এই ধরুণ যেমন আমরা সবাই জানি নায়ক সিনেমায় উত্তমকুমারকে হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনের খন্যান স্টেশনে চা-খেতে নামিয়ে মাষ্টার স্ট্রোক দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনদিন ভেবে দেখেছেন কি এত স্টেশন থাকতে খন্যান কেন? এখনকার খন্যান স্টেশন আর সেই ১৯৬৫-৬৬ সালের খন্যান স্টেশনের মধ্যে যদিও অনেক পার্থক্য, কিন্তু তখনো খন্যান স্টেশনের একদিকে ছিল তালান্ডু আর অন্যদিকে পান্ডুয়া। তাহলে খন্যান কেন? ... ...
হোটেলের রেষ্টুরান্টের বোরিং মাপাজোপা খাবার খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে এই ভাবেই একদিন ধর্মতলার ছোলে-বাটোরা-র প্রেমে পড়ে গেল রাসেল। হয়েছে কি একদিন বিকেলে প্র্যাক্টিস থেকে ফিরে হোটেলের বাইরে একটু ঘুরতে বেরিয়েছে, একটা দোকানে দেখে লোকজন বিশাল ফুলো ফুলো বান্-এর মতন কি খাচ্ছে! ইন্টারেষ্ট লেগে গেল রাসেলের – জয় মা বলে ঢুকে পড়ল দোকানে, আঙুল দিয়ে দেখালো যে ওই খাবার তার চাই। দোকানে যে ক্যাশে বসেছিল সে অনেক কষ্টে ভাঙা ভাঙা ইংরাজীতে জানালো যে ওই খাবারের নাম “ছোলে-বাটোরে”। ব্যাস, সেই খাবার খেয়ে রাসেল ফিদা! নামটা মুখস্ত করে নিল কয়েকবার আউড়ে নিজের মনে মনেই। ... ...
হাঁটতে হাঁটতে তিনি পোঁছে গেলেন সেই জায়গাটায় এখন যেখানে গেলে গঙ্গার উলটোদিকে মেটিয়াবুরুজের ফেরিঘাট দেখা যাবে। আর বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরে তখন এই পাশের পুরো জায়গাটা জুড়ে চাষ হত গাঁজার। হাঁটতে হাঁটতে জগদীশ বসু ভাবতেও পারেন নি সেদিনের থেকে প্রায় ১২০ বছর পরে এই বোটানিক্যাল গার্ডেন তাঁর নামেই নামাঙ্কিত হবে। আগেকার দিনের শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন এখন পরিচিত “আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন”। ভারতের সবচেয়ে বড় বোটানিক্যাল গার্ডেনের নাম ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত বোটানিষ্টের নামে হবে সে আর আশ্চর্য কি! তবে হালকা আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে বোটানিক্যাল গার্ডেনে জগদীশ বসু-র প্রথম পদার্পণ কোন স্পেশাল গাছ গাছালি দেখতে নয় – গাঁজার চাষ দেখতে! গাঁজার চাষ এবং গাঁজা গাছের ব্যাপারে আলোচনার জন্যই কিউরেটর ডেভিড প্রেইন ডেকে পাঠিয়েছিলেন জগদীশ বোস-কে। একদম সরাসরি তাঁর অফিসে চলে যেতে বলেছিলেন, কিন্তু জগদীশ বোস ভাবলেন আলোচনায় ঢোকার আগে নিজের মত করে গাঁজা গাছগুলিকে দেখে নেওয়া যাক! ... ...
সেদিন নৈহাটি থেকে বেশ দেরী করেই আনন্দবাজারের অফিসে ঢুকলেন সমরেশ বসু। দেশ পত্রিকার সেকশনে ঢুকতেই সাগরময় ঘোষের সাথে দেখা। সাগরবাবু মাত্র কিছু দিন আগেই দেশ-এর সাব-এডিটরের দায়িত্ব থেকে প্রধান সম্পাদক হয়েছেন। তবে সাব-এডিটর থাকা কালীনও দেশ-র বেশীর ভাগ সিদ্ধান্তের পিছনে সাগরবাবুই ছিলেন শেষ কথা। সমরেশ বাসুর সাথেও তাঁর চেনা শুনে বহু বছর ধরেই – আজ পুরী, কাল কুম্ভ মেলা, পরশু কেঁদুলি – এই সব জায়গায় সমরেশ বাবুকে ঠেলেঠুলে তিনিই পাঠাতেন লেখা বের করার তাগিদে। ... ...
নীলরতন বাবু বয়েসে প্রায় বছর কুড়ি বড় ছিলেন বিধান রায়ের থেকে। ভালোবেসে তিনি বিধান রায়কে ‘বিধে’ বলে ডাকতেন আর একদম ভাইয়ের মত ভালোবেসে তুই বলেই সম্বোধন করতেন। সেই ভালোবাসা ছিল রেসিপ্রোক্যাল – কুড়ি বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও বিধান রায় ডাকতেন ‘নীলুদা’ বলে। প্রথম থেকে আলাপের পরেই নীলরতন বাবু বুঝে গিয়েছিলেন যে বিধান রায় খুবই প্রতিশ্রুতিবান ছাত্র এবং কালে কালে খুব নামকরা ডাক্তার হবে যদি ঠিক ঠাক গাইড করা যায়। তাই তিনি নিজে থেকেই বলেছিলেন, “বিধে, সময় পেলেই বিকেলের দিকে আসিস হাসপাতালে আমার রুমে। রাউন্ড দেবার আগে তোর সাথে চা খেতে খেতে বিশেষ কেস গুলো নিয়ে আলোচনা করব”। তা এমন সুযোগ কি আর হাতছাড়া করেন বিধান রায়! তাঁরও শেখার আগ্রহ প্রচুর, প্রায় প্রতিদিন সময় পেলেই ছুটতেন ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল কলেজে – যাকে আপনারা আজকে নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ বলে চেনেন। ... ...
তা ব্রজেন বাবু হেল্প করলেন। উনার কথাতেই অন্নপূর্ণা যাত্রা অপেরা ডেকে পাঠালো অরুণ কুমারকে একদিন। অরুণকুমার গিয়ে দেখলেন একদমই নতুন ধরণের যাত্রা – নাম “শের আফগান”। সেখানে আলি কুলী খাঁ-য়ের চরিত্রে অভিনয় করছে কম বয়সী, কিন্তু তুখড় একজন ছেলে। সেই ছেলেই পরে শান্তিগোপাল নামে বাংলার ঘরে ঘরের নাম হয়ে ওঠে। অরুণের জন্য ওঁরা ভেবেছিলেন কুতুবউদ্দিন কোকা-র চরিত্র। তবে চরিত্রে ফাইন্যাল করার আগে যাত্রার পরিচালক অরুণকুমারকে টেষ্ট করে নিতে লাগলেন – একটা অন্য কোন যাত্রাপালা থেকে বড় ডায়লগ তাঁকে পড়তে দিলেন, আরো বললেন অভিনয় করে দেখাতে। ... ...
কুরোসাওয়া ক্রমশঃ মানিক বাবুর পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। উনি বিজয়া রায়-কে ডাকতেন “জয়া – সান” বলে। ‘সান’ হল জাপানী ভাষায় এক সম্ভ্রম সূচক সম্বোধন – পুরুষ, মহিলা দুই দলকেই বলা যায়। যেমন প্রথম প্রথম কুরোসাওয়া সত্যজিৎ রায়কে ডাকতেন “মাষ্টার-সান” বলে। কিন্তু মানিক বাবু বেশ অপ্রস্তুত হয়ে একদিন বললেন, “আপনি আমাকে প্লীজ এই ভাবে মাষ্টার বলে ডাকবেন না সবার সামনে – বেশ লজ্জা লাগে”। তারপর থেকে কুরোসাওয়া উনাকে সবার সামনে ‘মিঃ রায়’ আর একান্তে ‘মাষ্টার-সান’ বলে ডাকতেন। ... ...
পৃথিবীর আরো নানাবিধ জিনিসের মত বাটিকের উৎপত্তি নিয়েও টানাবাহানা আছে – বিশেষ করে যখন আজকে যাকে বাটিক বলি তেমন ডিজাইনের কাপড় দেখা গেছে ভারত, চীন, মিশর থেকে শুরু করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নানা জায়গায়। এই সব জিনিস নিয়ে বিতর্ক শেষ হয় না – কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু! তবে মোটামুটি আজকাল যা স্বীকৃত তা হলে বাটিক পদ্ধতির উৎপত্তি হয়েছিল আজকের দিনের ইন্দোনেশীয়া দেশের জাভা দ্বীপে। বাটিক শব্দটির উৎপত্তি জাভা থাকে, মূল শব্দ ছিল ‘আমবাথিক’। জাভানীজ ভাষায় ‘আমবা’ মানে হচ্ছে চওড়া বা বৃহৎ এবং ‘থিক’ শব্দের অর্থ ‘বিন্দু’। এই ভাষাতেই বাথিকান শব্দের অর্থ আঁকা বা লেখা। কালের ক্রমে ইন্দোনেশীয়ার মূল স্রোতে যখন বাথিকা মিশে গেল তখন ‘থিক’ শব্দবন্ধ উচ্চারিত হতে লাগল ‘টি’ দিয়ে এবং সেই থেকেই আজকের বাটিক শব্দটি। ... ...
সময়টা ১৯৪০ সালের আশেপাশে – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তখন জাপানের অবস্থা ভালো নয়, নানা দিকে পিছু হটছে জাপানী ইম্পিরিয়াল বাহিনী। সাধারণ লোকেরাও বুঝতে পারছে যে এই যুদ্ধে জাপানের পরাজয় প্রায় আসন্ন। কিন্তু তখনও সম্রাট এবং তার বাহিনী শেষ কামড় দিতে লড়ে যাচ্ছে। নিত্য নতুন সৈন্য নিয়োগ হচ্ছে – প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে যুবক সম্প্রাদয় নিযুক্ত হচ্ছে যুদ্ধে যাবার জন্য। পরিবার জানাচ্ছে সেই সব তরতাজা যুবকদের বিদায় – মুখে বলছে সবাই, কারো বাবা-মা, কারো প্রিয়তমা, কারো ভাই, কারো স্ত্রী – “শপথ করো আবার দেখা হবে” – কিন্তু প্রায় সকলেরই চোখের কোণের জল টের পাচ্ছে যে এই শপথ রক্ষার প্রায় কোন উপায়ই নেই! সেদিনের দেখাই শেষ দেখা! ঠিক এমন ভাবেই বিদায় জানাচ্ছিলেন মাসাকি তাকাওকা তাঁর ছাত্রদের। মাসুকি তখন ইহিমে পার্বত্য এলাকার এক ছোট্ট গ্রামের কৃষি বিদ্যালয়ে পড়াতেন। সেই বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ছিল এক বিরাট চেরী গাছ। মাসাকি জানতেন আসল সত্যি – কিন্তু তবুও প্রত্যেক ছাত্রের হাতে হাত রেখে অঙ্গীকার করছিলেন যে আবার দেখা হবে স্কুল প্রাঙ্গণে ফুল ফুটে ভরে ওঠা চেরী গাছের তলায়। যুদ্ধের পর যেন তারা সবাই আবার স্কুল প্রাঙ্গণের চেরী গাছের তলায় ফিরে আসে। ... ...
আমষ্টারডামে ট্যুরিজিমের সমীক্ষায় দেখা গেছে এই শহরে বাইরের দেশ থেকে যে সব পর্যটকেরা আসেন তাঁদের থাকার মেয়াদ গড়ে মোটামুটি ৩ থেকে ৪ রাত। তো এত কম সময়ের মধ্যে রেড লাইট ডিষ্ট্রিক্ট সম্পর্কে বিশাল কিছু জ্ঞান সঞ্চয় করা সম্ভব নয় যদি না আগে থেকে এই বিষয়ে ইন্টারেষ্ট নিয়ে পড়াশুনা করে থাকেন। হাতে খুব বেশী ঘুরে ফিরে দেখার সময় নেই, কিন্তু এদিকে ইচ্ছে আছে আমষ্টারডামের এই বিখ্যাত এলাকার সম্পর্কে কিছু জানতে এবং ঘুরে দেখতে। তাহলে কি করবেন? বেশীর ভাগ পর্যটক যেটা করে সেটাই – একটা রেড লাইট ডিষ্ট্রিক্ট হেঁটে দেখার গাইডেড ট্যুর নিয়ে নেবেন! ... ...