এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কিশোর সাহিত্য 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ | ৫৫৪ বার পঠিত
  • বইমেলা বলতেই আমার প্রথম যে স্মৃতি মনে আসে, তা ক্লাস টু-থ্রির। বাবা-মার সঙ্গে গিয়েছিলাম, বলাবাহুল্য। আগে থেকে বায়না করে রাখা ছিল, আমি নিজের পছন্দে বই কিনব। তা, ঘুরে-ঘুরে কিনলাম, ছবি আঁকা ভয়াল ভয়ঙ্কর সব বই। কেউ কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। কী কী মনে নেই, যেটা মনে আছে, সেটা হল, আমার মামাতো দাদার জন্য বই কেনা হয়েছিল মায়ের পছন্দে। সত্যজিৎ রায়ের একডজন সিরিজের কোনো একাটা। প্রথমটাই মনে হয়, পরেরগুলো তখনও বেরোয়নি। তা ট্রেনে চড়ে ফেরার সময় আমি ওই বইটা পড়তে শুরু করলাম। কারণ, আমারগুলো তো বাড়িই নিয়ে যাব। পড়ে তো আক্কেল গুড়ুম। এত ভালো বইটা আমার জন্য না কিনে কেনা হল দাদার জন্য? কিন্তু তখন আর ভেবে লাভ নেই। হাতের ঢিল ফস্কে গেছে। আমি নিজের জন্য কী কিনেছিলাম, তা এত অখাদ্য ছিল, যে বাড়িতেও আর সেসব রাখা নেই। কোনো এক সময় কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

    কোনো লাভ হয়নি অবশ্য না। সেই সাত-আট বছরেই আমি যে জ্ঞান অর্জন করি, তা হল, ঠোঙা দেখে মাল কিনতে নেই। শিশু-কিশোর সাহিত্য তো নয়ই। ফেলুদার প্রথম দিকের উপন্যাসগুলো বেরোতো শারদীয়া দেশে। কালো-কালো খুদে অক্ষরে। গোগ্রাসে গিলেছি। শৈলেন ঘোষ, শীর্ষেন্দু, এসব অবশ্য বেশ ঝকঝকে, কিন্তু তাতে কিছু ইতর-বিশেষ হয়নি। যা পড়ার তা অক্ষরেই আছে, ঠোঙাতে না, এটা কচি বয়সেই বোঝা হয়ে গিয়েছিল। আমি একা না, আমার চারপাশে সকলেই বুঝত।

    অবস্থাটা বদলাল, সাল ভুলে গেছি, যখন সানন্দা এল বাজারে। পত্রিকাটা কী নিয়ে আজ অবধি বুঝিনি। বলা হত মেয়েদের পত্রিকা, কিন্তু আসলে ঠোঙাটাই তার সব। গুচ্ছের ছবি, আর মাঝে-মাঝে এক আধটা সাহিত্য গোঁজা। কে ওরকম বাড়িতে থাকে কে জানে, আর মেয়েদের কাজটাই যে ঘর-সাজানো আর শাড়ি, তার জ্যান্ত প্রোমোশন। এরপর এল উনিশ-কুড়ি। মানে সদ্য-প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পত্রিকা। পড়লেই মনে হয়, প্রাপ্তবয়স্কদের বয়স কমে সাত হয়ে গেছে। তাই তাদের জন্য ছবি-টবি দিয়ে সরল গোলগাল জিনিস ছাপা হচ্ছে। কদিন পরে দেশে ছাপা শুরু হল টিভি-সিরিয়ালের গপ্পো। সাহিত্য পত্রিকা পরিণত হল কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পত্রিকায়। দেশকে প্রতিষ্ঠানবিরোধীরা চিরকালই গাল দিয়েছেন, আম্মো, কিন্তু কচি বাচ্চাদের পড়ার মতো মেড-ইজি লেখা বেরোবে, আর বেরোবে টিভি সিরিয়ালের স্ক্রিপ্ট, এ আমাদিগেরও কল্পনার অতীত ছিল। এসব করে কী লাভ হল কে জানে, ব্যবসা তো হলইনা। উনিশ-কুড়ি চললনা। দেশও আমার চেনা বেশিরভাগ লোকই ছেড়ে দিয়েছে। 

    এখানেই সব্বোনাশের শেষ না। এরপর এল ইন্টারনেট। গুচ্ছের প্রকাশনী এল বাজারে। ভূত-প্রেত-তন্ত্র-মন্ত্র-থ্রিলারে ছেয়ে গেল বিশ্ব। আগেও বেরোতনা তা নয়। কিন্তু তাতে এই গ্রাম্ভারী ব্যাপারটা থাকতনা। এই বিষয়গুলোতেও দোষের কিছু নেই। কিন্তু বাজারচলতি গোয়েন্দাগপ্পো পড়ে দেখবেন, কিশোরপাঠ্য ফেলুদাতেও যা নিয়ে খিল্লি থাকত, সেই বস্তু। হেবি ঠোঙা বানিয়ে প্রচুর দামে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, পঞ্চাশটা বিক্রি হয়ে গেলেই খরচা উঠে আসবে। সেই নিয়েই আলোচনা। দেখে-শুনে মনে হয়, সুকুমার রায়ের লেখার মতো, চল্লিশ পেরিয়ে মানুষের বয়স আবার কমছে। আবার শাহরুকখানকে দেখে ভালো লাগছে, এবার বোধহয় ওয়াসিম আক্রমের পোস্টার বানিয়ে আবার বেডরুমে লাগানো হবে, আর স্বপনকুমারকে সাহিত্যের পরাকাষ্ঠা আখ্যা দেওয়া হবে। ঠোঙা দেখে বিচার করবেননা, এই শিক্ষাটা তো উবে গেছেই। আলুর চিপসের মতো যত ঝকঝকে ঠোঙা, আলুর বস্তার মতো যত মোটা প্যাকেট, গুণাগুণ তত বেশি। 

    এই ধানাই-পানাই এর একটাই কারণ। ঠোঙা নয়, গুণাগুন দেখুন, কৈশোরের এই বোধটা ফিরিয়ে আনা দরকার বলে আমরা ভেবেছি। শুধু কিশোরদের মধ্যে না, বড়োদের মধ্যেও। তাই আমরা প্রকাশ করছি দুখানা বই। 

    ১। ঘুনসিযন্ত্রের রহস্য। লিখেছেন অভিজিত মজুমদার। নাম শুনলেই যদি নস্টালজিয়ার উদ্রেক হয়, তো সেটা সঠিক কারণেই। আপনি যদি আশি, নব্বই বা দুহাজারে কৈশোর কাটিয়ে থাকেন, তাহলে যে কিশোর উপন্যাসগুলিকে আপনি ভালো বলে ভেবেছেন, এই লেখ সেই গোত্রের। এবং তাদের প্রতিই শ্রদ্ধার্ঘ্য। সচেতনভাবেই সেই সময়ের এবং লেখার আমেজ ও ঘরানাকে অনুসরণ করা হয়েছে, যাতে করে আরও একবার ফিরে পড়া যায়, চিনে নেওয়া যায় চোঙাহীন ভালত্বের চিহ্নগুলিকে।

    ২। দিতি ও মহারানী। লিখেছেন মৃণাল শতপথী। এও কিশোরদের জন্যই লেখা। শিশু না কিশোর, সে নিয়ে কিঞ্চিৎ মতবিরোধ  হয়েছে আমাদের নিজেদের মধ্যেই। আমার মত, দুইই। পাকা শিশু ও কাঁচা কিশোর দুইই চলবে। তদুপরি, কিশোর সাহিত্যের যা গুণ, বড়রাও গোগ্রাসে গিলতে পারবেন। যেমন একদা গিলতেন, ঠোঙাহীনভাবে। 

    তো, এই দুটো বই পড়বেন। বইমেলাতেই বেরোচ্ছে। আর কেউ দত্তক নিতে চাইলে জানাবেন। মেল ঠিকানাঃ 

    পুঃ এই দুটো জিনিস ছাড়াও গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশ করে চলেছে 'কুমুদির জন্য'।  কুমুদি ছিলেন আদ্যন্ত কিশোরী একজন মানুষ, তাঁর স্মৃতিত শিশু ও কিশোরদের লেখা আমরা বইমেলায় বই হিসাবে বার করে চলেছি ফি বছর। এবারও করব। লেখা এখনও পাঠানো যাচ্ছে, বছর শেষ হয়ে গেলে আর যাবেনা। পাঠাতে হলে, চেনা শিশু ও কিশোরদের পাঠাতে বলুন। মেল ঠিকানা একই। কলা এবং কলার খোসা, ঠোঙ এবং খাবারের তফাত সক্কলের চিনে নেওয়া দরকার। চিনিয়েই ছাড়ব, এ ব্যাপারে আমর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আপনিও একটু আধটু ইচ্ছাপোষণ করে থাকলে, সঙ্গে থাকুন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:২২527086
  • উফফ এই ঝকঝকে মলাটের অতিইই অখাইদ্য বই কিনে নিজের বরাদ্দের টাকা উড়িয়ে ফেলার গাঁটামো আমিও করেছিলাম। বইমেলায় নয় দোকানে গিয়ে। ইইশশ।  ওই নয় দশ বছরে আমি শার্লক হোমসের বাংলা অনুবাদ পুরোটাই পড়ে ফেলেছিলাম। ফলে ফেলুদাও আমার কোনকালে তেমন পদের লাগে নি। আর  একেবারেই আইডেন্টিফাই করতে পারতাম না সেটাও একটা ব্যপার।  বরং শীর্ষেন্দুর ছোটদের গল্পগুলো বা বিমল করের কিকিরা সিরিজ কিংবা কিশোর ভারতীর লেখাগুলো অনেক বেশী ভাল লাগত।
  • kk | 2607:fb90:ea91:cb70:30fb:406:3ce1:604a | ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:০১527095
  • মেল ঠিকানার জায়গায় যে গ্যাপ রয়ে গেছে! [email protected] তো?
  • aranya | 2601:84:4600:5410:5462:571b:6aae:aa00 | ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৪২527098
  • ভাল লেখা। এই বই দুটো জোগাড় করতে হবে।
  • বিপ্লব রহমান | ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৪527100
  • গুরুতেই কুমুদির সাথে পরিচয়। কি প্রাণ শক্তিতে ভরপুর আশ্চর্য লেখনি!! heart
  • π | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫১527659
  • চিরঞ্জিতের প্রচ্ছদ 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন