এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অপার বাংলা

  • নারীর স্বীকারোক্তি

    Jayeeta Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    অপার বাংলা | ২৩ আগস্ট ২০২৩ | ৬৭৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • নারীবাদ বনাম স্বীকারোক্তির কবিতা

    দশজন কবির নাম করতে বললে অবধারিতভাবে যাদের নাম উচ্চারিত হবে এক নিঃশ্বাসে তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ নেই কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই দশজনের মধ্যে আট থেকে নয় জনই পুরুষ কবি। এখন আননকেতাবে বহু মহিলার কবিতা দেখা যায় আগে যা ছিল না। কিন্তু যে কম সংখ্যক কবিরা উঠে এসেছিলেন পুরুষ কবিদের সঙ্গে সমভাবে তাঁরা ছিলেন সত্যিই বিশিষ্ট, যদিও তাঁদের নাম থেকে গেছে দ্বিতীয় তালিকায়। সারা বিশ্বেই মহিলা লেখকদের এই ভোগান্তি। আজও নারী লেখকদের নেই নিজস্ব লেখার ঘর। সংসারের শত কাজের মাঝে তাঁরা সারস্বত সাধনা করেন। ব্যতিক্রম আছে অবশ্য। ফেমিনিস্ট লিটারেচার বা নারীবাদী সাহিত্য তাই প্রাসঙ্গিক।

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলস্বরূপ বদলে গেছে মানুষের যাপন আর মনন অনেকাংশেই। পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতাবোধ বা এলিয়েনেশন, অর্থনৈতিক চাপ প্রভাবিত করেছে সাহিত্যকেও। এসেছে সুররিয়ালিসম এসেছে ক্ষুব্ধ সাহিত্য, প্রতিবাদ সাহিত্য।

    তিনটি মূল ধরন এই পরিপ্রেক্ষিতে উঠে এসেছে - Marxist literature বা সাম্যবাদী কবিতা, anti poetry বা প্রতিকবিতা, ও feminist literature বা নারীবাদী কবিতা।

    বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে বিভিন্ন অধ্যায়ে, পরিস্থিতি ও সামাজিক পটভূমি অনুযায়ী নানা শাখায় কবিতা বিভক্ত হয়েছে। রেঁনেসা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলস্বরূপ পাল্টে গেছে যাপনচিত্র। জন্ম নিয়েছে নানা মতবাদী কবিতা। সাহিত্যে এগুলি আলাদা আলাদা অধ্যায় এবং সবই প্রতিবাদমূলক..... প্রতিবাদী কবিতা।

    এভাবেই এসেছে মার্কসিস্ট সাহিত্য বা সাম্যবাদী সাহিত্য কবিতা। উল্লেখযোগ্য কবিরা বার্নার্ড স, ভ্লাডিমির মায়াকভস্কি, বার্ট্রাণ্ড ব্রেখট, জ্যাক লণ্ডন প্রমুখ এই ভাবনার অনুসারী।

    প্রতি কবিতা ভিন্ন কিছু নয় কবিতারই আরেকটি মতের সৃজন শুধু।

    Anti poetry

    নিকোনার পারা কেই এই ধারার প্রবর্তক বলা হয়। মূলত প্রচলিত ধারা ভেঙে কিছুটা আক্রমণাত্মক যেন রোমান্টিক চরণগুলির প্রতি। ইলিয়াস পেট্রোপুলাস প্রমুখ যেমন, বাংলায় অমিয়ভূষণের কবিতায় কিছুটা ছায়া।

    ফেমিনিস্ট লিটারেচার ও ফেমিনিস্ট পোয়েট্রি বা নারীবাদী কবিতা__ সাহিত্যের একটি বড় অধ্যায়।

    যে কবিতায় নারীর সামাজিক অবমাননা, নির্যাতন, একাকীত্ব, পুরুষতন্ত্রের প্রতি ক্ষোভ স্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। নারীবাদী কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য প্রায় এটাই। ১৮০০ খৃষ্টাব্দে প্রথম নারীবাদী কবিতা ও নারীবাদ সাহিত্যে স্থান পায়।এইরকম একটি পরিভাষা পাওয়া যায়। বিশ্বের অসংখ্য নারীবাদী কবি আছেন, মুখ্যত, ইলিনয় হ্যালোইন এবট, ক্যাথী একর, মিল্টন এক্রন, ডেবরা এগর, জুলিয়া এলভেরি, মায়া এঞ্জেলু, মেরী উলস্টোনক্রাফ্ট, এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিং, মিনা লয়, এমিলি ডিকশন, মার্গারেট অটউড প্রভৃতি ও প্রথম পর্বে উল্লিখিত কবিরা নারীবাদী কবি।
    মল্লিকা সেনগুপ্ত একজন ঘোষিত নারীবাদী রাজনৈতিক কবি। পুরুষতন্ত্র নারীর অভিজ্ঞতার বিস্তৃত সীমাকে চিরদিন অবদমিত করে রেখেছিল, অপার সেই শূন্যতাকে অর্জন করেই মল্লিকাদির কবিতার জয়যাত্রা।

    "আমি যদি বেশ্যা হই তুমিও পুরুষ বেশ্যা
    কর্ণ মহামতি!
    তোমার শয্যায় আসে বহুপত্নী,বিবিধ স্ত্রীলোক
    তুমি যে নিয়মে চল নিয়মে অধিকার আমারও থাকুক
    তোমরা যে গ্রন্থ লেখ সেই গ্রন্থ আমরাও উল্টে দিতে পারি"
    (দ্রৌপদী জন্ম)।

    মল্লিকাদি, তাঁর কবিতাকে হাতিয়ার করে লিঙ্গ ভিত্তিক অভিজ্ঞানের ধারনাকে সপাট আঘাত করেছেন সেখানে ব্যক্তি নারী সত্ত্বা নির্মাণ ও সমষ্টিগত চেতনার দিকটিও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন।

    "........তুমি চাইতে ছায়ার মতন
    তোমার সঙ্গে উঠব বসব
    আমি ভাবতাম এতদিন ধরে যা শিখেছি, সবই ফ্যালনা!
    তুমি উত্তম ফ্যান তাই আমি
    সৌমিত্র ভক্ত হবো না!
    তোমার গোষ্ঠী ইস্টবেঙ্গল
    আমি ভুলে যাব মোহনবাগান!
    তুমি সুচিত্রা আমি কনিকার
    তোমার কপিল, আমার তো সানি!
    তোমার স্বপ্নে বিপ্লব তাই
    আমি ভোট দিতে যেতে পারব না!"
    ................

    এই নির্ভিক উচ্চারণ প্রতিটি নারীর কাছে প্রাসঙ্গিক এক অপ্রিয় সত্য। সেই সাহসের স্ফুরণ দেখা যায় "ফ্রয়েড কে খোলা চিঠিতেও",

    "পেনিস এনভি বলে একটি শব্দ
    পৃথিবীতে এনেছেন ফ্রয়েড সাহেব
    ওই যে বাড়তি শুধু পুরুষের থাকে
    ওই নাকি মেয়েদের কমতি বানায়"

    এমনকি মার্ক্স এর প্রতি ও তীব্র শ্লেষ ছুঁড়ে দিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক।

    জেন অস্টিন, স্যিমন দ্য ব্যোভর, Anne সেক্সটন, ভার্জিনিয়া উল্ফ, সিলভিয়া প্লাথ ........ তসলিমা নাসরিন, মল্লিকা সেনগুপ্ত.... কণ্টকাকীর্ণ পথ ধরে আসা যাওয়া অনেক নারী কবির। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অধিকাংশ ক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে স্বীকারোক্তিমূলক বা confessional poetry তে। তবুও মনে হয় ফেমিনিজম সাম্যবাদী আন্দোলনেরই একটি শাখা। এপার্থিড বা বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে, লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে বা মালিক ও মজদুর শ্রেনীসংগ্রাম সবই সাম্যবাদকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে। ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের প্রভাব তাই বিশ্বসাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
    প্রসঙ্গত নারীবাদী কবিতা লক্ষণীয় ভাবে কিংবা বলা ভালো সচেতন ভাবেই কলোকাল বা কথ্য ভাষায় রচিত, উপমা ও রূপকল্প বিহীন। সরাসরি নারীর বঞ্চনার ইতিহাস বর্ণিত এইসব কবিতায়। বাংলা সাহিত্যে কবিতা সিংহ বা দেবারতি মিত্রর পর এত নির্ভিক উচ্চারণ আর দেখা যায় নি। সেই হিসেবে আশির দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারীবাদী কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত।

    "আপনি বলুন মার্কস" কবিতাটি আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুব প্রিয়,

    "............
    আপনি বলুন মার্কস শ্রম কাকে বলে!
    গৃহশ্রমে মজুরি হয়না বলে মেয়েগুলি
    ঘরে বসে বিপ্লবীর ভাত রেঁধে দেবে
    আর কমরেড শুধু যার হাতে কাস্তে
    হাতুড়ি!
    আপনাকে মানায় না এই অবিচার
    কখনো বিপ্লব হলে
    পৃথিবীর স্বর্গরাজ্য হবে
    শ্রেনীহীন রাষ্ট্রহীন আলোপৃথিবীর সেই দেশে
    আপনি বলুন মার্কস, মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী হবে?
    ................."

    একটি দীর্ঘ কবিতা, প্রতিবার বিস্মিত হতে হয় নরম সরম এক বাঙালি কন্যে গভীর কাজল আর বড় টিপ, কীভাবে যেন লিখে ফেলেন দৃঢ় এইসব কবিতা। খুব প্রচারিত এই কবিতাংশ মনে করা যাক,

    "......
    সুপুরুষ এসেছিল,আসেনি নারীরা
    আমি সিন্ধুর মেয়ে, যোদ্ধা ও মানুষ
    কালো মেয়েদের পায়ে তামার গগন
    এত দীপ্যমান চোখে ঘোড়সওয়ারেরা
    গর্ভে আগুন ঢেলে দিল, জন্মালো কার্তিক "
    কোন ইতিহাসের দিকে ইসারা তা বোঝা যায়।
    মল্লিকা দির কবিতায় ইতিহাস ঘুরেফিরে আসে বার বার।
    একেবারে সমসাময়িক কবিতা তুলনামূলক কম, এটা তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দের বা নিজস্ব বিষয়গত প্রসঙ্গ।

    শুধু প্রিয় কবিতাগুলো ছুঁয়ে যেতে চাই, যেমন "তেভাগার ডায়রি",

    "আমি বিলাসিনীদের কাপড়ে নক্সা তুলি, সামান্য জীবিকা
    পোকা আলু আর আতপ দেয় হাত ভরে
    ভাসুরের কাছাকাছি এলোচুলে থাকি না কখনও
    ..............
    দূরের চাষিকে শালপাতা মুড়ে
    খবর পাঠাও
    আনো কেরোসিন, যদি দরকার হয়
    আগুন জ্বালাব"

    মল্লিকাদি পণ্ডিত মানুষ, বিশ্বের অন্যান্য নারীবাদী কবিদের মতই তাঁর কবিতায় নেই কোন ক্রন্দন বা বিলাপের ধ্বনি, আছে বিপ্লবের শাণিত ভাষা। তবে দুঃখের বিষয় মল্লিকা সেনগুপ্ত আজ একটি কবিতা উৎসবের নাম। শ্রদ্ধাঞ্জলির নামে তাঁকে আর তাঁর লেখাগুলিকে যেন আরো বিস্মৃত করে দেওয়ার প্রয়াস। যে কবিতাটি আজকাল হোর্ডিং এ ফ্লেক্সে মঞ্চে উচ্চারিত সেটা হলো,

    ..........
    "মেয়েটির নাম দুর্গা সোরেন বটেক
    মায়ের ছিলো না অক্ষরজ্ঞান ছটেক।
    সর্বশিক্ষা অভিযানে পেয়ে বৃত্তি
    দুর্গা হয়েছিল ইংরেজি স্কুলে ভর্তি।
    .............
    আমার দুর্গা মণিপুর জুড়ে নগ্ন মিছিলে হাঁটে
    আমার দুর্গা কাস্তে হাতুড়ি, আউশ ধানের মাঠে,
    ............................
    আন্দোলনে,উগ্রপন্থে, শিক্ষাব্রতে
    কর্মযজ্ঞে রান্নাঘরে, আঁতুরঘরে।
    মা তুঝে সালাম .........."
    (কন্যাশ্লোক)

    ব্যক্তিগতভাবে আমার কবিতাটি উচ্চকিত ও দুর্বল কবিতা মনে হয়েছে। গভীরতা কম, গিমিক বেশি। যদিও দীর্ঘ ব্যাধি ও পার্থিব দেহের অবসান ২০১১, মল্লিকা সেনগুপ্ত যে কোনো মহিলার কাছে অনুপ্রেরণা। কবির কোনো মৃত্যু নেই। যে কোনো বিষয় ভিত্তিক কবিতা লেখা কঠিন কারণ পরিসর কম থাকায় সমালোচনার ক্ষেত্র বেশি একটু সতর্ক না হলে। মল্লিকাদি ক্রমশ নিজেকে পরিণত করে তুলেছেন গোড়ার দিকের কবিতার চঞ্চলতা পরে শান্ত হয়েছে। প্রথম দিকের এমনই একটি কবিতা "আগুন ",

    এবার পেঁয়াজ আদা টক দই টাটকা রসুন
    আলু আর শালগম দিয়ে
    ডেকচিতে জিমে আঁচে তরুণী র মাংস করুন
    দাউ দাউ আগুনের মধ্যে থেকে সিঁদুরের টিপ
    একটি কাজল চোখ ভাসলেও
    টাকার বান্ডিল ছুঁড়ে রুখে দিল পুলিশের জিপ
    মেয়েটির কি কি দোষ? বাপ দেয়নি যৌতুক?
    এ তো স্বতঃসিদ্ধ,কালো মেয়ে তবু
    মারলে প্রতিবাদ ওঠে এমনই কৌতুক!"
    ..........

    কবিতাটি দাঁড়ায় নি তেমন যদিও। রিপোর্টিং টাইপ এ ধরনের কবিতা বিশ্বের নানা ভাষাতেই লেখা হয়েছে কখনো সখনো। বক্তব্যমূলক।

    নারীবাদী অথবা সামগ্রিক কবিতা জগতে কনফেশনাল কবিতা বা স্বীকারোক্তিমূলক কবিতা আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। স্বীকারোক্তিমূলক কবিতার প্রচলন মূলত ১৯৪০__১৯৪৮সালের দিকে প্রথম জনপ্রিয়তা পায় সিলভিয়া প্লাথ, এন সেক্সটনের হাত ধরে অবশ্যই রবার্ট লোয়েল উল্লেখযোগ্য নাম। তবে তথ্য বলে W.B. Snodgrass ১৯৫৯ সালে প্রথম এই ধরনের কবিতা লেখেন।

    ব্যক্তিগত দুঃখ, বঞ্চনার, যন্ত্রণার কথা শৈল্পিক উপস্থাপিত হয়েছে এই ধরনের কবিতায়। সুতরাং নারীবাদী কবিতা স্বাভাবিকভাবেই বেশিরভাগ কনফেশনাল ধরনের লক্ষ্য করা যায়। যদিও কনফেশনাল পোয়েট্রি অনেক পুরুষও লিখেছেন। বাংলায় কমলা দাসের কবিতা স্বীকারোক্তিমূলক এই কথা বলা যায়। শোষোক্ত কবি ছাড়া প্রত্যেকেই বিপন্ন হয়েছেন, হেয় হয়েছেন, সামাজিক নিগ্রহের শিকার অথবা কেউ মানিয়ে নিতে পারেন নি, বলা ভালো অবনত হওয়ার চেয়ে বেছে নিয়েছেন মৃত্যু অথবা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন অভিমানে। এক পাহাড় প্রমাণ বাধা বিপত্তি ও মানসিক যন্ত্রণায় একজন নারী কতটা সৃজনশীল কাজ অব্যাহত রাখতে সক্ষম হতে পারেন!

    নারীবাদী কবিতা নামে তকমা লাগানো কবিতা আসলেই প্রতিবাদের কবিতা। কবির অস্তিত্ব যখন বিপন্ন তখন সোজা সাপটা আঘাত আসবেই পুরুষের ওপর সমাজের ওপর।

    "তিনকূলে কেউ নেই ডাগর হলেই মেয়ে টের পেয়ে যায়
    অভাবের হিংস্র দাঁত জীবন কামড়ে ধরে ছিঁড়ে খুঁড়ে খায়।
    যুবতী শরীর দেখে গৃহিণীরা সাধ করে
    ডাকে না বিপদ
    বেসুমার খিদে পেটে, নিয়তি দেখিয়ে দেয় নারীকে বিপথ।
    দুয়ারে ভিক্ষার হাত বাড়ায়ে বেকার নারী তবু বেঁচে থাকে
    স্টেশনে কাচারি পেলে গুটি সুটি শুয়ে
    পড়ে মানুষের ফাঁকে।
    এইসব লক্ষ্য করে ধড়িবাজ পুরুষেরা
    মুখ টিপে হাসে
    দেখাতে ভাতের লোভ, আঁধার নিভৃতে
    ফন্দি এঁটে আসে।
    তিনকূলে কেউ নেই কোথাও কিছু নেই, স্বপ্ন শুধু ভাত,
    শরমের মাথা খেয়ে, এভাবেই ধরে নারী দালালের হাত।"
    (শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা)

    আশির দশকের সবচেয়ে আলোচিত ও নির্যাতিত নারী কবি তসলিমা নাসরিন। কবিতাটি একটি নিপুন গল্প বলে, চিত্রকল্প সহযোগে। একটি পরিপূর্ণ কবিতা যা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিচ্ছবি। কবি তসলিমা নাসরিন কোন দেশের কবি? জানি না আমরা। তিনি যতটা ভারতের ততটাই বাংলাদেশের, বিদেশি ও বটে। অতএব তসলিমা নাসরিন এক বিশ্ব নাগরিক। পেশায় চিকিৎসক তসলিমা সমাজে নারীর বাক্ স্বাধীনতা ও যৌন স্বাধীনতা জন্য লড়াই করেছেন, নারীর মুক্ত চিন্তার প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন তাঁর কলমের মাধ্যমে। দুর্ভাগ্যবশতঃ, শিল্পের চেয়ে শিল্পীর ব্যক্তি জীবন নিয়ে যতটা আলোচনা হয়েছে ততটা হয় নি এক্ষেত্রে ও ব্যতিক্রম নয় যেহেতু তিনি নারী ও স্বাধীনচেতা নারী।

    তুলনামূলক ভাবে কোনো লড়াই করতে হয়নি, সামাজিক ছত্রছায়ায় কিছুটা নিরাপদ কৌশলে মূলত নারীর আরাধনা ও তার মহত্ত্ব লিখেছেন মল্লিকা সেনগুপ্ত। প্রথমজনের জন্ম ১৯৬২, দ্বিতীয় কবির জন্ম ১৯৬০। দুটি বিপরীত সামাজিক পরিস্থিতি অবশ্যই প্রভাব ফেলেছে লেখায়।

    "মিলেনিয়াম মিলেনিয়াম
    চর্যাপদের পুঁথির পাতায়
    আমিও ছিলাম,
    অশ্বমেধের ঘোড়ার খুরে
    আমিই ধুলো উড়িয়েছিলাম ..........
    (মিলেনিয়াম, মল্লিকা সেনগুপ্ত)

    মল্লিকাদির কবিতা সহজ সরল। তিনি ইতিবাচক প্রতিবাদী কবি। স্বভাবতই, নারীর জয় বেশির ভাগ কবিতায়।
    ..............
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অপার বাংলা | ২৩ আগস্ট ২০২৩ | ৬৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sobuj Chatterjee | ২৫ আগস্ট ২০২৩ ১৯:২৪522939
  • এমন গভীর বোধসম্পন্ন বিশ্লেষণ  ভাবায়। দারুন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন