এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • পেন্সিলে লেখা জীবন (১৩)

    অমর মিত্র
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২৩ জানুয়ারি ২০২১ | ৩৫৪০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • মাল্যবান, জলপাইহাটি, বাসমতীর উপাখ্যান লেখা হয়েছিল পেনসিলে। গোপনে লিখতেন কবি, আর ভাই অশোকানন্দ দাশের বাড়ি গিয়ে ট্রাঙ্কে জমা করে ফিরে আসতেন। , ১৭২/৩ রাসবিহারী এভিনিউয়ের সেই বাড়ি অতি সম্প্রতি ভাঙা শুরু হয়েছে। সেখানেই ছিল সন্দেশ পত্রিকার অফিস। বাড়িটি পেনসিলে আঁকা বাড়ির মতো ধূসর হতে হতে মুছে গেল। ট্রাঙ্কগুলি অনেকদিন আগেই জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা পড়েছিল। অনুজ প্রতিম লেখক আফসার আমেদ তা কপি করে আনত ন্যাশানাল লাইব্রেরি থেকে। ভাইরাস আক্রান্ত এই অন্তরীন কালে আমি আমার জীবনের কথা বলব ভাবছি। জীবনানন্দ মুছে যাননি, আমার লেখা অস্পষ্ট হতে হতে হারিয়ে যাবে জানি। আমি সামান্য মানুষ, জীবনভর কলমে লিখেছি, তার উপরে জল পড়ে লেখা ধুয়ে গেছে কতবার। আমি আমার কথা পেনসিলে লিখতে শুরু করলাম। এই ভাইরাস আক্রান্ত কালে মানুষের কথা মানুষ লিখে যাচ্ছেন পেনসিলেই। কোনটি থাকবে, কোনটি আবার ভেসে উঠে আমার কাছে চলে আসবে দু’বছর বাদে, আমি জানি না। তবু লেখা। কারণ জীবনে এক জাদু আছে, জীবনের জাদুতে কতবার মুগ্ধ হয়েছি, কতবার অশ্রুপাত করেছি, সেই কথাই তো লিখব, লিখতে বসেছি। অতি প্রত্যুষে এই পেনসিলিয়া খবরিয়ার নিদ্রা ভাঙে। তখন বাইরে অন্ধকার। কাকও ডাকে না। কী করবে সে? এ নভমণ্ডল তখন হিম নীলাভ, চারদিকে অসীম স্তব্ধতা, সেই নীরবতার ভিতরেই জীবনের আরম্ভে পৌঁছে যেতে চায় সে, মাতৃগর্ভে স্মৃতির কাছে ফিরে যেতে চায়। সেই স্মৃতিলেখ এই বিবরণ।
    তেরো

    কুলটিকরিতে একটা বেআইনি কাজ করেছিলাম। এক বিধবা বৃদ্ধা এসে আমার হাত ধরে ফেলেন, তাঁর সমস্ত জমি দেওর দলিল করে নিয়ে তাঁকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। ভিটেটুকু নেই পর্যন্ত। কিন্তু কীভাবে তা হলো ? না জালিয়াতিতে। সেই প্রথম জালিয়াতের মুখ দেখলাম। ধুতি পাঞ্জাবি, পাম শু, হাতে দামি সিগারেটের প্যাকেট। অফার করলেন, নিন স্যার। চোখদুটিতে ধূর্ত ভাব। তবু দেখে মনে হয় ভদ্রলোক, কিন্তু তার ভিতরে এত প্রতিভা কে জানত ?

    যত রকম জালিয়াতি হয়, জমিতেই সব চেয়ে বেশি হয় মনে হয়। বিধবা বৃদ্ধা কাশী যাবেন বলে এক বিঘে জমি বিক্রি করে দিতে বলেছিলেন দেওরকে। দেওর বলেছিল, সে-ই নেবে। সুতরাং পাকা দলিল হলো। তিনি মনের আনন্দে কাশী গেলেন তীর্থ করতে। ক’মাস বাদে ফিরে এসে দ্যাখেন, তাঁর সব গেছে, মাটির ভিটে পর্যন্ত নেই। ভেঙেচুরে তা জমি করে দেওয়া হয়েছে। দেওরকে তিনি নাকি সব দলিল করে তিনি কাশীবাসী হতেই গিয়েছিলেন। ফিরে আসার কথা নাকি ছিল না। তিনি বারবার বলতে লাগলেন দেওর এক বিঘের পরিবর্তে তাঁর সাত বিঘে লিখে নিয়েছে। তিনি অন্যের আশ্রয়ে আছেন। সরেজমিন তদন্তে কেউ কেউ আড়ালে বলল, বৃদ্ধার কথা সত্য, কিন্তু তাদের সামনে এসে বলার সাহস নেই। জালিয়াত দেওর লোকটি খুব বদ। ক্ষমতা ধরে। মামলাবাজও বটে। অনেকের সব্বোনাশ করেছে জমি হাতিয়ে নিয়ে। ঝাড়গ্রাম কিংবা মেদিনীপুর আদালতে গিয়ে উকিল ধরে মামলা লড়তে যাবে কে ? ফলে সব রায়ই এক তরফা হত। বাবুটি জিতে যেত। বাবু আমাকে বললেন, দলিল ঠিক কি বেঠিক তার বিচার করবে জেলা আদালত কিংবা উচ্চ আদালত, আমার কাজ রেজিস্ট্রি দলিল মোতাবেক কাজটি করা।

    বয়স কম। জীবনে একটা আদর্শ আছে। বললাম, হবে না। সেই বৃদ্ধার কাছ থেকে আবেদনপত্র নিয়ে রায় দিলাম জালিয়াতের বিপক্ষে। জালিয়াত বাবু আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন, আমি তাঁর কাছ থেকে উৎকোচ চেয়ে না পাওয়ায় তাঁর রেজিস্ট্রি করা এবং দখলীকৃত জমি তাঁর পক্ষে রেকর্ড করিনি। চাকুরি ক্ষেত্রে আমার ঠিক উপরে যিনি ছিলেন, সার্কেল অফিসার, সেই নদীয়ার করিমপুরের জানাবাবুর নিকট রিপোর্ট চাওয়া হলো মহকুমা থেকে। তিনি আমাকে পছন্দ করতেন না। কারণ ছিল গভীরে। এখন তিনি হয়ত নেই, সুতরাং সে কথা থাক। সরাসরি না হলেও তিনি একেবারে অগ্রাহ্য করলেন না আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ, বলেছিলেন, কেউ একজন অভিযোগ করলেই সাফ কোবলা দলিল এবং দখল আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারি না। আমার কৃতকর্মের উদ্দেশ্য তিনি বুঝতে পারছেন না। কিছুটা সন্দেহজনক নিশ্চয়। মহকুমার চার্জ অফিসার এসে তদন্ত করে গেলেন। তিনি আমার কাছে সমস্ত কথা শুনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠালেন। নামটি মনে আছে বিজনকুমার সাহা। সুভদ্র রুচিমান মানুষ ছিলেন। আমার চেয়ে বেশ কয়েক বছরের বড়। আমি যা হয়েছে তা বললাম। কাজটি যে আইন সিদ্ধ হয়নি তা বুঝতে পারছিলাম। তিনি তাঁর রিপোর্ট এবং আমার জবাব জেলার সেটেলমেন্ট অফিসারের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি খুব দাপুটে অফিসার ছিলেন। স্বপনকুমার চক্রবর্তী, তরুণ আই এ এস। তিনিও বয়সে বড়ই হবেন। তাঁকে সম্ভ্রমের চোখে দেখতাম। ভয়ই পেতাম মনে হয়। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। গিয়েছি নির্দিষ্ট তারিখে। মেদিনীপুর শহরে বারজ টাউনে সন্ধ্যায় তাঁর বাংলোয়। বাংলোতেই দেখা করতে বলেছিলেন তিনি। আমার মুখে সব শুনলেন। আমি বললাম, স্যার ওখানে থেকে ওই দলিল আমি রেকর্ড করে বৃদ্ধাকে ভূমিশূন্য করতে পারব না।

    তিনি বললেন, দলিল এবং দখল থাকলে আইনত আমি করতে বাধ্য।

    আমি বলেছিলাম, তাহলে আমাকে বদলি করে দেওয়া হোক। লোকটি খুব খারাপ। বৃদ্ধার চোখের জল আমি দেখতে পারব না।

    তিনি হেসে বললেন, যা করেছ, বেশ করেছ, কিন্তু আইনকে তো এড়ান যাবে না। আমার আদেশনামা উনি লিখে দিলেন। কী কারণে আমি ঐ দলিল অগ্রাহ্য করলাম তার খুঁটিনাটি বিবরণ দিয়ে আদেশনামা প্রস্তুত করে দিয়ে বললেন, আমাকে ঐ দলিল রেকর্ড করতে হবে না। সেই অর্ডার শিট বলে বাবুটি তাঁর কাজ আমার পরেও করাতে পারেননি শুনেছি। আমার মনে পড়ে সেই সেটেলমেন্ট অফিসার স্বপন চক্রবর্তীর কথা। চার্জ অফিসার বিজনকুমার সাহার কথা। তিনি আমার পক্ষেই রিপোর্ট দিয়েছিলেন, তাই শুনেছিলাম। বিজনকুমার সাহার সঙ্গে পরে আর দেখা হয়নি মনে হয়। আমি একাডেমি পেলে স্বপন চক্রবর্তী খুব খুশি হয়ে আমাকে ফোন করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে পরেও যোগাযোগ ছিল। আমার লেখা তিনি নিয়মিত পড়তেন তা জানতে পেরেছিলাম পরে। শুনেছিলাম কলকাতায় রাইটার্স বিল্ডিঙে মন্ত্রী বিনয় চৌধুরীর সঙ্গে মিটিঙে তিনি আমার এই কাজের কথা বলেছিলেন। আসলে আমরা যে প্রজন্ম ঐ চাকরিতে ঢুকেছিলাম, তার ভিতরে এই সব আদর্শ প্রোথিত হয়ে ছিল নক্সাল আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন পার হয়ে আসায়।

    এ ছিল এক অদ্ভুত ডিপার্টমেন্ট। ডিসেম্বরে বদলির তালিকা বেরত। গ্রামে গ্রামে থাকা, সকলকেই একটু একটু ভালো জায়গায় থাকার সুযোগ করে দেওয়া আর কী। আমার মন খারাপ হত, আবার নতুন জায়গায় যাওয়ার আগ্রহে এক ধরণের আনন্দ হত। কুলটিকরি ছেড়ে বেলিয়াবেড়া যাওয়া ছিল দুঃখের। কুলটিকরিতে গল্প লিখে পড়াবার মানুষ পেতাম। আর ছিল এক বাসে খড়্গপুর যাওয়ার সুবিধে। খড়্গপুর মানে কলকাতা, সাহিত্যের বন্ধুরা, রাসবিহারী, পবিত্র মুখোপাধ্যায়, প্রভাত চৌধুরী, সমীর, তুষার, অসীম চক্রবর্তী, কখনো অনন্য রায়, এবং শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। আসলে কলকাতা কত নির্বিঘ্নে যাওয়া যায়, তা দিয়েই পোস্টিঙের ভালো মন্দ নির্ধারিত হত।

    বেলিয়াবেড়া ডুলং নদীর ধারে। ডুলং এক ছোটনদী। ঝাড়গ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে জন্মেছে। তারপর গোপীবল্লভপুর-২ ব্লক-বেলিয়াবেড়া হয়ে সাঁকরাইল থানার রোহিনী গ্রামের কাছে সুবর্ণরেখায় মিলেছে। ১৯৭৭ এর ডিসেম্বরে বদলি হলাম। অফিস ডুলং নদীর ধারে রাজ বাড়িতে। সকালে একটা বাস আসত ঝাড়গ্রাম থেকে, সেই বাসই দিনে দুবার যাওয়া আসা করত মনে হয়। ঝরঝরে বাস। তাপ্পি মারা টায়ার। লোধাশুলি মোড়ে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় ঘন্টা তিন অপেক্ষার পর দুপুরে বাস এল ঝাড়গ্রাম থেকে। শীতের বেলা ছোট। জাতীয় মহাসড়ক গেছে বোম্বাই অবধি। বোম্বে রোড। তখন তাইই বলা হত। সেই সড়ক পথে অনেকটা গিয়ে আচমকা বাস বাম দিকে ঘুরে ঢুকে পড়ল জঙ্গলের লাল মোরাম ঢালা রাস্তায়। দু’পাশে ঘনগভীর শালবন। জানালা দিয়ে দেখছি শিয়াল পার হয়ে গেল রাস্তা। বেজি। শজারু। বাস চলছে গুড়গুড় করতে করতে। তারপর সেই আশ্চর্য পথ শেষ হত নদীর ধারে। হাফ প্যাণ্ট আর হাফ শার্ট পরা আধবুড়ো এক মধ্যবয়সী কন্ডাকটরের কথা খুব মনে পড়ে। তিনি সব প্যাসেঞ্জারকে নামে চিনতেন। ভাড়া ফাঁকি দেওয়ার উপায় ছিল না কারো। কে কোথা থেকে উঠেছে আর যাবে কোথায় সব জানা ছিল তাঁর। এ নিয়ে বাসে খুব বচসা লাগত। সে হলো পরের কথা। আমি নতুন অফিসে যোগদান করতে যাচ্ছি। ডুলং নদীর ধারে বাস দিনের মতো যাত্রা শেষ করল। যাত্রীরা নদী পেরিয়ে যাচ্ছে। আমার সঙ্গে সুটকেস, হোল্ড অল, ব্যাগ। নদীতে হাঁটুরও উপর ডোবা জল। এসব নিয়ে পার হব কী করে? সন্ধ্যা হয়ে এল। বিনবিনিয়ে শীত নামছে। হিম। ঐ দেখা যাচ্ছে রাজবাড়ির চুড়ো। তখন সেই কন্ডাকটর বাস রেখে বাড়ি ফিরবেন নদীর ওপারে, আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যাব কোথায়, কে আমি? তিনি সব শুনে কজনকে ডেকে বললেন, অতিথ, রাজবাড়ির অফিসার, দিয়ে আয়। একজন আমার সুটকেস হোল্ড অল মাথায় নিল, আর একজন আমাকে পিঠে করে নদীর জল পার করালেন। তাঁরা বেলিয়াবেড়ার পাশের গ্রাম আম্বির মানুষ। নদী পার হয়ে আমি রাজবাড়িতে পৌঁছলাম। প্রহরাজ রাজার বাড়ি। তাঁরা ওড়িশার মানুষ ছিলেন। ভাগ্য অন্বেষণে এদেশে এসেছিলেন ব্রাহ্মণ। ঝাড়গ্রামের রাজার আতিথ্য নিয়েছিলেন। কিংবদন্তী এই যে তাঁর ভিতরে ঈশ্বর সেবার আকুতি দেখে এক প্রহর ঘোড়া ছুটিয়ে যতটা জমি অতিক্রম করতে পেরেছিলেন ততটা জমি দেবোত্তর হিশেবে উপহার পেয়েছিলেন মল্ল রাজার কাছ থেকে। তাঁদের উপাস্য দেবতা ছিলেন শিশু গোপাল। গোপাল এবং রাধাকৃষ্ণের মন্দির ছিল রাজবাড়িতে। মন্দিরে শিশু গোপালের পায়ের ছাপ ছিল সিমেন্টের মেঝেতে। বড় রানি মা আমাকে দেখিয়েছিলেন। আমার তখন দেখার সময়, জানার সময়, রাজ পরিবারের ইতিহাস শুনছি। রাস পূর্ণিমায় রাজার ঘরে নেমতন্ন খেয়েছি। আমি লিখতাম। কত পাতা পছন্দ না হওয়ায় ফেলে দিতাম। পাশের ঘরের বউদি বললেন, তা তুলে নিয়ে যায় একজন, আপনি কি জানেন ?

    ও তো ফেলে দেওয়া পাতা, লেখা পছন্দ হয়নি বলে ফেলে দেওয়া।

    তা তো আমরা জানি না, সেও জানে না, ভেবেছে হাওয়ায় উড়ে গেছে, ফেরত দেবে আপনাকে, নাহলে হয়ত আপনার হাতের লেখা জমিয়ে রাখছে।

    ফেরত আসেনি কোনো পাতাই।

    প্রহরাজ রাজবাড়ি, সেই নদী, আমার সেই নদী পার হওয়ার অভিজ্ঞতা এসেছিল পাহাড়ের মতো মানুষ উপন্যাসে। কিন্তু লজ্জিত হয়েছিলাম পিঠে পার হওয়ার কথা লিখতে। উপন্যাসটি লিখেছিলাম ১৯৭৯ সালে। অমৃত পত্রিকায় ধারাবাহিক। তখন আমি ২৮। শ্যামলবাবু লিখতে বললে, আমি বলেছিলাম পারব না, ধারাবাহিক উপন্যাস লেখা কঠিন। আমার দুই বন্ধু, সমীর আর তুষার খুব ধমকেছিল আমাকে। সম্পাদক বলছেন, ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিস। যা তোর রাজবাড়ি আর রাজকন্যা নিয়ে লেখ। সেই যে রাজার ছেলে গরু নিয়ে বেরোয় তা নিয়ে লেখ। সেই যে রাজকন্যা ঘুরে বেড়ায় রুখু চুল আর ময়লা শাড়ি পরে, তার কথা লেখ। লেখ দুই রানির কথা। লেখ। তোকে যে পার করাল, তার কথা লেখ। পারবি লিখতে ? সুতরাং লিখেছিলাম। রাজবাড়ি আর বেলিয়াবেড়ার কত কথা, সব মনে আছে। সব।

    যে উপন্যাস কুলটিকরিতে বসে লিখেছিলাম, ১৯৭৮ এ সেই উপন্যাস ‘নদীর মানুষ’ অমৃত পত্রিকার বিনোদন সংখ্যায় ১৯৭৮-এর ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। আমার প্রথম উপন্যাস। তখন সাহিত্য পত্রিকার বিশেষ শারদীয় সংখ্যা ব্যতীত ডিসেম্বর , ইংরেজি বর্ষশেষে বিনোদন সংখ্যা এবং বাংলা নববর্ষে নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হত সকল পত্রিকার। এখন আর সে চল নেই।

    ১৯৭৮ সালটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৭ এ জরুরি অবস্থার অবসান এবং বামফ্রন্ট সরকারের ক্ষমতায় আসা। দিল্লিতেও কংগ্রেস শাসনের অবসান। কিন্তু সে ইতিহাস বহু চর্চিত। ১৯৭৮ সালে পঞ্চায়েত ভোট হয়, গ্রামে গ্রামে নতুন পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত হন। ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতি। জেলায় জেলা জেলা পরিষদ। এই ইতিহাসও অজানা নয়। নতুন কথা কী। তার আগে ঐ সময়ই অপারেশন বর্গা কার্যক্রম চালু হয়। সান্ধ্য মিটিং করতে হত দরিদ্র চাষী পাড়ায় গিয়ে। সে ছিল অসামান্য অভিজ্ঞতা। মানুষের ভয় ভাঙানর কাজ আরম্ভ হয়েছিল সেই তখন। বেলিয়াবেড়া গোপীবল্লভপুর-২ ব্লক। গোপীবল্লভপুর ক’বছর আগে শুনেছিল বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ। গরিব অঞ্চল। ভূমিহীনের সংখ্যা বেশি। সাঁওতাল, মুণ্ডা জনজাতির সংখ্যাও কম নয়। গোপীবল্লভপুরের মানুষ সন্তোষ রাণা। অপারেশন বর্গা কার্যক্রম তাই গোপীবল্লভপুর থেকেই শুরু হয়েছিল। আমার ক্যাম্প অফিস রাজবাড়িতে। সেই অফিসে কলকাতা থেকে ল্যান্ড রিফরমস কমিশনার দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় , জেলা শাসক সত্যেন ঘোষ, সেটেলমেন্ট অফিসার স্বপন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত জেলা শাসক কল্যাণী চৌধুরী সকাল দশটায় হাজির। এস পি আছেন, মহকুমা শাসক আছেন, সকলে এসেছেন। সারাদিন মিটিং হলো। কীভাবে বর্গাদার খুঁজে বের করা হবে তা নিয়ে আলাপ হলো কম না। সেদিন মিটিঙের পর তাঁরা চলে যেতে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত দারোগাবাবু, যিনি সারাদিন এত অফিসারের খিদমত খেটে ক্লান্ত, বিরক্ত, চায়ের দোকানে বসে বলতে লাগলেন, আর কী, বললেই হলো, আমি তোমার জমির চাষা, রেকর্ড হয়ে যাবে, জমি দখল আরম্ভ হলো বলে...। গুহিরামের চায়ের দোকানে বসে থানার দারোগা চিৎকার করে বলতে লাগলেন তাঁর মতামত।

    অপারেশন বর্গা নিয়ে প্রচুর মামলা হয়েছিল। সরকার বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে এই অভিযোগ শুনেছি কত জমি মালিকের কাছ থেকে। তাঁরা ক’বছর আগে নক্সাল আন্দোলনের সময় ্পালিয়েছিলেন প্রাণ ভয়ে। সেই স্মৃতি ফিরে আসছিল হয়ত। অপারেশন বর্গা জমি প্রকৃত চাষীর চাষের অধিকার নিশ্চিত করেছিল।

    ১৯৭৮-এর ১৮-ই জুন আমার প্রথম বই মাঠ ভাঙে কালপুরুষ প্রকাশিত হয়েছিল।
    “মাঠ ভাঙে কালপুরুষ” ছিল এগারটি গল্পের এক সংকলন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭-৭৮-এর পাঁচবছরে লেখা গল্প থেকে বাছাই করে এই বইটি তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৭৮ সালের ১৮ই জুন দিনটির কথা খুব মনে আছে। কবি প্রভাত চৌধুরীর বাড়িতে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় বইটি প্রকাশ করেন। কবি তুষার চৌধুরী, সমীর চট্টোপাধ্যায়, পবিত্র মুখোপাধ্যায়, শাস্ত্রবিরোধীঅগ্রজ গল্পকার আশিস ঘোষ, সমকালের শচীন দাশ, দীপঙ্কর দাস, অসীম চক্রবর্তী ও আরো কয়েকজন বন্ধু ছিলেন সেই বিকেলে।

    ‘মাঠ ভাঙে কালপুরুষ’ ছাপার জন্য আমি ঝাড়গ্রাম কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকে ২০০০ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সেই ঋণ দুবছর কয়েক মাস ধরে সুদসহ শোধ করেছিলাম। তখন মাইনে পেতাম শ’পাঁচেক টাকা। আমি তখন একেবারেই অচেনা এক নবীন লেখক। অমৃত পত্রিকায় লেখার সুযোগ পেয়েছি সদ্য। গল্প যা বেরিয়েছে, লিটল ম্যাগাজিনে। কবিপত্র, অনুক্ত, পরিচয়, সংক্রান্তি---ইত্যাদি পত্রিকায়। লিখে উপার্জন হয়ই না প্রায়। বই ছিল ৭ ফর্মা মানে ১১২ পাতার। অ্যান্টিক নামের একটি মূল্যবান কাগজে লেটার প্রেসে ছেপে বেরিয়েছিল সেই বই। খুব সম্ভবত সুকিয়া স্ট্রিটের হরিপদ পাত্রের ছাপাখানা সত্যনারায়ন প্রেসে কম্পোজ হয়েছিল। আমি এইসব কথা বলছি এই কারণে যে সেই লেটার প্রেস, অ্যান্টিক কাগজ, সীসের অক্ষর, কাঠের গালি এখন হারিয়ে গেছে। এক একটি খোপে এক এক অক্ষর। ই-কার, আ-কার, উ-কার, এ-কার সব আলাদা আলাদা খোপে। কম্পোজিটরের সব মুখস্ত থাকত। কী দ্রুতই না সিসের অক্ষর সাজিয়ে সাজিয়ে গোটা বই নির্মাণ করে ফেলতেন। হ্যাঁ, সেই লেটার প্রেস, সেই ছাপাখানা উঠে গেছে। হরিপদ পাত্রর প্রেসের নামটি এখনো ভুলে যাইনি। আমার বই ছাপতে যাওয়ার আগে আমার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু সমীর চট্টোপাধ্যায় গল্প নিবার্চন করে দিয়েছিলেন। সমীর সুসম্পাদক। তার পত্রিকা সংক্রান্তিতেও আমি লিখেছি। প্রভাতদার কথায় শিল্পী প্রণবেশ মাইতি এঁকে দিয়েছিলেন মহার্ঘ এক প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদ আঁকার জন্য তিনি একটি পয়সাও নেননি। সেই প্রচ্ছদ ছিল অসামান্য।

    আমার বই কম্পোজ হচ্ছে। সব দায়িত্ব প্রভাত চৌধুরীর। প্রুফ দেখা, প্রুফ দিয়ে আসা নিয়ে আসা...সব। আমি ছুটিছাটায় কলকাতা আসি।সেই বই মাপে মাপে করতে গিয়ে একটি পাতার কিছুটায় লাইনের গেজ কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ দুই লাইনের ভিতর স্পেস কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক লাইন ১২ পয়েন্ট টাইপের জায়গায় ১০ পয়েন্ট বর্জাইস টাইপে ছাপা হয়েছিল। প্রভাতদা এসব বুঝতেন। বই ছাপা হয়ে গেলে বাঁধাইখানায় পাঠানো হলো। বাঁধাইখানা থেকে বই এল, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে তার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হল প্রভাতদার বাড়ি ৩৬/ ডি হরিশ চ্যাটারজী স্ট্রিটে। একটি গল্প পড়া হয়েছিল বই থেকে। তারপর পানভোজন।আড্ডা। শ্যামলবাবুর কিছু কথা।

    বেলিয়াবেড়া সব অর্থেই ছিল এক আশ্চর্য জনপদ। পাশের গ্রাম আম্বি, খুবই সম্পন্ন জনপদ। কবি বেবি সাউ বললেন, আম্বিতেই তাঁর পিতৃপুরুষের ভিটে। সব এখন বদল হয়ে গেছে। ন্যাশানাল হাইওয়ে ঐ দিক দিয়ে গেছে। বেলেবেড়া যাওয়ার দুটি পথ, ডুলং নদী পার হয়ে যেভাবে আমি প্রথম দিন গিয়েছিলাম। আর জাতীয় মহাসড়ক দিয়ে বহড়াগোড়ার পথে ফেকো ঘাটের মোড় থেকে বাম দিকে ঘুরে সুবর্ণরেখার পথে কুঠিঘাট। তখন কুঠিঘাটে ব্রিজ ছিল না। ওপারে বর্গিডাঙা যেতে পায়ে হেঁটে নদী পার হতে হত। নদী নয়, গ্রীষ্মে তা যেন ছিল মরুভূমি। বৈশাখের দিনে সকাল আটটার পর নদী পার হওয়া ছিল বিপজ্জনক। আমি সেই বংশীধরপুর বাসের কালে বর্গিডাঙায় এসেছি কত। সার্কেল অফিস ছিল সেখানে। এক ডাক পিয়নের কথা শুনেছিলাম, নদী পার হতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে মারা যান। বেলিয়াবেড়া যেতে হলে কুঠিঘাটের আগে তপসিয়া মোড়ে নেমে সাইকেলে ঢুকতে হত ভিতরে। আমার জন্য একজন অপেক্ষা করতেন সাইকেল নিয়ে। আমার অফিসের কেউ। যাই হোক, বেলেবেড়ার রাজ পরিবারের তখন পড়তি অবস্থা। রাজা নেই। দুই রানি ছিলেন। বড় রানি ছিলেন নিঃসন্তান। ছোট রানির দুই পুত্র এক কন্যা। কন্যাটি সারাদিন ঘুরে বেড়াত তাদের ভাড়াটের ঘরে ঘরে, নানা বৌদিদের কাছে। আ্মিও তাদের ভাড়াটে ছিলাম। আমার পাশের ঘরে সপরিবারে জে এল আর ও। তাঁর পাশের ঘরে বিডিও অফিসের কেরানি বাবু সপরিবারে। আমি একা মানুষ। আমার ঘর রাজার বাড়ির মস্ত ঘর। দুটি বা তিনটি হেরিকেন জ্বালালে সমস্ত ঘর আলোকিত হত কি না সন্দেহ। আমার ছিল একটি টর্চ, আর কেরোসিন ল্যাম্প। একটি চেয়ার টেবিল ছিল সেই ঘরে। আর ছিল রাজার পালঙ্ক। সেই পালঙ্ক ছিল মস্ত। আমার বিছানা তার এক তৃতীয়াংশ ঢাকতে পারত। যে মশারি টানান হয়েছিল সেই পালঙ্কের বাটামে, তা আর খোলা হয়নি এক বছর। যখন বদলি হই, তা না খুলেই হোল্ড অলে বাকি সব ভরে চলে এসেছিলাম। ইলেকট্রিক নেই। দরজা জানালা খুলেই শুতে হত। সন্ধ্যায় পাশের ঘরে তাসের আড্ডা বসত। নানা সরকারি কর্মীরা আসতেন সেই আড্ডায়। আমি থাকতাম আমার ঘরে। সতর্ক থাকতে হত। রাজবাড়ির একটা দিক ধ্বসে গেছে। সাপ ছিল ফাটলে। কালাচ সাপ একটি মেরেছিল কারা এক সন্ধ্যায়। গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় হাওয়া খেতে বেরত নাগিনীরা। শুয়ে থাকত চাতালে কিংবা চলাচলের বারান্দায়। খুব ভয় করত সাপের। তাই না ঘুমোন পর্যন্ত দরজা বন্ধ রাখতাম। ল্যাম্পের আলোয় হাত পাখায় হাওয়া খেতে খেতে পড়া কিংবা ঘামতে ঘামতে লেখা। লেখাই জীবনের এক মাত্র আনন্দ।

    বেলিয়াবেড়া থাকতে একদিন একটি পোস্ট কার্ড পেলাম অমৃতলোক নামে এক পত্রিকার সম্পাদকের কাছ থেকে। তিনি একজনকে নিয়ে এক দুপুরে মেদিনীপুর শহর থেকে বেলিয়াবেড়া চলে এসেছেন। সঙ্গী যুবক জমিল সৈয়দ। কবি। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভাই। আমাদের ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতে এসেছেন আমারই পদে। তিনি আছেন হলদিয়ার ওদিকে কোথাও। সমীরণ মজুমদার সেই সম্পাদক। সাহিত্যের জন্য সর্বস্বত্যাগী এমন কাউকে আমি এ জীবনে দেখিনি। পত্রিকা এবং পত্রিকা। মেদিনীপুর শহরে সমীরণের বাসা ছিল ষ্টেশন রোডে। আমি সেখানে থেকেছি কত। সমীরণের কথা পরে হবে আবার। বেলিয়াবেড়া রাজার বাড়ির কথায় আসি।

    জমিদারি অধিগ্রহণ আইনে রাজার জমি খাস হয়ে গিয়েছিল। দেবত্র সম্পত্তিও রেহাই পায়নি। সেই জমিই তো বিলি করার কথা ভূমিহীনে। তবে যা জেনেছিলাম, জমি কোর্ট-কাছারি করে স্থগিতাদেশ পেয়েছিলেন তাঁরা। সে কাহিনির ভিতর যাব না। দুই রাজপুত্রকে সকাল বেলায় গরু নিয়ে বেরতে দেখেছি আমি। তারা দুজনেই ছিল রূপবান। বড় রানি ছিলেন কর্তৃত্বময়ী। অদ্ভুত জীবন কেটেছিল সেই রাজবাড়িতে। শীতের দিনের এক অভিজ্ঞতার কথা বলি। ঝাড়গ্রামে যাত্রা দেখতে নিজের স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিলেন সরকারী কর্মী অফিসার। তারপর দুই অফিসার রাতে স্থানীয় দরিদ্র পরিবারের যুবতি কন্যাকে ঘরে নিয়ে এসেছেন। তা জানতে পেরেছে স্থানীয় মানুষ, তারা ঘরের দরজায় গিয়ে বসেছে। কিন্তু থানার দারোগা পুলিশ রক্ষা করেন ক্ষমতাবান অফিসারদ্বয়কে। না করলে হবে কেন ? আমি কলকাতা থেকে ফিরে দেখেছি, পাশের ঘরের বউদি কপালে হাত দিয়ে বসে আছেন। আগের রাতেই ঘটেছে ঘটনাটি। আমাকে দেখে ঝরঝর করে জল পড়তে লাগল তাঁর দু’চোখ দিয়ে।

    ১৯৭৮-এর সেপ্টেম্বরের শেষে বাদলধারা শুরু হয়। দিন পনের টানা চলল। আমি সেপ্টেম্বরের শেষের সপ্তাহে কলকাতা এসেছিলাম। ফিরেছিলাম ২৯ তারিখে। বর্ষা আরম্ভ হয়ে গেছে তখন। কলকাতা ডুবে গেছে। আমাকে ফিরতে হবেই। আমার অফিসের কর্মচারীদের বেতন তুলতে হয় আমাকে। সেই বৃষ্টি কদিন থেমে আবার অক্টোবরের শেষে অতিবৃষ্টি। প্রলয় হয়ে গিয়েছিল।

    ১৯৭৮-এর মাপের বন্যা ৫০০ বছর আগে আকবরের আমলে হয়েছিল। বন্যাত্রাণে যুক্ত হয়েছিলাম। সে এক দিন গেছে। শীর্ণকায় ডুলং নদীর জল রাজবাড়ির খিড়কির দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছিল। আমি একবার কলকাতা এসেছিলাম সেপ্টেম্বরের শেষে, তারপর ফিরে গিয়েছিলাম অবিশ্রান্ত বর্ষণের ভিতর। তখনও ট্রেন চলছিল। আর বাড়ি আসা সম্ভব হয়নি ডিসেম্বরের আগে। সেপ্টেম্বরে যখন গিয়েছিলাম, অমৃত পত্রিকায় প্লাবন ৭৮ নামে একটি লেখা লিখেছিলাম। প্লাবন তখন শুরু হয়ে গেছে। আমি তখন ত্রাণে জড়িয়ে গেছি। আর্তের শিবিরে ডিউটি করছি। সন্ধে য় ফিরে আসি ঘরে। এখন মনে হয়, ঈশ্বরের হাত মাথায় থাকলে এমন জীবন পাওয়া যায়। ১৯৮৬ সালে একবার গিয়েছিলাম সেই বেলিয়াবেড়া। তপন বন্দ্যোপাধ্যায় তখন মেদিনীপুর সদর মহকুমার মহকুমা শাসক। তিনিই নিয়ে গিয়েছিলেন। ঠিক হয়নি সেই যাওয়া। রাজার বাড়ির গায়ে কী বিমর্ষতা। চা আর চপ মুড়ি মিষ্টির দোকানি গুহিরাম ছুটে এসেছিল। রাজার বাড়ি সেই উজ্জ্বল শীতের আলোর ভিতরেও যেন কুয়াশায় মোড়া ছিল। রাজকন্যা পাশের আম্বি গ্রামের একটি ছেলেকে বিয়ে করে গৃহত্যাগ করেছে। রাজবাড়ির মান গেছে কি না জানি না, গুহিরাম খুব দুঃখিত। তাদেরই তো রাজা। রাজার বাড়ি রাজার বাড়ির মতো থাকবে তো। কিন্তু প্রেম কি অত হিসেব করে হয়। রাজকন্যা সুখে আছে এই কথাটি কে যেন বলেছিল। হ্যাঁ, রাজকন্যা সুখেই আছে জানি।


    (ক্রমশঃ)

    ছবিঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৩ জানুয়ারি ২০২১ | ৩৫৪০ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    নবীন - Suvasri Roy
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • i | 61.68.146.29 | ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১২:২২101962
  • হ্যাঁ রাজকন্যা সুখেই আছে জানি - আশ্চর্য লাইন।

    এই ত্রয়োদশ পর্ব অদ্ভূত ভালো লাগল। প্রতিটি পর্বই পড়েছি। পড়ে যাই। সব পর্বই যে ভালো লাগে তা নয়। আবার সেকথা জানাতেও দ্বিধাবোধ করি। হয়ত আমিই ভেবে নি লেখাটি এই রকম হতে হবে- না মিললেই হতাশ হই। সেও হয়তো ঠিক নয়। জানি।
    এই পর্বটি বড় ভাল লাগল।
    আগে একদিন রবীন্দ্রনাথ উদ্ধৃত করে লিখেছিলাম,"সে আগের জিনিসকে পাছে ও পাছের জিনিসকে আগে সাজাইতে কিছুমাত্র দ্বিধা করে না। বস্তুত তাহার কাজই ছবি আঁকা, ইতিহাস লেখা নয়।
    এইরূপে জীবনের বাইরের দিকে ঘটনার ধারা চলিয়াছে, আর ভিতরের দিকে সঙ্গে সঙ্গে ছবি আঁকা চলিতেছে। দুয়ের মধ্যে যোগ আছে অথচ দু'ই ঠিক এক নহে"

    এই পর্বে বাইরের ঘটনার ধারা আর ভিতরের ছবি আঁকার যোগটি প্রত্যক্ষ করলাম যেন।
    নমস্কার জানবেন।

    ইন্দ্রাণী দত্ত

  • অলোক গোস্বামী | 103.87.140.14 | ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৪৩101964
  • অজানা অচেনা মানুষের জীবন দলিল, এই লেখা। 

  • Prativa Sarker | ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:৩৩101971
  • আশ্চর্য সুন্দর পর্ব !  সত্যিই ঈশ্বরের হাত মাথায় থাকতে হয় ! 

  • নিরঞ্জন মিত্র | 103.240.99.132 | ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:৩১101973
  • স্মৃৃতি সতত সুখের.....!

  • তন্বী হালদার | 2409:4060:219e:545a:35cf:876f:1b80:86a0 | ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:৪৫101976
  • দু একটা বাদ গেছে বাকী সব পড়েছি। তবে এই পর্বটি অদ্ভুত সঙনৃদর

  • santosh banerjee | ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:১৮101979
  • ওই জমি আত্মসাৎ করার ঘটনা টার সূত্র ধরেই আমার নিজের জীবনের একটা ঘটনার কথা বলি !!নিজের জয়ঢাক বাজাচ্ছি না !! বি এস এন এল 'এ কাজ করি ।..এক কন্ট্রাক্টর একটা কাজের জন্য আমাকে কিছু টাকা অফার করে।.. নিই নি !!বদলে সে হুমকি দিয়েছিলো রাস্তায় দেখে নেবে ।..পুলিশ ।..কোর্ট কিছুই করিনি ।..তাকে বলেছিলাম "" আপনার যা যা করার করে নিন ।..আমি ওই বিল এখন দেখবো না ।..টার্ম এলে দেখবো "" ।...অনেক দিন পরে ওই ভদ্রলোক আমাকে কাকু ।..স্যার বলে সে কি আপ্যায়ন ।।.এ কে কি বলবো ।..আমার জয় না ওনার পরাজয় ??

  • sanjoy banerjee | ২৪ জানুয়ারি ২০২১ ০১:১০101990
  • অসম্ভব সুন্দর লেখা। আগের কোনোটাই পড়িনি। পড়তে চাই। কোথায় পাব ? 

  • পার্থপ্রতিম মন্ডল | 2405:201:800a:e058:2877:8a79:e0ff:4f90 | ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:৪৯102035
  • এ পর্বটিও অনবদ্য লাগল। এসব অভিজ্ঞতার গল্প পাঠকের কাছে এক বিরাট প্রাপ্তি।

  • lcm | ২৬ জানুয়ারি ২০২১ ০০:০৪102036
  • সঞ্জয় ব্যানার্জি,
    এই সিরিজের আগের পর্বের লেখাগুলো প্রথম থেকে - দেখুন ওপরে এবং নীচে - পর্ব ১ / পর্ব ২ / পর্ব ৩ ... এভাবে দেওয়া আছে, ক্লিক করলেই পড়তে পারবেন

  • বিপ্লব রহমান | ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ১০:২৫102227
  • ভুল পন্থায় রাষ্ট্র বিপ্লব ব্যর্থ হলেও নকশাল বাড়ি আনদোলনের মানবিক আদর্শ, কীভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছাপ রেখে যায়, জমি জালিয়াতি রুখে দেওয়ার চেষ্টা সেই ইতিকথার স্বীকারোক্তি।  ব্রাভো 


    এপারে হস্তচালিত লেটার প্রেস  (পরে বিদ্যুৎ চালিত) যেন ধূসর অতীত।  আটের দশকে কলেজে পড়ার সময় মাথায় ছিল লিটল ম্যাগাজিনের ভুত, তখন খুব কাছ থেকে দেখেছি,  লেটার প্রেস, সিসের হরফ, খোপে খোপে উল্টো হরফ, গ্যালি বয়-- সবই কেমন রাতারাতি অফসেট প্রেস আর কম্পিউটার কম্পোজে উঠে গেল! অনেক কথা  মনে করিয়ে দিল এই লেখা। 


    দারুণ ধারাবাহিক 

  • aniruddha chakraborty | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:১০102264
  • সুন্দর

  • Goutam Mitra | ০২ জুন ২০২১ ২২:২৬494486
  • সমীর দা এখন কোথায় আছেন? লাবনীতে থাকতেন জানি। কলেজ স্ট্রিট এলাকায় একটি বইয়ের দোকান ন ছিল।  সালটি ১৯৮৪ আগে হবে।  

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন