এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নুন ভাতের রূপকথা ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের চড়ুইভাতির গপ্পো

    Eman Bhasha লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৮৮ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • নুন ভাত এবং প্রজাপতি এবং একটি চড়ুইভাতি/ বনভোজনের রূপকথা 
    ২০১৬ থেকে মানিকতলা খালপাড়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশু কিশোর কিশোরীদের নিয়ে একটা পাঠশালা চালাই। ২০ জন নিয়ে শুরু করে আজ ২৩১ জন।


    বহুদিন ধরে ভাষা ও চেতনা পাঠশালার বাচ্চাদের আব্দার: ঘুরতে নিয়ে চলো। 
    কোথায় কীভাবে যাওয়া যায়?
     এতো ছোট আছে দলে! 
    শেষে ঠিক হল চড়ুইভাতি। 
    কিন্তু কোথায়? এবং কীভাবে? এ
    কটা ছোট পার্ক দেখলাম। কাছাকাছি।  মানিকতলার। পরিকল্পনা ছিল সমিতির বিশ বছর পার হয়ে একুশ চলছে। যাঁরা আমাদের সঙ্গে এত বছর আছেন, তাঁদের বলি। একসঙ্গে খাওয়া আড্ডা গান কবিতা। বললাম অনেককে। সমর নাগদা। সমরদা শিল্পপতি শুধু নয়, বৈচিত্র্যপূর্ণ মানুষ।  নানা বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা। দারুণ কথা বলেন। শুনে বললেন, কোথায় করবে? বললাম, মানিকতলার কাছে একটা পার্কে। বললেন, আরে চলো আমার বাগানে। বলেই মেনু ঠিক করতে শুরু করে দিলেন। মেনু শুনে আমার তো মাথায় হাত। এতো লুচি তরকারি বোঁদে অঢেল চা, সরু চালের ভাত, মটরশুঁটি মুগ্ধ ডাল, মাছের কালিয়া, খাসির মাংস, দই, নলেন গুড়ের রসগোল্লা এবং মাইক থাকবে । গানের আসর। কবিতার ভিয়েন। খাদ্য তালিকা শুনে আমার মাথায় হাত। 
    সমর দা প্রাজ্ঞ মানুষ। না তাকিয়েই বললেন, তোমরা আমার অতিথি।
    যা বলেছিলাম, সংখ্যা গেল তাঁকে ছাপিয়ে।
    আবার চিন্তা। বাগানে পৌঁছাতেই অভ্যর্থনা সমর দা র বাগানের ২৪ বছরের সঙ্গী ম্যানেজার গৌতমদা রায়ের। আমাদের দেখে বললেন, ভাববেন না, স্যার সব সময় ২৫ জনের আয়োজন বাড়তি করে রাখেন।
    এত সুন্দর বাগান আমি বা আমরা কেউ কল্পনাও করিনি।
    আমার শরীর ছিল বেশ খারাপ। পৈটিক সমস্যা।  একবার রাস্তা থেকে ফিরেও গেছি।
    কিন্তু বাগান সমাদর ও আয়োজন অভ্যর্থনায় রোগ  পথ হারালো। তিনশো গোলাপ।  কহুতরি আম। কেয়া গাছের শিল্পিত ভাস্কর্য।  'কৃষ্ণকান্তের উইল' চলচ্চিত্রের রোহিণী স্বস্তিকা ডুবে ছিল যে বাঁধানো পুকুরে তার পাশে পাহারা বসাতে হল কচি কাঁচাদের ঠেকাতে। বাংলাদেশের 
    রাজশাহী থেকে আসা চিহ্ন পত্রিকার মাসিক দেখি পুকুরে রাখা শেখান শালতি/ নৌকায় উঠে আর নামতে পারে না। মৃদু বকুনি শুনে বলে,  আমি নদীর দ্যাশের মানুষ না!

    শখ নয় সাধক বাউল বিবেক খ্যাপার সঙ্গে দার্শনিক আলোচনায় অবাক করে দিলেন সমরদা। চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে-- চার চক্রের কথা এল। এল শুক্র রজ পুরীষ ভক্ষণের কথা। বিবেকানন্দর সাধনা প্রসঙ্গ।  ভবা পাগলার  শিষ্যা সাধিকা তুলসী  সমরদা র কথার পিঠে গুনগুনিয়ে উঠলেন। গুনগুন জোরালো হল, শ্যামলী বাউলানির একতারায়। আমাদের দাদা বৌদি প্রবীর ও সুব্রতা ঘোষ রায়  এর কবিতার আমি ঘোর ভক্ত। তাঁরাও যোগ দিলেন আলোচনায়। বাউল গানের পরে পড়া হল কবিতা। সমরদাকে #মন_উড়ালের_মেয়ে দিতেই তিনি পড়তে শুরু করলেন, আবৃত্তি করে। ভরাট গলা। যদিও জ্বর আর ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। জ্বর নিয়েই এসেছিলেন। 
    ঘুরিয়ে দেখালেন বাগান।  
    তাঁর মাঝে প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব #তীর্থঙ্কর চন্দ ৫১ শিশু কিশোর কিশোরীদের নিয়ে শুরু করে দিয়েছেন নাটকের খেলা। সেখানে এল একটি সংলাপ: এই পটলা।

    #এই_পটলা ঘুরতে লাগল মুখে মুখে ।
    পাঠশালার বড়দি মেজদি সেজদি এবং  স্যার যথাক্রমে  ব্যস্ত ছিল  ত্রিশ বিঘার সহস্র ফুল ফলের বাগানে  বাচ্চাদের ওড়াউড়ি থামাতে।
    তীর্থঙ্করদা বশ মানালেন তাঁদের। 
    বিধাননগর সরকারি কলেজের ছাত্র সঞ্জু এসেছিলেন বন্ধুদের নিয়ে, উদয়নের ভাষা ও চেতনা সাথীরা ছিল, ছিলেন তপন কাইত, বিজ্ঞান আন্দোলন কর্মী শশাঙ্ক দাস বৈরাগ্য।

    দুপুরে  খাওয়া।
     তদারকি করলেন সমরদা । অসুস্থ শরীরেই। একজন বাচ্চা শুধু ভাত নিয়ে বসে আছে। 
    সমরদা বললেন, কিছু নাও। খাবে কী দিয়ে?
    সে বলল, রোজ যা দিয়ে খাই।
    --কী দিয়ে খাও? 
    --নুন দিয়ে। 
    জল এসে গেল চোখে।
    সমরদা মাছ মাংস দই মিষ্টি দিয়ে খাওয়ালেন তাঁকে।
    আরেকজন ডাল নেবে না কিছুতেই। 
    ডাল তো বাড়িতে কোন দিন খায় না।
     
    বাচ্চাদের একটুও ফেরার ইচ্ছে নেই বিকেলে।
    এমন জীবন তাঁদের জীবন প্রথম।
    একজন বললেন, আসছে বছর আবার হবে তো।
     
     

    হবে।
    সমরদা সকালে বললেন, সামনের বছর দুশো বাচ্চা নিয়ে এসো।

    পৃথিবী আজো প্রজাপতির ছোঁয়া পায় এইসব সমরদা র জন্য।
     
    বি. দ্র. -- এটা প্রথম চড়ুইভাতি।। ২০১৮-র স্মৃতি
     
     
    পুনশ্চ: এবার ১১ ফেব্রুয়ারি। 
    আমাদের প্রতিবারের কর্মসূচি 
     
    ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রবিবার শীতের সপ্তমতম #চড়ুইভাতি।।   
    নিউ টাউনের কাছে রাজারহাট বিষ্ণুপুরে সমর নাগের সৌজন্যে তাঁর বাগান বাড়িতে।।
    ভাষা ও চেতনা সমিতি পাঠশালার শিশু ও কিশোর কিশোরী সঙ্গে অভিভাবক অভিভাবিকা ও শুভার্থী। 
    তাঁদের ও বয়স্কদের ক্রীড়াঅনুষ্ঠান। 
    গান নাচ কবিতা আড্ডা। সাঙ্গীতিক কেদারা ( মিউজিক্যাল চেয়ার)
     
    খাওয়া: গরমাগরম ফুলকো লুচি, ধনে পাতা টমেটো কালোজিরে আলুর রসস্থ ছক্কা, 
    বোঁদে, 
    লাল চা।
     
    দুপুরে:সোনা মুগের ডাল, ছ্যাঁচড়া, মাছের কালিয়া, কষা কষা খাসির মাংস, রাজারহাটের মনপাগল দই ও নলেন গুড়ের রসগোল্লা।
     
    খেলা: সাঙ্গীতিক কেদারা (মিউজিক্যাল চেয়ার), চু কিৎ কিৎ, লুডো, দাবা, চাইনিজ চেকার এবং নাটক।। 
    কবিতাপাঠ গান নাচ।।
     
    ভাষা ও চেতনা পাঠশালা
     
    ভাষা ও চেতনা সমিতি

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৬528229
  • বড় ভাল লাগল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন