এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কি নামে ডেকে

    Angsuman Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ মার্চ ২০২৩ | ৪২৭ বার পঠিত
  •                 সরলকান্তি বিশ্বাস একজন গোবেচারা মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী মাঝবয়সী বাঙালি ভদ্রলোক। কয়েক দিনের জন্য অফিসের এ্যাসোসিয়েশনের সমাবেশে যোগ দিতে কলকাতা থেকে মফস্বলে এসেছেন। জায়গাটা খুব জমজমাট। জ্যাম-জমাটও বটে। রিক্সা-সাইকেল ভ্যান, জলের বালতি-দুধের ক্যান, সবুজ সাথী-হলুদ স্কুটি, বোঝার ওপর শাকের আঁটি, নটেডাঁটা-বাঁধাকপি, তৃণমূল-বিজেপি, টাটা ম্যাজিক-ছোটহাতি, একেবারে যা তা। মফস্বলের রেলস্টেশন সংলগ্ন বাজার এলাকা যেরকম হয় আর কি। রাস্তার একধারে দাঁড়িয়ে ব্যাস্ত সকালের পরিবেশটা জরিপ করছিলেন। একটা উদ্দেশ্যও রয়েছে, ওষুধ কিনতে হবে। কিছুদিন আগে খুব পায়ের ব্যাথায় ভুগেছিলেন। কিছুতেই ব্যাথা না কমায় বাধ্য হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেন। রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ল ইউরিক এসিডের মাত্রা খুব বেশী। শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শে হোমিওপ্যাথিকে গেলেন, তাইতে নাকি রোগ নির্মূল হয়ে যাবে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধে সরলবাবুর উপকার হচ্ছে বটে, কিন্তু ভুল করে ফেলেছেন ওষুধটা সঙ্গে না এনে। কদিন না খেলে যদি আবার ব্যাথা বেড়ে যায়, তাই বেরিয়েছিলেন কোন হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানের সন্ধানে। মুস্কিল হল প্রায় সব জায়গাতেই এ্যালোপ্যাথিক ওষুধের দোকান গাদা গাদা থাকলেও হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকান সহজে পাওয়া যায় না। জায়গাটি বিশেষ পরিচিতও নয়, এখানে সেরকম দোকান আছে কি না, বা থাকলেও ব্রান্ডেড ওষুধ পাবেন কি না সন্দেহ। ঐ ব্যাস্ত বাজার এলাকায় কাকে জিজ্ঞেস করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। দোকানদার বেচছে, খরিদ্দার কিনছে, হকার চেঁচাচ্ছে, টোটো মাঝপথে প্যাসেঞ্জার তুলছে, ছাত্রছাত্রী টিউশানে আর অফিসবাবুরা ছুটছেন রেল স্টেশনে । এদিক ওদিক দেখতে দেখতে নজরে পড়ল রাস্তার একধারে একজন লোক দাঁড় করানো সাইকেলভ্যানের ওপর পা তুলে বসে আপাতনিশ্চিন্ত মনে বিড়িতে সুখটান দিচ্ছে। সরলবাবু এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন – ভাই, এখানে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকান কোথায় পাব?

                   লোকটা লাল সুতো বাঁধা বিড়িতে একটা লম্বা টান দিয়ে, এক রাশ ধোঁয়া ছেড়ে, তেঁতুল বিচির মত লাল দাঁতের পাটি তেল গড়ানো কান পর্যন্ত টেনে একগাল হেসে বলল – হোমিওপাতি ওসুদ? হেঁ হেঁ...., ঐ তো, বাজারের শেষের গলিটা দিয়ে সোজা চলে যান, তারপর ডানদিকে একটু এগোলেই হেঁ হেঁ..., পেয়ে যাবেন। হেঁ হেঁ।.. 
                   সরলবাবু মনে মনে ভাবলেন গ্রাম গঞ্জের মানুষ এখনও কত সহজ সরল হয়, সামান্য একটা দোকানের ঠিকানা জানাতে পেরে লোকটি যেন কত আনন্দ পেল। তার কথা মত এগিয়ে গেলেন।
     
                    বাজারের এই দিকটায় বোধ হয় তেমন কেউ আসেনা। অপরিচ্ছন্ন, স্যাঁতস্যাঁতে, ঝিম ধরা আধা অন্ধকার। বাজারেরই মধ্যে, অথচ সেই ব্যাস্ততা আর কোলাহল থেকে যেন শত যোজন দূরে। নর্দমা উপচে ময়লা জল রাস্তার ওপর এসে পড়ছে, এঁটো থারমোকলের থালা বাটি, প্লাস্টিকের গ্লাস, কাঁচের বোতল এদিক ওদিক ছড়ানো ছেটানো রয়েছে। প্রায় সবকটা দোকানই বন্ধ, দু একটা যদি বা খোলা রয়েছে, সেগুলো মনে হয় গুদাম ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাঁদিক থেকে এরকমই একটা প্রায়ান্ধকার সরু রাস্তা এই রাস্তায় এসে মিশেছে। আধময়লা জামা প্যান্ট পরা, গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে একজন লোক চোর চোর মুখ করে সরলবাবুকে দেখতে দেখতে সেই রাস্তা দিয়ে এসে পড়ল। লোকটি সরলবাবুকে এমন করে দেখছে, যেন সে কিছু চুরি করে ফেলেছে আর সরলবাবু সেটা দেখে ফেলেছেন। মনে মনে ভাবলেন, ধুত্তোর, দেখছে দেখুক, কারো ফেস রিড করার ইচ্ছে ওঁর নেই আর কি করে করতে হয় তা জানাও নেই। উনি সেই ভ্যানওয়ালার কথা মত এগিয়ে গেলেন। চোর চোর মুখের লোকটাকেও পিছন পিছন আসতে লাগলো।

                  ডানদিকে ঘুরতেই একটা দোকান খোলা রয়েছে দেখা যাচ্ছে। গ্রিল লাগানো দোকানের সামনে বেশ ভীড়। এত লোক, সবাই ওষুধ কিনতে এসেছে ! সরলবাবুর বেশ আশ্চর্য লাগল। নাকে একটা উৎকট গন্ধ পাচ্ছেন, কেমন যেন স্পিরিট মেশানো খেজুর রসের মত। সামনে পৌঁছে দোকানদারের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই একটু গলা উঁচিয়ে বললেন – আমাকে একটা বারবেরিস পেন্টারকান দেবেন তো।
    দোকানের লোকটি সরলবাবুর দিকে একটু তাকিয়ে থেকে বললেন – আমাদের এখানে শুধু বাংলা মাল পাওয়া যায়, ইংলিস নিতে গেলে বড় রাস্তার ওপারে যান। বাংলা দেব একটা?
     
     রাস্তায় ব্যান্ড পার্টি বাজছে। চেনা চেনা সুর। সরল বাবু মনে করার চেষ্টা করলেন- কি যেন কি যেন।... হ্যাঁ মনে পড়েছে - " কি নামে ডেকে বলব তোমাকে / মন্দ করেছে আমাকে....

    ফিরে এসে এক সহকর্মীকে ঘটনাটা বললেন। সব শুনে তিনি বললেন – তোমার এতখানি বয়স হল, আর বাংলুর ডাকনাম যে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ, সেটা জান না?
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন