এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • পথের বাঁকে

    সুমন মান্না
    আলোচনা | বিবিধ | ১৯ আগস্ট ২০০৭ | ৫৫৫ বার পঠিত
  • আবার শ্রাবণ এলো। ঠিক যেমনটি আসে প্রতিবার। বাজারে সব্জি অগ্নিমূল্য। এদিক-ওদিক কাগজে বন্যার ছবি দেখে একেটু আহারে বলে নিশ্চিন্ত হওয়া। ত্রাণ পৌছনো আর তার অপর্যাপ্ততা নিয়ে চাপানউতোরে ভ্যাপসা চরাচর। দু-একটা খুচরো রেনি ডে পার হয়ে পরের দিন কাজে বেরোতে গিয়ে রাস্তায় নতুন গজিয়ে ওঠা গর্ত বাঁচিয়ে চলে মানুষ। হিন্দিবলয়ের এই প্রান্তে শ্রাবণের অনুষঙ্গে আসে কাঁওয়ারিয়ার দল। কাঁওয়ারিয়া - শব্দটা অচেনা হলেও আমাদের তেমন অপরিচিত নয় কিন্তু এঁরা। আমাদের তোমাদের চেনা অঞ্চলে দেখিনি কি বাঁকে করে জল নিয়ে যাওয়া মানুষের দল? তারকেশ্বর অভিমুখে? এরা তাঁরাই। একটু পার্থক্য আছে। ওখানে যেমন যে যার নিকটবর্তী গঙ্গার ঘাট থেকে জল নিয়ে এসে জড়ো হয় তারকেশ্বরে - এখানে এঁরা হরিদ্বার থেকে গঙ্গাজল বাঁকে করে নিয়ে আসে নিজেদের লোকালয় সংলগ্ন বড় কোনো শিবমন্দিরে। "মুখ, চোখ, হাত, পা - রোগা রোগা চেহারা" - এই পর্যন্ত সব এক, কিন্তু পোশাকের রঙ আলাদা। এদেরটা গেরুয়া। গঙ্গার মোহনার দিকে সাদাই বেশি চলতো - এখনো চলে - তাই না? সেই একই শর্টস, স্যান্ডো গেঞ্জি, কিংবা টী- শার্ট সব গেরুয়া। এদের বাঁকের কারুকাজ অবশ্য অনেক বেশি। বিশাল সব কাঠামো - অবশ্যই হালকা পদার্থ দিয়ে তৈরি। এই সব সাজানো বাঁক সব পাওয়া যাবে হরিদ্বারে ঠিক শ্রাবণ চতুর্দশীর ক'দিন আগে থেকেই। দাম দু'শ টাকা থেকে কুড়ি হাজারের মধ্যে। গঙ্গাজল ধরার ব্যবস্থা আগে ছিলো কাচের বোতলে - এখন প্লাস্টিকের চল হয়েছে। মাটির ঘট এখানে চলে না। পুন্য লগ্নে স্নান সেরে জল ভরে বাঁক নিয়ে শুরু হয় যাত্রা। বাঁক মানে এখানে কাঁওয়ার সেই থেকেই কাঁওয়ারিয়া, কাঁওয়ারি বলেন কেউ কেউ।

    চারজন থেকে শুরু করে বড় দল হতে পারে যেকোনো সংখ্যক কাঁওয়ারিয়া। একজন হবে দলপতি। বাকিরা তার কথা শুনে চলবে। পথের কোনো বেচাল দেখলে দলপতি দন্ড ধার্য করতে পারেন - আর্থিক জরিমানা। রাতের কোনো বিশ্রামের জায়গায় পৌছে সেই জরিমানার টাকায় পুজো চড়িয়ে প্রসাদ বিতরণ হয় দলের মধ্যেই। এই ক'দিনের জন্য অন্য ব্যবস্থা, অন্য নিয়ম - মেনেও চলে কিন্তু মানুষ।

    মোটামুটি চার ধরণের কাঁওয়ারের দল হয়, ১) ডাক, ২) খাড়ি, ৩)ঝুলা ও ৪) বৈকুন্ঠি। ডাক কাঁওয়ারের পথ সবচেয়ে কঠিন। এদের পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাত্রা সম্পুর্ণ করতে হয়। পথে বিশ্রামের সুযোগ কম। কিছু ক্ষেত্রে পাঁচ - ছ জনের দল গাড়ি নিয়ে বেরোয়। জনা দুয়েক সেই ধীরে চলা গাড়ির পাশে পাশে দৌড়ে যেতে থাকে, বাকিরা গাড়ির মধ্যে। তিন চার কিলোমিটার পর পর পালা বদলে অন্য জন পথে নামে - অনেকটা রিলে রেসের ধরণ। বলাই বাহুল্য, বেশি সংখ্যায় এদের দেখা যায় না আর এতেই নাকি পুণ্যবল সবচেয়ে বেশি - more risk to get more return এর ফান্ডা। খাড়ির দলে প্রতি বাঁক পিছু দুজন থাকে। দলে দুটো বাঁক মানে চারজনের দল। এতে বাঁক কোথাও নামিয়ে রাখা যাবে না। বিশ্রামের সময়ে দুজন বিশ্রাম করবে, একজন দুটো বাঁক নিয়ে দাঁড়িয়ে (খাড়া থাকবে) আর একজন তাকে পাহারা দেবে - যদি সে ঢুলে পড়ে বা কিছু। পালা করে এসব চলতে থাকে। এরাও কাঁওয়ারির দলে সংখ্যালঘু। ঝুলা কাঁওয়ার সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। এদের বাহারি বাঁক, বিরাট দল চোখে পড়ার মতো। এক্ষেত্রেও বাঁক পথের মধ্যে মাটিতে রাখা যায় না, তবে অস্থায়ী বিশ্রামস্থলে রাখা বাঁক রাখার দোলনায় বা ঝুলায় সেটা রেখে বিশ্রাম নেওয়া যায়। সেই ঝোলানো থেকেই ঝুলা। তারকেশ্বর যাত্রীরাও তো বেশিরভাগ এমনই, তাই না?

    সবচেয়ে কম কঠিন (আরামদায়ক কথাটা আর বল্লাম না) হল বৈকুন্ঠি কাঁওয়ার। এরা বাঁক মাটিতে রাখতে পারেন। দুশো তিনশো কিলোমিটার রাস্তা আট দশ দিনে পার করতে দিন প্রতি ত্রিশ চল্লিশ কিলোমিটার চলতে হয়। আর পথ বলতে তো হাইওয়ে। লোকালয়ে পথের পাশে তৈরি হয় অস্থায়ী বিশ্রামস্থল। এখানে পাওয়া যাবে খাবার, বিছানা, স্নানের যোগাড়। একটানা অনেকটা হেঁটে ক্লান্ত কাঁওয়ারের দল এখানে আসে। বিশ্রাম নেয়। সবই বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। কাঁওয়ার কিন্তু তা নেবে না, সে সুবিধা নেওয়ার পর যথাসাধ্য মূল্য দিয়ে দেবে, না হলে তার পুণ্যের ভাগে কম পড়ে যাবে যে। স্থানীয় ধনী ব্যবসায়ী, বয়স্ক মানুষ এখানে আসবে কাঁওয়ারের পায়ে মালিশ করার জন্য - সেই মালিশ নিলে আবার কাঁওয়ারের পুণ্য মাশুল দিতে হয়। ছোটোখাটো টোটকা কিছু জেনে রাখতে হয় পথের সুবিধা অসুবিধার কথা মাথায় রেখে। যেমন অভিজ্ঞ কাঁওয়ারিয়া বেশ খানিকটা ঘি (প্রায় আড়াইশো তিনশো গ্রাম) সঙ্গে রাখেন। পথের মধ্যে বিশ্রাম নিয়ে খাওয়ার সময়ে একটু ফলটল খেয়ে এক কাপ চা আর সেই চায়ের ভাঁড়েই এক কাপ ঘি যদি পান করা যায়, শরীরে অদ্ভুত বল পাওয়া যায়। ফ্যাটের ক্যালোরি ভ্যালু যে কর্বোহাইড্রেট এর দ্বিগুণের চেয়েও বেশি এরা সেটা বই পড়ে শেখে না।

    আর আমরা দেখি মাসের এই সময়ে হাইওয়েতে ট্রাফিক জ্যাম খুব বেড়ে যায়। প্রশাসনের মোটা মোটা মানুষ হাতে ওয়াকিটকি নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে। কোথাও রাস্তার ধারে দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করা থাকে কাঁওয়ারের জন্য। হরিদ্বার থেকে আসার পথে দিল্লির উপকন্ঠের গাজিয়াবাদ এর ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে। ভ্যাপসা গরমে ট্রাফিক জ্যামে ঘেমে যেতে যেতে আপনি ভাববেন এই বাৎসরিক যাত্রা কেন? এই শারীরিক সক্ষমতা ঠিকমতো প্রয়োগ করলে তো অলিম্পিকের মেডেল আসে। যত্তোসব! রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে ফেঁসে গিয়ে বেজার মুখে বাড়ি ফেরে অফিসজীবী বেশ দেরি করেই। ক্রমবর্ধমান গাড়ির সংখ্যা আর হ্রাস পেতে থাকা সহিষ্ণুতা - এর যাঁতাকলে পিষে যেতে থাকে পথচারি, এই মরশুমে দু'একজন কাঁওয়ারিও। এদের দলে বয়সের বালাই নেই। বারো - তেরোয় পা দেওয়ারা যখন ফোসকা পড়া পা নিয়ে নেংচে নেংচে হাঁটে, একটা অক্ষম রাগ নেমে আসে চুলের ফাঁক থেকে ঘামের স্রোতের মতো। ধর্মের নামে আর কতদিন এসব লীলাখেলা দেখতে হবে। তবু, যখন ওদের মুখের দিকে আলাদা করে তাকাই, কথা বলি, অফিসের বাইরে বসা সিগারেটওয়ালার সঙ্গে - দেখি ওর চোখদুটো জ্বলজ্বল করে ওঠে নিজে যেবার গেছিল তার গল্প করতে গিয়ে। বল্লো -জানেন দলের নিয়ম-কানুন খুব কড়া হয়, রাস্তায় কুকুর দেখলে তাকে কুত্তা বলা যাবে না - বলতে হবে "ভৈরোঁ", লোক কে বলতে হবে "ভোলা" আর মহিলা মাত্রেই "ভোলি"। কদিনের এই নিয়ম - কানু ন খেলা কি কখনোই কিছু প্রভাব ফেলে না মানুষের জীবনে? এই ছুতো ছাড়া একজন পানওয়ালা, একজন রাস্তার ধাবায় কাজ করা কিশোর কিভাবে বেরোবে তার গন্ডী থেকে? এই দেশে সমস্যা আছে থাকবে। রেনি - ডে দেখে আপনি অফিস না গিয়ে ফি-বছর দিন দুয়েক অফিস যান না। সেই বেনিয়ম থাকুক এটুকুর সাথে। একটু জ্যামে জমে রইলেনই বা, এই তো আর কটা দিন।

    আগস্ট ১৯, ২০০৭ওখানে যেমন যে যার নিকটবর্তী গঙ্গার ঘাট থেকে জল নিয়ে এসে জড়ো হয় তারকেশ্বরে - এখানে এঁরা হরিদ্বার থেকে গঙ্গাজল বাঁকে করে নিয়ে আসে নিজেদের লোকালয় সংলগ্ন বড় কোনো শিবমন্দিরে। "মুখ, চোখ, হাত, পা - রোগা রোগা চেহারা" - এই পর্যন্ত সব এক, কিন্তু পোশাকের রঙ আলাদা। এদেরটা গেরুয়া। গঙ্গার মোহনার দিকে সাদাই বেশি চলতো - এখনো চলে - তাই না? সেই একই শর্টস, স্যান্ডো গেঞ্জি, কিংবা টী- শার্ট সব গেরুয়া। এদের বাঁকের কারুকাজ অবশ্য অনেক বেশি। বিশাল সব কাঠামো - অবশ্যই হালকা পদার্থ দিয়ে তৈরি। এই সব সাজানো বাঁক সব পাওয়া যাবে হরিদ্বারে ঠিক শ্রাবণ চতুর্দশীর ক'দিন আগে থেকেই। দাম দু'শ টাকা থেকে কুড়ি হাজারের মধ্যে। গঙ্গাজল ধরার ব্যবস্থা আগে ছিলো কাচের বোতলে - এখন প্লাস্টিকের চল হয়েছে। মাটির ঘট এখানে চলে না। পুন্য লগ্নে স্নান সেরে জল ভরে বাঁক নিয়ে শুরু হয় যাত্রা। বাঁক মানে এখানে কাঁওয়ার সেই থেকেই কাঁওয়ারিয়া, কাঁওয়ারি বলেন কেউ কেউ।

    চারজন থেকে শুরু করে বড় দল হতে পারে যেকোনো সংখ্যক কাঁওয়ারিয়া। একজন হবে দলপতি। বাকিরা তার কথা শুনে চলবে। পথের কোনো বেচাল দেখলে দলপতি দন্ড ধার্য করতে পারেন - আর্থিক জরিমানা। রাতের কোনো বিশ্রামের জায়গায় পৌছে সেই জরিমানার টাকায় পুজো চড়িয়ে প্রসাদ বিতরণ হয় দলের মধ্যেই। এই ক'দিনের জন্য অন্য ব্যবস্থা, অন্য নিয়ম - মেনেও চলে কিন্তু মানুষ।

    মোটামুটি চার ধরণের কাঁওয়ারের দল হয়, ১) ডাক, ২) খাড়ি, ৩)ঝুলা ও ৪) বৈকুন্ঠি। ডাক কাঁওয়ারের পথ সবচেয়ে কঠিন। এদের পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাত্রা সম্পুর্ণ করতে হয়। পথে বিশ্রামের সুযোগ কম। কিছু ক্ষেত্রে পাঁচ - ছ জনের দল গাড়ি নিয়ে বেরোয়। জনা দুয়েক সেই ধীরে চলা গাড়ির পাশে পাশে দৌড়ে যেতে থাকে, বাকিরা গাড়ির মধ্যে। তিন চার কিলোমিটার পর পর পালা বদলে অন্য জন পথে নামে - অনেকটা রিলে রেসের ধরণ। বলাই বাহুল্য, বেশি সংখ্যায় এদের দেখা যায় না আর এতেই নাকি পুণ্যবল সবচেয়ে বেশি - more risk to get more return এর ফান্ডা। খাড়ির দলে প্রতি বাঁক পিছু দুজন থাকে। দলে দুটো বাঁক মানে চারজনের দল। এতে বাঁক কোথাও নামিয়ে রাখা যাবে না। বিশ্রামের সময়ে দুজন বিশ্রাম করবে, একজন দুটো বাঁক নিয়ে দাঁড়িয়ে (খাড়া থাকবে) আর একজন তাকে পাহারা দেবে - যদি সে ঢুলে পড়ে বা কিছু। পালা করে এসব চলতে থাকে। এরাও কাঁওয়ারির দলে সংখ্যালঘু। ঝুলা কাঁওয়ার সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। এদের বাহারি বাঁক, বিরাট দল চোখে পড়ার মতো। এক্ষেত্রেও বাঁক পথের মধ্যে মাটিতে রাখা যায় না, তবে অস্থায়ী বিশ্রামস্থলে রাখা বাঁক রাখার দোলনায় বা ঝুলায় সেটা রেখে বিশ্রাম নেওয়া যায়। সেই ঝোলানো থেকেই ঝুলা। তারকেশ্বর যাত্রীরাও তো বেশিরভাগ এমনই, তাই না?

    সবচেয়ে কম কঠিন (আরামদায়ক কথাটা আর বল্লাম না) হল বৈকুন্ঠি কাঁওয়ার। এরা বাঁক মাটিতে রাখতে পারেন। দুশো তিনশো কিলোমিটার রাস্তা আট দশ দিনে পার করতে দিন প্রতি ত্রিশ চল্লিশ কিলোমিটার চলতে হয়। আর পথ বলতে তো হাইওয়ে। লোকালয়ে পথের পাশে তৈরি হয় অস্থায়ী বিশ্রামস্থল। এখানে পাওয়া যাবে খাবার, বিছানা, স্নানের যোগাড়। একটানা অনেকটা হেঁটে ক্লান্ত কাঁওয়ারের দল এখানে আসে। বিশ্রাম নেয়। সবই বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। কাঁওয়ার কিন্তু তা নেবে না, সে সুবিধা নেওয়ার পর যথাসাধ্য মূল্য দিয়ে দেবে, না হলে তার পুণ্যের ভাগে কম পড়ে যাবে যে। স্থানীয় ধনী ব্যবসায়ী, বয়স্ক মানুষ এখানে আসবে কাঁওয়ারের পায়ে মালিশ করার জন্য - সেই মালিশ নিলে আবার কাঁওয়ারের পুণ্য মাশুল দিতে হয়। ছোটোখাটো টোটকা কিছু জেনে রাখতে হয় পথের সুবিধা অসুবিধার কথা মাথায় রেখে। যেমন অভিজ্ঞ কাঁওয়ারিয়া বেশ খানিকটা ঘি (প্রায় আড়াইশো তিনশো গ্রাম) সঙ্গে রাখেন। পথের মধ্যে বিশ্রাম নিয়ে খাওয়ার সময়ে একটু ফলটল খেয়ে এক কাপ চা আর সেই চায়ের ভাঁড়েই এক কাপ ঘি যদি পান করা যায়, শরীরে অদ্ভুত বল পাওয়া যায়। ফ্যাটের ক্যালোরি ভ্যালু যে কর্বোহাইড্রেট এর দ্বিগুণের চেয়েও বেশি এরা সেটা বই পড়ে শেখে না।

    আর আমরা দেখি মাসের এই সময়ে হাইওয়েতে ট্রাফিক জ্যাম খুব বেড়ে যায়। প্রশাসনের মোটা মোটা মানুষ হাতে ওয়াকিটকি নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে। কোথাও রাস্তার ধারে দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করা থাকে কাঁওয়ারের জন্য। হরিদ্বার থেকে আসার পথে দিল্লির উপকন্ঠের গাজিয়াবাদ এর ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে। ভ্যাপসা গরমে ট্রাফিক জ্যামে ঘেমে যেতে যেতে আপনি ভাববেন এই বাৎসরিক যাত্রা কেন? এই শারীরিক সক্ষমতা ঠিকমতো প্রয়োগ করলে তো অলিম্পিকের মেডেল আসে। যত্তোসব! রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে ফেঁসে গিয়ে বেজার মুখে বাড়ি ফেরে অফিসজীবী বেশ দেরি করেই। ক্রমবর্ধমান গাড়ির সংখ্যা আর হ্রাস পেতে থাকা সহিষ্ণুতা - এর যাঁতাকলে পিষে যেতে থাকে পথচারি, এই মরশুমে দু'একজন কাঁওয়ারিও। এদের দলে বয়সের বালাই নেই। বারো - তেরোয় পা দেওয়ারা যখন ফোসকা পড়া পা নিয়ে নেংচে নেংচে হাঁটে, একটা অক্ষম রাগ নেমে আসে চুলের ফাঁক থেকে ঘামের স্রোতের মতো। ধর্মের নামে আর কতদিন এসব লীলাখেলা দেখতে হবে। তবু, যখন ওদের মুখের দিকে আলাদা করে তাকাই, কথা বলি, অফিসের বাইরে বসা সিগারেটওয়ালার সঙ্গে - দেখি ওর চোখদুটো জ্বলজ্বল করে ওঠে নিজে যেবার গেছিল তার গল্প করতে গিয়ে। বল্লো -জানেন দলের নিয়ম-কানুন খুব কড়া হয়, রাস্তায় কুকুর দেখলে তাকে কুত্তা বলা যাবে না - বলতে হবে "ভৈরোঁ", লোক কে বলতে হবে "ভোলা" আর মহিলা মাত্রেই "ভোলি"। কদিনের এই নিয়ম - কানু ন খেলা কি কখনোই কিছু প্রভাব ফেলে না মানুষের জীবনে? এই ছুতো ছাড়া একজন পানওয়ালা, একজন রাস্তার ধাবায় কাজ করা কিশোর কিভাবে বেরোবে তার গন্ডী থেকে? এই দেশে সমস্যা আছে থাকবে। রেনি - ডে দেখে আপনি অফিস না গিয়ে ফি-বছর দিন দুয়েক অফিস যান না। সেই বেনিয়ম থাকুক এটুকুর সাথে। একটু জ্যামে জমে রইলেনই বা, এই তো আর কটা দিন।

    আগস্ট ১৯, ২০০৭
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৯ আগস্ট ২০০৭ | ৫৫৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন