করে জনগণকে রিলিফ দেওয়ার কর্মসূচি।
    ( চলবে)
  • maximin | 59.93.217.89 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ০২:০০511634
  • অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। কাল থেকে আবার পড়ব।
  • maximin | 59.93.217.89 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ০২:১৯511638
  • পড়লাম। ভালো লাগছে। তারপর?
  • rupankar sarkar | 113.193.24.15 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ১১:২১511639
  • দাদা, আমি আপনার চেয়ে সামান্যই ছোট (চার বছর)। লেখা পড়ে নিজেদের কম বয়েস দেখতে পাচ্ছি। লিখে চলুন।
  • PM | 86.96.228.84 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ১১:৪৪511640
  • ভালো লাগছে
  • siki | 122.177.158.47 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ১১:৪৮511641
  • শুধু ভালো লাগছে বললে কম বলা হল।

    দারুণ লাগছে। আরও লিখুন।
  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.132.218 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ২২:০০511642
  • এই বয়সে এসে এখন বুঝতে পারছি, বামপন্থার মূল কাজটি অর্থাৎ শোষণমূলক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের কাজটি সিপিআই(এম) সম্পূর্ণ পরিহার করল। যেকোনো মূল্যে সরকারী ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কাজটিকে,তারা একমাত্র বিষয় করে তুলল । ১৯৬৬ সালের খাদ্য আন্দোলনের পরে পরেই অন্যান্য শক্তির সঙ্গে মিলিতভাবে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করে। সিপি আই(এম) নেতা জ্যোতি বসু সেই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। ১৯৬৭ সালের মে মাসে সি পি আই (এম) দার্জিলিং জেলা কমিটির নেতৃত্বে নকশালবাড়িতে জোতদারদের বিরুদ্ধে কৃষক অভ্যুত্থান শুরু হয়। সেই অভ্যুত্থান দমন করতে যুক্তফ্রন্ট সরকারের পুলিশ বিদ্রোহী কৃষকদের ওপর গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সংঘর্ষে একজন পুলিশ অফিসারও নিহত হয়। তদনীন্তন কৃষিমন্ত্রী ও সিপি আই(এম) নেতা হরেকৃষ্ণ কোঙার ( ইনি মারা যান, ১৯৭৪ সালের ২৩ শে জুলাই, আমার বিয়ের দিনে, আর আমি বরবেশেই শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলাম) ঐ পুলিশ অফিসারের মৃতদেহে মালা দিলেও আন্দোলনের শহীদদের প্রতি ন্যূনতম সহমর্মিতাটুকুও জানান নি। নকশালবাড়ি বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে সমাজ জুড়ে যে বিপ্লবী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, তাকে সিপিআই(এম) মোটেই ভালভাবে নেয় নি। এই আন্দোলনকে দলেপিষে মারার রাষ্ট্রীয় নির্মমতাকে তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেদিন সমর্থন জানিয়েছিল।
    এবার ফিরে দেখি, কেন এই নকশাল আন্দোলন?নকশাল আন্দোলনের প্রানপুরুষ ছিলেন চারু মজুমদার। কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (সিপিআই) এর সদস্য চারু ১৯৪৬ সালের উত্তরবঙ্গে সংঘটিত তেভাগা আন্দোলনেও তিনি অংশ নেন। ১৯৬৪ সালে সিপিআই থেকে আদর্শিক মতপার্থক্যের কারনে বের হয়ে সিপিআই (মার্ক্সিস্ট) এ যোগ দেন। এসময় শারীরিক অসুস্থতার কারনে তাকে দীর্ঘদিন বিশ্রামে থাকতে হয়। বিশ্রামকালে তিনি মাও সেতুং এর চীন বিপ্লবকে খুব ভালভাবে স্টাডি করেন এবং একই পদ্ধতিতে ভারতে সমাজ সংস্কারের পরিকল্পনা করেন। ১৯৬৭ সালে সিপিআই (মার্ক্সিস্ট) নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিলে চারু মজুমদার ও অন্যান্য বিপ্লবী নেতাদের সাথে নির্বাচনভিত্তিক নেতৃবৃন্দের চরম তিক্ততার সৃষ্টি হয়।

    '৬৭ সালের মে মাসে দার্জিলিং এর নকশালবাড়ি নামের এক গ্রামে জনৈক বিমল কিষান আদালত থেকে তার নিজের জমি চাষ করার অনুমতি পান। কিন্তু স্থানীয় জোতদারদের গুন্ডারা সেই জমি ছিনিয়ে নেয়। চারু মজুমদার এবং কানু স্যান্যালের নেতৃত্বে গ্রামের নিম্নবর্গ মানুষ জোতদারদের আক্রমন করে জমি ফিরিয়ে দেবার দাবি জানায়। এই ঘটনার জের ধরে ২৪শে মে কুখ্যাত পুলিশ ইন্সপেক্টর সোনম ওয়াংগরি বিপ্লবীদের হাতে খুন হয়। আন্দোলন দমানোর জন্য যুক্তফ্রন্টের পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে গুলি করে এগার জনকে হত্যা করে যার মধ্যে আট জন মহিলা ও দুই জন শিশু।অস্বরাস্ট্রমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। দুই মাসের মধ্যেই পুলিশ এই আন্দোলনকে চাপা দিয়ে ফেললেও এর আদর্শ খুব তাড়াতাড়ী পুরো বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে, নকশালবাড়ি আন্দোলনের সূচনা করে যা পরবর্তী পাঁচ বছর স্থায়ী হয়।

    গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া মানুষ এই আন্দোলনকে তাদের দুর্দশাগ্রস্থ জীবন থেকে উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র পথ হিসেবে দেখতে শুরু করে। ভোটের রাজনীতি যেহেতু স্বাধীনতার বিশ বছর পরও তাদের তেমন কোন কাজে আসেনি, তাই এই সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর হয় ভারতের প্রায় অর্ধেকের বেশি জনসাধারন।

    বিপ্লবীদের নীতি ছিল জমির মালিকানা তথাকথিত মালিকপক্ষ থেকে কেড়ে নিয়ে সেখানে চাষীদের পূনর্বাসন করা এবং পুলিশ বা প্রশাসন মালিকের পক্ষ নিলে তাদেরকেও সশস্ত্র হামলা করা। বাংলার বেশ কিছু জায়গা নকশালদের পুরোপুরি দখলে চলে যায়। সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহন করে উপজাতি সম্প্রদায় বিশেষ করে সাঁওতালরা যারা বছরের পর বছর যাব্‌ৎ শুধু নিগৃহীতই হয়েছে।
    ভারতীয় সমাজে, অন্যায় ও অবিচার একটি শক্তিশালী কাঠামোর ওপরই দাঁড়িয়ে আছে, এটা এখন প্রমাণিত। সবকিছু বাদ দিয়ে কেবল তেলেঙ্গানা আন্দোলনের কথা যদি বলি, তা হলে দেখা যাবে, বস্তুত, এ আন্দোলনটিই ছিল নকশালবাড়ি বিদ্রোহ অর্থাৎ নকশাল আন্দোলনের সূতিকাগার। যত দোষ-ত্রুটিই এ আন্দোলনের থাকুক না কেন, এটিই কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে, শোষিত মানুষকে কীভাবে জেগে উঠতে হয়, দেখিয়ে দিয়েছে সমাজের সবচেয়ে নিপীড়িত কোন কোন জনগোষ্ঠী কীভাবে আত্মসম্মান রক্ষার্থে ফুঁসে উঠতে পারে। এটি পশ্চিমবঙ্গে বর্গাদার আন্দোলনের (বর্গাচাষ প্রথা) রূপ নেয় এবং অন্ধ্র প্রদেশেও সরকারকে বাধ্য করে কিছু ভূমি সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিতে।
    চারু মজুমদারের শ্রেনীশত্রু খতম নীতির বিরোধীতা প্রথম করেন- সুশীতল রায়চৌধুরী। শ্রেনীশত্রু খতম নীতির সমর্থন করেন সরোজ দত্ত। শুধুমাত্র ধনী হবার কারনেই হত্যা করার যে পরিকল্পনা কমরেড চারু নিয়েছিলেন, সেটা সমালোচিত হয় মূলত সুশীতল রায়চৌধুরীর নেতৃঙ্কেÄ। চারু মজুমদারের নেতৃত্বে খতমের লাইনের সমর্থকেরা আন্ত:পার্টি সংগ্রামে জিতে গেলে CPI(ML)এর অভ্যন্তরে কানু সান্যাল এবং সুশীতল রায়চৌধুরীর গণ আন্দোলনের লাইন পরিত্যক্ত হয় । তারপরের ইতিহাস সবার জানা । ব্যক্তি হত্যার রাজনীতির ভ্রান্ত পথে CPI(ML) পরিণত হয় নিছকই একটি সন্ত্রাসবাদী দলে । নকশালবাড়ির নিপীড়িত কৃষকের আন্দোলন পাল্টে যায় শহুরে যুবকদের রোমান্টিক বিপ্লবে । যে আন্দোলনের কথা ছিল গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার, সেই আন্দোলনেই যবনিকা পড়লো কলকাতার কলেজ স্ট্রীটে পুলিশের উপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো মামুলি ঘটনায় । গ্রামে দু’চারটা জোতদারের গলাকাটা আর শহরে বিপক্ষ পার্টির কর্মীদের খতম অভিযানের মধ্যেই স্বপ্নের বিপ্লব দু:স্বপ্নের রজনীতে গিয়ে শেষ হয় ।
    নকশালরা যতটা হিংসার আশ্রয় নেয় সরকার, রাষ্ট্রশক্তি তার পাঁচগুণ হিংসা নকশালদের উপর ফিরিয়ে দেয় । বিপ্লবীদের আত্মত্যাগে ঘটতি ছিলো না । কিন্তু শহীদের রক্ত ব্যয় হয়েছিল বৃথা-দিকভ্রষ্ট কাজে ।
    পার্টি বহুধাবিভক্ত হয়ে যায়। এই বিভক্তি সরকারকে নকশাল দমনে সাহায্য করে এবং মোটামুটি ১৯৭২ সালের মধ্যে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়।

    অবশেষে চারু মজুমদার ১৯৭২ সালের ১৬ই জুলাই তার সহকর্মী দীপক বিশ্বাসের বিশ্বাসঘাতকতার কারনে ধরা পড়েন। ১২ দিনের প্রচন্ড পুলিশ নির্যাতনের পর জুলাইয়ের ২৮ তারিখে তার মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু, স্বাভাবিক বলে তখনকার পুলিশ মহল বললেও, প্রশ্ন উঠতেই থাকে।
    এবার একটু পেছিয়ে যাই। অবিভক্ত কমিউনিষ্ট পার্টি ভাগ হয়েছিল কেন?
    পার্টির মধ্যে গুরুতর মতভেদ, ১৯৬২ সালে চিন ভারত যুদ্ধের সময় ভেসে উঠলো। একটি কারন ছিল চিন ভারত যুদ্ধ, যেখানে ভারতীয় কমিউনিস্টরা কয়েকটি মতবাদে ভাগ হয়ে গেলেন। দলের একটি বিভাগ দাবি করেন যে এটি ছিল একটি সমাজতান্ত্রিক এবং পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব, এবং এইভাবে একটি চিনের প্রতি দরদী অবস্থান। দলে তিনটি ভাগ তৈরী হল- “আন্তর্জাতিকতাবাদের সমর্থনকারী” , “মধ্যস্থতাবাদী” এবং "জাতীয়তাবাদী"।
    “আন্তর্জাতিকতাবাদের সমর্থনকারী”দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম গুলো হলো:- বি.টি. রণদিভে, পি. সুন্দরাইয়া, পূরণচাঁদ যোশী, এম. বাসবপুন্নাইয়া, জ্যোতি বসু, চারু মজুমদার এবং হরকিষেণ সিং সুরজিৎ। এরা চিনের অবস্থানকে সমর্থন করলেন।
    “মধ্যস্থতাবাদী”দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম- অজয় বসু।
    "জাতীয়তাবাদী"দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম-শ্রীপাদ অমৃতপাদ ডাঙ্গে এবং এ.কে. গোপালন।
    ১৯৬২ সালের চিন- ভারত যুদ্ধ প্রত্যক্ষভাবে কমিউনিষ্ট পার্টির বিভাজন বলে এখন বহুল ভাবে প্রচারিত, কিন্তু আসল কারণটা ছিল, “আন্তর্জাতিকতাবাদের সমর্থনকারী” বনাম "জাতীয়তাবাদী"দের মতভেদ। এটা চিন- ভারত যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই ছিল, তবে যুদ্ধটা এক অন্য মাত্রা যোগ করে, এটা অনস্বীকার্য্য।
    তখন এক নতুন পরিস্থিতির মুখে বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন, বামপন্থা। বেনজির আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে। আক্রমণ শারীরিক। বহু বামপন্থী কর্মীকে, দরদীকে শহীদের মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে বামপন্থায়, কমিউনিজমে অটুট আস্থা রাখার মূল্য দিতেই। আক্রমণের ক্ষত তখন (এখনও নয় কি?) হাজার হাজার বামপন্থী কর্মী, কমিউনিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী কর্মী-সমর্থকের শরীরে। আক্রমণের ক্ষত লক্ষ লক্ষ মননেও। যে আক্রমণ নিয়েই অনেকেই হয়েছিলেন ঘরছাড়া, স্বজন-হারা, বামপন্থী মানুষ শিরদাঁড়া সোজা করেই বামপন্থায় বিশ্বাসী। এই সময়ে আক্রমণ যত না শাণিত হয়েছে শারীরিক, তার চেয়েও বেশি নেমে এসেছে মতাদর্শের আক্রমণ। আর এই আক্রমণটাই যে কোনো কমিউনিস্টের কাছে, বামপন্থী মানুষের কাছে অনেক বেশি কষ্টদায়ক। এই আক্রমণটাই যে কোনো কমিউনিস্ট পার্টির কাছেও অনেক বেশি মূল্য চোকানোর শামিল। আদর্শগত এই আক্রমণ শুধু বাংলায় নয়, বাংলার ভৌগোলিক সীমা ছাড়িয়ে গোটা দেশে এমনকি আন্তর্জাতিক পরিসরেও এমন আদর্শগত চড়া আক্রমণের মুখে তখন ( এবং আজও) দাঁড়িয়ে বামপন্থা, কমিউনিজম। এমন আক্রমণের মোকাবিলাতেই মননের সাথে গভীর অধ্যয়ন, সমাজতঙ্কেÄর চর্চা ও কমিউনিজমের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুশীলন জরুরী। একইসঙ্গে পার্টিকর্মী, যোদ্ধা, দরদীদের আদর্শগত আত্মসমীক্ষা ও রাজনৈতিক সমাজ বিশ্লেষণ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। দুর্ভাগ্য বশত সেটা তখন ছিল না, আজও নেই। এই নিয়েই শুরু হয়েছিল- রাষ্ট্র চরিত্রের সংজ্ঞা খোঁজা। এটাই IPS ( ইনার পার্টি স্ট্রাগল) নামে পরিচিত হয়েছিল।
    সামাজিক প্রেক্ষাপটের বিশ্লেষণেই এ তঙ্কেÄর উদ্ভব। বামপন্থার পথের সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে রাষ্ট্র চরিত্রের প্রশ্নটি। এদেশেই মার্কসীয় তঙ্কেÄর উত্থান ১৯২২ সালের গোড়ার দিকে। ঐ সময়তেই মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ মুজফ্‌ফর আহ্মদের। এর আগেও অবশ্য ভারতের চার জায়গায় পার্টি গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। কলকাতা, বোম্বে, লাহোর ও মাদ্রাজ এই চারটি জায়গায় পার্টি গড়ার চেষ্টা হলেও ফলপ্রসূ হয়নি। এর আগে, হয়তো কেউ কেউ জানেন- রাশিয়ায় “ কলোনীয়ান থিওরী” নিয়ে যে সভা হয়েছিল, সেখানে নরেন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য্য ওরফে মানবেন্দ্রনাথ রায় কিছু বলতে চান। কিন্তু তাঁকে বলতে দেওয়া হয় নি। স্বয়ং লেনিনের হস্তক্ষেপে মানবেন্দ্রনাথ রায় বলতে পারেন। লেনিন বলেছিলেন:- উনি বলুন, কারণ যে দেশ থেকে উনি এসেছেন সেই দেশ এখন সাম্রাজ্যবাদীদের কলোনী। এই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ফসল এই আলোচনা সভার মণিমাণিক্য হয়ে থাকবে।
    এবার সঙ্গত কারণেই আমাকে সময়ের বিচারে এগিয়ে আসতে হচ্ছে।আপ্রাসঙ্গিক মনে হবে হয়তো, তবুও দিলাম।
    ‘সাম্যবাদের নামেই অনেকে শিউরে ওঠেন’ এই শিরোনামে-ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী
    কলকাতা, ২০ অগস্ট, ২০১১ তে আমার আনন্দবাজার অনলাইন পত্রিকায় একটি বইয়ের পুস্তক পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছেন:-
    মার্ক্সবাদী বাঙালির কথাবার্তার কিছু নমুনা দেখার জন্য এই সংকলন। গোড়াতেই জানিয়েছেন সৌরীন ভট্টাচার্য। তাঁর সম্পাদিত মার্ক্সবাদী বাঙালি/ নির্বাচিত রচনা সংকলন ১-এর (তালপাতা, ১৫০.০০) ভূমিকা-য় সৌরীনবাবু আলোচনাও করেছেন ব্যাপারটা:‘সব সামাজিক ক্রিয়াকর্মের পিছনেই হয়তো ভাবনা ও তঙ্কÄচিন্তার ভূমিকা আছে। সে ভূমিকা সচেতন বা অসচেতন যাই হোক না কেন। মার্ক্সবাদী রাজনীতির ক্ষেত্রে তঙ্কÄচিন্তার ভূমিকা বলে কয়েই বেশ প্রত্যক্ষ। বর্তমান সংকলনের উদ্দেশ্য এই ভূমিকার একটা নমুনা পেশ করা।’ নমুনা পেশ করার কারণও সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেছেন সম্পাদক, যেমন: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মার্ক্সবাদের সমাপ্তিও যেন ধরেই নেওয়া হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ব্যর্থতার সঙ্গে সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতা, এমনকী মার্ক্সবাদের ব্যর্থতাকেও এক করে ফেলা হচ্ছে, বলা হচ্ছে সমাজতন্ত্র আর মার্ক্সবাদ মূলত এক, ইত্যাদি। এ প্রবণতার প্রেক্ষিতেই পড়ে ফেলতে হবে এ-সংকলনের প্রবন্ধাদি, প্রধানত পঞ্চাশের দশকে লেখা এই রচনাগুলির সময় সারা দুনিয়ার মার্ক্সবাদী শিবিরে রাজনৈতিক বিভাজন তত প্রকট হয়নি। স্বাধীনতার পরে পরে দেশকে নতুন ভাবে গড়ে তুলতে অনেকেই যখন ব্যস্ত, তাঁদের মধ্যে যে সব বাঙালি মার্ক্সবাদী হিসেবে পরিচিত, তাঁরা কী ভাবে বুঝে নিতে চাইছেন চারপাশের সময়টা, মার্ক্সবাদের নিরিখে, তার একটা আন্দাজ দেবে এ-বই। যেমন সমর সেন লিখছেন:‘এখনো তো ইওরোপে ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধতা বহু লিবেরল সাহিত্যিক বৈজ্ঞানিক ও ব্যক্তিবিশেষ জীবন বিপন্ন করে করছেন। কালক্রমে পুরনো আদর্শের রূপান্তর হয়েছে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন এ সত্যেরই উপলব্ধি যাঁরা করেছেন তাঁদের সাম্যবাদে বিশ্বাস করা ছাড়া অন্য উপায় নেই।... অনেকেই লিবেরল বলেই সাম্যবাদী সঙ্ঘে যোগ দিয়েছেন। সাম্যবাদই লিবেরল আদর্শের উত্তরাধিকারী। নতুন তনুতে লিবেরল অতনুর পুনরুজ্জীবন হয়েছে।’ এ রকম প্রতিটি রচনাই তর্ক তোলার জন্যে যথেষ্ট, একই সঙ্গে নতুন ভাবনা উত্থাপনের জন্যেও সচেষ্ট।
    (চলবে)
  • dd | 122.167.43.39 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ২২:২৪511643
  • উঁহু, এই লেখা আমি ঝট করে পড়বো না।
    অনেকটা লেখা হলে অক্ষর ধরে পড়বো।
  • maximin | 59.93.246.236 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ০০:২২511644
  • গতিময় লেখা। আমার পড়া শেষ।
  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.132.14 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ২০:৫৫511624
  • এ দেশে বামপন্থী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ সোমনাথ লাহিড়ী শ্রমিকশ্রেণির প্রথম বাংলা মুখপত্র ‘অভিযান’ বের করতে শুরু করেন বিশ ও তিরিশের দশকের সন্ধিক্ষণে। তিনি-ই ছিলেন সাপ্তাহিক এ-পত্রিকাটির সম্পাদক। সেখানেই প্রথম ধারাবাহিক ভাবে ‘সাম্যবাদ’ লিখতে শুরু করেন তিনি। ব্রিটিশ সরকার জামানত দাবি করায় আর্থিক সঙ্গতির অভাবে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। শ্রীলাহিড়ীর লেখাটি তখন প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘সংবাদ’-এ ধারাবাহিক ভাবে বেরোতে থাকে ‘সমাজ-সাম্যবাদ’ নামে, তারপর সে-কাগজও বন্ধ হয়ে যায় এক সময়ে। ১৯৩১-এর জুলাইতে গোলাপ পাব্লিশিং হাউস-এর মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের হাতযশে লেখাটি শেষ পর্যন্ত বই হয়ে বেরোয়, তখনও শ্রীলাহিড়ী ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সভ্য হননি। সম্প্রতি সোমনাথ লাহিড়ী মেমোরিআল ফোরাম থেকে সেই বইটি, সাম্যবাদ, পুনর্মুদ্রিত (৫০.০০) হল। মুখ্যত এ-দেশের শ্রমিকশ্রেণির কাছে পৌঁছে দেওয়ার রাজনৈতিক প্রেরণাতেই লিখেছিলেন শ্রীলাহিড়ী, এ ছাড়াও যে কারণটা ছিল তা তিনি জানিয়েছিলেন এ-বইয়ের গোড়ার কথা-য়:‘সাম্যবাদের নামেই আমাদের দেশের অনেকে শিউরে ওঠেন। অনেকেরই আবার সাম্যবাদ সম্বন্ধে একদম ভুল এবং আজগুবি ধারণা আছে।... এর দুটো কারণ আছে প্রথম কারণ অজ্ঞতা, আর দ্বিতীয় এবং প্রধান কারণ অপর পক্ষের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা বা প্রচার কার্য্য।’
    অনুরাধা রায় তাঁর মার্কসবাদ ও তার্কিক বাঙালি (সূত্রধর, ১৪০.০০) বইয়ে দীর্ঘ যে ‘প্রাক-কথন’টি লিখেছেন তাতেই মার্ক্সবাদের তঙ্কÄ নিয়ে তর্কের বাতাবরণ তৈরি করেছেন যথেষ্ট। সারা পৃথিবীতেই মার্ক্সবাদের চূড়ান্ত পরাভবের পাশাপাশি বাজার-অর্থনীতির অবাধ জয়যাত্রা ও তার সহযোগী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সুস্থ স্বাভাবিক ব্যাপার মনে হলেও অনুরাধা লিখছেন ‘তবুও কিন্তু বৌদ্ধিক স্তরে মার্কসবাদের পুনরুত্থানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।... পাশ্চাত্যের বেশ কিছু মানুষ এই উত্তর-মার্কসবাদ, এমনকি উত্তর-আদর্শ যুগে মার্কসবাদের প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাচ্ছেন।... এঁরা বলছেন চারিদিকে পৃথিবীটাকে বুঝতে হলে, কিছু নৈতিক মূল্যবোধ যদি এখনও কেউ লালন করে সেগুলি রূপায়িত করতে হলে আজও মার্কসকে দরকার, যতই তাঁর আদর্শ ও প্রয়োগের মধ্যে এতদিন ধরে বিরাট ফারাক তৈরি হয়ে থাকুক।’ এ হেন সেই মার্ক্সবাদকে নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে প্রাক-স্তালিন এবং স্তালিন-অনুশাসিত পর্যায়ে কী ভাবে দীর্ঘ কাল ধরে তর্ক চলেছে বা চলছে, তারই এক চম্‌ৎকার তাঙ্কিÄক ও ঐতিহাসিক খতিয়ান উঠে এসেছে অনুরাধার কলমে।

  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.132.14 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ২০:৫৮511625
  • ৪০ দশকের অশান্ত পরিস্থিতিকে বৈপ্লবিক মোড় দিতে পার্টির অনীহাকে নেতৃত্বের শ্রেণীপরিচয়ের আতশ কাঁচ দিয়ে চিনে নেওয়ার দরকার আছে।অ। ঐতিহাসিক সুমিত সরকার ৪০ দশক, স্বাধীনতা ও দেশভাগ পর্যায়কে সনাক্ত করেছেন সেসময়ের কংগ্রেস নেতৃত্বের সুবিধাবাদের পরিচয় হিসেবে। উত্তাল পরিবর্তনকামী জনগণকে যদি ধার্মিক সংকীর্ণতার বাইরে নিয়ে গিয়ে ভাতকাপড়ের প্রশ্নে রাজনীতিকরণ করা যেত হয়তো মুসলিম বা হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে এতটা ছাড় দেওয়ার দরকার পড়ত না। শোষিত উপনিবেশের সব মানুষ এক দেশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করত। কিন্তু কংগ্রেসি রাজনীতির সে সময় প্রধান লক্ষ্য দেশভাগ আটকানো বা অর্থনৈতিক অধিকারের লড়াই নয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাধীন দেশের ক্ষমতা দখল। দেশভাগ-স্বাধীনতাকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা যায়।
    এই সময়ে, শেকড় থেকে উঠে আসা আগুনের দরকার ছিল। আগুনের তদারকি করার জন্য দরকার ছিল কয়েকজন । কিন্তু তাঁরা ( আমায় ক্ষমা করবেন) দুপুর দুপুর মাছভাত সাবড়ে ভাতঘুম দেওয়ার আগে সিগারেটে আগুন ধরিয়ে সুখটান দিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। তাঙ্কিÄক কচকচানি নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য, তাঁরা ভারতবর্ষের আবহমান কাল ধরে চলে আসা –জাত- পাত, ছোটো জাত, নীচু জাত, বর্ণ নিয়ে মাথাই ঘামালেন না।
    দলের মধ্যবিত্ত নেতৃত্বের কথা যদি মনে করার চেষ্টা করি তাহলে এটা বোঝা দুষ্কর নয় যে -আন্দোলন যখন দলের শ্রেণীস্বার্থকে বিঘ্নিত করেছে আন্দোলন পিছু হটেছে। দলের দক্ষিণপন্থী বিচ্যুতি চেনার এই তো কষ্ঠিপাথর। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনকে যখন পার্টি পেছন থেকে টেনে ধরতে চায়।
    “চল্লিশের মত দশক বাংলাদেশে বড় কম এসেছে। শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দিয়ে, শেষ দেশভাগে। মাঝখানে ১৯৪২-এর সাইক্লোন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন, জাপানী বিমানের বোমাবর্ষণ, মণ্বন্তর, ’৪৫-’৪৬ সালে একের পর এক গণবিক্ষোভ, পুলিশের সাথে খন্ডযুদ্ধ, শ্রমিক আন্দোলন ও ধর্মঘট, কলকাতা দাঙ্গা, নোয়াখালি, স্বাধীনতা। এর মধ্যেই কোথাও আছে তেভাগা। সে সময়ের কমিউনিস্ট কর্মীদের কারো কারো মতে দেশভাগকে আটকানোর ক্ষমতা তেভাগারই ছিল। কষ্টকল্পনা মনে হতে পারে। দেশভাগ তো সমস্ত উপমহাদেশের নিরিখে হয়েছিল। বাংলার বড়জোর বছরখানেক স্থায়ী একটি আন্দোলনের কাছে তাকে আটকানোর জোর হয়তো ছিল না। তবু উঁকি মেরে দেখা যেতে পারে তেভাগার পটভূমি ও ফলশ্রুতি। তেভাগা আলেখ্যে ঝাঁটা ও লাল ঝান্ডা সম্বল নন্দীগ্রামের নারীবাহিনীর শাঁখ-কাঁসি বাজিয়ে পুলিশ, জোতদারের লেঠেলদের মোকাবিলার কিস্যা পড়ি যখন, ইতিহাস নামে যে ভদ্রলোক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা করতে চাইছিলেন না তাঁর অট্টহাসির রেশ কানে বেশ কিছুক্ষণ লেগে থাকে। বাংলার অন্যান্য কৃষক প্রতিরোধের মত তেভাগাও বেঁচে আছে কৃষক সম্প্রদায়ের সুপ্ত, যৌথ অবচেতনে। অবিভক্ত কমিউনিস্ট দলের বিশ্বাসঘাতকতাও যেন জন্মগ্রহণ করে চলেছে নব্য দলের নেমকহারামির মধ্যে।” ( কৃতজ্ঞতা:- দেবর্ষি দাস, বাঙালনামা, « তেভাগার পূর্বকাল উত্তরকাল
    সম্পাদকীয়, ১লা জুন, ২০১০

    ১৯৪৭-এর পর তখনকার পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত সহায় সম্বলহীন উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দারা পরিচিত হল বাঙ্গাল হিসেবে। সবারই অবস্থা সমান। সকলেরই জবর দখল করা জমিতে বসবাস। তাই নাম উপনিবেশ বা কলোনি। প্রতিবেশীর গৃহস্থালী প্রয়োজনীয় বস্তু ধার নেওয়ার চল ছিল, সেই সময়ে। । এর পিছনে যে একদল মানুষের সমূলে উচ্ছেদের, জাতি-দাঙ্গার করুণ কাহিনী আছে তা কেউ জানাল না, জানল না। দেশছাড়াদের যন্ত্রণা কেই বা তেমন করে বোঝে? প্রখর বুদ্ধি বা অনুভবি মন থাকলেই এই যন্ত্রণা বোঝা যাবে না। পরের প্রজন্ম, আমাদেরই ছেলেমেয়েরা, আমাদের অতীতের ভবহ সামাজিক সংঘাত, নতুন দেশে বাস, নতুন পরিবেশ, ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে দারিদে্‌র্‌যর সঙ্গে সংগ্রামের কষ্ট বোঝে না। দূরের মানুষ বুঝবে সে আশা কোথায়? এই সংগ্রামকে হাতিয়ার করে ভাগ হওয়া পার্টি গড়ে তুলল সংগঠন। কেউ বুঝে, কেউ কেউ আমার মত না বুঝে এই আন্দোলনে যোগ দিল।
    আমরা কোথাকার মানুষ? ১৯৪৭-এর আগে ছিলাম ভারতবর্ষে। ১৯৫০–এ আবার এলাম ভারতবর্ষে। এটা প্রহসন ছাড়া আর কী? এই প্রহসনের উত্তর খুঁজতে অনেকেই যোগ দিল উদ্বাস্তু আন্দোলনে।অকেন যোগ দিল? জমি দখলের সংগ্রাম ভেদাভেদমুক্ত পরিবারগুলোকে নিবিড়ভাবে জুড়ে দিয়েছিল। যেসব জমিদারিতে কলোনি গড়ে উঠল সেই জমিদারও ছাড়বার পাত্র নন। তারা রাতে লেঠেল পাঠাত বসতি উৎখাতের জন্য। কলোনিবাসীরা লেঠেল বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সকলে একসাথে লড়াই করত। সবারই উদ্দেশ্য এক – আশ্রয়টুকু ধরে রাখা। তাই কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দেওয়া। তাঙ্কিÄক কচকচানি না বুঝেই। আশ্রয় দরকার। দরকার রোজগার! চাই দুমুঠো ভাত।
    আগেই লিখেছি- “কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না”, পার্টির এই স্লোগান “কানের মধ্যে দিয়ে , মরমে পশেছিল।”
    শ্রেণীর ধারণাটা অনেকের কাছেই ঝামেলা বলে মনে হয়। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শ্রেণী যেমন আছে, তেমন সাংস্কৃতিক শ্রেণীকরণও সমাজে হয়ে থাকে। একটা বিশেষ কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী যখন নিজেদের কর্তৃত্ব ফলিয়ে, সবাইকে আলাদা রেখে সব ক্ষমতা ভোগ করতে চায়, তখনই “শ্রেণীসংগ্রাম” আপনাআপনি শুরু হয়। ভারতে, সব রাজনৈতিক দলই, দেশপ্রেমের মুখোসে বা বিদেশী তঙ্কেÄর ভারতীয় করণ না করেই ভারতের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক শ্রেণীকরণ মানতে চান নি। ফলে, আজকে আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে, নানা রকমের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কুফল। তৈরী হচ্ছে, হিংসার আদর্শ।অযে আদর্শ হিংসার ওপর প্রতিষ্ঠিত সেই আদর্শ আইন, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির মূল সূত্রের মধ্যেও সেই হিংসারই পুনরুৎপাদন করে চলে। মারা যায়, নিরীহ মানুষ। এবার, দরিদ্র বা সম্পত্তিবান তথা অর্থনৈতিক অর্থে দুটো ‘শ্রেণী’।আর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক শ্রেণীর তো তফাৎ আছেই। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা তো ছিলই, ইদানীং চালু হয়েছে, রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা। “তুমি” যদি আমার লোক হও, তাহলেই হবে না! “তুমি” আমার গোষ্ঠীভুক্ত কিনা, সেটাও বিচার্য। আশ্চর্যজনক ভাবে, এই ধারণাটা বুর্জোয়া দলের মধ্যে থাকার কথা, কিন্তু কমিউনিষ্ট পার্টির মধ্যেও এই বিভাজন শুরু থেকেই ছিল। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার আড়ালে এই বিভাজন লুকিয়ে তখনও ছিল, এখনও আছে।
    যে কোনো বিষয় নিয়ে, যদি আলোচনাতে মতানৈক্য হত/ হয়, সেটাতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে ঐকমত্য বলে চালানোর চেষ্টা সব সময়েই বহাল ছিল/ আছে। সংখ্যালঘিষ্ঠের মতামত কি ছিল, কোনোদিনই জনসাধারণ জানতে পারে নি।
    ফলে,পার্টি বিভাজন থেকে শুরু করে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলাদেশ যুদ্ধে পার্টির অবস্থান সবসময় ধোঁয়াশায় থেকেছে। তাই পার্টি সদস্য না হয়েও, সমর্থকরা বিভ্রান্ত থেকেছেন। সদস্যরা মুখ খুলতে পারেন নি, নির্দেশিকায়। আর সমর্থকরা শৃঙ্খলা মেনে।
    তলে তলে যে দলের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, সেটা বোঝবার মত ক্ষমতা থাকলেও, মানতে চান নি সজ্ঞানে। ১৯৭২ সালে, এই রাজ্যে গায়ের জোরে কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করলেও, বিভাজিত পার্টির শাখা সেরকম বাধা দিতে পারে নি। আর মূল পার্টি হয়ে গেছিল কংগ্রেসের লেজুড়।অএই হিংসার আগুন হাওয়া দিয়ে বাড়িয়ে তুললেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সিদ্ধার্থ শংকর রায়। নকশাল পার্টির মোকাবেলার নামে কংগ্রেসের প্রায় প্রত্যেকের হাতে তুলে দিলেন, আগ্নেয়াস্ত্র। শুরু হয়ে গেল অবাধ লুঠতরাজ। হত্যার পর হত্যা। রাজনৈতিক হত্যা যত না হয়েছে, তার চেয়ে বেশী হয়েছে, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য হত্যা। ঈর্ষার জন্য হত্যা! হত্যা তখন এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল। মহিলাদের সন্মান ভূলুণ্ঠিত হল বারবার। ৭০ রের দশকের শেষ দিকে যখন জনতা পার্টির সঙ্গে সি.পি.আই ( এম) এর আসন রফা হলো না, তৈরী হলো বামফ্রন্ট ( সি.পি. আই ছাড়া)। তবুও বামফ্রন্ট নিশ্চিত ছিল না, ক্ষমতায় আসার।অজনতা দলের এতই দাপট তখন। ওলোট পালট করে দিল “জনগণ”!!!!!!!!!! সে এক নতুন “পরিবর্তন”!!!!!!!!!! আশাতীত সাফল্য। মধ্যবিত্ত শ্রেণী প্রাণভরে ভোট দিলেন- বামফ্রন্টকে। শ্রেণী হিসেবে বামফ্রন্ট তখন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিভূ। নেতৃঙ্কেÄও সেই মধ্যবিত্ত শ্রেণী।
    (চলবে)
  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.142.124 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৩:০৫511626
  • অসাম্যের পাইপলাইনে যাদের নিত্য-বসবাস, তাদের একটি বিরাট অংশের পুঁজিই থাকে মাত্র দুটো জিনিস— স্বপ্ন আর আশা। তাই এবারে আবার একটু পেছিয়ে যাই। আপনারা সবাই জানেন- হেমাঙ্গ বিশ্বাসের(জন্ম: ১৪ জানুয়ারি ১৯১২মৃত্যু: ২২ নভেম্বর ১৯৮৭) নাম। মারা যাবার আগে তিনি একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, সৌরী ঘটককে। “পরিচয়” পত্রিকার জানুয়ারী-১৯৮৮ সংখ্যায়,সেটা ছাপা হয়েছিল। গণ সংস্কৃতি আন্দোলনের একটা বড় ভূমিকা ছিল, কমিউনিষ্ট আন্দোলনের ক্ষেত্রে।অতাঁর বলা কথা থেকে কিছু তুলে ধরছি। তা হলে সুবিধে হবে বুঝতে।
    “...... আমাদের প্রধান কাজ হলো সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতি থেকে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে উত্তরণ। আমাদের সমাজে সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রভাব যে কত বেশী, তার উদাহরণ পাওয়া যায়- এখনও জাতপাতের লড়াই, ধর্মীয় সংঘাত, হরিজনকে পুড়িয়ে মারার মত প্রভৃতি ঘটনা। এই সমস্ত সামন্তবাদী চিন্তা এবং ধ্যানধারণা আমাদের ভেতর লুকিয়ে থাকে। আমরা PoliticalEconomics এর চেয়ে ClassStruggle ভালো বুঝি। কিন্তু সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্বটা খুব কমই বুঝি। এই দ্বন্দ্ব সম্পর্কে তখনও আমাদের কোনো পরিস্কার ধারণা ছিল না, এখনও নেই।
    ম্যাক্সিম গোর্কি ১৯৩৫ সালে সোভিয়েত রাইটার্স কংগ্রেসে যে ভাষণ দেন সেখানে তিনি SocialistRealismRevolutionaryromanticism এর কথা বলেন। সে যুগে আমাদের মধ্যে তর্কের বিষয় ছিল,আমাদের মত পশ্চাৎপদ দেশে Socialism না হলে SocialistRealism কি করে হবে?

    এইখানে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে গোর্কি “মাদার” লিখলেন কি করে? তখন তো রাশিয়ায় বিপ্লব হয় নি!!!!!!!!!
  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.142.124 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৩:০৭511627
  • “সাহিত্যে সোশালিষ্ট রিয়ালিজমের এটাই তো বড় প্রমাণ। আমরা এদেশে শুধু গণতান্ত্রিক রিয়ালিজমের কথা বলব না। গোর্কির ভাষায় বলব বেশীর ভাগ লেখা হলো Criticalrealism। অনাচার, দুর্নীতি প্রভৃতির বিরুদ্ধে যে সব গল্প , সেগুলি হল Criticalrealism
    কোনো আন্দোলনকে সামনে রেখে, লিখলে সে লেখা হয় SocialistRealism। সে লেখা কি আমরা লিখেছি? আমরা কেন ক্ষেত মজুরদের হিরো করে নাটক লিখলাম না? তেভাগার লড়াই করে যারা প্রাণ দিল, তাদের আদর্শ ও স্বপ্ন আমরা কিভাবে ফুটিয়ে তুলব, সে নিয়ে ভেবেছি?
    কেন এ কাজ হয় নি? কারণ, বরাবর সংস্কৃতি আন্দোলনের নেতৃত্ব রয়ে গেল মধ্যবিত্তদের হাতে।..........
    ...........যুদ্ধোত্তর যুগে, তেভাগা আন্দোলন একটা বিরাট গণজাগরণের ইতিহাস। তখন আমরা কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে অনেক গান লিখেছি। তেমনি, তেলেঙ্গানা, কাকদ্বীপ নিয়েও আমরা অনেক গান লিখেছি। এর ফলে কৃষকরা জঙ্গী আন্দোলন করলে, সৃষ্টিতে জোয়ার এসেছে। আন্দোলন ভুল কি ঠিক, বড় কথা নয়। আসলে জঙ্গী শ্রেণী সংগ্রাম হলে মন সৃষ্টির জন্য মাতাল হয়ে ওঠে। সেই সময়ে সলিল চৌধুরীর “ শপথ” এক অসাধারণ কবিতা।”
  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.142.124 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৩:১১511628
  • পাঠকদের সুবিধের জন্য :-
    শপথ
    (সলিল চৌধুরীর কবিতা)

    পাষাণী অহল্যা ওগো যত রাজপথ
    কান পেতে কি আমার আগমনী শোন!
    আমিও তো কান পাতি
    আঘাত বিদীর্ণ সিক্ত শত ক্ষতমুখে
    কোথায় সমুদ্রে গর্জে তরঙ্গে উত্তাল
    কোথায় কোরিয়া আর অন্ধ্র কাকদ্বীপ
    রক্তে আঁকা মানচিত্র নব পৃথিবীর,
    পায়ে পায়ে সেই পথে চলি
    আমার এ অঙ্গরাগ
    মিছিলের পায়ে ওড়া ধূলি
    আমার এ কর্মকার মন
    ক্রমাগত শ্বাস টেনে হাপরের মতো
    জ্বেলে রাখে চেতনা আগুন
    হৃদয় পিণ্ডের ঘায়
    তপ্তলাল ইস্পাতের শপথ শানায় ;
    তবু ওগো অহল্যা আমার
    কোথায় বসাব বলো তুমি ফিরে এলে
    আমার কুটিরে আর জ্বলে নাতো আলো
    ভাঙা ছাদ টলোমলো বৃষ্টি এসে পড়ে
    স্তূপাকার ভগ্ন আশা আবর্জনা রাশি
    পরগাছা সরীসৃপ ভলো কুটিল
    বাসা বেঁধে আছে যেথা এক দিন ছিল
    প্রিয়ার চোখের মায়া শিশুদের হাসি |
    অহল্যা আমার শোন!
    আমারও তো শান্তি নেই
    আমার বুকের দুর্গে করে আক্রমণ
    ফ্যাসিস্ত দস্যুর মতো যক্ষ্মাবীজ এসে
    তবু আমি প্রাণপণে টেনে যাই শ্বাস
    আমার বিশ্বাস জানি রক্তকণিকারা
    লাল ফৌজের মতো দুর্জয় সুনিশ্চিত
    আবার দখল নিয়ে দেবে প্রত্যাঘাত
    অমর স্তালিনগ্রাদ
    আবার আমারই বুকে
    ফিরে পাব আমি |

    মিছিলে মিলেছি কেননা বুকের
    কলজের সাথে হাড় পাঁজরেরা
    মিছিলে গিয়েছে কবে একদিন
    জীবনের সন্ধানে
    কেননা আমার শান্তির নীড়
    হাসি আর গান ভালোবাসা দিয়ে
    গড়তে চেয়েছি কর্মমুখর জীবনের মাঝখানে |
    মিছিলে মিলেছি কেননা আমরা
    স্তন্য না পেয়ে মায়েদের কোলে
    বোবা শিশুদের আর্তনাদের
    বাঙময় ভাষা শুনেছি |
    কেননা আমরা ফিরে পেরে চাই
    আমাদের যত হৃত যৌবন
    স্বপ্নকে নিয়ে চোলাই যন্ত্রে
    মদ্যের বিলাসিতা
    কেননা দেশের যত ঘর বাড়ি
    কলকারখানা ধানের খামার
    মাঠ ঘাট পথ ফিরে পেতে চায়
    তাদের জন্মদাতা
    কালপুরুষের হাত থেকে তাই
    জিজ্ঞাসা ছিঁড়ে এনে
    প্রত্যেক মুখে জবাব লিখেছি
    ঘোষণার অক্ষরে
    এ দেশ আমার
    আমাদের মাটি
    এ দেশে যেখানে
    যতকিছু খাঁটি
    আমাদের কলকারখানা আর
    আমাদের নদী খনি ও পাহাড়
    আমাদেরই ভরা সোনার খামার
    আমাদের ভাই আমাদের বোন
    আমরাই যারা খাঁটি
    আমাদের বুকে গড়েছি এবার
    শেষ যুদ্ধের ঘাঁটি |
    এ দেশের প্রতি মায়ের চক্ষে
    আমারই বেদনা ঝরে
    এ দেশের প্রতি শিশুর বক্ষে
    আমারই স্বপ্ন মরে
    আমারই রক্ত ঝরে কাকদ্বীপে
    ডোঙাজোড়া মালদহে
    ভরদ্বাজের হৃদয় পিণ্ডে
    আমারই ধমনি বহে
    তাই দেশে দেশে যত প্রতিরোধ
    তারি মাঝে তুলি রক্তের শোধ
    নানকিং আর প্যারির যুদ্ধে
    আমরাই সাথে আছি
    কাকদ্বীপে মরে আমরা আবার
    তেলেঙ্গানায় বাঁচি।
  • Ramkrishna Bhattacharya GHANADA | 223.223.141.223 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১০:৫৯511629
  • আচ্ছা, এই টই গুলোতে HTMLtag আর ছবি লাগানোর বন্দোবস্ত করা যায় না?
  • rupankar sarkar | 116.202.195.147 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১১ ০৪:০১511630
  • দাদা, স্নৃতি রোমন্থনে ছেলেবেলার কথা বলছিলেন, তার পর সমাজবাদে ঢুকে পড়লেন। মাঝে মাঝে নিজের কথাও একটু লিখুন। আর একটা কথা, ইস্কুল জীবনটা তো কলকাতাতেই, বা নিদেনপক্ষে চৌহদ্দির মধে্‌য়্‌য়ই মনে হচ্ছে, তা কলেজে পড়তে পড়তে হঠাৎ উড়িষ্যায় চলে গেলেন কি করে ?
  • nk | 151.141.84.221 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১১ ০৪:১৮511631
  • কলিঙ্গরাজকুমারী বিদ্যুল্লতার টানে। :-)
    ডি: মস্করা করলাম কিছু মনে করবেন না।
  • GHANADA | 223.223.133.137 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১১ ১১:০৩511632
  • তখনকার ৯-১১ র Highersecondary ১৯৬৪ তে পাশ করি। তারপর দীনবন্ধু এণ্ড্রুজ কলেজে ভর্তি হলেও বাবা আমাকে ওড়িশায় নিয়ে যান। তাঁর মনে হয়েছিল, আমি বখে যাচ্ছি।
    তিনি ওখানে অধ্যাপনা করতেন। এছাড়া আমার জীবন, খুবই সাদামাটা।
    উল্লেখ যোগ্য কিছু নেই।

  • GHANADA | 223.223.134.238 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১১ ২১:১০511633
  • সেই সময়কার কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সলিল চৌধুরীর আরেকটি গণসংগীত হলো ‘কৃষক সেনাদের মুষ্টি তোলে আকাশে’। এই গানে পঞ্চাশের মন্বন্তরের কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের নিয়ে আরো গান তিনি রচনা করেছিলেন, যেমন -

    “তোমার বুকে খুনের চিহ্ন খুঁজি এই আঁধারের রাতে”,

    “পৌষালি বাতাসে পাকা ধানের বাসে”,

    “আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ধান দেব মেপে”

    এহেন সলিল চৌধুরী তেভাগা আন্দোলনের জন্যে সার্থক কবিতা রচনা করবেন সে তো জানা কথা।
    ওয়ার ইকনমিক্স বা যুদ্ধ অর্থনীতি – কথাটা প্রথম শুনি, বীরেশদার মুখে। এই টাকা, পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭২ সালে, বিভিন্ন দেশ থেকে প্রথম আসে । এই টাকার কোনো হিসেব দেওয়ার বাধ্যবাধকতাই থাকে না। সোজা কথায়- আনআকাউন্টেড মানি। এই টাকার একটা বড় অংশ যে নকশাল দমনে ব্যবহৃত হয়েছিল, সেটা বীরেশদার কাছ থেকে পরে জানতে পারি।
    বলা হয়,তখনকার শাসক দলের একটা অংশ, এই টাকার একটা বড় ভাগ হাতে পেয়েছিল, বামপন্থীদের নিকেশ করতে। হতে পারে ভুল! তবে, কিছু যে একটা হয়েছিল, সেটা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পেরেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গে তখন হাতে হাতে বন্দুক। দলমত নির্বিশেষে। বীরেশদাদের আলোচনা থেকে বুঝতে পারতাম, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিরোধী পক্ষ দাবী- দাওয়া নিয়ে বড়জোর মিছিল মিটিং করতে পারে, আর সেটাকে রুখে দেওয়ার জন্য অনেক ব্যবস্থা আছে,কিন্তু সশস্ত্র আন্দোলনের মোকাবেলা করার জন্য রাষ্ট্রশক্তি “ বন্দুকের নলকেই ক্ষমতার উৎস” হিসেবে ব্যবহার করে।
    একজন, শুধু একজন ছাড়া পুলিশের তখনকার বড়কর্তারা নাকি এই হিংসার বিরুদ্ধে ছিলেন। তবে তাঁদের এই আপত্তি খড়কুটোর মত ভেসে গিয়েছিল। মানুষখেকো “বাঘ” তখন রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে। কোলকাতার যুবকের দল, রোমান্টিসিশমের জন্য হাতে বন্দুক নিয়েছে আর রাষ্ট্রশক্তির হাতে তো পুরো ক্ষমতাটাই। মধ্যে ঢুকে পরেছে- ওয়ার ইকনমিক্স।
    বীরেশদা বলেছিলেন, রাষ্ট্রের এই হত্যার রাজনীতি এসেছিল দক্ষিনী এক রাজ্য থেকে। সোজা খতম কর, এই ছিল তাদের স্লোগান। তাহলে, বিচার ফিচারের হ্যাপা পোয়াতে হয় না।
    দুর্বার গণআন্দোলনের ভিত্তি নড়ে যাচ্ছে, বলেছিলেন বীরেশদা।
    বীরেশদাদের মূল বক্তব্য ছিল:-নকশাল আন্দোলনের ভিত্তি ছিল চায়নায় মাও সেতুং এর সাফল্য। মাও সে তুং সেখানে কেন সফল, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু এভাবে জমি অস্ত্র দেখিয়ে কেড়ে নিয়ে অল্প কিছুদিনের জন্য হয়ত চমক দেখানো যায়, দীর্ঘমেয়াদের আন্দোলন সফল করা যায় না। সে হিসেবে তাদের মূল ভিত্তিটিই ছিল অবাস্তব। ষাটের দশকে বিশ্বজুড়ে মাও এর যত ভক্ত ছিল, খোদ চিনেও বোধ হয় অত ভক্ত ছিল না। মাও এর নীতি তাঙ্কিÄকভাবে শুনতে ভাল লাগে, কার্যক্ষেত্রে অচল।
    আবার আর একটি গোষ্ঠীর বক্তব্য ছিল:- নকশালের মূল নীতি ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং সাম্যবাদ। তাদের কর্মকান্ডে যত ভুলই থাকুক না কেন, মূল নীতিটি মূল্যহীন হচ্ছে না কোনভাবেই।
    এই বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং সাম্যবাদের তঙ্কেÄর মধ্যে ঢুকে গেল ওয়ার ইকনমিক্স। কেন্দ্রে তখন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস। নকশালদের মধ্যে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে দিয়েছিল ।অসেই কংগ্রেসীরা নকশালের নাম ডোবানোর জন্য বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কাজে নিজেদের নিয়োগ করে, সরকারের নির্দ্দেশে। “জনগণ” বুঝে গিয়েছিল এই খেলাটা।অতাদের নাম দিয়েছিল- কংশাল।
    এর দশ বছর আগে,১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক মহাবিতর্কের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলনে ধরে ভাঙন।
    ভারতের বিশাল কৃষকশ্রেণীর যে নির্মম শোষণ-নির্যাতন ভোগ করতে হচ্ছে, সেটা পার্টির নেতারা জানলেও, তারা তাঙ্কিÄক ব্যাপারে মশগুল।
    ধনপতিদের সংখ্যা ভারতে তখন বাড়ছে। তেমনি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের এ দেশেই বাস । দেশটির কৃষি, শিল্প সবখানেই তখন থেকেই বহুজাতিক পুঁজির আগ্রাসন বেড়ে চলেছে। ফলে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য দিন দিন বেড়ে চলল। এর সঙ্গে যুক্ত হল ভারতের বিশাল খনিজ সম্পদ বিদেশি করপোরেট কোম্পানির দখলে নেওয়ার চেষ্টা। ভারতের খনিজ সম্পদের একটি বড় অংশ আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে। ভিটেমাটি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ঐ সব রাজ্যের জনগণের যে সব ইচ্ছা- আকঙ্খা, সেসবের দিকে নজর গেল না পার্টির নেতাদের। তাঁরা ব্যস্ত ছিলেন- রাষ্ট্রচরিত্রের ব্যাখ্যা নিয়ে।
    বীরেশদারা আওয়াজ তুলেছিলেন- এইসব আপাতত বন্ধ রেখে, ঐসব রাজ্যে গিয়ে পার্টির ভিত্তি বাড়াতে।অতঙ্কÄবিদদের কাছে, মধ্যবিত্ত, নিম্নবর্গের মানুষের চৈতন্য বলে কোনো কিছু ধরা পড়েনি। ফলে, নিম্নবর্গের মানুষের যে খাদ্য, বস্ত্র, অরণ্যের অধিকারের লড়াই, তা তারা দেখতে পায়নি।আথচ, পার্টির মধ্যে সব মধ্যবিত্ত নেতা!
    মানুষ ছাড়া বিপ্লব কার সঙ্গে করবেন, কমরেড? আওয়াজ উঠল, বিভক্ত পার্টির মধ্যে।অপ্রধান ও মূল সংঘাতগুলো (কনট্রাডিকশনস) বের করার কোনো চেষ্টাই ছিল না।
    এদিকে লোক মরছে! কে বা কারা মরছে, তখন আর বিচার্য্য নয়। লোকে মরুক! এটাই শাসকশ্রেণী চাইছে। তার বিরোধীতা করার কোনো চেষ্টা আন্তরিক ভাবে ছিল না। শুধু মুখেন মারিতং জগ্‌ৎ।
    বীরেশদারা তখনও বলে চলেছেন:- বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী দলের বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বাধীন সর্বহারা পার্টির লড়াই যদি করতেই হয় তবে শ্রমিক শ্রেণীকে নেতৃঙ্কেÄ আনতে হবে।
    হল না! এদিকে,হত্যা ছিল হয় রক্ষীবাহিনী, অথবা সরকারের তৈরী কর্মীবাহিনীর গুপ্তহত্যা। হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে হত্যা, তখন ছিল পশ্চিমবঙ্গের ভবিতব্য।অহিন্দু বলি, ইসলামী বলি, কমিউনিস্ট বলি,সবাই তাকিয়ে রয়েছেন বাইরের দিকে। নিজের দেশের মাটি, নদী, ঝড়বৃষ্টিতে সিক্ত যে ভূমি, তার দিকে কারো নজর নেই।
    পৃথিবীর প্রত্যেকটি রাজনৈতিক আন্দোলনেরই দু’টি দিক থাকে । একটি তাঙ্কিÄক (ডগম্যাটিক) অপরটি প্রায়োগিক (এপ্লায়েড) ।
    এ দুইয়ের মধ্যে একটা অবশ্যম্ভাবী দ্বন্দ্ব চলে, যদি সেই আন্দোলনটি জীবিত ও সক্রিয় অবস্থায় থাকে।
    এটা ঘটনা যে, ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্র হলো বুর্জোয়া গণতন্ত্র, যা ধনীক শ্রেণীর দ্বারা পরিচালিত এবং ধনীক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষায় সদাই ত্‌ৎপর । তাই, ইনকাম ট্যাক্সের নিয়ম বারবার বদলানো হয়েছে, কিন্তু শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার জন্য যে নীতি (IndustrialDisputeAct), সেই নীতি কিন্তু মাত্র বার কয়েক বদলান হয়েছে। সেটাও হয়েছে, শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলনের জন্যই। একটা-দুটো বিদ্রোহ নয়, বিরাট ভারত ভূমিতে অসংখ্য বিদ্রোহ হয়েছে । বিদ্রোহের আগুন কখনো নিভেছে । ছাই চাপা আগুন কখনো ধিকি-ধিকি জ্বলেছে । সুপ্ত আগুন কখনো আবার ভস্ম শয্যা থেকে জেগে উঠে পরিপার্শ্বকে একেবারে গরম করে দিয়েছে । মোটকথা ভারতবর্ষ নামে দেশটা সব সময় গরম কড়াইয়ের মতো ফুটছে, তাতছে । দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ (বিশ্বে আয়তনে সপ্তম বৃহত্তম, জনসংখ্যায় দ্বিতীয় বৃহত্তম) ভারতবর্ষের রাষ্ট্রনৈতিক পরিকাঠামো গণতান্ত্রিক হওয়ার পরেও এর বিপুল জঠরে বিদ্রোহের বিরাম নেই । বহুত্ববাদী (প্লুরালিস্টিক) বিশাল রাষ্ট্রটিতে সর্বদাই সামাজিক-রাজনৈতিক সংঘর্ষ চলছে । এবং দেশটির চরিত্রের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এখানকার বিদ্রোহগুলিও বহুমাত্রিক (মাল্টি-ডাইমেনশনাল) চরিত্রের ।
    এই আলোচনাগুলৈ শুনতাম- দাদাদের মুখে। মনে জেগে উঠতো অনেক বিপ্লব।

  • Nina | 223.29.205.110 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১১ ২৩:১৩511635
  • ঘনাদা
    তুসি গ্রেট হো :-)
  • aranya | 144.160.130.16 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ০৮:৫২511636
  • এই লাইনটা বড় ভাল লাগল - 'নিজের দেশের মাটি, নদী, ঝড়বৃষ্টিতে সিক্ত যে ভূমি; তার দিকে কারও নজর নেই'।
    অন্য দেশের বড় চিন্তাবিদ বা নেতাদের কাজ স্টাডি করা যেতেই পারে, কিন্ত দেবতার আসনে বসিয়ে তাদের থিয়োরী/মডেল ভারতে ডিটো কপি করার চেষ্টা একটা হাস্যকর ব্যাপার।
  • Ghanada | 223.223.138.18 | ২৩ ডিসেম্বর ২০১১ ২২:৩৪511637
  • এবার একটু বর্তমানে ফিরে আসি।
    ভারতীয় বংশোদ্ভূত নোবেলজয়ী ক্যারিবিয়ান লেখক ভি.এস নাইপল একবার বলেছিলেন (১৯৯১-এ প্রকাশিত তাঁর “এ মিলিয়ন মিউটিনিজ” গ্রন্থে)- ভারত হলো নিযুত বিদ্রোহের দেশ । একটা-দুটো বিদ্রোহ নয়, বিরাট ভারত ভূমিতে অসংখ্য বিদ্রোহ হয়েছে । বিদ্রোহের আগুন কখনো নিভেছে । ছাই চাপা আগুন কখনো ধিকি-ধিকি জ্বলেছে । সুপ্ত আগুন কখনো আবার ভস্ম শয্যা থেকে জেগে উঠে পরিপার্শ্বকে একেবারে গরম করে দিয়েছে । মোটকথা ভারতবর্ষ নামক দেশটা নিরন্তর তপ্ত কড়াইয়ের মতো ফুটছে, তাতছে । দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ (বিশ্বে আয়তনে সপ্তম বৃহত্তম, জনসংখ্যায় দ্বিতীয় বৃহত্তম) ভারতবর্ষের রাষ্ট্রনৈতিক পরিকাঠামো গণতান্ত্রিক হওয়ার পরেও এর বিপুল জঠরে বিদ্রোহের বিরাম নেই । বহুত্ববাদী (প্লুরালিস্টিক) বিশাল রাষ্ট্রটিতে সর্বদাই সামাজিক-রাজনৈতিক সংঘর্ষ চলছে । এবং দেশটির চরিত্রের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এখানকার বিদ্রোহগুলিও বহুমাত্রিক (মাল্টি-ডাইমেনশনাল) চরিত্রের ।
    একেবারে সাম্প্রতিক কালে যে বিদ্রোহকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং স্বমুখে দেশের সবথেকে বড় অভ্যন্তরীন বিপদ বলে উল্লেখ করেছেন, তার নাম- মাওবাদী বিদ্রোহ । দক্ষিণ-মধ্য ও পুর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মাওবাদীরা তাদের সশস্ত্র সংগ্রাম চালাচ্ছে । পৃথিবীর প্রত্যেকটি রাজনৈতিক আন্দোলনেরই দু’টি দিক থাকে । একটি তাঙ্কিÄক (ডগম্যাটিক) অপরটি প্রায়োগিক (এপ্লায়েড) । এবং এ দুইয়ের মধ্যে একটা অবশ্যম্ভাবী দ্বন্দ্ব ও চলে, যদি সেই আন্দোলনটি জীবিত ও সক্রিয় অবস্থায় থাকে । ভারতের মাওবাদী আন্দোলনও এর ব্যতিক্রম নয় । মাওবাদীদের যে জঙ্গী গোষ্ঠীটি সশস্ত্র আন্দোলন চালাচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে তাদের পরিচয় হলো-CPI (Maoist) বা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) । যদিও “মাওবাদ” শব্দবন্ধনীটি নিয়েই যথেষ্ট বিতর্ক আছে খোদ বাম রাজনীতির অন্দরেই । একদল তাঙ্কিÄক বলেন, কমিউনিস্ট দর্শনশাস্ত্রে মার্কসবাদের পাশাপাশি লেনিনবাদ বলে যেমন কথা আছে, মাওবাদ বলে তেমন কিছুই নেই । কেননা, ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের মতো মার্কসবাদের ভিতরে মাওসেতুং নতুন কোন তঙ্কÄই আরোপ করে যাননি । মাও নিজেই নাকি সে কথা কবুল করে গেছেন । এই তাঙ্কিÄকদের মতে, কমিউনিস্ট দুনিয়ায় মাওসেতুংয়ের চিন্তাধারা বলে একটি কথা চালু থাকলেও “মাওবাদ” বলে আদপেই কিচ্ছু নেই ।
    মাওবাদীরা ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার উচ্ছেদ চায়:
    মাওবাদ বা মাওসেতুংয়ের চিন্তাধারা, যার উপর ভিত্তি করেই মাওবাদীরা তাঁদের কর্মকান্ড চালান, একটা ব্যাপার খুব পরিষ্কার- নীতিগত বা ব্যবহারিক কোনও ভাবেই তাঁরা ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রকে স্বীকার করেন না । এখানে উল্লেখ করা দরকার, CPI (M) নামক যে দলটি তিনটি রাজ্যে সরকার চালাত আর এখন একটা রাজ্য চালায় তারাও নীতিগতভাবে (থিয়োরেটিকালি) ভারতবর্ষের সংবিধান, সংসদীয় ব্যবস্থাকে মানেনা । যদিও ব্যবহারিকভাবে (প্‌র্‌যাক্টিকালি) সি পি এম ভারতের সংবিধান কে কবুল করে নেওয়ায় তারা একদিকে যেমন সাম্যবাদী হয়েও সংসদীয় গণতন্ত্রে ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে, অন্যদিকে ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থাও সি পি এম দলটিকে দিব্যি নিজের গর্ভে হজম করে নিয়েছে । কিন্তু মাওবাদীদের ধ্রুব বিশ্বাস ভারত একটি আধা সামন্ততান্ত্রিক, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা । ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্র হলো বুর্জোয়া গণতন্ত্র, যা ধনিক শ্রেণীর দ্বারা পরিচালিত এবং ধনিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষায় সদাই নিয়োজিত । মাওবাদীরা শুধু বিশ্বাস করেই থেমে থাকতে চায়না, নিজেদের বিশ্বাসকে হাতে-কলমে প্রয়োগও করতে চায় তারা । সমাজের ভুমিহীন কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ, আদিবাসী, নির্যাতিত জাতি গোষ্ঠী, বিভিন্ন প্রান্তিক বর্গ, শহুরে নিম্নমধ্যবিত্ত, বস্তিবাসী- সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে বৃহত্তর শ্রেণী সংগ্রাম গড়ে তোলার কথা বলে মাওবাদীরা । সেই চলমান সংগ্রামকে সশস্ত্র আন্দোলনের রূপ দিতেও বদ্ধপরিকর তারা । এবং খন্ড-খন্ড সশস্ত্র আন্দোলনকে সংহত করে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ভারতের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রশক্তিকে পর্যুদস্ত করে ন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করাই মাওবাদীদের চূড়ান্ত লক্ষ । বোঝাই যাচ্ছে, বলপুর্বক রাষ্ট্রক্ষমতা দখল এবং ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার সম্পূর্ণ উচ্ছেদ চায় মাওবাদীরা ।
    বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে আজকের মাওবাদীদের পুর্ব-পুরুষদেরও লক্ষ্য ছিল একই- বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রে শ্রেণী চরিত্রের পরিবর্তন এবং জনগণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ভারতবর্ষের স্থাপন । বছর চল্লিশ আগে মাওবাদীদের পূর্বজরা যখন “ বসন্তের বর্জ নির্ঘোষ” শুনিয়ে ছিলেন, তখন তাঁদের সামনে বিপ্লবের জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে উপস্থিত ছিল চেয়ারম্যান মাও- এর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবোত্তর নবীন গণচীন , সেদিনের নকশালরা ভারতের বুকেও মাও সেতুংয়ের আদর্শ অনুসরন করে একটি কৃষি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিলেন- যা ভারতের বুর্জোয়া গণতন্ত্র আর ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অপসারণ করে সমাজতান্ত্রিক ভারতবর্ষের জন্ম দেবে । সেদিনের নকশালপন্থী আর আজকের মাওবাদীদের স্বপ্ন ও সাধনার মধ্যে সব থেকে বড় গুণগত পরিবর্তন হলো- আজকের মাওবাদীদের হাতে মাওয়ের তঙ্কÄ ও দর্শন থাকলেও তাদের চোখের সামনে ‘মডেল’ হিসেবে কোন মাওবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থাই নেই । চেয়ারম্যান মাওয়ের মহাচীনে এখন যেটা চলছে, সেটা যে একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার ঘেরাটোপে পুঁজিবাদের নির্লঙ্কÄ তোষণ সে ব্যাপারে ধ্রুপদী মাওবাদীদের মনে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই ।
    নকশাল আন্দোলনের ভস্ম থেকেই মাওবাদীদের উত্থান:
    যদিও আলোচ্য নিবন্ধে ভারতের ঐতিহাসিক নকশাল আন্দোলন নিয়ে বিস্তারিত চর্চার সুযোগ নেই কিন্তু বর্তমান মাওবাদী বিদ্রোহ নিয়ে যে কোনও আলোচনাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, যদি সেই আন্দোলনের উদ্ভব এবং রূপান্তর নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনাই না হয় । ভারতের কমিউনিষ্ট রাজনীতিতে তৃতীয় বিভাজনটির সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে মতার্দশের প্রশ্নেই । সিপিএস এর ভেতর একটি অংশ গোড়া থেকেই মনে করত-কৌশল হিসেবেও সংসদীয় রাজনীতি অংশ্রগ্রহণ করার দরকার নেই । শ্রেনী সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে আধা-সামন্ততান্ত্রিক, আধাঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে অবিলম্বে সমাজতন্ত্র স্থাপনই পার্টি লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে তারা মনে করতো । ১৯৬৭সালের ২৪শে মে পশ্চিমবঙ্গের তরাইয়ের ক্ষুদ্র গ্রাম নকশাল বাড়ির কৃষক অভুৎত্থানের স্ফূলিঙ্গের মাধ্যমে এই গোষ্ঠীরই উত্থান ঘটলো প্রকাশ্যে । সিপিএম’র ভেতর যারা নকশাল বাড়ির কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা সবাই দু’বছরের চেষ্টায় এক ছাতার তলায় আসার পর CPI(ML) বা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী) নামে আরো একটি কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করলেন ১৯৬৯ সালের ১লা মে কলকাতায় । ততদিনে নকশাল বাড়ির কৃষক আন্দোলন একটি “মিথ” এ পরিণত হয়ে গেছে । CPI(ML)এর পথ-মত-কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে পরিচিতি পেল নকশালবাড়ির নামেই । একটি অখ্যাত গ্রাম ইতিহাস রচনা করে বিখ্যাত হয়ে গেল ভুবন জুড়ে ।
    জন্মলগ্ন থেকেই CPI(ML)এর ভেতরেও নীতির প্রশ্নে তীব্র মত পার্থক্য ছিল । একদল বললেন-সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তো করতেই হবে কিন্তু গণ আন্দোলন, গণ সংগ্রামের পথেই বিপ্লবের প্রাথমিক ধাপ পেড়োতে হবে, বিপ্লবের ভিত রচনা করতে হবে । আরেকদল বললেন-গোপন পার্টির মাধ্যমে শ্রেণী যুদ্ধ শুরু করতে হবে । শ্রেণী শত্রু চিহ্নিত করে তাদের খতমের মাধ্যমে সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে । চারু মজুমদারের নেতৃত্বে খতমের লাইনের সমর্থকেরা আন্ত:পার্টি সংগ্রামে জিতে গেলে CPI(ML)এর অভ্যন্তরে কানু সান্যালের গণ আন্দোলনের লাইন পরিত্যক্ত হয় । তারপরের ইতিহাস সবার জানা । ব্যক্তি হত্যার রাজনীতির ভ্রান্ত পথে CPI(ML) পরিণত হয় নিছকই একটি সন্ত্রাসবাদী দলে । নকশালবাড়ির নিপীড়িত কৃষকের আন্দোলন পাল্টে যায় শহুরে যুবকদের রোমান্টিক বিপ্লবে । যে আন্দোলনের কথা ছিল গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার, সেই আন্দোলনেই যবনিকা পড়লো কলকাতার কলেজ স্ট্রীটে পুলিশের উপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো মামুলি ঘটনায় । গ্রামে দু’চারটা জোতদারের গলাকাটা আর শহরে বিপক্ষ পার্টির কর্মীদের খতম অভিযানের মধ্যেই স্বপ্নের বিপ্লব দু:স্বপ্নের রজণীতে গিয়ে শেষ হয় ।
    নকশালরা যতটা হিংসার আশ্রয় নেয় সরকার, রাষ্ট্রশক্তি তার পাঁচগুণ হিংসা নকশালদের উপর ফিরিয়ে দেয় । বিপ্লবীদের আত্মত্যাগে ঘটতি ছিলো না । কিন্তু শহীদের রক্ত ব্যয় হয়েছিল বৃথা-দিকভ্রষ্ট কাজে ।
    ১৯৭২ সালের ২৮শে জুলাই পুলিম হেফাজতে চারু মজুমদারের মৃত্যুর পর CPI(ML)বিভক্ত হয়ে পড়ে । ভগ্ন মনোরথ নকশালদের অসংখ্য গোষ্ঠীর অধিকাংশই ব্যক্তিহত্যার রাজনীতি,খতমের লাইন ত্যাগ করে গণআন্দোলনের রাজনীতি এমনকি সংসদীয় রাজনীতির পথও অনুসরণ করে । চারু মজুমদারের মৃত্যুর পর যে কয়েকটি নকশালপন্থী গোষ্ঠী খতমের লাইন অথবা সশস্ত্র আন্দোলনের পথ পরিহার না করেও নিজেদের সংগঠনকে বিস্তৃত করতে পেরেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ ও মধ্য ভারত বিশেষত অন্ধ্রপ্রদেশের জনযুদ্ধ গোষ্ঠী । পূর্বভারত বিশেষত, বিহার-ঝাড়খণ্ডে সক্রিয় ছিল CPI(ML) পার্টি ইউনিটি ও CPI(ML) লিবারেশন । নকশালপন্থী রাজনীতির স্রোতের বাইরে অতিবাম জঙ্গী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত MCC বা মাওয়িস্ট কমিউনিস্ট সেন্টারও(অমূল্যসেন ও কানাই চ্যাটার্জীর নেতৃত্বাধীনে এই গোষ্ঠীটি ১৯৬৯সাল থেকেই CPI(ML) মিশে না গিয়ে পৃথক অস্তিত্ব বজায় রেখেই “দক্ষিণ দেশ” নামে সশস্ত্র আন্দোলন চালাচ্ছিল) বিহার-ঝাড়খণ্ড, ওড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে যথেষ্টই প্রভাব বাড়িয়েছিল । এদের মধ্যে বিনোদ মিশ্রের নেতৃত্বে পরিচালিত CPI(ML) লিবারেশন নব্বুইয়ের দশকের গোড়াতেই তাদের সশস্ত্র স্কোয়াডগুলো ভেঙ্গে দিয়ে মূল স্রোতের রাজনীতি তথা সংসদীয় রাজনীতি অংশগ্রহণ করে । সশ্রস্ত্র নকশালপন্থি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে “জনযুদ্ধ” গোষ্ঠী বা পিপলস ওয়ার গ্রুপের উত্থান নি:সন্দেহে চমকপ্রদ । গত শতাব্দীর আশীর দশকের শুরু থেকেই কোন্ডাপল্লী সীতারাখাইয়ার নেতৃত্বে জনযুদ্ধ গোষ্ঠী অন্ধ্রপ্রদেশের ঐতিহাসিক তেলেঙ্গানা অঞ্চলে (ভারতের সশস্ত্র কমিউনিস্ট আন্দোলনের সুতিকাগার) শক্তি বাড়াতে থাকে । গরীব আদিবাসীদের মধ্যে কেন্দু পাতার (বিড়ি তৈরীর পাতা) মূল্য বৃদ্ধি, জমির কাজে দিন মজুরী বৃদ্ধি, ভুমিবন্টন এবং ঠিকাদারদের অত্যাচার প্রতিরোধের মতো জনপ্রিয় বিষয়গুলো কেন্দ্র করে নিবিড় লড়াই চালানোর ফলে অন্ধ্রপ্রদেশের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনযুদ্ধের প্রভাব দ্রুত বৃদ্ধি পায় । কালক্রমে তেলেঙ্গানা ছড়িয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের অন্যান্য অঞ্চলে এমনকি পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতেও জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর সশ্রস্ত্র ধারার আন্দোলনের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে । যদিও একটা সময় মতাদর্শের প্রশ্নে আন্ত:পার্টি সংগ্রামের স্রস্টা নিজেই কোনঠাসা হয়ে পড়েন । কোন্ডাপল্লী সীতারামাইয়া দল থেকে বহিস্কৃত হন এবং পুলিশের কাছে কার্যত আত্মসর্ম্পন করেন ।
    সশস্ত্র আন্দোলনে বিশ্বাসী তিনটি বামপন্থী দল(নকশালপন্থী জনযুদ্ধ গোষ্ঠী ও পার্টি ইউনিটি এবং নকশাল বড়িভূত এমসিসি) নব্বুই দশকের গোড়া থেকেই যেমন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল তেমনি পারস্পরিক হানাহানিতে(বিহার-ঝাড়খণ্ডে গণ্ডগোল লেগেই ছিল) শক্তি ক্ষয়ে ব্যস্ত ছিল । পার্টি ইউনিটি প্রায় দেড় দশক আগেই জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যায় এরপর অনেক আলাপ-আলোচনা, বৈঠক,নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে দফায়, দফায় মত বিনিময়ের পর ২০০৪ এর ২১শে সেপ্টেম্বর CPI(ML) পিপলস ওয়ার এবং মাওয়িস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার (MCC) এক দেহে লীন হয়ে নতুন দল CPI(maoist) হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে । পিপলস ওয়ারের শীর্ষ নেতা মোপালা লক্ষণ ওরফে গণপতিই নতুন দলের সর্বোচ্চ পদে মনোনীত হন । সংক্ষেপে এটাই হলো CPI(maoist)এর জন্ম বৃত্তান্ত । মাওবাদী এই সংগঠনের ভেতরে নকশাল বড়িভূত অতিবাম শক্তি সাবেক এম.সি.সি.-র যথেষ্ট প্রাধান্য থাকার পরেও একথা বলতে কোন অসুবিধা নেই যে, বিগত শতাব্দীর সত্তরের দশকের নকশাল আন্দোলন এর ভস্ম থেকেই আজকের মাওবাদীদের উত্থান । একদা পরাভূত কোন রাজনৈতিক আন্দোলনের যখন পরবর্তী কালে পূর্ণরুত্থান হয়, তখন তা ইতিহাসের বিধান মেনেই অবিকল আগের চেহারা নিয়ে ফিরে আসে না । বরং তাকে আগের আন্দোলনের পরবর্তী প্রজন্ম বলাই যুক্তিসংগত । ভারতের একংবিশ শতাব্দীর মাওবাদীদের “নকশালপন্থি” হিসেবে আখ্যা দেওয়া হলেও মনে রাখা দরকার—এরা আসলে নকশাল আন্দোলনের পরিবর্তিত, রূপান্তরিত উত্তরাধিকার ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন