এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • গুলবস্তা

    pharida
    অন্যান্য | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ | ৬৩৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 173.163.204.9 | ০২ জানুয়ারি ২০১২ ০৮:২০511614
  • ঘনাদা,
    এই টুকরো টাকরা লেখাগুলো বড়ো সুখপাঠ্য হচ্ছে। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ জীবনের আরো কিছু গল্প হোক।
  • ranjan roy | 14.97.185.115 | ০৩ জানুয়ারি ২০১২ ১৫:১১511615
  • শিবু এবং টিমের প্রস্তাব সর্বান্ত:করণে সমর্থন করিলাম।
  • Ghanada | 223.223.133.147 | ২৪ জানুয়ারি ২০১২ ২২:৪৭511616
  • হিটলারী
  • Ghanada | 223.223.133.147 | ২৪ জানুয়ারি ২০১২ ২২:৪৮511617
  • হিটলারী
  • Ghanada | 223.223.133.147 | ২৪ জানুয়ারি ২০১২ ২২:৫০511618
  • চেম্বারে রুগি নেই। সাধারণত, সন্ধে ৭ টার পর আর রোগী দেখে না চন্দন। আড্ডার জন্য প্রস্তুতি নেয় মানসিক ভাবে। কিছুক্ষণ পরেই সব আড্ডানোর লোকেরা এসে পড়বে। সত্য কম্পু মানে সত্য কম্পাউণ্ডারও যাব যাব করছে!
    এই সময়ে এক পৃথুলা মহিলা এসে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন!!!!!
    - আমারে একডু দেইখ্যা দেন ডাক্তার বাবু!!!!
    চন্দন জিজ্ঞেস করল:- কি হয়েছে আপনার?
    - দ্যাহেন না, রিস্কা থিক্যা পইড়া গেসি। কুমোরে দু:খু পাইসি আর কনুই ছইড়া একাক্কার। মনে হইত্যাসে, আর উঠতে পারুম না। মহিলা কঁকিয়ে কঁকিয়ে কথাগুলো বললেন।
    - ও কম্পুদা, দিদিকে একটা ভোভেরান এস আরের ষ্ট্রীপ, একটা টিটি , ছড়ে যাওয়া জায়গাটা মার্কিউরোক্রোম দিয়ে ড্রেসিং করে দিন। যান ওখানে- সত্যদা দিয়ে দেবে। ভয় নেই ব্যাথা সেরে যাবে। চন্দন বলল।
    - ও ডাক্তার বাবু আমি টিটি দিয়া কি করুম? হেয়া তো আমার পোলায় খ্যালে। হেইডা টেবিল টেনিস তো? আর শাড়ী তো পইরাই আচি। ড্রেসিং এর দরকার কিডা?
    - ওফ! এই টিটি সেই টিটি না! এটা টিটেনাস টক্সয়েড। ধনুষ্টঙ্কার বোঝেন? সেটা যাতে না হয়, তাই এই ইনজেক্‌শান। ড্রেসিং মানে ,ঐ ছড়ে যাওয়া জায়গাটা ব্যাণ্ডেজ করে দেবে। বুঝলেন তো? আর হ্যাঁ! ব্যাথা না কমলে, কালকে একটা কোমোরের এক্স- রে করিয়ে আনবেন। প্রেসক্রিপশানে লিখে দিলাম।
    মহিলা, মাথা হেলিয়ে খুব কষ্ট করে গেলেন সত্য কম্পুর কাছে। সত্যদার ইংরেজী বলার অভ্যাসের জন্য, চন্দন একটু ভয়ে ভয়ে থাকে। সত্যদার ইংরেজী শুনে সবাই থরথর করে কাঁপতে শুরু করে বলেই, নাম- সত্য কম্পু! এই মহিলাকে আবার সত্যদা ইংরেজীতে কিছু বলে না বসে!!!!!!
    ইনজেক্‌শানটা মহিলা কোমোরেই নেবেন। ওনার ধারণা, যেখানে ব্যাথা লেগেছে, সেখানে টিটি ইনজেক্‌শান নিলে তাড়াতাড়ি ব্যাথা সারবে।
    চন্দনের আশঙ্কা সত্যি করে শুনতে পেল, সত্যদা ইংরেজীতে মহিলাকে বলছে:- হাতে ইনজেক্‌শান isbetterthan কোমোরে ইনজেক্‌শান!!!!!
    মহিলা, কি বুঝলেন, কে জানে! ইনজেক্‌শান নিয়ে ভিজিট আর ওষুধের পয়সা দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে গেলেন।
    উনি বেরিয়ে যেতেই কবি বদরী সান্যালের কবিতার খাতা হাতে প্রবেশ। সত্য কম্পু বলল:- চন্দন, আমি Exit মারছি। লোকজনের Entrance হচ্চে, আমি cut মারি।
    কাট করে আবার পেষ্ট করবেন না- চন্দনের উত্তর।
    মুচকী হেসে, সত্য কম্পু বেরিয়ে গেলেন।
    চন্দনকে একা পেয়ে বদরী বললেন- একটা অনু কবিতা শুনবে? অন্যরা এসে গেলে আর চান্স পাবো না!
    শোনান, ব্যাজার মুখে উত্তর দিল, চন্দন।
    বদরীবাবু গলা ঝেড়ে শুরু করলেন:-

    হিটলার জাঁদরেল
    খায় বসে ক্‌ৎবেল
    ঝালনুন, লঙ্কায় ভিজিয়ে
    যুদ্ধের বাজারে
    মাছি মেরে হাজারে
    রেখে দেয় টেবিলেতে সাজিয়ে

    কিন্তু, বদরীদা, এটা আমার শোনা শোনা মনে হচ্ছে! ফেসবুকে আমার কোনো এক বন্ধু , এটা বোধহয় ষ্টেটাস মেসেজ দিয়েছিল ।
    - তোমার তো সবই শোনা মনে হয়! এটা আমি নিজে লিখেছি!
    - কি জানি, হবে হয়তো- চন্দনের উত্তর!
    হতে পারে চন্দন! অনেক জিনিসই অজানা থাকে!
    ক্ষেতুদা কখন যে ঢুকে পড়েছেন, সেটা দুজনে খেয়াল করে নি। বদরীবাবু কেমন যেন সিঁটিয়ে গেলেন। ক্ষেতুদা আজ কেমন যেন অন্যমনস্ক।
    - তোমার কবিতাটা শুনে আজ অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে গেল হে বদরী!!!!!!!
    চন্দন আশ্চর্য্য হয়ে প্রস্তরীভূত হয়ে গেল। ক্ষেতুদা, বদরীবাবুর কবিতা শুনে খচিতং হলেন না, এটা পৃথিবীর দশম আশ্চর্য্য।
    তারক কোথায় হে? ক্ষেতুদার প্রশ্ন।
    - তারকদা রেশন আনতে গেছেন-বদরীবাবু বললেন।
    - এই রাত সাড়ে আটটার সময় রেশন? সব দোকান তো বন্ধ!!!!!!!!
    - আহা! ঐ হুইস্কি আনতে গেছেন। রেশন টার্মটা কোড নেম।
    - হুম! ক্রিপ্টোগ্রাফি! ক্ষেতুদার গম্ভীর জবাব।
    - ওটা আবার কি?
    - তথ্যগুপ্তিবিদ্যা, বুঝলে হে! বদরীর কবিতা শুনে মনে পড়ল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই এর ব্যবহার। তবে ব্যপারটাকে তুঙ্গে নিয়ে গেছিল হিটলার। জার্মান লোরেন্‌ৎস সাইফার মেশিন দিয়ে ,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জেনারেল ষ্টাফেদের বার্তা গোপন করার জন্য ব্যবহার করা হতো। ক্ষেতুদা সিগারেট বের করলেন।

    তারক মোত্তিরও ঢুকে পড়েছেন, বগলে বোতল নিয়ে। কিঞ্চিৎ চড়িয়েও এসেছেন।
    -কি যেন বলছিলেন, ক্ষেতুদা! ঐ কি গাফি!
    - বলছি, তবে তুমি তো দেশী খাও! আজ যে হুইস্কি?
    - পরিবর্তনের জমানা, ক্ষেতুদা! সবাই বদল চাইছে! বদলাও নিচ্ছে। আমিই বা পিছিয়ে থাকি কেন?
    হুম! বদলা তো হিটলারও নিয়েছিল, তার মৃত্যুর খবর রটিয়ে দিয়ে!
    - আরি ব্যাস, বলেন কি! হিটলার তালে, ১৯৪৫ সালের ৩০ শে এপ্রিল আত্মহত্যা করে নি? চন্দন উত্তেজিত।
    - না হে! আমি নিজে সাক্ষী!
    - এ:! ক্ষেতুদা! আপনি কিন্তু, ঘনাদা মানে ঘনশ্যাম দাসকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। তারক মোত্তির মিউ মিউ করে বললেন।
    - হোয়াট ননসেন্স! ক্ষেতুদা হুংকার দিলেন!!!!!! ঘনাদা কি মিথ্যে বলতেন নাকি! ইন ফ্যাক্ট, ঘনাদা, আই মীন মি: ঘনশ্যাম দাসই তো এই অ্যাসাইনমেন্টটা আমাকে, ভায়া আয়মেরিকান গভমেন্ট দিয়েছিলেন। আর তুমি যে নিজেকে স্বদেশী বলো, তার বেলা!!!!!! এদিকে তো মাত্রো ২০০৩ সালে রিটায়ার করেছ। গ্যাঁজা মারো, খবর রাখি না নাকি? ক্ষেতুদা ভিসুভিয়াস!!!!!!
    আড্ডার মেজাজ নষ্ট হচ্ছে দেখে চন্দন বলল- আরে ক্ষেতুদা! আপনার কথা চালিয়ে যান তো! আপনার ব্যাকগ্রাউণ্ড আমি জানি! এরা তো হালে আড্ডায় এসেছে! আরে “বল হরি”, চা দিয়ে যা!!!!!!!!!!!
    জানো? হিটলারকে ক্‌ৎবেল খাওয়া কে শিখিয়েছিল?- ক্ষেতুদার প্রশ্ন!
    - কে?
    - কে আবার!!!!!! স্বয়ং মি: ঘনশ্যাম দাস! হিটলার টক খেতে ভালবাসতো তো!!!!! তাই ঘনাদা এই নুন লংকা আর ক্‌ৎবেলের রেসিপিটা “এভা”কে দিয়েছিলেন। হিটলার শেষ পাতে খেতে খেতে ইহুদি মারার ছক করতো! ঘনাদা তো সেই দু:খেই বাহাত্তর নম্বর বনমালী নস্কর লেনের মেসে টঙ্গের ঘরে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়ে নিয়েছিলেন।
    - উরি ব্বাস! আমার কবিতা লেখা সার্থক! বদরীবাবুও উত্তেজিত।
    - সার্থক কিনা জানি না, তবে কবিতার মধ্যে সত্যিটা লুকিয়ে আছে।
    - কিরকম, কি রকম?
    -ঐ যে, মাছি মেরে হাজারে। হাজারে হাজারে ইহুদি মেরেছিল তো।
    - সত্যি, মানুষ কত নৃশংস হতে পারে, তাই না?
    - জানো? ১৯৩৩ সালে, নাগরিকদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছিল- হিটলারের জার্মানীতে।
    তখন আধুনিক কম্পিউটার যুগ শুরু হয় নি ঠিকই, তবে আদি কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে ইহুদিদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করার জন্য এগিয়ে এসেছিল,InternationalBusinessMachine বা পৃথিবী খ্যাত IBM কোম্পানী।
    কিভাবে তারা প্রতিটি ইহুদি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করত, তা এখন বহু আলোচিত।
    হিটলারের শাসন কালে, সমস্ত ইহুদিরা হয়ে উঠেছিল এক একটি নম্বর। তার পাশে লেখা থাকত নাম ঠিকানা।
    দেখা গেছে, যে অঞ্চলে, এই কাজটা ভালো ভাবে করা হয়েছিল, সেখানেই ইহুদি নিধন বেশী হয়েছিল। বলি বুঝলে কিছু????????
    - উরি ত্তারা! আয়মেরিকার কোম্পানী সাহায্য করেছিল, হিটলারকে?
    - তবে আর বলছি কি!! আর এই আয়মেরিকান সরকারই তো সাহায্য করে হিটলারকে পালিয়ে যেতে। সেখানে আমাকেই বেছে নেয় আয়মেরিকা।
    - একটু খুলে বলবেন? ঘনাদাই বা কেন আপনাকে বাছলেন ঐ কাজের জন্য? চন্দন বিনীত ভাবে প্রশ্ন করল, ক্ষেতুদাকে।
    - বলছি, বলছি! আগে চা খাই! জিভ শুকিয়ে গেছে। বনমালী নস্কর লেনে গেলে ফাউল কাটলেট খাওয়াতেন ঘনাদা! সঙ্গে কফি! কোথায় যে গেল, সেই সব দিন!!!!!!!!!!!!
    - আপনি চিকেন রোল খাবেন? আনিয়ে দিচ্ছি!
    - দাও! তবে আমার জন্য দুটো আনিও।
    কৃপা করে বললেন ক্ষেতুদা।
    খাওয়া হয়ে গেলে, ক্ষেতুদা শুরু করলেন:-
    বেশ কয়েক বছর আগে, সাংবাদিক জেরার উইলিয়ামস এসেছিল ভারতে। সঙ্গে, সমর ঐতিহাসিক সাইমন ডানস্টান।
    - কেন?
    - মূর্খের মত প্রশ্ন করো না তো তারক! কেন আবার? আমার সঙ্গে দেখা করতে!!!!
    - তাই!!!!!!! তা কি বললেন ওদের?
    - কি আর বলব? একটা সাক্ষাৎকার নিল। তারপর একটা বই ছেড়েছে মার্কেটে এদানীর! ওরা অবশ্য, আমার নামটা দেয় নি, আমারই অনুরোধে। বেশী নাম টাম পছন্দ হয় না আমার।
    - বইয়ের নাম কি?
    - গ্রে উলফ, দি এসকেপ অফ আডলফ হিটলার,বা ধূসর নেকড়ে- আডলফ হিটলারের নির্গমন ।
    - ওটা নয় পরে, পড়ে নেব আমরা, এখন একটু গপ্পোটা সংক্ষেপে বলবেন আমাদের!!!
    - গপ্পো কি হে! সত্যি ঘটনা! একেবারে জ্বলন্ত ইতিহাস। এটা কোনো ভাবেই আনেকডোটাল নয়। অনেক রিসার্চ আর আমার কাছ থেকে শুনে, কষ্ট করে লিখেছে ওরা।
    - আনেকডোটাল????????
    - হ্যাঁ! আনেকডোটাল মানে অলিখিত ইতিহাস। যেটা গাঁজাখুরি বলে মনে হতে পারে অনেকের।
    - বলুন ! বলুন! শুনছি! সমস্বরে চিৎকার করল সবাই।
    - বলবো, তবে বাধা দেবে না কিন্তু!
    - আমরা পাগোল নাকি! বলে যান!
    ক্ষেতুদা শুরু করলেন:- প্রথমেই বলি, ঘনাদাকে তখন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটা গোপন কাজে ফিরে যেতে হয়েছিল। হিটলারকে অনেক বুঝিয়েছিলেন ঘনাদা, যাতে ঐ সব জঘন্য কাজ না করে। হিটলারও কথা দিয়েছিল। আমার তখন কম বয়েস। ঘনাদা ভরসা করে, আমাকে রেখে গিয়েছিলেন হিটলারের কাছে। বয়েস কম হলেও,আমার বুদ্ধির ওপর ভরসা ছিল ঘনাদার। সাগরেদি করছি তখন ওনার।
    তখন কি আর জানি, আয়মেরিকার অত ষড়যন্ত্র! ১৯৪৫ সাল! দিনটা খুব ভাল করে মনে আছে আমার। সাতাশে এপ্রিল। একজন গেষ্টাপো এসে আমাকে একটা গোপন খবর দিল। হিটলারের দোস্ত, মুসোলীনি তার উপপত্নি ক্লারা পেত্তাচিকে সঙ্গে নিয়ে ইতালীর ছেড়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে গিয়েছে। মিলানের বিদ্রোহী দল ঐ দুজনকে খতম করে দিয়েছে। তাদের দুজনকে পায়ে পায়ে বেঁধে মাথা নীচু করে ঝুলিয়ে রেখেছে, প্রকাশ্য স্থানে। উন্মত্ত জনতা মৃতদেহ দুটির ওপর যথেচ্ছ থুতু ছেটাচ্ছে, লাঠি মারছে, পাথর ছুঁড়ে মারছে। সে এক বীব্‌হ্‌ৎস অবস্থা।
    খবরটা হিটলারের কানে তুলে দিলাম। এই প্রথম, ওকে ভয় পেতে দেখলাম। বলল:- কেতুউউ! কি হবে আমার?
    আমি সোজা বললাম:- তোমার পাপের ঘড়া ভরে গেছে। এবার নিজে মরার জন্য তৈরী হও।
    -একটা উপায় বলো না!
    - দেখ তালে, মরা কি ভয়ংকর জিনিস।
    বলে, মনে কষ্টও হচ্ছিল। সাংঘাতিক প্রতিভা ছিল লোকটার। একজন রাজনৈতিক নেতার সমর নায়ক হওয়ার ঘটনা ইওরোপে প্রথম। আমাদের নেতাজীও অবশ্য তাই ছিলেন, তবে তিনি একদম অন্যরকমের একজন মহাপুরুষ।

    আমি বুঝতে পারছি, লাল ফৌজ প্রায় পুরোটা ঘিরে ফেলেছে হিটলারকে। মায়া হল। বুদ্ধি দিলাম- তুমি প্রথমে একটা ষ্টেটমেন্ট দাও।
    - কি রকম?
    - বলো, আমি বুলেট দিয়ে আত্মহত্যা করছি, বলবে, এভাও পটাশিয়াম সাইনাইড ক্যাপসুল খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমার অনুগামীদের বলছি, আমাদের মৃতদেহটা পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দিতে। এভাকেও বিয়ে করে নাও।
    - ঠিক আছে, জবাব দিল হিটলার।
    তার আগে, ও একটা মন্তব্য করেছিল। দিনটা ছিল- ২৭ শে এপ্রিল। সাল ১৯৪৫। বলেছিল:- ‘গোটা দুনিয়া যদি আমাকে মৃত বলে ভাবে, তবেই ভবিষ্যতের আশা করতে পারে জার্মানি।” তাই বুদ্ধিটা আমার মাথায় এসেছিল।
    লোরেন্‌ৎস সাইফার মেশিন দিয়ে খবর পাঠান হল, আমেরিকার গভমেন্টকে। পিটার বমগার্ট নামে, একজন ধুরন্ধর আর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পাইলটকে আমার জানা ছিল। তাকেই পাঠাতে বললাম। ছেলেটা আমারই বয়েসী বা একটু বেশী হবে। গোপনীয়তা রাখতে জানত।
    প্লেন নিয়ে হাজির হল, পিটার বমগার্ট। চুপিসারে বেরিয়ে পড়লাম হিটলার আর এভাকে নিয়ে। পিটার তো হিটলার আর এভাকে দেখে থ। চোখ আর ফেরাতে পারছে না। আমি জোর ধমক দিলাম। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে প্লেন উড়িয়ে দিল পিটার।
    ও ও! একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। তখন হিটলারের একান্ত সচিব ছিল- মার্টিন বরমান। ১৯৪৩ সাল থেকেই এই ছকটা ওর সাথে আমার করা ছিল। হিটলারকে ইচ্ছে করেই বলিনি। ভেবেছিলাম, ও আর ইহুদিদের মারবে না। বিধির বিধান, খণ্ডাবে কে?
    যাক।
    আকাশে উড়ে ডেনমার্কের টনডরে নামলাম আমরা। তারপর ফের ফিরে গেলাম জার্মানির ট্রাভেমুণ্ডার বিমানবাহিনীর ঘাঁটি, লুফ্‌ৎওয়াফে। এই ঘোরাটা ইচ্ছে করেই প্ল্যান করেছিলাম আমি।
    পিটারকে ছেড়ে দিলাম। এবারে আর একটা প্লেনে ছদ্মবেশে উঠলাম আমরা। গিয়ে নামলাম বার্সেলোনার দক্ষিণে সামরিক ঘাঁটি রিয়সে। জেনারেল ফ্রাঙ্কোকে লোরেন্‌ৎস সাইফার মেশিন দিয়ে খবর পাঠান ছিল। ফ্রাঙ্কো আগে থেকেই আর একটা প্লেন রেডি করে রেখেছিল। আমরা গিয়ে নামলাম, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের ফুয়েরতেবেনতুরায়। ওখান থেকে ইউ বোটে চড়ে সবাই ঢুকে পড়লাম অতলান্তিক মহাসাগরের গভীরে। ইউ বোটের খাঁচাতে শুরু হল দীর্ঘ যাত্রা।
    ওদিকে, লাল ফৌজ বাঙ্কারে পৌঁছে গেলেও পাখী ফুরুৎ।
    স্পেন ছেড়ে ৫৩ দিন বাদে পৌঁছলাম, আর্জেন্তিনার উপকূলে মার ডেল প্লাতার দক্ষিণে নিকোচিয়ায়।
    - ক্ষেতুদা, একটা প্রশ্ন।
    - বল!
    - ইউ বোট কি?
    - তোমরা তো দেখছি কিস্‌সু জানো না! ওটা হলো সাবমেরিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে খুব ব্যবহার হয়েছিল।‘
    - ঠিক আছে। আপনি বলে যান।
    - তারপর আর কি! আমি তো ভারতে চলে এলাম, ঘনাদার ডাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে।
    - পরে আর কোনো খবর পান নি?
    - হুঁ! পেয়েছিলাম।
    - কি? কি?
    - ঐ আনডেসের পাদদেশে এক গণ্ডগ্রামে কেটেছিল হিটলারের শেষ জীবন। দুটো মেয়েও হয়েছিল। তবে এভার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায় ১৯৫৩ তে। শেষমেষ হিটলার মারা যায়, ১৯৬২ র ১৩ ই ফেব্রুয়ারী, বেলা ৩টের সময়। এরপর আর কি হয়েছে, আমার জানা নেই।
    ক্ষেতুদা আর একটা সিগারেট ধরালেন।
    তারক মোত্তির বললেন- একটা শেষ প্রশ্ন ক্ষেতুদা!
    - বল হে বল!
    - আপনার মনে আছে? মাসখানেক আগে, আপনি সেল ফোনের সিম কার্ডের জন্য একটা ফর্ম ভরে আমাকে দিয়েছিলেন জমা করতে!
    - হ্যাঁ! তো?
    - না! মানে ঐ ফর্মের সাথে আপনার ভোটার কার্ডের সেল্ফ আয়টেষ্টেড ফোটো কপি ছিল। ওটাতে আপনার জন্ম তারিখ ছিল, ১৯৪৫ সালের ৮ ই নভেম্বর।
    ক্ষেতুদা আগুন ঝরা চোখে তারক মোত্তিরের দিকে তাকিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন চন্দনের চেম্বার থেকে।

    ____সমাপ্ত_______

  • Nina | 69.141.168.183 | ২৫ জানুয়ারি ২০১২ ০৯:৪৪511619
  • ঘনাদা
    ক্যা বাৎ :-) তোমার গল্প বারবার পড়লেও পুরোনো হয়না।
    একটু তোমার বিয়ের গল্পটা বল, প্লিজ !
  • maximin | 69.93.241.46 | ১১ জুন ২০১২ ২১:৩১511620
  • প্রথম থেকে আবার পড়লাম। মন ভরে গেল।
  • ঘনাদা | 233.223.138.77 | ১১ জুন ২০১২ ২১:৩৪511621
  • ছাই-পাঁশ

    বিশ্বাস করে না। লোকে বিশ্বাস করে না। কিন্তু, এবার আমার এক বন্ধু সাক্ষী। একটা কাজে আমি আর বন্ধুটি বেরিয়েছিলাম। নাম ধরে ডাকা হচ্ছে। আমার ভালো নাম- রামকেষ্টো ভশ্চাজ। তা অরিজিনাল যিনি ছিলেন, তিনি গুরু, আর আমি বলদ। ( লিঙ্গ বদলে তো আর গরু হতে পারি না)

    যাক, নাম ধরে ডাকা হচ্ছে। প্রথমে বলল- পরমহংস রামকৃষ্ণ। হাত তুলে এগিয়ে গেলাম। পরে আবার বলল- পরমহংস রামকৃষ্ণ। বলে, বলল- পরের রামকেষ্টো জালি। কি দুঃখ, মাইরি! এটাই আমার জীবনের ট্র্যাজেডি। লেখার চেষ্টা করছি বটে, কিন্তু লেখা টেখা আমার দ্বারা হয় না। অনেক চেষ্টা করেছি, যারাই পড়ে-নেহাত সৌজন্যের খাতিরে ভালো বলে। আদপে পড়েই না। পরীক্ষায়,বাংলা রচনা মুখস্থ করেও সেই দশে তিন কি চার! বাবা বলল- ছাড়! ইংরেজী? আর বলবেন না!!!! কিছুতেই আই হ্যাজ ওয়েন্ট ছাড়া আর লিখতেই পারলাম না। এ্যাকদিন বাড়ীতে ছিলাম না। মা গেছিলেন, পূজো দিতে। ফিরে এসে বাবাকে জিগ্গেস করেছিলেন- ঘনা কই?

    বাবা নাকি উত্তর দিয়েছিলেন- ঘনা হ্যাভ ওয়েন্ট টু ফরেষ্ট। তারপর দাঁতকপাটি লেগে হসপিটালাইজড্ । পরে ডাক্তার শুনে বলেছিলেন, বাবাকে- আপনি এ্যাতো বড় স্কলার আর আপনিও কিনা ভুল ইংরেজী বললেন? বাবা বলেছিলেন- “ওয়ান পচা কলা পচেস দি হোল কাঁদি। তাই ভবি কাঁদসে। সঙ্গদোষে শিলা ভাসে।”

    অনেক পরে, ছোট ভাই যখন আ্যমেরিকা থেকে এক, ও দেশী বন্ধু কে নিয়ে এদেশে এলো, সেই বন্ধুটিকে জলযোগের দই খাইয়েছিলাম। অনুজকল্প সেই ভ্রাতৃবন্ধুটি দই খেয়ে তারিফ করে বলল-হোয়াট ইজ ডই ? (নাকি সুরে) এদিক ওদিক তাকিয়ে ছোটভাই নেই দেখে বলেছিলাম – স্লিপিং মিল্ক ইন দ্য নাইট, মরণিং টাইট। ও কি বুঝল কে জানে!!!! গম্ভীর হয়ে গেল।

    তা, নেট এসে খুব সুবিধে হয়েছে। যা খুশি, তাই লিখি, আর ছাপার অক্ষরে দেখে, নিজেই নিজের পিঠ চাপড়াই।

    আমার অনুজ কল্প বন্ধু বুকী ঘোষ, আমার এই দুঃখটা বুঝতে পারে। আমার সমব্যাথী বলে, ওর দোকানে বেচাকেনার পর আমাদের সান্ধ্য আসর বসে। অগ্রজ কল্প কবি সৌমেন দাও আমাদের আড্ডার নিয়মিত খদ্দের। আমাকে দুজনেই ভালোবাসেন আর আমার নিত্যনতুন বোকামিকে ক্ষমা ঘেন্না করে বুঝিয়ে দেন, ঠিক কোন জায়গায় ভুল করি আমি। কিন্তু ওঁদের চেষ্টাটা যে বৃথা, সেটা পরে বুঝে, দন্তরুচি কৌমুদি হয়ে বসে থাকেন। যেমন, একদিন সৌমেন দা বললেন- রামকেষ্টো, আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণের মধ্যে পার্থক্য কি?

    আমি যথারীতি ভ্যাবাচ্যকা খেয়ে গেলাম। একটু হেসে সৌমেন দা বললেন- আমগাছের তলায় মন্ত্রণা= আমন্ত্রণ,আর নিমগাছের তলায় মন্ত্রণা=নিমন্ত্রণ। বুকী যোগ করল- কুলগাছের তলায় মন্ত্রণা= কুমন্ত্রণা।

    যাই হোক, রবিবারের এক বসন্তের সকাল। জোর আড্ডা হচ্ছে বুকীর ওখানে। পাশেই এক বাঁধানো পুকুর। হঠাৎ, হইহই। আমরা ছুটে গেলাম। শুনলাম, এক গামছা পরা ভদ্রলোক স্নানের জন্য পুকুর পারে দাঁড়িয়ে, দাঁতে গুড়াখু ঘসছিলেন। হঠাৎ, বাজারের “ভোলা” ষাঁড় এসে পেছনে গুঁতো মেরে জলে ফেলে দেয়। এরপর আমাদের প্রবেশ। দেখি, ভদ্রলোক কোমোর জলে দাঁড়িয়ে, আর ওনার ছেলে হাত বাড়িয়ে বলছে- বাবা উইঠ্যা আসো।

    বাবা- দ্যাখোস না! শুয়ারের বাচ্চা, ওই বলদাটার শিংয়ে আমার গামছাডা রইয়া গেসে! উঠুম কেমনে?

    বুকী বলল-বোজসেন ঘনাদা, আপনারও গামছাডা চইল্যা গেসে গিয়া। হের লাইগ্যা, আপনের এই দশা!

    দোকানে ফিরে এলাম। একজন একটা ৫০০ টাকার নোট বুকিকে দিল। বুকী, সোজা আমার হাতে চালান করে দিয়ে বলল- কয়েন দেহি, হেই নোটটা জাল না আসল? হাতে নিলাম, কিছুই বুঝলাম না। বুকি বলল- খাড়ান! লোটডারে ভাঁজ কইরা টেবিলে রাহেন।

    রাখলাম।

    -এই বার লোটডার উপরি জুর জুর ঘুঁসি মারতে থাহেন।

    মারতেই থাকলাম। মারতেই থাকলাম।মারতেই থাকলাম।

    মেরে মেরে হাত টনটন!

    বুকী এবার নোটের ভাঁজ খুলল! বলল- নাঃ! ভাঙ্গে নাই

    -কি?

    -বাপুজীর চশমা। জালি হইলে ভাইঙ্গা যাইতো গিয়া।

    বুঝলাম, গামছাটা হাতছাড়া। মনের দুঃখে, জালি রামকেষ্টো ভশ্চাজ হ্যাভ ওয়েন্ট হোম!
  • ঘনাদা | 233.223.142.196 | ১২ জুন ২০১২ ০৮:৪৩511622
  • রাধানগরে রৈ রৈ

    রাধানগর তোলপাড়! হাটে সবাই আলোচনা করছে। এরা কারা?কেনাবেচা বন্ধ হবার জোগাড়। সবাই দমবন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।

    রোববার, বুধবার আর শুক্রবার হাটের দিন। আশপাশের চার, পাঁচটা গ্রাম থেকে মানুষ জন আসে। সব তো আর টিভিতে দেখানো বা খবরের কাগজে ছাপা হয় না! তাও আবার, খবরের কাগজ আসে বিকেলবেলা আর টিভি তো অর্দ্ধেক দিন দেখাই যায় না, লোডশেডিং এর জ্বালায়। তা, ওই হাটের দিনই যা একটু খবর ভালো করে পাওয়া যায়!

    হারাধনের কথাই ধরা যাক! সবাই ওকে চেপে ধরল একদিন!

    -তুর যে দশ দশটা ছেলে ছেল , সেটা তো বলিস নি রে হারা!

    - যাঃ! বাবা!!! এই খবর কুনে পেলে?

    - ওই যে, পান্তু বাবুর নাতিটা সুর করি পড়তিসিল!

    - কি?

    - ছাই! অত্তো কি আর মনে থাকে? একটা বই থিকা পড়তিছেল! হারাধনের দশটি ছেলে! তারপর সব আ্যকডা আ্যকডা করি মরি গেল! ওইটুক্কুন মনে রয়িসে।

    করিম চাচা বলল- তা তুই বিহা করলি, খবরও তো দেস নাই! তোর বাপ ছেল মোর ছুড্ডুবেলার বন্ধু!

    হারাধন একদম রেগে কাঁই!

    মুই তো বিহাই করি নি। মোর আবার ছেলে আসবি কনে?

    তালে, পান্তু বাবুর নাতিটা বই থেকে মিসিমিসি কি পড়তিছেল?

    উত্তেজনায় নারাণখুড়ো হারাধনকে, মারতে যায় আর কি!!!!!! করিম চাচা আটকে বলল-তালি যে ওরা বইত্ ছাপিসে, সেটা ভুল, হারা?

    হাজারবার ভুল, এক্কেরে নিয্যস খাঁটি কথা!

    উত্তেজনা আর একটু গড়াত হয়তো, কিন্তু দাদুর জন্য, হাটে হুঁকোর তামুক কিনতে আসা নাতি রতন সব খুলে বলাতে, গণ্ডগোলটা মিটল।

    আজকের উত্তেজনাটা চরমে!!! যাত্রার পোশাক পরে দুটো বাচ্চা ছেলে। খালি গায়ে মাথায় চুড়ো করে চুল বাঁধা, হাতে তীর ধনুক। একেবারে হবাহু একরকম দেখতে দু্জন। হাট লাগোয়া হাই-ইস্কুলের বারান্দায় একটা বেঞ্চের ওপর বসে আছে। অং বং চং করে কি সব কথা বলছে, নিজেদের মধ্যে। ওদের সাথে, এক বুড়ো মত সাধুও এসেছে। মাথায় জটা। খালি গায়ে,গলায় পৈতে। মুখে বিশাল সাদা দাড়ী। খেলার মাঠে একটা বড় গাড়ীর মত কি যেন একটা দাঁড় করান। ভোলা, স্বচক্ষে দেখেছে, কোনো শব্দ না করে , ওই বিদঘুটে গাড়ীটা আকাশ থেকে আস্তে মাঠে নেমেছে।

    দেখেই ভোলা উত্তেজনায় দৌড়ল হাটে! রবিবার বলে ইস্কুল নেই। ভোলার ওই ইস্কুলের পাশে একটা ছোটো খাবারের দোকান আছে। হাটবারে, দোকানটা রমরমিয়ে চলে। অন্যান্য দিন, ইস্কুলের ছেলেরা আর মাষ্টারমশাইদের দৌলতে ভালোই বিক্রী হয় ভোলার।

    তা, বাংলা বলছে বটে ছেলে দুটো, কিন্তু কেমন যেন!!!!!!!!!!!

    কিরকম? নারান খুড়ো জিজ্ঞেস করল।

    -আরে! চলোই না। গিয়ে দেখবে চল। পণ্ডিতস্যার হাটে এসেছিলেন, কি সব কিনতে। সাথে,তাঁকেও নিয়ে যাওয়া হলো।

    ভোলার দোকানের ঘুঘনি, তখন ওই দুটো ছেলে বেশ আরাম করে চেটে পুটে খাচ্ছে। আর সাধু মিচকি মিচকি হেসে ,চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। ভোলার কর্মচারী রামু আস্তে বলল- সাধুবাবাও, ৬ প্লেট ঘুঘনি, ১৫ টা পেঁয়াজী আর ২৫ টা ফুলুরী সাঁটিয়েছেন।

    পণ্ডিতস্যার এগিয়ে গিয়ে বললেন- দয়া করে বলবেন, আপনারা কারা?

    সাধু একটু তাকিয়ে, বললেন- কস্তং?

    প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেও, সেটা বুঝতে দিলেন না পণ্ডিতস্যার । নারানখুড়ো তাঁর দিকে তাকাতেই, বললেন

    আমি কে, সেটা সংস্কৃততে জিজ্ঞেস করছেন উনি। পাড়াগাঁয়ে সংস্কৃততে কথা হয় না! বললেও লোকেরা বুঝবে না! একটু ইতস্তত করে পণ্ডিতস্যার বললেন-মহাশয়, আমি এই বিদ্যালয়ের সংস্কৃত-শিক্ষক!

    -আরে বলবে তো! আমি বাংলা জানি! আমাকে কৃত্তিবাস বাংলা শিখিয়েছিল! বললেন সাধু!

    হাঁফ ছাড়লেন পণ্ডিতস্যার । জটলার সবার চোখ গোলগোল! নারান খুড়ো ফিসফিস করে বললেন-এরা উগ্রপন্থী নয় তো? পণ্ডিতস্যার অভয় দিলেন!

    মনে হচ্ছেনা! তবে একটু কোথাও গোলমাল আছে। বের করছি দাঁড়ান!

    পণ্ডিতস্যার বললেন-

    তা স্যার! আপনারা কোত্থেকে আসছেন, আর এই দুটো ছেলেই বা কারা! ও হ্যাঁ, কৃত্তিবাস কে?

    ধ্যূস! কৃত্তিবাসকে চেনো না! আরে ওই যে তোমাদের বাঙ্গালী কবি!রামায়ণ লিখেছিল। কোত্থেকে আসছি বললে, আর একটা রামায়ণ লিখতে হবে আমাকে। ঘাড়ে আজকাল খুব ব্যাথা! এত ধকল সইবে না।

    ওও! আচ্ছা, কৃত্তিবাসকে মনে পড়েছে। আচ্ছা, বিশ্রাম নিন। পরে না হয় ধীরে সুস্থে বলবেন!

    রামচন্দ্র কে চেনো তো?

    আপনি কোন রামচন্দ্রের কথা বলছেন? আমাদের হেডমাষ্টারমশাই রামচন্দ্র দেবনাথ?

    উফ্! রামচন্দ্র, মানে রামায়ণের রামচন্দ্র! আর ওই যে স্যার বললে, স্যারের মানে কি? হেডমাষ্টার আবার কি? কৃত্তিবাস তো শেখায় নি আমাকে!

    স্যার হচ্ছে একটা ইংরেজী শব্দ। কৃত্তিবাস ইংরেজী জানতেন না! তাই বোধহয় আপনাকে শেখান নি! সন্মানীয় লোকেদের বা শিক্ষককে বলা হয়। হেডমাষ্টার, ইংরেজীতে প্রধানশিক্ষককে বলা হয়।

    বুঝলাম! আমি বাল্মিকী আর ওরা হলো লব আর কুশ। রামচন্দ্রের দুই যমজ ছেলে।

    উরি ব্যাস্! তা কলিযুগে আপনারা এখানে? তাও এই অজ পাড়াগাঁয়ে!!!!!!

    এসব শুনে,সারা জটলা উত্তেজিত। পটলার মা, পটলাকে খুঁজতে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছিল ভীড়ের মধ্যে।প্রথমেই জোকার দিল, মানে উলু উলু! সবাই একসাথে পারুক না পারুক জোকার দিল। নারান খুড়ো ছুটলেন শঙ্খ আনতে। ছুটতে গিয়ে পাথরে ঠোক্কোর খেয়ে পড়ে গেলেন মাটীতে।

    -ঘোর কলিযুগ হে! ঘোর কলি! সীতা বলল- সব্বাই আজকাল ইংরেজী শিখছে, গুরুদেব! এদের একটু শেখাবার ব্যাবস্থা করুন। বাল্মিকী বললেন।

    -তা কোলকাতা থাকতে, এখানে ইংরেজী শেখাবেন?

    -আরে! তুমি দেখছি অজমূর্খ!

    পণ্ডিতস্যার গায়ে মাখলেন না কথাটা! ভরসা একটাই, এর মানেটা চট করে কেউ বুঝবে না এখানে। নইলে, ছাগলের মত মূর্খ কথাটা যথেষ্ট আপত্তিকর!

    দুঃখের কথা আর কি বলি!!!- বাল্মীকি বললেন।

    সীতা তো আমাকে রোজ বলতে লাগল। ওর নাকি সমাজে কোনো সন্মান থাকছে না। ইংরেজী শেখাতেই হবে লব আর কুশকে। আজকাল ছেলেমেয়েরা কি ফরফর করে ইংরেজী বলে! তা, সীতা মা একবার পুষ্পক করে লণ্ডন গিয়েছিল। সেখানে দ্যাখে কি, ২/৩ বছরের ছেলে- মেয়েরাও ইংরেজী বলছে। লব –কুশ পারে না! কি দুঃখ! কি দুঃখ!

    তারপর,ওই যে তোমাদের টিন বলে কি যেন আছে না!!!!!! বাল্মীকি আর একটা চা নিয়ে,একটু একটু করে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে জিরোতে লাগলেন।

    সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল! পান্তুবাবুর নাতি, রতন বলল- টিনটিন? লব –কুশ লাফিয়ে উঠে ,জোরে চীৎকার করে বলল- হ্যাঁআআআআ! ওই টিনটিন, ফ্যানটম, স্পাইডারম্যান। তারপর, হ্যারি পটার। ওই গুলোই তো পড়তে চাই।

    এদিকে, খবর পেয়ে ইস্কুলের আরও কয়েকজন মাষ্টারমশাই চলে এসেছেন।

    বাল্মীকি আবার শুরু করলেন।

    সীতার ঘ্যানঘ্যানানিতে বিরক্ত হয়ে লব কুশ কে বেরিয়ে পড়লাম, পুস্পক রথে।প্রথমেই বাধা। কোলকাতার বিমান পোতাশ্রয়ে নামতে পারছি না!

    বাংলা স্যার, শশীবাবু জিজ্ঞেস করলেন- বিমান পোতাশ্রয় মানে এ্যারপোর্ট তো?

    কি জানি বাপু! তোমাদের ওই ভাষা আমি বুঝি না! খালি,প্যাচাল পাড়ো!

    আচ্ছা, আচ্ছা, আপনি বলুন।

    আমি, বিমানের সারথীকে বললাম, রাস্তায় নামিয়ে দিতে। সারথী পাশের একটা নির্জ্জন সরণীতে নামিয়ে নিল, বিমানটাকে।

    তারপর? তারপর? শশীবাবু জিজ্ঞেস করলেন। এটা সবারই মনের কথা।

    সারথী তো প্রায়ই আসে, কোলকাতায়। ওর নাম-মকরধ্বজ। আজকাল, খুব মন্দা চলছে রামচন্দ্রের। তাই মাঝে মাঝেই ভাড়া খাটায় এই পুস্পক বিমান। ও জানত, ওকে নামতে দেওয়া হবে না কোলকাতার বিমান পোতাশ্রয়ে। লব-কুশ বায়না ধরেছিল নতুন নতুন বিশাল বিমান দেখার জন্য।

    আর?

    তারপর, রথের মত সারণী বেয়ে চলল বিমানটা!

    আরি ব্যাস। মাটীতেও চলতে পারে?

    পারে বৈকি!

    এর টেকনিক্যাল ব্যাপারটা জেনে নিতে হবে, বললেন বিজ্ঞানস্যার বিজনবাবু।

    ক্কি! ক্কি বললে?

    ও কিছু না! আপনি চালিয়ে যান!

    -ছাই! আমি কি চালাতে জানি না কি?

    - না না! আপনি কথা জারী রাখুন!

    এবার লব এগিয়ে এলো। চুপচাপ শুনছিল কথা।

    দাদু আর কথা বলতে পারছে না। অনেকদিন পর প্রাণভরে পেঁয়াজী, ফুলুরী আর ঘুঘনী খেয়েছে তো! তাছাড়া, আমি আর কুশ কিছু কিছু ইংরেজী কথা শুনে শুনে শিখেছি। কথা বলতে আপনাদের সুবিধে হবে।

    আচ্ছা বলো! বলে, বিজনস্যার একটু দোটানায় পড়লেন। একে তুমি করে কি বলা ঠিক হবে! দেখতে না হয় ১২/১৩ বছর, কিন্তু ঠিকঠাক ভাবে বলতে গেলে, এদের বয়স প্রায় ৭ হাজার বছর। গ্যাঁজা চালাচ্ছে না তো! বিনে পয়সায় ঘুঘনি খাওয়ার লোভে?

    কুশ বোধহয় থট রিডিং জানে। বিজনস্যারকে বলল- আপনাদের হাজার বছরে আমাদের এক বছর। আপনি আমাদের তুমিই বলবেন। শিক্ষক মানেই তো গুরুদেব।

    বিজনস্যার খুশী হলেন। - তা তোমরা থাকো কোথায়?

    বললেন বিজনবাবু।

    ওই অনেকদূরে একটা গ্রহ আছে। সেখানে!

    নামটা বলো

    যমুনা গঙ্গা ছায়াপথের কথা জানেন তো স্যার। সেই ছায়াপথে।

    যমুনা গঙ্গা ছায়াপথ? আমাদের তো আকাশগঙ্গা!

    এবার লব বলল- ওই যে আপনারা যাকে আ্যন্ড্রোমিডা ছায়াপথ বলেন। আমরা বলি যমুনা গঙ্গা ছায়াপথ।

    সে তো ২০ থেকে ৩০ লক্ষ আলোক বর্ষ দূরে। এত দূর থেকে এলে কি করে?

    আমাদের রথের গতিবেগ মনের বেগে চলে। আলোর চেয়ে অনেক বেশী মনের গতিবেগ।

    বাঃ! তুমি তো অনেক কিছু জানো!

    দেখুন, স্যার আমাদের সবই শেখানো হয়। সংস্কৃতই আমাদের পড়ার মাধ্যম। শুধু আমরা ইংরেজী জানতাম না, তাই শিখতে এসেছিলাম কোলকাতায়।

    শিখলে?

    কেউ রাজীই হলো না, শেখাতে। কেউ জিজ্ঞেস করছে আপনাদের জাত কি! কেউ আবার বলছে, জাতি কি? কোথায় থাকেন? পাশপোর্ট আছে কিনা! শেখার জন্য কি ঝামেলা বলুন তো! পদবীও জিজ্ঞেস করছে সবাই! তা আমরা তো পদবী ব্যবহার করি না! যদিও পদবী হলো- ত্রাত্তৃবর্মা!

    তাহলে, শিখবে কি করে?

    এই সিডি আর বই কিনে নিয়ে যাচ্ছি। এইভাবেই শিখব।

    এখানে নামলে কেন?

    ওই যে ঘুঘনি, পেঁয়াজী আর ফুলুরীর গন্ধে! দাদু আর আমাদের অমৃত খেয়ে অরুচি ধরে গেছে! তাই নীচে নেমে খেয়ে নিলাম। এরকম জিনিস আমাদের ওখানে হয় না!

    বাল্মীকি চুপচাপ শুনছিলেন সব কথা। এবার বললেন- তোমরা খুব ভালো, কিন্তু আমার মনে একটা ধন্ধ।

    কি স্যার?

    এই রামচন্দ্রের জন্মস্থান নিয়ে হৈ চৈ! এটা খুব খারাপ! আমিই তো রাম না হতেই রামায়ণ লিখেছি।

    করিমচাচা আর শশীবাবুর হাত ধরে বাল্মীকি বললেন-তোমরা সব ভাই ভাই! ভায়েরা ঝগড়া করে? আর কোরো না! আমরা যাই। আর হ্যাঁ! ভোলা, তোমাকে আমি ৫০ টা স্বর্ণমুদ্রা দিলাম। তোমার যা দাম হয়েছে, সেটা কেটে নেবে। বাকী টাকায় এখানে বিদ্যালয়ের উন্নতি করবে। শশীবাবু আর বিজনবাবু দায়িত্ব নেবেন। আর জাতপাত নিয়ে মাথা ঘামাবেন না! কেমন? চলি!

    পুস্পকে চড়ে গেলেন ওরা! মনের বেগে মিলিয়ে গেল পুস্পক!

    দিয়ালায় প্রকাশিত আমার প্রথম লেখা
  • maximin | 69.94.2.228 | ১২ জুন ২০১২ ২৩:৩১511521
  • দিয়ালারটা পড়া ছিল। তবুও ভালো লাগল।
  • Nina | 78.34.167.250 | ১৩ জুন ২০১২ ০৪:২৫511522
  • আরে বাহ! আমি প্রথম পড়লাম--ঘনাদা আরও হোক
  • রাকৃভ | 125.187.58.134 | ১০ নভেম্বর ২০১২ ০৯:১৮511523
  • ##################ঠেক######################

    সন্ধে সাড়ে ছটা বেজে গেজে, তবুও আজ চেম্বারে রুগীর বেশ ভিড়! সন্ধে সাতটার পর চন্দন ভাদুড়ী আর রুগী দেখে না, সাধারণত। প্রাণটা হাঁসফাঁস করে, একটু বিশুদ্ধ আড্ডার জন্য। অক্সিজেন পেয়ে তৈরি হয়, পরের দিনের তরে । আজকের দিনে রাজা- গজা নেই ! তবুও, মাথার ওপরে একজন থাকা দরকার ! সেই মাথাটা হলেন- আড্ডার মধ্যমণি রাজা- ক্ষেতু বাগচী । সঙ্গে, গজারা হলেন- তারক মোত্তির, নাটু লাহিড়ী ‍! ওনারা এখনও কেউ এসে পৌঁছন নি !
    আজ তাই, অন্যমনস্ক হয়েছিল চন্দন। সত্য কম্পু একটা প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঢুকলেন।
    - একি! চন্দন বাবু! আফনে , আজকের ডেট লিখতে রঙ করসেন, হোয়াই!
    - কেন? ঠিক লিখি নি?
    - নো! টুডে কি, একোত্তিশ- নাইন -দুহাজার টুয়েলভ? আজ তো ফাষ্ট অক্টোবর- দশ- টু থাউজাণ্ড বারো!!!!!!!!!
    চন্দন জিভ কেটে তারিখটা ঠিক করল। সত্য কম্পুর খুব ইংরেজি বলার অভ্যেস। তাঁর ইংরেজি শুনে অনেকেই থরথর করে কাঁপে। তাই নাম সত্য কম্পু! অবশ্য তিনি, চেম্বারের কম্পাউন্ডারও বটে। নোয়াখালীর আদি বাসিন্দা! এখনও কথায় কথায় মাতৃভাষা, সত্য কম্পুর মুখ নিঃসৃত হয়।
    গতকালই সত্য কম্পু বলেছিলেন:- দি ফিফল অফ নুয়াখালি ক্যান্ট স্ফিক ইংলিশ ফফারলি! হাউ হ্যাথেটিক!
    চন্দন কোনোরকমে হাসি চেপেছিল। ভাগ্যিস, ওই সময় ক্ষেতু বাগচী এসে পৌঁছন নি।
    শেষ, বাচ্চা রুগীটির মা একটু খুঁতখুঁতে। চন্দন লিখেছিল ফোটান জল দিয়ে ওষুধটা, শিশির মধ্যেই সিরাপ তৈরি করে নিতে। বাচ্চাটির মা ওষুধ কিনে নিয়ে এসে বললেন- আচ্ছা ডাক্তার বাবু, আমি ডিসটিলড্ ওয়াটার দিয়ে সিরাপটা তৈরি করতে পারি না?

    চন্দন হেসে বলল- ডিসটিলড্ ওয়াটার তো ব্যাটারিতে ঢালে! আপনি ওষুধে ঢালবেন?
    বাচ্চাটির মা – ও তাই তো! বলে, মাথা নেড়ে চলে গেলেন।

    সত্য কম্পু বললেন- গুড কাজ ডান !

    কি করবো বলুন? পেসেন্টরা এত আজগুবি কথা বলে!- চন্দন উত্তর দিল।

    “বল হরির” চায়ে চন্দন এক চুমুক দিতে না দিতেই, কবি বদরী সান্যালের হাসি হাসি মুখে প্রবেশ।

    টুডে কেন, ইস্মাইলিং মুখ? - সত্য কম্পু জিজ্ঞেস করলেন!

    নাগেরবাজার- হাওড়া রুটের, একটা নতুন মিনিবাসের বডির পেছনে, দু লাইনের কবিতা লেখার অনুরোধ পেয়েছি! বদরী বাবুর উত্তর!
    ওয়ান্ডারফুল! বলে ক্ষেতু বাগচীর প্রবেশ।
    -তা লিখেছেন? চন্দন বলল।
    -হেঁ! হেঁ! লিখে এনেছি শোনাতে! শুনবেন?
    -আরে শোনাও, শোনাও! তারক মোত্তিরও বলতে বলতে ঢুকলেন!
    -তালে, শোনাই? বদরী লজ্জিত মুখে বললেন!
    -হুম ! শোনাও না! ভ্যানতাড়া করছ কেন হে! –ক্ষেতু বাগচী ক্ষেপচুরিয়াস!

    বদরী শুরু করলেন:-
    এক ফুল, দো মালী
    শ্যামবাজার লোড, হাওড়া খালি!
    -বেড়ে! বেড়ে! হাততালি দিয়ে উঠল সবাই!
    শুধু ক্ষেতু বাগচী বললেন- এক ফুল, দো মালী, এই লাইনটা কেন?
    ওই মিনিটা, জামাইবাবু আর তারা শালা মিলে কিনেছে! তাই ফুল হলো মিনি আর মালী হল- দুজন! সিম্পল! বদরী বাবুর উত্তর।
    না:! বদরী আজকাল বেশ লিখছে, এটা মানতেই হবে। ক্ষেতু বাগচী আজ বেশ উদার!
    -আচ্ছা! এখানে ব্লু ড টেস হয়?
    বলে এক ভদ্রলোক ঢুকলেন। বেশ ধোপদুরস্ত পাজামা- পাঞ্জাবী শোভিত।
    -ব্লু ড? চন্দন একটু ভুরু কুঁচকে ভদ্রলোকের দিকে তাকাল।
    - হুম! ব্লু ড!
    - ম্যাটারটা কি! কি করাতে চান আফনি? সেটা টেল ! সত্য কম্পু বললেন।
    - আরে মশাই ডাক্তারের চেম্বারের আপনারা !!!! ব্লু ড টেস জানেন না?
    - এটা কি ইংরেজি শব্দ? তারক মোত্তির জিজ্ঞেস করলেন।
    - হাজার বার ইংরেজি শব্দ। মেডাইসিন টের্মও বটে।
    - একি রে বাবা! ব্লু ড ইংরেজি শব্দ আবার মেডাইসিন টের্ম? চন্দন অবাক।
    - মনে হয়, একটু একটু বুঝতে পারছি। আচ্ছা! আপনি ইংরেজি বানানটা বলুন তো!তারক মোত্তির বললেন।
    - বি, এল, ও, ও, ডি! এইবার বুইলেন?
    - ও ও ও !!!!!! ব্লাআআড! এত বছর মাস্টারি করেছি, মাইরি! বাপের জন্মে এরকম উরুশ্চারণ শুনি নি! তারক মোত্তির চেঁচালেন।
    - অ অ ! তা কত বছর মাস্টারি কইরেচেন? ভদ্রলোকের ভুরু কুঁচকে গেল !!!
    - পঁয়ত্রিশ বছর!
    - কত মাইনে পাইতেন, একটু বইলবেন? কিছু মনে কইরবেন না!
    - শেষের দিকে মাসে কুড়ি হাজার টাকা পেতাম। বুঝলেন! কুড়ি হাজার টাকাআআ! নট এ ম্যাটার অফ জোক! তারক মোত্তির ক্রোধান্বিত।
    - ছোঃ! আপনার মাস্টারি রাখুন মহায়! এই উরুশ্চারণ নিয়ে আমি এখনও মাস গেলে চল্লিশ হাজার টাকা রুজগার করি! বুইলেন! উরুশ্চারণ শেখাচ্ছেন আমায়! হুঃ!
    - কি করেন আপনি? ক্ষেতু বাগচী এতক্ষণে মুখ খুললেন।
    - আমি উকিল!
    - নাম?
    - আমাকে ভালো নামে কেউ চেনে না।
    - ভালো নামে আবার উকিলদের কে চেনে ? খারাপ নামটাই বলুন না।
    - আরে ধ্যুস! আপনি কিন্তু রেজিয়াল কমেন্ট করছেন !!! খারাপ নাম হবে কেন?
    - রেজিয়াল !!!! ও ! রেসিয়াল !! না রেসিয়াল কমেন্ট করবো কেন ? মানে, উকিলদের তো খুব একটা সুনাম থাকে না! তাই বলছিলাম আর কি!
    - হেঁ হেঁ! খুব নামডাক আমার! বুইলেন? আম্মো ভোলা সরকার। খাঁটি বারিন্দির!
    - বুয়েচি! বারিন্দির ছাড়া এরকম বর্ডারলাইন কেস হয় নাকি? ক্ষেতু বাগচী উবাচ!
    - মানে?
    - মানেটা কিছুই নয়! বারিন্দিররা জাত পাগল! তা আপনি একটু বর্ডারলাইন কেস! ওই আপনার উরুশ্চারণের জন্য। বলছিলাম, টেস মানে তাহলে টেস্ট আর মেডাইসিন টার্ম মানে মেডিক্যাল র্টাম! তাই তো?
    ভোলা সরকার মনে হলো, এবার একটু সতর্ক! সেটা বোধহয়, ক্ষেতু বাগচীর ছ ফুটি চেহারা আর বাজখাঁই গলা শুনে!
    তা হলে, ইউ আসুন টু মোরও সকাল! সত্য- কম্পু বললেন।
    এবার আসরে নামল, চন্দন!
    -আপনার ব্লাড টেস্ট না হয় করা যাবে! সেটা কিসের জন্য, বলবেন?
    -আর বলবেন না মহায়! আমার চোখ আর জিভ নাকি খারাপ!
    -ডাক্তার দেখিয়েছেন?
    -হ্যাঁ!
    -চোখের ডাক্তার?
    -না! আমার বৌ বলেছে!
    -সে কি! আপনার বৌ কি ডাক্তার নাকি!
    -না! তবে উনি মনে করেন, ডাক্তারি উনি জানেন! উনি সবজান্তা!
    -তা কিজন্য ওনার মনে হলো,যে আপনার চোখ খারাপ?
    - মহায়! আজকাল, আমি ভাতকে ভাত দেখি, ময়দাকে ময়দা দেখি, লুচিকে লুচি, মাছের ঝোলকে মাছের ঝোল!
    -তালে? গণ্ডগোলটা কোথায়?
    -ওটা বুঝলেই তো এই বর্ডারলাইন কেসটা সারে!
    -মানে?
    -কোনো খাবারের টেস পাচ্ছি না আজকাল! তাই বৌকে বলেছিলাম, তুমি কি রানচো দেখি আজকাল! কোনো কিছুই বুইতে পারছি না!
    তা বৌ বলল- কেন? এই তো যা রোজকার খাবার! তাই তো দিচ্চি তোমায়!
    আমি বইল্লাম! এডা তো ভাত দেকচি! কিন্তু ভাতের টেস পাচ্চি না!
    বৌ বল্লে:- কিসের টেস পাছো?
    আমি উত্তর দিলাম:- কেমন গোবোর গোবোর টেস! অতচ, ভাতই তো দেখচি!
    বৌ রেগে গিয়ে বল্লে:- সব ঠিক দেকচো কি ? তোমার চোখ আর জিভ খারাপ হয়েসে। চোখ আর জিভ পরীক্ষার আগে ব্লু ড টেস করে নেবে, তারপর ডাক্তার দেকাবে।
    ব্যাস! হয়ে গেল! তাই তো আমি একাজে এয়ে-চি!!!!!!!
    আপনি বৌয়ের কথা খুব মান্য করেন দেখছি ! চন্দন বলল !
    শুধু মাত্র বিবাহিত পুরুষদের জন্য স্বর্ণাক্ষরে লিখিত নিয়ম । মেনে চললে, কোনো দুক্কু থাকবে না ! ভোলা সরকার বললেন ।
    কি রকম ?

    নিয়ম- ১ । স্ত্রীরা সবসময়ই ঠিক বলে ।
    নিয়ম- ২ । এর অন্যথা হলে, নিজের দুইগালে নিজেই থাপ্পর মারবেন ।
    নিয়ম- ৩ । তার পর, নিয়ম-১ পালন করুন । ভোলা সরকারের জবাব ।
    ক্ষেতুদা বললেন:- হুম! বুঝলাম। কিন্তু আপনি তো দেখছি, বাগবাজারী ভাষায় কথা বলছেন! এটা তো বারিন্দিরদের ভাষা নয়!
    ঠিক! ঠিক! ভোলা বাবুর উত্তর! আমার বৌ, বুইলেন কিনা, ওই বাগবাজারের লোক! ওরাও বারিন্দির, তবে কেষনগর থেকে বাগবাজারে এয়েচেল। সেই থেকে তার অব্যেস! তাই আমারও হয়ে গেচে।
    এ তো দেখছি, বদরীর এক ফুল দো মালীর কেস! একজন লোক, তার মুখে আবার দুরকমের ভাষা! হরি হে! তুমিই সত্য!!!!!! ক্ষেতু বাগচী দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন। নাম শুনে, বল হরি একবার উঁকি দিয়ে গেল।
    -বদরী সান্যাল বেশ খুশী হয়ে বললেন:- ক্ষেতুদা! চিকেন রোল খাবেন?
    -তুমি খাওয়াবে?
    -হ্যাঁ!
    -আনাও, আর হ্যাঁ- এই ভোলাবাবুর জন্যও কিন্তু আনাবে! আমরা তো আছিই!
    তা ভোলাবাবু, আপনি কেষনগরে বিয়ে করলেন কেন?
    -আর বলবেন না! বাবা বলতেন:-

    বাজার করবি ঘুরে ঘুরে
    শ্বশুর করবি দূরে দূরে
    মানেটা বুঝিয়ে বলবেন? ক্ষেতুদা বললেন।
    -মানে হল গিয়ে, বাজার করতে হবে ঘুরে ঘুরে। তা হলে ওজন আর দাম ঠিক পাবেন! বুইলেন কিনা ! আর শ্বশুরবাড়ী দূরে করলে, মান – ইজ্জত পাওয়া যায় ! বুইলেন কিনা !
    - শ্বশুরবাড়ীর কেস আর দামটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু ওজন কেন? পরিচিত দোকানদাররা ওজনে ঠকায় না!
    -আর বলবেন না মহায়! আরও একটা কথা বলতেন বাবা!
    -কি?
    যার হাতে দাঁড়িপাল্লা
    তার নেই খোদাতাল্লা!
    -এর মানে?
    -মানেটা সহজ! যার হাতে দাঁড়িপাল্লা আছে সে ঠকানোর জন্য ভগবানকেও ভয় পায় না। বুইলেন কিনা!
    -এবার বুঝেছি! এই ক্যাচ লাইনটা একটু ঘুরিয়ে, আবার একটা খবরের কাগজের ইউএসপি কিনা ! যাক্ !!! আপনি উকিল তায় বারিন্দির! বলুন বলুন!
    -কি আর বলবো মহায় ! আমি বাড়ীতে বাঘ , তবে!
    -তবে?
    -আমার বৌ রিং মাষ্টার !
    হো হো করে হেসে উঠলো সবাই !
    -তা ভোলা বাবু, আপনি কি গুল টুল মারেন ? ক্ষেতু বাগচী ছুঁড়ে দিলেন প্রশ্নটা ।
    -উকিল মানুষ, বুইলেন ! সে তো মারতেই হয় ! উপার্জনের ব্যাপার ! বুইলেন কিনা !
    -কি রকম ? দু- এক পিস স্যাম্পল ছাড়ুন !
    -এ ব্যাপারে, আমার মায়ের বাবা, মানে দাদু ওস্তাদ ছিলেন ! বুইলেন কিনা !
    -আচ্ছা?
    -হ্যাঁ ! তবে আর বলছি কি ? বুইলেন কিনা ! একবার স্নানের সময় দিদিমার কাছে সরষের তেল চেয়েছিলুম । দাদু বললে- সে ছিল আমাদের সময় ! নদীতে যাওয়ার আগে, সরষের খেত থেকে সরষে তুলে, হাতে পিষে খাঁটি সরষের তেল গায়ে মেখে স্নান করতাম !
    -আপনার দাদুর দুই হাত তো একেবারে ঘানির মত ছিল, বলুন !
    -হ্যাঃ ! তা যা বইলেচেন ! এক্কেরে বামপন্থী থাবা !
    তারক মোত্তির আর থাকতে পারলেন না ! ছড়া কাটলেন :-
    রসকস নেই গন্ধ ছাড়ে
    কুকুর চিবোয় শুকনো হাড়ে
    দুকষ বেয়ে রক্ত ধার
    বড়ই বাহার লেগেছে তার

    -কি বইলেন ! আমি কুত্তা? ভোলা সরকারের গর্জ্জন ।
    -আহা ! ব্যাপারটা ওই ভাবে নিচ্ছেন কেন ? ক্ষেতু বাগচী পরিত্রাতার ভূমিকায় ! পুরোন গপ্পো এভাবে বললে- বারিন্দিররা এই প্রবচন বলে ! আপনি বুদ্ধিমান লোক, মানেটা বুঝবেন, একটু ভাবলেই !
    -অ !
    -তবে, একবার লাউয়ের বিচি ফেলে ছিলাম , আমার কিচেন গার্ডেনে ! বিরাট লাউ হলো এক- একটা ! রিক্সা- ওয়ালা মধু বলল , আমাকে একখান দ্যান কত্তা ! দেশে নিয়ে যাব ! বনগাঁ লাইনের ঠাকুরপুকুরে ওর বাড়ী ! ই. এম. ইউ কোচের দরজা দিয়ে লাউটা তুলতে না পেরে , ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল মধু! তারপর, দিন তিনেক হাঁফিয়ে ছিল ! ক্ষেতু বাগচী, সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বললেন ।
    -এ তো কিছুই না ! তারক মোত্তিরের প্রতিক্রিয়া !
    -কিছু যেটা হলো, সেটা কি ? রেগে গেলে ,ক্ষেতু বাগচীর চোখ পিটপিট করে ।
    -এভরিটাইম, আফনে খচিতং ! এবারে সত্য কম্পু মুখ খুললেন । আরে, তারকদারে কইতে দ্যান !!!!
    -বল হে তারক, ক্ষেতু বাগচী কেন যেন এবারে উদার !
    -আমার বাবা, একবার বেখেয়ালে করলার একটা ছোট গাছ লাগিয়েছিলেন । কিছুদিন বাদে দেখলেন- ছয় বিঘা জমি জুড়ে, খালি করলার গাছ ! ট্রাকেক্কে ট্রাক করলা বেচে আমাদের বর্তমান তিনতলা বাড়ীটা বাবা বানিয়েছিলেন । হুঁ ! হুঁ ! বাওয়া, এক্কেরে নিয্যস সত্যি কথা !
    -তোমার স্বাধীনতা সংগ্রামের মত, বাবা তারক ? ক্ষেতু বাগচী মুচকী হেসে বললেন ।
    -কি রম্, কি রম্র ? ভোলা সরকার উৎসাহিত ।
    -বাবা তারকনাথ স্বয়ং পেজেন ছিলেন গাঁধির সঙ্গে, গোলটেবিল বৈঠকে !
    -হ্যাঁ ! ক্ষেতুদা ঠিকই বলেছেন । উনি তো হিটলারকে নিয়ে পালিয়েছিলেন, পরে রটিয়ে দ্যান, হিটলার আত্মহত্যা করেছেন !!!! অবশ্য আমাদের দাদার জন্ম- উনিস্সো পঁয়তাল্লিস সালে ।

    এক মধ্যবয়স্ক দারা সিংয়ের মত মহিলা এসে দাঁড়ালেন, চেম্বারের দরজায় !
    -আসতে পারি ?
    -আসুন, তবে পেসেন্ট দেখা বন্ধ এখন ! সত্য কম্পু বললেন ।
    -আমি তো পেসেন্টের খোঁজেই এসেছি এখানে ! নিজেকে উকিল বলে পরিচয় দ্যায় । ওনার টপ ফ্লোরে একটু গণ্ডগোল আছে । উনি আসলে একটি হনুমান ! তা, লোকে বলল- একানে এয়েছেন ! তাই এলুম ।
    ক্ষেতু বাগচী উঠে দাঁড়িয়ে বললেন – চলি হে চন্দন । তোমার বৌদি ঘন ঘন মিসড্ কল দিচ্ছেন । তারক মোত্তিরেরও একটা জরুরী কাজ মনে পড়ল।
    লিটার লিটার ঘাম ঝরানো ভোলা সরকারকে বগলদাবা করে ভদ্রমহিলা হাঁটা দিলেন ।

    .........সমাপ্ত...............

    নভেম্বর ১২। অমনিস্কোপ ওয়েবজিন । সম্পাদক - রোহন কুদ্দুস
  • রাকৃভ | 125.187.33.84 | ১৬ নভেম্বর ২০১২ ০৮:৪৪511524
  • ####ইতি- উতি####

    দুগ্গিপূজা –লক্ষ্মীপূজা- কালিপূজা, শেষ । বিভিন্ন জায়গার ( অ?) সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণের রেশ এখনও কানে বেজে চলেছে !
    অর্থ উপার্জন একব্রহ্মের ন্যায় স্থির । মূল্যবৃদ্ধি সাগর সলিলের ন্যায় আবর্তিত ও ফেনিল । বিপণিসমূহের স্পন্দনোদ্ভূত বিজ্ঞাপনে মন বিক্ষিপ্ত । এই সকল অবস্তু- মায়া জানিলেও, ইহা দ্বারা সমাচ্ছন্ন বাঙালি জীবকূল । অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডে, অনন্ত জীব ও প্রপঞ্চ রূপে এই সকল অনন্তকোটী প্রলোভন বিদ্যমান ।
    মহাসমুদ্রে তৃণের ন্যায় সকলেই ভাসিতেছে । জটিলতা পূর্ণ অঘটন- ঘটনায় পর্যবসিত হইবে বলিয়া সকলেই একমত ।
    এইরকম ভাষা আগে ব্যবহার করা হত । এখন সব চলতি ভাষা । খাওয়া- দাওয়ার ধরণটাও পাল্টেছে । ক্রিসপি চিকেন, পাস্তা, পিৎজা, চাউমিঁএ – এই সব বাচ্চারা এবং জেন- এক্স এখন বেশী চেনে আর খায় ।
    নাড়ু, কুচো নিমকি, বোঁদে,তক্তি- বাড়ীতে বানানো বেশ হ্যাপার কাজ । তার চেয়ে রেস্তোঁরাতে গিয়ে বসে খাওয়াটা ভালো । পরিশ্রম বাঁচে, হাজার পঞ্চাশ টাকার গ্যাস দেখেশুনে খরচ করতে হয় ।
    তাই, চট মগ্নি- পট বিহা । রাস্তার ফুচকা, ঘুগনি এসব স্বাস্থ – সচেতন লোকেরা খাবে না । বাচ্চাদের খেতেও দেবে না । বাচ্চারা এইসব ঘুঘনি , কুচো নিমকি স্বাদ বদলানোর জন্য একটু খাবে আর তারপরেই বায়না করবে, মোমো খাওয়ার জন্য । তার পর কোল্ড ড্রিংকস্ ।
    স্কাই রুম ( এখন চিরতরে বন্ধ ), ওয়ালডর্ফ ( এটাও বন্ধ ), ফ্লুরিস, পিটার ক্যাট-ছিল ঠিকই, তবে বেশী যাওয়া হত না, কারণ মধ্যবিত্তের এইসব নাগালের বাইরে ছিল । এখন প্রায় সব পরিবারেই দোনলা বন্দুক, মানে বাবা- মা দুজনেই রোজগার করেন । তাই এই সব জায়গায় যাওয়াই যায় । তবে, কিছু পুরোনো পন্থী লোক আছেন এখনও । তাই, নাড়ুটা বড়ীটা জোটে কপালে । আমি তো আদ্দেক ডিম খেয়েই বড় হয়েছি, তাও হাঁসের ডিম । আজকের বাচ্চারা খাবে ?
    এর পরের প্রজন্ম তো এই সব ঘুঘনি , কুচো নিমকি, নাড়ু, তক্তির কথা নেটে দেখবে । বইও বোধহয় থাকবে না !

    এই কারণেই সেদিন বাজারে গিয়েছিলাম নারকোল কিনতে । “রিস্কায়” চাপলাম । দুর্গা নাকি, দুর্গতি নাশ করেন । ফুঃ ! দুর্গতি আরও বাড়ে । ওয়াট্ লগা দিয়া । একে তো জামা- কাপড়- জুতোর খরচা । তার ওপর একের পর একের বকশিশ চাওয়ার ফলে, প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে যমালয়ে যাবার জন্য রেডি ।
    ছয় টাকার পথ বাজার । নামতেই রিক্সাচালক বলে উঠল:- বাবু, পূজার বাজার !! কুড়ি টাকা দেবেন ।
    - তোদের আজ সকালে পূজা, বিকেলে শীত, কাল গরম, পরশু বর্ষা, তরশু বিশ্বকর্মা পূজা ! বলি, আমার কিছু নেই নাকি ? আমাকে কে দ্যায় রে ? তার চেয়ে তুই আমাকেই বরং বিনা পয়সায় নিয়ে এসে উবগার কর । পূজা বলে কথা !!!! বল ?
    নারকোল দর করলাম । দাম জিজ্ঞেস করাতে, দোকানদার বলল:- জোড়া চল্লিশ টাকা !
    বললাম :- একটু কম হবে না ?
    -হবে বাবু, তবে আমার এখানে নয় ।
    -কোথায় ?
    -একটু এগিয়ে যান, জোড়া ৩৫ টাকা । আর একটু এগুলে জোড়া ৩০ টাকা । করে করে, এগিয়ে গেলে দেখবেন, বিনে পয়সায় প্রচুর নারকোল পাবেন !
    ব্যঙ্গ করল, বুঝতে পারলাম । চোখে পড়ল নতুন প্রভাতী ট্যাবলয়েড পত্রিকা । তারা বলছে- আপনার প্রথম পুজো । ধ্যৎতেরিকা-পুজো, পুজোই ! তার আবার প্রথম কি ? হ্যাঁ ! শেষ আছে ,তবে সেটা মোলে ! আজকাল তো আবার সাইবারের যুগ ! সাঁই সাঁই করে, বারে ঢুকে কয়েক পাত্তর রাম গিলে মৌজ কর । পুজো বলে কথা ! মগজের, মাদার বোর্ডের র্যাজম - একেবারে একশো জিবিতে পৌঁছবে । সাধে কি আর মাদার ? এখন মাদার, বোর্ডেই ঝুলছেন ! বিল বোর্ড । জি হচ্ছে সর্ট ফর্ম । গণেশ জি, কার্তিক জি ! বি- ও তাই ! লখস্মীবিবি, সোস্সোতি বিবি । শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান । মহাদেব সারা গায়ে ছাই মেখে, পাক্কা সাহেব । মহিষাসুর তো আছেই ! পুরো ঝক্কাস- সাহেব, বিবি, গোলামের থিম্ । এরা আবার থিম্ পুজো দেখাচ্ছে ! হুঁ হুঁ বাওয়া। ইয়ার্কি পায়া হ্যায় !
    ফ্ল্যাসব্যাকে চলে গেল মনটা । ছোটবেলায়, বাবার হাত ধরে পুজোর প্যান্ডেলে গেছিলাম । হঠাৎ দেখি, দুজন দুবলা পাতলা লোককে, বাবা দুহাতে চেপে ধরে- পকেটমার বলে চেঁচাচ্ছেন । পাঁড়ে “জি” কনস্টেবল দৌড়ে এসে বলল- কেয়া হুয়া “জি” ?
    ওই দুই মক্কেলের ছাড়ানোর লাফা লাফিতে বাবা, হাঁপাতে হাঁপাতে “বি”ড় “বি”ড় করে বলল:- পকেটমার !

    পাঁড়ে “জি” চুলের মুঠি ধরে আরেকজনের জিম্মায় দিয়ে জিজ্ঞাসা করল ওদের :-

    - নাম কেয়া রে?

    - আজ্ঞে, নকুল চ্যাটার্জ্জি!

    - ঔর তেরা?

    - আজ্ঞে, দানা ব্যানার্জ্জি!

    - এঃ ! চোরি করতা, আওর নাম কি পিছে “জি” লগাতা? বোল- চাটার, ব্যানার !!!!
    তবে, হ্যাঁ ! জীবনের প্রথম শক, বিয়ের পর বৌকে নিয়ে প্রথম দুগ্গাপুজো দেখা ! সেলসে চাকরি । ছুটি পাবো কিনা ঠিক ছিল না ! কোচবিহার শহরটা তো আর কাছে নয় ।
    বিয়েতে, আমার বৌয়ের এক বান্ধবী আসতে পারে নি । রিক্সাতে আমাদের দুজনকে দেখেই তার প্রথম প্রতিক্রিয়া :- এঃ ! বরটা না হয়, ছুটি পেয়ে আসতেই পারে নি , তাই বলে চাকরকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিস ।
    আবার রূঢ় বাস্তবের কালারফুল জগতে স্টেপ আপ করে এলাম ।
    আমার এক এক সময় মনে হয়, মাছওয়ালারা জনসেবা করতে দোকান খুলেছে ! কি সব ডায়ালগ ! সেলিম বা জাভেদও হার মানবে !
    বাজারে বেশ সার সার মৃতদেহ । একটু পরেই এদের শ্রাদ্ধ হবার কথা ! একটা ইলিশ মাছের মৃতদেহের দাম কত, জিজ্ঞেস করতেই মাছওয়ালা বলল- ৮০০ টাকা কেজি !
    বললাম :-
    -বুড়ো ! ( ডাকনাম ) তোর লস হবে না তো ? মাত্র ৮০০ টাকা ? আরও একশো টাকা বেশী নে !
    -না না, দাদা ! অধর্ম করি না আমি ! কেনা দামেই বেচি আমি- আপনার কাছে !
    -আমার প্রতি তোর এই দয়ার কারণ?
    -আমি রোজ সন্ধেবেলায় সোনী টিভিতে সিআইডি সিরিয়ালটা দেখি ! “দয়া” কে আপনার মত দেখতে, তাই !
    -তোর এই দয়াতে পোষাবে ? কষ্ট করে, পাতিপুকুরে গিয়ে মাছ কিনে, সেটা কেনা দামেই বিক্রি করবি আমায় ! এটা কোনো কথা হলো? না না ! তুই বরং ৯০০ টাকা করেই নে ! আর শোন- আমায় ১০ মিলিগ্রাম মাছ দে ! ওটাই ১ মিলি তেলে ভেজে , গন্ধ শুঁকে শুঁকে খাব ।
    এইভাবেই দিন আসবে যাবে । হুল্লোড়ে মাতবে বাঙালি ! আমরা গড্ডালিকা প্রবাহের মত ভেসেই চলব ।
    আসছে বছর আবার হবে ।
    ####################
    ****ক্ষেপচুরিয়ান**** নভেম্বর ২০১২
  • rivu | 78.232.113.69 | ১৯ নভেম্বর ২০১২ ০৭:১৮511525
  • অসাধারণ :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন