এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ঠিকানা  

    ঝর্না বিশ্বাস লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ নভেম্বর ২০২২ | ২৪৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)


  • ঠিকঠাক মতো ঠিকানা দেয় না মেয়েরা। জায়গা বললে ব্লক ভুলে যাবে, বা রাস্তার নাম বলতে গিয়ে প্লটটা। মিতুলও এমনটাই করেছে। পই পই করে বলে দেওয়ার পরেও ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে হয়রান হচ্ছে রাজীব।
    ভাইসাব, নীলশিখা অ্যাপার্টমেন্ট কিস তরফ?
    সেক্টর বাতাইয়ে ...
    সেক্টর তো নহী হ্যেঁ
    ফির!
    পরে জানা গেল এখানে এক দুই তিন অনেকগুলো নীলশিখা  কিন্তু মিতুল কোনটায় থাকে তা জানায়নি। রাজীবও আর কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে গেল।



    ঠিক তিনমাস আগে মিতুলের সাথে পরিচয়। মেসেঞ্জারের হলুদ হাসি নিয়ে একটা উৎপটাং নাম এসে হাজির। রাজীবও কৌতূহল বশতঃ
    হাই, রাজীব হিয়ার!
    উত্তর দিল না সে। ভাবটা এমন যেন বয়েই গেল।
    মিতুল শুনেছে চ্যাটিং এমনই হয়, হাই হ্যালো দিলেই হল – অযথা প্রশ্নবাণ শুরু,
    কোথায় থাকে, কি করে থেকে শুরু করে বাড়িতে কটা জানালা সব জানা চাই। 
    মিতুল তাই চেপে যায় আরো। আর হলুদ বাতি হলুদ থেকেই দপ করে নেভে।



    ঘড়িতে আটটা বাজল সবে। স্কুলের মেয়েগুলো সব এগোচ্ছে। রাস্তাতেও ভিড় বাড়ছে। অটোর প্যাঁ প্যাঁ থেকে সাইকেলের ক্রিং নিয়ে চারপাশটায় শব্দরা আরো ঘন হয়ে আসছে। রাজীব মনে মনে ভাবছে, ওর বাড়িটা না পেলে এত দূর আসাটাই মিথ্যে হয়ে যাবে।
    মিতুল অবশ্য বলেছিল,
    কেন আসছেন এখানে?
    উত্তরে রাজীব জানায়,
    আমার কাজ আছে। তাছাড়া এত কাছে গিয়েও দেখা হবে না তা কি করে হয়!
    চুপচাপ ছিল মিতুল, শুধু ঠিকানা চাওয়াতে এই আধাখাপছাড়া একটা কিছু দিয়ে ছেড়ে দিল!



    সেই সকালে ট্রেন গোরখপুর এসে থামল। তার পর থেকেই নীলশিখা খোঁজা হ্যাঁপা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে পেটেতেও ডনবৈঠক শুরু। রাস্তার পাশে একটা স্টলের বেঞ্চিতে এসে বসল রাজীব। দোকানের ছেলেটা সবে ঝাড়পোচ করছে। ওকে দেখে রাজীব জিজ্ঞেস করল,
    চা হবে?
    ছেলেটা মাথা ঝাঁকিয়ে এক ঝলক হেসে নিল।
    বঙ্গালী!
    হা।
    ছেলেটা গামছায় হাত মুছে চা এনে হাজির।
    চায়ে চুমুক দিতে দিতে রাজীব পকেটের ঠিকানায় আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিল।



    সেদিন ছিল শনিবার, অফিসেও কাজটাজ নেই। তাই মিতুলের সাথে অনলাইন হবে ভেবে রাজীব মোবাইলে চোখ রাখল। কিন্তু তিনি নেই। পরে জানা গেল দীপাবলির শপিং করতে ব্যস্ত।
    একদিন কথায় কথায় মিতুলই বলেছিল,
    দুটো গাড়ি আমাদের। একটা বাপি নিয়ে যায় আর আরেকটা আমি আর মা কোথাও বেরোলে।
    এসব কিছু মিলিয়ে রাজীব নিজের মধ্যে একটা হাল্কা ছবি গড়েছিল মিতুলের। কিন্তু আশ্চর্য রকম ভাবে মিতুল কখনই  জানতে চায়নি -  আপনি কি করেন / কোথায় থাকেন/ বা বাড়িতে কে কে ...
    এই ব্যাপারটাকে রাজীব দুইভাবে নেয়।
    এক- ও ভীষণ রকম বুদ্ধি নিয়ে ঘোরা ফেরা করে। ও
    দুই- এসবে ওর কোন মাথাব্যাথা নেই।



    চলতে চলতে একটা স্কুলের খুব কাছাকাছি এসে পড়ল রাজীব। মিতুল একবার একটা ইন্টার্ভিউয়ের গল্প করেছিল, হয়তো এই এমনই এক স্কুলে ও পড়ায়। এরপর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল গেটটায়।
    গাড়ি থেকে নেমে আসা সমস্ত দিদিমণিদের ও খুব গাঢ় চোখে দেখে চলল, মিতুল কি এদের মধ্যে কেউ! ভাবতেই দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করল স্কুলটার নাম।
    এটি হিন্দি মিডিয়াম, অতএব মিতুল যা বলেছে তা মেলেনি। তাই এবারও নিরাশ হতে হল রাজীবকে। 



    দোকানের ঝাঁপগুলো এখন খোলা শুরু হয়ে গেছে। একটা ক্যাফে দেখে ভেতরে এলো রাজীব। গত সপ্তাহে চিঠিতে ঠিকানা দেবার পর আর মিতুলের সাথে যোগাযোগ হয়নি, তাই এর পর আর কোন চিঠি আছে কিনা দেখতেই মেইলবাক্স ঝুপ্পুস খুলে গেল।
    মিতুলের চিঠি ছিল সেদিন। ও লিখেছে,

    রাজীব,
    যে ঠিকানাটা আপনাকে দিয়েছিলাম ওটা আমার নয়। একই সাথে পড়ত এক কলেজ বান্ধবীর। বিশাল বাড়ি ওদের, হয়তো আপনারও অমনটাই পছন্দ। আর বাকি যা যা বলেছি তাও সব ওরই। এ কটা দিন ওদের বাড়িতে দারুন কাটল। আজ ফিরে যাচ্ছি নিজের জায়গায়।
    আসলে আমার নিজের সম্বন্ধে বলার তেমন কিছুই ছিলনা তাই ওকে নিয়েই গল্প সাজাতাম। একটা অনামী স্কুলে পড়াই, ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে আমার সময় কাটে। গল্প বলি, ছড়া কাটি – আবার কখনও ওদের বোকা বানিয়ে অনেক মজার মজার খেলা খেলি। তবে আপনার সাথে এটা কোন খেলা ছিল না। নিজেকে পালিয়ে নিয়ে বাঁচতে চাইছিলাম, কিন্তু এমন করে কেউ কোনদিন খোঁজ নিতে পারে ভাবতে পারিনি।

    অনেকক্ষণ চিঠিটার দিকে তাকিয়ে থাকল রাজীব। আর ভেতর থেকে একটানা কথারা হয়েই চলেছে,
    তোমাকে চাই, তোমাকেই চাই।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন