এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  ভ্রমণ   দেখেছি পথে যেতে

  • নন্দনকানন, হেমকুন্ড সাহিব ইত্যাদি 

    b
    ভ্রমণ | দেখেছি পথে যেতে | ২১ জুলাই ২০২২ | ১০৫৪ বার পঠিত
  • শনিবার, ৯ জুলাই
    -------------------------
    এক দো তিন দো সাত আপ  হবড়া সে দেহরাদুন  জানেওয়ালী উপাসনা এক্সপ্রেস মোরাদাবাদ স্টেশন থেকে ছেড়ে ঘন্টাখানেক চলেছে। ট্রেনের চলার পথের ডানদিকে অনেক দূরে ঘননীল পাহাড়, তার উপরে একেবারেই মেঘৈর্মেদুরমম্বরম। ট্রেন ঠিক সময়ে চলার দরুণ বন্ধুবর তথা ক্যাপটেনের মুখে যে আহলাদী হাসি ফুটেছিলো, আকাশের অবস্থা থেকে  সে-ই আবার রামগড়ুরের ছানা হয়ে বসল। প্লাসে মাইনাসে কাটাকুটি হয়ে হাতে প্ড়ে রইল শূন্যি। 
    হরিদ্বার স্টেশনে নামতেই একগাদা লোক ছেঁকে ধরলো, যেমন ধরে । দাদা,  হোটেল? অচ্ছা হোটেল দিখা দুঙ্গা, আ যাও মেরে সাথ কিন্তু ক্যাপটেনের সিদ্ধান্ত অটল । থাকবো কুল্লে বারো ঘন্টা বা তার চেয়েও কম । বেশি পয়সা দেবো কেনো রে? তাছাড়া বাস স্টেশনের কাছাকাছি থাকাটাও জরুরী, কারণ পাহাড়ের বাস সব ভোরবেলা ছাড়বে। 
    কোনো রকমে হোটেলে ব্যাগ ট্যাগ রেখে , স্নান করে, বাসে খোঁজ নিতে বেরোনো গেলো। সরকারী আর বেসরকারী স্ট্যান্ড দুটো প্রায় পাশাপাশি। সরকারী জানালেন, কাল সুবে পাঁচ বজে আ যাও, এক হি বাস হ্যায়  । আর বেসরকারী বাবু বললেন , যোশীমঠ কি বস কাল সুবে দো পঁয়্তালিশ সে মিলেগী , চার বস হ্যায়, ছে বজে তক মিলেগী ।
    এই সব অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তথ্য হৃদয়ঙ্গম করে গঙ্গাঘাটের দিকে এগুচ্ছি, এমন সময় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি  নামলো। এক ঘন্টা ধরে সেই বৃষ্টি চললো, যে দোকানে দাঁড়িয়েছিলাম তার সামনের রাস্তাটা মূহুর্তে নদী হয়ে গেলো । হড়পা বান কাকে বলে তা স্বচক্ষে দেখলাম। দোকানদার খুব খুশি মনে বললেন, ইস সাল কি  পহলা  বারিষ, আউর ভি হোনা চাহিয়ে । বন্ধুর মুখের দিকে তাকাতে আর সাহস করলাম না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২১ জুলাই ২০২২ ১২:৫৩737927
  • তাই বলুন। আমি কদিন ধরেই ভাবছিলাম বি গেলেন কই? 
    রূপ্কুন্ড হেন্মকুন্ড সাহিব ​​​​​​​আগস্ট ​​​​​​​এ ​​​​​​​গেলে ​​​​​​​বেশী ​​​​​​​ভাল ​​​​​​​না? ​​​​​​
     
    লিখুন ​​​​​​​লিখুন ​​​​​​​হাত ​​​​​​​চালিয়ে। ​​​​​​​
     
  • | ২১ জুলাই ২০২২ ১৪:২২737929
  • *হেমকুন্ড সাহিব 
  • dc | 2401:4900:1f2b:9743:38a0:4c3d:7cfb:3378 | ২১ জুলাই ২০২২ ১৪:৫৭737930
  • আমিও পড়তে শুরু করলাম। ছবি থাকলে আরও জমবে :-)
  • b | 14.139.196.16 | ২২ জুলাই ২০২২ ১৫:৪২737948
  • রবিবার , ১০ জুলাই 
    -----------------------------
    ভোর চারটেতে ঘুম ভাঙ্তেই কানে এলো দমফাটা বৃষ্টির আওয়াজ। নিতান্তই শহীদ মার্কা মুখ করে তৈরী হওয়া  । (এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, ঐ টিপিকাল উত্তরভারতীয় ছোলে, রাজমা , মিক্স্ড ভেজ, আলু গোবি ইত্যাদি  ডিনার আইটেমকে  যতই গাল দিন না কেন , পরের দিন ভোরে উঠে যদি আট ঘন্টার বাস জার্নি থাকে , তবে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেন, সেটা দেখা হলে বলে দেবো )। `বাজার কলকাতা' থেকে কেনা অতীব বিশ্রী একটা রেনকোট পরে, পিঠে পাঁচ কেজির  বোঝা  নিয়ে বাস স্টেশনে দেখা দিলাম। দেখি সবেধন নীলমণি সরকারী বাসটিকে ঘিরে লোকজন হিপোপটেমাসের  ধৈর্য্য নিয়ে ভিজছে, ড্রাইভার কনডাকটর কারুরই দেখা নেই। অবস্থা বেগতিক দেখে বেসরকারী বাসেই সওয়ার হওয়া গেলো । সে বাস ছাড়লো পৌনে  ছটার সময় । ততক্ষণে বৃষ্টি শেষ ।
     
    অ্যাভোমিনের প্রভাবে ঢুলতে শুরু করেছি , এমন সময় বাসটা ঘপাৎ করে থেমে গেলো, কপাল পুরো সামনের রডে । জায়গাটা সম্ভবতঃ দেবপ্রয়াগের আগেই । কানডাকটর সাহেব মুখ ফিরিয়ে বললেন, নাস্তা কর লো। বাস থেকে নামতে যেতেই একপাল লোক ঘিরে ধরল, `ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা ' স্টাইলে কড়ে আঙুল উঁচিয়ে  । আমি ভাবলাম এ বোধ হয় উত্তরখন্ডের নতুন অভ্যর্থনা প্রথা । আমিও সেরকম করতে সামনের লোকটা খপাৎ করে আঙুল পাকড়ে বললো আ যাইয়ে সাহাব। কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম এরা সব হোটেলের দালাল , হোটেলে যে ইউরিনাল আছে তার জীবন্ত বিজ্ঞাপন। মনিষীবাক্য বৃথা হবার নয়ঃ যাবৎ বাঁচি তাবৎ শিখি।
     
    পথিমধ্যে আর কোনো ব্রেক নেই । মানে দেওয়া হল না । মাঝখানে এক জায়গাতে রাস্তার ধারে  জে সিবি মেশিন ইত্যাদি । ফলে ওয়ান ওয়ে । সেখানে প্রায় এক ঘন্টা আটকা পড়ে, যখন পেরোচ্ছি, তখন দেখি বাসের চাকার বাইরে রাস্তার ক্লিয়ারিং বোধ হয় কুল্লে দু ইঞ্চি । নিচে অলকনন্দা,বর্ষার  জল পেয়ে একেবারে খুশ মেজাজে ছুটছে। । সেখানে হৃদি যত খুশি ভেসে যাক (গোঁসাইবাবুর কলম অক্ষয় হোক, উনি বড় হয়ে দারোগা হোন ), হৃদি+শরীর একসাথে ভাসলে একটু চাপ ।
     
    যখন মনে হল রাস্তা আর ফুরোবে না , গোঁ গোঁ  করে বাস অলকনন্দা ছেড়ে অনেকটাই  উপরে উঠে এলো। এপাশের পাহাড়ের ঢালটা অল্প সুগম হল, দু চারটে বাড়িঘর , হোটেলওয়ালাদের ডাক, রাস্তার মোড়  । যোশীমঠ বা জ্যোতির্মঠ । 
     
     
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:c4f9:f228:160c:8986 | ২৩ জুলাই ২০২২ ০২:৫৭737950
  • বাঃ বাঃ, আমিও পড়ছি। লিখুন।
  • Amit | 193.116.69.148 | ২৩ জুলাই ২০২২ ০৩:১৬737951
  • ছোলে, রাজমা , মিক্স্ড ভেজ, আলু গোবি ইত্যাদি ডিনার আইটেম কে পুরো সমর্থন। ভোরবেলা খুব কাজের জিনিস। এক্কেরে কার্যকারন সম্পক্ক। 
    :). :) 

    ছবি ​​​​​​​দিয়ে ​​​​​​​দ্যান ​​​​​​​না ​​​​​​​খান ​​​​​​​কতক। ​​​​​​​আরো ​​​​​​​ভালো ​​​​​​​জমবে। ​​​​​​​
     
  • &/ | 151.141.85.8 | ২৩ জুলাই ২০২২ ০৪:২৭737952
  • কী চমৎকার! ঊষা, চিত্রলেখা, বাণরাজা ---এঁরা সব ওদিকেরই না?
  • Ranjan Roy | ২৩ জুলাই ২০২২ ২১:৫৬737955
  • এগিয়ে চলুন বি, সঙ্গে আছি। ওই ডিনার আমায় মাঝে মধ্যেই খেতে হয়। ঃ)))
  • নামন | 2405:8100:8000:5ca1::eb:85cc | ২৪ জুলাই ২০২২ ১১:৪৪737959
  • হেমকুন্ড সাহিব কেন? কেন হেমকুন্ডজী, হেমকুন্ডবাবা, হেমকুন্ডগুরু, হেমকুন্ডসাঁই বা শ্রী শ্রী হেমকুন্ডস্বামী নয়? হোয়াই দিস কন্টামিনেশন?
     
  • b | 14.139.196.16 | ২৫ জুলাই ২০২২ ১৩:০৪737971
  • রবিবার , ১০ জুলাই 
    -------------------------
    যোশীমঠের দুটি মাহাত্ম্য। এক, শীতকালে বদ্রীনারায়ণের পূজো এখানে হয়, নৃসিংহ  মন্দিরে, যে প্রথা শঙ্করাচার্য্য চালু করে গেছিলেন (খুবই প্র‌্যাকটিক্যাল ) ।  দুই, মন্দিরের খুব কাছেই শঙ্করাচার্য্য প্রতিষ্ঠিত জ্যোতির্মঠ  । মন্দিরের বিস্তীর্ণ চাতাল সম্ভবতঃ আঞ্চলিক লোকেদের পাব্লিক  স্পেস, চাতালে ছেলে মেয়েরা খেলছে, বড়রা কেউ কেউ মন্দির পরিক্রমা করতে করতে ইভিনিং ওয়াক সারছেন , আবার চাতালের চারপাশের সিঁড়িতে বসে গল্প গুজব করছেন । মন্দিরের একদিকে "শঙ্করাচারিয়া কা  গদি ",অন্যদিকে মন্দিরের মাইকে তেড়ে গান হয়ে চলেছে
    "জয় জয় জয় হনুমান গোসাইঁ 
    কিরপা করো মহারাজ "
    কিম্বা 
    "রাম দূত অতুলিত বল ধামা
    অঞ্জলি পুত্র পবন সূত রামা "। 
    তুলসীদাস-ই জিতে  গেলেন শেষ অবধি । 
     
    বললে পেত্যয় যাবে না, এতো যে হিমালয় হিমালয় করে হেদিয়ে মরি , যোশীমঠে পৌঁছে পেটে ভাত পড়া না অব্দি তাকে সেভাবে ঠাওর-ই করতে পারি নি। রেস্টুর‌্যান্টের জানালা থেকে হঠাৎ বাইরে তাকিয়ে দেখি পাহাড়গুলো ঝুঁকে এসেছে, হাওয়া এতো পরিষ্কার যে প্রতিটি শিরা উপশিরা ফাটল স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। অথচ জানি রেস্টুর‌্যান্ট আর  পাহাড়ের মধ্যে অলকনন্দার  গর্জ , প্রায় ১০০০ ফুট নিচে । কান পাতলে , গাড়ি ঘোড়ার আওয়াজ কমলে , তার কন্ঠস্বর শোনা যাবে।
     
    রাত বাড়লে মন্দির থেকে  চলে আসি হোমস্টেতে । সন্ধ্যার শেষতম আলোতে ঠাওর হয় বাইরে গোটা চারেক আপেল গাছ, ফল ধরেছে।  সারারাত ধরে শিশির পড়বে তার উপরে । 
    অলকনন্দার শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি । 
    (  অনেকে ছবি চেয়েছেন , কিন্তু ছবি দেবার বিশেষ কিছু নেই । এই জায়গাগুলো এতই লোকে ঘুরেছে যে গুগল সার্চ করলেই আমার থেকে অনেক ভালো ফোটোগ্রাফারের তোলা অনেক ভালো ভালো ছবি পাবেন । আমার তোলা একটা দিচ্ছি ঃ খাবার জায়গা থেকে নেওয়া
     
  • dc | 2401:4900:1f2b:dbc2:e5bb:2bbe:a4b3:b1f5 | ২৫ জুলাই ২০২২ ১৩:৩৩737972
  • এইটা একেবারে হক কথা। পেটে খিদে থাকলে কিসের সমুদ্র, কিসের পাহাড়, আর কোথায়ই বা পূর্ণিমা চাঁদ :-)
     
    ছবিটা দেখলাম, অসাধারন হয়েছে। এখানেই ডাইরেক্ট পোস্ট করে দিতে পারেন 
  • b | 117.194.76.237 | ২৫ জুলাই ২০২২ ২০:৩২737975
  • b | 14.139.196.16 | ২৭ জুলাই ২০২২ ১২:১৪738016
  • সোমবার, ১১ জুলাই 
    -----------------------------
    বহুদিন ধরেই  ভাবতাম , পুরনো তীর্থপথ, করবেট সাহেবের ভাষায় the old pilgrimage road, যখন পায়ে হেঁটে লোকজন কেদার বদরী করতেন , সেটার কি হল ।  এখোনো গৌরীকুন্ড থেকে কেদার অবধি সেই পথ টিঁকে গেছে, বাকি সব বাসরাস্তার তলায় চাপা পড়ে গেছে ।  বাড়ি এসে রাণী চন্দ-র হিমাদ্রি  ( বিশ্বভারতী প্রকাশন । এইটা আমার বাংলা ভাষায় লেখা কেদার বদরী  জঁরার শ্রেষ্ঠ বই বলে মনে হয়। তখনই অবশ্য যোশীমঠ থেকে ৫০ কিমি দূরে চামোলী অবধি বাস এসে গেছে  ) উল্টে পাল্টে দেখতে গিয়ে একটা জিনিস খেয়াল করলাম। যোশীমঠ থেকে কিছু দূর গেলেই বিষ্ণুপ্রয়াগ , সেখানে অলকনন্দার সাথে মিশেছে ধৌলীগঙ্গা (রাণী চন্দ লিখেছেন বিষ্ণুগঙ্গা )। এখনকার রাস্তা যোশীমঠ থেকে সোজা অলকনন্দার পাড় ধরে ধরে বিষ্ণুপ্রয়াগে পৌঁছয় । আর রাণী চন্দ-রা গেছিলেন সোজা ধৌলিগঙ্গা অবধি , সেখান থেকে বাঁদিকে ঘুরে অলকনন্দা । গুগল ম্যাপে সেই পায়ে  চলার রাস্তাটা এখনো মার্ক করা আছে।
     
    তা যাগ্গে  । ক্যাপটেনের আদেশ মতো পরের দিনসকাল সাড়ে ছটার মধ্যে যোশীমঠ ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে পৌঁছে দেখি চায়ের দোকানী , ড্রাইভার , হেল্পার , সবাই মাছি তাড়াচ্ছে  (পাহাড়ে বড্ড মাছি মশায় ! ), আমরাই প্রথম প্যাসেঞ্জার  । কখন গাড়ি ছাড়বে জিজ্ঞাসা করতে বললঃ গাড়ি ভরলেই ছাড়বে । কখন ভরবে ? ও তো পতা নেহি সার । আদমী আয়েগা তব না হোগা ! তিন কাপ চা অবধি  অপেক্ষা করার পর বিরক্ত ক্যাপ্টেন বলল ঃ ধুর শালা এভাবে হবে না । দাঁড়া দেখছি । আমি  লক্ষণ হয়ে ব্যাগ পাহারা দিতে লাগলাম । দশ মিনিট ভাবে দূর থেকে ডেকে বলল, নিচে চলে আয়, ব্যবস্থা হয়ে গেছে । আমি হতচকিত ড্রাইভার হেল্পার সবার মুখের সামনে দিয়ে দুটো ব্যাগ নিয়ে ছুট দিতে দিতে বললাম, বস মে যায়েঙ্গে । এই গুলটা কতটা খেলো জানি না, আর দেখার সময়ও ছিলো না ।  একটা মাল বোঝাই অল্টো গোবিন্দঘাটে আলু পেয়াঁজ সাপ্লাই দিতে যাচ্ছিলো, তার ড্রাইভারকে রাজি করানো হয়েছে । চুপি চুপি লুকিয়ে লুকিয়ে (মানে দামড়া দুজন লোক , আর প্রমাণ সাইজের দুটো ব্যাকপ্যাককে  বেলা আটটার সময়ে যতটা সম্ভব লুকনো যায় আর কি ) সেই গাড়িতে চাপা হল । 
  • b | 14.139.196.16 | ২৮ জুলাই ২০২২ ১৩:৩৩738021
  • সোমবার, ১১ জুলাই  (খোসা ছাড়িয়ে শাঁসে )
    ----------------------------------------------------------
    গোবিন্দঘাট (১৮০০ মিটার ) পৌঁছলাম বেলা নটা নাগাদ ।  গোবিন্দঘাটে অলকনন্দা আর লক্ষ্মণ  গঙ্গার সঙ্গম, হেমকুন্ড সাহিবের দৌলতে সেখানেও মস্ত বড় গুরুদ্বার । এখান থেকে শেয়ার জিপে করে অলকনন্দা পেরিয়ে, খুব খাড়াই রাস্তা ধরে যেতে হবে পুলনা নামের গ্রামে। সেখান থেকে, লক্ষ্মণ গঙ্গা ধরে ধরে ১০ কিলোমিটার দূরে ঘাংরিয়া ( ৩০৫০ মিটার ), আমাদের আজকের গন্তব্য । হাঁটতে চাইলে হাঁটুন, ঘোড়া চাইলে চাপুন , কিম্বা হেলিকপটার । হেঁটে যেতে আমাদের লাগলো ঘন্টা সাতেক, ঘোড়ায়  গেলে তিন ঘন্টা , হেলিকপ্টারে ১০ মিনিট । একদল  সর্দার ছানা পোনার সাথে রওনা দেওয়া গেলো । উপর থেকে যারা নেমে আসছে, তারা উৎসাহ  দেবার জন্যে চেঁচাচ্ছে , বোলে সো নিহাল । চতুর্দিক প্রকম্পিত করে উত্তর আসছে, সৎ শ্রী অকাল-অ। তবে দেখলাম উত্তর দেওয়ার ফ্রিকোয়েন্সি চড়াইয়ের সাথে সাথে কমতে লাগলো । এমনকি ঘাংরিয়ার কাছাকাছি এসে কেউ যখন হাসিমুখে বলছে বোলে সো নিহাল , তার বদলে উত্তর আসছে  ঘুঁহ  আর ঘাঁহ  । আর রাস্তার কথা আর কি বলব ! যতবারই মনে হচ্ছে বাহ বেশ সিধা তো, পরের বাঁকেই  মোড় ঘুরে দেখি ব্যাটা ৪৫ ডিগ্রিতে হেলান দিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে ।  বিশ্বশুদ্ধু সবার উপরে রাগ হতে শুরু করে । আবার যতবারি ভাবছি এবার আর পার-বোঃ নাঃ , দেখি বৃদ্ধা সর্দারণী লাঠিতে  ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোচ্ছেন সত্যনাম ওয়াহে গুরু জপ করতে করতে । কাজে কাজেই আমাদের এগুতে হয় । প্রাদেশিকতা বড় দায় । 
     
    অবশ্য রাস্তার পাশে পাশে চা কফি , নিম্বু পানি , কোল্ড ড্রিংক্স ম্যাগি এসবের  দোকান আছে । সেখানে কিছু কিনতে গেলে ইন্ডিয়ান রুপির ভয়ানক ডিভ্যালুয়েশন সম্পর্কে জানা যায়। চা কুড়ি থেকে তিরিশ টাকা , নিম্বু পানি তিরিশ টাকা , ম্যাগি চল্লিশ থেকে ষাট অবধি যা খুশি হতে পারে ।  আমি অবশ্য নামার সময়ে খেলাম এক গ্লাস রডোডেনড্রন জুস , সেটা আবার জল দিয়ে হোমিওপ্যাথি স্টাইলে ডাইল্যুট করে দিলো । বেশ লাগলো , টক মিষ্টি কষা স্বাদ মেলানো । 
    নদী এতক্ষণ আমাদের ডান  দিকে ছিলো । মাঝপথে, ভ্যুন্ডার গ্রামে একটা পায়ে চলা সেতু পার হয়ে পৌঁছলাম অন্যদিকে । সেটাও একটা বসার জায়গা , চা, ম্যাগি ইত্যাদি । লক্ষ্মণগঙ্গায় এসে মিশেছে কাকভুষুন্ডি তাল থেকে আসা একটা নদী , তার ওপারে একটা পর্বতচূড়ার মেঘে ঢাকা সিল্যুয়েট দেখা গেলো । চায়ের দোকানী বললেনঃ হাথি পর্বত । হবেও বা । 
     
     
  • | ২৮ জুলাই ২০২২ ১৪:০৪738022
  • আহা আহা 
  • dc | 2401:4900:1cd1:a2a6:1d9e:fe2a:b5be:f101 | ২৮ জুলাই ২০২২ ১৪:২৫738023
  • অসাধারন হচ্ছে। চা কফির মতো ম্যাগিও দেখছি স্টেপল ফুড হয়ে উঠেছে! :-)
  • b | 14.139.196.16 | ৩০ জুলাই ২০২২ ১৯:১৫738052
  • সোমবার, ১১ জুলাই  (খোসা ছাড়িয়ে শাঁসে-২  )
    ----------------------------------------------------------
    তা দেখুন, পাহাড়ে দূরত্বের ধারণা সম্পুর্ণ ভেগ । গত আড়াই  ধরে যাকেই জিজ্ঞেস করি, সেই বলে , ঘাংরিয়া আউর দেঢ় -সওয়া - কিলোমিটার হ্যায় ।  পহুঁছ হি তো গয়ে হ্যায় , কৈ বাত নেহি । শেষে তিতিবিরক্ত হয়ে (ক্যাপটেন বুদ্ধিমানের মত তার ব্যাকপ্যাকটি একটা মালবাহকের হাতে চালান করে দিয়েছে। আমি দিই নি, তার ফল এখনো ভুগছি ) কথা বলাই বন্ধ করে দিলাম। আর কথা বলতে গেলেই তো দম ফুরিয়ে যাচ্ছে !
     
    নদীটা রাস্তা থেকে একটু দূরে সরে গেছে, এমনকি আওয়াজও শুনতে পাচ্ছি না  । এমন সময় একটা সিঁড়ি  উঠেই চোখে  পড়লো একটা উইন্ডসকের উপরের দিকটা, পৎপৎ করে উড়ছে। এই তবে হেলিপ্যাড , এখান থেকেই ঘাংরিয়া এক কিলোমিটার । শেষ কটা ধাপ উঠে বাঁ দিকে অনেকটা জায়গা , ওপারে খাড়া পাহাড়, তার গা বেয়ে নদীটা বয়ে চলেছে, দেখা যাচ্ছে না । এক কোনায় হেলিপ্যাড , অন্যদিকে গাড়ওয়াল মন্ডল বিকাস নিগমের টেন্ট হোটেলের সারি । মাঝে সবুজ ঢালা উপত্যকা, লোকে ধপাস করে শুয়ে বসে আরাম  করছে ।
     
    শেষে আবার চড়াই , তবে গন্তব্য কাছে এসে যাওয়াতে আর খুব একটা গায়ে লাগলো না। আবর্জনা আর আস্তাবলের গন্ধ পেরিয়ে ঘাংরিয়া (ভালো নাম গোবিন্দ-ধাম )- সরু সরু গলি, দু দিকে ছোটো বড়ো হোটেলের সারি, শেষে একটা বিশাল বড়ো গুরুদরবার  । কোনো রকমে দরদাম সেরে একটা বাসস্থান বেছে (গরম জল চাইলে দৌড়ে এনে দেবে !) নিয়ে, গায়ে ভোলিনি লাগিয়ে , পেইন  কিলার খেয়ে ,   বিছানায় গা ফেলা  ।  রাতের খাওয়া সেরে ঘুমনোর আগে ক্যাপটেন বলল ঃ কাল বেরোবো সকাল সাতটায় ।
    ও হ্যাঁ। মোবাইল ফোনের সিগনাল নেই, শুধু জিও আর এয়ারটেল ছাড়া। তা সে-ও মাঝে মাঝে চলে যায় । কমপ্লিটলি ডিসকানেক্টেড । আহ। কি অপার  শান্তি ! 
  • b | 14.139.196.16 | ৩০ জুলাই ২০২২ ১৯:১৬738053
  • *গত আড়াই  ঘণ্টা ধরে 
  • b | 117.194.209.193 | ৩০ জুলাই ২০২২ ২১:৩১738055
  • টেন্টের সারি ঃ  গোবিন্দঘাটের দিকে তাকিয়ে
  • b | 117.194.209.193 | ৩০ জুলাই ২০২২ ২১:৩৩738056
  • টেন্টের সারিঃ ঘাংরিয়ার দিকে তাকিয়ে । পিছনের পাইনবনগুলি পেরোলেই ঘাংরিয়ার বসতি ।  উপত্যকা কেমন সরু হয়ে যাচ্ছে খেয়াল করবেন । k
    ------------------------------------------------
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:cc13:15c8:c7e8:3826 | ৩১ জুলাই ২০২২ ০০:৪৩738061
  • কী সুন্দর ছবিগুলো! লেখাটা তো বটেই।
  • | ৩১ জুলাই ২০২২ ১৫:৩৭738071
  • একটু হাত চালিয়ে লিখতে পারেন তো! 
  • | ১০ আগস্ট ২০২২ ০৯:৪২738169
  • আচ্ছা তারপর কই? এখনো হাঁটছেন? 
  • b | 14.139.196.16 | ১০ আগস্ট ২০২২ ১০:৫৯738171
  • হ্যা লিখছি।কাল পরশু সময় পেলে। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন