এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আইন্সটাইনের শ্রাদ্ধ, বিবর্তন বিভ্রাট ও ইউরোক্রোম

    Al Shahriyar Mahi লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ অক্টোবর ২০২১ | ৪৫৪ বার পঠিত
  • ১. 
    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে৷ আইন্সটাইন তখন আমেরিকায় আত্মগোপনে। মাঝমধ্যে হাওয়া খেতে সন্ধ্যে নামার আগে বের হন। একদিন হাওয়া খাওয়ার পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাড়ি ফেরার রাস্তা গুলিয়ে ফেললেন। একে তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তার উপর শত্রুদের চোখ রাঙানিতে আমেরিকা এসে আত্মগোপনে আছেন। কে কখন দেখে ফেলবে তার ঠিক নেই। আইনস্টাইন পড়লেন মহাবিপদে৷ ফোন করলেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরিচালক বন্ধুকে। তবে ভালো খবর এই যে, বন্ধুর সহযোগিতায় সেদিনের মত বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন৷ 
     
    গতবছরের কথা। আইনস্টাইনের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা টুকলি করে বিজ্ঞানপ্রিয় পরিবারে ঠুকে দিলাম। ঘন্টা দুয়েক পর এক ভদ্রলোক এসে বলল, ইয়ার্কি করেন? যার বাড়ির ঠিকানা মনে থাকে না তার ফোন নাম্বার মনে থাকে কিভাবে? 
     
    আমি ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে যাচ্ছিলাম, বিজ্ঞানী মানুষ তাই বোধহয় ঠিকানার চেয়ে সংখ্যা-সূত্র মনে রাখাটা সহজ। 
     
    অমনি আরেক ভদ্রলোক আমার কথা কেড়ে নিয়ে সবজান্তা সেজে বলে দিলেন, আইনস্টাইন তার বাম পকেটে একটা ডায়েরি রাখতেন। ঐ ডায়েরির ভেতরে পরিচিতজনদের ফোন নম্বর লিখা থাকত। 
     
    মন্তব্য বাক্সে আরেক ভদ্রমহিলার আবির্ভাব হলো। কৌতূহলী চোখ নিয়ে প্রশ্ন করলেন, ফোন নম্বরের পাশে নিশ্চয়ই ঠিকানা লিখারও জায়গা থাকত। ঠিকানা না লিখে শুধু ফোন নম্বর লিখে রাখতেন কেন?
     
    ব্যাপারটা গভীর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে দেখে টুক করে গল্পটা সরিয়ে দিয়ে চলে আসলাম। আমার যতদূর ধারণা আলোচনা আরো কিছুক্ষণ চললে আইনস্টাইনের শ্রাদ্ধে কি কি রান্না হয়েছিল তাও বের করে নিয়ে আসা যেত। 
     
    ২. 
    ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো। প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছে।  ক্লাসে রোল ২-৩ এর নিচে নামত না। বাবার অনেক ইচ্ছে ছেলে বড় ডাক্তার হয়ে গ্রামের লোকের সেবা করবে৷ নবম শ্রেণিতে এসে ভর্তি হলো বিজ্ঞান শাখায়। কিছুদিন পর ছেলের লেখাপড়ার সাফল্যে গর্বিত হয়ে পিতৃদেব পুত্রকে স্মার্টফোন কিনে দিলেন।ছেলেটা এখন বিজ্ঞান পাঠের গ্রুপগুলোতে নিয়মিত বিজ্ঞান শেখে। 
     
    মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে ছেলেটার শখ হলো কবুতর পুষবে। 
    হাট থেকে কিনেও আনল দুইজোড়া। ক'দিন পর কবুতর ডিম দিল। অধীর আগ্রহ নিয়ে ছেলেটা বাচ্চা ওঠার অপেক্ষা করল। একসময় কবুতরের ডিম ভেঙে বাচ্চা ফুটল, সেই বাচ্চাগুলো ধীরে ধীরে বড় হলো, আকাশে উড়াল দিতে শিখল। ছেলেটা প্রতিদিন স্মার্টফোন দিয়ে একটা করে ছবি তুলে রাখত। এরপর একদিন সব ছবিগুলো একসাথে কোলাজ করে ফেসবুকে ছেড়ে শিরোনামে লিখল 'বিবর্তন'। 
     
    ছেলেটার বড়ভাই নামকরা এক প্রতিষ্ঠানে স্নাতক পড়ছে৷ বড় ভাইয়েরও ছবি তোলার দারুণ নেশা রয়েছে৷ একদিন সেও একেবারে ১০ বছর বয়স থেকে ২২ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি জন্মদিনের ছবি একসাথে কোলাজ করে ফেসবুকে দিয়ে শিরোনামে লিখল 'বিবর্তন'। 
     
    ৩.
    একদা এক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে জীববিজ্ঞানের রেচন অধ্যায় পড়াচ্ছিলেন৷  এক ছাত্র হঠাৎ প্রশ্ন করে বসল, স্যার একটা প্রশ্ন ছিল। মূত্রের রঙ মাঝেমধ্যে হলুদ হয় কেন? 
     
    শিক্ষক বললেন, ঐ তো দেখ বইয়ের অমুক পাতায় লেখা আছে। ইউরোক্রম নামক রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে মূত্র হলুদ হয়। 
     
    কিছুক্ষণ পর আরেক ছাত্র দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, স্যার মূত্র তো মাঝেমধ্যে হলুদ হয়। কিন্তু মল মাঝেমধ্যে বাদে প্রায় সবসময়ই হলুদ হয় কেন? 
     
    শিক্ষক মশাই পড়ে গেলেন মহা ফাঁপড়ে। এ কেমন ধারার প্রশ্ন৷ এর উত্তর তো বইতে দেওয়া নেই। তবে তিনি যথেষ্ট সৃজনশীল। ভেবেচিন্তে একটা উত্তর বের করে ফেললেন। 
    বললেন, আরে গাধা এটাই তো বলছিলাম৷ মল যখন অতিরিক্ত ইউরোক্রোম ধারণে অক্ষম হয় তখন মূত্রকে খানিকটা দান করে মূত্রকেও হলদে বানিয়ে ফেলে। 
     
    ছাত্ররা সৃজনশীল উত্তর পেয়ে খুশি। ক্লাস শেষের পর মাস্টার মশাই খানিকক্ষণ বসে বসে ভাবলেন এত সহজ একটা উত্তর বৈজ্ঞানিকেরা এখনও বের করতে পারেনি৷ 
     
    তারপর আয়নায় নিজের মুখখানার দিকে চেয়ে আপসোস করে বললেন, আসলেই এই দেশে মেধাবীদের কোনও মূল্য নেই।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন