এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নানা রঙের ভাষা

    Tanima Hazra লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ জুন ২০২২ | ৪৭০ বার পঠিত
  • ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে টুসকি। ঘুম এলেও কিছুতেই সে ঘুমোবে না। আজকাল সে একটা নতুন খেলায় মেতেছে। রাত হলে কমলামাসি যখন  ঘুমিয়ে পড়ে তার ঘরের মেঝেয় পাতা বিছানায় তখন চুপিচুপি উঠে গিয়ে  মাবাবার ঘরে উঁকি মারা। ওরা কেমন দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে, জামাকাপড় সব খুলে ফেলে, সেটা দেখতে দেখতে ওর শরীরের ভেতরটা কেমন যেন পাকায়, গলার কাছটা কেমন যেন শুকিয়ে টানটান হয়ে আসে, কোমরের নীচটায় কেমন যেন ঝিম ধরে যায়, কিন্তু খুব আরাম লাগে তারপর।। 
    শরীর ভেসে যায় অব্যক্ত ভাষায়।
    শিথিল ঘুমের আনন্দে গাল দিয়ে নাল গড়িয়ে বালিশ পর্যন্ত চুপচুপে ভিজে যায়। অপূর্ণ মন আর পূর্ণ শরীরের জলে ভেসে চলে প্রাণের অমোঘ ভাষা।। 
      
    সেদিন রাত্তিরে খুব জল তেষ্টার চোটে কমলামাসিকে হাজারবার গুঙিয়ে  ডেকেও যখন সাড়া পেল না তখন মা বাবার জানালায় ওদের ডাকতে গিয়ে ওই অদ্ভুত ব্যাপারটা প্রথম  দেখে ফেলে টুসকি। তারপর থেকে রোজ রাত্তিরে  এটাই তার চুপটি চুপটি মজার খেলা। 

    টুসকি অমিয়ার ষোলো বছরের মেয়ে যার  মস্তিষ্ক অবিকশিত , যে কথা বলতে পারে না।। 
    তার ভাষা শুধুই গোঙানি।। 

    অমিয়া আর রবীনের জীবনে আর সব কিছুই ঠিকঠাক, শুধু টুসকি ছাড়া।রবীনের বড়সড় চাকরি, অমিয়ার কলেজের শিক্ষকতা, বিশাল বাংলো বাড়ি, দামী গাড়ি, বছরে দুতিনবার দেশবিদেশ ঘোরা, সমাজে সম্মান প্রতিপত্তি।। 
     অমিয়া চল্লিশ আর রবীন বিয়াল্লিশ। 
    কিন্তু ওদের সব কিছু অপর্যাপ্ত খুশি  গিঁট মেরে থেমে আছে ওই টুসকিতেই।।

    টুসকিকে নিয়ে প্রথম বছর দশেক সারিয়ে তোলার আশায় নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করে তারপর ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে এসেছে ওদের আশা,  উৎসাহ।।
    এখন দুজনের মনে কাজ করে টাকা দিয়ে কমলাদির ঘাড়ে টুসকিকে চাপিয়ে  নিজেদের জীবনের বাকি সুখগুলো নিয়ে বেঁচে থাকার এক স্বার্থপরতার ভাষা।। 

     সব সময়ের কাজের মেয়ে কমলাদিই সারাদিন টুসকির দেখভাল করে। রবীন আর অমিয়া বেরিয়ে গেলে দুপুরে ঘন্টাদুয়েকের জন্য স্পেশাল স্কুলে নিয়ে যায়। ওই সময়টা খুব ভালো থাকে টুসকি।। অমিয়া আর রবীন বেশিরভাগ নিজেরাই বেড়াতে যায়,  খুব মাঝে মাঝে টুসকি আর কমলাদি সাথে যায়, নাহলে তো ওরা বাড়িতেই থাকে। 
    টুসকিও যেন কেমন আস্তে আস্তে কমলাদি ঘেঁষাই হয়ে পড়ছে। নিঃসন্তান কমলাদি আধফোটা টুসকিতেই দুধের সাধ জলে মেটাচ্ছে  সবটুকু স্নেহ দিয়ে।। 
     বুকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্রমশঃ যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছে তার না মেটা মাতৃত্বের ভাষা।। 
     
    সেই বিশ্বস্ত নির্ভরতা থেকেই বোধহয় অমিয়া আর রবীন টুসকি থেকে কেমন যেন আস্তে আস্তে সরে আসছে, কেমন যেন ওদের মনে হচ্ছে ও ওদের সব জিতে যাওয়ার মাঝখানে টুসকির অধ্যায়টা যেন বিশ্রী ঝুলকালির মতো একদলা হেরে যাওয়া।
     
    চিকিৎসকরা বলছেন এইসব বাচ্চারা কুড়ি বাইশ বছরের বেশি বাঁচেও না। তবে কি টুসকির থেকে দূরে সরে আসা আসলে অমিয়া আর রবীনের আস্তে আস্তে মায়াডোর ছেঁটে ফেলা, কেটে ফেলা আবেগ আর বাৎসল্য?  নইলে আরও বড় যে একটা সাইক্লোন এর মতো  বিচ্ছেদের দুঃখ ওদের দিকে হিংস্র শ্বাপদের মতো এগিয়ে আসছে গুটি গুটি পায়ে তাকে জয় করবে কি করে তারা?
    কী বরফকঠিন শীতল সেই নির্মম  অপেক্ষার ভাষা!! 

    টুসকি যত বড় হচ্ছে তত কেমন যেন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে ওর চোখ মুখের ভঙ্গি, সারল্য অতিক্রম করে মাঝেই ঝিলিক দিয়ে যায় কেমন একটা হিংস্রতা। কেমন একটা গোঙানি মতো বের হয় তখন ওর গলা থেকে। জামাকাপড় টেনে খুলে ফেলতে চায় নিজের, জাপ্টে জড়িয়ে ধরে এক এক সময় রবীন, অমিয়া কিংবা কমলাকে। টেনে ছাড়ানো যায় না তখন, কেমন গোঁ গোঁ করে গোঙায় আর মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে।। 

    কেউ শনাক্তই করতে পারে না তার শরীর কাঁপিয়ে গর্জে ওঠা অপ্রতিরোধ্য হিংস্রতার অতলে আসলে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে  একটুকরো  আশ্রয় ভিক্ষা করতে চাওয়া, চেনা মানুষদের ছেড়ে চলে যেতে না চাওয়া আর জাপ্টে জাপ্টে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাওয়ার তীব্র প্রেমের ভাষা!! ত নি মা।। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন