বাবা আমার নাম রেখেছিল কুন্দনন্দিনী, বিষবৃক্ষের নায়িকা। কিন্তু আমার বয়ে গেছে অমন ন্যাকাবোকা মেয়ে হতে। আমি একেবারে রোহিণী, হ্যাঁ, ‘কৃষ্ণকান্তের উইলে’র রোহিণী। আমি যা চাই তা আদায় করে নিতে পিছপা হই না।আমি দিদির মত অত ভাবের ঘোরে থাকি না। বেশি সংস্কৃত সাহিত্য আর বৈষ্ণব পদাবলী পড়লে অমন হয়। দিদির ওই ‘মথুরা নগরে প্রতি ঘরে ঘরে যাইব যোগিনী হইয়ে’ ভাব আমার পোষায় না। আসলে ওই যারা অমন ‘ধরি ধরি মনে করি ধরতে গেলে আর পেলাম না’ ভাবে থাকে তারা হয় নিজেকে ঠকায়, নয় হিপোক্রিট। ... ...
দলগঞ্জন সিং কোসলে বা ডি এস কোসলে রিটায়ার হওয়ার আগে বিলাসপুর জেলার ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের বড়কর্তা ছিলেন। র্যাঙ্ক ছিল ডেপুটি সুপারিন্ডেন্ট অফ পুলিস, সংক্ষেপে ডিএসপি। উনি আইপিএস ন’ন; খেটেখুটে সারাজীবন পরিশ্রম করে রিটায়ার হবার তিনবছর আগে ডিএসপি র্যাংক পান। চাকরি আরম্ভ হয়েছিল অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর হয়ে। কোসলে রিটায়ার করেছেন বছর পাঁচ, কিন্তু এখনও ‘ডিএসপি স্যার’ সম্বোধন শুনতে ভালবাসেন। ... ...
একমাস আগের কথা।তারিখটা স্পষ্ট মনে আছে - মার্চের ২৬। সেদিন ঠিক বেলা একটার সময় আমার কাছে একটা ফোন এসেছিল।- ওয়াচ অ্যান্ড সিকিউরিটিজ? বিলাসপুর, লিংক রোড?-জী হ্যাঁ, বোল রহা হুঁ। - মিঃ কোসলে? ডায়রেক্টর?- না, আমি ওঁর অ্যাসিসট্যান্ট বিশ্বাস বলছি।উনি একটা কাজে একটু বাইরে গেহেন। কাল রাত্তিরে ফিরবেন।-- সৌরভ? সৌরভ বিশ্বাস? বাবুমোশায়? জাস্ট দ্য ম্যান আই ওয়ান্ট!--জী হ্যাঁ, আপ কৌন?-- কাজের কথাটা আগে শুনে নিন। আগামীকাল আপনাকে ইন্দোর এক্সপ্রেসে বুড়ার যেতে হবে। বুড়ার হোল জবলপুর লাইনে শাহডোলের আগের স্টেশন। পরশুদিন বিকেলে একই ট্রেনে করে ফেরতের ব্যবস্থা। টিকিট, অন্য খরচা এবং কিছু অ্যাডভান্স একটু পরে আজ রাত্তির আটটার মধ্যে আপনাদের ... ...
দুর্গোপূজো শেষ, বিজয়াদশমীর বিসর্জন সবে শুরু। বিকেল পাঁচটা নাগাদ অন্ধকার ঘনিয়ে আসার সময় দূর থেকে কোথাও অবাঙালী পাড়ায় রাবণ জ্বলছে, বাজি পুড়ছে। তার দূরাগত গুরুগুরু ধ্বনি মিলিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ঘড়ি ধরে দরজায় কড়া নড়ে উঠত। বাচ্চারা টের পেতাম ঢাকুরিয়া থেকে দুই জোড়া পিসিমা-পিসেমশায়রা এসেছেন! যাঁদের পদবি ছিল মজুমদার, বাঙাল উচ্চারণে মন্দার!দরজা খুলতেই ধোপদুরস্ত ধুতিপাঞ্জাবি পরা বিপুলবপু... ... ...
এখন পর্য্যন্ত যা নমুনা দেখা গেছে তাতে মনে হচ্ছে ছোটে পালোয়ানের বংশটি বেশ খানদানি। ওর প্রপিতামহের নাম পর্য্যন্ত মনে আছে! আর সমস্ত খানদানি বংশের ছেলেদের মত ও নিজের পরিবারের গৌরবগাথা শোনাতে ভালবাসে। কখনও কখনও কুস্তির আখড়ায় সাথিদের কিসসা শোনাতে থাকেঃ ... ...
কৈশোরে গড়ের মাঠে (তখন মনুমেন্ট ময়দান নয়, গড়ের মাঠই বলা হত) ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়ে মাউন্টেড পুলিশের তাড়া খেয়ে (ঘোড়সওয়ার পুলিশ) গ্যালারিতে বসার পর টের পেলাম — এটা ঘটিদের, থুড়ি মোহনবাগান সাপোর্টারদের এলাকা। মুখে কুলুপ এঁটে ওদের কথোপকথন শুনতে গিয়ে জানলাম — খেলার মাঠে বাঙালদের কোড নেম ‘জার্মান’! কেন? কে জানে! ... ...
ছাতের কামরার সামনে টিনের শেড, টিনের নীচে রংগনাথ, ওর নীচে খাটিয়া। বেলা দশটা, এখন শুনুন আবহাওয়ার খবর।কাল রাত্তিরে আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল, এখন কেটে গেছে। ঠান্ডা হাওয়া বইছে। বিগত দিনে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছিল, এখন সেসব পরিষ্কার হয়ে যেতেই পৌষের শীতের কামড় টের পাওয়া যাচ্ছে। বাজারের নব্বই প্রতিশত মিষ্টি যেমন দেখতেই ভাল, খেতে নয়, তেমনই রোদ্দূরও পিঠে লাগানোর ছেয়ে দেখেই বেশি আরাম।রোদ চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু দেখলে মনে হচ্ছে শুধু নীমগাছের মাথাতেই আটকে রয়েছে। ... ...
দাদু আমাকে বিদ্যাদিগগজ মহাধনুর্ধর করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে নিজে মুখে মুখে শেখাতে লাগলেনঃ “তিরিশ দিনেতে হয় মাস সেপ্টেম্বর, / সেইরূপ এপ্রিল, জুন আর নভেম্বর। / আটাশ দিনেতে সবে ফেব্রুয়ারি ধরে, / বাড়ে তার একদিন চারিবর্ষ পরে। ... ...
দুজনে তাড়াতাড়ি কাপড় পরে বাইরে বেরোল। কাপড় পরার মানে এ নয় যে বদ্রী চুড়িদার পাজামা ও শেরওয়ানি পরেছে। ঢিলে লুঙিটা কষে বেঁধে খালি গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে নিয়েছে, ব্যস্। রঙ্গনাথের এখনও ওর মত পরমহংস অবস্থা প্রাপ্ত হয়নি, তাই গায়ে একটা পাঞ্জাবি চড়িয়ে নিল।দরজা অব্দি যেতে যেতে ওদের চাল এবং হৃৎস্পন্দন দুইই বেড়ে গেল। এতক্ষণে চারদিকে শোনা যাচ্ছে - চোর! চোর! চোর! ... ...
বোম্বা্ই মেলে চড়ে বসেছি। গন্তব্য –– পুণে শহরের কলেজ অফ এগ্রিকালচারাল ব্যাংকিং। মাথায় নানান চিন্তা; অচেনা জায়গার অস্বস্তি, ঘরে ছেড়ে আসা বৌ–বাচ্চার ভাবনা, চিন্তার কি আর শেষ আছে? হাতের পেপারব্যাকে মন বসছে না।হঠাৎ চোখ গেল কয় জোড়া বিদেশি দম্পতির দিকে – কটা রং, বেড়ালচোখো, নীলচোখো,তামাটেচুলো, কিন্তু সবাই খুব ফরসা। লালচে, ফ্যাটফেটে, হলদেটে –– নানান কিসিমের। ... ...