#কাদামাটির হাফলাইফ ১০৭
অ্যাটেনশন
অ্যাটেনশন
টেলিপ্রিন্টার যন্ত্রটা অস্বাভাবিক আওয়াজ করছে। খেতে বসছি। একজন বললেন, দেখ তো কী হলো?
দেখি একটা একটা একটা করে অক্ষর দিয়ে।
A T T E N T I ON
এই রকম বার তিনেক এলো।
তখন নেট কল্পনাতেও ছিল না। ই-মেল, গু গুলদাদাও অনুপস্থিত।
দেখি, আসছে, অ্যাসাসিনেশন।
অ্যাসাসিনেশন।
তারপর একটু থেমে, রাজীব গান্ধী অ্যাসাসিনেটেড।
চেঁচিয়ে ফেলি।
ছুটে আসেন এক ব্যক্তি।
আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করতাম না।
আমি সরে যাই।
রাতের সাংবাদিক ছিল সুপ্রিয়দা। ভালো মানুষ।
বলল, তুই ফোন ধরি ফোন এলে।
লিখে রাখবি, কী খবর পাচ্ছিস, কলকাতার
সুপ্রিয়দা আরেকটা ফোনে ব্যস্ত।
#
এরমধ্যেই চলে এলো চন্দন বসুর ফোন।
জ্যোতি বসু সেদিন মাদ্রাজে।
চিন্তা ।
অনিলদা বললেন, আমার সঙ্গে একটু আগে কথা হয়েছে। ঠিক আছেন। কাল আমরা বন্ধ সমর্থন করছি।
অনিদ্রা গোপন ফোন এলে অনেক সময় বেশ জোরে কথা বলতেন। সবাই শুনতে পেতো।
ইতিমধ্যে যে-সব খবর শিরোনাম হবে ভেবেছিল, তার জায়গা নিলেন রাজীব গান্ধী।
ঠিক এর ১৪ দিন আগে, ৭ মে রাজীব গান্ধীকে প্রথম দেখি, আসানসোল পোলো গ্রাউন্ডে।
বেলা নয়টার সময় সভা।
সাড়ে সাতটায় চলে গেছি।
আমার কাগজের মতামত, রাজীব গান্ধীর বিরোধী। সাড়ে আটটার সময় প্রায় ফাঁকা মাঠের ছবি তুলে রাখছি।
সে-সময় ছবি লেখা দুটোই করতাম।।পৌনে নয়টা নাগাদ রাজীবের হেলিকপ্টারের আওয়াজ পাওয়া গেল।
পিলপিল করে ঢুকতে লাগলেন মানুষ।
রাজীব এলেন।
মঞ্চ জুড়ে নেতা।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি তুহিন সামন্ত অনেককে নামালেন।
আমাকে কিছু বললেন না, বিরোধী কাগজের লোক জেনেও।
আমি ছবি তুলছি। আর গলায় একটা ছোট টেপ। ইচ্ছে, সাক্ষাৎকার নেবো।
দু'একটা কথা জিজ্ঞেস করবো।
এর আগে ১৯৯১ এর সম্ভবত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় খালেদা বেগমের জনসভায় মঞ্চে থেকেছি।
রোগা প্যাংলা দেখে মায়ায়। সেখানেও দেখি মঞ্চ ভর্তি।
খালেদা এসেই হাত নেড়ে মঞ্চ ফাঁকা করে দেন মুহূর্তে।
কী দাপট।
রাজীবকে সে-রকম দেখলাম না।
বিনয়ী। ভদ্র।
মৃদু হাসলেন। প্রচুর ছবি তুলছি দেখে।
রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে কতো শ্লোগান দিয়েছি, চোর বলে। গলা ফাটিয়ে।
মানুষটাকে দেখে আমার মনে হল, ইনি চুরি করতেই পারেন না। সরল সুন্দর আপাপবিদ্ধ মুখ।
মঞ্চ থেকে নামছেন একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম, ফল কী হবে?
সরকার গড়বে কংগ্রেস।
বলেই নামতেই জনতার মাঝে বন্দি। লোকে পাগলের মতো করছে। হাত মেলাচ্ছে। প্রণাম করছে। ফুল ছুঁড়ছে।
বাম রাজনীতিতে এ-জিনিস কোনোদিন দেখিনি।
বিস্মিত। অভিভূত।
খালি, একটা ভয় হলো, এভাবে ভিড়কে কাছে ঘেঁষতে দিলে তো নিরাপত্তা বলে কিছু থাকে না।
#
হলো তাই। ভিড়ের সুযোগ নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটান নলিনীরা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন শ্রীলঙ্কায় এক তামিল সেনা বন্দুকের কুঁদো দিয়ে আঘাত করেছিল।
শ্রীলঙ্কায় শান্তি বাহিনী পাঠানো পছন্দ করেন নি তামিল জনতা।
শ্রীলঙ্কার তামিলদের জনপ্রিয় নেতা এল টি টি ই প্রধান প্রভাকরণও।
#
সেদিন, ২১ মে, আসানসোলের খনি অঞ্চল ঘুরে একটা খুব বড়ো খবর নিয়ে গিয়েছিলাম অফিসে।
মনে হচ্ছিল, রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাবে আমার তোলা ছবিগুলো।
১০-১২ বছরের ছেলেরা ভোট দিচ্ছে আসানসোলের বারাবনীতে। কংগ্রেস নেতা মানিক উপাধ্যায়ের উদ্যোগে। একই ছবি দেখলাম, বারাবনীর স্কুল বুথ থেকে একটু দূরে গিয়ে নুনিতে। সেখানেও এক চিত্র।
এখানে সিপিএম দেওয়াচ্ছে।
ছবি তুললাম, জেনেই, আমার কাগজ ঘোর সিপিএম। সিপিএমের ছবি যাবে না। কংগ্রেসেরটা যাবে।
বিহারের নির্বাচনে এইসব ছবি ছেপে 'সানডে' পত্রিকা থেকে দি টেলিগ্রাফে আসা এম জি আকবর বিখ্যাত।
#
মুখ্য সাংবাদিক আমাকে পছন্দ করতেন খুব। বললেন, খেটেছো, ভালো করেছো।
কিন্তু এ-সব ছবি একটাও যাবে না। গেলে বামফ্রন্ট সরকারের বদনাম হয়ে যাবে। লোকে বলবে, পশ্চিমবঙ্গে এভাবেই ভোট হয়।
#
তো আমার আর রাতারাতি বিখ্যাত হওয়া হলো না।
#
একটা ছবি বের হলো, শান্তিপূর্ণভাবে বিরাট লাইনের ছবি। রাজীব গান্ধীর কারণে জায়গা কম।
পর পর দুদিন কলকাতা অচল।
বামফ্রন্টও বন্ধ সমর্থন নয়, নিজেরাই বন্ধ ডেকেছিল। ফলে কংগ্রেস সিপিএম মারামারি হয় নি।
রাতে হাঁটতে হাঁটতে মৌলালি মোড়ে গেলাম। মসজিদের পাশে দুটো মুসলিম হোটেল ছিল। মালিক খুব ভালো চিনতো।
ও আমার গেরুয়া পাঞ্জাবি দেখে বুঝতো, হিন্দু।
বলল, খাবার নেই।
আমি বললাম, ওরা যে খাচ্ছে।
একটু ভয় পেয়ে বললে, বাবু আজ খাবেন না।
পরে আসুন।
এই এক জিনিস দেখেছি, ১৯৮৯ এ ৩১ অক্টোবরের সময়।
হিন্দুদের গোরুর মাংসের খাবার বেচতে ভয় পাচ্ছে মুসলিম হোটেল।