এই সিঁড়ি তৈরির সময় না জানা গেলেও ওই শিলালিপি থেকে এটা জানা যায় যে কোপানের তেরো-তম রাজা তার পূর্বসূরী স্টেলা (৬৩) কে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানাতে এই সিঁড়ি নির্মাণ করেছিলেন। হায়ারোগ্লিফিক সিঁড়িটি একুশ মিটার (৬৯ ফুট) দীর্ঘ, দশ মিটার (৩৩ ফুট) চওড়া এবং এতে মোট বাষট্টিটি ধাপ রয়েছে আর প্রতি ১২তম ধাপের কেন্দ্রে একটি বড় ভাস্কর্যযুক্ত চিত্র রয়েছে। আরেকজন প্রধান মায়া দেবতার নাম কুকুলকান। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্পদেবী মনসার সঙ্গে এই দেবতার বেশ মিল রয়েছে। কুকুলকান হলো মায়ানদের সর্পদেবতা, তার বাবা হলেন সর্পদের রাজা। কুকুলকান মূলত ডানাওয়ালা এক সরীসৃপ, যাকে মায়ারা শ্রদ্ধাভরে পূজা করতো। এই পূজার জন্য নবম ও দশম শতকের মাঝামাঝিতে তারা তৈরি করেছিল ১০০ ফুট উচ্চতার একটি পিরামিডসদৃশ উপাসনালয়। চারদিকে ৯১টি করে সিঁড়ির ধাপ, আর একেবারে ওপরে উঠার জন্যে একটি ধাপ, সব মিলিয়ে ৩৬৫টি ধাপ ছিল এই উপাসনালয়ে। ... ...
মনে করুন এমন একটা সিঁড়ি যা মাঝখানটা চারকোনা ফাঁকা। চারধার দিয়ে উঠে গেছে সিঁড়ি। এবারে কুড়ি তলায় সিঁড়ির ধাপ থেকে যদি আপনি নিচে তাকান তাহলে একটু প্যালপিটিশন যে হবে না, সে কে বলতে পারে ? পারেন হিচ্ককের মতো সিনেমার পরিচালকেরা। ঐ সিচুয়েশনটা দিয়েই সৃষ্টি করতে পারেন এক ভয়ার্ত পরিবেশ যা হিচ্কক করেছিলেন ১৯৫৮ তে বিখ্যাত ‘ভার্টিগো’ সিনেমায়। এই সিনেমার প্রধান চরিত্রের একটা বিরল রোগ ছিল। উচ্চতাজনিত রোগ। পরিভাষায় যার নাম এক্রোফোবিয়া। সেই সিনেমাতেও এই সিঁড়ির দৃশ্য অসাধারন সব এঙ্গেলে তোলা হয়েছিল। ... ...
ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে অবশেষে, ইতালিতে একটি প্রধান স্থাপত্য কৌশল বলে সিঁড়ি স্বীকৃত হয়েছিল। ভাসারি তাঁর ‘লাইভ অফ আর্টিস্ট’ (১৫৬৮ সালের সংস্করণ) বইতে নিজে সিঁড়ির জন্য অনুপ্রাণিত হয়ে একটি বাড়ির শরীর হিসেবে সিঁড়িকে "বাহু ও পা" হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এবং ভিনসেঞ্জো স্কামোজি (Vincenzo Scamozzi) (১৫৫২-১৬১৬) লিখেছেন ‘মানুষের শরীরে যেমন শিরা, রক্তনালী, ধমনী প্রভৃতি রক্ত জোগান দেয় ঠিক তেমনি একটা সম্পূর্ণ বাড়ির যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য সিঁড়ি একটা প্রয়োজনীয় স্থাপত্য।’ ... ...
চোদ্দ থেকে সতেরো খ্রীষ্টাব্দ ইউরোপের রেনেসাঁ’র সময়কাল। এই সময়েই প্রাচীন গ্রীক এবং রোমান সংস্কৃতির পুনর্জাগরণের ফলে শিল্পী আর স্থপতিরা মিলে তৈরি করলেন ‘কুইন্টা রে রেজালিরা’। এটি পর্তুগালের সিন্ট্রায়। একে বলা হ’ত ‘অনার সিঁড়ি’। অনেকটা নাট্যশালার মত সিঁড়ি পথে আরোহণের ছবি যেন। ... ...
আজকের ‘মই’-ই ছিল সিঁড়ির শুরু। মানুষ প্রথম যখন বাড়ি বানাতে শিখল তখন থেকেই সেই বাড়ি বা কুটিরগুলো মাটি থেকে একটু উঁচু করেই বানাতো যাতে জন্তুজানোয়ার সহজে না ঘরে ঢুকে পড়ে। এবং সেই বাড়িতে ওঠানামার জন্য মানুষের মাথায় এসেছিল এই মই এর ভাবনা। হয়তো আজ আমরা যে শেপে মই দেখে থাকি তা হয়তো ছিল না। কিন্তু একটা পাদানি তো ছিলই যার ওপরে পা রেখে ওঠা নামা করা হ’ত। এখনো বিশ্বের বিভিন্ন উপজাতিরা এই ভাবেই মই ব্যবহার করে থাকে জন্তুজানোয়ার থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্যেই। ... ...
"ভরা গঙ্গা। আমার চারিটিমাত্র ধাপ জলের উপরে জাগিয়া আছে। জলের সঙ্গে স্থলের সঙ্গে যেন গলাগলি। তীরে আম্রকাননের নীচে যেখানে কচুবন জন্মিয়াছে, যেখান পর্যন্ত গঙ্গার জল গিয়াছে। নদীর ঐ বাঁকের কাছে তিনটে পুরাতন ইঁটের পাঁজা চারি দিকে জলের মধ্যে জাগিয়া রহিয়াছে। জেলেদের যে নৌকাগুলি ডাঙার বাবলাগাছের গুড়ির সঙ্গে বাঁধা ছিল সেগুলি প্রভাতে জোয়ারের জলে ভাসিয়া উঠিয়া টলমল করিতেছে — দুরন্তযৌবন জোয়ারের জল রঙ্গ করিয়া তাহাদের দুই পাশে ছল ছল আঘাত করিতেছে, তাহাদের কর্ণ ধরিয়া মধুর পরিহাসে নাড়া দিয়া যাইতেছে”। চেনা যাচ্ছে ? সিঁড়ির ধাপ নিয়ে কি অসাধারণ বর্ণনা। গল্পগুচ্ছে’র প্রথম গল্প। ঘাটের কথা’। এটি প্রকাশিত হয় ভারতী পত্রিকার কার্তিক ১২৯১ সংখ্যায়। পল্লীগ্রামের একটি সাধারণ মেয়ের সারাটা জীবনকে রবীন্দ্রনাথ কি অসম্ভব নিপুনতায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন। ... ...
স্থাপত্য বিদ্যার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে সিঁড়ি-ই হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্য। মানবতার ইতিহাসেও সিঁড়ির রয়েছে এক কেন্দ্রীয় ভূমিকা। যদিও ঐতিহাসিকভাবে সিঁড়ি-র জন্মদিনের কথা জানা এককথায় অসম্ভব, তাও এই বিষয়ের গবেষকদের ধারণায় যীশু জন্মানোর অন্তত ছ হাজার বছর আগেই মানুষ সিঁড়ি ব্যবহার করেছে। ... ...
(আমার এ রচনা বিভিন্ন সিঁড়ি নিয়েই। হঠাৎ করেই একদিন অন্যমনায় ছিলাম। সে সময়ে মাথার মধ্যে ছোটবেলার আমাদের বাড়ির এক প্রাচীন আমলের সিঁড়ির নানান ঘটনা ভেসে উঠল অতর্কিতেই। ভাবলাম লিখেই ফেলি। এই নিয়ে গুগুল মামার শরণাপন্ন হতেই দেখলাম - ওরে বাবা, এই সিঁড়ি নিয়েই হয়তো একটা বিরাট রচনা নামিয়ে ফেলা যায়। সারা বিশ্বের নানান সিঁড়ি, সেগুলোর ইতিহাস, সবচেয়ে বড় কথা সেই আদিম যুগ থেকে কতই না পরিবর্তন হয়ে আজকের গতিমান লিফট থেকে এস্ক্যালেটর। আমারই চোখে দেখা কত কিছুই। স্মৃতির মননে ছোট বেলা থেকে কলেজ জীবন পেরিয়ে চাকরি জীবন। সব কিছুর সাথেই জড়িয়ে আছে এই সিঁড়ি।) ... ...
লক্ষ্মী হলেন বাঙালির লৌকিক দেবী। আগে আমাদের সমাজে বিশেষ করে গ্রামে দুর্গাপূজা নিয়ে এত মাতামাতি ছিল না। বরং কোজাগরী লক্ষ্মীপূজাই ছিল বড় উৎসব। কোজাগরীর রকমফের ছিল দেখার মতো। ছড়া কেটেই মা লক্ষ্মীকে আবাহন করত গৃহস্থ। করজোড়ে বাড়ির নারীরা একসঙ্গে বলতেন, ‘আঁকিলাম পদ দু’টি, তাই মাগো নিই লুটি। দিবারাত পা দু’টি ধরি, বন্দনা করি। আঁকি মাগো আল্পনা, এই পূজা এই বন্দনা।’ ... ...
(আমার এ রচনা বিভিন্ন সিঁড়ি নিয়েই। হঠাৎ করেই একদিন অন্যমনায় ছিলাম। সে সময়ে মাথার মধ্যে ছোটবেলার আমাদের বাড়ির এক প্রাচীন আমলের সিঁড়ির নানান ঘটনা ভেসে উঠল অতর্কিতেই। ভাবলাম লিখেই ফেলি। এই নিয়ে গুগুল মামার শরণাপন্ন হতেই দেখলাম - ওরে বাবা, এই সিঁড়ি নিয়েই হয়তো একটা বিরাট রচনা নামিয়ে ফেলা যায়। সারা বিশ্বের নানান সিঁড়ি, সেগুলোর ইতিহাস, সবচেয়ে বড় কথা সেই আদিম যুগ থেকে কতই না পরিবর্তন হয়ে আজকের গতিমান লিফট থেকে এস্ক্যালেটর। আমারই চোখে দেখা কত কিছুই। স্মৃতির মননে ছোট বেলা থেকে কলেজ জীবন পেরিয়ে চাকরি জীবন। সব কিছুর সাথেই জড়িয়ে আছে এই সিঁড়ি। জানিনা আপনাদের ভাল লাগবে কিনা...ভাল লাগলে যদি জানান তাহলে আরো একটু বিস্তৃত ভাবে রচনাটি শেষ করবো। আমি এ রচনাটিকে "ধারাবাহিক" বিভাগ আর "ইতিহাস" উপবিভাগেই রাখছি।) ... ...