“সেই রূপগুণবতী কন্যার নাম সতাবতী, কিন্তু সে মৎস্যজীবীদের কাছে থাকত সেজন্য তার অন্য নাম মৎস্যগন্ধা। একদিন সে যমুনায় নৌকা চালাচ্ছিল এমন সময় পরাশর মুনি তীর্থপর্যটন করতে করতে সেখানে এলেন। অতীব রূপবতী চারুহাসিনী মৎস্যগন্ধাকে দেখে মোহিত হয়ে পরাশয় বললেন, সুন্দরী, এই নৌকার কর্ণধার কোথায় ? সে বললে, যে ধীবরের এই নৌকা তাঁর পুত্র না থাকায় আমিই সকলকে পার করি। পরাশর নৌকায় উঠে যেতে যেতে বললেন, আমি তোমার জন্মবৃত্তান্ত জানি ; কল্যাণী, তোমার কাছে বংশধর পাত্ৰ চাচ্ছি, তুমি আমার কামনা পূর্ণ কর। সত্যবতী বললে, ভগবান, পরপারের ঋষিরা আমাদের দেখতে পাবেন। পরাশর তখন কুজ্ঝটিকা সৃষ্টি করলেন, সর্বদিক তমসাচ্ছন্ন হল। সত্যবতী লজ্জিত হয়ে বললে, আমি কুমারী, পিতার বশে চলি, আমার কন্যাভাব দূষিত হ'লে কি করে গৃহে ফিরে যাব ? পরাশর বললেন, আমার প্রিয়কার্য করে তুমি কুমারীই থাকবে। পরাশরের বরে মৎস্যগন্ধার দেহ সুগন্ধময় হল, সে গন্ধবতী নামে খ্যাত হ'ল। এক যোজন দূর থেকে তার গন্ধ পাওয়া যেত সেজন্য লোকে তাকে যোজনগন্ধাও বলত” ... ...
আমাদের বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলারও সুগন্ধির প্রতি ছিল প্রগাঢ় ভালোবাসা। নিজে গায়ে মাখতেন হরেক রকমের দামি সুগন্ধি। বিভিন্ন পালা পার্বণে হীরা ঝিল প্রসাদের কোনো কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে পায়রা, কাকাতুয়া, টিয়া, ময়ূর বা অন্যান্য পাখি পারস্যের সুগন্ধির তরলে ভিজিয়ে উড়িয়ে দেয়া হতো হল ঘরে। আর এতে সুন্দর স্নিগ্ধ পারস্যের সৌরভে ছেয়ে যেত বাংলার যুবরাজ সিরাজউদ্দৌলার স্বপ্নরঙে রাঙানো হীরা ঝিল প্রাসাদ। সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী বেগম লুৎফুন্নিসা হেঁটে গেলে সবাই বলতেন পদ্মগন্ধা। ... ...
প্রাচীন পার্সিয়ানরাও কম সুগন্ধি দ্বারা মন্দ্রিত ছিল না। তারা কয়েকশ’ বছর ধরে সুগন্ধি ব্যবসা শাসন করেছে এবং তাঁরাই প্রথম তেলবিহীন সুগন্ধি উদ্ভাবন করে। সাসানিয় সাম্রাজ্যকালে (২২৪ থেকে ৬৫১ খৃষ্টপূর্ব) সুগন্ধি এবং পরিশোধিত জলের উত্পাদন বেশ প্রচলিত ছিল। সে সময় পার্সিয়ান আভিজাত্যে সুগন্ধির একটি উচুঁ স্থান ছিল। আর পার্সিয়ান রাজাদের প্রায় সব্বাইকারই তাঁদের নিজস্ব সুগন্ধি ছিল যা তাঁদের সঙ্গী এবং আত্মীয়স্বজনদের পর্য্যন্ত ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। আসলে এটা আজ প্রমাণিত যে সে সময় সুগন্ধ প্রস্তুতকারী প্রচুর কারখানা ছিল পারস্যে আর তারা বিভিন্ন রকম সুগন্ধ প্রস্তুত করতে ভালোওবাসতো। ... ...
ছোটবেলায় বিয়েবাড়ি গেলে মা মাখিয়ে দিতো কান্তা সেন্ট। নিজেও মাখতো সেটা। এখনকার মতো তো আর এই বডি স্প্রে ইত্যাদি তখন আমরা দেখি নি। এখন এই বয়সে এসে কতো রকমেরই না এইসব সেন্ট, পারফিউম দেখছি। কত নামের বাহার তাদের। কত ধরনের গন্ধ। একই পারফিউম বা বডি স্প্রে’র আবার তিন চার রকমের ‘প্রডাক্ট’। এখন জানি, ছেলে আর মেয়েদের পারফিউম আবার আলাদা। আবার তার মধ্যে কার ত্বকে কোনটা অনেকক্ষন ধরে সুগন্ধ ছড়াবে তার প্রকৌশলের আবার বিভিন্ন প্রকার রকমফের রয়েছে। মানে কিনা একই পারফিউম আমার ত্বকে যে গন্ধ বিলোবে তা আপনার ত্বকে নাও বিলোতে পারে। উফফ্, কি সাঙ্ঘাতিক কান্ড কারখানা। পৃথিবী বিখ্যাত এই সব পারফিউমের কত রকম দাম, কত রকম নাম ! ফ্রান্স এই ব্যাপারে একেবারে প্রথম সারিতে। ফরাসী সুগন্ধের চাহিদা নাকি সারা বিশ্বজুড়ে। ... ...
নতুন এ রচনা। গন্ধ নিয়ে। গন্ধ মানে সৌরভ, গন্ধ মানে পারিফিউম, গন্ধ মানে কলকাতায় দিনমানে চলা কর্পোরেশনের জঞ্জাল ফেলার গাড়ি, গন্ধ মানে শেষযাত্রার অগুরু, গন্ধ মানে ধুপ-ধূনো, গন্ধ মানে মায়ের খোলা চুল। এমন কতো কিছুই। আপনাদের উৎসাহ পেলে ভরসা বাড়বে। ... ...
তো একঢিলে দুই পাখি। কানে শোনা ড্যালহাউসি স্কোয়ার আর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চলমান সিঁড়ি। আমাদের কলেজের সামনের রাস্তাটাই বিপিন বিহারি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, যার পুরোনো নাম বহুবাজার স্ট্রিট, সে রাস্তার এক মাথা শিয়ালদায় আর অন্য মাথা ড্যালহাউসির লালদিঘীতে। যার উত্তর পশ্চিম কোনেই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কলেজের সামনে থেকে ট্রামে চেপে বসলেই এক্কেরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উলটো পারেই নামা। সদলবলে দুএকটা ক্লাস করার পরেই সোজা ১৪ নম্বর ট্রামের সেকেণ্ড ক্লাসে উঠে বসা। দুপুরের দিকে ১৯৭৩ সালে বেশ ফাঁকাই থাকত ট্রাম। ভাড়া চার কি পাঁচ পয়সা। ঠিক মনে নেই। লালদিঘিতে ঢোকার পরই গোটা ট্রাম ফাঁকা। যথাবিহিত জায়গায় নেমে নেতাজি সুভাষ রোড পেরোলেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিশালকায় দরজা। দরজা বলতে কেমন বাধো বাধো লাগে আজও। সিংহদরজা বলাই ভাল। সেসময় দুটো বাজলেই বন্ধ হয়ে যেত সব ব্যাঙ্কেরই গেট। তাই একটু তাড়াহুড়ো আমাদের। ... ...
নরকাসুর কামাখ্যা দেবীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। দেবীকে বলাতে দেবী শর্ত রাখেন যে, মোরগ বা কুক্কুট রাত পেরোনোর জানান দেওয়ার আগে যদি নরক নীলাচল পাহাড়ের তলা থেকে মন্দির পর্যন্ত এক রাতের মধ্যে সিঁড়ি নির্মাণ করতে পারেন তবে তিনি বিয়ে করতে রাজী হবেন। কামাখ্যা দেবী মোটেও আগ্রহী ছিলেন না এক অসুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে জড়াতে। তাই এমন অবিশ্বাস্য শর্ত। নরকাসুর সেইমত সিঁড়ি নির্মাণ করে রাত পেরোনোর আগে শেষ করার উপক্রম করলেন। কাজের অগ্রগতি দেখে দেবী সত্যিই ভয় পেয়ে যান।তিনি তখন ছলনার আশ্রয় নেন। তিনি একটি মোরগকে চেপে ধরলে সেই মোরগ ভয়ে ডেকে ওঠে। মোরগের ডাক শুনে নরকও ভাবেন রাত বুঝি শেষ হল। নরকাসুর সিঁড়ি তৈরির কাজ অর্ধেক রেখেই ক্ষান্ত হলেন।কিন্তু পরে নরকাসুর আসল সত্যি জানতে পেরে কুক্কুটটিকে (মোরগ) প্রচণ্ড রাগে ধাওয়া করে হত্যা করেন। ... ...
শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল প্রভিন্সের ডাম্বুলা নগরের কাছে মাটালা জেলার মধ্যে রয়েছে ঘন জঙ্গলে ঢাকা শিগিরিয়া নামে এক পাহাড়ি অঞ্চল। আর সেখানে পৌঁছে গেলেই দেখতে পাবেন সেই স্বর্গের সিঁড়ি। এখন শ্রীলঙ্কাবাসীরা সে সিঁড়িকে লায়ন্স রক বা সিংহের প্রস্তর নামেই ডেকে থাকে। একটা বিশাল অতিকায় পাথরের খণ্ডের গা বেয়ে সেই সিঁড়ি চলে গেছে অনেক উঁচু অব্দি। আর সেই পাথরের মাথায় রয়েছে এক পুরোনো রাজবাড়ির ভগ্নস্তূপ। যতদূর জানা গেছে সেকালে শিগিরিয়া অঞ্চলের নাম ছিল অলকামাণ্ডব। ... ...
মোগল সাম্রাজের দ্বিতীয় সম্রাট ছিলেন বাদশা হুমায়ূন। তাঁর মৃত্যুর সাথে জড়িয়ে আছে এক সিঁড়ি। শোনা যায়, রাজত্ব হারিয়ে পনের বছর পরে ১৫৫৫ সালে দিল্লির মসনদ ফিরে পান শাহাজাদা। আর তার মাত্র এক বছরের মধ্যেই ১৫৫৬ সালের ২৪ জানুয়ারি মারা যান তিনি। মৃত্যুর দিন তিনি দিল্লির দিন পনাহ্ লাইব্রেরীর সিঁড়ি দিয়ে যখন নামতে শুরু করেছিলেন, তখন তাঁর হাতে ছিল এক গোছা বই। ঠিক সেই মুহূর্তেই শুনতে পান মুয়াজ্জিন এর আজানের ডাক। আজানের ডাক শুনতে পেয়েই মাগরিবের নামাজ আদায় করার জন্য দ্রুত নামতে থাকেন লাইব্রেরীর সিঁড়ি বেয়ে। সিঁড়ির ধাপে কোনোভাবে পা হড়কে যায় সম্রাটের। তিনি গড়িয়ে পড়েন নীচে। বইপত্তর ছিটকে ছড়িয়ে পড়ে। পাথেরের সিঁড়ির ধাক্কায় তিনি আঘাত পান আর এর ঠিক তিন দিন পরেই সম্রাটের ইন্তেকাল হয়। ... ...
‘দিল্লির কেন্দ্র বলে পরিচিত কনট প্লেস থেকে কস্তুরবা গান্ধী মার্গ ধরে শ’ পাঁচেক মিটার এগোলেই রাস্তার বাঁ দিকে পড়ে হেলী রোড। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অতিথি নিবাস এই রাস্তাতেই অবস্থিত। তবে অতদুর যেতে হবে না। তার অনেক আগেই বাঁ পাশে একটা সরু গলি চোখে পড়বে। সামনের বোর্ডে লেখা আছে হেলী লেন। ছোট্ট গলি। এখানেই রয়েছে চতুর্দশ শতাব্দীর মহারাজা অগ্রসেন কী বাওলি। মোট একশো পাঁচটি সিঁড়ি। বাওলির জলাধারে জল থাকলেও ব্যবহার করা হয় না। কোলাহল মুখর কনট প্লেসের দু’ পা দূরে আজও শান্ত পরিবেশে বেঁচেবর্তে রয়েছে মহারাজা অগ্রসেন কী বাওলি’। ... ...