এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কেন্দ্রীভূত কথামালা অবান্তরে শুধু 

    Diponkar Chanda লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ নভেম্বর ২০২২ | ২৩৩ বার পঠিত
  • অন্তর্জাল! ব্লগ!
    নতুন গণমাধ্যমের পাঠক-কৌতূহল সম্ভবত সামান্য স্পর্শ করছে আমাকে!
    আমি এড়িয়ে যেতে পারছি না মনোজগতে এক অস্বাভাবিক আবেগের উপস্থিতি!
    বিবেচনাবোধলুপ্ত সরীসৃপের মতো আমি নিজেকে সর্পিলাকারে অভিযোজিত করার চেষ্টা করছি বিচিত্রধর্মী পাঠাভ্যাসে, প্রবেশ করার চেষ্টা করছি কার্যকারণহীন প্রতিদিন লেখার অভ্যাসে!
    এই মাত্র শেষ করলাম শিশুসাহিত্য! পরমুহূর্তে হাত দিলাম কবিতায়! তারপরই হয়তো গল্প, ছড়া অথবা ভ্রমণ কিংবা স্মৃতিচারণ! 
    বাদ যাচ্ছে না কোনোটাই! 
    ভারি অদ্ভুত!
    ঘোরগ্রস্তের মতো লিখে যাচ্ছি আমি!

    তিনি এসে বসলেন পাশে!
    চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে স্মিতহাস্যে বললেন, কী লিখছেন এখন?
     
    ঠিক বুঝতে পারছি না! চেষ্টা করছি বিবিধ শিরোনামে কিছু একটা লেখার! তাড়াতাড়ি বললাম আমি। আসলে সময় নষ্ট করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার!
     
    কেন লিখছেন? নির্লিপ্ততা তাঁর কণ্ঠে স্পষ্ট।

    প্রয়োজন! তাই লিখছি! সপ্রতিভতা বজায় রাখার চেষ্টা আমার উত্তরে।
     
    কার প্রয়োজন?
     
    আমি বেশ বিরক্ত হলাম! তিক্ত স্বরে বললাম, আচ্ছা! আপনার সমস্যাটা কী?
     
    কোনো সমস্যা নেই তো! লেখার উদ্দেশ্য জানতে চাইছিলাম কেবল!
     
    শোনেন, আমি ভালোর জন্য লিখি! মানুষের ভালোর জন্য! সমাজের ভালোর জন্য! বুঝলেন? প্রায় একনিঃশ্বাসে বললাম আমি।
     
    মানুষ ভালোর জন্য লিখতে পারে না। ভালো শব্দটি সম্পূর্ণ অলীক, ভূয়োদর্শন।
     
    আমি বিরক্তবোধ করি তাঁর কথায়। 
    দৃঢ়কণ্ঠে আমি জানাই, শোনেন, আমার লেখা অত্যন্ত বাস্তবঘনিষ্ঠ!
     
    হা হা হা হা। তিনি হেসে উঠলেন উচ্চৈঃস্বরে। বললেন, বাস্তবতাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলে মানুষ। বাস্তবের ছদ্মাবরণে সুকৌশলে অবাস্তব কথা লেখে। যিনি লেখেন, চেতনে কিংবা অবচেতনে ঠিকই জানেন সেই কথা। হিসাব মিলিয়ে দেখুন, আপনার লেখায় কোনো বাস্তব নেই। ভালোর জন্য লেখাও আপনার প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্যে বিচ্যুতি থাকলে সে লেখা ভালো কিছু বয়ে আনে না শেষপর্যন্ত। না মানুষের জন্য, না সমাজের জন্য। এমনকি আপনার নিজের ক্ষেত্রেও এ সত্য প্রযোজ্য ভীষণভাবে। একটানা কথা বলে তিনি মৃদু হাসলেন।
     
    নিজের কথা সম্পর্কে আপনি এত নিশ্চিত হচ্ছেন কী করে? আমার কণ্ঠে শ্লেষ।
     
    তিনি পরম আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন, আপনার চারপাশে তাকান। এই যে বলছেন, ভালোর জন্য লিখছেন আপনি। এবং লিখছেন আপনার মতো অসংখ্য অগণিত মানুষ। সকলেই বলছেন, লিখছেন ভালোর জন্য। সকলেই বলছেন, লিখছেন বদলে দেবার জন্য পৃথিবীর মন্দ দিকগুলো। অথচ ভালো করে তাকান সর্বত্র একবার। দেখুন, কী বদলেছে? ওই দেখুন, ইলেকট্রিক পোলে তড়িতাহত একটা বাদুড় ঝুলে আছে। দমবন্ধ গুমোট নিশ্চল বাতাস, নির্বাক ধুলো, মৃত প্রজাপতি, মূল্যহীন আসবাব, মানুষের নিরাবেগ চোখ, মুমূর্ষু নৈতিকতা, প্রাণহীণ জীবন-
     
    কী বলতে চান আপনি? আমি অপ্রকৃতিস্থ বোধ করি!
     
    আপনার শুনতে হয়তো খারাপ লাগছে, তবু আমাকে বলতেই হচ্ছে, আসলে ভালোর জন্য লিখছেন না আপনারা।
     
    চাপা ক্ষোভে আমি বলি, তাহলে বলছেন, মন্দের জন্য লিখছি আমরা?
     
    মন্দগুলো চাপা দেয়া হচ্ছে ভালোর ছদ্মাবরণে। প্রগতি রুদ্ধ হচ্ছে।
     
    এই যে! আমার এই লেখাটি দেখুন। ভালো করে। মনোযোগ দিয়ে। দেখুন।
     
    তিনি দেখলেন। বললেন, হ্যাঁ, দেখলাম। কেবলই আত্মতুষ্টি, আত্মপ্রসাদ।
     
    আপনি একজন ঋণাত্বক মানুষ। আমি হতাশ কণ্ঠে বললাম।
     
    কিংবা অসম্পূর্ণও বলা যায়। অথবা বলা যায় পূর্ণতার আশীর্বাদ কখনো পতিত হবে না আমার শরীরে। তিনি কথাগুলো যোগ করলেন কথার সাথে।
     
    আমার লেখায় মানুষের মন্তব্যগুলোকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন আপনি? এই যে! দেখুন, একজন লিখেছেন, অনেক ভালো হয়েছে লেখা।
     
    হা হা হা হা! বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা।
     
    এই যে! একজন লিখেছেন, অসাধারণ!
     
    ঈর্ষার কথা কি কখনো বলিনি আপনাকে!
     
    এই যে! এই প্রশংসাবাক্য! ক্লান্ত স্বরে বলতে চাই আমি।
     
    তিনি নীরব প্রতিদ্বন্দ্বী আপনার। কৌশলে নিরস্ত্র করতে চাইছেন আপনাকে।
     
    এই মন্তব্যটি তো একেবারে সাধারণ! সাদামাটা! এটাকে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন আপনি?
     
    তিনি দ্বিধান্বিত আপনার অবস্থান সম্পর্কে। এখনো।
     
    পক্ষে বলছেন যাঁরা?
     
    তাঁরা চাইছেন, আপনি হয় নিরপেক্ষ থাকুন অথবা তাঁদের পক্ষাবলম্বন করুন।
     
    বিপক্ষেও তো বলছেন কেউ কেউ! কেউ কেউ বলছেন উলটোপালটা কথা! এবং যাঁরা চুপ করে আছেন, তাঁরা? 
     
    সবকিছু কেন জানতে চাইছেন আমার কাছে? আপনার নিজস্ব একটা মস্তিষ্ক আছে।
     
    আমি হতাশ হয়ে জানতে চাইলাম, আপনার দৃষ্টিতে তাহলে লেখার কোনো অর্থ নেই?
     
    তিনি হাসলেন। বললেন না কিছু।
     
    আমি আবার জানতে চাইলাম, আপনার দৃষ্টিতে ভালো লেখার সংজ্ঞা কী?
     
    একটা সাদা কাগজ তিনি তুলে নিলেন টেবিল থেকে। কাগজের শুভ্রতার প্রতি আঙুল তুলে বললেন, আশা করি বোঝাতে পেরেছি আমি।
     
    মানে কী এর? শূন্যতা? শূন্যতাই আপনার কাছে ভালোর সংজ্ঞা?
     
    নিষ্কলুষতা। অপাপবিদ্ধতা। অন্তরাত্মা যেদিন বিমুক্ত হবে শূন্যতায়, পূর্ণতা অভিমুখে যাত্রা শুরু হবে মানুষের। তখন সৃষ্টি হবে লেখা, ভালোর জন্য, মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, পৃথিবীর জন্য।

    আমার ঘুম ভাঙল। আমি একটা দুঃস্বপ্নে নিপতিত ছিলাম দীর্ঘযুগ। 
    ধীরে ধীরে আমি বিদায় নিলাম। 
    হয়তো আপাতত! 
    যদিও অনিশ্চিতি বজায় থাকল সম্ভবনার সমস্ত পিঠ জুড়ে!

    তবু আশা করি আবার দেখা হবে কালের অনিবার্য ঘূর্ণনে!
    ততদিন অপরিবর্তিত যদি থাকে সবকিছু!
    আমি, তুমি, তোমরা, আমরা, আপনারা! এবং সবাই!

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন