এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ডাউন মেমরি লেন---- এক শহরের গপ্পো। 

    Sabyasachi Sengupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৭৯৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • আমাদের ছিলো ছবির মতো শহর। তার উত্তর দক্ষিণ পূব পশ্চিম ব্যেপে সরল ও সমান্তরাল প্রশস্ত পিচরাস্তার সারি। উত্তরদক্ষিণের সাথে পূবপশ্চিমের রাস্তাগুলির ছেদন ছিলো সমকোণে। ঝাঁ চকচকে কালো পিচরাস্তার ধারে লাল মোরামের ওয়াকওয়ে আর তার পাশ দিয়ে ঘাসের সবুজ। ছিলো বীথিপথ আর টলটলে জলে ভরা অনেক কাকচক্ষু চতুষ্কোণ দিঘি।


    রাজ্যপাট না থাকলেও রাজা রানী ছিলেন। বিশাল রাজপ্রাসাদ ছিলো বাকিংহাম প্যালেসের রেপ্লিকা। পিলখানায় হাতি ছিলো, আস্তাবলে ঘোড়া আর কারশেডে রাজকীয় মোটরকার। পূর্বতন রাজসরকারের করণ, কাছারি স্কুল কলেজ আর রাজন্যবর্গের বাড়িগুলি ছিলো সাহেবি বাংলো ধাঁচের, লাল ইঁটের,পাকাছাতের।গেরস্তবাড়িগুলি ঝকঝকে লালটিনের একচালা বা দোচালা। সামনে ফ্লাওয়ার গার্ডেন, পিছনে কিচেন গার্ডেন।


    আমাদের জন্মের বছর পাঁচেক আগে এক পরিবর্তন হয়েছিল। সে ঝটকায় ব্রিটিশের মিত্র-করদ রাজ্যের রাজধানীর রূপান্তর ঘটেছিল মাত্র দু বছর বয়সী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের নবীনতম শহরে। স্বাধীন রাজার রাজ্য হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের এক জেলা।শোনা যেত, এ রাজ্যের পাকিস্তানে যোগদানের সম্ভাবনা দেখা দেওয়াতে নাকি প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জহরলাল নেহরুর অনুজ্ঞায় আর্মি হেলিকপ্টারে উড়ে এসে তৎকালীন মেজর জেনারেল জে এন চৌধুরী মহারাজাকে গান পয়েন্টে রাজি করিয়েছিলেন ইণ্ডিয়ান ইউনিয়নে যোগদানের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করতে। 


    আমাদের জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ যখন হচ্ছিল, তখনো এ শহরের আকাশে বাতাসে একটা রাজকীয় হ্যাং ওভার। শেষ হয়ে যাবার পরও যেমন অম্বুরি তামাকের মদির গন্ধের রেশ ঘরের আবহাওয়ায় মিশে থেকে যায়। জীবনের যাপনগতি এখানে যেন একটু ঢিলেঢালা, একটু সহজিয়া সুরে বাঁধা ছিলো। নতচোখে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে চলতো না মানুষ। দৃষ্টি যেন জিহ্বা হয়ে আমূল আস্বাদন করতো চারপাশের প্রকৃতি ও মানুষজনের রূপরসগন্ধ।


    প্রতিটি শহরেই যেমন থাকে,এ শহরেও তেমন বিভিন্ন পেশা ও মননের মানুষের পাশাপাশি এমন কিছু মানুষ ছিলেন,যাঁরা হাবেভাবে অধিকাংশ মানুষের চেয়ে একটু অন্য ধরণের, একটু আলাদা ধরণের। তাঁদের বিচরণ ছিল চেতনার ভিন্নতর 


    কোনো স্তর বা মাত্রায়, ভাবকুয়াশার এক ধূসর জগতে। এঁদের কেঊ কেউ ছিলেন সম্পূর্ণ বাহ্যজ্ঞানরহিত,এ জগতের পারমানেন্ট বাসিন্দা। কারো আবার জ্ঞানের নাড়ী এমনিতে টনটনে। কিন্তু আদতে অপশনাল কিংবা ইনডিউসড ভাবপথিক। সময়সুযোগ, গ্রহনক্ষত্রের সঠিক সংস্থান দেখে ইচ্ছে হলে কিংবা ঠিকঠাক উদ্দীপনায় প্রভাবিত হলে ভাবকুয়াশার জগতে বেড়াতে আসতেন। কেউ বা যেন কবিভাষ্যে যে জন আছে মাঝখানে। দু জগতে দুই পা রেখে দিব্যি থাকতেন বুঁদ। শহরের চলতি ভাষায় এইসব বিচিত্র মানুষদের ডাকনাম ছিল পাগল ; সস্নেহ প্রশ্রয়ে পাগলা।


    এখানকার পাগলেরা যে গর্ব করবার মতো এবং কমপিটিশন হলে যে অন্যান্য জনপদ তাতে হেদিয়ে হারবে, এ বিষয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র সংশয় ছিলো না।তা সে কমপিটিশন কোয়ান্টিটি কোয়ালিটি বা ভ্যারাইটি যা নিয়েই হোক না কেন।“পাগল কি আর একটা দুইটা এইখানে ? পাগল হইল গিয়া পিত্যেক অলিতে একটা পিত্যেক গলিতে দুইটা”। পাগলামির দিন সকালবেলা গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে মোশন ডিক্লেয়ার করতো খোকনদা। সমর্থন বা বিরোধিতা কোনোটা নিয়েই কোনো চাপ ছিলো না তার। কিন্তু কেউ যদি জিজ্ঞেস করতো ‘অলি মানে কি?’ ব্যস। মুহূর্তের মধ্যে খোকনদার 


    সুইচ অন। হেড অফিসের বড়বাবু সিনড্রোম। ‘আঁতকে উঠে হাত পা ছুঁড়ে চক্ষু করে গোল....’।  খোকনদাকে বন্ধুরা ডাকতো, পাগলা খোকন। অলি নামে এক যুবতীর ব্যর্থ প্রেমে মজে নাকি ও অপশনাল হয়েছিল। স্টেট ট্রান্সপোর্টের কেরানিগিরি আর কখনোসখনো ফুটবল ম্যাচে লাইন্সম্যানগিরি এ দুয়ের মাঝে ছুটোছুটিতে হাঁপিয়ে উঠলে দু এক কদম ভাবজগতে বেড়িয়ে আসতো সে।  


    মুকুলদা আবার ‘যে জন আছে মাঝখানে’। সবসময় চোখে স্বপ্নঘোর, মুখে ঢুলুঢুলু হাসি।  চানটান সেরে খেটো ধুতি আর উত্তমকুমার গেঞ্জি গায়ে বাড়ির গেটে বাঁধানো বেদীতে বসে থাকতো সকাল থেকে সন্ধে। দুপুর একটা থেকে বিকেল চারটা, মানে লাঞ্চ আর দিবানিদ্রার এই সময়টুকু বাদে।বগলে আগের দিনের যুগান্তর। চেনা হাফচেনা মুখচেনা যে কোনো লোক সামনে দিয়ে গেলেই মুকুলদা তার গতিমুখ অনুযায়ী একটিমাত্র প্রশ্ন করতো। পশ্চিম থেকে পূবে হলে ‘কই চইললা’ আর পূব থেকে পশ্চিমে হলে,‘কই গিছিলা’? আমাদের বন্ধু ছোটকা প্রতিদিন সকাল আটটায় মুকুলদার বাড়ির সামনে দিয়ে পশ্চিম থেকে পূবে হেঁটে শুকনো গামছা গায়ে দিঘিতে চান করতে যেতো। ঘন্টাখানেক পর চান সেরে উল্টোপথে ফিরতো ভিজে গামছা গায়ে। রোজ যাওয়াআসার পথে দুবার দুই প্রশ্নের উত্তরে একই কথা অর্থাৎ দিঘি বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে সে একদিন ‘কই গিছিলা’র জবাবে ভিজে গামছা নিংড়োতে নিংড়োতে বলে উঠেছিল, ‘এই একটু বাজারে গিছিলাম’। অমনি সুইচ অন্ মানে,আঁতকে উঠে হাত পা ছুঁড়ে চক্ষু করে গোল..... , বগলের যুগান্তর পাকিয়ে ছোটকার দিকে ছুটে আসতে গিয়ে হঠাৎ স্ট্যাচু। কারণ অকুস্থলে মিন্টুদার আগমন, গামছা কাঁধে সেও চলেছে দিঘিতে, পশ্চিম থেকে পূবে। মুহূর্তে মুকুলদার অ্যাটির পরিবর্তন। ফিরে এল তার মুখের ঢুলুঢুলু ভাব আর চোখের স্বপ্নঘোর,মুঠোয় উঁচিয়ে ধরা পাকানো যুগান্তর ব্যাক টু বগল। মিহিসুরে তারপর মিন্টুদাকে প্রশ্ন, ‘কই চইললা ?’


    পরিমলদাকে জন্ম থেকেই চিনতাম।হাইট মেরেকেটে চার ফুট।গায়ে বোতামখোলা ঢলঢলে হাফহাতা শার্ট, পরণে ততোধিক ঢলঢলে খাকি হাফপ্যান্ট।পায়ে দেড়া সাইজের চটি। প্রতিটি বাড়িতে তাঁর অবারিত দ্বার। যখনতখন ‘বৌদি, লাল চা,’ হাঁক দিয়ে যে কোনো বাড়িতে ঢুকে যেতেন। আমাদের বাবা কাকারাও তাঁকে সামনাসামনি পরিমলদা বলেই ডাকতেন। আড়ালে, ‘পরিমল পাগলা’। পরিমলদার কিন্তু যতো ভাব, যতো প্রাণের কথা ছিলো আমাদের মতো ছোটোদের সাথে। আমাদের বলতো ‘জানিস, আমি কিন্তু বেঁটে না, ছোটো ।ইচ্ছা কইরাই লম্বা হই নাই। আসলে লম্বা হইলেই যে বড়ো হইতে হয় আর বড়োরা যে আসলে বড়ো না সেইটা আবার বড়োরা বুঝেনা। বলতে বলতে হাসতে শুরু করতেন। স্বর চড়তো উদারা, মুদারা, তারায়। হিহি থেকে শুরু হয়ে হেহে হোহোর বাঁক পেরিয়ে নিমেষে হা হা অট্টহাসিতে পৌঁছে যেত। আমরা এ ওকে চোখ মটকে বলতাম পাগলা খেপেছে। বহু বছর পর একবার শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবিস্মরণীয় পংক্তি, ‘আসলে কেউ বড়ো হয়না বড়োর মতো দেখায়’ --প্রথম পড়বার সময়ে, আর একবার গুন্টারগ্রাসের টিন ড্রাম উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট অস্কারের সাথে পরিচিত হবার সময়ে,  মাথার ভিতরে পরিমলদা হেসে উঠেছিলেন।


    ইরিগেশনের নতুন চীফ ইঞ্জিনিয়ার অবাঙালী। পরিমলদাকে চিনতেন না। একদিন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাকে বাংলোর বাগান থেকে বের করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘পাগলা কাঁহিকা’। পরিমলদার অপরাধ, কাউকে না বলে বাগানের ফুল ছেঁড়া। এই ঘটনার কিছুদিন পর পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু এ শহরে এলেন। হুডখোলা জীপে দাঁড়িয়ে পথের দুপাশে উপচে পড়া জনতার অভিবাদন নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কনভয় ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে এহেন সময় ভীড় ঠেলে এক লম্ফে  রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়ালো পরিমলদা। একেবারে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির সামনে। গোড়ালিতে গোড়ালি ঠুকে অ্যাটেনশন হয়ে দিল এক স্যালুট তারপর গড়গড় আউড়ে গেল পরবর্তীকালে শহরে ভাইরাল হয়ে ওঠা স্বরচিত ইংরিজি কবিতা, ‘স্যার, ইরিগেশন সিটিং টাইট / ডুয়িং নাথিং / ইটিং ব্রাইব’। পণ্ডিত নেহরু পাশে দাঁড়ানো ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হু ইজ হি ?’ ম্যাজিস্ট্রেট মশায়ের তখন মুক্তকচ্ছ দশা। প্রধানমন্ত্রীর সামনে এ’রকম ল্যাজে গোবরে!! পারলে পরিমলদাকে চিবিয়ে খান। আমতা আমতা আর দাঁত কিড়মিড়, এই দুয়ের মাঝামাঝি স্বরে বললেন, ‘লোকাল লুনি স্যার, হাফ ম্যাড’। পরিমলদার সদর্প ঘোষণা,‘আমি যদি হাফ ম্যাড তো ইউ আর ফুল ম্যাড’।  


    শহরের হেথা হোথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন আরো আরো ইচ্ছাধারী, উদ্দীপিত আর  মধ্যবর্তীরা। পাড়ার মোড়ের বাঁকে সীতারাম ঠাকুর কপালে তিলক কেটে, টিকিতে ফুল বেঁধে অপেক্ষা করতো স্কুলে যাওয়ার পথে আমরা তাকে খেপিয়ে  যাবো বলে। তাকে খেপানো ছিল খুব সোজা। প্রথমেই বলতে হতো, ‘জয় সীতারাম’। সে উত্তরে বলতো, ‘সীতারাম নেহি , বোলো জয় সীয়ারাম’। পালানোর জন্য রেডি হয়ে তখন আমাদের চেঁচানোর পালা, ‘টিক্কি মে রাধেশ্যাম’। অমনি পাগলামি চেগে যেতো তার হৃৎকমলে। মালকোঁচা এঁটে বিকট মুখব্যাদানে সে ধেয়ে আসতো আর আমরাও চোঁ চাঁ। জমজমাট একখানা চেজ এ্যাণ্ড রান গেম। পরে বড়ো হয়ে যখন আমাদের ল্যাজ গজালো, সীতারামের সাথে এক ছিলিমে তামাক খেতে খেতে জেনেছিলাম তার খেপে যাওয়াটা আসলে ইষ্টনাম ‘রাধেশ্যাম’ বাচ্চাদের মুখে শুনবার ছল। এই ইচ্ছেপাগলের লক্ষ্য ছিল প্রতিদিন অন্তত ১০৮ বার রাধেশ্যাম ডাক শোনা। খ্যাপামির মান উন্নত করবার নিরন্তর এক চর্চা চলতো তার ভিতরে, কারণ কোয়ালিটি যেদিন বেশি ভালো হতো সেদিন ১০৮ এর লক্ষ্যমাত্রা যেতো পেরিয়ে। ‘একদিন পানশও তক্ গিণা থা’ প্রচ্ছন্ন গর্বে অর্ধনিমীলিত চোখ চিকচিক, কলকেফাটা দম দিয়ে ভক্ ভক্ ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে জানিয়েছিল সীতারাম, ‘বস্, হমরি কাম বন্ গইল্ বা’, যেন এ জগতে আর কিছু চাইবার ছিলো না তার।


    উৎপল স্যার, বাংলা ইসকুলের একদা তুখোড় অঙ্কের মাস্টারমশাই,পথ চলতে চলতে আঙুল দিয়ে আঁক কষতেন হাওয়ায়। বিড়বিড় করে আউড়ে যেতেন ক্যালকুলাস আর অ্যালজেব্রার ফরমূলা। অঙ্ক তাঁর মাথার ভিতর ঢুকে গিয়েছিল যেন মারণ ভাইরাসের মতো। আমরা যখন ক্লাস ওয়ান টুতে তাঁকে দেখেছি তখন তাঁর তুরীয়দশা। মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে ঝুঁকে পড়েছেন ভাবকুয়াশার দিকে। ক্লাসে এসে কিছু করাতে পারতেন না। চেয়ারে বসে বাঁহাতে কখনো নিজের নোংরা পাঞ্জাবীর বোতাম টানতেন, কখনো টাকের পাশের চুল খামচাতেন। সিনিয়র টিচারেরা তাঁকে ঠেলেঠুলে ক্লাসে পাঠাতেন যাতে গরীব বামুনের সরকারী চাকরিটা বজায় থাকে। কোনো ফাতরা বালকের, অঙ্ক মিলেছে কিনা, প্রশ্নে তাঁর বিড়বিড় করে স্টক উত্তর ছিল, ‘কি কইরা মিলব ? শূইন্য যে শুধু শূইন্য না রে পাগলা’। অনতিকাল পরেই তিনি ভাবকুয়াশার জগতের পারমানেন্ট বাসিন্দা হয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন কোনো অ্যাসাইলামে।


    বায়োলজি টিচার অমল আইচ স্যারের  অনায়াস গতায়াত ছিলো দুই জগতে। তিনি সম্ভবত সেই বিরলতম গোত্রের মানুষ যিনি একই সাথে দু জগতে থাকতেন। তাঁর পি.এইচ.ডির থিসিস নাকি চুরি হয়ে গিয়েছিলো। সাদা কটনের ফুলপ্যান্ট আর ঐ একই কাপড়ের শার্ট ছিল তাঁর নিত্যদিনের পরিধেয়। পায়ে সাদা কেডস্। প্রতি সপ্তাহে জুতোজোড়াতে হাফসোল লাগাতেন। কারো সাথে কখনো তাঁকে কোনো কথাবার্তা বলতে দেখা যেতনা। সারাক্ষণ,প্রায় সারাক্ষণ বিড়বিড় করে কথা বলতেন নিজের সাথে, শুধু ক্লাসের সময়টুকু ছাড়া। ক্লাসে তাঁর উদাত্ত লেকচার ছাত্রদের মাথার উপর দিয়ে হায়ার সেকেণ্ডারির সীমানা পেরিয়ে কোন এক সুদূরে যেত হারিয়ে। তিনি এ শহরের মানুষ ছিলেন না। কেউ দ্যাখেনি তাঁর পরিবার পরিজন। থাকতেন স্কুল হস্টেলের একটি ঘরে, একা একা। কেউ যদি তাঁকে কখনো জিজ্ঞেস করতো, ‘কেমন আছেন, মিস্টার  আইচ?’ তাঁর অবধারিত উত্তর হতো, ‘দুজনেরই পায়খানাটা পরিস্কার হয়নি। বডিরও না, সোলেরও না’।


    শহরে ভাবকুয়াশার জগতের পারমানেন্ট বাসিন্দাদের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় আর রোমাঞ্চকর চরিত্র ছিলেন কনক পাগলা। তাঁর ঊপস্থিতি, হাঁটাচলার মাঝে এক অনায়াসলব্ধ রাজকীয়তার আভাস ছিল।বালক বয়সে আমরা তাঁকে সন্ত্রাস ও সম্ভ্রমের এক অদ্ভুত মিশেল থেকে দেখতাম। খোলা আকাশের নীচে রোদ ঝড় বৃষ্টির লালনে পরিপুষ্ট লম্বা,সুঠাম চেহারা। চিকন কালো শরীরে আর মুখে ধূলোমাটির পুরু পলেস্তারা। কাছ থেকে ঠাহর করলে ধূলোমাটির ঢাকা ভেদ করে দেখা যেত তাঁর যীশু বা লাদেনের মতো গভীরগহন দুই চোখ, সুদূরে উধাও দৃষ্টি এতো শান্ত, যেন ভাষাহীন। কাঁধে বোঁচকা, পরনে কৌপীন, পিঙ্গল চুল দাড়ির মধ্যবয়স্ক মানুষটি যখন হন্ হন্ করে হাঁটতেন শহরের রাস্তায়, রাস্তাই যেন তাঁকে পথ করে দিতো। সামনের মানুষজন, যানবাহন আপনা থেকে দুভাগ হয়ে দুধারে সরে দাঁড়াতো আর মাঝখান দিয়ে প্রায় উলঙ্গ বিন্দাস মানুষটি ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে হেঁটে যেতেন তাঁর অনির্দিষ্ট গন্তব্যের  দিকে। কারো সাথে কোনো কথা বলতেন না তিনি। যখন খিদে পেতো, শহরের যে কোনো হোটেলের সামনে আসনপিঁড়ি হয়ে বসে পড়তেন। কনক পাগলাকে ঘিরে অসংখ্য চালু মিথের একটি এই ছিল যে তাঁকে খাওয়ালে হোটেলমালিকদের পরলোকের পুণ্য তো গ্যারান্টেড বটেই, প্লাস বোনাস হিসবে খাওয়ানোর দিনগুলিতে লক্ষ্মী ছপ্পর ফুঁড়ে নেমে আসেন হোটেলের ক্যাশবাক্সে। তাঁরা সবাই তাই আলাদা আলাদা টেনশনে থাকতেন কনক পাগলার আগমনের আকাঙ্খায়। তিনি কবে কোথায় কখন খেতে আসবেন, আদৌ আসবেন কি না,এলেও খাবেন কি না, খেলে কতোটা খাবেন, কতটা ছড়াবেন বা বিলোবেন, কাকেদের নাকি কুকুরদের মাঝে, কিংবা অক্লেশে হাওয়ায় ছুঁড়ে দেবেন অন্নব্যঞ্জন ভর্তি থালা, এমনতরো আরো হাজারো সম্ভাবনার কাঁটায় পীড়িত হতে হতে সময় কাটতো তাঁদের।   


    কনক পাগলা ছিলেন যত্রসায়ং, যেখানে সন্ধে,সেখানেই নিশিযাপন।কখনো কোনো চৌমাথার মোড়ে গাছের নীচে, কখনো অফিসবাড়ির বারান্দায়, কখনো দিঘির ঘাটে বা বাজারে, আবার কখনো বা ঠাকুরবাড়ির বাইরের চাতালে। আপনি আর কোপনি ছাড়া তাঁর বোঁচকায় অনির্দিষ্ট কিছু টুকিটাকির সাথে ছিলো একটা ভাঙা বাঁশী, যা তাঁর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী ছিলো ভাবকুয়াশার এ জগতে প্রবেশের আগে।   


    তাঁর বোঁচকায় আরো ছিলো বাচ্চাদের জন্য একরাশ অন্ধকার ভয়। রাস্তা দিয়ে কনক পাগলা হেঁটে গেলে আশেপাশের প্রতিটি শিশু খুঁজতো নিশ্চিন্ত,নিরাপদ আশ্রয়। খেতে,ঘুমোতে না চাইলে কিংবা ঘ্যান ঘ্যান করলে মা ঠাকুমার কাছে তারা সে বোঁচকার অন্ধকার ভয়ের কথা অনেক শুনেছে। হয়তো তাই বালককিশোরদের মনে তার প্রতি একটা শত্রুতার ভাব আপনাআপনি গজিয়ে উঠতো। ওই বয়সে আমরাও কি করে যেন জেনে গিয়েছিলাম কনক পাগলাকে খ্যাপাতে হয় আর তিনি তাড়া করলেই ঢিল ছুঁড়ে ছুটে পালাতে হয়। খেপানোর ট্যাগলাইনটা ছিলো, ‘ক....নো....ক পাগলা /মুর্গি..ই..ই চোর’। প্রায়ই আমরা মুঠোভর্তি পাথর আর স্বরভর্তি শ্লোগান নিয়ে তাঁর পিছু পিছু ছুটতাম বটে, কিন্তু অনেক অনেক পিছনে। তিনি সাধারণত ভ্রূক্ষেপই করতেন না। সেই হাঁথি চলে বাজার...এর সিনারিও। যদি বা কখনো তিনি ঘুরে দাঁড়িয়ে উসেইন বোল্টের ক্ষিপ্রতায় তাড়া করবার ভঙ্গিতে এগিয়ে আসতেন,ঝপ করে যেন নামতো ভয়ের আঁধার,আমরাও কোনোভাবে পাথর ফেলে একহাতে পেন্টুল চেপে স্টেরয়েড নেওয়া বেন জনসন হয়ে দে দৌড়, দে দৌড়। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে অলিখিত চুক্তি ছিলো, যে ঢিল ছুঁড়ে কনক পাগলার গায়ে লাগাবে, সেই হবে লীডার। আমার স্মরণকালের মধ্যে সাহস করে এই ক্রাইটেরিয়াতে উত্তীর্ণ হয়ে কেউ এই লীডারশীপের দাবি জানায় নি কখনো। এখন পিছনের দিকে তাকালে মনে হয়, ওই মুর্গি চোর ডাকে খেপে ওঠাটা কি সত্যিই খেপে ওঠা, না কি তার অন্য কোনো নিগূঢ় মাত্রা ছিলো ? না কি তা শিশুদের খেলা দেওয়া ? কারণ সবসময়েই তাঁর তাড়না দু তিন কদম দৌড়নোর পরেই শেষ হয়ে যেত।হা হা রবে হাহাকারের মতো হেসে  তিনি আবার ডুব দিতেন ভাবসাগরের অতলে। কেন যে তাঁকে মুর্গিচোর বলা হতো, তা ছিলো বস্তুতইএক ধাঁধাঁ। কিংবা রহস্যের খাসমহল। তাঁর চলাফেরা, চেহারা,শান্ত দৃষ্টি,ঝোলার ভিতর ভাঙা বাঁশি সবকিছুর সাথেই মুর্গি চোরের ইমেজের ছিলো ব্যাপক অমিল। শৈশবে এ রহস্যের সমাধানসূত্রের সন্ধানে আমরা নিরলস গবেষণা আর অনুসন্ধানে দীর্ঘদিন ব্যাপৃত থাকলেও জানতে পারিনি কিছুই।অবশেষে মার্কুয়েজের ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস্ অফ সলিচ্যুডে তাঁর এক অ্যানালগের সন্ধান পেয়ে পুলকিত ও রোমাঞ্চিত বিস্ময়ে বুঝেছিলাম যে সার্থক শিল্পীর অন্তর্দৃষ্টি চুটকিতে তুচ্ছ করে দিতে পারে দেশকালসীমানার গন্ডী। সে উপন্যাসে এক নিঃসঙ্গ প্রেমিকপ্রবর বুকভরা প্রেম আর সামনে পিছনে হলুদ প্রজাপতির ঝাঁক নিয়ে হোসে আর্কাদিও বুয়েন্দিয়ার বাড়ির স্নানঘরের পিছনের জঙ্গল, ঝোপঝাড়ে সুগন্ধী ফুল ফোটাতে ফোটাতে  প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে আসতো রেমেদিওস,দি বিউটির নগ্ন স্নানদৃশ্যে মোহিত হয়ে তাকে প্রেম নিবেদন করবে বলে। প্রতিদিন, কারণ,সেই অলোকসামান্যা সুন্দরী সারা বছরে মাত্র একদিনই স্নান করতো এবং তা যে ঠিক কোনদিন, সে বিষয়ে কোনো তথ্যতালাশ কারো জানা ছিলনা। লগ্ন ও তারিখ নির্ধারিত হতো সুন্দরীর খেয়ালখুশিতে। বছরের অন্যান্য দিনগুলিতে রেমেদিওস দি বিউটি তার অপার্থিব আগুন সৌন্দর্য ঢেকে রাখতো অযত্নলালিত অবহেলায় ধূলিধূসরতার অপরিচ্ছন্ন আবরণে। বহু বহুদিন বিফল অপেক্ষার পর যেদিন সুন্দরী স্নানঘরে ঢুকলো, সেদিনের উত্তুঙ্গ উত্তেজনায় স্নানঘরের পিছনের দেয়াল বেয়ে উঠে কার্নিশের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেবার নিবিড়তম মুহূর্তটিতে প্রেমিকের ভারসাম্য টলে যায় এবং হুড়মুড়িয়ে প্রবল শব্দে তার পতন হয় দেয়াল সংলগ্ন মুর্গির খাঁচাগুলোর ওপরে।ভেঙে যায় তার পা। মুর্গির চিৎকারে ধেয়ে আসে মানুষজন, স্নান অসমাপ্ত রেখে সুন্দরী। এলোমেলো উড়ে যায় হলুদ প্রজাপতির ঝাঁক, ঝরে যায় ফুটে ওঠা ফুল। ভীড় করে আসা ছেলেছোকরার “মুর্গিচোর, মুর্গিচোর” ব্যঙ্গবাণে বিদ্ধ হতে হতে ভাঙা পায়ে খুঁড়িয়ে ভাবকুয়াশার এক নিঃসঙ্গ জগতে বুকভাঙা প্রেম নিয়ে হারিয়ে যায় সে প্রেমিক।   


     এ উপাখ্যান পড়বার পর অনেকক্ষণ আমি স্তব্ধ বসেছিলাম। মাথার ভিতর শুনছিলাম বালকবেলার আমির আর্ত জিজ্ঞাসা,”তবে কি কনক পাগলাও এমনই কোনো..... 


    অনেক মিথ ছিল শহরে কনক পাগলাকে নিয়ে। তার মধ্যে সবচেয়ে রোমাঞ্চকরটি ছিলো, আগুন তাঁকে পোড়ায় না,   জল তাঁকে ভিজাতে পারেনা। এমন লোকের সংখ্যা অপ্রতুল ছিলোনা যারা অনায়াসে গীতা ছুঁয়ে, দিব্যি গেলে বলে দিতে পারতো যে তারা নিজেরা চোখে দেখেছে যে শীতের রাতে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে হাত ঢুকিয়ে কিংবা সঘন গহন বর্ষায়  তোলপাড় বৃষ্টির মাঝে খোলা আকাশের নীচে শুকনো খটখটে বসে  আছেন কনক ঠাকুর (কিমাশ্চর্যম, যাঁরাই এমন ঘটনার কথা বলতেন, তাঁরা সবাই ওঁকে ঠাকুর সম্বোধন করতেন)। তাঁকে ঘিরে যাবতীয় মিথ ও শহরবাসীর অপার বিস্ময় প্রথম ও শেষবারের মতো সংশয়ের ধাক্কা খায় সন উনিশশো একাত্তরে। বাংলাদেশ স্বাধীন করবার যুদ্ধের কারণে সে সময় শহর ছেয়ে গিয়েছিল বিএসএফ আর আর্মি পার্সোনেলে। তাঁদেরই মধ্যে অত্যুৎসাহী কেউ কেউ একদিন পাকিস্তানী গুপ্তচর সন্দেহে কনক পাগলাকে ক্যাম্পে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রবল পিটুনিতে মাথা মুখ ফাটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায়। নিষ্ঠুরতম সেই এপ্রিলের নিশুতি রাতে আপাতরুক্ষ ও শুষ্ক মাটির বুক চিরে ফুটে উঠেছিল অসংখ্য লাল লিলি। শহরজুড়ে প্রলয় নেচেছিল ঝড় ঝঞ্ঝা বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি আর এক রহস্যময় বাঁশির সুতীব্র সুরের হাহাকারে। ভোরবেলা শহরবাসী আবিষ্কার করেছিল রাস্তার উপর আড়াআড়ি পড়ে থাকা কনক ঠাকুরের নিথর দেহ। মিথ ভেঙে রাতের বৃষ্টিজল যেন সযতনে ধুইয়ে দিয়েছিল তাঁর রক্তধারা, শরীরের মাটির পলেস্তারা, চুল দাড়ি এবং কৌপীন। 


    অল্প কিছুদিনের জন্য, কে জানে কোথা থেকে এ শহরে এসেছিল এক ভবঘুরে পাগল। বসে থাকতো কোনো না কোনো চায়ের দোকানের সামনে। চাহিদা বলতে ছিল এক কাপ চা আর দুটো লেড়ে বিস্কুট।এমনিতে তার মুখে কথা ছিলোনা কোনো। কিন্তু কেউ যদি বলতো, কিরে পাগলা, কাজ করবি? অমনি হাত নাড়িয়ে, মুখ বেঁকিয়ে সে নেচে নেচে পঞ্চমে গেয়ে উঠতো,--“বাবুদের বাড়ি কাজ করে কোন্ ছালা ? / ছুধু আলুভাতে ভাত খাইয়ে রাখে দুই বেলা /


    এমন ছোত্ত কাপড় পরিয়ে রাখে / বেরিয়ে পড়ে এ্যাঁড়তলা...” 


    এ স্মৃতিচারণ ক্রমশই দীর্ঘায়িত হয়ে উঠছে, প্রবীণদের যেমন হয়, মাত্রাজ্ঞানহীন। অতএব,পাঠকের আর ধৈর্যচ্যুতি না ঘটিয়ে (অবশ্য যদি বা কেউ এ পর্যন্ত আদৌ টিঁকে থাকেন), ট্যাঁপাদার গপ্পো বলে এ উপাখ্যানে ক্ষান্ত দেবো।


    ট্যাঁপাদা নিজেই নিজেকে বলতেন, ট্যাঁপা পাগলা। একহারা রোগা  লম্বা চেহারা। পরণে সদাসর্বদা ধুতি আর হাফহাতা বাংলা শার্ট। শার্টের দু পকেট ভর্তি কুলের  বিচি।  তাঁর জীবনের একমাত্র আকাঙ্খা ছিলো রাস্তার উপর হাতিকে পিছলিয়ে পড়তে দেখা। হাতি যদি হাঁটবার সময়ে গোল কুলের বিচির উপরে পা দেয়, তবে তার পতন অবধারিত --এরকম এক নিশ্চিত ধারণা ছিল তাঁর। অতএব,স্নান আর দলাইমলাইয়ের জন্য যে পথে নদীর দিকে মাহুত যেতো পিলখানার হাতিদুটোকে নিয়ে,তিনি তার ধারে কোথাও ঘাপটি মেরে বসে থাকতেন আর রাস্তায় ছড়িয়ে দিতেন কুলের বিচি। হাতিদুটো কাছাকাছি এলেই তাদের ঘাবড়ে দেবার জন্য তারস্বরে চেঁচাতেন, হাতি, তোর পায়ের তলায় কুলের বিচি...যদি সাবধান হতে গিয়ে সত্যি সত্যি কুলের বিচির ওপরে হাতির পা পড়ে যায়...। “অতটুকু কুৎকুতে চোখ তো...ছোট্ট কুলের বিচি দেখতেই পাবেনা”...অকাট্য যুক্তিজাল ছিলো তাঁর।


    হাতিকাণ্ডে নিত্য বিফলমনোরথ হবার পর তিনি হাতে এক বাখারি নিয়ে এপাড়া ওপাড়ার মোড়ে ছেলেছোকরাদের আড্ডায় হানা দিতেন, তাঁরই ভাষায়, নৈমিত্তিক পাগলামিটাকে বজায় রাখতে। এটা না করলে নাকি “পাগলামিতে মরচে ধরে,  পাগলখাতা থেকে নাম কাটা যায়”। পাগলামিতে তাঁর প্যাশন ছিল ঐতিহাসিক ড্রামা। “পাগল হই আর ছাগল হই, বাবার নামটা তো রাখতে হবে”, এই ছিলো তাঁর ব্যাখ্যান। কারণ তাঁর বাবা যে ছিলেন শহরের ইস্কুলে ইতিহাসের নামজাদা মাস্টারমশাই।


    ডি এল রায়ের চন্দ্রগুপ্ত, শাজাহান,মেবার পতন, নির্মলেন্দু লাহিড়ির সিরাজৌদুল্লা, ব্রজেন্দ্রকুমার দে এম এ বিটি প্রণীত সোনাই দিঘি, সতীর ঘাট ইত্যাদি বিবিধ নাটকের বহু সংলাপ তাঁর মুখস্থ ছিলো। হাতের বাখারি কখনো অসি, কখনো বাঁশি,কখনো রাজদণ্ড এমনকি কখনো কখনো নীরব প্রেমিকা হয়েও তাঁকে সাহচর্য দিতো। ডায়লগ বলতে বলতে তাঁর গলার শিরা ফুলে উঠতো, কপাল থেকে মুক্তোদানার মতো ঝরে পড়তো ঘাম। ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে হঠাৎ 


    করে চাণক্য,আওরঙজেব, প্রতাপ সিংহ, ভাবনাকাজি থেকে এক ঝটকায় চুনিলাল চৌধুরী ওরফে ট্যাঁপায় নেমে এসে বলতেন, “দে এবার পারিশ্রমিক। এককাপ চা আর একটা নাম্বার টেনের দাম”। এরকমই একদিন, নৈমিত্তিক পাগলামি শেষে নাম্বার টেন সিগারেটে সুখটান দিয়ে যেন বোধিজ্ঞানে আলোকিত হয়ে সত্যদ্রষ্টা মহান ঋষির মতন দিনের বাণী ধ্বনিত হলো ট্যাঁপাদার কন্ঠে, “পাগল হয়েও কোনো সুখ নাই, বুঝলি রে পাগলা”।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন