এই লেখা রামকৃষ্ণ কথামৃতের ভক্তদের জন্য নয়। তাঁরা দয়া করে এই লেখাটি পড়বেন না। কারণ এই লেখা সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে উৎসারিত। সেই একই কারণে এই লেখা রামকৃষ্ণ দর্শনের প্রতি অকারণ বিদ্বেষবশত কোনো কুৎসামূলক লেখাও নয় । কারণ বর্তমান লেখক মনে করেন যে রামকৃষ্ণদেবের মত সরলহৃদয়, সুরসিক, তত্বজ্ঞানী এবং বিরাট ব্যক্তিত্বের অধিকারী ধর্মপ্রচারক বাংলায় চৈতন্যদেবের পর খুব বেশি আসেন নি। বিশেষত পরধর্ম সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য বাংলার মাটি থেকে উঠে আসা ঔদার্যের পরাকাষ্ঠা। তবে রামকৃষ্ণদেবের ‘কামিনীকাঞ্চন ত্যাগ’ তত্ব নিয়ে আমার বহু প্রশ্ন চিরকাল ছিল। সময়ের সঙ্গে সেই সংশয়ের অবসান তো হয়ই নি, আরো বেড়েছে বরং। এখন ভক্তকুলের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর চাওয়া বৃথা। কারণ রে রে করে তেড়ে আসা ছাড়া বা অধিকারীভেদের কথা বলে প্রশ্নের পথ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাঁদের কাছে যুক্তিসমৃদ্ধ তর্ক কিছু পাই নি। তাই এক অর্থে এই লেখা শুধুমাত্র সেই মানুষদের জন্য, যাঁরা আমার মত সাধারণ, অতি সাধারণ জিজ্ঞাসু। ... ...
আজ যখন ১৩৭ বছরের প্রাচীন এই দলটির পুনর্জাগরণের কথা বলা হয় তখন নেতৃত্বের পরিবর্তনের কথা অথবা পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলা হয় বড় জোর। কিন্তু দলীয় নীতি বা মতাদর্শের কথা বলা হয় না। কংগ্রেসে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ ছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রচুর বিতর্ক ছিল, কিন্তু তাই বলে কংগ্রেসের কোনো মতাদর্শ ছিল না একথা ভাবা ভুল। কংগ্রেসকেও তার উত্তরাধিকারকে আবিষ্কার করতে হবে,মানুষকে ভরসা জোগানোর জন্য। এই উত্তরাধিকার মানে পারিবারিক কোনো অনুষঙ্গ নয়, মতাদর্শের উত্তরাধিকার। ... ...
চীনকেও মুনাফাসন্ধানী,বাজারপন্থী, বৃদ্ধিপন্থী,পুঁজির পুনরুৎপাদক ব্যবস্থা থেকে সরে আসতে হবে। ‘সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি’র মত স্ববিরোধী দর্শন ছেড়ে মানুষের ন্যূনতম চাহিদার পরিপূরণে নজর দিয়ে ভোগবাদ, অপ্রয়োজনীয় উৎপাদন ও অপচয়ের অর্থনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।মাও যুগের ‘এক কড়াই থেকে খাওয়ার নীতি’র কথা অনেকের মনে পড়তে পারে। হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই সেই আদর্শের পুনরুদ্ধার কাম্য বটে। কিন্তু এ কেবল অতীতচারী পশ্চাদগমন নয়। মনে রাখতে হবে মাওয়ের সময় পরিবেশ নিয়ে আদৌ কোনো সচেতনতা ছিলো না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির বাস্তবতা অন্য রকম দাবী রাখছে চীনের শাসক ও জনগণের কাছে। এখন প্রশ্ন হল সেই দাবীর কোনো ভবিষৎ চীনে আছে কি? ... ...
গত ১৯ জুন,২০২২ তারিখে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় পৃথিবীর দুই দেশে—প্রথমটি লাতিন আমেরিকা মহাদেশের কলম্বিয়ায়, দ্বিতীয়টি ইওরোপ মহাদেশের ফ্রান্সে। দুটি নির্বাচনের ফলাফলই শ্রমজীবী মানুষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । ... ...
ধেড়েখোকার প্রত্যাবর্তনের পর কিছুদিন রগড়ারগড়ি চলবে। তৃণমূল বলবে ,ঘরের কার্তিক ঘরে ফিরে এল। বিজেপি বলবে ,দুষ্ট গরুর চেয়ে শূণ্য গোয়াল ভালো। তথাগত রায় প্রায় থ্রিলারের ভাষায় টুইট করবেন, কে এস ডি এ গ্যাং ( কৈলাশ আর দিলীপ ছাড়া গ্যাংয়ের বাকি দুই সদস্যের নাম আমার মনে থাকে না) মমতা ট্রোজান হর্স ঢুকিয়ে ছিল বিজেপিতে। তবে এসব দুদিন বাদে থেমে গেলেও একটা ব্যাপার নিশ্চিত বামপন্থীদের নিজেদের মধ্যে এই নিয়ে বেশ কিছুকাল কামড়া কামড়ি চলবে। ... ...
প্রথম উপন্যাসে প্রোজ্জ্বল কোনো দার্শনিক প্রস্তাবনা, ন্যারেটিভের জটিলতা , ব্যক্তিমনের অন্তর্লীন শুলুকসন্ধানে প্রবৃত্ত হন নি। একেবারে সোজাসাপটা গল্প বলতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর জোরের যে জায়গাটা সেটা হল এই কাজটুকু তিনি ভীষণ আন্তরিকতা আর সততার সঙ্গে করতে পেরেছেন। ... ...
কুলদা রায়ের সাহিত্য নিয়ে একটি লাইভ আলোচনায় আমন্ত্রিত হয়ে কিছু কথা বলার সুযোগ হয়েছিল স্বয়ং লেখকের উপস্থিতিতে। তার থেকে অনেক বেশি কথা না বলা থেকে গিয়েছিল, সময় সংক্ষেপের কারণে । সেই বলা এবং না বলা কথা, যা ছিল ঐ আলোচনার একটি প্রস্তুতি পর্বের নোট ,পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম। ... ...
পোল্যাণ্ডের প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালকদের অন্যতম আন্দ্রে ভাইদার দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনের শেষ দুটি ছবি ছিল বায়োপিক। প্রথমটি পোল্যাণ্ডের বিখ্যাত সলিডারিটি আন্দোলনের নেতা লেখ ওয়ালেসাকে নিয়ে। দ্বিতীয়টি পোল্যাণ্ডের আভাঁ গার্দ চিত্রশিল্পের এক পুরোধা ব্যক্তিত্বকে নিয়ে। এই দুটি ছবি শুধু সময়ের দলিল নয়-- জীর্ণ , প্রাণহীন এবং মানবিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক তথাকথিত সমাজতন্ত্রের ধারণার বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধ ঘোষণার পক্ষেও বটে। একুশ শতকের সমাজতন্ত্রের নির্মাণ যদি ঘটাতে হয় তাহলে এই ভুলগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া, তাদের ধিক্কার জানানো ঠিক ততটাই জরুরী ,যতটা জরুরী এই মুহূর্তে বিকল্প সমাজব্যবস্থা নির্মাণের পথে যাত্রা। আন্দ্রে ভাইদার এই ছবি দুটি আমাদের সেই সুযোগ করে দেয়। ... ...
কাশ্মীর সমস্যাকে আবেগ ও অনুভূতির জায়গা থেকে দেখতে হলে স্মৃতিকথার গুরুত্ব আছে। কাশ্মীরী পণ্ডিতদের হত্যা,উচ্ছেদ, উদবাস্তু হওয়া যেমন সত্য, সাধারণ কাশ্মীরী মুসলমানদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ইতিহাসও কম মর্মবেদনার নয়। তাই এসমস্ত কিছুকে সামগ্রিক ভারসাম্যের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য এই আলোচনার অবতারণা। এখানে দৃষ্টিকোণ মূলত বইগুলির লেখকদের। ... ...
ভারতবর্ষ পৃথিবীর নবীনতমদের দেশ। এদেশে নবীন প্রজন্মের মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। আবার ভারতবর্ষ পৃথিবীর অন্যতম আর্থিক বৈষম্যের দেশ। হিসেবমত তার বিরুদ্ধে নবীন প্রজন্মের কাছ থেকে যে প্রতিবাদ আসার কথা তা সেভাবে চোখে পড়ে না। অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যতটুকু সদর্থক পরিবর্তন চোখে পড়ছে সেখানে নবীন প্রজন্মের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সেখানে ভারতবর্ষ ব্যতিক্রম কেন? এ ব্যাপারে বামপন্থী দলগুলির দায়িত্ব কতটা? ... ...