এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কানাইল ব্রিজের দিনগুলি

    Aniruddha Sajjad লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ জুলাই ২০২২ | ৬০১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অনেক বুড়ো হয়ে গিয়ে যখন নিজের অতীত নিয়ে স্মৃতিচারণ করবো তখন সবচে বেশি মনে পড়বে বোধহয় এই জায়গাটার কথা। জীবনের অনেকটুকু অংশজুড়ে মিশে আছে এই স্থানটুকু। যখন কেউ বাংলাদেশের সবচে সুন্দর জায়গাটির কথা জানতে চাইবে, প্রথমেই আমার এই জায়গাটি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই যখন ইমতিয়াজ ফোন দেয়, চল বের হই। তখন আর বুঝতে দেরি হয়না কোথায় যেতে হবে। এটা নিয়ে অনেকবার কিছুটা বাকবিতন্ডা হয়েছিলো। ওকে বললাম নতুন একটা জায়গা খুঁজ না, এখানে আর কতো। ওর উত্তর ছিলো, 'নেই,কোনো পরিচ্ছন্ন-কোলাহলমুক্ত জায়গা আর নাই,এটাই শেষ। গত আঠারো বছর ধরে খুজে এই একটাই মনমতো জায়গা পেয়েছি।আগে ফখরুদ্দিন রোড ছিলো,সেটাও এখন অযোগ্য।"
    দিনশেষে আমিও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছি এরচেয়ে শান্তিপূর্ণ স্নিগ্ধভুমি আর কোথাও নেই। সৃষ্টিকর্তা এক স্বর্গীয় স্নিগ্ধতা এনে এখানে জড়ো করেছেন। জীবনের প্রথম কোনো মানবীর প্রেমে ধাক্কা খেয়ে যখন নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, পৃথিবী এমন কেনো? নিজের কাছে কোনো উত্তর না পেয়ে যখন জীবনটা অর্থহীন মনে হচ্ছিলো সেদিনও ভোর রাত থেকে এসে বসেছিলাম এইখানটিতে। কী হয়েছিলো জানিনা, তবে বোধহয় ভুলভাল কিছু থেকে সামলে ওঠার শুরু ওখান থেকেই। বাড়ন্ত কৈশোরের ভবিষ্যৎ ভাবনা আর দৈনন্দিন হাহুতাশ ঝেড়ে ওঠার মোক্ষম একটা স্থান বলেই আমাদের বিকালটা এখানে এসে মুক্ত হয়ে যেতো। ফোনে বাউল গান ছেড়ে দিয়ে দুরের খেঁকশিয়ালের ডাক, এভাবেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হতো রাত, জোৎস্না নামতো বিশাল চাঁদের থালা হয়ে কিংবা আমাবস্যার ঘোর অন্ধকারে মশার কামড় অথবা বর্ষায় ছাতাহীন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভেঁজা। বছরের সবগুলো ঋতুর সব বৈচিত্রতা আমরা এখানে বসেই দেখতে পেয়েছি। আমরা বলতে আমি,ইমন,ইমতিয়াজ। দেশ জাতি নিয়ে ভাবনা আর জীবনের অনেক গুরত্বপূর্ণ কিংবা ঘোরতর সিদ্ধান্ত আমরা এখানে বসেই নিয়েছি। এখানে বসলেই মাথায় ফটোগ্রাফার হওয়ার ভুত চাপে, কিন্তু রক্তচক্ষুতে যা দেখি তা এখনো পর্যন্ত ক্যামেরায় তুলে ধরতে পারিনি। আমাদের প্রিয় আড্ডাস্থল, আমাদের কানাইল নদীর বইছামুয়া ব্রীজ। বৃটিশ শাসনামলে (১৮৯৫ প্রায়) তৈরি ব্রীজটির মধ্যম পিলারটিতে গিয়ে বসে আড্ডা দেয়া আমাদের নিয়মিত রুটিন ছিলো। এখানে বসে দ্রুতগামী চলন্ত ট্রেনের ঝাকুনি আর বিকট আওয়াজটাও সুরেলা মনে হতো। জীবনের সোনালী দিন সোনালী সময়গুলো এভাবেই কানাইল নদীর বইছামুয়া ব্রীজের নিচে বয়ে যাওয়া পানির স্রোতের মতো কোথায় হারিয়ে কোথায় চলে যায়, যখন জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে দূর দুরান্তে ছড়িয়ে পড়ি আর ক্লান্তিতে চোখ বুজে সেসব দিনের কথা কল্পনা করি, সেই চিরচেনা দৃশ্যপট ভেসে ওঠে! এইতো বিকেল গড়িয়ে সুর্যটা কী দ্রুত নামতে শুরু করে, বিশাল বিশাল আধিভৌতিক ছায়া, মৃদু বয়ে যাওয়া বাতাসে কানের কাছে ফিসফিসানি, প্রকাণ্ড আকাশ মুক্ত হয়ে নানান রঙ ছড়ায়, পৃথিবীর বৃহত্তম আকাশটা বোধহয় এখান থেকেই দৃশ্যমান হয়,লাল হয়ে আসা সুর্যটা যখন বিদায় জানিয়ে ডুব দিয়ে অন্ধকার নামিয়ে আনে, তখনো তিনটি মূর্তি স্থির হয়ে নিঃশব্দে বসে থাকে, তিনটি মানুষ...
    হঠাৎ ইমন বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
    'ধুর! আর কতোক্ষণ বসে থাকবি?

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Aranya | 2601:84:4600:5410:2c3c:271f:d7a1:4e65 | ০৬ জুলাই ২০২২ ০৯:৩৫509666
  • বাঃ 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন