পরীক্ষা বড়ো না জীবন?
ইমানুল হক
#
পরীক্ষা বড়ো
না কিশোর কিশোরীদের জীবন বড়ো?
দিল্লি বোর্ড পরীক্ষা নিল না। চুপ। বাংলায় সর্বনাশ আনবে?
যাঁরা মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলছেন, তাঁদের ছেলে মেয়ে কি বাংলার বোর্ডে পড়ে?
না দিল্লি বোর্ডে?
সিবিএসই/ আইসিএসই পরীক্ষা বাতিল করেছে ১৪ এপ্রিল। তখন পরীক্ষাপ্রেমীরা চুপ ছিল।
দিল্লি বোর্ড একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে ক্লাস শুরু করে দিয়েছে।
মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল করা দরকার ।
নম্বর কীভাবে দেওয়া হবে ?
এবং কেউ যদি পরীক্ষা দিতে চায়?. আমার আটটি প্রস্তাব আছে।
দিচ্ছি।
ভোট করতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশে ১৬২১ জন শিক্ষক মৃত।
পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত ২৫-এর বেশি অধ্যাপক শিক্ষক করোনা চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েও মৃত।
মাধ্যমিকের ১২ লাখ ছেলেমেয়ে তো একা আসবে না।
বাবা মাও যাবেন।
কার্যত ৩৬ লাখ।
এই ৩৬ লাখের সঙ্গে দু লাখ শিক্ষক কর্মচারী।
এরসঙ্গে যুক্ত হবেন দু লাখ পরিবহণ ও ছোটো দোকানকর্মী।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নয় লাখ।
সঙ্গে ১৮ লাখ অভিভাবক অভিভাবিকা।
এর সঙ্গে দুই লাখ শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মী। এবং দুই লাখ পরিবহণ কর্মী।
মোট ৬১ লাখ মানুষ।
৬১ লাখের ২ শতাংশও যদি করোনা আক্রান্ত হয় হাসপাতালে ভর্তি করার জায়গা থাকবে?
এক লাখ ২২ হাজার বাড়তি শয্যা তৈরি কি সহজ কাজ?
এবং তাদের জন্য ডাক্তার নার্স ওষুধ অক্সিজেনের ব্যবস্থা?
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪ জন অধ্যাপক কর্মী করোনায় মৃত।
#
শিক্ষকরা দুটো ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার ডিউটি দিলে করোনা হবে না! কী যুক্তি? কাগজ পড়ুন। দুটো ভ্যাকসিন নিয়েও একাধিক চিকিৎসক মৃত।
#
আই সি এস ই/ সিবিএসই দিল্লি বোর্ডের দশম মানের পরীক্ষা বাতিল। ছেলেমেয়েরা এগারো ক্লাসের ক্লাস করছে। বাংলা বোর্ডের ছেলেমেয়েরা হা পিত্যেশ করে বসে আছে। ওঁদের পরীক্ষে দিতেই হবে। গরিব মধ্যবিত্তের জীবনের দাম নেই?
#
পরীক্ষা নেবেন কীভাবে?
বাংলার গ্রামে গ্রামে জ্বরের রোগী।
করোনা পরীক্ষা করছে না, বা চাইলেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।
লোকে ভয়ে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছে না।
অনেকেই লক্ষণবিহীন রোগী।
থার্মাল গান দিয়ে পরীক্ষা করে হলে ঢোকালেন।
তাঁকে একটা বেঞ্চেই নয় বসালেন।
খাতা সই করবেন না করবেন না?
অ্যাডমিট কার্ড রেজিস্ট্রেশন নম্বর চেক করবেন না করবেন না?
ছাত্রছাত্রীরা তিনঘন্টা / বা এক ঘন্টার পরীক্ষায় জল খাবে না খাবে না? মুখোশ তো খুলবেই অন্তত ১০%।
টয়লেট যেতে দেবেন না দেবেন না?
কতগুলো টয়লেট আছে?
টয়লেট থেকে রোগ ছড়ায় না ছড়ায় না?
কে পরিষ্কার করবে প্রতিবার?
এবং কীভাবে?
ভাবুন।
#
মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা মূল্যায়ন কীভাবে হবে?
শারীরিক স্বাস্থ্যিক ও শিক্ষাগত কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বাতিল করা উচিত।
৯০% বিদ্যালয়ে ২০% পাঠক্রমও পড়ায় নি।
পরীক্ষা মানে কী শিখেছে তার মূল্যায়ন।
ঠিকমতো পড়ানো হয় নি ৯০% বিদ্যালয়ে।
দিল্লির দুটি বোর্ড একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করে দিয়েছে ১৯ এপ্রিল থেকে।
বাংলা বোর্ড পরীক্ষা নিলে সেপ্টেম্বরের আগে ফল নয়।
অক্টোবরে ভর্তি।
৬ অক্টোবর মহালয়া।
ছয় মাস পিছিয়ে যাবে বাংলা বোর্ড।
ভাবুন
আটটি প্রস্তাব:
১। নবম শ্রেণির পরীক্ষা সব জায়গায় হয়েছে। তার ওপর ৭-১০% গ্রেস। কারণ মাধ্যমিকের বছর বহু ছেলেমেয়ে ভালো পড়াশোনা করে।
২। দশম শ্রেণিতে ১০% বিদ্যালয়ে বিশেষ করে অসরকারি বিদ্যালয়ে প্রাক-নির্বাচনী ( প্রি-টেস্ট) পরীক্ষা হয়েছে।
তার ভিত্তিতে ৭-১০% গ্রেস
৩। একাদশ শ্রেণিতে পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ৭-১০% গ্রেস। ২০২০ র উচ্চমাধ্যমিকের সঙ্গে একাদশ শ্রেণির দুই/ তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল।
৪। দ্বাদশ শ্রেণির প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষার ভিত্তিতে ৭-১০% গ্রেস।
৫। খোলা বই নীতি/ ওপেন বুক প্রথায় পরীক্ষা। এটা সবচেয়ে কঠিন। খোলা বই সহজ হলে সবাই পিএইচডি করতো।
৬। যদি কোনো ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিতে চান, তাঁকে দিতে দেওয়া।
৭। ধারাবাহিক অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন হলে তাকেও বিবেচনায় রাখা। এবং প্রকল্পপত্র বা প্রোজেক্ট জমা নেওয়ার ভিত্তিতে।
৮। সিবিএসই/আইসিএসই বোর্ড ঢেলে নম্বর দেয়-- সেটাও বিবেচনায় রাখা।
লেখক ড. ইমানুল হক
প্রাক্তন অধ্যাপক, প্রেসিডেন্সি কলেজ।।
এবং পরিচালক, মানিকতলা খালপাড়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশু কিশোর কিশোরীদের ভাষা ও চেতনা পাঠশালা।।
এখানে পাঁচ বছরে ২০ থেকে বেড়ে ২৩১ জন ছাত্র ছাত্রী হয়েছে।
ড্রপ আউট শূন্য।
পুনশ্চ:
পরীক্ষা নেওয়া হয় কেন? শিক্ষাদানের ফলপ্রসূতা ও শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির মান যাচাই করার জন্য। কিন্তু স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ, ক্লাস হয় নি, অন- লাইন ক্লাসের সুযোগ অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী পান নি-- এই বাস্তব অবস্থায় দাঁড়িয়ে তাঁদের মূল্যায়ন কী ভাবে করা যাবে?
ধরে নিচ্ছি ,কোভিড নেই এবং পরীক্ষা হবে তখন যদি শিক্ষার্থী প্রশ্ন করে "কোভিডকালে আমাদের বিদ্যালয় কোন্ কোন্ সিলেবাস পড়িয়েছে এবং কী কী শিখিয়েছে?"
বিদ্যালয় কী উত্তর দেবে?
ঋণ: সজল কুণ্ডু