এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নাসিমা সুলতানার কিছু কবিতা

    লিলি লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ অক্টোবর ২০২০ | ৮৯০ বার পঠিত
  • নাসিমা সুলতানা

    জন্ম: ১৫ই জানুয়ারি, ১৯৫৭, কুষ্টিয়া। ১৯৮২তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ। লেখালেখির শুরু স্কুল জীবনে। প্রথম মনস্ক আত্মপ্রকাশ ১৯৭৬ এ সমকাল পত্রিকার মাধ্যমে।

    "কবি নাসিমা সুলতানা মারা যান ১৯৯৭ সনে। আমৃত্যু ক্যান্সারের সাথে লড়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার কবিতাগ্রন্থ খুব সম্ভবত দুটি। এখন অবশ্য তার রচনাসমগ্র পাওয়া যায়। তিনি বেশকিছু গল্পও লিখেছিলেন।"

    মৃগয়ায় যুদ্ধের ঘোড়া
    লেখক: নাসিমা সুলতানা
    প্রকাশক: মুক্তধারা
    প্রথম প্রকাশ: এপ্রিল ১৯৮৫
    মূল্য: ১৮ টাকা।

    চাই

    আমিও চাই এই নিরীশ্বর জীবনের দিকে সহাস্যে আঙুল তুলে বলি
    বেশ আছি সুখে আছি
    অন্ততঃ একদিনও অসম্ভব ... অসম্ভব বেঁচে থাকা গুলো
    গ্রীবা উঁচু করে দাঁড়াক জানালায়
    একদিনও জ্যোৎস্নার মধ্যে বেঁচে থাকুক চাঁদ ও বসন্তের মুণ্ডুহীনতা
    - আমি ভালোবাসার বিষে ডুবে থাকবো বহুক্ষণ, মুখ তুলবোনা।
    ঘুমের মধ্যে দপ করে জ্বেলে দেবো ফসফরাস অস্তিত্ব, স্বপ্ন
    দেখবোনা।
    রাস্তায় যে কোনো লোককে ডেকে অমায়িক বলবো- আপনি কি
    সুখে আছেন মশাই?

    আমিও চাই একদিন আমার কামস্পৃহা জ্বলতে থাকুক অনির্বাণ
    হুশ্‌হাশে্ উড়ে যাক মদ ও মাগীবাজ ছোক্‌রা
    অন্ততঃ একদিনও আমার নিঃশ্বাসে পুড়ে যাক
    তাসের আড্ডার বান্ধবেরা
    আমি শুভরাত্রি বলে তাদের দিকে বাড়িয়ে দেবো হাত,

    একদিনও শূন্য ঘরে গম্‌গম্‌ করে উঠুক ভগবানের কণ্ঠস্বর
    আমি বাসনার ফেণায় আমূল আবৃত হতে থাকবো, মুখ তুলবোনা।
    ভালোবাসার বিষে ডুবে থাকবো বহুক্ষণ, মুখ তুলবোনা।



    দ্বিপ্রহরে

    এমন করে তাকালে কেন তুমি?
    আমি কাউকে না বলে কোন দুঃখের কাছে না গিয়ে
    দ্বিপ্রহরে খুলে দিলাম দরোজা।
    দুঃখ আমাকে ভীষণ দুঃখ দিয়ে গেলো
    দুঃখ আমাকে বলে গেলো দুঃখ দুঃখ
    এমন করে তাকালে কেন তুমি?
    উত্তর সমুদ্রে থেকে ঝড় এসে অন্ধকার জলে
    খুলে দিলো আদিম ভাসান

    আমি তো চলে যেতেই চাই কাউকে না জানিয়ে অনিবার্য পতনের ঘাসবন ভেঙ্গে
    তবে কেন এখনো দীর্ঘ সময় ধরে দরোজায় কড়া বেজে যায়
    তবে কেন জন্মান্তরের শাঁখ
    নাম ধরে ডেকে যায় - 'সন্তানের শুভ হোক' বলে!
    আমি তো যেতেই চাই .... এ খেলা আমার নয়
    আমি ঠিক যাবো উজ্জল পরীর মত নেচে নেচে
    অর্জুন গেছের ছায়ায় সেখানে
    পবিত্র মানুষের চোখে জ্বলে ওঠে নীলকান্ত ভালোবাসা

    এমন করে তাকালে কেন তুমি?
    এমন ভীষণ ভীষণ দুঃখ দিলে
    আমি দুঃখের কাছে গড় হয়ে প্রণাম করিনি
    আমি কাউকে না বলে
    দ্বিপ্রহরে শুধু খুলে দিয়েছি দরোজা



    যীশু শুয়ে আছেন সমুদ্রতীরে

    সমুদ্রস্নানের স্মৃতি আমার ভেতর কি যেন জাগিয়ে দেয়
    - এক আশ্চর্য নতুন পাথর
    মনে হয় এ শরীর অলৌকিক মোমের শরীর
    এ দৃষ্টি শীতল সবুজ ঝাউ গাছ
    হাওয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে বিষণ্ণ বোতাম খুঁটে নেয় ঝিনুকের মত
    খুব সূক্ষ্ম শৈল্পিক সুখ।
    কবে এক শীতে আমার লাল কার্ডিগান ভরে গিয়েছিল ঘাসফুল আর আতরের গন্ধে
    কবে একদিন কুয়াশার ভেতর গুনে গুনে একচল্লিশটি চুম্বন করেছিলে তুমি
    আর বলেছিলে- 'এর নাম ভালোবাসা ..... ঐ নীল আকাশের ভেতর যেমন হলুদ ঘুড়িটি'!
    মনে হয় সেই সব সুখ বকুল ফুলের মত ভাস্‌তে ভাস্‌তে চলে যাচ্ছে বাদামী ফেনায়-
    সমুদ্রস্নানের স্মৃতি আমার ভেতর জাগিয়ে দেয় সেই আশ্চর্য নতুন পাথর
    মনে হয় যিশু আছেন সমুদ্রতীরে
    এই পোশাক-আশাক ছুঁড়ে দিয়ে তার কাছে দাড়াতেই
    বদলে গেছে আমার আত্মা
    তারপর এ শরীর অলৌকিক মোমের শরীর
    এ দৃষ্টি শীতল সবুজ ঝাউগাছ
    হাওয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে বিষণ্ণ বোতাম খুঁটে নিচ্ছে ঝিনুকের মত
    খুব সূক্ষ্ম, শৈল্পিক সুখ।



    কিছু ক্রোধ হোক

    একদিন ময়ূর সিংহাসন আমাদের ছিল ভেবে কিছু ক্রোধ হোক এইবার
    একটা মারাত্মক কিছু ঘটুক এইবার।
    প্রতিদিন আত্মহত্যা এসে টোকা দেবে দরোজায় এমন হয় না
    প্রতিদিন প্রাচীন মুখোশ, পরচুলা আর বেলফুল নিয়ে কেটে যাবে গন্ধময় বিকেল
    - এমন হয় না
    প্রতিদিন নষ্ট সহবাসে ব্যর্থ হবে জীবন এমন হয় না হয় না!

    কিছু ক্রোধ হোক এইবার, ভয়ংকর ঈর্ষায় কাঁপুক ঘরবাড়ি
    তারপর ঠিক্‌ ঠিক্‌ জ্যোৎস্না প্লাবিত মাঠে বুনো জন্তুর মত নেমে আসবে দলে দলে মানুষের পাল
    হিংস্র নখরে তারা ফালি ফালি করে ছিঁড়ে দেবে ব্যর্থতা বিষয়ক শব্দগুলি
    আর এইভাবে তাদের বুকের কাছে ধীরে ধীরে জেগে উঠবে সোনামুখী ধান
    পৌষ-নবান্ন, ইলিশ মাছের ঘ্রাণ, কামরাঙা সুখ
    জেগে উঠবে শীতল পাটিতে বসে জুঁই ফুলের মত সুগন্ধী অন্নের মুঠি।
    একদিন ময়ূর সিংহাসন আমাদের ছিলো ভেবে কিছু ক্রোধ হোক এইবার
    একদিন গনগনে সূর্যের নীচে পোশাক আশাক ছুঁড়ে দিয়ে
    বলুক সবাই আমাদের আত্মা বদলে দাও প্রভু
    আমাদের কিছু ক্রোধ দাও।



    দুঃখ তোমাকে

    দুঃখ তোমাকে এক উজ্জল রুমাল দিলাম, বাড়ি
    ফিরে যাও, আজ থেকে ছাড়াছাড়ি অনন্তকাল
    আজ তিনজন পুরুষ বন্ধুকে নিয়ে অন্ধকারে বসে সিগারেট খাবো
    হুইস্কি সহ্য হয় না আমার, অসম্ভব অগ্নিতে পুড়ে যায় দ্বিধা

    আমার বুকেতে বাসনা আছে। ...... অসম্ভব গরম জল আর
    বঙ্গোপসাগরের লবণ
    একটা কাক যদি ওঠে ভরদুপুরে, বলো বাসনা
    অসম্ভব নত হবে কিনা!

    দেড়মাস চিঠি না পাওয়ার দুঃখ তুমি
    দেড়মাস কবিতা না লেখার দুঃখ তুমি
    দেড়মাস উচ্চাকাঙ্খাদের শবযাত্রায় দুঃখ তুমি
    আজ থেকে ছাড়া ছাড়ি অনন্তকাল
    তোমাকে এক উজ্জল রুমাল দিলাম, বাড়ি ফিরে যাও
    আজ তিনজন পুরুষ বন্ধুকে নিয়ে অন্ধকারে বসে সিগারেট খাবো
    মৃতদের লুকিয়ে ছিঁড়ে নেব একটা হিম হাওয়া দুর্বোধ্য বিকেল
    বলবো আহ্‌ কি সুন্দর বেঁচে থাকা!



    পটভূমি নেই

    ক্রমাগত দেড়মাস দেখে যাচ্ছি এই স্বপ্ন
    ক্রমাগত অবৈধ শূন্যতায় এক কাতর সঙ্গমে ভেসে যাচ্ছে আমার শরীর
    ..... এই ভাবে আমার দিবস ও রাত্রির মধ্যে ব্যবধান
    এইভাবে জীবনের মধ্যে চাঁদ ও বসন্তের ভাগাভাগি।
    ( 'এসব সহ্য করবো না আমি' বলে কোন কোনদিন
    কল্পনায় শাসাই এক অলীক ঈশ্বরকে

    অন্ধকারে তিনি ছুঁড়ে দেন তিক্ত হাসি, ওডিকোলনের গন্ধ।)
    আমার কি শ্বাস-প্রশ্বাস নেই এভাবে ঝুলে থাকবো অবচেতব নির্ভর!
    আমি কি স্ত্রীলোক নই? স্বপ্নে ক্রমাগত অপরাধ করে যাবো
    ভালোলাগায় উঁচু হতে হতে ছুঁয়ে দেব মনুমেন্ট!
    দেড়মাস ক্রমাগত এইসব দেখে যাচ্ছি
    দেড়মাস ক্রমাগত রক্তে শুঁষে নিচ্ছি গোপন সিফিলিস
    আমার কি রক্তমাংস নেই?
    ইচ্ছে অনিচ্ছে নেই?
    আমি কি এভাবে শুয়ে থাকতে চেয়েছি এক দেবতুল্য পুরুষের সাথে

    ( 'এসব ভালো নয়' বলে কোনো একদিন
    কল্পনায় শাসাই এক অলীক ইশ্বরকে
    অন্ধকারে তিনি ছুঁড়ে দেন তিক্ত হাসি, ওডিকোলনের গন্ধ।)



    যা কিছু পারোনি তুমি

    যা কিছু পারোনি তুমি, দাওনি আমাকে
    আমি তাই দিয়ে দেব অন্য কাউকে- তোমাকে দেব না।
    ইচ্ছে হলে খালি পায়ে ঘুরে আসবো পৃথিবীর তাবৎ নিষিদ্ধ এলাকা
    শহরের সব চাইতে নোংরা চায়ের দোকানে নিঃশেষ করে কয়েকটি পেয়ালা
    সবচে উচ্ছন্নে যাওয়া ছোক্‌রাদের প্রতি ছুঁড়ে দিয়ে বেলেল্লাপনা
    ক্লিনশেভ্‌ ফুর্‌ফুরে্‌ তরুণদের ধড়-মুণ্ডুগুলো চিবিয়েচাবিয়ে
    হাড়গোড় আর উচ্ছিষ্ট সব সাজিয়ে রাখবো ড্রেসিংটেবিলে
    তোমার ঈর্ষার মধ্যে ছিল যে ছেলেটি
    তার সমস্ত শরীরে আমি চুমু খাবো চুমু খাবো
    সারারাত আদরে আদরে শীর্ষলাভ ঘটাবো নিপুণ;
    তখন 'ঐ শালাকে দেখে নেব' বলে দৌড়ে যাবে তুমি
    চন্দ্রাহত মানুষের মত
    শরীরে গরম হয়ে উঠবে তোমার, তরল আগুনের ফেণাময় স্রোত
    শিষ দিয়ে বেজে উঠবে শিরায় শিরায়
    আর সেই তোলপাড় প্রবল দ্বৈরথ
    উজ্জল চাবির মত নিয়ে যেতে যেতে হরিৎ শীর্ষে
    আমাকে পাবে না তুমি।



    প্রতিপক্ষ

    একটা অকেজো ত্রিশূল নিয়ে আমি আর কি করতে পারি, বলো
    বড় জোর মুখ থুবড়ে পড়বে ওটা তোমার উঠোনে
    ভাঙ্গা কাঁচ, বিষন্ন পেরেকের মত রক্ত ঝরাবে একা দখিন দুয়ারে
    তাতেই বা কি!
    নিঃস্বতার রং খুব লাল
    তাহলেও প্রতিবাদ চিরদিন নীলবর্ণ ভাষা
    'ক্ষুধার্ত' শব্দেরও কোনো ভিন্নতর আতঙ্ক মানায় না,
    পরিপূর্ণ উষার ভেতর দিয়ে চলে যায় প্রতারিত মানুষ
    খালি হাত-পায়ে
    তবু একজন স্পার্টাকাসের পায়ে ছিলো বেড়ি, হাতে কঠোর কুড়াল-
    ভাবিনি মহুয়া কুড়াতে এসে শিমুল তুলোর মত হাওয়ায়
    ছড়িয়ে যাবে ভালোবাসা
    আর পাথরকুচির পরিবর্তে তুলে নেব একটা মতিচ্ছন্ন কামুক ত্রিশূল
    কি করতে পারি আমি!
    বড় জোর মুখ থুবড়ে পড়বে ওটা তোমার উঠোনে
    জীর্ণ চৌকাঠ ঘিরে খেলে যাবে ভয়ংকর খেলা
    একটা অকেজো ত্রিশূল কি আর বিদ্ধ হতে পারে
    সবল প্রতিপক্ষের বুকে?
    তবু তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জানাবার এই একটি মাত্র অস্ত্র ছিলো আমার



    ঘুমে ছিলাম একা ছিলাম

    যখন ঘুমে ছিলাম একা ছিলাম- জাগরণ ফাকি দিয়ে গেছে
    জাগরনের নিঃসঙ্গতা ঝরে পড়ে
    এলোমেলো হাওয়ার বুননে কেঁপে ওঠে বিষাদের জল.....
    কাউকে যেন কথা দিয়েছিলাম কাছে যাবো বলে
    রোদ্দুরের গন্ধ শুঁকে শুঁকে উড়ে যায় আমার সমূহ একাকীত্ব
    কথা রাখা হয় না আর হয় না!
    ঘর-বাড়ি ভরে ওঠে নারী ও মানুষে
    ব্রীজ ও বালুচর ভেঙ্গে উঠে আসে একদল যাযাবর
    কথা বলে কথা বলে কথা বলে তারা-
    নিওরোটিক যন্ত্রণার ভেতরও নতুন ফাউন্টেন পেনে
    জেগে ওঠে বেগুনি কবিতা।
    জাগরণে এইসব ... ঠিক মানুষের মত বেঁচে থাকা নয়
    জাগরণে নিঃসঙ্গতা ঝরে পড়ে
    যখন ঘুমে ছিলাম একা ছিলাম
    জাগরণ ফাঁকি দিয়ে গেছে, জাগরণ ফাঁকি দিয়ে যায়।



    বাঘ

    বেশ ছিল বাঘটি লোহার গারদ ঘেরা খুপরির ভেতর
    কসাইখানার ছাঁটা মাংস, ধুলোমাখা বাতাসের মুঠোভর্তি মর্মর
    ভাগাভাগি করে,
    কেটে যাচ্ছিল বেশ ঘুমে-কামে স্থলিত জনতার মধ্যে
    তরতাজা মেয়ে মানুষের সঙ্গে ছেলেখেলা করে মস্ত একলাফে
    লেনিন গ্রাদের পায়রা উড়িয়ে
    বিষণ্ণ মানুষের মত কিছুক্ষণ রৌদ্রস্নান ওয়াইকিকি বীচে;
    ( হঠাৎ একদিন এক নেড়িকুত্তার ডাকে জেগে উঠে দেখলো সে)
    তাকে ভাঙ্গিয়ে খাচ্ছে গোটা দেশ
    তার বিশাল থাবাটি চুরি করে নিয়ে গেছে এক ভূঁইফোঁড়
    আর খেত-খামার-চা বাগানে বিপ্লবের লাল রঙে তার ছবি এঁকে
    শেখানো হচ্ছে শ্রেণী সংগ্রাম
    আত্মহত্যার জন্য কোনো দড়ি তার সামনে ছিল না
    কিম্বা প্রতিশোধের জন্য জীবন
    হঠাৎই একদিন এক নেড়িকুত্তার ডাকে জেগে উঠে লাফিয়ে পড়লো
    বাঘটি এক মৃত বৃক্ষের ডালে



    একটি কুকুরের রেগে ওঠা দেখে মনে পড়লো স্বাধীনতার তেরো বছরের ক্রোধ
    নোঙর ছেঁড়া শীতে এক গাঁট পুরনো কাপড়ের মত মুমুর্ষ বন্দীশালায়
    একফালি মধ্যরাত
    কব্জি ডোবানো রক্তে ভেজা তপ্ত রুটির গন্ধ গায়ে
    একটা জন্তুর মত ভোর গুঁড়ি মেরে নরম লোমশ পায়ে
    এগিয়ে আতে থাকে সূর্যোদয়ের দিকে
    ইউরেশিয়ার ম্যাপে ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ শুনলাম আমরা।
    অনেকদিন হলো ঘুম ভেঙ্গে তাজা রৌদ্রে পান করা হয়নি ফোঁটায় ফোঁটায়
    আমাদের যৌবন
    নিঃস্বতার সঙ্গে লড়তে লড়তে ছড়িয়ে গেছে সাবানের মত নিঃস্বতার ফেনা

    আমাদের সামনেই ঘাসের ভেতর ছিল একটা সবুজ ফড়িং
    একটা বুড়ো শুঁয়ো পোকা
    একজন ভূমিহীন চাষীর জীবন
    আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম একটা গ্রাম মরে যাচ্ছে
    একটা শহর পুড়ছে
    নিজের দেশে আমরা ভুলে ছিলাম সবাইকে
    আমরা কি অপেক্ষায় ছিলাম লাস্ট ডে'জ অফ পম্পাইয়ের মত শেষ একটি দিনের?

    না

    দূরদৃষ্টির অভাবে আমরা তিনটির বেশি অক্ষর পড়তে পারিনি কখনোই
    আমরা মদ খেতে খেতে চমৎকার গল্প করেছি
    পাহাড় চূড়ায় ওঠার গল্প
    একশোটা ব্লেডে একশো'বার বিদ্রোহ ঘটিয়ে
    ঘুরে এসেছে কেউ কেউ গোটা পৃথিবী বিপ্লবের চটিজুতো পায়ে
    স্বাধীনতার তেরো বছর! এভাবে হয় না
    আমার দেশে এক শরীর টাট্‌কা রক্তে বোনা হলো ধান
    তবু ন্যুইয়র্কে, মিয়ামীর ধু ধু উপকূলে
    বুলেভার মোঁপার্নাসে হাঁটতে হাঁটতে
    আমার মনে হয়নি পৃথিবী শূন্যতাময় অন্ধকার গুহা
    মানুষ বর্বর
    গাছেরা মৃত
    মনে হয়নি মাথার ওপর শকুন
    চাঁদের দিকে মুখ করে আছে এক বিশালাকার অভুক্ত নেকড়ে
    স্বাধীনতার তেরো বছর।
    একটি কুকুরের রেগে ওঠা দেখে মনে পড়লো
    স্বাধীনতার তেরো বছর শুধুই গোধূলির ওপার দিয়ে যাওয়া
    কাঁটার মুকুট হাতে
    গোধূলির ওপারে চলে যাওয়া।

    নাসিমা সুলতানা
    কাঁটার মুকুট
    মৃগয়ায় যুদ্ধের ঘোড়া
    ১৯৮৫
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন