এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ৭ বছর পরের একদিন

    Arijit Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ মার্চ ২০২২ | ৬৪৩ বার পঠিত
  • ১।।
    তিনকাল শেষ করে অপলকে বুড়ো হয়েছি। দিন বাড়ছে যত সময় তত কমছে, সময় কমছে, কমছে...। তাই নিজের জীবনের হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া নতুন অধ্যায় লিখছি, জানিনা কতদূর লিখে উঠতে পারব, কোথায় গিয়ে কলমের নীব ভেঙে যাবে। অন্ধকার ঘরে জ্বলে থাকা নীল বেডল্যাম্পের দিকে চেয়ে নিজের সমস্তটাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বো। তবু যতক্ষন পারা যায় আর কী।.... 

    চারধারে তার উপঢৌকন, কিন্তু আছে স্থির,
    দুহাত মুঠিবদ্ধ কিন্তু ভিতরে অস্থির।
    কেউ তাকে দ্যাখেনি হতে, উচিত ভেবে সব
    ফিরিয়ে দিল, তার ছিলো এক কঠিন অনুভব। 
    (এই তো মর্মর মূর্তি, শক্তি চট্টোপাধ্যায়) 


    ছোট থেকে অনেকের অনেক স্বপ্ন থাকে, গগনচুম্বী আকাঙ্ক্ষা আমাদের প্রত্যেককে বড় হতে ডাকে। হাতছানি দেয়। আমরা ধীরলয়ে বড় হই। আমিও হয়েছি। দীর্ঘ একটা কালক্রম পেরিয়ে আজ যে ঠিকানা আমি পেয়েছি তার অত্যন্ত গভীর সমালোচনা ও বিশ্লেষণ প্রতিক্ষণ মাথার ভেতর ঘুরপাক খায়। আমি কতটা সফল? কতটুকুই বা পারলাম দীর্ঘ ২৪ বছরের অবিশ্রাম জীবনযাত্রা পেরিয়ে? আজ যখন আমি সুদূরের পিয়াসী হয়েছি তখন পিছন ঘুরে দেখতে একবার হলেও মন চায়, এই সুন্দরের আশায় কি আমি এতোকাল দিন গুনেছিলাম? আদৌ কি এই হল সুন্দরের প্রকৃত ও প্রকৃষ্ট উদাহরণ? 

    নাদের আলি, আমি আর কত বড় হবো ? আমার মাথা এই ঘরের ছাদ
    ফুঁরে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে ?
    (কেউ কথা রাখেনি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) 


    আমার গতিপথে ঝড় পড়ল। নিজের বাঁ হাতে বন্ধ দরজার হাতল ঘুরিয়ে নাবিকের তিন হাজার বছরের, অস্বাস্থ্যকর, ভগ্নপ্রায়, দিশাহারা, লক্ষ্যহারা কোন একটা চালাঘরে ঢুকে পড়লাম। কয়েকটা সেরা পুরাতন পাপোশ তুলে নিয়ে রীতিমতো ধনী ও শিক্ষিত হবার তাগিদ অনুভব করছি আজকাল। দারিদ্র্যের দরুন অপরিহার্য অঙ্গগুলি বাদ দিয়ে নিজের জীবনের মামলার উকিল, প্রসিকিউটর এবং প্রধান বিচারপতির বক্তৃতাদি শুনতে শুনতে আত্মতৃপ্ত বোধ করছি। ওঁদের বাচনভঙ্গি দেওয়াল জানালা ভেদ করে এই ঘরে প্রবেশ করছে। 

    'কোনোদিন জাগিবে না আর
    জানিবার গাঢ় বেদনার
    অবিরাম— অবিরাম ভার
    সহিবে না আর—’
    এই কথা বলেছিলো তারে 

    চাঁদ ডুবে চ’লে গেলে— অদ্ভুত আঁধারে
    যেন তার জানালার ধারে
    উটের গ্রীবার মতো কোনো এক নিস্তব্ধতা এসে। 

    তবুও তো পেঁচা জাগে;
    গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে
    আরেকটি প্রভাতের ইশারায়— অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে। 

    (আট বছর আগের একদিন, জীবনানন্দ দাশ) 

    ২।।
    গত ৭'ই মার্চ। মাস্টার্স অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পড়তে পড়তে কলেজের দৌলতে একটি পেইড ইন্টার্নশিপ বাগিয়েছি। ঢেঁড়া পিটিয়ে ইতিমধ্যে চতুর্দিকে ঘোষণা করে ফেলেছি। কাঙাল আসলে বড় দুরন্ত। জ্বালা― পরমায়ু মানুষের গন্ধে ভারি আপ্যায়ন করে। এর আগে আমি প্রায় ৭ বছর কমবেশি টিউশনি করেছি। অধিকাংশই নিজের হাত খরচ জোগানোর জন্যে। তাতে অবশ্য খুব একটা কিছু ভালোমতো হতো না। কাঠখানা যতটা হালকা হওয়ার কথা তা তো হতোই না বরং উৎকৃষ্ট গরিব মানুষের দৃষ্টান্ত কখনো কখনো নিজের প্রতিচ্ছবি দেখলে বুঝতে পারতাম। সকাল হলে পোকামাকড়ের খাবারের খোঁজে যেমন পাখিরা বেরিয়ে পড়ে আমিও বেরিয়ে পড়তাম লোভ সামলানো দিগন্ত, কুল ছাপিয়ে তরঙ্গমালার মত, অধীর আগ্রহ আহরণ করতে। ফলে চাকরিটা আমার ভীষণ দরকার হয়ে পড়েছিল। ...আকাল বুঝি আর লোভ সামলাতে পারছে না!... আর তার ছোট সূচনা যখন হয়ে গেছে তাহলে ভাবছি শীত-গ্রীষ্ম সব সময় জানালা খোলা থাকবে, ভ্যাপসা গরম, কাপড় কাঁচার সাবানের গন্ধ সবকিছু ফেলে একটা মডুলেটেড লাইফস্টাইল গড়ে তুলবো। ফলিডলে পোকামাকড় তো মরে, গাছ মরে, মানুষ মরে, দারিদ্র কি মরে? 

    শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির লম্বা বক্তৃতা শেষ হলো। একে একে উঠে দাঁড়ালেন সকলে, মুখে একটা খুশি খুশি ভাব। কামরার দরজাটা বন্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে একজন শান্ত্রি এসে দাঁড়ালো। তিনজন আসন ত্যাগ করে বেরিয়ে গেলেন। আসামিদের নিয়ে যাওয়া হল আদালত কক্ষের বাইরে। 
    তবে কি তারা মুক্ত? কে কোথায় গেল, কি খেলো, কে মরল, দারিদ্র্যের এতকিছু দেখার সময় নেই। আমি কাজ করি সাউথ সিটি মলের ফার্স্ট ফ্লোর, প্যান্টালুনস্-এ। ফ্যাশন অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেইনি.. হাতে পাই (পড়ুন, পাবো) ওই দশের সামান্য বেশি। তাতে ছোটবংশের মুখে খিস্তি-খেউর খুব বেশি কমে না, বা ঘরে হাঁড়িতে টগবগ করে ভাত ফোটে না। আগুনে চোখ দুটো টলটল করে। আগুন আরো উস্কে দেয় তুষ ছিটিয়ে উনুনে। সাউথ সিটি মলের অটোমেটিক ডোর, মোশন ডিটেক্টর বসানো বিশাল ইয়াবড় কাঁচের দরজা পেরোলে সুন্দর উর্দি, পাগড়ি, ফেস শিল্ড পড়া সিকিউরিটি গার্ড। সিকিউরিটি পয়েন্ট দিয়ে বিশাল বড় ফ্লোরে প্রবেশ। ইহা হইলো গ্রাউন্ড ফ্লোর। যেখানে তুষ তৈরি হয়, আগুনে দেওয়ার জন্যে। সোজা নীচে সিঁড়ি নামছে, চলমান সিঁড়ি। দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ, আর নীচে নেমে যায় অবিকলভাবে। দামি কেক, আইফোন, স্যামসাং, রেডমি প্রভৃতির স্টোর। আর গ্রাউন্ড থেকে চলমান সিঁড়ি ধরে উপরের তলায় উঠলে, প্যান্টালুনস্ স্টাফ এন্ট্রি। সই করে ঢুকে যাই আমরা। ... কী এক উদগ্র বাসনা আমাদের― কেউ নড়ছে না। উনুনের কাছে রোগ ভীত, সন্ত্রস্ত মুখ নিয়ে সবাই বসে থাকে। আগুন আরো উস্কে দেয়, কোনো দুষ্কর্ম আমরা আদৌ করি কি না...। 

    But the night dew that falls, though in silence it weeps,
    Shall brighten with verdure the grave where he sleeps;
    And the tear that we shed, though in secret it rolls,
    Shall long keep his memory green in our souls.
    (Thomas Moore) 


    স্টক যখন প্রচুর বেড়ে যায় এবং সেগুলি ক্লিয়ার করতে হয় তখন দন্ডায়মান রূপে আমাদের সামনে চলে আসে এন্ড অফ সিজন সেলস। প্রচুর মানুষ পিঁপড়ের মতো পিলপিল করে ঢুকে পড়ে স্টোরে। সেই সময়টাতে আমাদের বেশি করে কাস্টমার ধরাটাই অবজেক্টিভ। শুধু রিটেল স্টোরে নয় এমনকি অনলাইনেও অর্ডার পড়ে প্রচুর। এই ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির দুর্দিনে বেশি দাম দিয়ে ফালতু জিনিস কিনবে কে! সুতরাং এই সময়টাতে একটা টু পয়েন্ট ওয়ান স্পিকার বাজিয়ে কানের সামনে প্রতিরাতে, প্রতিসকালে, ঘুমোতে, স্নানে, বিছানায়, এমনকি সঙ্গমের সময়ও বাজিয়ে দিতে হয় "এন্ড অফ সিজন সেলস ইজ অনগোয়িং, গ্র্যাব নাউ অর নেভার"। সিকিউরিটি এন্ট্রি পয়েন্ট দিয়ে ঢুকলেই ঝাঁ-চকচকে মেশিন ওয়াসড্ ফ্লোর। হাউসস্টাফরা সারাক্ষণ নজর রাখছেন কোথাও যেন এতোটুকু, ফ্যাশন অ্যাসিস্ট্যান্টের কপালের থেকে বাদামি রংয়ের ময়লা মেশা ঘাম ফ্লোরে পড়ে নোংরা না হয়। বাকি তো কাস্টমারদের শু'এর তলায় ময়লা খুব কমই থাকে। তাঁরা গাড়িতে আসেন, গাড়িতে যান; তাই বেশি চিন্তা করতে হয় না সেসব নিয়ে। আমার ডিপার্টমেন্ট, নন অ্যাপারেলস। মিথ্যে টিথ্যে বলব না প্রথম ক'দিন বেশ ভালোরকম সামলে টামলে নিয়েছি। ম্যানেজমেন্ট খুব ভালো আর আমাদের অ্যাটিটিউড টোয়ার্ডস ম্যানেজমেন্ট আরো ভালো। ডিপার্টমেন্টে পৌঁছলে হাতে ধরে ডিপার্টমেন্ট ম্যানেজার কাজ শিখিয়ে দেন। পার্মানেন্টগুলো একটু টেরা চোখ করে দেখলেও বড় বেশি ধমক টমক দিচ্ছে না। বরং 'তুমি, তুমি' করে কথা বলছে। আসলে মাস্টার্স পার্সিউইং ছোকরা তো তাই, বাপু কখন ম্যানেজার হয়ে বসে সেই নিয়ে ওদের মনে বড় ভয়। আমারও বড় হাসি পায়। কাস্টমার এসে দাঁড়ায়, শার্ট-প্যান্ট গুঁজে পড়া মাল দেখে পা থেকে মাথা অব্দি তাকিয়ে বলে, 'আর ইউ হিয়ার টু হেল্প?" বলি, "ইয়েস ম্যাম, ফিল ফ্রি টু আস্ক মি...।" হেল্প করি। বড়লোকদেরও আমাদের হেল্প লাগে। একটা বেমক্কা রোদ নামে বাইরে। প্রচণ্ড গরমে, ঘামে বডি অডার ভ্যাপসা, বিচ্ছিরি, বিটকেল, গন্ধে মোঁমোঁ করে। উপরে গিয়ে নিজের ডেস্ক থেকে ব্যাগ বের করে আনি। চেন খুলি। বডি স্প্রে সারা গায়ে মেখে নিই। বডি অডার গায়েব! ফ্লোরে ফিরে এসে ফের কাস্টমার হ্যাপিনেস এনশীওর করা। আকাল কিছু বলে না, সে থাকে পরোমাযুর আশায়। 

    “Old man! ‘tis not so difficult to die.”
    ―Manfred 


    ৩।।
    আগুনের বড় দরকার। ক্লান্তি নেই, খিদে নেই, ঘুম নেই। গুড সেলস পিপল আর নট মেড, দে বর্ন। প্রিমিটিভ ধারণা। বাট সত্য! অতএব, আগুনের বড় দরকার। বাড়ি ফিরি রাত এগারোটা। দিনকতক বিচ্ছিরি ঘেমো গন্ধ জামা গায়ে যখন আমি স্টেশনে নামি, গুটিকয়েক লোক বসে থাকে এদিক ওদিক। গুটখা খায়, গল্প করে। ১০ টাকায় কানা বেগুন বিক্রি হয় বা কুড়ি টাকায় কচি লাউ ছেড়ে দিয়ে বাজারওয়ালারা বস্তা গুটিয়ে নেয় ঝপাঝপ। কোনো মাতাল ইজ্জত ভুলে, বেইমান! বেইমান! সব শুয়োরের বাচ্চা বেইমান! বলে চেঁচায় বা নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে বাছাই করা চার অক্ষর ঝাড়তে ঝাড়তে রেল লাইন দিয়ে হেঁটে যায় কোন অন্ধকারে কে জানে! এদের মধ্যে থেকে একটা অধটা কাটা পড়ে, ট্রেনে। গ্যারেজ ওয়ালা গ্যারেজ তালা দিয়ে যে দুটো তিনটে হতভাগ্য সাইকেল পড়ে থাকে সেগুলিকে শাটার নামানো ঘরে তুলে রেখে বাড়ি চলে যায়। তার মধ্যে আমার একখান সাইকেল থাকে প্রায়শই। অতএব হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরি। বড্ড বেশি জোরে পায়খানা পায়। বিড়ি খাই মাথার চুলের মধ্যে আঙুল চালাই। বুঝতে পারি ভালো ময়লা হয়েছে। কুকুরগুলো দূর থেকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করা শুরু করে। যেই পাশ দিয়ে হেঁটে যাই, তারা ঘুরে এসে পিছনে গুটিগুটি পায়ে ধাওয়া করে। কখনো পা চালাই জোরে। কখনো ঘুরে দাঁড়িয়ে ঢিল তুলি চার আঙুলে। শরীরের ক্লান্তি আর সমস্ত রাগ, অভিমান, ক্ষোভ ও ঘৃণা নিয়ে শুধু ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিই না প্রতিবারের মতো। আজকাল তাঁক করে ছুড়ে মারি কুকুর গুলোর দিকে। কী জানি ভিতরে হয়তো আগুন নেভে। 

    বসন্তের এই মাতাল সমীরণে, প্রীতি মাখা আন্তরিক শব্দগুলো আমার বুকের মধ্যে কবে শেষবার দীপ্ত শিখায় জ্বলে উঠেছিল আর তার স্নিগ্ধ উষ্ণতা কবে গলে গলে মিশে গিয়েছিল হৃদয়ে, মনে পড়ে না। মনে পড়ে না, শেষবার কবে পাহাড় দেখেছি, বেতার-টিভিতে, ময়দানে শেষবার কবে কোনো ফুটবল ম্যাচ ঘন্টার পে ঘন্টা ধরে দেখেছি। এই ইঁটকাঠ ঘেরা শহরের সুড়সুড়ি পেরিয়ে গোটা দেশটাই একটা সস্তার এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেল হয়ে গেছে। আমাদের এই দেখা ছাড়া আর কিছু দেখার নেই। ভেজা চোখের অসহায় দৃষ্টি মেলে কিছু টাকা গুনতে গুনতে আমরা নিজেদের উত্তেজনার আগুনে উদ্দীপ্ত করি, বুকের মধ্যে জোর করে সারা জাগিয়ে তুলি। কিন্তু বৃথাই হিমেল ধূসর সৈন্যপ্রাচীরে মাথা ঠুকে যাচ্ছি, জানি। এত উঠতে পাড়া অস্পষ্ট কণ্ঠস্বরে আত্মনিয়োগ বুঝতে পারা আমাদের ভাটিয়ালি মল্লারে গানে জীর্ণ মাঠে-ঘাটের মুহূর্তে বড় বেশি ধরা পড়ে না। একেকসময় মনে হয় এই সব ছেড়েছুড়ে ওটাই আমার নিজস্ব। অভিন্ন। স্টোরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমাদের আর কিছু করার নেই, পরিচিত ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ গভীর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। ফিরে আসার পথে নিজেকে নিজের থেকেও বেশি বিষন্ন আর ভীষণ অখুশি মনে হচ্ছে। কিন্তু হায় আমি সে কথা ভাবতে পারিনা। বড় বড় ইশতেহারের পাতায় বোঝাই করা নিয়মাবলী পড়তে পড়তে আমাদের সুস্থ মাথা শুধু ভাবতে জানে, ইতিমধ্যেই যদি কেউ মরে গিয়ে থাকে ওঁর আত্মা শান্তিলাভ করুক। কিন্তু যদি বেঁচে থাকে তাহলে অহেতুক দুঃখের বোঝা কেবল বাড়বেই। জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না কোনোদিন। 

    In the Spring a fuller crimson comes upon the robin’s breast; 

    In the Spring the wanton lapwing gets himself another crest;
    (Lord Tennyson) 


    ৪।।
    এতকিছুর মধ্যেও যদি বারবার ভালো কিছু খুঁজে নিতে বলে? তাহলে আমরা ভৈরব নদীর কূলে দাঁড়িয়ে প্রতিহিংশা ছেড়ে একবার কি ভালো কিছু গম্ভীর হয়ে দেখব না? নিশ্চিত দেখব! আমরা এতটা শাপগ্রস্ত নই! ভুল হয়ে যায়। ক্ষমা চাই। ইঁটভাটায় আগুন দিয়ে বেড়াতে ভালো লাগে। হতাশার মাঝে মাঝে শিশুর মতন হয়ে উঠতে থাকি, ঠোঁট দুটি ফুলে ওঠে। পাগল হয়ে উঠে ভয়াবহ আর্তনাদ করি। কিন্তু শেষমেষ যদি ভালো কিছু খুঁজে নিতে বলে যুগ? নেব। বয়স ২৪-২৫ হবে। কর্মজীবনের শুরু হলো যৌবনে এক স্পর্শকাতর ছোঁয়ার মতো। হৃদয় এবং মস্তিষ্কের কাছে এর আবেদন বড় কম নয়। বয়সের উত্তেজনা, রোমান্টিসিজম পথ খুঁজে পায়। আত্মবিশ্বাস আরো খানিকটা নিয়ে যায় লাল টুকটুকে সূর্যটাকে আকাশের প্রান্ত থেকে ছিঁড়ে আনার প্রতিজ্ঞা ও প্রয়াসের কাছাকাছি। এই দ্বান্দ্বিক নিয়মেই যুগযুগ ধরে দুনিয়াটা বিচলিত হয়েছে। কোনদিন কোনো কাস্টমার আমাদের ওই রিটেল স্টোরে এসে দাঁড়ালে আমরা হাসিমুখে আদিমতা গুলো ভুলে যৌবনের চাকচিক্য হাজির করবো সামনে। যদিও গোটা তুলনা একটা সংস্কৃতি, নির্দিষ্ট আর্থসামাজিক ব্যবস্থা থেকে গড়ে ওঠে তবুও নেতিবাচকভাবে হলেও আমি আমার আদিমতা ভুলে চাকচিক্য হাজির করবো। 'ভিজিট এগেইন' বলে সেল এন্ডের দিকে ধাক্কিয়ে দেব। কিন্তু তাদের জন্য অব্যক্ত একটা উচ্চারণ রেখে যাবো প্রতিবার "ম্যাডাম আমরা ব্যর্থ কিনা জানিনা, আপনি কৃতি প্রবাসী.. তবু আমি এই ছোটবংশের আঁধারে বড় বাধ্যের একজন সেলসম্যান! আমার নিজের চরিত্রাবলী মুখস্ত রাখতে হয়। আপনাদের চরিত্রগুলি মাপার থার্মোমিটার, উচ্চতা ওজন মাপার যন্ত্রপাতি রয়েছে। আমি হয়তো সেদিন থাকবো না আপনি থাকবেন বা আপনার কোন বংশের কেউ হয় আপনার মতো কৃতি প্রবাসী হবে। তখন এই নতুন শহরে একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় আঁতেলমার্কা লাইট হাউসের সামনে আপনারই মত আরেকজনের সঙ্গে আলাপে আপনার বুক ছিড়ে বেরিয়ে আসবে একটা দীর্ঘশ্বাস। বয়সে পরম জনের একটু ছোঁয়া, একটু কথা, একটু পরিচর্যার জন্য আপনি ছটফট করবেন। বিরক্তি প্রকাশ করে বলবেন কী না করেছি! বিশ্বাস করুন, আমার দুঃখ খুজবে সেদিন। আপনি কিছুই করে উঠতে পারেননি। আপনাকে সেদিন স্বীকার করতেই হবে দুই ভারতবর্ষের মাঝে আপনি যে ভারতবর্ষের প্রতিবেশী ছিলেন সে ভারত বর্ষ অনেকটা সবুজ ও যুবক।" 

    শর্তাধীন পৃথিবীর আইন-শৃঙ্খলা ছেড়ে আমরা জলমাটির উপাখ্যান বহুকষ্টে ঝড়ের গতিবেগে নৌকায় তুলে নিতে পেরেছি। বিদ্যের ফুটুনি ও সব কিছুই জলের দিকে নিঃসংকোচে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার স্পর্ধা রেখেছি। অতএব আমরা মানতে বাধ্য, যৌবন বহতা নদীর মতো "যেতে-যেতে থেকে যায়/যে নদী বহতা" তাইতো এই লেখা, এত কৌতুহল নিয়ে সে যুগ মনোযোগ দিয়ে শুনি গভীর মগ্ন মন দিয়ে শুনি। নিচের তলার খোলা জানলা দিয়ে ভেসে আসছে গানের সুর.... 

    ৫।।
    The mind, the spirit, the Promethean spark,
    The lightning of my being, is as bright,
    Pervading, and far-darting as your own,
    And shall not yield to yours, though coop’d in clay!

    (Act I. Scene I. Lord Byron. 1909-14. Manfred. )

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন