নিলয় সেইদিন আমাদের আইসা বলে যে বিজনপুর নামে একটা জায়গা আছে এবং সেখানে অতি অদ্ভুত একটি ঘটনা ঘটে গেছে, একটি মেয়ে আচানক মাছে পরিণত হইছে। তাও পুরা মাছ না, অর্ধেক মাছ।
আমাদের জীবন সমান্তরালে বইতে থাকা নদীর প্রবাহ বিশেষ, এতে কোন বিরাট ঢেউ কিংবা উথাল পাতাল পরিবর্তন নাই। আমি, নিলয়, ও আরমান। আমরা কাজ করি, খাই, একসাথে আড্ডা দেই।
নিলয়ের কথাটি আমাদের আগ্রহ জাগাইয়া তুলে। যদিও আমরা আমাদের যুক্তিবাদী মন ও স্নাতক পর্যন্ত পড়ালেখার বরাতে জানি এই ধরনের ঘটনা ঘটা সম্ভব না। কোন মানুষ মাছ হইতে পারে না, ... ...
অন্ধকার রাতে পাঁচিল টপকে কারো বাসায় অনধিকার প্রবেশ ভালো কথা নয়। হীন কোন উদ্দেশ্য থাকলে তো নয়ই। জয়ন্তবাবুর উদ্দেশ্যটা কী, তা বলা যাচ্ছে না, এমনকী তার নিজেরও এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। যে তীব্র মনোবেদনা, অভিমান, লাঞ্ছনা গঞ্জনার সার তার হৃদয়ের গহীনে জমে আছে পলির মত, সেগুলোই যে তাকে এখানে টেনে এনেছে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু তিনি কী উদ্দেশ্যে এসেছেন, কী করবেন বা করতে যাচ্ছেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। স্মৃতিশক্তি যতদূর যায়, যতদূর স্মৃতির দূরবীনে চোখ রেখে ফেলে আসা দিনগুলিকে দেখা যায়, তার ... ...
সেই সময়ের গল্পটা আপনাদের আজ বলা প্রয়োজন, কারণ আজ হয়ত সেই সময়ের চেয়ে পূর্বের বা পরের একটা সময়, যখন আপনি এই গল্পটা পড়ছেন, এটিকে আপনার ভুল বুঝার যথেষ্ট অবকাশ আছে, কারণ লিখিত বক্তব্য লিখিতই এবং তা যেসব বক্তব্য তৈরি করে ক্ষেত্রবিশেষে তা এতই স্বাধীন হয়ে যায় যে সৃষ্টিকর্তার প্রয়োগ করা অর্থের বাইরে গিয়ে নিজে নিজেই নানা অর্থ তৈরি করে, নানা বিভ্রান্তি ছড়ায়;
আমার আশঙ্কা হচ্ছে গল্পটি হয়ত আপনাদের কাছে বিশ্বসযোগ্য মনে হবে না, হয়ত আপনারা মনে করবেন এটা কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ন কষ্টকল্পনা বা অন্য কিছ ... ...
নগরকাকের গল্প
১
শামসোজ্জোহা বাসায় এসেই খবর পেয়েছে তার স্ত্রী ও কন্যা একসাথে কাক হয়ে উড়ে গেছে। এটি কোন ভালো খবর না। খারাপ খবর। খারাপ খবরে শামসোজ্জোহার মন খারাপ হল। সে একহাতে জ্বলন্ত সিগারেট রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল কী করা যায়।
দূরে শাহজালাল(র) এর দরগার মসজিদের উচু মিনারে নিচের রাস্তার দিকে তাকিয়ে বসেছিল এক নগরকাক। তারও মন খারাপ । তার মন খারাপের কারণ জানতে যেতে হবে একটু দূর...কিছু আগের ঘটনায়......
শহরের কাকদের তখন ... ...
প্রথম অধ্যায়
টিটো মিয়া মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, “স্যার আমি বাড়িত যাইতে চাই। জরুরী খবর আসছে।”
রহমান সাহেব মনযোগের সাথে তার পড়ার টেবিলে ঝুঁকে কিছু একটা পড়ছিলেন। তিনি মাথা না তুলেই জিজ্ঞেস করলেন, “কবে?”
“আইজই স্যার। এক্ষনি যাইতে হবে।”
রহমান সাহেব এবার তাকালেন টিটো মিয়ার দিকে। ভালো বাবুর্চী হিসেবে তার নাম এলাকাতে ছড়িয়ে পড়েছে। আশপাশের কয়েক বাড়িতে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে রান্নার ডাকও পড়েছিল।
রহমান সাহেব বললেন, “টাকা পয়সা কিছু লাগবে?”
দেশের যা অবস্থা, ইয়াং জেনারেশনের সংখ্যা বাড়তেছে, চাকরি নাই, বাকরি নাই ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে আমরা প্রায়ই হতাশ হওয়ার কাছাকাছি পৌছে যেতাম। আমাদের কথাবার্তায় আগে যেখানে নানা ধরনের হাস্যরসাত্মক ফালতু বিষয়বস্তু এসে ভীড় করত তখন সেই জায়গায় এর পরিবর্তে আসতে লাগল জীবন ভাবনা, এই জীবন লইয়া আমরা কী করিব সিসিফাস?
আমরা মনাফ হাজীর চায়ের দোকানে বসে ভাবতাম আসলে কী করা যায়। আমরা কি চাকরি করব? প্রাইভেট চাকরি যেগুলা আছে তা খুব ভালো না এমন মত দিল হাসনাত। তার হিসাবে প্রাইভেট ব্যাংক ট্যাংকের চাকরির বেইল নাই। চা ... ...
“আপনি কি স্বাধীনতা কী বুঝেন?” ভদ্রলোক আমার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটি করলেন। আমি বললাম, “বুঝব না কেন? স্বাধীনতা হচ্ছে নিজের মত থাকার বা কিছু করতে পারার সুযোগ।” ভদ্রলোক সামান্য হেসে ফেললেন। তিনি তার মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা কাঁচাপাকা দাড়ি হালকা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, “আপনার স্বাধীনতা সম্পর্কে প্রাইমারী লেভেলের জ্ঞাণও নাই। কিন্তু আমি এতে অবাক হই নাই। এখনকার মানুষদের স্বাধীনতা নিয়ে জ্ঞাণ থাকবে না এটা স্বাভাবিক। খুব স্বাভাবিক। আপনারা হাজার হাজার মেকী স্বাধীনতা দেখে বড় হয়েছেন। হাজার ... ...
রোদ পড়ে গেছে। সূর্য এখন আস্তে আস্তে রঙ বদলাবে। তারপর মিলিয়ে যাবে। কাঠবিড়ালিদের সূর্য চন্দ্র ইত্যাদি নিয়ে বোধহয় কোনও আদিখ্যেতা নেই। মানুষের আছে। তেরাব আলী বারান্দায় বসে ভাবেন। ইদানীং তাঁর হাতে নতুন কাজ আসছে না। কাজ না থাকলে তার হাঁসফাঁস লাগে। তখন তিনি কবিতা লেখেন। অথবা গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে বসে থাকেন বেশিরভাগ সময়।
এসময় কাঠবিড়ালিরা তাঁর চিন্তার অধিকাংশ জুড়ে থাকে। তিনি কাঠবিড়ালি সম্প্রদায়ের সাথে মানুষের মিল খুঁজেন। বেশিরভাগ সময়ে হতাশ হন। তাঁর বারান্দার পাশের লম্বা গাছটিতে ... ...
শুভাশিষ দেব তার বাবার মৃত্যুর প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর এক বিকেলে পিতার মৃত্যুশয্যায় বলে যাওয়া কথাটির অর্থ বুঝতে পারলেন। তিনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে একটি হাসির গল্পের বই পড়ছিলেন এবং এই বই পড়তে পড়তেই হঠাৎ তার কেন যেন পিতার বলে যাওয়া শেষ কথাটি মনে পড়ল। আর সাথে সাথেই প্রায় বিদ্যুৎ চমকের মত তার মনে চমকে উঠল এই কথাটির মর্মার্থ। আশ্চর্য! তিনি এতদিন কথাটি এভাবে ভেবে দেখেন নি। শুভাশিষ দেবের শরীর ঘামতে শুরু করল। অসহ্য ভয় এবং অতি তীক্ষ্ণ বেদনা একরাশ পাশবিক হৃদয় নিংড়ানো ঘৃণার মোড়কে আবদ্ধ হয়ে শুভাশিষ দেবের উপর ... ...
আবু তুরাব বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে কারণ এইমাত্র সে একটা ব্যাখ্যা পেয়েছে কেনো সে তার স্ত্রীকে খোঁজে পাচ্ছে না। যদিও ব্যাখ্যাটা তার কাছেই মনে হচ্ছে অযৌক্তিক কিন্তু অবস্থার প্রেক্ষিতে এবং যেহেতু আর কোন ব্যাখ্যা সে পায় নি তাই এটাই তার মস্তিষ্কে গৃহীত হয়েছে। আবু তুরাব কিছুক্ষণ তার শোবার ঘরের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে সবুজ ব্যাঙটাকে দেখল। ব্যাঙটি বিছানায় বসে স্থির ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
বসার কক্ষে মোবাইল ফোন বাজছে। আবু তুরাব গিয়ে ফোন রিসিভ করল। তার মা ফোন করেছেন।
উদ্বিগ্ন কন্ঠে মা জিজ্ঞ ... ...