এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • সুনীল গাঙ্গুলী - জনপ্রিয় বাংলা লেখক

    Abhyu
    বইপত্তর | ১৬ অক্টোবর ২০১১ | ১০৪০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Aniket Pathik | 69.93.197.217 | ০৪ নভেম্বর ২০১২ ১৫:৩৬494146
  • শুধু কবিতার জন্য নয় ঃ ২
    গদ্যকার সুনীলের একপ্রান্তে একেবারে ইতিহাসের বাঁধানো রাস্তায় সেই সময়, প্রথম আলো (কতটা উপন্যাস আর কতটা ইতিহাস তাই নিয়ে চুলচেরা আলোচনা চলুক) আর একপ্রান্তে ঠিকানাবিহীন দিকশূন্যপুর (হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা !) কিন্ত মাঝে যে বিস্তৃত অববাহিকা জুড়ে নানারকম গল্প-উপন্যাস-রম্যরচনা, সেখানেও যে সব মনিমুক্তো ছড়িয়ে আছে মনোযোগী পাঠক তার খবর ঠিক পায় । আমার মত সাধারাণ পাঠক যারা ইতিহাস, দর্শন, অর্থনীতি্র প্রবন্ধ এমনকি কবিতাও সেভাবে পড়ে না কিন্ত দিনে দু চার পাতা গল্প-উপন্যাস না পড়লে বাঁচে না, তাদেরও একটা স্বচ্ছ এবং মুক্ত ভাবনার দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ত্বটা বোধহয় উনি সচেতনভাবেই নিয়েছিলেন কিন্ত বুঝতে দেননি । সুনীল নিঃসন্দেহে আমার প্রিয় সাহিত্যক, কিন্ত প্রিয়তম কিনা জানিনা। সুনীলের নিরলঙ্কার ঝরঝরে গদ্য শীর্ষেন্দুর মায়াময় গদ্যের মধ্যে তুলনা চলে কিনা জানিনা কিন্ত সুনীলের চরিত্ররা আমাকে নিয়মিত অবাক করেছে, ভাবিয়েছে। চরিত্রদের মুখের কথা বা কাজ সবই সুনীলের নিজের জীবনদর্শনের কথা এমন নাই হতে পারে, কিন্ত এইরকম চরিত্রের কথাও যিনি ভাবতে পেরেছেন তাঁর ভাবনার পরিধি আমার বিস্ময় জাগিয়েছে বরাবর।
    অনেক আগে লেখা গল্প ‘কান্না’, রবিবারের পাতায় বোধহয় বেরিয়েছিল, পরে বিভিন্ন সংকলনে । একটি মেয়ে জয়া তার স্বামী বিভুর সঙ্গে আমেরিকায় গেছে, সেখানে কিছু একটা পড়তে কলেজে ভর্তিও হয়েছে। সে জানে আমেরিকায় মেয়েরা খুব স্বাধীন। একা একা সব জায়গায় যায়, সব কাজ করে। কিন্ত সেই মেয়েটি কলেজে যায় কারুর একটা সঙ্গে, ফেরে স্বামীর সঙ্গে, ছুটির দিনগুলোয় কোন না কোন বাড়িতে যাওয়া, সেও কারুর না কারুর সঙ্গে। স্বামী তার খুবই যত্নশীল, সব সময়্ বউকে আগলে রাখে, সেটা জয়ার ভালও লাগে কিন্ত একা একা কিছু করার যে স্বাধীনতাটা সে চেখে দেখতে চেয়েছিল, সেইটা সে কিছুতেই পায় না । দু-দিনের জন্য বিভু বাইরে যাবে, জয়া ভাবে এই দু-দিন সে একা আর স্বাধীন, কিন্ত বিভু এই দু-দিনের জন্যও বহু লোককে বলে গেছে জয়ার দেখাশোনা করতে, তারা সব এসে হাজির হয়, হৈ-হুল্লড় মজা সব হয় কিন্ত জয়ার একা থাকা হয় না। সেই যাত্রাতেই বিমান দুর্ঘটনায় বিভু মারা যায়, জয়া স্তব্ধ হয়ে যায় কিন্ত কাঁদে না। চারপাশে সবাই তাকে ঘিরে থাকে, মা-বাবা তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান কিন্ত একদিন সে জেগে উঠে জানিয়ে দেয় অন্তত কিছুদিন সে একা থাকতেই চায়। সবাই চলে গেলে একা বাড়িতে সে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পায় আর বিভুর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে এই প্রথম সে বিভুর জন্য কষ্টটা অনুভব করে আর কেঁদে ফেলে। বাইরে থেকে একজন পরিপূর্ণভাবে সুখী মহিলাও যে আসলে স্বাধীন নয়, স্বাধীনতার জন্য তারও ভেতরে কতটা আকুলতা থাকতে পারে তা দেখাতে গিয়ে সুনীলকে কিন্ত অত্যাচারী স্বামী বা সংসার শৃঙ্খলের ধরাবাঁধা নাটকীয় ছবি আঁকতে হয়নি, এইখানে তাঁর উত্তরণ, আমারও।
    আরেকটা উপন্যাসে (কিন্ত কোনো নাম মনে নেই) পড়েছিলাম ব্যস্ত ব্যবসায়ী স্বামীর একাকীত্বে ভোগা স্ত্রীর কথা। চেনা বিষয়। ভদ্রলোকের এক বন্ধুর স্ত্রীও ভদ্রলোকের ফার্মেই চাকরী করেন। (এইটুকু পড়ে একটি ধরাবাঁধা পরকীয়ার আশা দেখা যায়।) একদিন অলস দুপুরে বউটি স্বামীর অফিসে হানা দেন, সোজা ঢুকে পড়েন স্বামীর ঘরে, সেখানে স্বামী আর তাঁর বন্ধুপত্নী রয়েছেন, দুজনে মগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছেন কম্পিউটারের পর্দায়, ব্যবসার আয়ব্যয় সংক্রান্ত আলোচনায়। স্ত্রীকে দেখে স্বামী স্বাভাবিকভাবেই একটু অবাক হলেন কিন্ত ভয় বা লজ্জা পেলেন না, অস্বস্তিতেও পড়লেন না, বসতে বললেন, কিছুটা হয়তো সঙ্গও দিলেন, কিন্ত আবার ফিরে গেলেন কাজের মধ্যে। এই গোটা ঘটনায় মহিলা আপত্তি করার কিছু পেলেন না কিন্ত তাঁর কষ্টটাকে চিনতে পারলেন। স্বামীর জীবনের একটা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ অংশে, তাঁর কাজের জগতে যেখানে তাঁর নিজের প্রবেশাধিকার নেই, সেটা কিন্ত ওই বন্ধুর স্ত্রীর চেনা। তিনি নিজে স্বামীর কর্মসহচরী হতে পারেননি, যেটা অন্য মহিলা পেরেছেন। এইটা একটা পরাজয়, যার জন্য কাউকেই দোষী করা যায় না। একজন নারী যে শুধু স্বামীর প্রেমের অংশ নিয়েই তৃপ্ত থাকেন না তাঁর কাজের জগতে ঢুকতে না পারাও যে কোন মহিলার একটা হতাশার জায়গা হতে পারে এ কথা ক’জন পুরুষ ভাবতে পারেন ! ক’জন মহিলাই বা নিজের এই হতাশা বা কষ্টকে নিজে চিনতে পারেন ! এইখানে সুনীল আমাদের মনের কথাই শুধু বলেন না, এমন কথাগুলো বলেন যা আমরাই হয়তো জানতাম না। এইখানে এসে আমি সুনীলের কাছে ভাবতে শিখি। কবিতার আঙ্গিকে অনেক গভীর জীবনদর্শনের কথা সহজে বলা যায়, যা গদ্যের মধ্যে বলা কঠিন, জ্ঞান দেওয়ার মত শোনায় । সুনীল সেইটা পারতেন ।
    কমবয়সে `ধূলিবসন’ পড়ে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠার কথা মনে পড়ে। লন্ডনপ্রবাসী এক মধ্যবয়সী মহিলা, নিজের সফল কেরিয়ার, প্রতিষ্ঠিত স্বামী ও সন্তানের মধ্যে থেকে একদিন অনুভব করেন পৃথিবীতে একান্তভাবে তাঁর নিজের কোন জায়গা নেই, তিনি না থাকলে হবে না এমন কোন কাজ নেই। সেই জায়গার সন্ধানে তিনি জীবনের সব কিছু বদলে ফেলেন। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শেষে বয়সে অনেক ছোট একটি ধীবর যুবকের সঙ্গে সহবসবাসে স্থিত হলেন। সেটাই তাঁর একান্ত নিজের জায়গা কেন মনে হল, কারণ ওই ছেলেটি, যে একদিন তাঁকে আক্রমণ করেছিল, ধর্ষণ এমনি খুনও করতে চেয়েছিল, উনি তার সঙ্গে বাস করে তার মন থেকে হিংসাকে সরিয়ে ভালবাসা এনে দিতে পেরেছন, এই কাজটি তিনি না করলে হত না, তাই এইটুকু ওঁর একান্ত নিজের জায়গা। সেই সুদুর ১৯৯০ এর আশেপাশে এই দুঃসাহসিক ও প্রায় অশ্লীল ধারনাকে জায়গা দেওয়া খুব সহজ কাজ ছিল না, নিন্দাও কম পান নি ভক্তকুলের কাছে। তখন প্রাণপনে ভেবেছি এটা অবাস্তব কিন্ত অস্বীকার করতে পারিনি পুরোপুরি। মনের মধ্যে কোথাও রয়ে গেছে ওই একান্ত নিজের জায়গার অন্বেষণ (এভাবেও তবে ভাবা যায়! )। একদিন মেনে নিতে হয়েছে, লেখক শুধু বাস্তবকে অনুসরণ করেন না, বাস্তবকে নির্মাণও করেন (এভাবেও ভাবতে হয় !)। অনেক সময় মনে হয়েছে সুনীল কবি বলেই এই রকম ভাবতে পারেন। কিন্ত নেপথ্যে যাই থাক তাঁর গদ্যকে ভালবাসতে গিয়ে কোথাও কবিতার ভাষার ওপর নির্ভর করতে হয় নি।
    দক্ষিন আফ্রিকায় সাহিত্য সম্মেলনে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন । সেই সময় মৃত্যুভাবনা জেগেছিল মনে। সেই কথা লিখেছেন ‘বিজনে নিজের সঙ্গে’-য়। তখন মনে হয়েছিল এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে বেঘোরে মারা পড়লে আর যা হোক না হোক পুপলু-চান্দ্রেয়ীকে খুব বিপদে ফেলা হবে। (ঠিক এই রকম ধারনায় একটা গল্পও লিখেছিলেন অনেক আগে)। অষ্টমির মাঝরাতে নিজের বাড়িতে অসুস্থ শরীরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কি সব কাজ মিটিয়ে, কাউকে ঝামেলায় না ফেলে টুক করে চলে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন ! জানা হল না। (শেষ)
  • nina | 79.141.168.137 | ০৫ নভেম্বর ২০১২ ০০:১৯494147
  • বেশ কয়েকবার পড়ার পরও মনে হ'ল আবার, হায়ত আরও কয়েকবার কিম্বা মাঝে মাঝেই পড়ার মতন এই লেখা---খুব চেনা লাগল লেখার ধরণ, ভাষা, অনুভব অনুভুতির প্রকাশ------অপেক্ষায় ছিলম এই লেখাটির জন!!
  • i | 147.157.8.253 | ০৫ নভেম্বর ২০১২ ০২:৪৫494148
  • অনিকেত,
    শেষ বলতে নেই।
  • aranya | 78.38.243.161 | ০৫ নভেম্বর ২০১২ ০৫:১৬494149
  • ভাল লাগল, অনিকেতের মূল্যায়ন।
  • . | 152.176.84.188 | ০৪ জুন ২০১৩ ১৯:৫৬494150
  • .
  • প্রণব | 116.218.246.117 | ০৪ জুন ২০১৩ ২০:৩৩494151
  • নই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন