বাড়ি ফিরে আরেক প্রস্থ ঝামেলা। ফ্ল্যাটবাড়ির দরজায়ই বিজনবাবু। সব্য তখনও গাড়ি থেকে নামেনি, ভালো করে নাকি পার্ক করছে। সিঁড়ির ল্যান্ডিং এ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে শমিতা, তখনই বিজনবাবু। সিঁড়ি দিয়ে নামছেন। বয়স্ক মানুষ, ওদিকের ফ্ল্যাটে থাকেন। খুব যে দেখাসাক্ষাৎ, কথাবার্তা হয়, তা নয়। কিন্তু আজ শমিতাকে দেখে কীরকম আশ্বস্ত হন মনে হয়। - আপনি বাড়ি ছিলেননা না? শমিতা বলে, না, এই তো ফিরছি। - ও। আসলে আমি একটু গিয়েছিলাম। - কোথায়? - আপনাদের ফ্ল্যাটে। আপনারা কেউই ছিলেননা না? শমিতা একটু অবাক হয়ে বলে, এই সময় তো কোনোদিনই আমরা থাকিনা। - সে তো জানি। বিজনবাবু চিন্তিত গলায় বলেন। - আসলে ওদিকে একটা আওয়াজ পেলাম। ভাবলাম চোর-ডাকাত নাকি। একবার নক করে দেখি। যা দিনকাল। ... ...
- আপনারা তো প্লাস্টিক সার্জারি করেন। - করি। আপনার না অন্য কারো? - আমার। - নাক সোজা করতে গেলে ২৫ লাখ। গাল তোবড়াতে গেলে ৩০। অবিকল পড়া মুখস্থের মতো বলে মেয়েটা, মেয়ে না কলের পুতুল কে জানে। - ঠোঁটও ঠিক করি। কিন্তু মেলদের ওটা লাগেনা। - আপনার বাজেট কত? মনির গলা কেঁপে যায়। - মানে, মুখে না, একটু নিচে। - ঘাড়, গলা, এগুলোয় হবেনা। ওগুলো ভগবান দিয়েছেন। যা দিয়েছেন তাই নিয়েই খুশি থাকুন। ওখানে আমরা হাত দিইনা। বুকে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করি। সেটাও আপনার লাগবেনা। ভুঁড়ির ফ্যাট বার করে দেওয়া যায়। রেট কত চেক করে বলতে হবে। তবে সিক্স প্যাক হবেনা। ওটা আপনাকে নিজেকেই বানাতে হবে। - মানে, ভুঁড়িও না। তলপেটের সাইডটা। - বুঝিয়ে বলুন। চোখ-কান বুজে মনি বলে ফেলে - ওই জেনিটালস সাইডটা। আঃ। বলে ফেলে কী আরাম। ... ...
এক ছিল হনুমান। সে ছিল খুব রামভক্ত। মানে, প্রথম থেকে কি আর ছিল? এক সময় অবধি হনুমান দিব্যি জঙ্গুলে জীবন কাটাতো, হনুমতীদের সঙ্গে খুব ফস্টিনস্টি করতো, হনুমানোচিত নানারকম কাজ এমন দক্ষতার সঙ্গে করতো, যে গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল হনুর কীর্তিকলাপের। বাপ পবনদেবের অর্থ আর প্রতিপত্তির সাহায্য নিয়ে অনেক গ্যাঁড়াকল থেকে বেঁচেও ছিল অবশ্য ছোকরা। প্রতিপত্তি না থাকলে কি আর সূর্য নিজে প্রাইভেট ট্যুশন পড়ায় কাউকে? বেয়াদপ হনু সেখানে আপেল-ফাপেল নিয়ে কী একটা কেত্তন করেছিল, পবনদেব নিজের উদ্যোগে সে খবর ধামাচাপা দেন। ... ...
শুন সবে ভক্তগণ, শুন দিয়া মন, দুঃখের কাহিনী এক করিব কথন-- অগ্রে দিব পরিচয় শুনে রাখো নাম, অতীব দুঃখী আমি বাঙালির রাম। ... ...
আমাদের মানুষদের নীচের চোয়ালের হাড়টিকে বলা হয় ‘হনু’। যদি বুদ্ধি থাকলে কেউ আমাদের বুদ্ধিমান বলেন, কেউ ভেসে থাকলে যদি তাকে ভাসমান বলেন, তাহলে ব্যাকরণের সেই যুক্তিতে আমরা সবাই ‘হনুমান’ হবো না কেন? ‘চিকেন টপ’ টিভি চ্যানেলের স্টুডিও। শুরু হবে প্রাইম টাইম অনুষ্ঠান। অতিথি শ্রী ঘনশ্যাম কর্কট মহাশয়। আর রয়েছেন অ্যাঙ্কার, ক্যামেরাম্যান এবং অন্যান্য crew। অ্যাঙ্কার - চিকেন টপ টিভি চ্যানেলের প্রাইম টাইম অনুষ্ঠানে আপনাদের সকলকে স্বাগত। শুরু হচ্ছে আজকের অনুষ্ঠান “ইতিহাসে পাতিহাঁস”। অতিথি হিসেবে আমরা আজকে পেয়েছি “ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর হিস্টিরিয়া রিসার্চ” এর একজন স্বনাম ধন্য বাঙালি ইতিহাসবিদ শ্রীমান ঘনশ্যাম কর্কট মহাশয়কে... [ঘনশ্যাম কর্কট হাত তুলে নমস্কার করলেন] ঘনশ্যামবাবু আমাদের অনুষ্ঠানে আসবার জন্য ধন্যবাদ... ঘনশ্যাম – [হেসে] জয় বজ্রং বলি... জয় হনুমান। আর ওটা হিস্টিরিয়া নয়, হিসটরিকাল। ... ...
সূত্রধর ১: (টেনে-টেনে) অনেক অনেক বছর আগের কথা। অনেক দূরে এক দেশ ছিল। সে দেশে বড় বড় ক্ষেত, লম্বা লম্বা নদী, উঁচু-উঁচু পাহাড়, আর গভীর-গভীর সমুদ্র। সেখানে গোলা-ভরা ধান, নদী-ভরা জল, গোয়াল-ভরা গরু, গাছ ভরা হনুমান। সূত্রধর ২: (থামিয়ে) ছোটো করে বল না। এত লম্বা করলে লোকে পালাবে। সূত্রধর ১: (বিরক্ত হয়ে) লোক জমবে বলেই তো লম্বা করছি। অ্যানাউন্সমেন্টের কী বুঝিস তুই। সব ধর-তক্তা-মার-পেরেক নাকি? যাই হোক। (আবার শুরু করে) সেখানে ছিলেন এক রাজা। রাজা যেমন বড়, তেমনি ধার্মিক। সূত্রধর ২: (থামিয়ে) রাজার দুই রানী। সীতা আর গীতা। রানীদের গা ভরা গয়না, প্রজাদের পকেট ভরা মায়না। কোথাও কোনো অভাব নেই, কেউ করেনা বায়না। সূত্রধর ১: (আরও বিরক্ত) তোদেরকে কে স্টেজে তুলে দেয় রে? প্রজাদের পকেটে কোনো পয়সা নেই। সূত্রধর ২: অ্যাঁ? তবে খায় কী? সূত্রধর ১: প্রজারা টাকার কলে লাইন দেয়। রোজ কিছু করে করে টাকা ছাড়া হয়। যারা পায়, তারা খায়। যারা পায়না, তারা পরেরদিন আবার লাইন দেয়। রাজা এসেই সব মোহর বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিলেন। সূত্রধর ২: কেন? সূত্রধর ১: যাতে লোকেরা মোহর নিয়ে অপচয় না করতে পারে। সূত্রধর ২: সব টাকা এখন রাজার ভান্ডারে? হেবি বুদ্ধি তো। সূত্রধর ১: তোর মতো গাড়ল হলে কি আর রাজা হত? রাজত্ব হত? সূত্রধর ২: আর রানী? সূত্রধর ১: ওরে পাঁঠা, এ রাজার কোনো রানী নেই। সূত্রধর ২: এ বাবা, বিয়ে করেনি? দেখতে বাজে? সূত্রধর ১: দেখতে বাজে? ছাতির মাপ জানিস? ইয়াব্বড়ো ছাতি। এত বড়, যে, বৌকেও ভয় পায়না। একজন বৌ আছে, কিন্তু সে রানী নয়। আলাদা থাকে। ... ...
নূরবানুর মনে পড়ল। তাঁর কিশোরীবেলায় দাদার হিন্দু বন্ধুরা বাড়ি থেকে লুকিয়ে চুরিয়ে এসে মুরগির মাংস খেয়ে যেত তাঁদের বাড়িতে। কিশোরী নূর তখন রূপের ছটা ছড়ায়। তার দিকে আড়চোখে তাকাতও হিন্দু ছেলেদের কেউ কেউ। কিন্ত ঐ তাকানো পর্যন্তই। টুবাইয়ের ছোট দাদুও আসতো। মলিনার ছোট খুড় শ্বশুর। দিব্যি হাট্টা কাট্টা জওয়ান ছেলে। নূরবানুর বেশ ভালোই লাগত তাকে। অসময়ে পটাশ করে মরে গেল লোকটা। তাকানোর ভঙ্গী ভারি ভালো ছিল তার। ... ...
বর্তমানে সোশাল মিডিয়াতে তর্জার একটা মূল ধারা হল আমাদের ধর্মচেতনা। শুধু মাত্র ভারতে নয়, বা এই উপনিবেশে নয়, কিছু স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশ বাদ দিলে সম্ভবতঃ বেশিরভাগ দেশেই একধরনের বিবাদমান যুযুধান কিছু গোষ্ঠী পাওয়া যাবে, যারা সদাই এই নিয়ে মাথা কুটে মরছে। ফলতঃ নানান কূট প্রশ্ন মাথায় ঘোরাফেরা করে যে এই ধর্মের সূত্রপাত কোথায়? কৈ বাকি জীবেরা তো ধর্ম অধর্ম নিয়ে মাথা ঘামায় না। আমাদের মধ্যেই এর প্রকাশ কেন? সেই উদ্দেশ্যেই এই লেখার অবতারনা। এই লেখাটি মূলতঃ ইউনিভার্সিটি অব ভিক্টোরিয়ার প্যালিওএন্থ্রোপোলজিস্ট জেনিভিয়েভ ভন পেটজিঙ্গারের টেড টক আর কিছু পেপারের সার। ... ...
তখন পরীক্ষার আগের দিন ইদ পরতো। পরেরদিনও। স্নাতক সাম্মানিক বা স্নাতকোত্তর পর্বে বাড়ি যাওয়াই হতো না। একবার হোস্টেল ছেড়ে একটা মেসে আছি। মুসলিম ছেলেদের মেস। মনখারাপ। শহর তো গ্রামের মতো নয়। কে খাচ্ছে আর কে খাচ্ছে না, খবর রাখে কতজন? শরীর যেন অনেকটাই আত্মঘাতক আত্মকেন্দ্রিক। ... ...
চন্দ্রোদয়। ছোটদের সামনেই বলতে হবে, বুঝলে? ওদের মনটা এখন জলের মত স্বচ্ছ, আমাদের এই স্বচ্ছ স্বর্গভূমির মতো। ভালো খারাপ চিনতে শিখুক, আদর্শ কাকে বলে সেটা বুঝতে শিখুক, ওরাই তো আমাদের নতুন স্বর্গভূমির ভবিষ্যৎ। সামনের নির্বাচন থেকে আমরা সব অবোধ শিশুকে ভোট দেবার অধিকার দেব, জান না? শিশুরাই ভোট দেবে এখন থেকে, বিধর্মী আর না-ধর্মীরা সব বাতিল। হুঁঃ, দেশছাড়া করে ছাড়ব সব কটাকে। (বলরামকে) কী বলরাম, সেই ধর্ষণের কেসটা... মেয়েটাকে যখন হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এক্স-রে করবার জন্যে, তখন সেই অ্যাম্বুলেন্সকে তোমার ওই নম্বরহীন লরিটা দিয়ে ধাক্কা মারার ব্যবস্থা করনি তুমি? বলরাম। আমিই করেছিলুম গুরুজি। কিন্তু সে তো আপনার পরামর্শেই। ... ...
বনের ধারে রাখালি দোচালাখানি, বড় নিজের মনে হয় বুনোলতা, বুনোলতানো ফুল গাছ উঠে গেছে চালার উপরে নিদাঘের ভিতর এই ছায়াকুঞ্জ ... ...
এখন এই এক ঝামেলা হয়েছে। শীতটা পড়ার মুখে কেবল আকাশ ঢেকে যায় গুঁড়ো গুঁড়ো ধুলোর চাদরে।কেউ বলে দেওয়ালির চটরপটর আতসবাজির কারণে এই ধোঁয়াশা। আবার কেউ বলে ভিন রাজ্যের গ্রামের কিষানরা শস্য কেটে নিয়ে শুকনো গোড়া নাকি পুড়িয়ে দেয়। সেখান থেকেই শহরে উড়ে আসে এই ধোঁয়া ধোঁয়া ছাই; সেই কারণেই এই দূষিত বাষ্পের বেড়াজালে নাভিশ্বাস ওঠে শহরবাসীর। ... ...
ঘরের ভিতরের ছিটকিনি জোরে ঠ্যালা দিতেই একরাশ বাতাস আকুলি বিকুলি করে বেরিয়ে এলো আটকে থাকা বাতাস নাকি খবর দিতে চাওয়া? ... ...
তোমার অসহ্য রূপ পড়ে আছে ভূমিতে খানখান তুলে নিয়ে জোড়া দিই দুহাতের আঙুলে আঙুলে দশ আঙুলে জ্বলে ওঠে শিখা, ভুমা ফেটে যায় তুমি মুখে নিয়ে আগুন নেভাও আমি ফের গড়ে তুলি শূন্য হতে তোমার মৃত্তিকা ... ...