এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সরস্বতী 

    Bandana Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৫৯৫ বার পঠিত
  • মা ভাবেন লোকে মেয়েকে তাঁর আদর করে লক্ষী বলে, সরস্বতী বলে না কেন? লক্ষীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ধন, শ্রী, সম্পদ এবং সবার ওপর ঘরকন্নার চাবিকাঠিটি। সুগৃহিণী হওয়ার আশীর্বাদ। লক্ষীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সঞ্চয়, ধানের ছড়া, খড়ের আঁটি, ঝাঁপিতে এক মুঠো চাল, সিঁদূর মাখানো একটি দুটি টাকা – অসময়ের ভরসা। লক্ষী হলেন নারায়ণের সহধর্মিণী, তাঁকে নিয়ে কত ব্রতকথা, কত পুরাণ, কত গল্প। মেয়েকে তো মানুষ করা হয় পরের ঘরে যাবার জন্য, অভাবের সংসারে উপবাসে থেকে পানের রসে ঠোঁট লাল করে অতিথি অভ্যর্থনা, ভালো মন্দ পাঁচটা কথা শুনে সকলকে মানিয়ে নিয়ে ঘরকন্না করা - এসব তো মা লক্ষীরাই করে থাকেন।

    আর সরস্বতী ? তিনি যেন কেমনতর! একে তো সাদা শাড়িতে ঢাকা সর্বাঙ্গ, গয়নাগাঁটি আছে কি নেই বোঝা যায় না, হাতে দিব্যাস্ত্র নেই, টাকার ঝাঁপি নেই, থাকার মধ্যে আছে বই আর বীণা । মেয়েমানুষ ও দুটো অকাজের জিনিষ নিয়ে করবে কি? ঠাকুরুণটি সধবা না বিধবা নাকি পতি পরিত্যক্তা ডিভোর্সী – তাও তো বোঝা যায় না! কেউ বলেন ব্রহ্মার ঘরণী আবার কেউ বলেন নারায়ণের। ঘরণী যাঁরই হোন না কেন, ঘর যে কারোরই করেন না সেতো দেখলেই বোঝা যেয়। কেমন অহংকারী টরটরে দাঁড়িয়ে থাকেন ড্যাম কেয়ার দৃষ্টি ফেলে। বাহন দেখুন – রাজ হাঁস – সারাদিন সাঁতার কেটেও যার একটা পালকও জলে ভেজে না! বোঝাই যায় এ দেবী অসুরদলন করে সংসারের জঞ্জাল সাফও করবেন না আবার টাকার ছালা নিয়ে সারা রাত ঘুর ঘুর করে দেখতেও যাবেন না যে কে জেগে পাশা খেলছে। জোর জবরদস্তি করলে বড়জোর অসুরদের হাতে গোটা কয়েক বই টই তুলে দিয়ে গান টান শোনাতে বসতেন। সেই শুনে রত্নাকরের মত হয়তো অসুর দানবরাও ধনরত্নের বোঝা ছুঁড়ে ফেলে দেবভাষায় গেয়ে উঠতো –

    মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
    যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।।

    প্রেমের পবিত্র মিথুনমূহূর্তে প্রাণকে হত্যা করা পাপ। এই পাপের ক্ষমা হয় না।

    বিষ্ণু, শিব, ইন্দ্র, বরুণ সবাই চিরদিন পাপীর বিনাশ করে এসেছেন, দৈত্য দানব অসুরকে বজ্র, চক্র, গদা হেনে ধ্বংস করেছেন । কিন্তু দস্যু রত্নাকরকে ঋষি বাল্মীকি – না মশাই এই সৃষ্টিছাড়া কাজটি আমাদের এই সৃষ্টিছাড়া ঠাকুরুণ বই আর কেউ করেছে বলে শুনিনি। শরীরি মিলনকে একান্ত পবিত্র বলে ডিক্লেয়ার করা – সেও তো এই শুভ্রবসনা , প্রিম অ্যান্ড প্রপার, শান্ত, গম্ভীর‌ বাগদেবীর জাজমেন্ট।

    সৃষ্টির ঊষালগ্নে কে জানে কোন কৌতুকপ্রিয় বিধাতা বিদ্যা, জ্ঞান ও সঙ্গীতের দায়িত্ব চাপিয়ে দিল এই আমাদের বাউন্ডুলে, সাদামাটা, ঘরকন্নায় অপটু, মেধাবী, মনস্বিনী দেবীটির উপর! হয়তো এলেবেলে বলে কোন গ্রাম্ভারী দেবতা নিতে চায় নি এই পোর্টফোলিও। কি ভাগ্য আমাদের, এ দেশের মেয়েদের। তাই তো প্রথম প্রতিশ্রুতির সত্যবতী সদর্পে বলতে সাহস পায় – পড়াশোনা শিখলে মেয়েদের পাপ হবে কেন? বিদ্যের দেবী সরস্বতীই তো মেয়েমানুষ। তাই তো অনেক যুদ্ধ করে মেয়েদের হাতে আংটি কি কাঁকনের বদলে বর্ণপরিচয় তুলে দেওয়া এক “ফলারে বামুন” আজ বেঁচে থাকলে কি খুশিই না হতেন। মেয়েরা শুধু দশপ্রহরণধারিণী দুর্গা বা সংসারে শ্রী, সম্পদ আনয়নী দেবী লক্ষী হয়ে আর খুশি থাকছে না। তারা বীণা পুস্তক রঞ্জিত হস্তে মহাশ্বেতা সরস্বতী হতেও চাইছে।

    মা তাঁর মেয়ের হাতে চক খড়ি তুলে স্লেটে লেখাচ্ছেন অ আ আর গুণগুণ করছেন

    “ বুদ্ধিমতী বিদ্যেবতী
    কন্যে আমার সরস্বতী। “

    বলছেন আমাদের লক্ষী মেয়ে আর চাই না। ঘরে ঘরে সরস্বতী জন্মাক।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন