এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং

    pi
    অন্যান্য | ২০ জুলাই ২০১১ | ২৯২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kallol | 220.226.209.2 | ২৭ জুলাই ২০১১ ১০:০০484110
  • ইন্দিরা তার জায়গা থেকে যা যা করেছিলেন, সেগুলো তার জয়গা থেকে ঠিক। ভারত রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে, শত্রু পাকিস্তান দেশটাকে ভেঙ্গে দেওয়া। পূর্ব সীমান্তে বন্ধু দেশ তৈরী হওয়া ও সেদিকটা নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য, ভারতীয় সেনাবাহিনী দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সাততাড়াতাড়ি মীমাংসা করে দেওয়া রাশিয়ার স্বাভাবিক মিত্র হিসাবে, এই মহাদেশে আমেরিকার প্রভাব কমানো।
    কিন্তু এসব করতে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীকেই অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ায়, সেখানকার মানুষের সংগ্রাম মার খায়। সেটার প্রভাবে পরে বাংলাদেশে কি পরিমান ভারতবিদ্বেষ পয়দা করেছে, সেটা কুলদা, বিপ্লবরা বলতে পারবেন।
  • kc | 194.126.37.78 | ২৭ জুলাই ২০১১ ১০:২০484111
  • ভারতের দিক থেকে সবথেকে বড় ভুল হয়েছিল মনে হয়, পাকিস্তানকে ভারতের জেনারেলের কাছে আত্মসমর্পণ করানোয়। তারপরে পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া ট্যাঙ্ক ও অন্যন্য জিনিষ ট্রাকে ভরে ভারতে নিয়ে আশায়। প্রায় একতরফা ভাবেই ২৫বছরের চুক্তিতে সই করানোয়। এগুলো সদ্যজাত দেশটাতে নতুন করে ভারতবিদ্বেষ নতুন করে পয়্‌দা করে। এরপর ফি বছর পদ্মাতে বন্যাতো আছেই।
  • Netai | 121.241.98.225 | ২৭ জুলাই ২০১১ ১২:৩০484112
  • প্রসংগের একটু বাইরে।

  • hrithkomol | 188.28.247.162 | ২৭ জুলাই ২০১১ ২০:৪৪484113
  • kc র দেওয়া "১৫ই আগস্টের অভ্যুত্থানের পরেপরেই বাংলাদেশ সরকার প্রথম যে কাজটি করেন সেটি হল ভারতের সঙ্গে ২৫ বছরের সহযোগিতা চুক্তি বাতিল করেন" তথ্যটি সঠিক নয়। কোন চুক্তিই আনুষ্ঠাকিন ভাবে বাতিল করেনি বাংলাদেশ ১৯৭৫ সনের ১৫ অগাস্টের পরে। সে সময়ে যদিও আমি কিশোর, কিন্তু ঘটিনাপ্রবাহগুলো মোটামুটি স্পষ্ট মনে আছে। ক্যু দেতার পরে বাংলাদেশ রেডিও টেলিভিশনেও সমস্ত দেশের সঙ্গে সমস্ত চুক্তিটি বহাল রাখার ঘোষণা দেওয়া হছিল। একই কথা আকাশবাণী ও দেশে তখনকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শরন সেনও বলেছেন। ভারতই প্রথম দেশ ১৫ অগাস্টের ঘটনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়' উল্লেখ করে নতুন সরকারকে মেনে নেয়। কিন্তু ইন্দিরা সরকার শেখ মুজিব হত্যার দিন থেকেই শান্তি বাহিনীকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

    ১৯৭২-এ ইন্দিরা-মুজিবের করা 'ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রি চুক্তি' ১৯৯৭ সনে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। লক্ষণীয় সে সময়ে (১৯৯৭ সনে) বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। কিন্তু তারা আর চুক্তিটি নবায়ন করেনি।

    আর পরবর্তিতে 'ভারতবিদ্বেষ' বা 'ভারত-ফোবি' কি ভাবে বাংলাদেশি রাজনোতির উপাদান হল সেটা বুঝতে অসম-বাণিজ্য, ফারাক্কা বাঁধ সহ একাধিক নদীর জলবন্টন, ভারতের একাধিক চুক্তি অমান্য করা, যা ইন্দিরার এমার্জেন্সীর শাসনের সমান্তরালে একদলীয় বাকশাল, এবং একই সময়ে বিতর্কিত উপায়ে সিকিমকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করা ইত্যাদি বাংলাদেশি মানুষের psyche তে কি প্রভাব ফেলেছিল সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে। এটাও সত্য সাধারণ মানুষের মধ্যে 'ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রি চুক্তি' নিয়ে বুরুপ মনভাব ছিল এবং মুজিব সরকারের ক্রমাগত ব্যর্থ, স্বজন তোষণ ও দমননীতিতে দ্রুত ভারত, তার 'অনুগত' মুজিব সরকার ও 'ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রি চুক্তি' সমার্থক হয়ে উঠছিল।
  • hrithkomol | 188.28.247.162 | ২৮ জুলাই ২০১১ ০৬:৩২484114
  • পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পন ভারিতীয় বাহিনীর কাছে করানো হয়েছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায়।অমুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি উসমানীকে সেখানে উপস্থিতও থেকে দেওয়া হয়নি। এটা ভারত করেছিল তার নিজের ইমেজ বুস্ট আপ করতে। ১৯৮৪-এ পাকিস্তানের কাশ্মীরের অংশ বিশেষ কেটে নেওয়া, ১৯৬৫ তে ডিসাইসিভ বিজয় না হওয়া এসবের প্রতিশোধ ও যুদ্ধোত্তর সময়ে যুদ্ধববন্দি বিনিময় ইত্যাদিতে নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্যেই এই যুদ্ধকে ‘ভারত-পাকিস্তান’ যুদ্ধ করে ফেলা হয়। যদিও ডিসেম্বরে যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারত-পাক যুদ্ধ শুরু হয় তার আগে থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের বেশির ভাগ এলাকা মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল।
    মজা হল, ১৯৭১ এর যুদ্ধের পাকিস্তান আর ভারতের ‘অফিসিয়াল ইতিহাস’-এর মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। এটা তাদের কাছে ছিল ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ। পাকিস্তানের ‘অফিসিয়াল ইতিহাস’ বলে মদো-মাতাল সামরিক কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা ও ভারতের চক্রান্তে তারা যুদ্ধে হেরে পূর্ব পাকিস্তান হারিয়েছে। আর ভরতের ‘অফিসিয়াল’ ভাষ্য তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশ জন্ম দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বের কিছু নেই। এমন কি ভূট্টূ বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা হিসেবের মধ্যে পড়ে না। ভারতীয় কর্তা ও জেনেরেলরা মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ‘গাইড’‘ইনফরমার’ ছিল-এটুকুই স্বীকার করেন। এটুকুই প্রাপ্য তাদের!

    *‘ভারতবিদ্বেষ’ বিষয়ে আর একটা কথা। রাজনীতিতে ‘ভারতবিদ্বেষ’র ব্যবহার তো শুধু বাংলাদেশই নয় ভারতের চারপাশের প্রায় সব দেশেই আছে। পাকিস্তান, চীন, শ্রীলঙ্কা এমন কি নেপালেও আছে। বাংলাদেশ নিয়ে বেশি টানাটানির কারণটা কি?

  • Netai | 121.241.98.225 | ০২ আগস্ট ২০১১ ১৩:৪২484116
  • বিদ্বেষ খুঁজলে ভারতেও পাবেন। পাকিস্থান বিদ্বেষ। চিন বিদ্বেষ। মায় শ্রীলঙ্কাবিদ্বেষীও পাওয়া যায়। বাংলাদেশবিদ্বেষ রয়েছে এমন লোকের সংখ্যা বরং কম। অনুযোগ রয়েছে বলা যেতে পারে। বাংলাদেশকে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া, অনুপ্রবেশকারীদের আটকাতে যথেষ্ট ব্যাবস্থা না নেওয়া ইত্যাদি কারনে।
  • Netai | 121.241.98.225 | ০৩ আগস্ট ২০১১ ১২:৩৩484117

  • sardar faruque | 180.234.72.32 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১১ ২৩:০৩484118
  • প্রত্যাবর্তনের দিন

    -------------------

    রেল লাইনের পাশের খালটাকে সবাই বলতো ফিটকিরির খাল । ফিটকিরি খালটির ইজারাদার ।অশক্তপোক্ত চেহারা , চুল দাড়ি মায় ভুরুগুলো পর্যন্ত পাকা । কালো রঙের বিপরীতে ফটফটে সাদা চুল, দাড়ি, গোঁফ , ভুরু -মনে হতো স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে অল্টু স্যারের চকখড়ির আঁকিবুকি ।

    ছেলেছোকড়ারা স্কুল পালিয়ে চুরি করে মাছ ধরতে আসতো খালে ।অফিটকিরি টের পেলেই প্রাণ নিয়ে দৌড় ।অকতো বাহারী চিকন চিকন ছিপ , বাঁশ কেটে যত্ন করে বানানো , সাথে জোড়া বড়শি ।অমেথি আর রসগোল্লার রস মিশিযে তৈরী হতো চার ।অচারের গন্ধে ছুটে আসতো জামাই ভাজা পুঁটিমাছ -পেটের কাছে লম্বা লাল দাগ ।

    খালের পশ্চিম পাড়ে ঘন জঙ্গল । জিগনি , বাবলা গাছের ফাঁকে ফাঁকে আশশ্যাওড়া , কুকুর শুকা ,ভাট আর আকন্দের ঝোপ ।অহঠাৎ কোথাও থেকে বেরিয়ে আসতো নির্বিষ ঢোড়া অথবা হলদে কালোয় মেশানো সরু সরু হেলে সাপ ।

    খুব বড়ো কালো প্রজাপতি আর হেলিকপ্টারের মতো দেখতে অজস্র ফড়িং দুপুরের ঝিমধরা রোদে উড়াউড়ি করতো ।

    খালপাড়েই লালুদের বাড়ি । তারপর কোরবান মিয়ার জমি ছাড়ালেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাচিল ,তখন নাম ছিলো ওয়াপদা । অ্যাসবেস্টসের তৈরী চম্‌ৎকার বাড়িগুলোকে খেলনা বাড়ির মতো দেখতে । শীতের বিকেলে এক্সিকউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের বাসার সামনে ব্যাডমিন্টন খেলা হতো । ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের শালী শিখা নাচের ছন্দে কর্ক ছুড়ে দিতো । তার খিলখিল হাসিতে তরুনদের বুক ভেঙে যেতো ।অহাভাতে ঘরের ছেলেপেলে -এরকম সাদা ,নরম পরির মতো মেয়ে কখনো দেখেনি !

    শিখা একবার মুখে কুমকুম,চন্দন কিসব মেখে স্কুলের ফাংশনে নেচেছিল - ওগো বধু সুন্দরী , তুমি মধু মঞ্জরী …।অএতো গুণ আর এতো রূপ একসাথে !

    দূর থেকে দেখাও কম কথা নয় ।আর্ধভূক্ত কখনো অভূক্ত পেটে সারাদিন ফ্যা ফ্যা করে ঘোরা , বাড়ি ফিরলেই মা বাবার গালাগালি ; এর মধ্যেও শিখাকে দেখলে অনেকেই ক্ষুধা-তৃষ্ণার কথা ভুলে কেমন একটা ঘোরের মধ্যে দিন কাটাতো ।

    যুদ্ধশেষে অজিতরা ফিরে এলো শরণার্থী শিবির থেকে ।অসাথে নিয়ে এলো জয়বাংলা রোগ আর হিন্দি ছবির গান । শিবিরের অস্বাশ্যকর পরিবেশে প্রায় সবারই চোখ ওঠা আর খোসপাচড়া রোগ হতো -লোকে ঠাট্টা করে বলতো জয়বাংলা রোগ ।অপুড়িয়ে দেয়া ঘরদোর কোনরকমে মেরামত করে অজিতদের পরিবার নতুন করে সবকিছু শুরু করলো ।অবড়দা নেপাল বিএ পাশ ।অচাকরি টাকরি না পেয়ে পানের দোকান দিলো স্টেশন রোডে । লজ্জা করলেতো পেট চলবেনা । তো এইসব অভাব- কষ্টের মধ্যেই অজিত সদ্য দেখা হিন্দি ছবির গান ধরতো -‘ রেখা ও রেখা , জিসকেআ তুম দেখা ।’ অথবা - ‘চল চল চল মেরা সাথী , ও মেরা হাতি।’

    মোফাজ্জেল মিয়ার বাসার সামনে এলে অজিতের গলার স্বর একটু উঁচুতে ।অলক্ষ্য -মোফাজ্জেল সাহেবের ছোট মেয়ে মিলি । কখনো কখনো জানালাটা খুলে যেতো । পানপাতার মতো কিশোরী একটা মুখ সহসা উঁকি দিয়েই সরে যেতো ।

    মুক্তিযোদ্ধারাও ফিরে আসছিলো দলে দলে ।অকাঁধে এস.এল.আর , এস.এম.জি ,ব্যাটাগান আর সাবেকী থ্রি নট থ্রি ।অকেউ কেউ সাথে করে নিয়ে এসেছিলো টু ইঞ্চ অথবা থ্রি ইঞ্চ মর্টারের তাজা শেল , মাইন , পিকে জেল । মাইনগুলো দেখতে অনেকটা কেরোসিন স্টোভের মতো ; হলদে মাখনের মতো দেখতে পিকে জেল ।অডেটোনেটরের সাথে লম্বা তার লাগিয়ে বিস্ফোরন ঘটানো হতো ।

    লোকজনের মুখে মুখে তখন যুদ্ধের গল্প ।অথানা দখলের আগে কিভাবে রেলব্রীজ উড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো , কিভাবে অকুতোভয় পান্নাভাই গুলি করতে করতে এগিয়ে গিয়েছিলো ,আর পাকবাহিনীর বুলেটে তার মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিলো -সারাদিন এইসব গল্প । যারা যুদ্ধে যায়নি তারাও কল্পনায় একেকজন বীর হয়ে উঠতো , “ আমার এট্টু শ্বাসের দোষ , তানাহলি আমুও শালাগের দ্যাকায় দিতাম বাঙালির সাতে লাগতি গেলি কি হয় ! ”

    অজিতদের বাড়ির সামনের রাস্তার নাম রাখা হলো শহীদ স্মৃতি সড়ক ,সবখানে বাংলা নাম । নানা জায়গায় প্যান্ডেল বানিয়ে ,হ্যাজাগ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান । শোনা যেতো -সালাম সালাম , হাজার সালাম ,সকল শহীদ স্মরণে …

    দিনগুলো যেন খুব দ্রুত কেটে যেতে লাগলো ।অযতো দিন যাচ্ছিলো -মনে হচ্ছিলো লোকজন আস্তে আস্তে ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে ।আভাবের তাড়নায় কেউ আর আগের মতো উৎসাহ নিয়ে যুদ্ধদিনের গল্প শুনতে চাইতো না ।অমুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই আবার পুরনো দিনের মতো বেকার ।আস্ত্র জমা দেয়ার পর তারা যেন আগের চেয়েও সাধারণ হয়ে পড়েছে । গালে খোচা খোচা দাড়ি , চোখের কোণে কালি - আগের সেই স্বপ্নহীন , হতভাগ্য চেহারা ! যাত্রাপালার শেষে রাজার পোষাক খুলে নিলে যেভাবে নিতাইকে সেই নিতাই ময়রাই মনে হতো - ঠিক সেরকম ।

    পরিবারের লোক ,প্রতিবেশী , যে কেউ তখন উপদেষ্টা - “ থূ দিনি তুমার যুদ্ধির কতা , খাবানে কি , পরবানে কি , ভাইবে দেইকোছো ? ”

    বাজারে হঠাৎ করে চাল ডাল ,তেল নুনের অভাব । কি এক ভোজবাজীতে সবকিছু যেন উধাও ।অআর অনেক কষ্টে কিছু পাওয়া গেলেও দাম নাগালের বাইরে ।

    ন্যায্যমূল্যের দোকানের সামনে বিরাট লাইন ।অসেখানে যে চাল দেয় তাতে বিকট দুর্গন্ধ আর কাঁকরে ভরা ।অনিম্নমানের শাড়ি লুঙ্গি এতৈ স্বচ্ছ -লোকে নাম দিয়েছে ল্যাংটাসুন্দর লুঙ্গি আর উলঙ্গবাহার শাড়ি ।

    পিস কমিটির লোক আর রাজাকাররা কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলো । পরিশিতি বুঝে আস্তে আস্তে ফিরে আসছে ।অমানুষজন নিস্পৃহ দৃষ্টিতে ওদের দেখে ।অচোখের ক্রোধ ক্রমশ যেন নিভে এসেছে ।অএতো দ্রুত সব নিভে যেতে পারে , ভাবাই যায়নি ! এরিমধ্যে রাজাকাদের কেউ কেউ নেতাদের ছেলেমেয়েদের সাথে নিজেদের ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়ে আত্মীয় হয়ে বসেছে ।

    পাশাপাশি গজিয়ে উঠেছে সিক্সটিনথ ডিভিশন ।অএরা যুদ্ধ করেনি ।১৬ ডিসেম্বরের পর রাজাকাদের অস্ত্র নিয়ে জমা দিয়েছে মিলিশিয়া ক্যাম্পে । অস্ত্র জমা দিয়েই প্রত্যেকে পেয়ে গেছে স্লিপ ।অএরাই এখন শুরু করেছে ডাকাতি,লুটপাট ।অমাড়োয়াড়িদের বিশাল বিশাল বাড়ি দখল করে মচ্ছব করছে । বদনাম হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের ।

    দালালেরা সুযোগ পেয়ে বলা শুরু করেছে -“ কিসির বালের স্বাধীনতা , পাকিস্তানই ভালো ছেলো । ”

    দাদের মলম বিক্রেতা অথবা ট্রেনের কামরায় হাতকাটা মহাশংকর তেলের ক্যানভাসার গোপনে দু’দশ টাকা পাচ্ছে । মজমার আগে হেড়ে গলায় ইন্দিরা গান্ধিকে নিয়ে জুড়ে দিচ্ছে আদিরসাত্মক গান ।

    এদিকে অজিতদের তখন দুবেলা খাওয়াই জুটছেনা ঠিকমতো ।অএকবেলা ছোলার ধাপড়া তো আরেকবেলা মিষ্টি আলু সেদ্ধ । ভাত যেন স্বর্গীয় সাদা সারস ! অজিতের মা মাঝে মাঝেই বলে ওঠেন -“ওরে , তুরা আমারে ইন্ডিয়ারতে নিয়ে আসলি ক্যান ?ক্যাম্পেতো এরচে খারাপ ছেলাম না !”

    অজিতের বড়দার মুখ খুব খারাপ । পানের দোকানে বসে সারাদিন একে তাকে গালাগাল করে মনের ঝাল মেটায় ।

    নেতাদের কাজকর্মে লোকজনের মতো সেও বিরক্ত । শোনা যায় নতুন এক দল তৈরী হয়েছে ।অতারা নাকি সমাজতন্ত্র কায়েম করবে ।অনেপাল লোকজনকে বোঝায় -‘বুইঝলে , সেকেনে সবাই সুমান । কেউ একলা একলা মজা মারবে , আর আমরা খাইটে মরবো- সেসব চুদুরবুদুর ওকেনে চলবেনানে ।”

    অনেকেই গোপনে গোপনে দলের খোঁজ নিচ্ছে ।অএদিকে পরিশিতি সামলাতে গঠন করা হয়েছে বিশেষ বাহিনী ।অমোসলেম ডাক্তারের বাড়ির সামনে ক্যাম্প বসলো ।অসেখান থেকে প্রায়ই মানুষের চিৎকারের আওয়াজ পাওয়া যেতে থাকে ।অযুদ্ধের দিনের মতো আবারো এখানে সেখানে ফুটফাট গোলাগুলির আওয়াজ ।আনেকেই আবার আগের মতো আত্মগোপনে চলে গেলো । সাধারণ লোকজন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেআ না -“একি খিজালত বোলো দিনি , দেশে হচ্চেডা কি ? যুইধ্য কি আর শেষ হবেনানে ? ”

    এইসব অশান্তির মধ্যেই সৈয়দপুর আর খুলনা থেকে আসে বিহারী মুন্না কাওয়াল আর পিয়ারু কাওয়াল ।অকয়েকদিন লোকজন ওদের নিয়ে মেতে ওঠে ।অগলায় দুজনেরই খুব কালোয়াতি ।অওস্তাদী গলায় মুন্না কাওয়াল রুপোর রাংতায় মোড়া হারমোনিয়াম বাজাতে বাজাতে গেয়ে ওঠে -“ শোনো চান্দা শোনো তারা , আ রাহা হ্যায় রবকা পেয়ারা - আজ খুশিয়া মানাও

    ……” কয়েকজন শীর্ণকায় যুবক বেলবটম পরে কাওয়ালির সাথে টুইস্ট নাচ নাচে ।অকেউ কেউ ধেনো মদ অথবা গানের নেশায় কেয়া বাত ,কেয়া বাত বলতে বলতে টাকার মালা নিয়ে মুন্না কাওয়ালের গলায় পরায় ।

    পিয়ারুর গলা আরো মিষ্টি ।অভাঙা ভাঙা গলায় অদ্ভুত মাদকতা । পানের পিক ফেলে শুরু করে -দমাদম মাস্ত কলন্দর । শ্রোতারা সামূদ্রিক ঝড়ের মতো -অভিশপ্ত বন্যার মতো উন্মত্ত হয়ে ওঠে ।অআবারো টাকার মালা আর হিজড়ে নাচ ।

    মাঝে মাঝে স্কুলের মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট হয় ।অপাবনার গোলকীপারকে হায়ার করে আনে সবুজ সংঘ ।অমার্কামারা দাঙ্গাবাজ জার্মান, বল্টু আর আক্কাসরা কাঠের শক্ত বাটওয়ালা ছাতা নিয়ে রেডি হয় । কি কারনে কখন যে গন্ডগোল শুরু হয় কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারেনা ।অশুধু দেখা যায় হঠাৎ করে লোকজনের পিঠে গোটানো ছাতার বাটের আঘাত পড়ছে । কে কার প্রতিপক্ষ ভালো করে বোঝার আগেই লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে প্রাণপণে ছুটতে থাকে ।

    দিন যায় ।আভাবের মধ্যে নানা ঘটনাবহুল দিন । এর মধ্যে একদিন শোনা যায় , ফিটকিরির খালে কার যেন লাশ ভেসে উঠেছে ।অসারা শহরের লোক ভেঙ্গে পড়ে খালের পাড়ে ,কিন্তু ভয়ে কেউ কাছে যেতে সাহস পায়না ।অকার লাশ - নিজেদের কারো নয়তো ?

    রবি ডোম এসে লাশটাকে ডাঙায় তুললে স্পষ্ট চেনা যায় নেপালের মুখ ।অঠোঁটের একপাশে পরিচিত কাটা দাগ ।অনেপাল , অজিতের মা খবর পেয়ে ছুটে আসে ।অবুক চাপড়ে বিলাপ করতে করতে বলে- “ কিসির জন্যি ফিইরে আলাম ,ও বাপ ,কিসির জন্যি ? ”
  • Biplob Rahman | 117.18.231.11 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৫৬484120
  • নাহ...মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীর অংশগ্রহণের বিষয়টি একেবারেই আসছে না। ১৯৭১-৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে গণহত্যা চলেছিল, তা-ও ইতিহাসের পৃষ্ঠা থেকে বিলীন প্রায়।...

    যতদূর মনে পড়ে, শেষোক্ত বিষয়ে গুরুচণ্ডালির ফেসবুক গ্রুপে হৃদকমল একটি আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন এবং এই চণ্ডাল তাতে অংশ নিয়েছিল।

    তবে সে সময় অ্যাপলো গং জাতীয়বাদী শক্তির কুৎসিত ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং ত্‌ৎসংলগ্ন ইতরপনার কারণে আলোচনাটিতে চণ্ডাল আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।...

    যাইহোক। এ পর্যায়ে 'মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী' নামে নতুন একটি টই খোলা হলো। সবাইকে সেখানে অংশ নেওয়ার বিনীত অনুরোধ।

    জ্জয় গুরু!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন