এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চুমুকে চমক!

    Asok Kumar Chakrabarti লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ মার্চ ২০২১ | ২০৬৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)

  • Photo by Julia Sakelli on Pexels.com

    স্টেশনের নাম খন্যান। শেয়ালদা-ডানকুনি কর্ড লাইন। নেহাৎই ছোট স্টেশন। এখান দিয়ে শুধু মাত্র লোকাল ট্রেন নিয়মিত ভাবে যাতায়াত করে। সেদিন এই স্টেশনে সিগন্যাল না পেয়ে আচমকাই দাঁড়িয়ে গেল দিল্লিগামী ভেসটিভিউল ট্রেন। এখন যাকে আমরা রাজধানী এক্সপ্রেস বলে ডাকি। ওই ট্রেনেই জাতীয় পুরস্কার আনতে দিল্লি যাচ্ছেন মহানায়ক। ট্রেন হঠাৎ বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে যেতে স্রেফ কৌতুহলবশত তিনি নিজের আসন ছেড়ে, কামরার দরজা খুলে, বাইরে উঁকি দিয়ে ব্যাপারটা আন্দাজ করার চেষ্টা করলেন‌। তখন স্টেশনের নাম খন্যান চোখে পড়ল। স্টেশনের সঙ্গে চায়ের সম্পর্ক চিরকালই বেশ নিবিড়। একজন কেটলি হাতে চা-ওলা সামনে এগিয়ে আসতেই ইশারায় ডেকে হাত বাড়িয়ে চায়ের ভাঁড় ধরে নিলেন স্টেশনে না নেমেই। কোর্ট হাতড়ে পয়সাও দিলেন লুঙ্গি পরা গেঞ্জি গায়ে উটকো চেহারার ওই নিরীহ চা-ওলাকে। ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বড় জোর দু -চুমুক।
    - বাজে চা!



    টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন ভাঁড়। ততক্ষণে ট্রেন স্পীড নিয়ে নিয়েছে। চা-ওলার সুবাদে সত্যজিৎ রায়ের "নায়ক" অমর করে দিয়েছে ওই একরত্তি স্টেশন খন্যান-কে!

    সকালে ঘুম ভাঙলে ব্রাশ করার পরেই এক কাপ গরম চায়ের জন্যে প্রাণটা ছটফট করে। বাড়ির বাইরে থাকলে খোঁজ পড়ে চা-ওলার। ট্রেনে মাঝরাতে ভোর হয় "গরম চায়ে" - হাকডাকে। তিন ফুটে এক গজ। তাই সই। নিত্য-কর্ম সারতে পেয়ালা তোমাকে চাই! কাজেই, "এমন বন্ধু আর কে আছে, তোমার মতো সিস্টার?" আমাদের চা-সুন্দরীর সত্যিই জুড়ি মেলা ভার! দেশে-বিদেশে চা চেনে না এমন লোক আছে বলে জানা নেই। রাশিয়ান টি-ও এদেশে দিব্যি চলে। 

    Photo by freestocks.org on Pexels.com

    বাংলা সাহিত্যের পাতায়-পাতায় এক কাপ গরম চায়ের মহিমা ছড়িয়ে রয়েছে, সেই গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের কাল থেকে। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে একটি চা-চক্রের প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন।  সেইসঙ্গে সপরিবারে বসে চা খাওয়ার চল তো তিনিই শুরু করে ছিলেন। যা স্বমহিমায় আজো চলছে। বাড়িতে কেউ এলে প্রথমেই জিজ্ঞাসা - "বলুন কি খাবেন, চা না কফি ?" তারও আগে অতিথি সেবা হতো সরবৎ দিয়ে। বেশি গরম পড়লে কুঁজো বা জালার ঠান্ডা জল সঙ্গে গুড়ের বাতাসা। ঠান্ডা পাণীয়? এই তো আজ, কাল, পরশুর কথা!

    পৃথিবীর সব সমস্যাই আলোচনার টেবিলে মেটে। সঙ্গে অবশ্যই থাকে চা বা কফি। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিদেশ সচিব বৈঠক শেষে হাসি মুখে ছবি তোলেন। করমর্দন করেন। কাপ কাপ চা বা কফি দফায় দফায় উড়ে যায়। ভাগ্যিস সাহেবরা এ রকম একটা গরম পানীয়ের হদিস দিয়ে ছিলেন!  অতিথি আপায়নে আমরা অহেতুক বাড়তি খরচের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি‌!

    এখনও করোনা-আতঙ পিছু ছাড়ে নি। মাস্ক নাকে সেঁটে রয়েছে। টীকা নিলেও সাবধানীর মার নেই। সিনিয়ার সিটিজেনদের ঘর-বন্দি দশা কাটতেই চায় না। খবরের কাগজ সঙ্গে চা। দুবেলা দুকাপ। কখনো আরও বেশি। ভাগ্যিস চায়ের কোনো সাইড এফেক্ট নেই। তবে অতিরিক্ত কাপ ঘুম কেড়ে নেয়। শীতে যেমন তেমন, এই গরমে চায়ের বিক্রি কমে। স্টেশন ছাড়া সর্বত্রই। সেখানে এনি টাইম ইজ টি টাইম। খালি পেটে চা বিষ পানের সমান। কিন্ত কোথায় বিস্কুট? মাল-বাহকরা কেউ শুধু চা খাওয়ালে গলে জল!

    একটি কুঁড়ি, দুটি পাতা। ফুটন্ত জলে তিন থেকে পাঁচ মিনিট। তারপর ছাঁকনি ধরে কাপে ঢালুন আর খান। দুধ-চিনি না দিলেই ভাল। ফুরফুরে মেজাজ। তরতাজা মন। কিডনি এবং হার্টের জন্য বেশ ভালো। চা পাতা যদি দার্জিলিং থেকে আসে, তাহলে তো কোনো কথাই‌ নেই। মুহূর্তে স্বর্গ নেমে আসে চা-টেবিলে। সুন্দরী মেয়েদের ধারনা - চা খেলে গায়ের রং কালো হয়ে যায়। একদম বাজে কথা। স্রেফ ভুল ধারনা। চায়ের সঙ্গে ত্বকের সরাসরি কোনো সম্পর্কই নেই।



    অনেক দিন ধরে ঘন ঘন চা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য‌ হয়। ঘুম কমে যায়। আসে অবসাদ। এ সবের জন্যে চোখের কোনে কালি পড়তে পারে। গায়ের চামড়া শুকনো দেখায়। চায়ের পরিমাণ কমালে সমস্যা থাকে না। পরীক্ষা প্রার্থনীয়!

    সকালে ঘুম ভাঙার পর এক কাপ চায়ের খোঁজ করে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন। চায়ের পরিবর্তে যারা দুধ বা হরলিক্স খান, তাদের চেহারায় কোনো তারতম্য চোখে পড়ে না। লিভার নষ্ট হয় বেশি চা খেলে, এই ধারণা একেবারেই ভুল। সিরোসিস অব লিভার পেশেন্টকে ডাক্তারবাবুরা দুবেলা দু কাপ চা খেতে নিষেধ করেছেন, এমন কথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। বড় জোর বলতে শোনা গিয়েছে, খুব গরম না খাওয়াই ভালো। পারলে ঈষৎ ঠান্ডা করে নিয়ে খান। চায়ের উপকারিতা অসীম। সে তুলনায় সাইড এফেক্ট নেই বললেই চলে! বাহ্,তাজ বোলিয়ে!

    প্রেমের সম্পর্ক স্হাপন করতে বা ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগাতে চায়ের জুড়ি মেলা ভার। বসন্ত কেবিন, কফি হাউসের দেওয়ালে কান পাতলে অনেক হাসি-কান্না আজো শোনা যায়। টেবিল-বয়েরাও অনেক ঘটনার সাক্ষী। টিপস্ দিলে কি না হয়! মিটমাট? তা-ও সম্ভব।



    বিবাদী বাগে টি বোর্ডের বিশাল অট্টালিকা। চেয়ারম্যান একজন সিনিয়র আইএএস অফিসার। হাজার হাজার মানুষের জীবিকার প্রশ্ন জড়িত। স্টেশনের চা-ওলা থেক  টি-টেস্টার, মাঝখানে অজস্র মাথা।

    পশ্চিমবঙ্গে চায়ের বাজার চলে নিলামের ওপর ভিত্তি করে। নিলাম হয় দুজায়গায়। কলকাতা ও শিলিগুড়িতে। চা-বাগান থেকে নিলাম পর্ব-মাঝখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি ধাপ। চা-বাগান থেকে প্রস্তুত হয়ে চা চলে আসে ওয়্যারহাউসে। এরপর চায়ের নিলাম ডাকা হয়। চা তিন রকম। এক, সিটিসি। এগুলি প্রধানত আসাম, নীলগিরির গোলদানা চা। এই চায়ে ভাল লিকার হয়। দুই, দার্জিলিং টি। এই চা ফ্লেভারের জন্যে বিখ্যাত। তিন, ডাস্ট বা গুঁড়ো চা। এই ধরনের চা ছোট চায়ের দোকানে বেশি চলে।

    আমাদের দেশের মধ্যে চা উৎপাদনে প্রথম আসাম। তারপরে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরল, ত্রিপুরা ও হিমাচল প্রদেশ। এছাড়াও অরুনাচল প্রদেশ, মণিপুর, সিকিম, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ সেইসঙ্গে কর্ণাটকের কিছু কিছু জায়গায় চা বাগান রয়েছে। এ রাজ্যে দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলায় লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে চা-বাগান রয়েছে। চা-পাতা তোলার কাজে মহিলা কর্মীদের সংখ্যাই বেশি। তাদের সমস্যা অনেক। সরকারি সাহায্যের কথা মাঝে মাঝেই শোনা যায়। কিন্ত তাতে চা-সুন্দরীদের কষ্ট মেটে না। এক পেয়ালা চা নিয়ে অনেকেই গল্প-কবিতা লিখেছেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলতেন, চা হচ্ছে দ্রবীভূত আহ্লাদ! প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলতেন - চা পান বিষ পান। যদিও প্রতি দিন সন্ধ্যায় বড় এক মগ চা না হলে তার চলতো না।


    Darjeeling Tea Plantation

    চায়ের দর ঠিক করেন যিনি, সেই টি-টেসটারের মাইনে শুনলে চোখ কপালে উঠবে! আরও আশ্চর্যের, টি-টেসটার পদে আসীন অধিকাংশই মহিলা। তৈরি করা রান্না চেখে যেমন সেফ  সার্টিফিকেট দেন। তেমনই চায়ে চুমুক দিয়েই টি-টেস্টার কোন চা কত দামে বিকোবে তার দাম ধার্য করে পেটির গায়ে টাগ লটকে দেন। স্রেফ চা চুমুক দিয়েই যেমন চায়ের কোয়ালিটি এবং দাম ধার্য হয়ে যায়, তেমনই অতিথি চায়ের কাপ ঠোঁটে ঠেকিয়েই সহজে টের পেয়ে যান, গেরস্ত কোন স্টাইলের জীবনযাত্রা বেছে নিয়েছেন তাঁর দৈনন্দিন পর্বে। অভিজ্ঞতা খারাপ হলে, ঢুকেই জানিয়ে দেন - "চা করবেন না। এইমাত্র কাপ নামিয়ে রেখে বাড়ি থেকে বের হলাম।"

    চা তিন রকম চেহারা নিয়ে ধরা দেয়। দুধ চা, লিকার চা এবং লেবুর রস মেশানো লেমন টি। বেশির ভাগ বাড়িতে চিনি ছাড়া, দুধ ছাড়া স্রেফ লিকার চা। এটা হেল্থ ড্রিংক্স হিসেবে নিয়েছেন অনেক চা-খোর মানুষ। দিনের মধ্যে অগুনতি বার লিকার চা গলায় ঢালছেন বলে-কয়ে। অফিস পাড়ায় পাতিলেবুর রস মেশানো লেমন-টির এই গরমে সাংঘাতিক কাটতি। ফলে, ভাতের পাতে পাতিলেবুর নাগাল পাওয়া ভার। আর ক'দিন বাদে ভোটের গরম বাড়লে পাতিলেবুর দর নির্ঘাত দশ টাকা জোড়া হবে। ভোটারদের একটু সরবৎ বই তো নয়!











    চায়ের বেচাকেনা গুড-উইল নির্ভর। লালবাজার এলাকায় অজস্র চায়ের দোকান‌। কেউ বসে মাছি তাড়াচ্ছে। সারাদিনে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি নেই। আবার কোনো দোকান শাটার তোলা মাত্র লাইন চলে যাচ্ছে বেটিঙক স্ট্রীট ক্রশিঙ পর্যন্ত। নিজস্ব চা-বাগানের সেরা দার্জিলিং টি। নাম ডাকে চিরকালই গগন ফাটে। কলেজ স্ট্রীট এলাকায় সুবোধ ব্রাদার্স স্রেফ চা বেচেই লোকের বৈঠকখানায় ঠাঁই পেয়েছে। তেমনই লালবাজারের ধ্রুব। শ্যামবাজার এলাকায় তখন চা মানেই অরফান। লাইন দেখেই লোকে দাঁড়িয়ে যেতো স্রেফ হুজুগে। তখন পাঁচ’শো টাকা কিলোর চা রাজ ভবনে লাট সাহেবের জন্যে পার্সেল হতো। সাধারণ পাবলিক লাইনে দাঁড়িয়ে কিনতো পঞ্চাশ, খুব বেশি উঠলে ষাট টাকা কিলো। ছ’টাকায় একশো গ্রাম। আজকের বাজার দর কোথায় উঠেছে তার চিন্তার বাইরে। পেট্রল-ডিজেল খবর হয়। চা পাতা বিলাস দ্রব্য। তাই খবর হয়না। পাঁচ হাজার টাকা কিলো দার্জিলিং টি খাই বললে লোকের চোখ টাটায়। নয়তো মনে মনে ভেবে বসে স্রেফ গুল মারছি। চুমুকে চমক। তার দেমাক তো হবেই। লোকে জুয়া খেলে, রেস খেলে টাকা ওড়ায়। আবার কেউ দামী চা না হলে, ঠোঁট পর্যন্ত যাওয়ার প্রশ্রয় দেয়না পেয়ালা কে।



    লঙ্কায় সোনা শস্তা। দার্জিলিং-য়ে কিন্ত চা বেশ দেমাকী। এক কাপ চা খেতে আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে দার্জিলিং মেল ধরে ছিলাম আমরা ক'জন। রিজার্ভেশন ছিল। শেয়ালদা থেকে ট্রেন। সোজা নিউ জলপাইগুড়ি। ওখান থেকে টয় ট্রেন ধরে দার্জিলিং হিল স্টেশন। প্রথমবার যাচ্ছি। সবে পঁচিশ আমরা কয়েকজন। সাহস দেখাতে দু’পা এগোয়ই তো তিন পা পেছোয়ই। পাহাড়ের ছবি দেখেছি। হিমালয়ের কোলে ওঠা এই প্রথম। কাক ভোরে এন.জে.পি পৌঁছে ছুটে গিয়ে ছেড়ে যাওয়া টয় ট্রেনের হাতল ধরলাম। সাত সকালে টয় ট্রেন ছাড়লেও তিনধারিয়া পৌঁছতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে। কারশিয়াং, ঘুম ডিঙিয়ে রাত দশটার দিকে দার্জিলিং স্টেশনে পা রাখলাম। শরীর অবসন্ন। অক্টোবর শেষ হতে চললো। কাজেই, শৈল শহরে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। কাছেই হোটেল। নাম দার্জিলিং হোটেল। পৌঁছে দেখি সবাই ঘুমে কাদা। বহু ডাকাডাকি করে সাড়া মিললো ভেতর থেকে। দু'জন যুবার দেখা মিললো। একজন বললো – “মকর মেরা নাম”। আর একজনের নাম - বদরী। চিঠিপত্র দেখাতে হল না। ঘর মিললো। সঙ্গে গরম পানি। তবে নো ডিনার। আশা ছেড়ে দিয়েছিল। তাই কিচেন সাফ। অগত্যা সঙ্গে থাকা না-খাওয়া পাউরুটি আর বাজে চা। তবে বেশ গরম। ওই দিয়েই পেটকে শান্ত ‌করে মোটা কম্বলের ভেতর আশ্রয় নিলাম। পরদিন বেশ বেলায় ঘুম ভাঙলো। মকর গরম পানি দিয়ে গেল। ব্রেকফাস্ট নিয়ে এল বদরী। গরম ডাবল ডিমের ওমলেট সঙ্গে পাউরুটি টোস্ট। তারপর চায়ের পট। কোথায় দার্জিলিং টি? ফুটন্ত গরম পানিতে খয়েরি আভা। যাচ্ছে তাই চা। প্রশ্ন করতেই এক গাল হেসে জানালো - আসল দার্জিলিং চা সবই বাইরে চলে যায়। ভাল চা খেতে হলে ম্যালে চলে যান। ওখানে একটা দোকানেই অরিজিনাল দার্জিলিং টি অর্ডার দিলে পাবেন।‌ তবে দাম অনেক। সত্যিই তাই। সাতদিন পাহাড়ের হিম মাখা চা বাগানের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়ুলেও সেই সোনালী চায়ের চেহারা  এবং সুবাস থেকে আমরা আগাগোড়া বঞ্চিতই থেকে গেলাম।

    কাঞ্চনজঙ্ঘা, টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয়, মিউজিয়াম, ফুলের বাগান, চড়াই-উৎরাই কম হল না। দার্জিলিং হোটেল দৈনিক মাত্র মাথা পিছু পনের টাকা নিয়ে সপ্তাহ ভর কি যত্নটাই না করল! শুধু মনের মতো এক কাপ চা খাওয়াতে পারলো না।

    চলে আসার আগের সন্ধ্যায় এক রকম জেদ করেই আমরা পৌঁছে গেলাম সেই ঝা চকচকে দার্জিলিং টি-কর্নারে। ম্যালে উঠতে একেবারে বাঁ দিক ঘেঁষে দোতলা সুদৃশ্য বিল্ডিং। কাঁচ দিয়ে ঘেরা জানালা। কর্মীদের অভ্যর্থনা মুগ্ধ করার মতোই। সাত জন একটা কোণ ঘেঁষে বসে গেলাম। খানিক বাদে শাদা ইউনিফর্ম পরা একজন যুবক মেনু কার্ড হাতে সামনে এসে দাঁড়াল। ভিড় সেরকম ছিল না। কলকাতার চা-প্রেমীদের দেখা গেল। নব-বিবাহিতরাও নজর এড়ালো না। অনেকেই এসে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে - "দার্জিলিং বেড়াতে এসে সেই ফ্লেভারের চা  খেতে পেলাম না। দামী হোটেলে উঠেছি। লাঞ্চ-ডিনার ইচ্ছে মতো পাচ্ছি। কিন্ত বেড-টি মুখে তুলতে ইচ্ছে করে না। যতবার চা চাই, যাচ্ছে তাই রকমের বাজে - চা। এর চেয়ে কলকাতায় বসে আমরা ঢের ভালো চা খাই।" আরেক জন বললো, "শুনেছি সাহেবদের মতে, এ জেন্টেলম্যান ইজ নোন বাই দ্য কোম্পানি হি কিপস। আমি মনে করি, এ জেন্টেলম্যান ইজ নোন বাই হিজ টি - টেস্ট। নেশা যদি করতেই হয়, দার্জিলিং -টি ইজ দা বেস্ট"।



    অবশেষে চা এলো। সবার জন্যই দাম এক। পাঁচ টাকা কাপ। তৈরি চা। শুধু কাপে  ঢেলে নাও। দুধ। চিনির পট সামনে বসানো। লাগলে নিতে পারো। আমাদের দুধ, চিনি কিছুই লাগলো না। স্রেফ সোনালী লিকার। ভুরভুর করছে গন্ধ। সামনে সুউচ্চ হিমালয়। কোলে গাঢ় সবুজ চা-বাগান। "আহা, এই ঘ্রাণ সারা জীবন আমাদের নাকে লেগে থাকুক!" দিদি জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়ের আবেগ কি হিমালয়ের কানে পৌঁছলো?

    টি-টেসটারদের সৌভাগ্য দেখে ঈর্ষা হয়! ল্যাম্প লাইটার নয়, সাংবাদিক ও নয়,পর জন্ম বলে যদি কিছু থেকে থাকে, এই প্রতিবেদক স্রেফ একজন চায়ের ঘ্রাণ-পরীক্ষক হতে চায়! চুমুকে চমক! দেয়ার ইজ নাথিং লাইক এ থ্রিল। রোমাঞ্চ ছাড়া জীবন হয় নাকি? সকালে উঠে চায়ের পেয়ালা তোমাকে চাই। তোমাকেই চাই।

    “You can never get a cup of tea large enough or a book long enough to suit me.” — C.S.Lewis


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • manimoy sengupta | ২৩ মে ২০২১ ১৭:৫৯106364
  • লেখকমশাই, চা  নিয়ে ভালোই লিখেছেন। কিন্তু শুরুতেই এইডা কী কল্লেন। এ্যাতো ভুলভাল লিখলেন। খন্যান স্টেশন শিয়ালদা ডানকুনি কর্ডলাইনে। এমন আজগুবি তথ্য কোত্থেকে পেলেন? খন্যান হাওড়াবর্ধমান মেনলাইনের স্টেশন।  ঠিক করে নিন। গুচতে লেখা সম্পাদিত হয়না ?  নাকি আপনারা লোকাল ট্রেনে  চড়েননা? 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন