মানুষকে কখনো কখনো শার্দূল হয়ে উঠতে হয় / বাড়িতে তখন পোষ মানানো হচ্ছে / কুকুরের বাচ্চা / পোষ্য এবং পোষক দু'জনেই লোভনীয় / খোঁড়া পা নিয়ে আমার বিপ্লবী জেঠু / শার্দূলকে ভেবে বসছে কুকুর / কুকুর নিজেকে জেঠু ভেবে / সেজে উঠছে অযোধ্যায় যাবে বলে / পোষ্যদের খাদ্য প্রয়োজন / প্রয়োজন সঠিক সময়ে / সঠিক সমস্যা বোঝা / একটা হাড়ের লোভে শার্দূল ছুটছে / পেছনে পা খুঁড়িয়ে জেঠু / হাড় এবং / লোভ এবং / খোঁড়া পা / হো হো করে হেসে উঠছেন / আমাদের প্রণম্য / সন্তোষ রাণা ... ...
গলির শেষ প্রান্তে একসময় বাজত সুরের রজনীগন্ধা গ্রীষ্মের ক্লান্ত দুপুরে, শীতের মিঠে রোদে ছাদে উঠে মেলে দিত ছাপা কাপড়, ছড়িয়ে যেত রেক্সোনা সাবানের চেনা গন্ধ কৈশোর চাইত আরো একটু গায়ের কাছে যেতে ঘেঁষে যেত ঝুঁকে আসা গাব গাছের পাতা কাটা কাটা ছায়ায় বসে ফিসফিস করে কানের কাছে কেউ বলত নিষিদ্ধ গল্প – একের পর এক শীতের চাদরের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসা দুধ সাদা হাতে আলতা চুঁয়ে পড়া দেখতে বলত মিঠে ফিনফিনে গলা বলত চাদরে জড়িয়ে রাখা আছে সিন্দবাদের গল্পের ঝুলি আলাদিন হবার প্রলোভন দেখাত দুপুরের ছাদ – ... ...
যারা ভোর-ভোর উঠে স্বাস্থ্যচর্চা করে পার্কে দৌড়ায় ঠিক করে দেখলে আসলে তারা মৃত্যুভয়ে দৌড়ায় একথা লিখেই মনে পড়লো— তুমিও তো ঠিক করে দ্যাখোনি কখনো আমি কেন এভাবে দৌড়ে গেছি তোমার দিকে পড়ে গিয়ে, হোঁচট খেয়ে, আবার হেঁটে গেছি এক বর্ষা আগুনের ভিতর দিয়ে শুধুই তোমার পাবার জন্য! ... ...
একটা নধর আকারের গোটা পেঁয়াজ, পান্তাভাতের থালার পাশে। এই স্বপ্নটা বিলাস ক’দিন ধরেই দেখছে। আসলে এখন গোটা একটা পেঁয়াজ একবেলায় কে আর খেতে পাবে? অর্ধেক বা সিকিভাগ বরাদ্দ, যা দাম বাড়ল… কিছু করার নেই। বাদ চলেও যেতে পারে একদম। তখন শুধু লঙ্কার আচার দিয়েই… বউ দু’আঙুল দিয়ে যেভাবে সিঁদুর পরত, সেভাবে একটিপ লাল লঙ্কার আচার কৌটো থেকে তুলে নেবে সে। ... ...
হলুদ ফুল ছিলো চোখের পাতা ছুঁয়ে শহরও আলোময় পাপে ও উত্তাপে সে ছিলো মধুমাস, মেলাতে কত লোক কেনো যে স্মৃতিরতি, কেনো যে নীরবতা কেনো যে মনে পড়ে, পাথুরে অবকাশে ... ...
শব্দহীন সাইকেল আসে৷ বেল বাজেনি ক্রিং৷ বেল বেজেছে ক্রিং। ঘরঘর করে আহ্লাদে ডেকে ওঠেনি পোষ মাদীটা। টের পায় সাড়ে তিন বছর৷ খুলে দেয় কাঠের পৌনে চার ফুটে হুড়কা আর চেয়ার টেনে ছয় ফুট উঁচুতে লোহার ছিটকিনী৷ "আব্বু আসছে"৷ এইবার গলাগলি ঘুম- ফজর আমার.. ফিশফিশানি দুপুর আসে৷ রঙিন ফড়িং, বোয়ামে নীল চোপড়া মাছ! ঘুম আর ভলো লাগে না৷ মনেহয় দিনমান খেলি "ঘুঘু'র তোর তরকারি" খেলতে খেলতে জহর গড়িয়ে আছর৷ পালানো বাছুর। সুতো ছিড়া ঘুড়ি৷ সন্ধ্যায় রুলটানা খাতা বেঁকে বেঁকে যায়৷ ক্লাস ফাইভের পদ্য লেখার রোগ… ... ...
সে আমাদের ভুল বানানের চিঠি, সে আমাদের মুগ্ধ চেয়ে থাকা। পাখির ডানায় শেষ বিকেলের আলোয় রাখাল সাজার পাতার বাঁশি রাখা। সে আমাদের গোপন বনলতা, সে আমাদের লুকিয়ে রাখা আলো। ... ...
ভালোবাসার কাছে যদি পারো, খুলে রেখো তোমার মুখোশ ও দস্তানা এসব এমন, এমনই একটা সময় যখন নিজের কাছে নিজের উপস্থিতি সন্দিগ্ধ ঠেকছে খুব খানিক তফাত রেখে তোমায় নিরীক্ষণ করছে তোমারই পাথরের অবয়ব, ওই তার চোখের মণিহীন চাউনি, ধারালো পেরেকপ্রবণ দৃষ্টিতে দূরের নীলাকাশে, অনাগত মেঘের মত ওই তোমার ছায়া লম্বালম্বি বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে দেখো, সবুজাভ দেওয়ালের গায়ে লেগে থাকা তার টুকরো হাতের ছাপ, অঙ্গ ও মাংসপেশি, ... ...
কোনো সমুদ্রের হোটেলে বন্ধ ঘরের মধ্যে আমি মরে গেছি। ধরো, সেসময় ভোর পেরিয়ে সকাল। ঘরের জানালার কাচে বাইরের সাদা আলো। প্রতিদ্বন্দী অন্য হোটেলের ঘরগুলিতে যারা আছে- যেসব সংসার অথবা একলা মানুষ, তারা এসময় জেগে উঠে প্রকৃতির টানে হয়তো বাথরুমে, হয়তো নির্ভার হয়ে এসে বিছানায়। কেউ রাতের কোঁকড়ানো চুল চিরুনি লাগিয়ে সোজা করছে, কেউ ভুল মোজা ভুল পায়ে পরে তা আবার সংশোধন করছে। সমুদ্রে ঢেউ উঠে পাড়ে ছুটে আসছে পরপর। সকালের নরম, শীতল ঢেউ। সৈকত নির্জন। শুধু বিগতদিনের আস্ফালন, রক্তপাত বা ধস্তাধস্তির ছাপ বালিতে লেগে আছে। জীবন্ত হয়ে আছে পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া দুইজোড়া পায়ের ছাপ। বহুদূর তারা পাশাপাশি হেঁটে গিয়ে বাঁক নিয়ে কোথাও অদৃশ্য হয়েছে। ঝাউবন ঠাণ্ডা। তার গোড়ায় গোড়ায় পরিষ্কার বালি। হোটেলের ডেস্কে যে মানুষ কর্তব্য সামলাতে এইমাত্র এসে বসল, সে এখানে আসার আগে বাতাসে তার শেষ হাই ত্যাগ করে এসেছে। সমুদ্রের হোটেলে যে মেয়েরা আছে, এখন তাদের জল দিয়ে ধোয়া পরিচ্ছন্ন যোনি। জামার নীচে শান্ত স্তন। যেসব পুরুষেরা দিগ্বিজয় করে এখানে এসেছে, তাদের পুরুষ্ট লিঙ্গ এখন মৌনসাধকের মতো ক্ষমাশীল। তাদের মুখগহ্বরে শুদ্ধ আত্মার গন্ধ। তাদের আঙুলের গাঁটে বাদশাহের মতো অসংখ্য চুনি-পান্নার আংটি সকালের আলোয় ঝিকমিক করছে ... ...
সংখ্যার ভিতরেও অজস্র সংখ্যারা থাকে যেন বাসাবাড়ি, বৃক্ষকোটরে অরণ্য প্রয়াস দরজা জানলা ডালপালা, ফুলফল পাতায় মানুষ বা কীটের বসবাস, যাতায়াত বারোমাস ... ...
সংখ্যার ভিতরেও অজস্র সংখ্যারা থাকে যেন বাসাবাড়ি, বৃক্ষকোটরে অরণ্য প্রয়াস দরজা জানলা ডালপালা, ফুলফল পাতায় মানুষ বা কীটের বসবাস, যাতায়াত বারোমাস ... ...
'হাত-রথ থাকতে থাকতেই পৃথিবীর সবকিছু দেখে ফেলা উচিত' এমন একটা কথা বলত ক্ষয়ে আসা এক বৃদ্ধা। যখন বলত তখন মুখ থাকত জানলার দিকে ঘোরানো,দৃষ্টি লোহার শিক পেরিয়ে অনেক দূরে। হাত অবধি বোঝা যেত কিন্তু রথ কী করে থাকতে পারে একজন মানুষের! রামায়ণ মহাভারতের কাল তো পেরিয়ে এসেছি অনেকদিন। ওঁর নিজের শরীরকে চাকা লাগানো কাঠের রথ বলে মনে হত হয়তো। ... ...
আরও কথা বল বরং, আরও দৃশ্য তৈরি হোক, মুহূর্তের গর্ভে সারি সারি বিন্দু বিন্দু মুহূর্তের অণু-পরমাণুগুলি। বিশ্বাস করো, এখনও জমাই আমি পাগলের মতো তোমার সঙ্গে কাটানো সময়গুলি। প্রতিটি বাক্য, তার মধ্যের আলাদা আলাদা শব্দরা, তার উচ্চারণ, তখন কী বৃষ্টি হচ্ছিল না কি ফুরফুরে হাওয়া, কেমন ছিল এই কালভার্টের পাশে অল্প ঘাসগুলি, ইটভাটি থেকে ধোঁয়া উড়ছিল নাকি তখন, ফড়িং উড়ছিল কি না। জানো মস্ত এক রাজ্য বানিয়েছি অন্দরে। এইসব মুহূর্ত নিয়ে। তুমি শহরে ফিরলে আমিও টুপ করে ওখানে বেড়াতে চলে যাই। এক একটা দেখা হওয়ার দিনের এক একটা গুমটি দোকানঘরের মতো সেই চুরানব্বই সালের এগারোই নভেম্বর থেকে পর পর সাজানো। ঈশ, যদি তোমাকে দেখানো যেত! ... ...