এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রাজীব গান্ধী এবং

    Emanul Haque লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ মে ২০২২ | ৬২৪ বার পঠিত
  • কংগ্রেস মানেই তখন নিন্দার বিষয়। সিপিএমের চোখে। আমাদের চোখেও। রাজীব তো আরো সর্বনাশা! মডেল স্কুল, কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি, গ্যাট চুক্তি, প্ল্যাস্টিক আমদানি, স্যাম পিত্রোদা-- রাতদিন মুন্ডপাত। এরপর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এল বোফর্স চুক্তি।  চোর চোর ধ্বনিতে মেদিনী কম্পিত।
    ১৯৯১ এর ৭ মে আসানসোল পোলো গ্রাউন্ডে প্রথম দেখলাম সাংবাদিক হিসেবে। বেশ কাছ থেকে। দেখে মনে হল, ইনি আর যাই হোন চোর নন। স্বপ্ন দেখা চোখ। জনতা উন্মাদ তাঁকে ছুঁতে চেয়ে।  তিনি ছুঁতে দিচ্ছেন।  জনতার সঙ্গে মিশে এগোচ্ছেন। মনে হল, এতো ভয়ঙ্কর ভয়ের বিষয়। যে কেউ মেরে দিতে পারে। এভাবে নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে জনতার মাঝে।
    ঠিক দু সপ্তাহ  পর ২১মে  কাগজের অফিসে বসে আছি। সেদিন আসানসোলে নির্বাচন ছিল। কলকাতার অফিসে এসেছি ফটো আর খবর নিয়ে বারাবণীতে কংগ্রেসের এবং নেনোতে সিপিএমের অবাধ রিগিং।
    ১১টা নাগাদ আসতে লাগল অন্য রকম এক আওয়াজ।  টেলিপ্রিন্টারে।
    বড় বড় অক্ষরে ফুটে উঠল-- Attention.
    Attention.
    তারপর এল অ্যাসাসিনেশন।

    কার হত্যা?
    রাজীব গান্ধীর।
    সেদিন রাতে আর খেতে পারলাম না।
    চোখে ভাসছিল, সেই নিষ্পাপ মুখ।
    আর মনে পড়ছিল আমাদের উচ্চারিত ..
    মিথ্যা শ্লোগানগুলি।

    অ্যাটেনশন অ্যাটেনশন
    টেলিপ্রিন্টার যন্ত্রটা অস্বাভাবিক আওয়াজ করছে‌। খেতে বসছি। একজন বললেন, দেখ তো কী হলো?
    দেখি একটা একটা একটা করে অক্ষর দিয়ে।

    A T T E N T I ON
    এই রকম বার তিনেক এলো।

    তখন নেট কল্পনাতেও ছিল না। ই-মেল, গু গুলদাদাও অনুপস্থিত।
    দেখি, আসছে, রাজীব গান্ধী অ্যাসাসিনেটেড।
    চেঁচিয়ে ফেলি।
    ছুটে আসেন এক ব্যক্তি।
    আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করতাম না।
    আমি সরে যাই।
    রাতের সাংবাদিক ছিল সুপ্রিয়দা। ভালো মানুষ।
    বলল, তুই ফোন ধরি ফোন এলে।
    লিখে রাখবি, কী খবর পাচ্ছিস, কলকাতার ‌
    সুপ্রিয়দা আরেকটা ফোনে ব্যস্ত।
    #
    এরমধ্যেই চলে এলো চন্দন বসুর ফোন।
    জ্যোতি বসু সেদিন মাদ্রাজে‌।
    চিন্তা ‌।
    সম্পাদক অনিল বিশ্বাস বললেন, আমার সঙ্গে একটু আগে কথা হয়েছে। ঠিক আছেন। কাল আমরা বন্ধ সমর্থন করছি।
    অনিলদা  ফোন এলে অনেক সময় বেশ জোরে কথা বলতেন। মজা করে লোকে বলতো, যত গোপন কথা তত জোরে।  সবাই শুনতে পেতো। আমরাও পেলাম ‌‌
     
    ইতিমধ্যে যে-সব খবর শিরোনাম হবে ভেবেছিল, তার জায়গা নিলেন রাজীব গান্ধী। পাতা ফেলে দিতে হল।
    ঠিক এর ১৪ দিন আগে, ৭ মে রাজীব গান্ধীকে প্রথম দেখি, আসানসোল পোলো গ্রাউন্ডে।
    বেলা নয়টার সময় সভা।
    সাড়ে সাতটায় চলে গেছি।
    আমার কাগজের মতামত, রাজীব গান্ধীর বিরোধী। সাড়ে আটটার সময় প্রায় ফাঁকা মাঠের ছবি তুলে রাখছি।
    সে-সময় ছবি লেখা দুটোই করতাম।।পৌনে নয়টা নাগাদ রাজীবের হেলিকপ্টারের  আওয়াজ পাওয়া গেল।
    পিলপিল করে ঢুকতে লাগলেন মানুষের।
    রাজীব এলেন।
    মঞ্চ জুড়ে নেতা।
    জেলা কংগ্রেস সভাপতি তুহিন সামন্ত অনেককে নামালেন।
    আমাকে কিছু বললেন না, বিরোধী কাগজের লোক জেনেও। চিনতেন ভালো করেই‌ 
    আমি ছবি তুলছি। আর গলায় একটা ছোট টেপ। ইচ্ছে, সাক্ষাৎকার নেবো।
    দু'একটা কথা জিজ্ঞেস করবো। 
    এর আগে ১৯৯১ এর  সম্ভবত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় খালেদা বেগমের জনসভায় মঞ্চে থেকেছি।  দে
    রোগা প্যাংলা দেখে মায়ায় থাকতে দেওয়া। সেখানেও দেখি মঞ্চ ভর্তি।
    খালেদা এসেই হাত নেড়ে মঞ্চ ফাঁকা করে দেন মুহূর্তে।
    কী দাপট।
    রাজীবকে সে-রকম দেখলাম না।
    বিনয়ী। ভদ্র।
    মৃদু হাসলেন। প্রচুর ছবি তুলছি দেখে।
    রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে কতো শ্লোগান দিয়েছি, চোর বলে। গলা ফাটিয়ে।
    মানুষটাকে দেখে আমার মনে হল, ইনি চুরি করতেই পারেন না। সরল সুন্দর আপাপবিদ্ধ মুখ।
    মঞ্চ থেকে নামছেন একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম, ফল কী হবে?
    সরকার গড়বে কংগ্রেস।
    বলেই নামতেই জনতার মাঝে বন্দি। লোকে পাগলের মতো করছে। হাত মেলাচ্ছে। প্রণাম করছে। ফুল ছুঁড়ছে।
    বাম রাজনীতিতে এ-জিনিস কোনোদিন দেখিনি।
    বিস্মিত। অভিভূত।
    খালি, একটা ভয় হলো, এভাবে ভিড়কে কাছে ঘেঁষতে দিলে তো নিরাপত্তা বলে কিছু থাকে না।
    #
    হলো তাই। ভিড়ের সুযোগ নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটান নলিনীরা। ২১ মে ১৯৯১।
    এর আগে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন শ্রীলঙ্কায় এক তামিল সেনা বন্দুকের কুঁদো দিয়ে আঘাত করেছিল।
    শ্রীলঙ্কায় শান্তি বাহিনী পাঠানো পছন্দ করেন নি তামিল জনতা।
    শ্রীলঙ্কার তামিলদের জনপ্রিয় নেতা এল টি টি ই প্রধান প্রভাকরণও।
    #
    সেদিন একটা খুব বড়ো খবর নিয়ে গিয়েছিলাম অফিসে।
    মনে হচ্ছিল, রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাবে আমার তোলা ছবিগুলো।
    ১০-১২ বছরের ছেলেরা ভোট দিচ্ছে আসানসোলের বারাবনীতে। কংগ্রেস নেতা মানিক উপাধ্যায়ের উদ্যোগে। একই ছবি দেখলাম, বারাবনীর স্কুল বুথ থেকে একটু দূরে গিয়ে নুনিতে। সেখানেও এক চিত্র।
    এখানে সিপিএম দেওয়াচ্ছে।
    ছবি তুললাম, জেনেই, আমার কাগজ ঘোর সিপিএম। সিপিএমের ছবি যাবে না। কংগ্রেসেরটা যাবে।
    বিহারের নির্বাচনে এইসব ছবি ছেপে 'সানডে' পত্রিকা থেকে দি টেলিগ্রাফে আসা এম জি আকবর বিখ্যাত।
    #
    মুখ্য সাংবাদিক আমাকে পছন্দ করতেন খুব। বললেন, খেটেছো, ভালো করেছো।
    কিন্তু এ-সব ছবি একটাও যাবে না। গেলে বামফ্রন্ট সরকারের বদনাম হয়ে যাবে। লোকে বলবে, পশ্চিমবঙ্গে এভাবেই ভোট হয়।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • তৌহিদ হোসেন | 2402:3a80:1cd0:aca6:178:5634:1232:5476 | ২৪ মে ২০২২ ২১:৫৭508048
  • মনে হচ্ছে এই ঘটল। খুব তাজা স্মৃতি। ❤
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন