অনেকদূরের ইতিহাসের গল্প যেন ঝাপসা পর্দার ওপারের অপসৃয়মাণ ছবির মতন, এই কেউ একটু পর্দাটা তুলে ধরলো আর অমনি হাজার-হাজার ঝালর, চৌকি, পাইক-বরকন্দাজ, রাজারাণীর এক অদ্ভুত জগতের একটা টুকরো ঠিক চোখের সামনে। তখন মনে হবে যেন আসলেতে কিছুই অতীত নয়, সময় যেন বিশাল একটা মানচিত্র, এই মুহূর্তটুকু যেন তাতে একটা নিকোনো ঠাকুরদালান, নাটক হবে বলে সেজেগুজে উঠেছে সকাল থেকে। সেই বিস্তীর্ণ রঙ্গমঞ্চে আজকের নাটকঃ ক্যারেনসেবিসের যুদ্ধ। ... ...
শহরের বাইরে দাঁড়িয়ে শহরের দিকে তাকালে একটা অদ্ভুত আভা দেখা যায় রাত্রের দিকে, সেটা গাঢ় হয় ক্রমশঃ তারপর একসময় কেউ যেন ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেয় একটা বিশাল মোমবাতি ...যাদের ঘুম নেই তারা বোঝে রাত গভীর হলো, এবং এই বিশাল অন্ধকারের নীচে তারা এই মুহুর্তে বোধহয় সম্পূর্ণ একা ... অথচ এক একটা রাত্রে জেগে থাকে একটা দূরের বারান্দা, আর এক এক রাত্রে কেউ জিগ্যেস করে ফেলে, "জেগে আছিস? একটা ফোন কর না !" ... ...
এই অঞ্চলের গ্রীষ্মকালের রাতগুলি বাষ্পহীন, মেঘহীন এবং নিঃশব্দ। সামনের একটা মাঠ ছাড়া চোখের সীমানায় কোথাও আলোর কোনো উৎস নেই, খালি দূরে হাইওয়ে যেন জ্বলন্ত আংরার শেষ আভাটুকু হয়ে ফুটে থাকে। এই রাত্রের অন্ধকারের মধ্যে মিশে বসে থাকি রোজ, মাথার উপরে তাকিয়ে খুঁজতে থাকি বাল্যবন্ধুর মতো চেনা তারামন্ডল - লুব্ধক চিনতে পারি, চিনতে পারি কালপুরুষের কোমরবন্ধনী, জিজ্ঞাসাচিহ্নের মত হাতড়ে হাতড়ে খুঁজি সপ্তর্ষিদের -- পুলহ, পুলস্ত্য, অত্রি, অঙ্গিরা ... আর? নামগুলো মনে পড়ে না আর, শুধু মনে পড়ে আগের জন্মের শহরে ফেলে আসা একটা অলৌকিক ছাদ আর সে ছাদের কোণায় কোণায় জমে থাকা ধুলোর মত ময়লা একটুকরো ছেলেবেলার গল্প ... ... ...
"তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে ?
আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে ..."
সেই অক্ষরগুলোকে ধরার আরেকটা অক্ষম চেষ্টা, আমার নতুন লেখায় ... এক বন্ধু অনেকদিন আগে বলেছিলো, 'আঙ্গুলের গভীর বন্দর থেকে যে নৌকোগুলো ছাড়ে সেগুলো ঠিক-ই গন্তব্যে পৌঁছে যায়' .. সেই বন্দরের দিকে তাকিয়েই ভাসিয়ে দিলাম এই লেখাটাও !
(বিধিসম্মত সতর্কীকরণঃ এই গল্পের সমস্ত ঘটনা কাল্পনিক, মনগড়া, আজগুবি এটসেটেরা। আসলে বাংলা মিডিয়ামের ছেলেরা আদৌ আমার মতন ল্যাদাভ্যারুস না, বরং অনেক স্মার্ট হয় ! কাউকে কাউ ... ...
(ভূমিকাঃ এইটা অনেকদিন আগের লেখা - আসলে লেখা নয়, এসব বন্ধুদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য বানানো একটা মিউজিয়াম, বছর কুড়ি-পঁচিশ আগের উত্তর কলকাতার একটা ইস্কুলের গল্প - গুরু-তে দেবো ভাবিনি, কিন্তু কাল রাত্তিরে কী করে যেন অনেক পুরোনো একটা টই চোখে পড়লো, সে-ও এই এক-ই স্কুলের আরো পুরোনো গল্প, তবে সেসব আখ্যান ভয়ের, লজ্জার, এবং ভয়ানক কষ্টের - পড়ে মনে হলো এই অন্ধকার ক্লাসরুমে দু-একটা ঘুলঘুলি হলে মন্দ হয় না, তাই ... )
বরানগরের আসল নাম কি এবং কোত্থেকে এসেছে এই নিয়ে তর্কের শ্যাষ নাই, মাঝে মাঝে ফেসবুকে দেখ ... ...
কাল উমর খালিদের ঘটনার পর টুইটারে ঢুকেছিলাম, বোধকরি অন্য কিছু কাজে ... টাইমলাইনে কারুর একটা টুইট চোখে পড়লো, সাদামাটা বক্তব্য, "ভয় পেয়ো না, আমরা তোমার পাশে আছি" - গোছের, সেটা খুললাম আর চোখে পড়লো তলায় শয়ে শয়ে কমেন্ট, না সমবেদনা নয়, আশ্বাস নয়, বরং উৎকট, হিংস্র আস্ফালন ! যাঁরা টুইটার দেখেন নিয়মিত, তাদের কাছে এগুলো নতুন কিছু নয়, বরং এখন এতোটাই গা-সওয়া হয়ে গেছে যে খুব সহজে উপেক্ষা করে চলে যাওয়া যায় ব্যাস্ত ট্রাফিকের মাঝে পড়ে থাকা পথচারীর মতো ... তবুও এক একদিন একটু বেশী ভয় করে, একটু বেশী আতঙ্ক হয় ! ... ...