এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভেজাল ভাটের ধারাপাত: প্রথম নিখিল বিশ্ব বঙ্গ-ভাট সন্মেলন

    Samran
    অন্যান্য | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ | ১৪১৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Saamran | 61.2.3.77 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০১:৪৭499743
  • নিখিল/ বঙ্গ/ ভাট/ সম্মেলন/ কলিকাতা
    -----------------------------------

    হাতে গরম। বাড়া ভাট। যদিও এখন আর অতটা গলম নেই। সম্মেলন শেষে লবন হ্রদ হইতে হাওড়ায় ফিরিয়া আসিয়া আর তার পরবর্তী ক্রিয়ায় এই হাতে গরম ভাট নিউজ পরিবেশনে বেশ বিলম্বই হইয়া গেল। সংভাট পরিবেশনের জন্যে যাহারা অনুরোধ জানাইতে পারেন নাই তাহাদিগের কাছে এই ইচ্ছাকৃত বিলম্বের জব্যে যশোপ্রার্থী আমি।

    ঢপ পর্ব
    ---------
    আগের দিন থেকেই বেশ তাড়া খেয়ে আসছিলাম, সকাল সকাল আমাদেরকে পৌছুতে হবে কুন্তলের বড়িতে,কারণ ভাট বসছে শনি বারে, বক্সিগঞ্জের অন্যপারে, কোন হ্যানা-ত্যানা ব্যপার নয়। কুন্তলের ( পড়ুন কুন্তি, খুন্তিও হতে পারে) বাড়িতে গিয়া রন্ধন-শিল্প করিতে হইবেক। কাজেই আমাদিগকে সকাল আট ঘটিকার মধ্যে অতি অবশ্যই রওয়ানা হইতে হইবে। তো আমি মনে মনে আমার সময় ঠিক করে সেই মত ঘড়িকে আগে বাড়তে দিয়েছি। ( যদিও আমার ফন্দি খাটাইতে গিয়া যথেষ্ট চেল্লা-মেল্লি হজম করতে হয়েছে আমাকেই!) বেরুনোর সময়ে বিপত্তি। জলের ট্যাঙ্ক উইদাউট নোটিস সাফ করা হচ্ছে তাই জল বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে! আমি তখন অলরেডি এক গামলা কাপড় ভিজিয়ে দিয়েছি। এদিকে 'ভাটে' যাওয়ার জন্যে তাড়ার পরে তাড়া খেয়ে যাচ্ছি। কোন রকমে কাপড়ের ব্যবস্থা করিয়া বাড়ি হইতে বাহির হইতে সাড়ে দশটা। সঙ্গী ভাটুরের গজগজানি তখন থেমেছে কিন্তু মুখের অবস্থা ভয়াবহ! রিতিমত থমথমে। এদিকে দময়ন্তী আর কুন্তল ও ফোনের পর ফোন পেয়ে যাচ্ছে সেই রন্ধন শিল্পীর, মোচা যোগাড় হল কি? নেই? তাহলে কচু শাক। তাও যদি না হয় তো এঁচোড় তো চাই ই চাই। কুন্তলের জন্যে আমার যথার্থই চিন্তা হচ্ছিল, কি হ্যাপায় যে পড়তে যাচ্ছে সে কি তা জানে এই ভেবে। পৌছুনো হল ৮ নম্বর ট্যাঙ্কের পাশে, ফোন গেল কুন্তলের কাছে। কুন্তলকে চিনব কি করে তা জানতে চেয়ে আবর বকুনি খেলাম। দেখলেই নাকি চেনা যাবে! এবং গেল !! কুন্তল এবং রন্ধনশিল্পী আগে আগে আর আমি বেচারি পেছনে।

    বাড়ি পৌছেই সোজা রান্নাঘরে। কুন্তল একলা মানুষ । অবধারিতভাবে তার মিক্সিটি খারাপ। যেহেতু শিল্পী রান্না থুক্কুরি শিল্প করিবেন তাই সেও হাত দেয় নাই ইলিশ কিংবা চিতলের পেটিতে। মোচার জন্যে আনা চিংড়িও পোটলাবন্দী। হিল্পী লান্নাঘর ও তার জিনিসপত্র পর্যবেক্ষণ করিলেন গভীর মনযোগের সাথে এবং ছুরি হাতে নিয়া পেঁয়াজের খোসা ছাঁটাইতে ছাঁটাইতে স্মার্টলি এবং কনফিডেন্টলি আমাকে বলিলেন , ঐ দেখ নারকোল কুরুনী, নারকোলটা কুরিয়ে নাও ততক্ষণে আমার পেঁয়াজ খোসা ছাড়ানো হয়ে যাবে। আর তারপর তুমি নারকোল, পোস্ত আর পেঁয়াজটা শীলে বেটে দাও! কুন্তল দৌড়ালো তখন পোস্ত আনতে দোকানে।
    আধখানা নারকোল কুরে নিয়ে আমি তখন পেঁয়াজ বাটা শুরু করেছি, কুন্তল পোস্ত নিয়ে এসেছে তখন ফোন এলো অরিজিতের। কুন্তল দৌড়ালো আরিজিতকে আনতে। ওঘরে তখন জগজিৎ সিং বাজছে মিউজিক সিস্টেমে। কেদে কেঁটে একসা হয়ে আমার ততক্ষণে পেঁয়াজ বাটা সুসম্পুর্ণ। নারকোল বাটছি তখন পৌছুলো অরিজিত। হাই হ্যালো সম্পূর্ণ হতেই কুক তার হাতে একখানা নারকোল ধরিয়ে দিলেন কুরে দেওয়ার জন্যে। আগের আধখানাতে হবেনা। অরিজিত বেশ গুছিয়ে রান্নাঘরের মেঝেতে বসে নারকোল কুরে দিল।
    আমি দেওয়ালকে জিজ্ঞেস করলাম বাকি গেষ্টরা কখন আসবেন? অমনি দাবড়ানি। গেষ্ট কেন বলছ? এখানে কেউ গেষ্ট নয়। কিছু বন্ধু-বান্ধব একজায়গায় জড় হচ্ছেন তাই রান্না বান্না। খাওয়া দাওয়া হবে আর আড্ডা হবে। কাওকে তো আগে থেকে এসে যোগাড়ে হাত লাগাতে হবে! তাই তিনি নিজের থেকে বেটার কাওকে না পেয়ে নিজেকেই ঐ ঝোল সমূহে নিয়োজিত করিয়াছেন।
    আমি তাকে নারকোল,পোস্ত আর পেন্যাজ বেটে দিয়ে সোজা আড্ডা ঘরে। কুন্তলকে বললাম, ভাই কুন্তল, এবার তুমি গিয়ে সঙ্গ দাও। এই আমি বসলাম।

    ও। বলতে ভুলে গেছি এর মাঝে ফোন এলো শমিকের। শমিকের সাথে একপ্রস্ত ফোন-ভাট(শ্রুভাট) সারা হয়ে গেসল অরিজিত এসে পৌছুনোর আগেই। এঘরে আমি অরিজিত অর কুন্তল। টুকটাক গল্প চলছে। ওদিকে রন্ধনশিল্প। কুন্তল কফি খাওয়াল। শিল্পী নিতান্তই দয়া পরবশ হয়ে একদিকের উনুন ছাড়লেন কফির জন্যে।
    রান্না মোটামোটি সারা হয়ে যেতে তিনি ও এসে যোগ দিলেন আড্ডায়। অন্য যাদের আসার কথা বারবার ফোন করে তাদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছিল।
    বাজল আমার ফোন। তারেক। জিগাইলাম, তারেক, তুই? কিন্তু লোকাল নম্বর দেখায় ক্যানরে? তো তারেক কয়, আরে আমি তোমার পাশের বাড়িতে আসি, তাই লোকাল নম্বর।
    বাকি সব কে কখন আসবে জেনে নিয়ে তারেক ফোন ছাড়ল আবার ফোন করবে বলে।
    তো রান্নাঘরে ততক্ষণে তৈরী নারকোল দিয়ে আধহাত সাইজের চিতলের পেটি, ইলিশ সর্ষে-পোস্ত দিয়ে আর আলাদা করে ভাজা ইলিশ। ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি, ইলিশ ধুতে গিয়ে আমি আরেকখানা কুকর্ম করেছি। ইলিশের পেটের ময়লা সাফ করে দিয়েছি ধুতে গিয়ে। ডাগর সাইজের ইলিশ, ডিম নেই। তো শিল্পী ( পড়ুন হেড বাবুর্চী ) ইলিশে হলুদ মাখাতে গিয়ে দ্যাখেন যে ওর পেট সাফ তখন তিনি মহা চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন আমি ইলিশের সব তেল ফেলে দিয়েছি এই বলে। ইলিশ এখানে বাজারে কম পাওয়া যায় বলে যে ওর পেটের নাড়ি-ভুড়ি সব তেল হয়ে যায় আর সেই ময়লা পরিষ্কার করলে নাকি ইলিশের তেল চলে যায় এ আমার কস্মিনকালেও জানা ছিলনা! সত্যি বলছি।

    আমি আর কোন রকম বকুনি হজম করতে রাজী নই বলে গ্যাট হয়ে গিয়ে বসলাম ভাটে(খাটে)। যাকগে। যা খুশি করুকগে। ভালমানুষীর জমানা ই নেই।

    রন্ধনশিল্পী ( হেড-বাবুর্চী ) তার শিল্পকর্ম শেষ করে ততক্ষণে আড্ডায়। কুন্তল তখন থালায় করে হাজির করেছে আগের দিন রাতে রান্না করে রাখা খাসির মাংস। কে কে আসছে, কেন এত দেরী হচ্ছে এই সব জল্পনা কল্পনায় ব্যস্ত আমরা মন দিলাম খাঁসির মাংসে। ফোন এলো ইন্দ্রভাইয়ের। সঙ্গীতাকে নিয়ে সে পৌছেছে।

    সঙ্গীতা কে ?, সেই যে আমাদের রাত্রি। সেই তো ইন্দ্রভাইয়ের অর্ধাঙ্গিনী। তখন অব্দি আমি একমাত্র মহিলা তাই আমি কে তা আন্দাজ করতে সঙ্গীতার কোন অসুবিধাই হয়নি।
    এই মেয়েটির কথা আমি যতই ভাটাই এক বছরের ভাট হয়ে যাবে আমার। আমার উল্টো, অসম্ভব মিষ্টি এক মেয়ে। নিমেষে সবাইকে নিয়ে নেয় যেন কতকালের চেনা। গল্প জমে গেল দেখা হওয়া মাত্রই। ইন্দো অনুযোগ করল, কি সামরানদি, ভাটাইছনা যে আমার সাথে।

    সঙ্গীতার সাথে এমন ভাট-ভট কচ্ছি যে কে কি বলছে সেদিকে আর কানও যাচ্ছেনা। ইন্দো সুমেরু অরিজিত কুন্তল। কে যে কি ছাড়ছে সে আমি আর শুনতেই পাই নি। বারবার ফোন করা হচ্ছে দমু কে। সে মাসিমার নাম করে ডাক্তার দেখে ও আরও কাজ নামিয়ে রওয়ানা হয়েছে বেলা দেড়টায়। এই আড্ডার ফাঁকে হাওয়া হয়ে গেল তিন থালা মাংস।
    টেলিফোনের বিল দেখিনি তাই জানতাম না, কুন্তল খুব কম কথা বলে। আর সে খুব ভাল হোষ্ট হয়ে রোষ্ট হতে পারে।

    ও। কুন্তল তো এক পোটলা কুমড়ো ফুল ও এনেছিল বাজার থেকে। মোচা কিংবা কচুশাক না পেয়ে। তো অরিজিত গেল সেই কুমড়ো ফুল বড়াতে।
    মাংসর পরে এবার কুমড়ো ফুলের বড়া। পেট তো ফুল বলেই মনে হচ্ছে। হেড বাবুর্চী কে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিন্ত হলাম যে ভাটে-ভাত ও হবে। কারণ বেলা তখন প্রায় তিনটা।
    সকালে অবশ্য ইলিশ বিরিয়ানীর চিন্তা ভাবনাও হয়েছিল কিন্তু কুন্তলের বাড়িতে বিরিয়ানী রান্নার সাইজের বাসন নেই বলে সেই চিন্তাকে কার্যে সাইজ (পরিণত) করা গেলনা। আমার উপর দায়িত্ব ছিল মটর পোলাওয়ের কিন্তু অত মাছ আর মাটন দেখে আমি সেটা ক্যান্সেল করলাম। ভাটে- ভাত হবে ছক হল।

    ( এইমাত্র কুন্তল ফোন করে সরি বলল কাল তার বাড়িতে মিক্সি না থাকার জন্যে। ওর নাকি খুব খারাপ লাগছে আমাকে বাটনা বাটতে হয়েছে বলে। আরও বলল ভাটের পাতায় আমি কিছু লিখলে যেন ওকে এক্টু বকে দি। )

    কুন্তল ভাত করল বাসমতি চালের।

    পৌণে চারটের সময় দময়ন্তী এসে পৌছুলো। অরিজিত তাকে কুমড়ো ফুল দিয়ে বরণ করে আনলো গিয়ে। দময়ন্তীর নামে আমি আর নতুন করে কি ভাটাব, সবাই তাকে হাড়ে হাড়ে চেনেন। আড্ডা ততক্ষণে ফুলফর্মে। কে যে কি বলছে আল্লাহ ই জানেন। সবাই কথা বলছে। কে শুনছে তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছেনা। সবাই কথা বলছে। ফোন এলো। শমিক। সবার সাথে হ্যাজাবে বলে আবার ফোন করেছে। ফোন ঘুরতে লাগল সবার হাতে হাতে, বন বন করে।

    সঙ্গীতা ভ্যেনালো ভালমানুষ ইন্দ্রনীল ভোলা-ভালা মুখে কি করে তাকে ভোকা বানাত। এখন এমন খাঁড়িয়েছে যে মালই বুনুক সঙ্গীতা আর খসবে না (বিশ্বাস করবেনা) বলে ছকে রেখেছে।

    সঙ্গীতার ফোনে মিতা। সে ভোর সাড়ে পাঁচটায় উঠে যোগ দিয়েছে ভাটে। ফোনে। ফোন ঘুরল । প্রায় একঘন্টা ।
    আমরা এবার খেতে বসার সিদ্ধান্ত নিলাম।বেলা তখন চারটে। এই বেলা ভাত না খেলে রাতে লুচি কি করে খাওয়া হবে? অরিজিত রাতে লুচি করবে। আর মোচা কিংবা এঁচোড়ও রাতে হবে। খাওয়া।
    আমরা কি কি খেলাম আর কেমন খেলাম সেকথা বলে আপনাদের আর নিতে ( কষ্ট দিতে ) চাইনা। খাওয়া শেষ না হতেই আবার ফোন। এবার ইন্দ্রাণী। সিডনি থেকে। অ্যাজ ইউজুয়াল ফোন আবার কান চুলকাচ্ছে।

    ISI পর্ব
    --------

    আমাদের খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। 'দময়ন্তীর ফোন'এ ঘন্টা বাজল। কোন এক চিরঞ্জীব বাবু। যিনি CAD নামে লেখেন। দরজা দিয়ে ঢুকলেন সিল্কের ধুতি পাঞ্জাবী মেরে বছর পয়তাল্লিশের এক মানুষ যার একহাতে ব্যাগভর্তি ,একহাতে ফুল,অন্যহাতে মিষ্টি অন্যহাতে ঝোলা। ঐ সব লটবহর সমেত তিনি হাত জোড় করে নমস্কার জানালেন সবাইকে। নিজের পরিচয় দিলেন। তারপর এক এক করে সবার হাতে দিলেন একটা করে ভাট-গোলাপের স্টিক। প্রথমটা পেল সঙ্গীতা। সে ফুল হাতে নিয়ে প্রতি নমস্কার জানিয়ে নিজেকে নামাল রাত্রি বলে। সবাই ফুল নিয়ে নিজের নিজের ভাটের নাম জানিয়ে দিল। সবাই প্রায় উঠে গেছিলেন আমি তখনও পিটছিলাম চিতলের পেটি। ইন্দো চিরঞ্জীববাবুকে বলল আপনি খেতে বসুন। লাভ অল। দময়ন্তী সার্ভ করল। তিনি খেতে বসলে একে একে সবাই পাশের ঘরে ঘষে পড়লেন। আমি বসে একটু গল্প করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ওদিকে ফোনে তখন আমার ভাটানোর পালা ইন্দ্রাণীর সাথে তাই সঙ্গীতাকে রেখে আমি চলে এলাম পাশের ঘরে।

    দীপ্তায়নের আসার কথা কিন্তু সে ফেঁসে আছে কাজে। জানিয়েছে যত দেরী ই হোক, সে আসবে ঠিক। অয়নের ফোন সুইচড অফ। তাকে ধরা যাচ্ছেনা ফোনে। তারও আসার কথা।

    আমি আর দময়ন্তী বেরোলাম 'অলিন্দ' আনতে শ্রেয়ার বাড়ি থেকে। অরিজিত, ইন্দোরা 'অলিন্দ' নেবে। রিকশায় চেপে আমরা যখন ঘুরপাক খেতে খেতে 'অলিন্দ' নিয়ে ফিরলাম তখন ফোনভাট শেষ হয়েছে ওমনাথের সাথে। আমরা সেটা মিস করি। 'অলিন্দ নিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্যে উঠে দাঁড়ায় ইন্দ্রনীল ও সঙ্গীতা। টুংকাই বাড়িতে রয়েছে আর সে অসুস্থ। ফেরার তাড়া ওদের। সম্মেলন শেষের প্রথম ঘন্টা পড়ল। আহার শেষে যখন পান শুরু হল তখন এল বার্লিন থেকে সর্বাণীর ফোন। আমার হাতে এল সবার শেষে। সর্বাণীর গলা শুনে মনে হয় যেন বছর দশেকের কোন বাচ্চা মেয়ে ফোনাচ্ছে। আমার সাথে এই প্রথমবার ওর কথা বলা।

    (ক্রমশ)
  • indo | 59.93.247.146 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০৭:৫৭499747
  • জমজমাট ! ভাটের ভাঁটিখানা। মাল বেশ গেঁজে উঠেছে।
  • i | 202.128.112.254 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০৮:১৫499748
  • সঙ্গীতা এসেছিল বুঝি নি তো! কথা হোলো না...
    যা:-
  • samran | 61.2.3.40 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ১২:৫১499749
  • হ্যেজা পর্ব
    ---------

    বিনা ধকলেই আমি বেশ ক্লান্ত। মাথা ধরেছে বেশ ভালমতন। ভাটের অনুমতি নিয়ে পাশের গেছি একটু রেষ্ট নিতে। ডাক পড়ল। শান্তনু কথা বলতে চায়। চীন থেকে।

    শান্তনুর কথা আমার আগে ও শোনা ছিল। খুব মজার মানুষ। কথা বলে বুঝলাম, যা শুনেছিলাম একদম ঠিক। সে প্রথমেই আমরে জিগায়। তুমি কত বড় আগে কও তারপরে ঠিক করব তোমাকে দিদি ডাকব না নাম ধরে ডাকব। অত:পর সে নিশ্চিন্ত হয়ে নিয়ে ডিসাইড করে যে আমাকে নাম ধরেই ডাকা যায়। জমাটি গল্প হল সাইকলজিষ্ট আর সাইকিয়াট্রিষ্ট নিয়ে। ( শান্তনুর বউ জিষ্ট কিনা )।

    গান। অরিজিত প্রথমে শোনাল প্রতুলের 'আমি বাংলায় গান গাই'।

    কুন্তল চ্যালেঞ্জ করল অরিজিতকে ,সে কি প্রতুলবাবুর গলায় একলাইন গেয়ে শোনাতে পারবে? কি? গান-হাজির অরিজিত। আমি স্লোগান দিতে গিয়ে ...
    এক লাইন গেয়ে দিল নিখিল বিশ্ব বঙ্গ ভাট সম্মেলনের একমাত্র গায়ক রাপচিক অরিজিত :) ... এবং দিব্য গাইlow

    ভাটে যোগ দিল কুন্তলের এক শিষ্য কাম বন্ধু। বেশ বাচ্চা মতন একটি ছেলে। রোষ্ট হতে হতে প্রায় ঝলসে যাওয়া কুন্তল বোতলের যোগানে যেন কমতি না পড়ে সেই চিন্তায় বাজারের থলে হাতে নব্য ভাটুরে অরিন্দমকে পাঠাল থলে হাতে। সে বেশ চটপটে ছেলে। ভাটের রঙ গায়ে মেখে সে দস্তুরমতন ভাটাচ্ছে।

    অ। সে পড়ে হচ্ছে গিয়ে আমাদের অরিজিত, ইশানমামু, কুন্তল অয়নরা যেখান হইতে প্রাক্তন হইয়াচ্ছেন সেই B E কলেজে। তো অরিজিতদাদা আর অরিন্দমের ভাট ভাপছে। এক প্রাক্তন আর এক বর্তমান। প্রাক্তন খোঁজ নিতে লাগলেন বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষত জাষ্ট কিছুদিন আগেই হয়ে যাওয়া ক্যাল নিয়ে।

    সুমেরু পড়ে শোনালো তার একখানা লেখা। গ-ল-প। ঐশ্বর্যকে নিয়ে তার স্বপ্ন দেখার গল্প। প্রাণে ধরে নিজের হাত কেটে রক্ত বার করতে না পেরে মুর্গীর রক্ত দিয়ে ঐশ্বর্যকে চিঠি লেখার গল্প। ভাটে পড়ার জন্যে পারফেক্ট গ-ল-প।

    এই গ-ল-প শুনে অরিন্দম জানাল সে এই সাইটের গল্প অনেক শুনেছে কুন্তলের কাছে, ওয়েব-ভাটে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ ও পেয়েছে কিন্তু যেহেতু সে বাংলা জানেনা তাই ভাটাতে ভাটপাড়ায় এসে উঠতে পারেনি।

    চিরঞ্জীববাবু তখন ভাটে জমে দই। দমুর আনা লাল মিষ্টি দইয়ের থেকেও বেশি লালিয়েছেন। গেলাস হাতে গেলাস নিয়ে তুমুল ( গোগ্রাসে ) ভাটাচ্ছেন সকল ভাটুরের সাথে। ফোন-ভাটও কচ্ছেন। হাতের ঐ ঝোলায় ফুল-মিষ্টান্ন ছাড়াও ছিল তার একখানা পাজামা। তো তিনি ফুলবাবু-ধুতি ছেড়ে ততক্ষণে পাজমায় ঢুকেছেন। খাটে ( ভাটে) জমিয়ে বসে ভাটের মধ্যমণি হয়েছেন। ইনি নাকি গোঁফের আমি গোঁফের তুমি ছিলেন। সদ্য সদ্য গোঁফহারা হয়েছেন। সেই গোঁফ নিয়ে আর পিত্থিবীর সমস্ত বিষয়ে ভাটাচ্ছেন। তুমি ক্যামন করে ভাটাও হে গুণী? আমার তখন সেই হাঁ।

    সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘরে বেশ ধোঁয়াটে পরিবেশ। বিশালাকার সব মশারা যখন তখন যাকে খুশি তাকে ব্যাতিব্যস্ত করে রেখেছে তাই জানালা দরজা সব বন্ধ। হাতে প্রাণপাত্র। ভাট এক্কেরে কাটকাট। গেলাস খালি হয়। গেলাস ভরে। আদর্শ হোষ্ট কুন্তল। আমার কর্তা গেলাসপানের পরবর্তী ক্রিয়ার কল্পনায় আর আমার গিন্নিমোয় অতিষ্ট হয়ে এক গেলাসি /দু গেলাসি না করে এক গেলাসে ক্ষ্যান্ত হয়ে হয়েছেন।

    আলহামদুলিল্লাহ। ভালো ছেলে অরিজিত। সে ধোঁয়া গিলেই সন্তুষ্ট থাকলো। গেলাসের ধারে সে শত প্রলোভন সত্বেও কাটলোনা। ধোঁয়ায়, সুরায় ব্যোমভোলা বাবারা মশাকে চরম ভয় পান। দরজা জানালা কিছুতেই খুলতে রাজী নয় কেউ। আমার মাথা ধরে/ঘুরে আমি পেরায় কাত। সহমর্মী কুন্তল। ধোঁয়া কাটাতে কখনো সুগন্ধে স্প্রে তো কখনো মশা তাড়াতে কটুগন্ধী স্প্রে ছড়াচ্ছে।

    আমার ফোনে ঘন্টা। ওপাশ থেকে শোনা গেল, আমি মিঠু, ক্যানসাস থেকে। আমি আঁধশোয়া থেকে উঠে বসে খাড়ালাম। ফোন এলে আমার মাথা ঘোরা/ধরা থাকেনা সে কাছের লোকজন জানেন। আবার ফোন ভাট। ওপাশ থেকে মাঝে মাঝেই মামুর গলাও শুনতে পাচ্ছিলাম। আর ঘেঞ্চুর গ্লেঞ্চুও। সে ফোন হাতে পাওয়ার জন্যে বেশ চেঁচামেচি ই করছিল। মিঠু একঘন্টা ধরে জনে জনে ভাটাল। মামুর সাথে তার ডরাই-মা অনেকেই ফোনের এপাশ থেকেই শুনতে পেয়েছেন। সে বেশ শ্রুতিমধুর লাগছিল। অবশেষে ফোন আবার আমার হাতে। শিবপুরে থাকি শুনেই সে বলল আরে, ওখানে তো আমি প্রেম কত্তে যেতাম! তো সে কিছু নিজের ছাড়ল, কিছু আমার নিল। ( মিঠুর সাথেও এই আমার প্রথম আলাপ)। পোচ্চুর ফোন বিলিয়ে অবশেষে সে ফোন ছাড়ল।

    গন পর্ব
    -------

    অরিজিত আরও গান করবে কিন্তু সে মগ্ন অরিন্দমের সাথে কলেজ নিয়ে ভাটে। তাদের দুজনকে ভাটাতে দিয়ে আমরা একে একে সবাই পাশের ঘরে। সেঘর তখনো ধোঁয়ায় ধোঁয়াময় হয়নি। কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেল। দমুর বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গেসল। সে ট্রেন ধরবে বলে ঘড়ি ধরে কেটে পড়ল। ভাটের মূল্যবান আরেকটি উইকেট পড়ল। এবারের ঘন্টাধ্বনিতে যেন করুন সুর।

    অরিজিতকে পটানো হচ্ছিল সে যেন রাতে ওখানেই থেকে যায়, তাহলে সারারাত ভাটানো হবে। কিন্তু পরদিন সকালবেলায় ওকে যেতে হবে স্কুলে। সেখানকার প্রক্তনীদের খাতায় নাম লেখাতে হবে তাকে। ঋক ও যেন ঐ স্কুলেই পড়তে পারে সেজন্যেই নাম লেখানো। সে কিছুতেই রাতভর ভাটানোয় রাজী নয়।

    অরিন্দম একবার বাইরে গেল কোন ব্যাক্তিগত কাজে। অরিজিত তখন ঘরবদল করল। এ ঘরে আসামাত্রই তাকে ধরা হইল গানের জন্য। সে খুব ভাল ইস্টুডেন্ট। দিদিমণি যা বলেন সে তাই করে। আর গান গাইতে একদম নঙ্কÄ¡য়না। যদিও নিজেকে বাথরুম সিঙ্গার বলে দাবী জানিয়েছিল আগেই। কিন্তু বাথরুম ছাড়াও দিব্য গান গাইতে পারে। এবং গাইলো। একে একে বেশ কখানা শ্যামা সঙ্গীত। গন সঙ্গীত। জমিয়ে গান গায় অরিজিত।

    লুচি। অত্তো গান শুনেও কেহ লুচির কথা ভোলে নাই। এবং কুন্তল তখন আবার বাজারে যেতে চায় মোচা নিদেনপক্ষে এঁচোড় আনতে। আদর্শ দিদির মত তাকে ক্ষ্যান্ত করি। বৈকাল পাঁচ ঘটিকায় যে আহার সম্পূর্ণ হয়েছে তাই তখনো প্রায় দমবন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু ভাটুরেগণ মোটেও ভীত নন ঐ দমচাপা অবস্থাতেও। তাই অরিজিত গেল লুচি বেলতে। কুন্তল ভাঁজলো সেই লুচি। চিরঞ্জীববাবু তখন সাহিত্য নিয়ে সুমেরুর সাথে ভাটাচ্ছেন চরম উৎসাহে। দীপ্তায়নের মিটিন কিছুতেই শেষ হলনা রাত সাড়ে নটার আগে। অবশেষে সে নিতান্ত বাধ্য ভাটুরের মত এসে পৌছুলো প্রায় হাঁফাতে হাঁফাতে ( খুব জোর গাড়ি ছুটিয়েছে তো, তাই )। সর্বশেষ ভাটুরের তখনো আসা বাকি। অয়ন। অরিন্দম নাকি তার আবার মহা ফ্যান। অয়ন কলেজ ছাড়ার আগে পরবর্তী ছানাগিরির ভার অরিন্দমের কাঁধে ন্যস্ত করে গ্যাছে। অরিন্দম সে দায়িত্ব মহানন্দে পালন করছে আর গুরুর গুণগান করছে। তো সে ভাট ছেড়ে দৌড়ুলো ( বাইক ছোটালো) অয়নকে আনতে। অয়ন তখন সদ্য এক বিয়েবাড়ি থেকে গলা অব্দি পেটপূজিয়ে উল্টোডাঙায় দাঁড়িয়ে আছে তার শিষ্যের জন্য।
    আরে দিল্লি তো বেশ স্বাস্থ্যকর জায়গা! গোলগাল নধরকান্তি অয়ন রিতিমত রোগা হয়ে বেশ হিরো হন্ডা ( অয়ন অবশ্য এমনিতেও হিরো হিরো ভাব পরিচালকের অভাব ) চেহারা বানিয়েছে । দিল্লি কা লাড্ডুর গুণ অয়নকে দেখেই বেশ টেরপাইল্যা।

    অয়ন রিতিমত অভিযোগ করল আমাকে। আমি ভাটাচ্ছি অথচ ওকে একটা ফোন করেও খপর নিলুমনা। কিন্তু ফোন যে বন্ধ করে রাখে তর খপর কি করে নেওয়া যায়? আর বিয়েবাড়িতে সব ফুলেল গন্ধ... লেহাঙ্গা... ডানাকাটা পরী এবং পর। তো। অবশেষে অয়ন আসিল।

    বৈকালে কুন্তলের রান্নার মাসি এসে পড়ে থাকা মাছ-মাংস গরম করে, মোচার জন্যে আনা চিংড়ি লাউ দিয়ে রেঁধে চিংড়ির সদগতি করে যায় ।

    রাত্রি দ্রুতবেগে অগ্রসর হইতেছে মধ্যরাত্রির দিকে। ভাট এবার সমাপ্ত করিতেই হইবেক। দীপ্তায়ন চিতলের পেটির সাইজ দেখে বেশ আহ্লাদিত। অন্য কোনকিছুর দিকে না তাকিয়ে সে লুচি আর চিতলমাছ নিয়ে মন দিল খাওয়ায়। আরিজিত রাতে আর খাওয়ার রিস্ক নেবেনা সে শুধু মিষ্টান্ন দিয়া রাত্রিকালীন আহার সারল।

    এবং একখানা অলিন্দিয়ে বিদায়ের জন্য প্রস্তুত হল দীপ্তায়ন।। অয়ন তো ঢেকুর তুলছিল বিয়েবাড়ির তাই সে আর খাওয়ার দিকে এগুলোনা। অরিন্দম তৃপ্ত ছিল পান করিয়া। কাজেই নো খানা। আমি লুচির লোভ সম্বরণ করিতে না পারিয়া মাংসের সহিত লুচি নিলাম। ও। রসমালাইয়ের কথা বলিনি বুঝি? চিরঞ্জীববাবু মাথা গুণিয়া রসমালাই আনিয়াছিলেন। তিনি প্রথম সেট নুচি মাংসের ও চিংড়ি সহিত , পরবর্তী সেটে তো তিনিও মিষ্টি সহিত লুচি খাইলেন। প্রথম সেটের নুচি ফুরাইলে আমার রান্না ঘরে প্রবেশ, বেলিতে লাগিলাম, নব্য গদাধর ( ফুলের ষ্টিক দেখিয়া সুমেরু প্রদত্ত নাম) ঝাঁঝরি লইয়া একপ্রস্থ জ্ঞান দিয়া ঝাঝরা করিয়া কুন্তির খুন্তি দিয়া স্ট্রেট সেটে খেলিলেন।

    বাজিল শেষের ঘন্টা। বিদায় নিল অরিজিত, দীপ্তায়ন, অয়ন। সবশেষে চিরঞ্জীববাবু ও অমরা।

    সমাপ্ত হইল প্রথম নিখিল বিশ্ব বঙ্গ ভাট সম্মেলন।

    সামরান
  • Samik | 221.134.238.195 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ২০:৪৫499750
  • জিও সামরান,

    যা-তা।

    আমি শমিক নই, শমীক । :-(
  • trq | 211.28.40.185 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ২১:৫১499751
  • অরিদার লেখাখান যেন যে কেউ চট করে খুঁজে পায়, সে জন্যে এখানে তুলে দিলাম।

    ******************************************************

    কলকাতা বিশ্ব-ভাটুরে-সম্মেলনের আঁখো-দেখা হাল
    -----------------------------------------------

    বাড়ি গেসলুম মোট্টে দু হপ্তার জন্যে, আগে হলে বাড়িতেই মায়ের রান্না খেয়ে খেয়ে কাটিয়ে দিতুম - কিন্তু ভাটের নেশা সর্বনাশা, কলেজের টোয়েন্টিনাইনেরও বাড়া, আর বহুৎ দিন বাদে এত বন্ধু।।।অতএব, চালাও পানসী বেলঘরিয়া, থুড়ি, আট নম্বর ট্যাঙ্ক।

    ভোর দশটায় (ভোর, কারণ তখন আসলে বাজে সাড়ে চারটে, কলকাতার ঘড়িগুলো বেখাপ্পারকম দৌড়য়) দময়ন্তীর ফোন - "কচুর শাক আনবে? বা মোচা?" কুঁদঘাট বাজার তো আর আমার ঘড়িতে চলে না, সে নিজের সকালে বসে, বেলা দশটায় গেলে গরুতে খাওয়া কচু ছাড়া আর কিসুই মিলবে না। ঠেলাগাড়িগুলূ ঘন্টাখানেক আগে চক্কর লাগিয়ে চলে গেছে। তাও কুঁদঘাট হয়েই গেলুম - কপালে মোচা নাস্তি - বাজার উঠে গেছে।

    টালিগঞ্জ ট্রামডিপো থেকে একটা মুড়ির টিন সি-এইট-এ উঠলুম। সল্ট লেক সম্পর্কে আমি মা-গঙ্গা, তাই কণ্ডাক্টর ভরসা - আট নম্বর ট্যাঙ্কের আগে নামিয়ে দিলো, বল্লে "হুই দেখা যাচ্ছে" - হাঁটা দিলুম। কুন্তীর ফোন বেজেই গেলো, বেজেই গেলো - নো অয়ানসার। তাতে কি? বি ই কলেজের ছেলে অত সহজে দমে না - শিবপুরের গলিঘুঁজিতে ঘুরে অভ্যস্ত, আর এ তো সল্ট লেকের বড় রাস্তা - নম্বর-টম্বরগুলূ বেশ নিয়মমাফিক। নিজেই খুঁজে পেতে কুন্তীর বাড়ি পৌঁছে গেলুম (সামরান - "দি" বলবো না বলবো না এখনো ঠিক করতে পারিনি - পেঁয়াজ বাটতে এতই মগ্ন ছিলো যে আমি নিজে গেছি না কুন্তী নিয়ে গেছে খেয়াল করেনি) - এবং আমাকে আশ্চর্য করে কুন্তী শুধোলে "তুমি কে বলোতো"? ইয়া আল্লা, নিজের পরিচয় দেওয়া বড়ই কঠিন।।।তাও দিলুমক্ষ-))

    ঘরে তুমুল জোরে গান চলছে, উস্তাদ আমির খানের বাগেশ্রী - ভর দুপুরে, আর রান্নাঘরে ততোধিক জোরে চলছে শিলনোড়া এবং খুন্তিনাড়া। শিল্পী মোহিত শিল্পকর্মে - এক বিঘ্‌ৎ সাইজের চিতলের পেটি, এবং ইলিশের টুকরোগুলোকে দুরস্ত করতে। সুমেরু আমাকে কিসুই করতে দিলে না, একটা নারকোল কোড়া ছাড়া।।।আমির খান স্টেজ ছাড়লেন জগজিৎ সিংয়ের জন্যে, হাত-পা ছড়িয়ে বসে আড্ডা মারতে মারতে শমীকের ফোন, কি কি রান্না হচ্ছে সেগুলো শুনিয়ে দেওয়া গেল, এবং ভুতোর বাপ যে বয়সে ভুতোর চেয়ে বেশি কিছু বড় নয় সেটা গলার স্বরে প্রমাণ হয়ে গেল।

    বেলা দুটো কি আড়াইটে হবে - ভরদুপুরে রাত্তির নামলো - সঙ্গে ইন্দো - মানে আমি আর কুন্তী গিয়ে ইন্দো আর রাত্তিরকে খুঁজে নিয়ে এলুম। টুংকাই ব্যস্ত ন্যাপি-স্‌ৎকারে, তাই আসেনি। তা আড্ডা চল্ল, কি নিয়ে বা কি নিয়ে নয় সে খোদায় মালুম।।।সঙ্গে থালা ভর্তি মাংস।।।কুন্তী খানদুয়েক চটি বই এনে দিলো যার মধ্যে তাবড় তাবড় লোকের ইন্টারভিউ আছে, ঋত্বিক আনন্দবাজারকে গাল দিয়েছেন ফ্যাসিস্ট বলে।।।এই সব বকতে বকতে শোনা গেলো দময়ন্তী আট নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে এসে গেছে। আমি গেলুম আনতে - সঙ্গে একটি কুমড়োফুল। যদিও এর ইতিহাস তখনো জানতুম না, এখনও জানি না। মোড়ের মাথায় পৌঁছতেই দেখি একজন বেশ কড়ামতন ভদ্রমহিলা কোণের দোকানে কিছু একটা জিজ্ঞেস করে রাস্তায় নামলেন - সন্দ হল - এই হয়তো - অথচ নিক্ষ্‌সন্দেহ হতে পারছি নে - আরবিট লোককে যদি গিয়ে কুমড়োফুল ধরাই হয়তো জুতোর বাড়ি খাব - তাই সাতপাঁচ ভেবে পাশ দিয়ে এগিয়ে ফোন বের করে একটা রিং করলুম - দেখি পকেট থেকে ফোন বের করছে।
    আক্ষ, নিক্ষ্‌সন্দেহ, সোজা গিয়ে কুমড়োফুলটা দিয়ে বল্লুম "দূতকে শূলে চাপাইবেন না মহাশয়া"।।।দময়ন্তী বল্লে "কে পাঠিয়েছে বুঝেছি" - আমি কিন্তু এখনও অথৈ জলে, মানে আজও।

    বাড়ি এলুম, আরো দুই থালা মাংসের সদব্যবহার করতে করতে আরো ফোন এলো। কনফু, শমীক আবার, মিতাদি।।।কুমড়োফুলের বড়া হল।।।ঠিক হল রাতে লুচি ভাজবো।।।আপাতত ভাত, কুমড়োফুলের বড়া, দুই রকম মাছ, ডাল দিয়ে খাওয়া হোক।

    খেয়ে-দেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেটে টান দিচ্ছি, পরিপাটি আঁচড়ানো চুল, ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত এক ব্যক্তির আবির্ভাব - পায়ে জুতো-মোজা - সেগুলো একটু রঙীন হলে বলতুম শ্রীযুক্ত গিরীশ মহাপাত্র শর্ৎবাবুর বইয়ের পাতা থেকে সশরীরে ধরাধামে আবির্ভূত হইলেন।।।বল্লেন "নমস্কার, দময়ন্তীদি আছেন?" আছেন, ও দমু - তোমার ইঅঈ-কে সামলাও। ব্যাকগ্রাউন্ডে কি নাটক চলছে তখনো ধরতে পারিনি, আর পারবই বা কি করে? সাকুল্যে একটাই কথা জিজ্ঞেস করলেন "আপনি কি বিবাহিত"।।।তো তাঁকে তো একটা থালা ধরিয়ে দেওয়া হল, আমি আবার বারান্দায় দ্বিতীয় সিগারেট ধরিয়ে, আচমকা গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে আগেরটা ফেলে দিয়েছিলুম।।।হঠাৎ খাবারের থালা-হস্তে তাঁর আবির্ভাব - "তুই হতভাগা একটা বুদ্ধু - চিনতে পারলি নে" - যাক্ষ শালা, নাটক শেষ হয়ে বেরলো ইনিই আমাদের খুড়ো, থুড়ি বাপ্পাদা।।।এবং দময়ন্তী সব জানতো।

    বোঝো - আগেরদিন মেল পেলুম যে আমার বাড়ির নম্বর কাজ করছে না (ভুল নম্বর টাইপ করেছিলুম), মোবাইল নম্বর দিলুম - সেই নম্বরে একজন ফোন করে বল্লে "অরিজিতকাকু, আমি বাপ্পাদার ছেলে বলছি" - (অরিজিতকাকু শুনে আমি যতটা ঘাবড়েছিলুম, বাপ্পাদার ছেলে শুনে ততটাই হেসেছিলুম) - তখনও কিছু জানি নে।।।এরকম করে কেউ টুপি পড়ায়?

    যাই হোক, ভাট চল্ল, সঙ্গে ফোন।।।ঝিলপিপি, টিটিদিদি।।।দময়ন্তী আর সামরান গেলো "অলিন্দ" আনতে (আমি ভয়ে গেলুম না)। এই ফাঁকে ফোন করিলেন আমাদিগের ওমনাথমহাশয়।।।এবং যথাক্রমে কুন্তী অরিজিৎ সাজিয়া, অরিজিৎ ইন্দো সাজিয়া, ইন্দো কুন্তী সাজিয়া (সিকোয়েন্সটা আমিই ভুলে গেছি মাইরী) সঙ্গীতা (রাত্তির) যুগপ্‌ৎ উমকি এবং রাত্তির সাজিয়া দুরন্ত অভিনয়ক্ষমতার প্রদর্শন করিলেন। বিশেষতক্ষ উমকির ভূমিকায় রাত্তিরের অভিনয় ("তুমি এখানে কি কচ্চ"-র উত্তরে গম্ভীর স্বরে "কেন তোমার আপত্তি আছে") দেখিয়া অরিজিৎ সশব্দে অট্টহাস্য করিয়া ঘর হইতে নিষ্কান্ত হইলেন।।।

    ওমনাথ - খচিস না মাইরী - এট্টু ইয়ার্কি কচ্চিলুম।

    এর মাঝে গান হল, গল্পপাঠ হল, দময়ন্তীর ক্যামেরায় সেগুলো ধরা হল।।।ইন্দো আর রাত্তির জলদি চলে গেলো টুংকাই সামলাতে।।।দীপ্তায়নের খবর এলো যে সে মীটিংয়ে আটকে, তবে যত রাত্তির হোক না কেন, সে আসবেই, এবং আমাকে লিফট দেবেই।।।

    পানীয় এলো, আমি বেরসিক ধোঁয়াতেই আটকে রইলুম, সল্ট লেকের মশাগুলো ঘরের ভিতরেই আটকে রইলো, কলেজের একটা বাচ্চা ছেলে (এখনকার ফোর্থ ইয়ার) এলো।।।তার সাথে কিছুক্ষণ মজে রইলুম কলেজের বর্তমান ক্যালাকেলির খবর নিতে।।।ফোন এলো - মামীর - সেখানে ঘেঞউর চিৎকার শুনলুম।।।আরও গান হল, এবং আরও ভাট, মশার কামড় খেতে খেতে।।।অয়ন এসে পৌঁছলো, দীপ্তায়নও শেষ অবধি এলো যখন তখন রাত্তির দশটা বেজে গেছে।।।

    ঝটপট কিছু লুচি ভাজলুম, রাতের খাওয়া শেষ হল - এক দলের। আমি যথারীতি পোচুর পরিমাণে মিষ্টি খেলুম। জনতা যদিও আমাকে চাপ দিচ্ছিলো থেকে যাবার জন্যে, সেটা সম্ভব ছিলো না - কারণ পরদিন সকালে আমাকে ইস্কুলে যেতেই হবে ওল্ড বয়েজ অয়াসোসিয়েশনের মেম্বর হতে।।।আর তার ওপর একটা ফোন এলো ঋকের।।।তিনি তাঁর মামাবাড়ি থেকে আমাদের কলকাতার বাড়িতে ফোন করে বলেছেন "বাবা কোথায়, বাবাকে দাও" - তো তাকে বলা হয়েছে "বাবা এক বন্ধুর বাড়ি গেছে" - ইহা শুনিয়া তিনি য্‌ৎপরোনাস্তি রাগাণিত হইয়া দূরভাষযন্ত্রটিকে ভুমিতে নিক্ষেপ করিয়া কাঁদিয়া উঠিয়াছিলেন।।।অতক্ষ্‌পর আমার মোবাইলে ফোন।।।"বাবা, `where are you" - আমি বল্লুম "আমি এক বন্ধুর বাড়ি এসেছি, এখন বাড়ি যাবো" - শুনে আবার ভ্যা,ঁ এবং ফোন মাটিতে।।।ওকে ফেলে ওর বাবা ফুত্তি কচ্চে সেটা সহ্য হল না।।।

    একটু মনটা খারাপ হল।।।

    তো দীপ্তায়ন সহায় - সল্ট লেক থেকে পঁচিশ মিনিটে টালিগঞ্জ আসা যায় এই প্রথম দেখলুম - ফাঁকা রাস্তায় হুহু করে এসে দীপ্তায়ন আমাকে নেতাজীনগরে নামিয়ে দিলো।।।সেখান থেকে হেঁটে বাড়ি।।।তখন রাত্তির সাড়ে বারোটা প্রায়।।।

    এসেই কি দেখলুম জানো? ESPN-এ নিউক্যাসল ইউনাইটেড আর অয়াস্টন ভিলার খেলা দেখাচ্ছে, সরাসরি।।।এতো দেখতেই হয়, দেখলুম, নিউক্যাসল ২-১ জিতলো।।।নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোতে গেলুম।।।

    তো এই হল গপ্পো। তোমরা অবিশ্যি সবই পড়ে ফেলেছ সামরানের লেখা থেকে - আমি একটু আমার দিক থেকে নামালুম।।।মায়াপাতার সবটাই মায়া নয় কিন্তু।।।
  • Arijit | 128.240.229.3 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ২১:৫৪499752
  • আচ্ছা, আমি কপি করে রেখেছিলুম - দিচ্ছি - টাইপো গুলো ঠিক হয়ে যাবে...

    কলকাতা বিশ্ব-ভাটুরে-সম্মেলনের আঁখো-দেখা হাল
    -----------------------------------------------

    বাড়ি গেসলুম মোট্টে দু হপ্তার জন্যে, আগে হলে বাড়িতেই মায়ের রান্না খেয়ে খেয়ে কাটিয়ে দিতুম - কিন্তু ভাটের নেশা সর্বনাশা, কলেজের টোয়েন্টিনাইনেরও বাড়া, আর বহুৎ দিন বাদে এত বন্ধু...অতএব, চালাও পানসী বেলঘরিয়া, থুড়ি, আট নম্বর ট্যাঙ্ক।

    ভোর দশটায় (ভোর, কারণ তখন আসলে বাজে সাড়ে চারটে, কলকাতার ঘড়িগুলো বেখাপ্পারকম দৌড়য়) দময়ন্তীর ফোন - "কচুর শাক আনবে? বা মোচা?" কুঁদঘাট বাজার তো আর আমার ঘড়িতে চলে না, সে নিজের সকালে বসে, বেলা দশটায় গেলে গরুতে খাওয়া কচু ছাড়া আর কিসুই মিলবে না। ঠেলাগাড়িগুলোও ঘন্টাখানেক আগে চক্কর লাগিয়ে চলে গেছে। তাও কুঁদঘাট হয়েই গেলুম - কপালে মোচা নাস্তি - বাজার উঠে গেছে।

    টালিগঞ্জ ট্রামডিপো থেকে একটা মুড়ির টিন সি-এইট-এ উঠলুম। সল্ট লেক সম্পর্কে আমি মা-গঙ্গা, তাই কণ্ডাক্টর ভরসা - আট নম্বর ট্যাঙ্কের আগে নামিয়ে দিলো, বল্লে "হুই দেখা যাচ্ছে" - হাঁটা দিলুম। কুন্তীর ফোন বেজেই গেলো, বেজেই গেলো - নো অ্যানসার। তাতে কি? বি ই কলেজের ছেলে অত সহজে দমে না - শিবপুরের গলিঘুঁজিতে ঘুরে অভ্যস্ত, আর এ তো সল্ট লেকের বড় রাস্তা - নম্বর-টম্বরগুলোও বেশ নিয়মমাফিক। নিজেই খুঁজে পেতে কুন্তীর বাড়ি পৌঁছে গেলুম (সামরান - "দি" বলবো না বলবো না এখনো ঠিক করতে পারিনি - পেঁয়াজ বাটতে এতই মগ্ন ছিলো যে আমি নিজে গেছি না কুন্তী নিয়ে গেছে খেয়াল করেনি) - এবং আমাকে আশ্চর্য করে কুন্তী শুধোলে "তুমি কে বলোতো"? ইয়া আল্লা, নিজের পরিচয় দেওয়া বড়ই কঠিন...তাও দিলুম:-))

    ঘরে তুমুল জোরে গান চলছে, উস্তাদ আমির খানের বাগেশ্রী - ভর দুপুরে, আর রান্নাঘরে ততোধিক জোরে চলছে শিলনোড়া এবং খুন্তিনাড়া। শিল্পী মোহিত শিল্পকর্মে - এক বিঘৎ সাইজের চিতলের পেটি, এবং ইলিশের টুকরোগুলোকে দুরস্ত করতে। সুমেরু আমাকে কিসুই করতে দিলে না, একটা নারকোল কোড়া ছাড়া...আমির খান স্টেজ ছাড়লেন জগজিৎ সিংয়ের জন্যে, হাত-পা ছড়িয়ে বসে আড্ডা মারতে মারতে শমীকের ফোন, কি কি রান্না হচ্ছে সেগুলো শুনিয়ে দেওয়া গেল, এবং ভুতোর বাপ যে বয়সে ভুতোর চেয়ে বেশি কিছু বড় নয় সেটা গলার স্বরে প্রমাণ হয়ে গেল।

    বেলা দুটো কি আড়াইটে হবে - ভরদুপুরে রাত্তির নামলো - সঙ্গে ইন্দো - মানে আমি আর কুন্তী গিয়ে ইন্দো আর রাত্তিরকে খুঁজে নিয়ে এলুম। টুংকাই ব্যস্ত ন্যাপি-সৎকারে, তাই আসেনি। তা আড্ডা চল্ল, কি নিয়ে বা কি নিয়ে নয় সে খোদায় মালুম...সঙ্গে থালা ভর্তি মাংস...কুন্তী খানদুয়েক চটি বই এনে দিলো যার মধ্যে তাবড় তাবড় লোকের ইন্টারভিউ আছে, ঋত্বিক আনন্দবাজারকে গাল দিয়েছেন ফ্যাসিস্ট বলে...এই সব বকতে বকতে শোনা গেলো দময়ন্তী আট নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে এসে গেছে। আমি গেলুম আনতে - সঙ্গে একটি কুমড়োফুল। যদিও এর ইতিহাস তখনো জানতুম না, এখনও জানি না। মোড়ের মাথায় পৌঁছতেই দেখি একজন বেশ কড়ামতন ভদ্রমহিলা কোণের দোকানে কিছু একটা জিজ্ঞেস করে রাস্তায় নামলেন - সন্দ হল - এই হয়তো - অথচ নি:সন্দেহ হতে পারছি নে - আরবিট লোককে যদি গিয়ে কুমড়োফুল ধরাই হয়তো জুতোর বাড়ি খাব - তাই সাতপাঁচ ভেবে পাশ দিয়ে এগিয়ে ফোন বের করে একটা রিং করলুম - দেখি পকেট থেকে ফোন বের করছে।
    আ:, নি:সন্দেহ, সোজা গিয়ে কুমড়োফুলটা দিয়ে বল্লুম "দূতকে শূলে চাপাইবেন না মহাশয়া"...দময়ন্তী বল্লে "কে পাঠিয়েছে বুঝেছি" - আমি কিন্তু এখনও অথৈ জলে, মানে আজও।

    বাড়ি এলুম, আরো দুই থালা মাংসের সদব্যবহার করতে করতে আরো ফোন এলো। কনফু, শমীক আবার, মিতাদি...কুমড়োফুলের বড়া হল...ঠিক হল রাতে লুচি ভাজবো...আপাতত ভাত, কুমড়োফুলের বড়া, দুই রকম মাছ, ডাল দিয়ে খাওয়া হোক।

    খেয়ে-দেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেটে টান দিচ্ছি, পরিপাটি আঁচড়ানো চুল, ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত এক ব্যক্তির আবির্ভাব - পায়ে জুতো-মোজা - সেগুলো একটু রঙীন হলে বলতুম শ্রীযুক্ত গিরীশ মহাপাত্র শরৎবাবুর বইয়ের পাতা থেকে সশরীরে ধরাধামে আবির্ভূত হইলেন...বল্লেন "নমস্কার, দময়ন্তীদি আছেন?" আছেন, ও দমু - তোমার CAD-কে সামলাও। ব্যাকগ্রাউন্ডে কি নাটক চলছে তখনো ধরতে পারিনি, আর পারবই বা কি করে? সাকুল্যে একটাই কথা জিজ্ঞেস করলেন "আপনি কি বিবাহিত"...তো তাঁকে তো একটা থালা ধরিয়ে দেওয়া হল, আমি আবার বারান্দায় দ্বিতীয় সিগারেট ধরিয়ে, আচমকা গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে আগেরটা ফেলে দিয়েছিলুম...হঠাৎ খাবারের থালা-হস্তে তাঁর আবির্ভাব - "তুই হতভাগা একটা বুদ্ধু - চিনতে পারলি নে" - যা: শালা, নাটক শেষ হয়ে বেরলো ইনিই আমাদের খুড়ো, থুড়ি বাপ্পাদা...এবং দময়ন্তী সব জানতো।

    বোঝো - আগেরদিন মেল পেলুম যে আমার বাড়ির নম্বর কাজ করছে না (ভুল নম্বর টাইপ করেছিলুম), মোবাইল নম্বর দিলুম - সেই নম্বরে একজন ফোন করে বল্লে "অরিজিতকাকু, আমি বাপ্পাদার ছেলে বলছি" - (অরিজিতকাকু শুনে আমি যতটা ঘাবড়েছিলুম, বাপ্পাদার ছেলে শুনে ততটাই হেসেছিলুম) - তখনও কিছু জানি নে...এরকম করে কেউ টুপি পড়ায়?

    যাই হোক, ভাট চল্ল, সঙ্গে ফোন...ঝিলপিপি, টিটিদিদি...দময়ন্তী আর সামরান গেলো "অলিন্দ" আনতে (আমি ভয়ে গেলুম না)। এই ফাঁকে ফোন করিলেন আমাদিগের ওমনাথমহাশয়...এবং যথাক্রমে কুন্তী অরিজিৎ সাজিয়া, অরিজিৎ ইন্দো সাজিয়া, ইন্দো কুন্তী সাজিয়া (সিকোয়েন্সটা আমিই ভুলে গেছি মাইরী) সঙ্গীতা (রাত্তির) যুগপৎ উমকি এবং রাত্তির সাজিয়া দুরন্ত অভিনয়ক্ষমতার প্রদর্শন করিলেন। বিশেষত: উমকির ভূমিকায় রাত্তিরের অভিনয় ("তুমি এখানে কি কচ্চ"-র উত্তরে গম্ভীর স্বরে "কেন তোমার আপত্তি আছে") দেখিয়া অরিজিৎ সশব্দে অট্টহাস্য করিয়া ঘর হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন...

    ওমনাথ - খচিস না মাইরী - এট্টু ইয়ার্কি কচ্চিলুম।

    এর মাঝে গান হল, গল্পপাঠ হল, দময়ন্তীর ক্যামেরায় সেগুলো ধরা হল...ইন্দো আর রাত্তির জলদি চলে গেলো টুংকাই সামলাতে...দীপ্তায়নের খবর এলো যে সে মীটিংয়ে আটকে, তবে যত রাত্তির হোক না কেন, সে আসবেই, এবং আমাকে লিফট দেবেই...

    পানীয় এলো, আমি বেরসিক ধোঁয়াতেই আটকে রইলুম, সল্ট লেকের মশাগুলো ঘরের ভিতরেই আটকে রইলো, কলেজের একটা বাচ্চা ছেলে (এখনকার ফোর্থ ইয়ার) এলো...তার সাথে কিছুক্ষণ মজে রইলুম কলেজের বর্তমান ক্যালাকেলির খবর নিতে...ফোন এলো - মামীর - সেখানে ঘেঞ্চুর চিৎকার শুনলুম...আরও গান হল, এবং আরও ভাট, মশার কামড় খেতে খেতে...অয়ন এসে পৌঁছলো, দীপ্তায়নও শেষ অবধি এলো যখন তখন রাত্তির দশটা বেজে গেছে...

    ঝটপট কিছু লুচি ভাজলুম, রাতের খাওয়া শেষ হল - এক দলের। আমি যথারীতি পোচুর পরিমাণে মিষ্টি খেলুম। জনতা যদিও আমাকে চাপ দিচ্ছিলো থেকে যাবার জন্যে, সেটা সম্ভব ছিলো না - কারণ পরদিন সকালে আমাকে ইস্কুলে যেতেই হবে ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বর হতে...আর তার ওপর একটা ফোন এলো ঋকের...তিনি তাঁর মামাবাড়ি থেকে আমাদের কলকাতার বাড়িতে ফোন করে বলেছেন "বাবা কোথায়, বাবাকে দাও" - তো তাকে বলা হয়েছে "বাবা এক বন্ধুর বাড়ি গেছে" - ইহা শুনিয়া তিনি যৎপরোনাস্তি রাগাণ্বিত হইয়া দূরভাষযন্ত্রটিকে ভুমিতে নিক্ষেপ করিয়া কাঁদিয়া উঠিয়াছিলেন...অত:পর আমার মোবাইলে ফোন..."বাবা, where are you" - আমি বল্লুম "আমি এক বন্ধুর বাড়ি এসেছি, এখন বাড়ি যাবো" - শুনে আবার ভ্যাঁ, এবং ফোন মাটিতে...ওকে ফেলে ওর বাবা ফুত্তি কচ্চে সেটা সহ্য হল না...

    একটু মনটা খারাপ হল...

    তো দীপ্তায়ন সহায় - সল্ট লেক থেকে পঁচিশ মিনিটে টালিগঞ্জ আসা যায় এই প্রথম দেখলুম - ফাঁকা রাস্তায় হুহু করে এসে দীপ্তায়ন আমাকে নেতাজীনগরে নামিয়ে দিলো...সেখান থেকে হেঁটে বাড়ি...তখন রাত্তির সাড়ে বারোটা প্রায়...

    এসেই কি দেখলুম জানো? ESPN-এ নিউক্যাসল ইউনাইটেড আর অ্যাস্টন ভিলার খেলা দেখাচ্ছে, সরাসরি...এতো দেখতেই হয়, দেখলুম, নিউক্যাসল ২-১ জিতলো...নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোতে গেলুম...

    তো এই হল গপ্পো। তোমরা অবিশ্যি সবই পড়ে ফেলেছ সামরানের লেখা থেকে - আমি একটু আমার দিক থেকে নামালুম...মায়াপাতার সবটাই মায়া নয় কিন্তু...
  • somnath | 211.28.40.185 | ০১ মার্চ ২০০৬ ১০:৫৬499753
  • এই হয়। বার্ড ফ্লু এর জমানায় লোককে মুরগি করতে চাইলে এই হয়। নিজেকেই ঘেঁটে যেতে হয়।

    সু-দা কেই ফোনিয়েছিলুম। প্রথমে কুন্তি ফোন ধরে বলে আমি অরিজিৎ বলছি। কেমন আছো? তো, বোঝা গেল এটি অরিজিৎ নয়, কারণ - ""আছো!!! মানে?????" বলে আলতো ধমক দিতে, ""ইয়ে মানে প্রথমবার ফোনে কথা হচ্ছে, তুমি ই তো বলব"" বলে আমতা আমতা করে সু-দা কে ধরিয়ে দিল। বোঝাই গেল, কথাই আদৌ প্রথমবার হচ্ছে - ফোনে কি আর মেলে কি!

    খানিক প্রস্তুতির পর দেওয়া হল, "নে কুন্তির সাথে কথা বল"। তো, গলার আওয়াজ বেশ পাতলা ছিল, লণ্ডনের ভাঁটবর্ণনা থেকে ধারণ করার চেষ্টা করে নিশ্চিত হওয়া গেল -অরিদা বা আসল কুন্তি ই হবে।

    তাপ্পর যে নেহাৎ ফিচেল ছোকরা লাফ দিয়ে ফোন ধরে প্রখর স্মার্টনেসে - আমি দীপ্তায়ন বলছি বলে হামলে পড়ল - সেটা ইন্দোদা ছিল বোঝাই যায়, কারণ আমায় বলা হয়েছিল ইন্দো-দা আর লণ্ডনের বাপ্পাদা আসেনি। এসব ঢপ বোঝা যায়। রাত্তিরের ব্যপারটা বোঝা উচিত ছিল, কারণ ""দীপ্তায়নদা, বৌদি আসেনি ??"" বলতেই যাকে ধরিয়ে দিল, সে গলাটা যথাসম্ভব মোটা করে স্কুলটীচারের ভূমিকায় নেমেছিল। রুমকির ব্যপারটা পুরো ধাপ্পা কারণ আগের দিনই আমার সাথে তার ফোনাফুনি হয়েছে, শরীর খারাপ ইত্যাদি। তাছাড়াও "রুমকির সাথে কথা বল" বলে ফোন ট্রান্সফারের পর হুমকি দেয়া গলা শুনেই বোঝা যায় সদ্য একটা গোঁপ লাগানো হল ঠোঁটের ওপোর, আর গলায় বাঁধা হল রুমাল। আমি বললুম "তুমিও এসে জুটেছো?"" তো প্রায় চাকু চমকে উত্তর এল - ""কেন তোর আপত্তি আছে?"" তার পরে আর বেশি কথা এগোবে না। স্বাভাবিক।

  • Arijit | 128.240.229.67 | ০১ মার্চ ২০০৬ ১৪:৪৩499754
  • হুম্‌ম্‌ম্‌ম এখন তো বলবিই।
  • samik | 221.134.226.69 | ০৯ মার্চ ২০০৬ ২২:৩৭499744
  • এই ভাটের ছবি বা ভিডিও কোথাও তোলা হয় নি?
  • CAD | 203.171.240.37 | ১৩ মার্চ ২০০৬ ১৯:৫৯499745
  • দিল্লিতে ঠান্ডা পড়েচে, তার উপ্‌রে কানে বাসন্তী বাতাস ঢুকে বেদ্‌না, ওদ্দুর উট্‌লে তাতে সব কিচু সেঁকে দেবে কোন। আর বিলাতফেরত বাচ্চাটা সদ্য সদ্য চাগ্‌রীতে ঢুকেচে, সঙ্গে পোÒট্রীর দায়িত্ব।.......

    দয়া করে একটু অপেক্ষা করুন।
  • omnath | 59.93.240.151 | ০৪ মার্চ ২০০৮ ০১:২৪499746
  • বইমেলায় ভাটের জমায়েতে আমি হাত তুললাম। রোববার। কখন কোথায় সেসব ঠিক হোক তাড়াতাড়ি।

    সুমেরুদা দায়িত্ব নিচ্ছে যখন ব্যপারটা হবে কিনা আদৌ - বেশ চিন্তা রইল তবু। ;-P.
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন