এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  গান

  • মানুষ মানুষের জন্য

    Shibanshu
    গান | ০৬ নভেম্বর ২০১১ | ২১৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Shibanshu | 117.195.139.245 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ১৪:২২504381
  • মানুষ মানুষের জন্য

    বেশ কিছুদিন আগের কথা, আমি তখন বোধ হয় কলেজে পড়ি। এইচ এম ভি পুজোয় একটি ছোটো এলপি রেকর্ড বের করলো, 'আমি এক যাযাবর'।

    যখন থেকে জ্ঞান হয়েছে, ভূপেন হাজারিকা নামটির সঙ্গে অনেক পরিচয়। সেই ছোট্টোবেলা থেকে এইচ এম ভি'র 'শারদ অর্ঘ' পুস্তিকায় শেরপা টুপি পরা, অনেক সময় চোখে কালো চশমা, তাঁর ছবির সঙ্গে গানের লিরিক, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিবদাস বন্দোপাধ্যায়ের রচনা, 'গঙ্গা আমার মা' বা 'বিস্তীর্ণ দুপারে' বা এইসব শাশ্বত মণিমুক্তার ইতিহাস। অনেক জনরব তাঁকে নিয়ে। পল রোবসনের বন্ধু, শিকাগো থেকে গানে ডক্টরেট করেছেন ( ওটা অবশ্য গানের জন্য ছিলোনা, ছিলো এদেশে সেই সময় অপরিচিত একটা বিষয়, মাস কম নিয়ে)।

    তবে সত্তর বা আশি দশকের প্রথমে ভূপেন সাধারণ বাঙালি শ্রোতার কাছে ছিলেন 'মাহুত বন্ধুরে'র গায়ক, অসমের মানুষ। অনেক সময় কলকাতায় থাকেন। তাঁর ঐ টালিগঞ্জের বাড়িটির কাছে ছিলো আমার আত্মীয় নিবাস। মৌলিক বাংলা গানের দরবারে তাঁর ভূমিকাটি ছিলো সীমাবদ্ধ। সত্তরের শেষ, আশির প্রথমে, গনগনে লাল কলকাতায় তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসের দোষে মানু রায়ের পুলিশ নজর রাখতো তাঁর উপর। কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্যের আইকন ঐ মানুষটিকে তারা আর কিছু করতে পারেনি। বহু সৃষ্টিছাড়া প্রতিবাদী ছেলেমেয়েরা ভূপেনের গান গেয়ে মিছিল করতো। সলিল বম্বে চলে যাবার পর বাংলা গানের এই ধারাটিতে যে ভাঁটা পড়েছিলো ভূপেন তাঁর সৃষ্টিতে তাতে নতুন ঢেউ নিয়ে আসেন।

    তবে 'আমি এক যাযাবর' অ্যালবামটি বাংলা গানে একটি নতুন মোড় এনে দেয়। এই সংকলনের গানগুলিতে ভূপেন খুব সফলভাবে পরীক্ষা করেন পূর্ব ও উত্তরপূর্বের লোকগানকে দেশি ও বিদেশি নানা আঙ্গিকে, অর্থাৎ, তালবৈচিত্র্যে, লয়বিভাজনে, যন্ত্রানুসঙ্গের নতুন নির্মাণে বা কণ্ঠ ব্যবহারের প্রকৌশলে এবং অবশ্যই সম্পূর্ণ নতুন ধরনের লিরিকের ব্যবহার করে। বাঙালি শ্রোতাদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ এনে দেন তিনি। তার পর এই ধরনের স্বাদ বাঙালি পায় সুমনের প্রথম অ্যালবাম 'তোমাকে চাই' থেকে।

    একজন দুরন্ত সুরকার হিসেবে বাঙালি শ্রোতা তাঁকে জানতো এর আগে। 'একখানা মেঘ ভেসে এলো আকাশে', 'তোমায় কেন লাগছে এতো চেনা', 'বড়ো ভয় ছিলো যাবার বেলায়','ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো' ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিন্তু সম্পূর্ণ কম্পোজার হিসেবে ( এই কারণে 'সম্পূর্ণ' বলছি যে শিবদাসের লেখা বাংলা লিরিকগুলি মুখ্যত ভূপেনের রচিত অসমিয়া কথার ভিত্তিতেই নির্মিত হতো)তিনি বাংলা গানে আত্মপ্রকাশ করলেন। তার পর আর পিছু ফিরে দেখেননি।

    আশির দশকের প্রথমদিকে তিনি জামশেদপুরে বেঙ্গল ক্লাবে এলেন গান শোনাতে। তখন সমগ্র ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় নির্মম ভাতৃঘাতী দ্বন্দ্ব ও রক্তক্ষয় চলছিলো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাভাষীরা ছিলো এই অর্থহীন উন্মাদনার শিকার। আমরা কি ক্ষুব্ধ ছিলুম না এই অসমিয়ামূলের এই হিংস্র জাতিবাদী আক্রমণে। অবশ্যই ছিলুম এবং তার উচ্চারণও শোনা গেলো শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়ায়। ভূপেন অন্য একটি গান গাইবেন ভেবে যন্ত্রীদের নির্দেশ দিচ্ছিলেন, হঠাৎ একজন শ্রোতা তীব্র স্বরে প্রশ্ন করলেন, ভূপেন দা, আসামে কী হচ্ছে? কিছু বলবেন তা নিয়ে?
    ভূপেন মূহুর্তকাল স্তব্ধ থাকলেন প্রশ্নটি শুনে। হয়তো ভাবেননি এভাবে প্রশ্নটি তাঁর কাছে আসবে। যন্ত্রীদের থামতে বললেন, তার পর আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,' ভাইয়েরা যখন পাশের বাড়ির ভাইদের মারে তখন তো তারা মানুষ থাকেনা, তারা অন্ধ পশুর অধম হয়ে যায়। কিন্তু কলহটি তো শেষ পর্যন্ত ভাইদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। কষ্ট হয় সেই সব ভাইদের যাদের জন্য দুই বাড়িতেই মাদুর পাতা আছে। আমার কাজ যে ভাইয়েরা মারছে তাদের আবার মানুষ করে তোলা আর যারা আজ মার খাচ্ছে তাদের জন্য শূশ্রূষা নিয়ে যাওয়া। আমার এই গানটা শুনুন, এছাড়া আমার কিছু বলার নেই।' যন্ত্রীরা যেন জানতো ই তিনি কী গান ধরবেন, চোখ বুজে গেয়ে উঠলেন, 'মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য.....'

    তাঁর এই নিবেদনের মধ্যে যে ধরনের এক আর্তি ছিলো তা এক পেশাদার গায়কের অধীত প্রকৌশলের কৃত্রিমতার অনেক উপরের ব্যাপার। অর্থাৎ একটি সম্পূর্ণ বাংলাভাষী ক্ষুব্ধ শ্রোতৃবর্গের উদ্দেশে একজন পেশাদার গায়ক শুদ্ধ বাণিজ্যের প্রয়োজনে যে অনৃত আবেগের অভিনয় করতে পারতেন, তার থেকে অন্য মেরুতে ছিলো তাঁর অবস্থান। কোথাও যেন আঘাত লেগেছিলো শিল্পীর অন্দরমহলের তন্ত্রীতে, তাঁর সূক্ষ্মতম বেদনার কেন্দ্রে। তাঁর বিশ্বাস পূর্ণ গরিমায় ছড়িয়ে পড়েছিলো তাঁর কণ্ঠের সুরে, পরিবেশনার সততায়। তখন থেকেই তাঁকে তাঁর অন্য গুণমুগ্‌ধদের মতো 'ভূপেনদা' বলেই স্মরণ করি।

    স্বাধীনতা উত্তর অসমে তিনি হলেন তাঁদের সভ্যতার শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি। অসমের জাতীয়তাবোধ যে সব মনীষীর চিন্তা ও সৃষ্টির সম্পদে তৈরি হয়েছিলো তাঁরা প্রায় সবাই ছিলেন বঙ্গীয় রনেশাঁসের ঐতিহ্যের ভাগীদার। য়ুরোপীয় যুক্তিবোধ ও ভারতীয় মূল্যবোধের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা যে জীবনদর্শন, অসম ও বাংলা, দুই প্রান্তই তার অমৃতফল আস্বাদ করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থপ্রনোদিত যে 'নব্য' জাতীয়তাবাদ তার বিষে ম্লান হয়েছে সারা ভারত। বাংলা বা অসমও কোনও ব্যতিক্রম নয়। অসমে ভূপেনদার কাল্ট স্টেশাস শুধু গগনচুম্বী বললে খুব কম বলা হবে, অথচ তাঁর সৃষ্টিশীল জীবনের মুখ্য অংশ তিনি কাটিয়েছেন বাংলার মাটিতে এবং তাঁর বাঙালিত্ব আর অসমিয়াত্বের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব দেখেনি কেউ। এমনকি তিনি যখন জীবনের একটা বিরাট অংশ বম্বেতে যাপন করেছেন, তাঁর মধ্যে কেউ কোনও অস্বস্তি খুঁজে পায়নি। সর্বার্থে একজন পূর্ব ভারতের সাংস্কৃতিক রাজদূত, পূর্ণ মহিমায় সারা দেশের সংস্কৃতির প্রতিনিধি হয়ে থাকতে পেরেছেন অনায়াসে। সর্বজনের প্রেয়, সর্বজনের শ্রদ্ধেয়, আমাদের স্বপ্নের 'ভারতীয়ত্ব' কি এমনই কোনও একটা ব্যাপার।

    বয়েস হয়েছিলো। কষ্ট পাচ্ছিলেন বহুদিন। যেতে তো হতই। কিন্তু এইসব মানুষের চলে যাওয়া আমাদের আমূল দরিদ্র করে দেয়। তাঁর স্তরের সৃজনশীলতা, মানবিকতা ও স্বত:স্ফূর্ততা নিয়ে আরেকজন শিল্পী কবে আসবেন আবার আমাদের মধ্যে, জানিনা।

    ভূপেনদা, আরেকবার আসবেন আমাদের জন্য কোনদিন? আমরা অপেক্ষায় থাকবো.....

    শিবাংশু।
  • lcm | 69.236.160.8 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ১৪:৩৬504392
  • যথারীতি, শিবাংশু-র প্রতিবেদন অনবদ্য।
    শুধু একটা তথ্য বোধহয় --- ভূপেন হাজারিকা পিএইচডি পেয়েছিলেন নিউইয়র্ক-এ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে, শিকাগো নয়।
  • Shibanshu | 117.195.134.194 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ১৫:১৫504395
  • ঠিক বলেছেন, কলম্বিয়া ইউনি... ভুল হয়েছিলো :-)
  • Bratin | 117.194.100.178 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ১৭:১৯504396
  • শিবাংশু দা, খুব ভালো লাগল।

    অন্য ধারার গায়ক। অত্যন্ত পছন্দের কটি গান

    ১। মানুষ মানুষের জন্যে
    ২। জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়
    ৩। দোলা এ দোলা
    ৪। গঙ্গা আমার মা
    ৫। আমি এক যাযাবর

    এই মানুষ বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে ভালোবাসতেন। বছর দুয়েক ( বা তিন) আগে আনন্দবাজারের রবিবসরীয় তে এ ই লেখা টা পড়ে বেশ বাজে লেগেছিল ' আমি এক যাযাবর, বামেরা আমাকে গাইয়ে নিয়েছে, ডানে রা দিয়েছে ঘর'
  • maximin | 59.93.255.99 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ১৭:২৭504397
  • ভালো লাগল।
  • Du | 117.194.196.187 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ১৮:৪২504398
  • এ পার ও পার কোনপারে জানিনা, ও আমি দুই পারেতেই থাকি।

    মায়ানমারের জঙ্গী থেকে ছপোষা আমরা, স্কলের হৃদয়ের একটি টুকরো নিয়ে গেলেন ভুপেন হাজরিকা।

  • Sumit Roy | 67.242.141.24 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ১৯:০৪504399
  • শিবাংশু, সাধু!
  • Bratin | 117.194.100.185 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ১৯:২৯504400
  • আমি ছোটোবেলায় বেশ দরদ দিয়ে 'গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা' গাইলে লোকজন সাজেস্ট করতো: বল 'পদ্মা আমার দিদিমা'। প্রসঙ্গত: আমার দিদিমার নাম সত্যি ই পদ্মা।
  • de | 59.163.30.4 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ১৯:৩৫504401
  • শিবাংশুদা, অসাধারণ স্মৃতিচারণা! খুব ভালো লাগলো!
  • Abhyu | 97.81.88.18 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ১৯:৫০504382
  • খুব ভালো লাগল।
  • siki | 122.177.237.71 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ২০:৪৭504383
  • লাইকালাম।
  • MR | 70.122.242.230 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ২২:০০504384
  • ভূপেন হাজারিকার গান তো ভীষণই ভালো লাগে। তবে ওর "বিস্তির্ণ দুপারে" নিয়ে একটু বলা যায়। TMC-Turner Classic Movie তে একটা মুভি দেখছিলাম। বিষয়টা ছিলো Missisipi river এর ওপর অনেকদিন আগে অনেকটা cruise line এর মতো বানিজ্য হতো। সেখানে বোট গুলিতে নাচগানের শো হতো broadway styleএ । এরকমই একটা বোটে এক black sailor মিসিসিপি নিয়ে উদাত্ত কন্ঠে কিজে অসাধারণ গান করলো, না শুনলে বোঝা যাবে না। আর তার সুরটা ছিলো বিস্তির্ণ দুপারের সুর।
  • nyara | 122.172.47.43 | ০৬ নভেম্বর ২০১১ ২৩:৪৭504385
  • শিবাংশুবাবুর জরিন কলম। সেও আমার নেই, ভূপেন হাজারিকার লাইভ শোনার সেরকম অভিজ্ঞতাও নেই। একবারই শুনেছি, আশির দশকে। পুজোর জলসায়। নেশার প্রভাবে ঠিকমতন দাঁড়াতে পারছিলেন না, কিন্তু গলা স্টেডি। আমার সব বরফাটাই রেকর্ড শুনে।

    ভূপেন হাজারিকার গানে দুটো ইনফ্লুয়েন্স খুব স্পষ্ট। একটা আসামের ফোক আর অন্যটা অ্যামেরিকার কর্মসঙ্গীত। এর সঙ্গে জারিয়ে নিয়েছিলেন নিজের বামপন্থী রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা। কিন্তু কখনই তাঁর গানে চলতি বামপন্থী চিত্রকল্প লাল, সূর্য ওঠা ইত্যাদি সেরকমভাবে জায়গা পায়নি। সে দিক দিয়ে এই ক্লিশে থেকে কথার দিক থেকে অনেক ফ্রেশ ছিল ওনার গান।

    ভূপেন হাজারিকা বাংলা গানে নিজের ছাপ রাখছেন পঞ্চাশের দশক থেকে। একদম প্রথম দিকের বাংলা গান - হেমন্তর সঙ্গে ডুয়েট - আঁকাবাঁকা এ পথের - শুনলে এই লক্ষণগুলো পরিস্কার হয়ে যাবে। ঠিক তেমনই 'রেল চলে'-তেও। এই গান শুনলে 'জন হেনরি'র জঁরা মনে পড়তে বাধ্য। সুরের দিক থেকে 'রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে'তে নির্ভুল অহমিয়া ফোকের ফ্রেজ ফুটে ওঠে। নিয়ে এলেন গোয়ালপাড়িয়া 'তোমরা গেইলে কি আসবে আমার মাহুত বন্ধু রে'। আর সেই সঙ্গে বাংলা কমার্শিয়াল গানে প্রতিমা বড়ুয়ার পথ পরিস্কার করে দিলেন। সেই সঙ্গে ভুললে চলবে না ১৯৫৭ সালের জীবনতৃষ্ণা ছবিতে 'সাগরসঙ্গমে' নিয়ে এলেন উত্তমের লিপে। (
    )

    যাকে বলে 'ব্রেক' - বিশেষত: গায়ক হিসেবে পেলেন - শিবাংশুবাবু ঠিক যেমনটা বলেছেন - আটাত্তরের পুজো অ্যালবামে। যেখানে রিপ্যাকেজ করে এল সাগরসঙ্গমে, এলো 'আঁকাবাঁকা এ পথের' অন্য কথা নিয়ে - 'দোলা এ দোলা'। এল রোবসনের Ol' man river অনুপ্রাণিত (
    ) 'বিস্তীর্ণ দুপারের অসংখ্য মানুষ'।

    বাংলা বেসিক গানে ভূপেন হাজারিকা আমার কাছে সৃষ্টির পরাকাষ্ঠা হয়ে বেঁচে থাকবেন 'একখান মেঘ ভেসে এল আকাশে'র স্রষ্টা হয়ে। রুমার গলায়, অনুপের গলায় আর স্রষ্টার কন্ঠে - একই গান যেরকম বিভিন্ন ইমোশন তৈরি করতে পারে তা থেকেই সৃষ্টির গভীরতা টের পাওয়া যায়।
  • kallol | 119.226.79.139 | ০৭ নভেম্বর ২০১১ ০৮:২৪504387
  • MR আপনি কি রোবসনের গাওয়া ওল্ড ম্যান রিভারের কথা বলছেন? তাহলে ঐ গানটা বিস্তির্ণ দুপাড়ের সুরে নয় বরং উল্টোটা।
  • kallol | 119.226.79.139 | ০৭ নভেম্বর ২০১১ ০৯:০৪504388
  • ১৯৭৭-৭৮। আমরা তখন ফাটিয়ে রাজনীতি করছি কালিঘাট-রাসবিহারী অঞ্চলে। গোটা এলাকা জুড়ে মিটিং মিছিল পথসভা। কিন্তু গান কোই? সেই পুরোনো আইপিটিএ সম্বল। হালের, মানে ৭০এর নকসাল আমলের গান তখন প্রয় সবটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। এই সময় এলেন ভূপেন হজারিকা তাঁর মানুষ মানুষেরই জন্য - নিয়ে। যাঁরা একটু পুরোনো মানুষ তাঁরা মূল অহমিয়া গানগুলি খুঁজে বার করলেন। মানুহ মানুহর zন্য, হাগর হঙ্গমে, এবং আমাদের তখনকার রাজনীতির খাপে খাপে মিলে যাওয়া গান - ভারতর হীমারর / পাহাড়ার হিপাড়র / নিখর চিঁয়রটির প্রতিধ্বনি হুনু - এটা ছিলো চীন বিপ্লবের ঠিক পরেকার লেখা গান, যেটা শেষ হতো - নুতন সিনর ময় প্রতিধ্বনি সিনঅ - দিয়ে। খুব গাইতাম সেসব, নানান মিটিং-মিছিলে।
    ভুপেন হজারিকা প্রসঙ্গেই হেমাঙ্গদার কাছে শুনেছি ওঁদের নিরীক্ষামূলক গান মাউন্টব্যাটন মঙ্গলকাব্য - মাউন্টব্যাটন সাহেবঅ / তুমার সাধের ব্যাটন কাহার হাতে ছাইড়্যা গেলা গো - বিহু-ভাটিয়ালি ফিউশন।
    ওনার গানের সূত্রেই বিহু ও অন্যান্য অহমিয়া লোকসুরের সাথে পরিচয় আমাদের। প্রতিমা বরুয়াকে কলকাতায় গাওয়ানোর পিছনেও ওনার হাত ছিলো। ধীরেন মহন্তর মতো অসাধারণ বিহু গায়কের সাথে পরিচয় হতে জেনেছি - অহমের সাংষ্কৃতিক পরিমন্ডলে ওনার ঈশ্বরসম উপস্থিতি। পরে যখন গৌহাটিতে থেকেছি, উনি তখন বম্বেতে চলে গেছেন, মাঝে মাঝে আসতেন। আলাপ আর হয়ে ওঠা হয় নি কোনদিন।
    একবার,সম্ভবত: ২০০৩। তখন গৌহাটিতেই আছি। রঙ্গালী বিহুর সময়েই। টিভিতে কোন একটা অহমিয়া চ্যানেলে ওনার গান শোনাচ্ছিলো - একটা বিহু অনুষ্ঠানের সরাসরি টেলিকাস্ট। হাঠাৎ দেখি উনি মঞ্চের ওপরেই, কেমন ঢলে পড়ে গেলেন। অনুষ্ঠান বন্ধ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওনাকে। হাসপাতালে পৌঁছে দেখি, সে এক জনসমুদ্র। সমস্ত মানুষ সারা রাত দাঁড়িয়ে। উত্তর পূর্বের মানুষ আবেগের প্রকাশ ঘটান কম। আমি সেদিন একসমুদ্র কান্না দেখেছিলাম, নি:শব্দ কান্নার ঢেউ।

    ফিরে এসো
    ফিরে এসো আরও একবার
    শুধু তোমারই জন্য
    ঘাস পাতা মাটি ঘাম
    আর ভালোবাসা দিয়ে
    বানিয়েছি ঘর
    আমাদের বুকের ভিতর
    ফিরে এসো.............
  • PT | 203.110.246.22 | ০৭ নভেম্বর ২০১১ ১২:২৩504389
  • বিস্তির্ণ দুপাড়ের সুর-কথার সঙ্গে ol' man river-এর সুরের-কথার অনেক অনেকটাই সাদৃশ্য আছে। স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা না করলে মনে হচ্ছে যে হাজারিকা নিজের মুখেই জানিয়ে গিয়েছেন যে এই গানটিই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল বিস্তির্ণ দুপাড়ের সৃষ্টির কাজে। ol' man river-এর কয়েকটি ভার্সান।
    ১।

    ২।

    ৩।


  • shrabani | 124.124.244.107 | ০৭ নভেম্বর ২০১১ ১২:৫৯504390
  • "এক বুন্দ কভী পানী কি মোরী আঁখিয়ো সে বরসায়ে".............

    হয়ত অন্যরকম বলেই প্রিয়, ভীষণ প্রিয়, মনে পড়ে ভুলভাল লিরিকে গাওয়া, যাযাবর....কাটোয়া অস্ট্রিয়া, ...বন্ধুদের জোর করে শোনাতাম, ও "গঙ্গা বহতী হো কিঁউ", যাতে তাদেরও ভালো লাগে আমার মতই "গঙ্গা বইছ কেন"!
    তারপরে কতদিন, কত জল বয়ে গেছে গঙ্গায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কা: সে: আমি, তাঁকে নিয়ে এলাম আমরা, ফ্রেশারস না ফেস্ট মনে নেই....মাথায় সেই পরিচিত টুপি, জ্যাকেট, বেশীক্ষণ গাইলেন না (অথচ কত টাকা নিয়েছেন, সবার কমপ্লেন...তার আগেরবারে তো শেষ মুহূর্তে আসবেননা বলে হৈমন্তী শুক্লা কে পাঠালেন )..... তবে তারই মধ্যে মুখোমুখি যাযাবর শুনলাম, একী টাকা দিয়ে হিসেব করা যায়, সার্থক জনম.....
    মনে পড়ে রুরকী ক্যাম্পাসে আসামের বাঙালী ছাত্ররা খুব রাগ করত ওনাকে নিয়ে বাংলার বাঙালীদের মাতামাতিতে, ভালো মনে নেই, কিন্তু যেদিন ওকে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ডি লিট দিচ্ছিল সেদিনই নাকে আসামে কতজন বাঙালী মারার খবর এসেছিল....এইসব! কিন্তু উনি তো এইধরণের ইস্যুর উর্দ্ধে, ওনার তো গানে পরিচয়, তাই সেইসব পরিচিত আসামের বাঙালীদের সেইসময়ের ভয় আতঙ্ক, নানা কাহিনী শুনে দু:খ ভয় পেলেও, তার জন্য ওনাকে একটুও কম ভালো লাগাতে পারিনি....

  • Sushanta | 117.198.64.72 | ১৩ নভেম্বর ২০১১ ১৪:১২504391
  • শিবাংশুবাবুর লেখাটা দারুণ লাগল, সেই সঙ্গে কল্লোল সর্বাণির সংযোজন। আশা করছি আড়ো অনেকে যারা কলকাতার জীবনে কাছে থেকে দেখেছেন তাঁরা যোগ দিয়ে আরো সমৃদ্ধ করে তুলবেন।
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ১০:১১504393
  • গীতিকার শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বলুন।
  • pi | 72.83.76.29 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ১৯:৪৯504394
  • এই লেখাটা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো।

    http://kafila.org/2011/11/12/taking-the-jajabor%E2%80%99s-journey-forward-remembering-bhupen-hazarika-mayur-chetia-nayanjyoti/

    Bhupen Hazarika’s jajabor/nomadic inconsistency, and so perhaps the ups and downs of the journey of those whom he sang for and about, is historic.
    এই ইনকন্সিস্টেন্সির ক্রনিকল।

    এই অংশটা নিয়ে সুশান্তদা, যশোধরাদি বা আর কেউ কিছু বলবেন ?
    Contradictions and ambiguities also followed his engagement with the six year long anti-immigrant Assam movement which started in 1979. On the one hand Hazarika would, supporting the mass character of the movement, also attest to its principal aim of the expulsion of peasant migrants from Bangladesh led by the All Assam Students Union (AASU). And on the other, it was precisely during its heydays, when sentiments were sharpening against ‘migrants’ conflated with Muslims as a whole, that he composed and sang ‘Mohabahu Brahmaputra’ where he painted the long history of migration and assimilation of diverse people which built a composite culture in the region, singing ‘podda nodir dhumuhat pori, koto xotojon aahiley; luit’or duyu parote kotona atithik adoriley … kisu lobo lagey, kisu dibo lagey, jin jaboloi holey…Robindranatheo koley’ (‘caught on the storm of river Podda (Padma), hundreds came, and the banks of the Brahmaputra welcomed them as guests … take some, give some, to melt into each other…also said Rabindranath’). Though often interpreted as a liberal plea, this can be read as a warning of the danger of a sectarian politics of essentialising, of the aggressive upper-caste Assamese Hindu colour of the movement, which sought to violently erase this myriad history into extinction. His assertion that ‘we all have a history of migration and thus we (including the migrants from the erstwhile East-Bengal, now Bangladesh) must strive to live together’, baffled both the supporters as well as the opponents of the movement. Many within AASU began to suspect his support for the movement, as despite his apparent avowal that the Assamese people are in the danger of becoming homeless in their own land (the official AASU line), all he had to offer as a solution was a narrative of migration- hardly a satisfactory answer to the requirements of a sharp anti-immigrant tenor.

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন