এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • টাইম ট্র্যাভেল

    Arundhati Sarkar Santra লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৫ আগস্ট ২০২২ | ৫৯৪ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • এই বাংলার লোকজনের হাতে টাইম ট্রাভেলের মেশিনটা হঠাৎ পড়লে কি হবে বলুন তো? 
    তারা সময় পেরোনো ঝাঁটায় চড়ে কখনো দুশো বছর এগিয়ে যাবে, কখনো আবার সাঁ, সাঁ করে করে হাজার বছর পিছনপানে ধাওয়া করবে।
    নৈরঞ্জনার ধারে ঊরুবিল্বে নাকি লাখো মানুষের মেলা বসে গেছে। আজ নাকি বনের মেয়ে সুজাতা একজন ঋষিকে পরমান্ন নিবেদন করবে। ঐখানে আর শান্তি নেই।
    এতো লোক জমে গেছে গ‍্যালিলিওর মানমন্দিরে, তিনি নাকি ঘরে দরজা দিয়েছেন। 
    রবিবাবু বজরায় বন্দী। 
    আর জীবনানন্দ কে বাঁচাতে উঠতি কবিরা কলকেতায় ট্রাম অবরোধে বসেছে।
    ঐ যাঃ! এই করতে গিয়ে কয়েক বছর আগে  কড়ায় মাছ বসিয়ে এসেছি ভুলেই গেছি।
    ভাগের পুকুরে মাছ ধরা হয়েছে। উঠোনে সেই মাছ ভাগ করে জ্ঞাতিদের ভাগবাটোয়ারা করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার ভাগে রুই ছাড়াও কিছু সরলপুঁটি, খয়রা আর তেলাপিয়া। এছাড়া সবাইকে দিয়ে থুয়ে কিছুটা চুনোমাছ। কর্তা, দুই ছেলে সবাই মাছের পোকা। চুনোমাছের টকের কথা তো বাদই দিলাম। পুকুরের মাছধরার দিনে তাদের পোয়াবারো। বাকি মাছটাছ কুটে গুছিয়ে রেখে আমি সবে চুনোমাছটা ধুয়ে রান্নাঘরে রেখেছি, এমন সময় পাড়ার এক কাকিমা খোলা সদর দিয়ে এক্কেবারে ঘরের উঠোনে উপস্থিত।
    এই সেই কথার পরে আসল কথায় এসে পড়লেন
    "আজ তোমাদের পুকুরে মাছ ধরা হলো, না বৌমা? পল্টুজেলেকে দেখলুম যেন"
    উনি বেশ চারপাশ দেখে বুঝেই এসেছেন বুঝতেই পারলাম। আমার আবার কাজের দেরি হচ্ছে, বললাম, "হ‍্যাঁ কাকিমা। আপনার রান্না হয়ে গেছে?"
    কাকিমা বললেন "হ্যাঁ ঐ ভাত আর মুসুরির ডাল। তা কি কি মাছ পেলে বৌমা?"
    এইবারে আমি একটু সাবধান হয়ে যাই। এদের গতিক সব আমার বোঝা আছে।
    বললাম "ঐ রুই কিছুটা...
    কাকিমা চলে যেতে যেতে বলেন অহ্, আমি ভাবলুম বৌমা যদি দুটো চুনোচানা পায় দেখি বলে, তা রুই আর কি হবে ওসব নাতিদের দিও খন।"
    যেন রুইতে তাঁর বেজায় অরুচি। আসলে রুই এর মতো বড় মাছ চেয়ে ওঠা যায়না।আমিও তা বিলক্ষণ জানি। 
    আমি তার দিকে না তাকিয়ে দরজার দিকে অপ্রস্তুত ভাবে চেয়ে কথা ঘোরাই "চা খাবেন নাকি কাকিমা?"
    তিনি ততক্ষণে প্রায় দরজা গোড়ায় বললেন "না মা তুমি রান্না সেরে নাও।"
    রাতে চুনোমাছের টক ঝাল খেতে খেতে ছেলেদের বাবা বললেন "বাঃ! নিজেদের পুকুরের মাছের স্বাদই আলাদা। কি বলো?"
    তা সত্যি যদি ঐ সময় ঘোরানোর যন্তরটা পাই, একবার সেই কাঠদুপুরের উঠোনখানায় গিয়ে পড়ি। চারটে চুনোমাছ খুড়িমার হাতে দিয়ে বলি "কাকিমা গো দুটো চুনো নিয়ে যাও, ভেজে খেও গা। ছেলেদের না হয় রুই ই দেব।
    তাহলে বুঝি নিজেও আমি শান্তিতে দুটো চুনোপুঁটি গলা দিয়ে নামাতে পারি। নইলে কেন তারপর থেকে চুনোমাছ দেখলেই আমার সেই ক্ষয়াটে বিব্রত মুখটা, খড়িওঠা হাতগুলো বারেবারে মনে পড়বে? আর কেনই বা গলায় একটা দলা পাকানো কান্না মতোন...
    সে যাকগে, লোকজনের অনেক সব জায়গায় যাবার আছে, আমি ওই যন্তরটা আটকে রেখে দিলে তো আর চলবে না।
     
    তবে টুক করে আরেকটা জায়গায় আমার যেতেই হবে। ঐখানে আমি একজনকে দাঁড় করিয়ে রেখে চলে এসেছি অনেক বছর হয়ে গেছে।
    ইস্কুলে পাশ দিয়ে হবে তখন কলেজে ঢুকেছি। কোচিং সেন্টারে পড়তে গেছি। পড়ে বেরিয়ে বাসে উঠবো। শুধু তাই নয় তখন আমি উঠতি প্রেমিকা। পড়ে ফেরার পথে পরাণচাঁদ প্রেমিকের মুখটাও দেখে যেতে হবে। এমন সময় পাশ থেকে একজন বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করলেন " বেহালা যাবার বাস কোন দিক থেকে পাবো গো মা? একটু জেনে দেবে।"
    চলন্ত বাস, স্ট‍্যান্ডে একটু গতি কমালে আমি কন্ডাক্টর কে জিজ্ঞেস করি। সে ইশারায় উল্টো দিক দেখিয়ে দেয়। আমি ও বৃদ্ধাকে সেকথা বলতে তিনি বলেন "ঠিক আছে মা। আমি তো চোখে দেখিনা, কাউকে বলতে হবে রাস্তা পার করে দিতে।"
    এরই মধ্যে আমার বাস এসে গেছে, আর প্রেমিকের দাঁড়িয়ে থাকার সময়ের পাটিগণিতের হিসাবের তাড়ায় আমি বাসের পাদানিতে লাফ ও দিয়ে ফেলেছি। 
    শুধু সেই জনহীন বাসস্ট্যান্ডে কে যে অন্ধ মহিলাকে রাস্তাটুকু পার করে দিলো সেইটি আমার জানা হলনা। 
    ঐ কাঁটাটুকু আমার মনের ভিতর বিঁধে রইল আজীবন। তিনি হয়তো রাস্তাটি ঠিকই পেরিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমি নিজেকে ঐ বাসস্ট্যান্ডে কর্তব‍্যে গাফিলতির অপরাধে দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছি সেই ইস্তক।
    ঐ বিব্রত আমিটুকুকে আমাকে আনতে যেতে হবে, বুড়িমাকে রাস্তাটুকু পার করিয়ে দিয়ে।
     
    আমরা সাধারণ মানুষেরা এই সংসারে প্রতিদিন বিবেক আর বুদ্ধির দুইটি কাঁটায় ভালো মন্দ, হাসি কান্নার উল বুনে চলি। কখনো বুদ্ধির কাঁটাটা এগিয়ে থাকে কখনো বা বিবেকের কাঁটা। একটু অসাবধান হলেই ঘর পড়ে যায়, জীবনের উলবোনায় ফুটো হয়ে যায়। ঐ সময় ঘোরানোর মেশিনটা পেলে সেই অসাবধানতায় পড়ে যাওয়া ফুটোগুলো একটু মেরামত করে নিতাম আরকি।
    এই দেখো, আমিও তো সাধারণ মেয়েমানুষ বৈ তো আর কিছুনা। আমার হাতে টাইম ট্রাভেল ফাভেল পড়লেও এইসব চুনোমাছ, বুড়িমার গল্পই হবে। তার থেকে যারা বিশ্বযুদ্ধুগুলো থামিয়ে দেবে  এই সময় ঘোরানোর ডিঙিটা তাদের হাতে পড়াই ভালো। 
    ঠিক কিনা?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৫ আগস্ট ২০২২ | ৫৯৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 2a02:26f7:d6c0:680d:0:9775:35ac:fbba | ১৫ আগস্ট ২০২২ ০১:০৪510998
  • আমি টাইম ট্রাভেল মেশিন পেলে ছোটবেলার কোন একটা দুর্গাপুজো বা কালীপুজোর দিনে ফিরে যেতাম। কি মজাই যে হতো! 
  • এস এস অরুন্ধতী | ১৫ আগস্ট ২০২২ ১৪:০১511018
  • তাই তো ছেলেবেলার সেই সব মধুর দিন গুলি
  • Swati Ray | 117.194.32.58 | ১৫ আগস্ট ২০২২ ১৯:২৫511039
  • সত্যি ভুল কাজ গুলো যদি ফিরে গিয়ে ঠিক করে আসা যেত !
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:2107:955d:4c73:bd0a | ১৫ আগস্ট ২০২২ ২০:৪৩511045
  • আচ্ছা, আমি কখনো টাইমমেশিন পেলে আপনাকে দিয়ে দেবো ক্ষণ। আমি অতীতের কোথাও যেতে চাইনা। ভবিষ্যতেরও না। ভালো লাগলো লেখাটা।
  • এস এস অরুন্ধতী | ১৫ আগস্ট ২০২২ ২১:৩৬511047
  • ধন্যবাদ স্বাতী। 
    অপেক্ষায় রইলাম কে কে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন