আমার বাপ আমাকে একজোড়া ঘুড়ি আর একলাটাই ভর্তি সুতো কিনে দিয়েছিল ছেলেবেলায়। সেই যখন আমাদের মফঃস্বলী পাড়াগাঁ টাইপের বারাসাত, লোকের ভীড়ে উপচে পড়ে নি। রাস্তায় চলতে গেলে লোকের কাঁধে কাঁধ লেগে যেত না, আর ছাদে উঠে দূরে তাকালে, ছেলেবেলায় আঁকা গোল্লা গোল্লা ঝোপের পিছনে তালগাছের সারির পেছনে আকাশ শুরু হয়ে গেছে, দেখা যেত। এ সেই তখনকার কথা। বাপে ঘুড়ি তো কিনে দিল, কিন্তু উড্ডয়ণসূত্রটা জানা না থাকায় ঘুড়ি দশফুটের উপরে কিছুতেই আর উড়ল না। ঐ আমার প্রথম আর শেষ ঘুড়ি কেনা। ধুলোমাখা লাটাইখানা মাঝে মাঝে খাটের তলা, বাঙ্কের কোণা এরকম অদ্ভুত যায়গায় আবিষ্কার হয়ে আমাদের চমকে দিত। তারপরে ম্যালা চন্দ্রভূক অমাবস্যা কেটে ... ...
স্কুল যাওয়ার সময় খড় বাঁধা থেকে শুরু করে দেখতে পেতাম। কিংবা বাইরে বেরুলেই দেখতাম পুজোর মাস দেড়-দুই আগে থেকে— একমেটে, দু’মেটে...। বাড়ির পাশেই বারোয়ারী দুর্গাদালান। অথচ কখন যেন মৃৎশিল্পীরা খড়ি মাখিয়ে চলে যেতেন! তারপর থেকে রোজ অপেক্ষা করে থাকতাম কবে রং করতে আসবেন। রং এর দিন থেকে শুরু হতো আমাদের হৈ চৈ খেলা। সেদিন থেকে শুরু করে আমরা পাড়ার ছোটরা সবাই সারাক্ষণ দুর্গাদালানেই হৈ চৈ করতাম। শুধু পাড়াই নয়, গ্রামে একটাই পুজো। বড়োরাও থাকতেন। আমরা ছোটরা কত রকম নতুন নতুন খেলা আবিস্কার করে খেলতাম। কখনো কখনো পাড়ার বড়োদের বকাও খেতাম। রং করা থেকে শুরু করে মূর্তি সাজানো দেখা, সে এক অন্য রকম ... ...
যে জীবন ফড়িঙেরচিন্ময় রায়সপ্তর্ষি প্রকাশনমূল্য: ২৫০ টাকা যে জীবনস্মৃতির নামকরণ ভীষণ ভাবেই জীবনানন্দ ঢঙে লিরিকাল, সেই 'ফড়িং' জীবনের শুরুই হয়েছিল জীবনানন্দের মতোই ওপার বাংলায়। দাদুর হাত ধরে কুমিল্লা থেকে ভবানীপুর আসেন শান্তি দত্তরায়। 'দত্তরায়' হয়ে যায় 'রায়' আর শান্তি? বলাই বাহুল্য, যে ফড়িং জীবনের কয়েকটা পাতা দু'মলাটের মাঝে পড়ার সুযোগ হয়ে আজকের এই আলোচনার অবতারণা, সেই আলোচনার নায়ক, শান্তি থেকে চিন্ময়। নিজের আত্মজীবনীকে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন ছ'টি পর্বে। প্রথম পর্বে তিনি লিখছেন, || "বরাহনগরে এসেও লোকাল ফুটবল টিমে রাইট আউট খেলতাম। তবে ভালো খেললেও বাহবার সঙ্গে মাঝেমাঝে তিরস্কারও জুটত। এই তিরস্কার 'বাঙাল' হওয়ার কারণে। 'বাঙালগুলো এয়েচে' - এই বলে পাড়ায় একটা ... ...
স্বপ্নের গভীরে কবিতাকে খুঁজি,গল্পের শরীরে মিথকথা পুঁজি।
মুখে লেখায় খুব মুসলিম প্রীতি দেখালেও অনেকেই ভাবেন, মুসলমানরা একটি এঁদোডোবা এবং তাঁরা আসলেই মুসলমান। বাঙালি নন। রবীন্দ্রনাথ বা বাঙালিয়ানা তাঁদের কাছে অস্পৃশ্য। এক আধজন অতি ব্যতিক্রমী। কোনো লেখায় এই উপাদান খুঁজে পেলে একদল গদগদ হয়ে যান
১)রোদ প্রায় পড়ে এসেছে। সেপ্টেম্বর, ১৯০৯; এক ভ্যাপসা ক্লান্তিকর মরা বিকেলে বুড়ি মিস রোজা কোল্ডফিল্ড বসে আছেন সেই ঘরটাতে যেটাকে তাঁর বাবা 'অফিস' বলতেন। ঘরটায় বেশি আলো ঢোকেনা, হাওয়া চলাচল করে না; তেতাল্লিশটি গ্রীষ্ম ধরে জানলার পর্দাগুলো টানা রয়েছে, কেননা যখন তিনি ছোট ছিলেন, কেউ, আমরা জানিনা কে, তাঁকে বলেছিল আলো আর বাতাস ঘরকে আরো গরম করে তোলে, এবং ছায়া সবসময় শীতলতর হয়। অন্ধকার শীতল ছায়া, অতীতের ছায়া এই সাদার্ন গথিকে বারবার ফিরে আসবে, কারণ যেখানে মিস কোল্ডফিল্ড বসে আছেন, সেই জায়গাটা আসলে একটা ধ্বংসস্তূপ — জেফারসন, মিসিসিপি; সিভিল ওয়ার-পরবর্তী সাউথ। তাঁর সামনে বসে রয়েছে একটি বছর আঠেরোর ছেলে, কোয়েন্টিন। তাকে মিস ... ...
স্পষ্ট বুঝতে পারছে অভিলাষ, তার দৃষ্টিটা সহ্য করতে পারছেন না অনিন্দ্য জোয়ারদার। ব্যাঙ্কের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ম্যানেজারি ঘরে বসেও রীতিমতো ঘামছেন। উশখুশ করছেন। টাইয়ের নট আলগা করে হাঁসফাঁস করছেন।
একটা হলুদ বিকেল তোমাকে ভাবতে বাধ্য করতেও পারে / কেন তুমি আর প্রেমে পড়বে না, কেনই বা আবার পিয়ানোর কাছে ফিরে যাবে তুমি
এইবার সুগতবাবুর এক পিস গল্প লিখি। গল্প মানে সত্য ঘটনা। ক্লাশ হচ্ছে হেডুর ঘরের ঠিক নীচে। স্যার ইতিহাসের কিছু একটা পড়াচ্ছেন। হাই ফাই নোটস দিচ্ছেন। ভালো ছেলেরা মন দিয়ে নোট নিচ্ছে আর "স্যার আর এক বার বলুন" "আর এক বার বলুন" করছে। আমি এবং আরও বেশ কিছু ওঁচা ছেলে খাতার পেছন দিকে ট্যালি মার্ক দিয়ে স্যার কটা 'কেমন' বললেন গুনছি। ... ...
দেখতে দেখতে আবার কালীপুজো এসে গেলো। এটাই আমাদের বাড়ির ফ্যমিলি গেটটুগেদার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মসূত্রে এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে যাওয়া সবাই এই ক`টা দিন অন্ততঃ তারকেশ্বরের কাছে আমাদের দেশের বড়িতে থাকার চেষ্টা করেন। এবারে অবশ্য বরুনদাদা-দের পুজো, তাতে অবশ্য আনন্দ কিছুমাত্র কম নয়। দাদুরা দু ভাই ছিলেন। এক বছর ওদের পালা, এক বছর আমদের এই রকম। এবারে অনুপুস্থিতির তালিকা বেশ বড়। ছোটকাকারা আসে নি মুম্বাই থেকে। মেজদা হায়দ্রাবাদ থেকে, কিংবা বুড়ু (সেজ কাকার মেয়ে) ব্যাঙ্গালুরু থেকে। অশোকরা অবশ্য এসে গেছে (জেঠুর ছোট ছেলে) পুণে থেকে। মেজদি-রা(জেঠুর মেজ মেয়ে) ... ...
রবি থেকে শনি পর্যন্ত সবগুলি গ্রহের নিজ নিজ ঘর আছে বটে, কিন্তু রাহু ও কেতুর ঘর সম্পর্কে সুস্পর্ষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না।
কদিন ধরেই একটা ইমেইল পাচ্ছে শরন্যা। প্রেরকের নাম যেখানে জলফড়িং সেখানে যে কেউ হতে পারে। প্রথম প্রথম শুধু হ্যালো হাই চলত, এখন সেখানে শব্দ সংখ্যা বাড়ছে। শরন্যা রোজ তাতে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় ও পরে যথারীতি ডিলিট করে দেয়। তবে প্রতিদিন মেইল খুললেই মনে হয়, আজ কি লিখতে পারে জলফড়িং...! ও নিজেও লেখালেখি করে ফেসবুকে। নেহাত শখ বশত। মা বাবা দুজনেই সাহিত্য অনুরাগী, তাই ছোটবেলা থেকেই গুচ্ছ বইয়ের ভেতর থাকতে থাকতে পড়ার একটা নেশা হয়ে গেছিল। পরে অবশ্য নানা কারণে এতে কিছু বিরতি হলেও লেখালেখি চলত। জিমেইলের এই অ্যাকাউন্টটা শুধু নিজের কাজের মেইলগুলো রাখার জন্য বানানো। ... ...
এই নিউজক্লিক কান্ডের পর অন্য একটা কথাও মনে হচ্ছে। সেটা বিকল্প মিডিয়া প্রসঙ্গে। গত কুড়ি বছরে, বাংলা এবং গোটা ভারতেই বিকল্প লেখালিখির জায়গাটা দুমাদ্দুম স্টার্টআপ সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এই স্টার্টআপ জিনিসটা কী? না আপনি নিজের উদ্যোগে বা খরচায় কিছু একটা ছোট্টো করে বানালেন। তারপর তার মুনাফা-বানানোর সম্ভাবনা আছে দেখিয়ে বড় কোনো শিল্পগোষ্ঠীর কাছে বেচে দিলেন। অথবা সরাসরি বেচলেননা, কিন্তু বেশিরভাগ শেয়ারই বেচে দিয়ে বিনিয়োগ আনলেন। জিনিসটা নতুন কিছু না, কিন্তু ... ...
মাস্ক ছাড়া মণ্ডপে ঢুকলে দায় কমিটির ইংরেজবাজার শহরের কয়েকটি পুজো মণ্ডপ সরকারি নির্দেশিকা মেনে তৈরি করা হয়নি বলে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন করোনা নিয়ন্ত্রণে উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক সুশান্ত রায়। মঙ্গলবার দুপুরে মালদহের সানাউল্লাহ মঞ্চে শহরের পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে সে কথা জানান তিনি। বৈঠকে মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র একই অভিযোগ করেছেন।?তাঁদের বক্তব্য, পুজো মণ্ডপ এ বারে পুরোটা পড়ুন ... ...
আজ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, এই সময় পত্রিকায় বিশ্বভারতীর অচলাবস্থা বিষয়ে আমার একটি প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছে, এখানে লিঙ্ক ও ছবি দেওয়া হল। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আজকের হাইকোর্টের রায়ের আগে এটি লেখা হয়েছে এবং প্রকাশিত হয়েছে। মোদ্দা বক্তব্য ছিল এই: কতিপয় ছাত্র-ছাত্রীর উপরে যে আক্রমণ নেমে এসেছে তার মূল কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ক্ষমতার বিন্যাসে এবং সামাজিক ভাবে তারাই দুর্বলতম। ... ...
কাকা, পুজোর চাঁদা টা .....অফিস ফেরত পাড়ায় ভজনদার দোকানে চা বলে মাস্ক টা খুলতে যাব এমন সম্মোধন এ চমকে উঠি ..... জানি সোয়েটার মাস্ক মাফলার টুপিতে চেনা দায় তবুও কাকা ?? এ বলেকি ?? ওমা, ঘুরে তাকিয়ে দেখি বছর আট থেকে বারোর গোটা দশেকের গ্যাং । - কাকা, চাঁদা ২১টাকা- কিসের ? - ওই যে, সরস্বতী পুজোর চাঁদাপাশ থেকে নেতা গোছের এক হাফপ্যান্ট বলে ওঠে- কাকা আমাদের কিন্তু কুপন না, ছাপা বিল হাতে নাম লেখা... চমকে উঠি আর মন চলে যায় টাইম মেশিনে চেপে প্রায় ১৫বছর আগে ... ...
কৃষি অর্থনীতির হাত ধরেই গ্রামীণ বাংলার ঘরে ঘরে কোজাগরী পূর্ণিমায় আবাহন হত মা লক্ষ্মীর গৌতম চক্রবর্তী সেই চাঁদ এখনো ওঠে। সেই পূর্ণিমা এখনো ভাসে। আকাশ বাতাস ভাসিয়ে পূর্ণিমার জোয়ারে দশদিক আজও ম্লান হয়ে যায়। শুধু তেমনভাবে শোনা যায় না সেই শাঁখের ধ্বনি আর মা কাকিমাদের উলু দেওয়া। হারিয়ে গেল সেই সময়কার ঘিয়ের প্রদীপ, তিলের নাড়ু, ফুলুরি, সন্দেশ, চিড়ে নারকেল, আখ। বাংলার ঘরে ঘরে সেই লক্ষ্মীপুজোর রাত ছিল অনেকটা রূপকথায় পড়া রাতের মত। ... ...
[সিঙ্গাপুরে ২০০৫ সালে 'মিলন' সাহিত্য পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত ]এটাতে ফনট সমস্যা হয়েছে, তাই নতুন করে লিখতে হবে।