এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  গান

  • রবীন্দ্রনাথ ও বিষ্ণুপুর ঘরানা

    Sangrami Lahiri লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | গান | ১৪ মে ২০২২ | ১৩৮৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ক. গোড়ার কথা: যখন তুমি বাঁধছিলে তার
    ১৮৯২ সালের ৫ জুলাই সাজাদপুর থেকে রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় ইন্দিরা দেবীকে চিঠি লিখলেন:
    "আমার আজকাল ভারি গান শিখতে ইচ্ছে করে–বেশ অনেকগুলো ভূপালী... এবং করুণ বর্ষার সুর – অনেক বেশ ভালো ভালো হিন্দুস্থানী গান – গান প্রায় কিচ্ছুই জানি নে বললেই হয়।" (ছিন্নপত্রাবলী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
    বাংলাদেশে ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক জমিদারি শিলাইদহ ও সাজাদপুরে। দেবেন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার কাজে রবির ওপরেই নির্ভরশীল। ত্রিশ বছরের পূর্ণ যুবক রবীন্দ্রনাথ তাই এসেছেন শিলাইদহে। পদ্মানদীর ওপর বোটেই থাকেন বেশিরভাগ। পদ্মার কূল-ছাপানো জলে বর্ষার সজল মেঘ ছায়া ফেলে। “নীল অঞ্জনঘন পুঞ্জছায়ায়” বর্ষণগীত মুখরিত হয়। মনে আসে কত স্মৃতি, ছেলেবেলার কথা, কত পাওয়া, না-পাওয়া। কাগজকলম নিয়ে রবিকাকা কলকাতায় ভাইঝি বিবিকে চিঠি লিখতে বসেন। বিবির কাছে তিনি মনটা যেমন খুলতে পারেন এমনটি আর কারোর কাছেই নয়।
    মনে মনে হারিয়ে যান তিনি জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির বিরাট অন্দরমহলের আনাচে কানাচে।  ঠাকুরবাড়ির ছেলেদের গান শেখাবার জন্যে আয়োজনের ত্রুটি ছিল না। একাধিক ওস্তাদ আছেন মার্গসংগীত শিক্ষা দেওয়ার জন্যে। সুরের দীক্ষা দেবেন, রাগরাগিনীর সঙ্গে পরিচয় করাবেন তাঁরা। সেকালের সেরা ওস্তাদ যদুভট্ট, যদুনাথ ভট্টাচার্য বিষ্ণুপুরী আঙ্গিকের ধারক ও বাহক। চেষ্টা করেন ছোট্ট রবিকে পাকড়াও করে গান শেখাতে। কিন্তু রবির যে ধরাবাঁধা জিনিসে মন নেই! স্কুলে যেতে তার ভাল লাগে না। ওস্তাদের কাছে সঙ্গীতশিক্ষায় অনীহা। পালিয়ে বেড়ায় সে। যদুভট্ট হার মানলেন। রবির প্রথাগত সংগীতশিক্ষা হয়ে উঠল না। কিন্তু কানে যে সবসময় সুরের আনাগোনা। বাইরে তুমুল বৃষ্টি, ভেতরে ভূপালীতে আলাপ ধরেছেন যদুভট্ট। জলধারার মতই ঝরে পড়ছে ঋষভ-গান্ধার-পঞ্চম-ধৈবতের সুরবিস্তার। ভূপালী রাগ আর বর্ষা যেন এক হয়ে যাচ্ছে রবির মনে। নিজেরই অজান্তে যদুভট্ট প্রবেশ করছেন চেতনায়। সুরের চলনটি অক্ষয় হয়ে যাচ্ছে স্মৃতিতে। যে স্মৃতি বারেবারে ছায়া ফেলবে পরিণত বয়েসে। বর্ষার গান বাঁধা হবে ভূপালী রাগে। তার অঙ্গে কালোয়াতি গানের জড়োয়া গয়না নেই, ব্যাকরণের বাধ্যবাধকতা নেই, আছে সরলতার মধুর এক সৌন্দর্য। 
    বহুযুগ পরে প্রবীণ রবীন্দ্রনাথ লিখছেন তাঁর স্নেহভাজন দিলীপকুমার রায়কে, "বর্ষার দিনে ভিতরে ভূপালী সুরের আলাপ চলেছে, আমি বাইরে থেকে শুনছি। আর, কী আশ্চর্য দেখো, পরবর্তী জীবনে আমি যত বর্ষার গান রচনা করেছি তার প্রায় সব-কটিতেই অদ্ভুতভাবে এসে গেছে ভূপালী সুর।" (আলাপ-আলোচনা -  রবীন্দ্রনাথ ও দিলীপকুমার রায়, রবীন্দ্র রচনাবলী)
    খ. বিষ্ণুপুর ঘরানা
    ভারতীয় মার্গসংগীতের বিষ্ণুপুর ঘরানার ওপর একটু আলো ফেলা যাক। মল্লভূম বিষ্ণুপুর ইতিহাসের শহর, মন্দিরের শহর, টেরাকোটা শিল্পের শহর আর মার্গসংগীতের শহর। UNESCO এ শহরকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট তকমা দিয়েছে। এই শহরেই জন্ম নিয়েছে বাংলার এক ও একমাত্র নিজস্ব ঘরানা। গায়করা মূলত ধ্রুপদিয়া। ধ্রুপদ গেয়ে থাকেন।  বিষ্ণুপুর-নিবাসী রামশঙ্কর ভট্টাচার্যের নাম পাওয়া যায়  আদিগুরু হিসেবে। তারও আগে ছিল কীর্তনের চর্চা। আশ্চর্য নয় যে কীর্তনের সুর বিষ্ণুপুরের গায়কিতে প্রভাব ফেলেছে। রবীন্দ্রনাথের গানেও কীর্তনের প্রভাব সুস্পষ্ট। বিষ্ণুপুরে মার্গসঙ্গীতের চর্চা শুরু হয় রামশঙ্করের হাত ধরে, মোটামুটি অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে। কিন্তু রামশঙ্করের শিক্ষাগুরু কে? কীর্তন থেকে সুরের নদীটি বয়ে গিয়ে ধ্রুপদকে কেমন করে আপন করল?
    মতদ্বৈধ আছে এ নিয়ে।
    প্রচলিত ধারণা আছে তানসেন-বংশীয় এক গায়কের হাতে বিষ্ণুপুর ঘরানার সূত্রপাত। তাঁর নাম বাহাদুর খান বা বাহাদুর সেন।
    গবেষক শ্রী দিলীপ কুমার মুখোপাধ্যায় এই ধারণা সমর্থন করেন না। তাঁর মতে মথুরা-বৃন্দাবনের জনৈক 'পন্ডিতজি' ছিলেন রামশঙ্করের গুরু। পুরীধামে তীর্থযাত্রা সেরে ফেরার পথে তিনি বিষ্ণুপুরের মল্লরাজা  চৈতন্য সিংহের সভায় কিছুকাল কাটান ও রামশঙ্করকে ধ্রুপদ শেখান।
    বিষ্ণুপুর ঘরানার অন্যতম সংগীতগুণী সত্যকিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ও তানসেনের বংশধরের তত্ত্বটি সমর্থন করেননি।
    রামশঙ্কর ভট্টাচার্য দীর্ঘজীবনের অধিকারী ছিলেন। বিষ্ণুপুর শৈলীর ধ্রুপদের মূল সুরটি তিনিই বেঁধে দিয়ে গেছেন। "যে ধ্রুবপদ দিয়েছ বাঁধি..."
    একঝাঁক প্রতিভাবান শিষ্য আকৃষ্ট হয়েছিলেন তাঁর ধ্রুপদ গানে, শিষ্যত্ব বরণ করেছিলেন। পুত্র রামকেশব ভট্টাচার্য্য, অনন্তলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, যদুনাথ ভট্টাচার্য্য (যদুভট্ট) তাঁদের মধ্যে অন্যতম। এই যদুভট্টকেই দেখি জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বালক রবীন্দ্রনাথকে ধরে গান শেখানোর চেষ্টা করছেন।
    যদুভট্টর পরের প্রজন্মে আসেন রাধিকা প্রসাদ গোস্বামী। একই সঙ্গে আসেন অনন্তলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিন পুত্র - রামপ্রসন্ন, গোপেশ্বর ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁরা সবাই অনন্তলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিষ্য। এঁদের উল্লেখযোগ্য শিষ্যরা হলেন জ্ঞানেন্দ্র প্রকাশ গোস্বামী (জ্ঞান গোঁসাই), রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যকিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘরানার উজ্জ্বল প্রদীপটি ততদিনে বিষ্ণুপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বংশের হাতে স্থানান্তরিত হয়েছে। সে প্রদীপ আজ সত্যকিঙ্কর-পুত্র সঙ্গীতাচার্য অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কয়েকহাজার শিষ্য-প্রশিষ্যের কন্ঠে ভাস্বর।
    গ. রবীন্দ্রসংগীতের স্বরলিপিকার
    বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সংযোগ যদুভট্টতেই শেষ নয়, পরের প্রজন্মগুলিতেও সেই সৌহার্দ্য অটুট। দু’জনের অবিচ্ছিন্ন সাঙ্গীতিক বিনিময় চলেছে। বিষ্ণুপুর ঘরানার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ধ্রুপদীয়া আদি ব্রাহ্মসমাজে সংগীতাচার্য ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের হামেশাই তাঁকে দরকার হত গানের স্বরলিপি লেখার জন্য। সুরেন্দ্রনাথের লেখা চিঠিতে একটি সুন্দর গল্প পাওয়া যায়।
    সেটা ১৯১০ সাল, বলা যায় গীতাঞ্জলির সময়।  রবীন্দ্রনাথ শুনেছেন সুরেন্দ্রনাথ খুব তাড়াতাড়ি স্বরলিপি লিখতে পারেন। শান্তিনিকেতনে ডেকে পাঠালেন, সঙ্গে সুরবাহার যন্ত্রটি নিয়ে যেতে হবে।
    যেতেই হাতে কাগজ কলম ধরিয়ে দিলেন। গাইতে আরম্ভ করলেন “বাজে বাজে রম্যবীণা”। সুরেন্দ্রনাথের আঙুল চলছে গানে সঙ্গে তাল মিলিয়ে। দিনুবাবু, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। দেখতে দেখতে গান শেষ, স্বরলিপিও শেষ! রবীন্দ্রনাথকে শোনানো হল, তিনি মুগ্ধ। খুব আনন্দের সঙ্গে উপস্থিত সবাইকে বললেন, "দেখলে সব বিষয়েই যথার্থ শিক্ষা ও সাধনা চাই।"
    দেড়শোর বেশি রবীন্দ্রসংগীতের স্বরলিপি করেছেন সুরেন্দ্রনাথ, বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে সেগুলি।
    তবে স্বরলিপিরও আগে আসে গান, গানের কথা ও সুর। বিষ্ণুপুরের সংগীতের ধারা স্পষ্ট ছাপ ফেলে গেছে রবীন্দ্রনাথের গানে।
    ঘ. রবীন্দ্রসংগীতে ধ্রুপদের ছায়া
    ধ্রুপদ শব্দটি এসেছে ধ্রুবপদ থেকে। ধ্রুব, অর্থাৎ শাশ্বত যে পদ, অর্থাৎ সংগীত। ধ্রুবপ্রবন্ধ বা প্রবন্ধগীতির ইতিহাস অতি প্রাচীন। মূলত আধ্যাত্মিক সংগীত, ঈশ্বরের বন্দনায় পদগুলি লেখা হত। পরে অবশ্য ঋতুবর্ণনা, রাজার প্রশস্তি এগুলিও ধ্রুপদের বাণীতে জায়গা করে নেয়। বিষ্ণুপুর ধারায় প্রবন্ধগীতির প্রচলন করেন আদিপুরুষ রামশঙ্কর ভট্টাচার্য। বৃন্দাবনের গুরুর কাছে শিক্ষা করেছিলেন মথুরা-বৃন্দাবন অঞ্চলে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় প্রচলিত গায়কি। মল্লরাজাদের আনুকূল্যে তাঁর শিষ্য-প্রশিষ্যরা সে উত্তরাধিকার বহন করে নিয়ে যান। মল্লরাজারা বৈষ্ণব, তাঁদের প্রতিষ্ঠিত দেবমন্দিরে ঈশ্বরসাধনায় নিবেদিত হয় বিষ্ণুপুরের ধ্রুপদ। এতে অলংকার কম, ভক্তিভাব বেশি। পশ্চিমভারতীয় ধ্রুপদের ঐশ্বর্য আর আড়ম্বরের তুলনায় বিষ্ণুপুরের ধ্রুপদের শৈলী সাধারণী গুণসম্পন্ন, সংগীতের সরল ও অনাড়ম্বর রূপে ভাস্বর। রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন বাংলার নিজস্ব এই ধারায়।
    তুলনায় পশ্চিমী হিন্দুস্থানী সংগীতের রীতির সঙ্গে তাঁর প্রাণের সংযোগ ছিল কম। ঠাসবুনোট কারুকাজ আর অলংকার ব্যবহারে অনুভূত হত সংযমের অভাব। তাঁর উপলব্ধিতে সংগীতে অতিরিক্ত অলংকার যেন প্রেয়সীর গায়ে স্যাকরার দোকান সাজানো। সর্বাঙ্গে গয়নার ঝলমলানি নয়, প্রেমিকের চোখ খুঁজে ফেরে প্রিয়ার অঙ্গে বাছাই-করা কয়েকটি অলংকারের শিল্পসুষমা, কখনো বা নিরাভরণ সৌন্দর্য। ব্যাপক প্রদর্শনী নয়, পরিমিতি ও সংযমেই শিল্প সার্থক হয়ে ওঠে। তাঁর সে অনুভূতি ধরা আছে বিশিষ্ট পন্ডিত ও অধ্যাপক ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লেখা চিঠিতে।
    একবার দিলীপকুমার রায় বিখ্যাত উচ্চাঙ্গসংগীতশিল্পী কেসরবাই কেরকরকে নিয়ে এলেন রবীন্দ্রনাথকে গান শোনাবার জন্যে। কেসরবাই তখন ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত গায়িকা। তাঁর গায়কির নৈপুণ্যে, ফুলঝুরির মত তানকর্তবে মুগ্ধ গোটা দেশ। রবীন্দ্রনাথ শুনে বললেন, "এ’কে ভালো বলতে বাধ্য, কিন্তু ভালো লাগতে নয়।" (রবীন্দ্রনাথ ও ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পত্রালাপ, রবীন্দ্র রচনাবলী) 
    ধূর্জটিপ্রসাদ নিজে পশ্চিমভারতীয় রীতির মার্গসংগীতের সমঝদার, এহেন মন্তব্যে তিনি মর্মাহত হয়েছিলেন সন্দেহ নেই। বিষ্ণুপুরী গানের অন্তর্মুখী, অনাড়ম্বর চালই ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রিয়।
    রবীন্দ্রসংগীত বরাবরই গানের মূল ভাবটিকে প্রাধান্য দিয়েছে। বিভিন্ন রাগের মিশ্রণ ঘটেছে গানে, সঙ্গে সুপ্রযুক্ত মিড় ও সামান্য গমক - ঠিক যেটুকু দরকার সেটুকুই। বাহুল্য নেই, অলংকারও নেই, আছে সংযম, কথায় ও সুরে নিবিড় বন্ধন।
    তাঁর তৈরী করা ব্রহ্মসংগীত, যা দেবেন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক উপাসনাসভাগুলিতে গাওয়া হত, তা উপনিষদের বক্তব্যই তুলে ধরেছে। তার সুর বাঁধা হয়েছে রাগসংগীত দিয়ে, কিন্তু কালোয়াতিকে সযত্নে পরিহার করা হয়েছে। অর্থাৎ গানের রস আছে কিন্তু খোসা নেই। সুর আছে, ম্যানারিজম নেই। রাগরাগিণীর ব্যাকরণগত বিশুদ্ধতা নিয়ে অহেতুক মাথাব্যথা নেই। আছে স্বচ্ছ ঝর্ণার মত বয়ে যাওয়া  সুরের ধারা।  অধ্যাত্মচিন্তা প্রাণ পেয়েছে তাঁর উপাসনার গানে।
    ব্রহ্মসংগীতে গুরু যদুভট্টের প্রভাব তো আছেই, অনেক গান রাধিকা প্রসাদ গোস্বামীর ধ্রুপদ থেকে অনুপ্রাণিত। ধ্রুপদাঙ্গের রবীন্দ্রসংগীত যেন বিষ্ণুপুরের চালে ঈশ্বরের উপাসনার গান। অন্তর্মুখী, বিমূর্ত।  আত্মার গভীরে প্রবেশ করে তার বাণী।
    সুরেন্দ্রনাথের সতীর্থ গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সখ্য সুবিদিত। কলকাতার অ্যালবার্ট হলে (এখনকার কফি হাউস) তাঁর বক্তৃতার পর গোপেশ্বরের গান হবে। দাড়িতে হাত বুলিয়ে রবীন্দ্রনাথ বললেন, "এতক্ষণ দাড়িশ্বরের বক্তৃতা শুনলেন। এবার শুনুন গোঁপেশ্বরের গান।"    
    সেই গোঁফওয়ালা সংগীতগুণীটি রবীন্দ্রনাথের অনেক গানে প্রভাব ফেলে গেছেন। রবীন্দ্রনাথও উচ্চকন্ঠে তাঁর প্রশংসা করতে দ্বিধা করেননি।
    উনিশশো আঠাশ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীতশিক্ষা প্রবর্তন করা নিয়ে তাঁর মতামত জানতে চাইল। কবি উপদেশ দিলেন, পন্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখন্ডেই এব্যাপারে উপযুক্ত ব্যক্তি। সেইসঙ্গে বাংলার শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে উল্লেখ করলেন গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।  
    তাছাড়াও ছিলেন রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সদ্যপ্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি অ্যাকাডেমির ডিন, গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাত্র, রবীন্দ্রনাথের প্রিয়পাত্র। মাঝে মাঝেই রমেশচন্দ্রকে ডেকে ফরমাশ করে ধ্রুপদ গান শুনতেন। যেটি ভালো লাগল তা চিহ্নিত করতেন। সেই ধ্রুপদটি অবলম্বনে বাঁধা হত নতুন গান। এ কাহিনি আমার গুরু সঙ্গীতাচার্য অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা।
    কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। বিষ্ণুপুরের ধ্রুপদ কেমন করে ছাপ ফেলেছে রবীন্দ্রসংগীতে, নিচের গানগুলো আলোচনা করলেই বোঝা যাবে।
    ১. বেহাগ রাগে “অন্তরে জাগিছ অন্তরযামী” এসেছে একটি ধ্রুপদ থেকে। “কৌন যোগী ভয়ো, কানোমে    মুদ্রা, অঙ্গ বভূতি লাগা বেরি পাওয়া”  গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগীতচন্দ্রিকা বইতে আছে। সুর হুবহু এক, কথাও কাছাকাছি।     
    ২. সিন্ধু কাফি রাগের ওপর বাঁধা “চরণ ধ্বনি শুনি তব নাথ” গানটি এসেছে বিষ্ণুপুরী ধ্রুপদ “মুরলি ধুন সুনি এরি মায়ি” থেকে। কথা ও সুর দুইই এক। 
    ৩. শুদ্ধ ধৈবত-যুক্ত 'চড়িবালি' পূরবী রাগে বাঁধা হয়েছে  “বীণা বাজাও হে মম অন্তরে” যা আদতে বিষ্ণুপুরের একটি ধ্রুপদ “বিন বজাও মন লে গ্যয়ো”।        
    ৪. শুধুমাত্র শুদ্ধ নিষাদ দিয়ে বৃন্দাবনী সারং রাগ গাওয়া বিষ্ণুপুর ঘরের বৈশিষ্ট্য। তামাম ভারতে বৃন্দাবনী সারং গাওয়া হয় শুদ্ধ ও কোমল দুই নিষাদ দিয়ে। শুদ্ধ নিষাদের বৃন্দাবনী সারং রাগে রবীন্দ্রসংগীত “জয় তব বিচিত্র আনন্দ” বিষ্ণুপুরের ধ্রুপদ “জয় প্রবল বেগবতী সুরেশ্বরী” গঙ্গাবন্দনার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।
    ৫. কাফি রাগে “শূন্য হাতে ফিরি হে নাথ” সুর নিয়েছে ধ্রুপদগীতি “রুমঝুম বরখে আজু বদরবা” থেকে।
    রবীন্দ্রনাথের গানের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে বিষ্ণুপুরের ধ্রুপদগুলিও বিখ্যাত হয়েছে। নাহলে কেই বা আর প্রবন্ধগীতির খবর রাখে!
    ঙ. রবীন্দ্রসংগীতের যন্ত্রানুষঙ্গ - এস্রাজ
    "রবিকাকা সুর বসাচ্ছেন, আমি এস্রাজে" - অবনীন্দ্রনাথের কথা। এটিই ছিল ঠাকুরবাড়ির পরিচিত দৃশ্য। ঠাকুরবাড়ির বেশিরভাগ সদস্যই এস্রাজ যন্ত্রটি বাজানোয় পারদর্শী ছিলেন। শান্তিনিকেতনে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন রবীন্দ্রনাথের গানের চলমান বিশ্বকোষ। দিনু ঠাকুরের সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল এস্রাজ। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদান চলত এস্রাজ বাজিয়ে।
    গানের সঙ্গে যন্ত্রানুষঙ্গ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ সতর্ক ছিলেন। গানের মূল ভাবটি যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে ছিল সজাগ দৃষ্টি। তালের জন্যে সহযোগী ‘আনদ্ধ’ বাদ্য অর্থাৎ পাখোয়াজ, খোল, তবলার ব্যবহার ছিল। গানকে অনুসরণ করার প্রয়োজনে ব্যবহার করেছিলেন ‘তন্ত্রীতন্ত্র’, অর্থাৎ তারের বাদ্য। এস্রাজ ছিল তাঁর পছন্দের। হারমোনিয়াম ছিল অপাংক্তেয়। এর একটি সুনির্দিষ্ট কারণ আছে।
    প্রবন্ধগীতি থেকে অনুপ্রাণিত ভাঙা গানই হোক বা মৌলিক গানই হোক, রবীন্দ্রসংগীতের বৈশিষ্ট্য হল শ্রুতির কাজ, যাতে একই স্বরের ওজনের পার্থক্য শ্রুতির তফাৎ গড়ে দেয়। অনুকোমল ও অতিকোমল শ্রুতি গানের কাব্যিক আবেদনটিকে বাড়িয়ে তোলে। স্বরবিতানে ধরা আছে শ্রুতিলিপি, অর্থাৎ ভারতীয় পদ্ধতিতে স্বরের ওজন। স্বরলিপির থেকেও এক পা এগিয়ে শ্রুতিলিপি। শ্রুতির নাটকীয়তা সবচেয়ে সুন্দর ধরা দেয় তারযন্ত্রে, যেমন সারেঙ্গী, এস্রাজ। সারেঙ্গীতে চাপল্য আছে, যা রবীন্দ্রসংগীতের ভাবের পরিপন্থী। তাই রবীন্দ্রনাথের গানে এক ও অদ্বিতীয় অনুষঙ্গ এস্রাজ। বিশ্বভারতীর সংগীতভবনে শিক্ষার্থীরা গানের সঙ্গে সঙ্গে এস্রাজবাদনেও শিক্ষা পায়।                   
    এস্রাজ বাজানোর এই বিশেষ ধারাটি আসে আরেকজন বিষ্ণুপুরী সংগীতগুণীর হাত ধরে। ইনি অশেষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরের প্রজন্ম। তিনি শান্তিনিকেতনের সংগীতভবনে এস্রাজের অধ্যাপক হয়ে যোগ দিয়ে আনলেন এস্রাজবাদনে শান্তিনিকেতনের নিজস্ব স্টাইল। যা বিষ্ণুপুরী চালের প্রভাবে প্রভাবিত। শান্তিনিকেতনের যে কোনো নৃত্য-গীতের অনুষ্ঠানে এস্রাজ অপরিহার্য। যন্ত্রটিকে দাঁড় করিয়ে বাজানো হয়। এটি বিষ্ণুপুরী রীতি। ভারতের অন্যত্র এস্রাজ শিল্পীরা যন্ত্রটিকে কাঁধে ফেলে বাজান, অনেকটা বেহালার ধরনে।
    অশেষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিষ্য-প্রশিষ্যগণ বড় যত্নে বয়ে নিয়ে চলেছেন এস্রাজবাদনের সেই শৈলী। আজ এস্রাজ শুধু রবীন্দ্রসংগীতের সহায়ক যন্ত্রই নয়, একক বাদনের এক জনপ্রিয় যন্ত্র। এস্রাজে পূর্ণ সময়ের ডিগ্রি করা যায় বিশ্বভারতীতে।
    চ. শেষকথা
    প্রথাগত শিক্ষা থেকে রবীন্দ্রনাথ বরাবরই মুখ ফিরিয়েছেন। লেখাপড়ার স্কুলেই হোক, বা গানের স্কুলে, হাজিরা খাতায় তাঁর উপস্থিতি নগণ্য। তিনি স্বশিক্ষিত, পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধের কাছে পাঠ নিয়েছেন। বিখ্যাত গুণীদের সংগীতচর্চা তাঁর “কানের ভিতর দিয়া মরমে” প্রবেশ করেছে, সুরের আগুন লাগিয়েছে প্রাণে। সুর ও কথার মধ্যে অচ্ছেদ্য বন্ধনেই তাঁর নিজস্ব সংগীতের ধারাটির জন্ম।
    "আমার মনে যে সুর জমে ছিল, সে সুর যখন প্রকাশিত হতে চাইলে তখন কথার সঙ্গে গলাগলি করে সে দেখা দিল।" (প্রবন্ধ: আমাদের সংগীত)
    পশ্চিমভারতীয় হিন্দুস্থানী সংগীতের রীতিতে কথার স্থান অতি সামান্য, সুরই প্রধান। কিন্তু বাঙালীর চিত্ত পিপাসিত গানের কাব্যসুধার তরে। কাব্যের সঙ্গে মিশে তবেই সুর সার্থক হয়। বিষ্ণুপুরের ধ্রুপদে অলংকারের বাহুল্যবর্জিত সুর ও কথার মেলবন্ধন, কীর্তন গানে পদাবলীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে সুরের রাসলীলা - এ সবই রবীন্দ্রনাথের মননে স্পষ্ট ছাপ ফেলে গিয়েছিল। যার আত্মীকরণ হল বাইশশোরও বেশি গানে। আনন্দধারা বহিল ভুবনে, সংগীতের অমৃতরস উথলে পড়ল, অঞ্জলি ভরে পান করে ধন্য হলাম আমরা, প্রেমময় হল শূন্য জীবন, দেশকালের সীমানা ছাড়িয়ে, যুগে যুগে। 

    তথ্যসূত্র:
    ১. সংগীতচিন্তা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    ২. ছিন্নপত্রাবলী - ইন্দিরা দেবীকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠি
    ৩. সংগীতচন্দ্রিকা - গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়
    ৪. গীতলিপি - সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়         
    ৫. রবীন্দ্রনাথ ও ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পত্রালাপ
    ৬. আলাপ-আলোচনা - রবীন্দ্রনাথ ও দিলীপকুমার রায় (রবীন্দ্র রচনাবলী)
    ৭. বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রকৃত ইতিহাস ও রাগরূপের সঠিক পরিচয় - সত্যকিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৪ মে ২০২২ | ১৩৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন