এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বাংলা ও বাঙালি:  প্রেম নারীকথন বীরত্ব

    Emanul Haque লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ এপ্রিল ২০২১ | ১৮৮২ বার পঠিত
  • কারো কমড়িয়া পর রঙ্গ নাহি চড়ৈ।
    কালো কম্বলের পর আর নতুন রঙ ধরে না।
    - কবীর

    রসের মধ্যেই রস বর্ষণ‌ হয়, অনন্ত কোটি ধারায়।
    - কবীর

    যে দেশ খাজুরাহোর মিথুন মূর্তির দেশ, যে দেশে মন্দিরের নাম ভালোবাসার মন্দির, যে রাধা কৃষ্ণের অবৈধ প্রেমের জয়গানে মাতোয়ারা -- সেখানে অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড, লাভ জিহাদ আইন কতটা সঙ্গত?

    কেউ কেউ বলছেন, এই অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড মধ্যযুগীয় ব্যাপার। আচ্ছা মধ্যযুগ এতো খারাপ ছিল না কি? ইউরোপের মধ্যযুগ হানাহানি কাটাকাটি মারামারি ধর্মীয় বিদ্বেষে অন্ধ। শেক্সপিয়রের নাটক 'ওথেলো' এবং 'মার্চেন্ট অফ ভেনিস' মুসলিম বিদ্বেষ ও ইহুদি বিদ্বেষ কতদূর প্রসারিত হয়েছিল -- তার প্রমাণ দিতে হাজির। আমাদের মধ্যযুগ তো তা নয়। সমন্বয়ের মিলনে সংহতির পরস্পরের কাছে আদানপ্রদানের যুগ। আমাদের প্রাক মধ্যযুগেই তো খাজুরাহোর মন্দির। শ্রীকৃষ্ণের প্রেমের বন্দনা গাথা তো মধ্যযুগ জুড়েই। চণ্ডীদাস আর রজকিনী রামীর প্রেম -- সেতো মধ্যযুগের অহঙ্কার। সম্রাট আকবরের সরকারিভাবে হোলি উদযাপন, কৃষ্ণ সেজে হারেমের নারীদের সঙ্গে প্রকাশ্য লীলা -- তো ঘোর মধ্যযুগে। চৈতন্য, দদ্দু দাদু, কবীর, তুকারাম, সুরদাস, ভক্ত রবিদাস, ভক্ত নারী দয়াবাই, কুম্ভনদাসজি, চরণদাস, চোখামেলা, শাহ লতিফ, শ্রীধর, মীরাবাই, বৈজু বাওরা -- তো মধ্যযুগের মানুষ। মধ্যযুগ শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি অর্থনীতিতে ভারতের চিরকালের অহঙ্কার। পৃথিবীর মোট জিডিপির ২৭% মধ্যযুগের ভারতে। মুঘল আমলে। মধ্যযুগেই বাংলার জিডিপি পৃথিবীর ৬%। মধ্যযুগেই পরিব্রাজকরা বলছেন, বাংলায় সোনা প্রবেশের দ্বার আছে, নির্গমনের নাই। বাংলায় ব্যবসা করতে আসে ইংরেজ ফরাসি ডাচ দিনেমার আর্মেনিয় পর্তুগিজ বণিক। মুঘল সম্রাটের দরবারে ধরনা দেয় বাংলায় বাণিজ্যর অনুমতি চেয়ে।

    #

    বাংলা দখল করেই ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের ভারত দখল। এখন আবার সমৃদ্ধ বাংলা দখলে তৎপর হয়েছে ক্ষমতা ও কর্পোরেট বণিক। ধর্মের নামে অপধর্মকে হাতিয়ার করে।

    #

    তাই যে বাংলায় চৈতন্যদেব নিমাই নামে জন্ম নেন নদীয়ার মুসলিম অধ্যুষিত মিঞাপুর গ্রামে, খেলা করেন মুসলিম ছেলেদের সঙ্গে, সেই বাংলায় কেউ মুসলমানদের বলে 'পাকিস্তানি', 'রোহিঙ্গা' -- তখন একটু অবাক লাগে। এই বাংলায় শেষ হিন্দু রাজা বলে কথিত লক্ষ্মণসেন তাঁর অন্যতম প্রধান পরামর্শদাতা করেছিলেন শাহ জালাল বা জালালউদ্দিন তাবরিজিকে। 'শেখ শুভোদয়া' গ্রন্থে এই নিয়ে একাধিক কাহিনি আছে। দীনেশচন্দ্র সেন লিখিত 'বৃহৎ বঙ্গ' গ্রন্থে লেখা হয়েছে: মসজিদের বৃত্তি ও নির্মাণ ব্যবস্থা রাজাই ( লক্ষ্মণসেন) করিয়াছিলেন তাহাই অধিকতর সম্ভবপর বলিয়া মনে হয়। ( বৃহৎ বঙ্গ, পৃ. ৪৬০)।

    দীনেশচন্দ্র সেন ওই গ্রন্থেই লিখেছেন:
    বিবাহে প্রেমই প্রধান পুরোহিত, রূপকথায় এই রূপ দৃষ্ট হয়।
    ব্রাহ্মণের ছেলে, ক্ষত্রিয়ের ছেলে কি বৈশ্যের ছেলে এরূপ কথা পল্লীগীতিকা বি রূপকথায় আদৌ নাই। ( পৃ. ৪৬৫)

    একেবারেই নেই বলাটা ঠিক নয়। 'ময়মনসিংহ গীতিকা'য় দেখি 'মহুয়া' পালার মহুয়ার প্রেমিক নদেরচাঁদ ব্রাহ্মণ। তবে বেদের মেয়ের সঙ্গে প্রেম বোঝাতেই বোধহয় ব্রাহ্মণত্ব আরোপ।
    বেদের মেয়েও যে আসলে ব্রাহ্মণকন্যা। আবার এই 'মহুয়া' পালাতেই পাই দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমপংক্তি:

    তুমি হও গহীন গাঙ আমি ডুইব্যা মরি।
    আনন্দ বেদনা দুঃখ অপমান যন্ত্রণা প্রত্যাখ্যান
    -- সব নিয়ে অবগাহন আর কোথায় করা যায়? প্রেমসাগর ছাড়া?

    'মহাভারত' পড়লেই দেখা যাবে নানা বিচিত্র বিবাহের ছড়াছড়ি। বিয়েতে জাতি বিবেচ্য ছিল না ভারতীয় সমাজে। এ-সব ব্রাহ্মণ্য অবদান। ক্ষত্রিয় ভীম বিয়ে করছে রাক্ষসকন্যা হিড়িম্বাকে। ক্ষত্রিয় অর্জুনের পছন্দ নাগকন্যা চিত্রাঙ্গদা। আবার কৃষ্ণ মৃত্যু চাইবেন, এই হিড়িম্বা পুত্র ঘটোৎকচের। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।

    বাংলায় সেনরাজারা এক বড়ো ক্ষতি করেন।
    কেন?

    দীনেশচন্দ্র সেন বলছেন,
    সেন-রাজাদের সময় হইতে বৃহৎ বাঙ্গলা ক্ষুদ্র বাঙ্গলায় রূপান্তরিত হইল। বিদেশের সঙ্গে আদান-প্রদান একরূপ তিরোহিত হইল। সমুদ্রযাত্রা নিষিদ্ধ হইয়া আমরা কূপমণ্ডুকে পরিণত হইলাম'।

    অথচ সমুদ্র যাত্রা ও বাণিজ্য ছিল বাংলার স্বপ্ন। গীতিকথার এক বণিক বলছেন: 'সমুদ্রই আমার বাড়িঘর'।

    আর এক বণিক বধূ বলছেন, আমাদের পারিবারিক রীতি এই যে বিবাহাদি আমাদের সমুদ্রে জাহাজের উপরই নির্বাহিত হয়।

    আজকাল কেউ কেউ নদীর ওপর বিলাসবহুল লঞ্চ ভাড়া করে বিয়ে দিচ্ছেন।

    বণিকরা বাইরে যেতেন। বিদেশি মেয়ে বিয়ে করে আনতেন। সংঘাতে সমন্বয়ে কাটতো জীবন।

    বাঙালি হচ্ছে একমাত্র সেই জাতি যাদের শ্রেষ্ঠ বণিকদের 'রাজা' উপাধি দেওয়া হতো।

    রাজার মতো ছত্র, দণ্ড, সিংহাসন ব্যবহার করতেন।

    (চলবে)
    ৯.৪.২০২১
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kallol Dasgupta | ১০ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৪৭104581
  • ভালো লেখা। প্রশ্নটি খুব প্রাসঙ্গিক - মধ্যযুগ কেন অন্ধকারের যুগ বলে চিহ্নিত ? এটা পুরোপুরি  ইউরোপীয় নির্মান। ভারতীয় উপমহাদেশে মধ্যযুগ উৎকর্ষের তুঙ্গে। খারাপ ভালো দিক সব যুগেই আছে। কাজেই অস্পৃশ্যতা বা বর্ণভেদ কি মুসলমানেদের রাজশক্তির অপব্যবহার দিয়ে এই যুগকে কালীমালিপ্ত করাটা ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্র। ইউরোপিয় সভ্যতা প্রাচ্যের চেয়ে উন্নত এই মিথ্যাকে মান্যতা দেবার অপচেষ্টা। নইলে প্রাচ্য গোটা মধ্যযুগ ধরে, এমনকি তারও আগে থেকে ইউরোপে, মশলা, সুগন্ধী, কাপড়, তামাক, চিনি নিয়ে ব্যবসা করতো কি ভাবে ? শূন্য, আলজেব্রা, জ্যামিতি, বারুদ, কাগজ, ইস্পাত (যাতে মরচে ধরে না) পোড়ানো ইঁট এসব তো প্রাচ্যের দান।  মহেঞ্জদরো-হরপ্পার যুগে ইউরোপ নেহাৎ গ্রাম ছিলো।


    তবে একটা তথ্য মনে হয় ঠিক নয়। "ব্রাহ্মণের ছেলে, ক্ষত্রিয়ের ছেলে কি বৈশ্যের ছেলে এরূপ কথা পল্লীগীতিকা বি রূপকথায় আদৌ নাই। "  এটি ঠিক নয়। মঙ্গলকাব্যে, রূপকথায়, লোককথায় এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। রাজপুত্র, বেনের পো আর রাজপুরোহিতের ছেলে একসাথে অভিযানে যাচ্ছে - এমন তো আছেই।  বরং "হিন্দু" বলে কোন বর্গ ছিলো না। যারা মুসলমান নয়, তারা ব্রাহ্মণ, ক্ষেত্রি, বেনে, তিলি তিসি, কৈবর্ত, ডোম, শবর, বুনো যাই হোকনা কেন - সকলেই  "হিন্দু" এই ধারনাটি আদৌ ছিলো না। যবনদের সাথে "জলচল" যেমন ছিলো না, তেমনই সমাজে এক বর্ণের সাথে অন্য বর্ণেরও জলচল ছিলো না। ব্রাহ্মণ-ডোমণী প্রেম বা ঐজাতীয় অসবর্ণ সম্পর্ক ব্যাতিক্রম ছিলো বলেই সাহিত্যে স্থান পেয়েছে। এই সমসময়ের সিনেমায় বড়লোক ছেলে/মেয়ের সাথে গরীবের ছেলে/মেয়ের প্রেমই তো প্রায় একমাত্র উপজীব্য। সেও ব্যতিক্রম বলেই। ভীমের হিড়িম্বা  বিয়ে নিয়ে প্রচুর মাথা ঘামাতে হয়েছে, এবং বিয়েটা পান্ডবদের স্বার্থরক্ষার কারনেই হয়েছে। অর্জুনের নাগকন্যা উলুপী বা পার্বত্য উপজাতি কন্যা চিত্রাঙ্গদাকে বিয়ে কি আদৌ বিয়ে ? দ্রৌপদী কোনকালে এদের কাউকে (হিড়িম্বা, উলুপী, চিত্রাঙ্গদা) সতীন বলে ধরেনই নি। তার কাছে একমাত্র সতীন সুভদ্রা। তার প্রমাণ মহাভারতে সুভদ্রাকে বিয়ের পর অর্জুন-দ্রৌপদীর ঝগড়া। 


    কাজেই জাতপাতের বিষয়টি আগে ছিলো না এটা সত্য নয়।  

  • এলেবেলে | 202.142.96.164 | ১০ এপ্রিল ২০২১ ১০:০৯104585
  • চৈতন্য মিঞাপুরে জন্মেছিলেন? তাজ্জব কি বাত! এক প্রভুপাদ ছাড়া এ কথা তো আর কেউ বলেননি। তবে কি নতুন গবেষণায় প্রমাণিত হল?

  • PM | 182.160.126.210 | ১০ এপ্রিল ২০২১ ১২:১২104588
  • ওই মধ্যযুগেই হর্ষবর্ধন ছিলেন যার রাজ্য দেখে হিউ এন সাং ভারত  দেখে উলুটপুলুট হয়েছিলেন।  নালন্দা /বিক্রমশীলা এই সময়কারই তো। বাংলার গর্ব পাল সাম্রাজ্যও  এই সময়কার ।দক্ষিনের বৈভবশালী  চোল সাম্রাজ্য যারা মালদ্বীপ , ইন্দোনেশিয়া ,মালয়েশিয়া  ইত্যাদি দেশে ভারতীয় ইনফ্লুয়েন্স ছড়িয়েছিল ( কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাম্রাজ্য বিস্তার করে )সেও তো মধ্যযুগে যার প্রাভাব আজও রায়ে গেছে ।থাইল্যানডেও ও  ভারতীয় প্রভাব এই সময়ই ছড়ায় (সুখও  থাই পিরিয়ড )--ভারতীয় প্রভাবে  আঙ্কোর ওয়াটও  তৈরী হয় এইসময় .


    মোটামুটি ভারতীয় সভ্যতা বলে যা কিছুর জন্য আজ গর্ব করি বেশিরভাগই তো মধ্যযুগের ( গান্ধার শিল্পের মত্ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া )।বাকি থাকে পুষ্পক রথ , এরোপ্লেন ,রকেট  ইত্যাদি যেগুলো সুদূর অতীত কালে হয়েছিল :):)

  • PM | 182.160.126.210 | ১০ এপ্রিল ২০২১ ১২:১৯104590
  • দু:খিত ভুল পেজ e পোস্ট 

  • ইমানুল হক | 2401:4900:1042:cf02:0:6e:afb0:5301 | ১০ এপ্রিল ২০২১ ২১:২৮104612
  • @এলেবেলে আপনি পড়েছেন। ধন্যবাদ।


    আমি একটু আধটু পড়াশোনা করি। সমাজকর্মের অবসরে পথে ঘাটে সুযোগ পেলেই পড়ি।


    দীনেশচন্দ্র সেনের 'বৃহৎবঙ্গ' বইটি এভাবেই পড়া।


    দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৯৮ পাতা দেখুন।


    সেখানে আছে মেঞাপুর।


    আসলে মিঞাপুর।

  • এলেবেলে | 202.142.96.34 | ১০ এপ্রিল ২০২১ ২২:২০104613
  • হ্যাঁ মিঞাপুর তো জানি। আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে নদীয়ার তদানীন্তন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কেদারনাথ দত্ত নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে এবং সরকারি নথিপত্রে বদল ঘটিয়ে মুসলমান অধ্যুষিত মিঞাপুরকে মায়াপুর’- বদলে ফেলেন - জানি সেটাও। কিন্তু  চৈতন্য কি সেখানে জন্মেছিলেন? আমার প্রশ্ন এইটুকুই ছিল। আপনি যে পড়েন এবং পড়ানও, সেটা জানি। 

  • ইমানুল হক | 2401:4900:1042:cf02:0:6e:afb0:5301 | ১১ এপ্রিল ২০২১ ০১:১০104627
  • বৃহৎ বঙ্গ


    ৬৯৮


    জগন্নাথ মিশ্র বল্লাল রাজার বাড়ীর নিকট বাস করিয়াছিলেন—ইহা তখন নবদ্বীপের


    দক্ষিণ সীমায় অবস্থিত ছিল, এবং এই স্থানটি সম্ভবতঃ নগরের শ্রেষ্ঠ স্থান ছিল ।


    মুসলমানেরা এই স্থান অধিকার করার পর এই স্থানের নাম দিয়াছিল “মেঞাপুর,


    অনেক মুসলমান এখানে বাস করিয়াছিলেন। মহাপ্রভুর জন্মস্থানটিকে মুসলমানী নামেঅ অভিহিতকরিতে ভক্তচরিতকারেরা স্বভাবতঃই কুণ্ঠাবােধ করিতেন। সুতরাং বৃন্দাবন দাস, মুরারি গুপ্ত প্রভৃতি আদি-লেখকেরা পল্লীর নাম উল্লেখ না করিয়া মহাপ্রভুর জন্মস্থান শুধু


    নবদ্বীপ বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু পরবর্তী লেখকেরা (তন্মধ্যে ভক্তিরত্নাকর-রচয়িতা


    নরহরি চক্রবর্তীর নাম উল্লেখযােগ্য) “মেঞাপুর” শব্দটি হিন্দুভাবাপন্ন করিয়া উহাকে“ মায়াপুর” নাম দিয়াছেন। কিন্তু প্রাচীন মুসলমানদের দলিলপত্রে এবং চলিতকথায়


    মিঞাপুর বা যেঞাপুর নাম এখনও প্রচলিত দেখা যায় । প্রায় দুইশত বৎসর পূর্বহ হইতেহিন্দুরা উহাকে মায়াপুর নামে অভিহিত করিয়া আসিয়াছেন। নবদ্বীপে দ্বিতীয়


    মায়াপুর নাই। যেখানে বহু শতাব্দীর পূৰ্ব্ব হইতে রামচন্দ্রের পূজা হইত এবং রামেরর রথোৎসবঅনুষ্ঠিত হইত সেখানে বাঙ্গলার কোন প্রতাপশালী ব্যক্তি রামচন্দ্রের একটিম মন্দিরনির্মাণ করিয়াছিলেন। উহা ঠিকই করিয়াছিলেন, যেহেতু ঐ স্থানটি রামের লীলার


    একটি প্রাচীন তীর্থ ছিল। সেই মন্দির এখন নদীগর্ভে কিন্তু, সেই রামচন্দ্রের মন্দির কখনই চৈতন্যমন্দির হইতে পারে না, এবং সে স্থানের নামও মায়াপুর নহে। জোর


    করিয়া কেহ কেহ নিজেরা উহার নাম ‘মায়াপুর’ দিয়াছেন ।

  • এলেবেলে | 202.142.96.34 | ১১ এপ্রিল ২০২১ ০১:২৮104628
  • জানতাম নরহরি চক্রবর্তীর ভক্তিরত্নাকরের উল্লেখ হবেই হবে। কারণ কেদারনাথ দত্ত শুধু মিঞাপুরকে 'মায়াপুর'-ই বানাননি, সুচতুরভাবে ওই মায়াপুরকে চৈতন্য জন্মস্থান বলে প্রচারও করতে থাকেন।প্রামাণ্য নথি হিসেবে কেদারনাথ তুলে ধরেন প্রায় দেড়শো বছর আগে রচিত বৃন্দাবনবাসী নরহরি চক্রবর্তীর ভক্তিরত্নাকরগ্রন্থটিকে। ততদিনে চৈতন্যের জন্মভিটে গঙ্গাগর্ভে বিলীন। ফলে তিনি চৈতন্যকালীন নবদ্বীপের একটি কাল্পনিক চিত্র আঁকেন, চৈতন্য জন্মস্থানের নামকরণ করেন মায়াপুরএবং তার চারদিকে নয়টি দ্বীপের কল্পনা করে নবদ্বীপনামের নতুন ব্যাখ্যা দেন।


    চৈতন্য জন্মস্থান হিসেবে মায়াপুর তত্ত্বপ্রতিষ্ঠা করতে কেদারনাথ দত্ত এই ভক্তিরত্নাকর’-এর আশ্রয় নেন। চাকরি ছেড়ে তিনি ভক্তিবিনোদ ঠাকুর নামে সন্ন্যাসী হন। ১৯১৮-তে অর্থাৎ তাঁর মৃত্যুর চার বছর পর তাঁর পুত্র ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী মায়াপুরে শ্রীচৈতন্য মঠস্থাপন করলে কেদারনাথের প্রচারে ভক্তিবাদের সরকারি সিলমোহর পড়ে।


    এঁর শিষ্য অভয়চরণ দে ১৯৭২- মায়াপুরে চন্দ্রোদয় মন্দির নামে ইসকনের হেড অফিস বানান, একই সাথে চৈতন্য জন্মভূমির প্রচার তুঙ্গে ওঠে।
     
    কিন্তু মায়াপুর গঙ্গার পূর্বপারে। তাই দীনেশচন্দ্র  চৈতন্যের জন্মভূমির অ্যাপিল টু অথরিটি হলে মুশকিল।
  • ইমানুল হক | 2401:4900:1042:cf02:0:6e:afb0:5301 | ১২ এপ্রিল ২০২১ ২১:৪২104708
  • বর্তমান মায়াপুর পরবর্তীকালের নির্মাণ।

  • এলেবেলে | 202.142.96.160 | ১২ এপ্রিল ২০২১ ২১:৪৬104709
  • প্রথমে নরহরি চক্রবর্তী ও পরে কেদার দত্ত। অন্তত একশো দশ বছর আগের নির্মাণ।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন