অভিযোগটা যদি দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কোন ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে হয়; কিংবা দেশের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে খেপিয়ে তোলার প্রসঙ্গে হয়, নিঃসন্দেহে তা গুরুতর এবং তদন্ত ও প্রমাণ সাপেক্ষে কঠোরভাবে দণ্ডনীয়ও বটে। সুতরাং, দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে রাষ্ট্র যদি কোন বিষয়কে বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় নিয়ে আসে, তা রাষ্ট্রের মৌলিক কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু অনিবার্যভাবে প্রশ্ন উঠবেই, যদি দেখা যায় যে, দেশের অখণ্ডতা রক্ষার খোলসের আড়ালে রাষ্ট্র যদি দেশের নাগরিক সমাজের বাক্ স্বাধীনতা ও অবাধ মতপ্রকাশের অধিকারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে খর্ব করতে উদ্যত হয়। ... ...
গত ১২ই জুলাই, শুক্রবার, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পনেরোতম আন্তর্জাতিক গণিত-শিক্ষণ কংগ্রেস-এর সম্মেলন থেকে অধ্যাপক জয়শ্রী সুব্রহ্মনিয়নকে নিরাপত্তা-আধিকারিকরা প্রহরা দিয়ে বের করে দেন। তাঁর ব্যাজ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং রেজিস্ট্রেশন প্রত্যাহার করা হয়। কারণ হিসেবে তাঁকে বলা হয়, যে, সেদিন সকাল ন-টায় অধ্যাপক আশিস অরোরা-র বৈদিক গণিতের অধিবেশনে তাঁর করা কিছু মন্তব্যকে কিছু অন্য অংশগ্রহণকারীর শাসানিমূলক ও ভীতিপ্রদ মনে হয়েছে। কতটা আতঙ্কের উদ্রেককারিণী এই ভারতীয় গণিত-অধ্যাপক? কতটা ভয়ঙ্কর তাঁর উপস্থিতি, যার ফলে তাঁকে শিক্ষকদের সম্মেলন থেকে বের করে দিতে হয়? ‘বৈদিক গণিত’ ঠিক কীরকম বিপন্ন হয়েছিল তাঁর উপস্থিতিতে? এসব কথা জানতে, সেই অধিবেশনেরই আরেক শ্রোতা এবং ওই সম্মেলনের আরেক নিমন্ত্রিত বক্তা, ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক থিওডর চাও-এর বয়ান পড়ে ফেলুন। ... ...
২০২৪ লোকসভায় নরেন্দ্র মোদীর চারশো পারের খোয়াব যদি সত্যি সত্যি বাস্তবায়িত হত তাহলে ২০২৫ সালে আরএসএসের শতবর্ষে সংঘকে হিন্দু রাষ্ট্র উপহার দেওয়া কিংবা আইন হিসেবে মনু সংহিতাকে প্রতিষ্ঠিত করা অসম্ভব ছিল না খুব। কারণ নিজের তৃতীয় দফার সরকারে তিনি যে সংবিধান বদলাবেন এমন আভাস নরেন্দ্র মোদী নিজে এবং অমিত শাহ দিয়ে রেখেছিলেন। ... ...
কালের নিয়মে, হিংস্র মৃত্যুদানবের উন্মত্ত নেশাতে এক সময় অবসাদ এসে জমাট বাঁধে। অহর্নিশি তোলপাড়ের ক্লান্তিতে খরস্রোতা নদীর চোখ ক্ষণিকের তরে বুজে আসে। বিধ্বস্ত চরাচরে ঝুপ করে নেমে আসে শ্মশানের স্তব্ধতা। গোবর নিকানো আদুরী উঠোনময় শুধু চরে বেড়ায় স্মৃতির বিধ্বংসী খণ্ডচিত্র। সুন্দরবনের মানুষদের আছেটাই বা কি, যে হারাবে! কিঞ্চিত জমি-জিরেত, খান কয়েক গবাদি পশু, স্বপ্ন বোঝাই ডিঙি নৌকো, আর নদীর ওপারের ভয়াল বাদাবন। ... ...
আশার কথা, এই মিছরির ছুরির থেকে এবার রাষ্ট্র বেরিয়ে পড়েছে। ন্যায়, অন্যায়, ধর্ম, খাদ্য নানান সংহিতা তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্র আর মুখ লুকিয়ে থাকতে রাজি নয়। দেশদ্রোহীদের কড়া হাতে শায়েস্তা করা হবে। পুলিশ চাইলেই যে কাউকে দেশবিরোধিতার জন্য টেনে নিয়ে চলে যেতে পারে। কারণ রাষ্ট্র মানেই লেফট রাইট লেফট রাইট লেফট রাইট। কিন্তু আগামীদিনের ভারতবর্ষ ঠিক কেমন হয়ে উঠতে পারে? ধরুন আমাদের বুকশেলফ ভরে উঠতে পারে বিভিন্ন সংহিতায়। কী খাব? তার জন্য খাদ্যসংহিতা। কী পরব? তার জন্য পোশাকসংহিতা। কী রকম চুল কাটব? তার জন্য কেশসংহিতা (পুরুষের জন্য একরকম, মেয়েদের জন্য আরেকরকম), কাকে বিয়ে করব? তার জন্য সংহিতা (বিবাহসংহিতা), কার সঙ্গে প্রেম করব? তার জন্য সংহিতা (প্রেমসংহিতা)। এর পর ধীরে ধীরে বেরোবে কাশিসংহিতা, হাঁচিসংহিতা, পাদসংহিতা, মিলনসংহিতা, কন্ডোমসংহিতা, ইত্যাদি প্রভৃতি। ... ...
এবার আমরা দেখে নেই কিভাবে চালু হতে যাওয়া নতুন আইন বিধিতে পুলিশ রাজ কায়েম করা হয়েছে। একটা উদাহরণ নেওয়া যাক, ভারতীয় সংবিধানের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে বাক স্বাধীনতা, সভা, সমিতির অধিকার দেওয়া হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করার অধিকার রয়েছে। এই দিকে নজর রেখে সুপ্রিম কোর্ট বারবার ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ আইন বাতিল করতে বলেছে। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলেছেন, সরকারের বিরোধিতা মানে রাষ্ট্রের বিরোধিতা নয়। পুরানো আইন অর্থাৎ আইপিসি ১২৪(এ) ধারায় স্থগিতাদেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন কাউকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় অভিযুক্ত করা যাবেনা। কিন্তু নতুন আইন অর্থাৎ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৫০ ও ১৫২ ধারায় কৌশলে রাষ্ট্রদ্রোহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃতভাবে বা জেনেশুনে বক্তব্যে অথবা লিখিত, বা সাংকেতিক চিহ্ন দ্বারা, বা দৃশ্যমান উপস্থাপনা দ্বারা, বা বৈদ্যুতিন যোগাযোগ দ্বারা, অথবা আর্থিক উপায় ব্যবহার করে বা অন্যভাবে উত্তেজিত বা উত্তেজিত করার চেষ্টা করে যাতে বিচ্ছিন্নতা বা সশস্ত্র বিদ্রোহ বা নাশকতামূলক কার্যকলাপ, বা কেউ যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে উৎসাহিত করে যার দ্বারা ভারতের সার্বভৌমত্ব বা একতা বা অখণ্ডতাকে বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় তবে তা উক্ত ধারায় শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে শাস্তির যেখানে আগে নূন্যতম ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন ছিল তা নতুন আইনে নূন্যতম ৭ বছর থেকে যাবজ্জীবন করা হয়েছে। ... ...
আমাদের রাজ্যে সম্প্রতি শিশুচুরির গুজবে গণপিটুনির ঘটনা বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিস এসে কোনোরকমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে না বাঁচালে এগুলি সবই লিঞ্চিংয়ের নজির হয়ে উঠত। মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি, ভবঘুরে, মহিলা-ছাড় পাচ্ছেন না কেউ। যদিও সারা বছর ধরেই পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে ছেলেধরা, গরুচোর বা ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতেই থাকে। এগুলি সাধারণত খবরের কাগজের ভেতরের পাতায় ছোট্ট খবর হিসেবে থাকে। পুলিসও নাম-কা-ওয়াস্তে একটা তদন্ত করে কেসগুলি মিটিয়ে দেয়। এই ঘটনাগুলি গ্রামের মানুষ প্রায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘটিয়ে থাকেন। এর পেছনে যে কারণগুলি তারা দেখান তা হচ্ছে (১) পুলিসি অকর্মণ্যতা, (২) দীর্ঘসূত্রী বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা আর (৩) গ্রাম বা অঞ্চলের সুরক্ষা। ... ...
মন্দা কাটার পর ২০১১ সাল নাগাদ শুরু হয় দ্বিতীয় বিপ্লব। মল তৈরি হতে থাকে দ্রুতগতিতে। বড়, মাঝারি শহরগুলো ছেয়ে যেতে শুরু করে মলে। একটা হিসেব পাওয়া যায়, যে, ২০১৭ সালে, গোটা ভারতে ৬০০ টার মতো মল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এর বেশিরভাগটাই ২০১১র পরে। মলগুলো নানারকম ছিল, কিন্তু যদি কেউ ২০১১র পরের মলগুলোর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য মনে করে দেখেন, তো মনে করতে পারবেন, এগুলো আগের মলগুলোর থেকে আলাদা। নতুন মলগুলোয় এবং পুরোনো গুলোও বদলে ফেলা হয় এমন ভাবে, যে, সেগুলো আর শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, সময় কাটানোর জায়গা হয়ে ওঠে। সম্পূর্ণ শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত, অজস্র রেস্তোরাঁ, খেলার জায়গা এবং অবশ্যই একটি মাল্টিপ্লেক্স। আন্দাজ করা যায়, মলের দোকানগুলো জিনিস বেচলেও, মলগুলো আসলে বিক্রি করছিল জীবনযাত্রার ধরণ। শনিবার বা রবিবার মধ্যবিত্তরা সময় কাটাতে মলে আসবে, মলগুলোই হবে গন্তব্য, এবং লোকে এসে পড়লে পয়সা তো খরচ করবেই, এইটাই ছিল লক্ষ্য। ভারত সরকার, প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে, এই পুরো প্রক্রিয়াটার পিছনে ছিল, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই পুরো সময়টাতেই বিক্রির ক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের নিয়মকানুন শিথিল করা হয় এবং মলগুলোর একটা বড় অংশই ছিল বিদেশী পুঁজির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ। এরই মধ্যে ২০১৬ সালে হঠাৎ একদিনের ঘোষণায় ভারতে চালু করে দেওয়া হয় নোটবন্দী। নগদ টাকায় লেনদেন কার্যত দীর্ঘদিনের জন্য খোঁড়া হয়ে যায়। একই সময় চালু হচ্ছিল ই-কমার্সের নানা ব্যবস্থা, অ্যাপ, এবং টাকাহীন লেনদেনের নানা ব্যবস্থা। নোটবন্দীর ক্ষেত্রে কারণ দেখানো হয়েছিল, কালো টাকা উদ্ধার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কয়েকবছর পরে দেখা যায়, প্রায় কোনো কালো টাকাই উদ্ধার করা যায়নি, ফলত গোটা নোটবন্দীকেই একটা বৃহৎ কেলেঙ্কারি বলা যেতেই পারে। এই সময় সরকারকে সরাসরি দেখা গেছে অ্যাপ দিয়ে লেনদেনের পৃষ্ঠপোষকতা করতে। সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে, অ্যাপ, বড় খুচরো কোম্পানি, এবং মলগুলোর সুবিধা করে দিতেই এই সিদ্ধান্ত। শুধু এদেরই সুবিধা করে দিতে নিশ্চয়ই না, আরও অনেক সুবিধাভোগীও অবশ্যই ছিল, কিন্তু এরা যে সেই তালিকার অন্তর্গত, সে নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই। ... ...
হাসদেও অরন্য বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতির (HABSS) আহ্বায়ক, যিনি সবুজ রক্ষার লড়াইয়ে সারা বিশ্বের নজর কেড়েছেন সেই ‘গোল্ডম্যান’ বা ‘গ্রীণ নোবেল’ পুরস্কার প্রাপক অলোক শুক্লা বলেছেন, “হাসদেও-আরন্দ বনাঞ্চলের হাতিদের জন্য একটি মুক্ত কারাগার উপহার দিতে চলেছে সরকার ও আদানি গ্রুপ।” কেন এটা বলছেন তিনি? তাঁর যুক্তি, রাজস্থান বিদ্যুৎ উৎপাদন নিগম যা কিনা আদানি গ্রুপ পরিচালনা করে তারা ‘পারসা ইস্ট ও কাঁটা বাসন’ কোল ব্লকের জন্য বরাত পেয়েছে। এরজন্য ৪ লক্ষ গাছ কেটে ফেলা হবে। ইতিমধ্যেই ৩০ হাজার গাছ কাটা হয়ে গেছে। অনতি বিলম্বে কাটা পড়বে আড়াই লক্ষ। হাতিরা যাবে কোথায়? শুক্লা বলেছেন, “হাসদেও অরণ্যের পূর্ব দিকে আগে থেকেই একটি কয়লা খনি আছে। দক্ষিণ পূর্বে শিল্প শহর কোরবা। দক্ষিণ পশ্চিমে হাসদেও নদ। বাকি রইল পশ্চিম এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত যেখানে আদানি গ্রুপ কয়লা খনির জন্য গাছ কাটতে শুরু করেছে।” ... ...
UGC NET বর্তমানে এমনই এক পরীক্ষা যেখানে মেধা বা শ্রমের কোনও জায়গা নেই, থাকার মধ্যে আছে কেবল আন্দাজ এবং একমাত্র আন্দাজ। নেট-এর গণ্ডি পেরিয়ে যারা আশা করে নিজ পছন্দের বিষয় নিয়ে গবেষণা করবে বা আপাত ভাবে JRF এর টাকায় অস্বচ্ছল বাড়িটিকে আর্থিকভাবে সাহায্য করবে ও ভবিষ্যতে একটি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনের প্রত্যাশায় রাতের পর রাত, মাসের পর মাস পরিশ্রম করে চলেছে - তাদের স্বপ্নকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে রাষ্ট্রের মামদোবাজি। ... ...
চলতি সপ্তাহের সোমবার যোগেন্দ্র যাদব একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানিয়েছেন, "পলশিকর সুহাস এবং আমি এনসিইআরটি-কে লিখেছি যে তারা যদি এই বইগুলি প্রত্যাহার না করে এবং আমাদের নামগুলি না সরিয়ে দেয় তবে আমাদের আইনি ব্যবস্থা নিতে হতে পারে।" সোমবারই এনসিইআরটি ডিরেক্টর ডিপি সাকলানিকে সম্বোধন করা একটি চিঠিতে, দু'জন জানিয়েছেন যে তাঁরা এটা "আবিষ্কার করে হতবাক" যে এক বছরেরও বেশি সময় পরে তারা পাঠ্যপুস্তক থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন এবং সংস্থাকে তাদের নাম মুছে ফেলার অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু এনসিইআরটি আবারও তাঁদের নাম উল্লেখ করেছে। ... ...
রংবেরঙের জিনিসের প্রতি কার আকর্ষণ কম? তার সঙ্গে যদি মেশানো হয় ছবি আর ভিন্ন ভাবনার অনুপম অনুপান তাহলে তো কেল্লা ফতে! দেশলাই বাক্সের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই ঘটনা ঘটলো – Veni Vidi Vici – এলাম দেখলাম জয় করলাম। একে তো দীপশলাকা হাতে পেয়ে লোকজন নিজেদের প্রমিথিউসের উত্তর পুরুষ হিসেবে ভাবা শুরু করলো, তার ওপর দেশলাই নির্মাতাদের নানান ধরনের ঘোষণায় একেবারে তেতে উঠল লোকজন। অনেকটা একালের একটা কিনলে একটা ফ্রি র মতো ব্যাপার আর কি! তবে সবাই যে এই সূত্র ধরে খালি দেশলাই বাক্স জমানোর নেশায় বুঁদ হয়ে গেল তা কিন্তু মোটেই নয়। অবশ্য একশ্রেণির মানুষ ফাঁকা ম্যাচ স্টিক বাক্স আবর্জনার স্তূপে বিসর্জন না দিয়ে তাদের সংগ্রহ করতে শুরু করলো বাক্সের ওপর ছাপা বিচিত্র সব ছবির টানে। আসলে একটা সময়ে প্রচলিত যে কোন উপাদানের মধ্যেই সেই সময়ের প্রচল সমাজ সংস্কৃতির বিচিত্র যাপন ভাবনার প্রতিফলন ঘটে। দেশলাইয়ের বাক্সগুলোতে ছাপা ছবির মধ্যেও সেই ফেলে আসা সময়ের ছাপগুলো যেন ধরা পড়ে গেল। এখানেই ফিলুমেনির আসল মজা। ... ...
জাতি ও ধর্মের নামে বিভেদ, অত্যাচার আর নৃশংসতা মানব সভ্যতার ইতিহাসে কোনো নতুন কথা নয়। এরই এক জ্বলজ্যান্ত নজির স্থাপন করেছে মিয়ানমার (সাবেক বার্মা)। সংখ্যাগরিষ্ঠ এই বৌদ্ধ রাষ্ট্র থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঝেঁটিয়ে খেদানোর বর্বরতাও কোনো বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। এর মূল প্রোথিত আছে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিগত বেশ কয়েক দশকের রাষ্ট্রীয় দমন, বৈষম্য এবং সহিংসতার প্রলম্বিত ইতিবৃত্তে। সর্বহারা রোহিঙ্গাদের পরভূমে পলায়নের সুদীর্ঘ সময়চক্রের ঐতিহাসিক পযালোচনা বড়োই মর্মন্তুদ, বড়োই আতঙ্কময় এবং হতাশাব্যঞ্জক। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যার বর্তমান দশা জানতে গেলে সেই ইতিহাস পর্যালোচনা না করলেই নয়। মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বড় সংখ্যায় রোহিঙ্গা প্রস্থানের মর্মান্তিক ঘটনাটি ২০১৭ সালে সংঘটিত হয়েছিল যখন এক ধাক্কায় ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল, কিন্তু সেটা আরাকান রাজ্য থেকে ১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া উদ্বাস্তু অনুপ্রবেশের ধারাবাহিকতাকেই মাত্র চিহ্নিত করে, যখন সামরিক অধিকর্তা জেনারেল নে উইনের সমাজতান্ত্রিক শাসনের সময় উত্তর আরাকানে তাতমাদো সর্ব প্রথম ‘’অপারেশন ড্রাগন কিং’’ ওরফে ''অপারেশন নাগা মিন'' শুরু করে l ... ...
২১শে অক্টোবর, ২০১০ দিল্লির এলটিজি অডিটোরিয়ামে ‘আজাদি দ্য ওনলি ওয়ে’ নামক আলোচনাসভায় অরুন্ধতী প্রধান বক্তা ছিলেন। সেখানে আরও যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন হুরিয়াত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, এসএআর গিলানি, প্রখ্যাত কবি ও সমাজকর্মী ভারভারা রাও এবং সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ কাশ্মীরের প্রাক্তন অধ্যাপক, শেখ সওকাত হুসেন। প্রথম দুজন ইতিমধ্যে প্রয়াত, ভারভারা রাও অসুস্থ, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় জামিনে মুক্ত। সুশিল পন্ডিত নামে এক তথাকথিত সমাজসেবী ওই সভায় ‘প্ররোচনামূলক’ বক্তব্য রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এবং একটি এফআইআর দায়ের করেন। দীর্ঘ তেরো বছর বাদে দিল্লি পুলিশ ধারা ১৫৩এ, ১৫৩বি, ৫০৪, ৫০৫ এবং ইউএপিএ ধারা ১৩ অনুযায়ী লেখিকা এবং অধ্যাপক হুসেন কে অভিযুক্ত করেন। তখন দিল্লির লেফট্যানেন্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা শুধুমাত্র আইপিসির অধীনে ধারাগুলি মোতাবেক বিচার শুরু করার অনুমতি দেন। ২০২৪এ বিজেপি/এনডিএ সরকারের তৃতীয় অবতার ভূমিষ্ঠ হবার পর নতুন উদ্যমে গভর্নর, অভিযোগ যিনি বিভিন্ন সময়ে শাসকের ‘হ্যাচেট ম্যান’ হয়ে কাজ করেছেন, ইউএপিএ ধারায় তাঁদেরকে বিচার করার অনুমতি প্রদান করেন। অনেকের মতে এটা একটা আইনি বাধ্যবাধকতা। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬৮ ধারা অনুযায়ী যেহেতু তিন বছরের অধিক কোন অপরাধের বিচারের ওপর নিষেধ রয়েছে তাই ইউএপিএ ধারায় লেখিকাকে ফের কাঠগড়ায় টানার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। ... ...
গুরুচন্ডা৯ প্রকাশিত রসিকার ছেলে উপন্যাসে রোহিত ভেমুলার ছায়ায় গড়া কেন্দ্রীয় চরিত্র রোশনের পাশে আছে ফয়জান, স্বনামে নয়, তার নাম ওখানে ফয়জল। তার মৃত্যুর পর মা ছুটে এসেছেন অতদূর থেকে। তাঁর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছে কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশ, তার বর্ণনা আছে। সেই সময় প্রকাশিত বিভিন্ন কাগজের রিপোর্ট ঘেঁটে লেখা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনেকের ইন্টারভিউ নিয়ে তারপর তিলে তিলে গড়া হয়েছে এই দুর্ভাগা তরুণের চরিত্র। তাকে দাঁড় করানো হয়েছে রোহিত ভেমুলার পাশে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাধন চট্টোপাধ্যায় এই ২০১৬ এবং ২০২২ কে এক সুতোয় গেঁথে ফেলাকে অন্যায়ের প্রবহমানতা দেখাবার পক্ষে খুবই কার্যকরী হয়েছে বলে ভেবেছেন। আমরা পড়ে দেখতে পারি উপন্যাসের কিছুটা অংশ, যেখানে মায়ের চোখের জল আর প্রবল আকুতি বৃথা হয়ে যাচ্ছে। এমপ্লুরা নামের রাসায়নিক দিয়ে যে নরপশুরা ফয়জানের মৃতদেহ অবিকৃত রাখবার চেষ্টা করেছিল, তাদের নির্লিপ্ততা। রসিকার ছেলে প্রকাশ করে গুরুচন্ডা৯ যে সামাজিক যুদ্ধের সূচনা করেছে, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অমিতাভ চক্রবর্তীদের প্রতিবেদন। ... ...
২০১৮-র ডিসেম্বরে পার্লামেন্টে সরকার জানায় যে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মোট ২০,৩১৪.১২ হেক্টর বনভূমি কর্পোরেট সংস্থার হাতে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য তুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও আদিবাসীদের আন্দোলন, গ্রামসভা গুলির আপত্তি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে কর্পোরেট সংস্থাগুলোর পক্ষে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় কিছু সমস্যা হচ্ছিল, বিশেষ ছত্তিশগড়ের গভীর অরণ্য বেষ্টিত আদিবাসী জনজাতি নির্ভর এলাকাগুলিতে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে পরাজিত করে সরকার গঠন করে বিজেপি। এখানেও কায়দা করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করা হয় বিজেপির আদিবাসী নেতা বিষ্ণু দেও সাই কে। ২০২৪ ডিসেম্বর মাসে শপথ নেন তিনি আর জানুয়ারি থেকেই গৌতম আদানির কোম্পানি শুরু করেছে নির্বিচার অরণ্য নিধন। ... ...
ব্ল্যাক হোল?! ননসেন্স! বাস্তব জগতে ব্ল্যাক হোল বলে কোনও কিছুর অস্তিত্বই নেই। অস্তিত্ব থাকতে পারে না। এটা নেহাতই গণিতের একটা ফসল মাত্র। ‘ব্ল্যাক হোল’ হলো তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত এক কল্পনা বিলাস। এই কল্পনার না আছে কোনও বাস্তব ভিত্তি না আছে কোনও বাস্তব প্রমাণ। এমনটাই মনে করতেন সেই সময়ের অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা। কেউ কেউ যদিও ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্বের উপর ভরসা রাখতেন। তবে সেই সময়ে, ঈশ্বরে বিশ্বাস করার মতোই ব্ল্যাক হোলে বিশ্বাস করাও ছিল প্রমাণহীন একটা ধারণা মাত্র। ... ...
FSSAI (ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) এর চরম ব্যর্থতা। খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং রাসায়নিক পেস্টিসাইড নিয়ন্ত্রণ করতে FSSAI সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দায়ের করা একটি পিটিশনে বলা হয়েছে যে কীটনাশক যুক্ত খাবারের ব্যবহার সারাদেশে ক্যান্সার রোগের প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে এবং তাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কীটনাশক এবং ক্যান্সারের মধ্যে একটি সরাসরি বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক রয়েছে। ফলে কীটনাশক যুক্ত খাবার, তার ব্যবহার, অতিব্যবহার এক বিরাট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবেদনকারী সারা দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন যা দেখায় যে কীটনাশকের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হচ্ছে। সিনিয়র আইনজীবী অনিথা শেনয়, আবেদনকারী অ্যাডভোকেট আকাশ বশিষ্ঠের পক্ষে উপস্থিত হয়ে সুপ্রিম কোর্টকে জানালেন। পাশাপাশি পিটিশনে ক্যালসিয়াম কার্বাইড এর মতো রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে ফল কৃত্রিমভাবে পাকানো, আপেলের মত ফলগুলির রং বা আবরণ প্যারাফিন, শেলাক এবং পলিথিনের মত উপাদান দিয়ে তৈরি মোম দিয়ে পলিশিংয়ের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ডাল এবং খাদ্যশস্যে কৃত্রিম রং ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করা হয়। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ 17 মে, 2024 পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা ও মান অথরিটি অফ ইন্ডিয়াকে (FSSAI) নোটিশ জারি করেছে এবং তাদের প্রতিক্রিয়া চেয়েছে। ... ...
শত্রুর নাম হল প্লাস্টিক। এমনিতে প্রচণ্ড দরকারি জিনিস। কিসে না লাগে! কিন্তু সমস্যা এইটাই যে প্লাস্টিক বলতে আমরা যে বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক দ্রব্য বুঝি, তাদের সবকটিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার কোন পকেটসই সুবিধাজনক পরিবেশ বান্ধব উপায় মেলে না। আবার সেটা এমনি ফেলে রাখলে প্রকৃতিতে মিশে যেতে অতি দীর্ঘ সময় লাগে। আর ততদিনে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে সেটা ম্যাক্রো-প্লাস্টিক মেসো-প্লাস্টিক, মাইক্রো-প্লাস্টিক ইত্যাদি বিভিন্ন আকারের চেহারা নেয়। ম্যাক্রোপ্লাস্টিক হল ২.৫ সেমির থেকেও দৈর্ঘে বা প্রস্থে বড় যে কোন প্লাস্টিকের টুকরো। ৫ মিমি – ২.৫ সেমি অবধি টুকরোকে বলে মেসো-প্লাস্টিক। আর মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হও ১ মাইক্রো মিলিমিটার থেকে ৫ মিলিমিটারের সাইজের প্লাস্টিকের কণা। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়েই আজকের কথা। কারণ আজকের দিনে এরা জলে স্থলে বাতাসে সর্বত্র ভেসে বেড়াচ্ছে। ... ...
আমি বিদ্যাকে শুধোই, শুধু পাহাড়ের কি কোনো একক দেবতা নেই, যিনি তাকে রক্ষা করতে পারেন লাগাতার ধ্বংস আর নির্বিচার আক্রমণ থেকে? তাকে বলি, সমস্ত পাহাড়ের রাণী যে হিমাচল প্রদেশ তার চেহারা দিনের দিনের পর দিন যেভাবে কুৎসিত হয়ে উঠছে, তা কল্পনাতীত। পাঞ্জাব পেরিয়ে হিমাচলের সীমানায় ঢুকলেই শুধু উন্নয়ন, নির্মাণ, জেসিপি আর ট্রাকের পর ট্রাক! ট্যুরিজম পয়সা আনে, এজন্য রাস্তার পর রাস্তা তৈরি হচ্ছে, সিঙ্গল লেন ডাবল হচ্ছে বিয়াসের পাশে, সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে যাচ্ছে জেসিপি। ধুলোভরা গাড়ি চলার রাস্তাই হয়ত খুব শিগগিরই উন্নয়নের একমাত্র প্রতীক হয়ে উঠবে। ... ...