তালান্ডু স্টেশন পেরিয়ে ট্রেন ছুটে চলেছে দুর্বার গতিতে। আকাশে ঝিমঝিমে মেঘ। ট্রেনের পিঠে চেপে পাড়ি দিচ্ছে মেঘেদের ছানারা.. মা মেঘেরা পাল্লা দিয়ে ছুটেছে আকাশের বুকে।রসুলপুরে শ্লথ হয়ে আসে ট্রেনের গতি। জানলার বাইরে থেকে হাত বাড়ায় মাঝারি এক আম গাছ। খুশি খুশি মুখে বলে, রোজ খুব ভোরে নাকি একটা ছোট্ট নীল পাখি আসে ওর কাছে। আমাকে জিজ্ঞেস করে আম গাছ, ' জানো ওর কি নাম!' আমি বলি 'তুমিই তো ... ...
--------------------------- কলির শান্তিনিকেতন, শান্তিনিকেতনের কলি। প্রায় দু-মাস গরমের ছুটি কাটিয়ে, এবারে ফেরার পালা। এই দু -মাসে চিঠি সঙ্গী। ইনল্যান্ড কিংবা খামবন্দী গন্ধ মাখা চিঠি। কত, কত চিঠি!!..পরস্পরকে এভাবেই ছুঁয়ে থাকা। এবারে ফেরা। প্রথম প্রথম বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা। এ-বাড়ি। ও-বাড়ি। সীমান্তপল্লীতেই ঘোরাফেরা। বালি পাড়ার কাছাকাছি দোতলা বাড়ি। ফুল ফল সবজির বাগান। কলিদের ঘর ... ...
শুনেই উথাল পাথাল মন। আসছে..সে আসছে। তার পৌঁছবার পদধ্বনি ওই শোনা গেল বুঝি। দিনের গতির সাথে, আলোর বাড়া কমা। মধুমালতীর পাতায় পাতায় ছায়ামাখা মেঘের ইশারা। চামেলীর সরু সরু ডালে, পাতার ঝিলিমিলি ছায়ায় প্রতীক্ষার প্রহর কি শেষ হবে তাহলে.. দক্ষিণের বারান্দার পুবের কোণে থামের আড়ালে, শ্বেত অপরাজিতা আর ছোট টবে আমগাছের কচি পাতায় ছায়াদের লুকোচুরি। আজ খুব ভোরেই চলে এসেছে পটা। ওহ্, চিনতে পারোনি বুঝি ... ...
সারা দিন-রাত ওদের কানাকানি, ফিসফাস, টুপ টাপ, ঝির ঝির..দিনের আলো, রাতের অন্ধকার.. নদী, গাছপালা, পোকা, পাখিদের মগ্ন আলাপন..শব্দে, নিঃশব্দে। শুনতে কি পাও !..সারারাত ধরে ফুল ফুটিয়েছে হিজল বন। মৃদু সুগন্ধে , চাঁদের আলোয়, হিজল বনে গোলাপি মায়া। ফুলে ফুলে ভরা হিজল বনে, গভীর রাতে কাদের আসা-যাওয়া ... ...
কালীসায়রের পাশের রাস্তা দিয়ে গিয়ে বড় মাঠ পেরিয়ে, বাঁঁ দিকে ঘুরে ডিপার্টমেন্ট। সামনেই মাঘ মেলার মাঠ। ডিপার্টমেন্টের দোতলার করিডরে দাঁড়ালে দূরের সবুজের হাতছানি। নীচে, অ্যাকাউন্ট সেকশনের পাশে, কাঞ্চন গাছটা ফুলে ফুলে সাদা। অডিও ভিস্যুয়াল ইউনিটের বাইরে, চালতার কুঁড়ির উঁকিঝুঁকি। এসব পেরিয়ে লাইব্রেরীর পথ ধরলো কলি। ছোট্ট লাইব্রেরী। এই বইভূমিতে বেশ লাগে কলির। রিডিং রুমের জানলার বাইরে রঙীন প্রজাপতি আর পাখিদের আলাপন। আত্মশাসন করেও দৃষ্টিকে স্ব-বশে রাখতে পারেনা কলি। ... ...
ঘন কুয়াশায় ঢাকা সকালে কারই বা মন ভালো থাকে বল। চারপাশ প্রয়ান্ধকার। অদেখার আড়ালে ভয়ঙ্কর বিপদ। টুকটুকের মা টিটি আর বাবা ডোডো, কিছুতেই টুকটুককে বেরোতে দিচ্ছে না। কিন্তু টুকটুক জেদ ধরে বসে আছে, ও বেরোবেই। এই ঝুপসি কুল গাছে, পাতার আড়াল দিয়ে তৈরী করা ওদের একটা ছোট্ট বাসা। আকাশের মুখ ভার দেখে, টুকটুকের ডোডো বাবা কয়েকদিনের জন্য খাবারও জোগাড় করে রেখেছিল। শুঁয়োপোকার ছানা, চিকমিকে পোকা, বিন্নীর মায়ের ফেলে দেওয়া চাউমিন ..এইসব ... ...
ঠাকুমা (নানা) র বাপের বাড়ির দেশ ছিল সুকিন্দে। কে জানে কোথায় সে। একবারই মাত্র যাওয়া হয়েছিল সেখানে। কার যেন বিয়ে ছিল। বিরাট একটা বাসে চড়ে খুব ভোর ভোর রওনা দিয়েছিল ওরা। পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে পেরিয়ে রাতের হাত ধরেছিল প্রায়। বর-বউয়ের কথা এখন আর মনে নেই তুলির। শুধু মনে আছে, খাওয়া শেষ হতেই ঢালাও বিছানায় শুতেই ঘুম বুড়ি হাত ধরেছিল সবার। শুধু তুলির ঘুম আসছিল না। ... ...
ঝিমলিতলায় সকালের সোনা রোদ পড়ে ঝলমল করে উঠতেই, পাকুড়তলির গা গেল জ্বলে। মনে মনে একশো শাপান্ত করেও আশ মেটেনা তার। পাকুড়তলির ডোবাটার চারপাশটা কেমন নিঃঝুম। চারপাশের বড় বড় আম, জাম, কাঁঠাল ঝামড়ে পড়েছে ওর ওপর। তাই, সকালের সোনা রোদ, দুপুরের ঝলমলে বা শেষ বিকেলের আদুরে নরম আলোর কোনোটাই ওর কাছে পৌঁছতে পারেনা। তারওপর অভিমানে গুমরে থাকা মনটার কালো ও তো আছে! ... ...