এবার সলওয়া জুড়ুম ক্যাম্পে অ্যাডাল্ট এডুকেশন সেন্টার দেখতে যাওয়া। প্রায় দশ কিলোমিটার হাইওয়েতে উজিয়ে গিয়ে ডানদিকে প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে এই কসৌটি গ্রাম। বছর দশেক আগে এখানে স্থাপিত হয়েছে আশ্রয় শিবির। সরু পাকা রাস্তার দুপাশে ধানের ক্ষেত আর জংগল। গাঁয়ের সীমার কাছে ক্ষেতগুলো কেমন ছাদের প্যারাপিট ওয়ালের কায়দায় মাটি দিয়ে অনেকটা উঁচু করা। খানিকটা দেশভাগের সময় থেকে বাঙালী উদ্বাস্তুদের জন্যে বানানো মানা ক্যাম্পের মত কয়েকটি পাকা বাড়ি। একটু ব্যারাক গোছের, পেছনে রান্নাঘর ও ক্ষেতের সীমার কাছে বাথরুম পায়খানা। কিছু পুরনো, কিছু নতুন, কিছু তৈরি হচ্ছে। তবে বাউন্ডারিতে গোল গোল করে প্যাঁচানো কাঁটাতারের বেড়া। যাতে বুকে হেঁটে অতর্কিতে হামলা না হয়। রাস্তার ওপাশে একই ভাবে প্যাঁচানো কাঁটাতারের বেড়া দেয়া সরকারি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল, খেলার মাঠ। পাশেই সরকারি র্যাশন দোকান ও অন্য মুদি দোকান, আনাজ ভান্ডার ইত্যাদি। জিনিসের চার্ট ও কবে কতক্ষণ খোলা থাকবে তা দেয়া আছে। সন্ধ্যের পরে বন্ধই থাকে। গাছের গায়ে সাক্ষরতার প্রাচার পোস্টারের পাশে একইভাবে বড়সড় করে চাঁদসী ডাক্তারের বিনা ছুরি-কাঁচি ববাসীর, নাসুর( অর্শ, ভগন্দর ইত্যাদি) সারানোর গ্যারান্টি, সাপের ফণার প্রতীকের নীচে ডাক্তার বিশ্বাস! কে বলে বাঙালী ঘরকুনো, ভীতু? সলওয়া জুড়ুম আশ্রয় শিবিরে উড়ছে বাঙালীর বিজয়বৈজয়ন্তী। আসলে বহুদিন ধরেই বাঙালী উদ্বাস্তুরা আছেন জগদলপুরে, কোন্ডাগাঁওয়ে , পাখানজোড়ে। এপাশে একটি বড় হলঘরে নবসাক্ষরদের শিক্ষণ কেন্দ্র। বাইরের দেয়ালে বড় বড় করে আঁকা ডোনাল্ড ডাক ও মিকি মাউস।রাস্তার ধারে সামনের আঙিনায় প্রায় দুশ লোকের সভা। তাতে সত্তর জনের মত স্থানীয় আদিবাসী ছাত্রছাত্রী। একটি মেয়ে স্থানীয় গোঁড়ি উপভাষায় বলল যে সাক্ষর হওয়ায় ওর ঘরের জীবনেও পরিবর্তন এসেছে। এখন ও রোজ খবরের কাগজ পড়ে। উত্তর বস্তার বা জগদলপুর পর্য্যন্ত চলে হল্বী বোলি, আর শঙ্খিনী-ডঙ্কিনী নদীর এপারে দক্ষিণ বস্তারে চলে গোঁড়ি যা তেলুগুর সঙ্গে মেলে। স্থানীয় একজন শিক্ষক দোভাষীর কাজ করছেন। ডায়রেক্টর জেনারেল বা ডিজি টেন ও টুয়েল্ভের মেয়েদের জিগ্যেস করলেন তোমাদের মধ্যে কজন নিজের বাবা-মা বা পাশের বাড়ির কাকু-কাকিমাকে প্রথমে অক্ষর জ্ঞান ও পরে চিঠি লেখা হিসেব রাখা শেখাতে চাও। বল্লেন আগামী মার্চে এসে দেখব কতজন কথা রেখেছ। স্থানীয় লোকনৃত্য চলছে। আমি গিয়ে ভাব করি ইনশাস রাইফেল নিয়ে ব্যাজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ছত্তিশগড় আর্মড পুলিশের দুই জোয়ানের সঙ্গে। একজন চেয়ে নেয় সাক্ষরতার একটি ম্যাগাজিন। বলে -- আমি উত্তরপ্রদেশের গ্র্যাজুয়েট। বই পড়তে ভালবাসি, এখানে কিছু পাইনে। রোদ্দূর চড়ছে। আমরা দুজন হ্যান্ডপাম্প থেকে জল খেতে একে অন্যের সাহায্য করি, জানতে পারি সকাল থেকে ওর পেটে কিছু পড়েনি। ভোর ছ'টার থেকে ডিউটি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই দুপুরে লাঞ্চের সময় কিছু জুটবে। জিগাই-- রাত্তিরে মশারি? জঙ্গলে ওডোমস?
-- ওসব সি আর পি'র জোয়ানরা পায়, হাজার হোক কেন্দ্রীয় সরকারের সেপাই। আমাদের কে পোঁছে?
ইতিমধ্যে সর্দারজী টাটা সাফারিতে চড়ছেন দেখে সরকারি ছোট আমলাদের মধ্যে টেবিলে সাজানো কাজু-কিসমিস- বিস্কুট-কলা-আঙুর খাবলে নিয়ে পকেটে পোরার অশ্লীল প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। দেখতে দেখতে টেবিল সাফ। আমার পকেটে কিছু বিস্কুট, আর কিসমিস। তার থেকে গুনে ক'টি দেই ওই ছয়ফুটিয়া সেপাইকে, ও হেসে ধন্যবাদ দেয়। সলওয়া জুড়ুম শিবিরের জনতাকে মন দিয়ে দেখেছি। মনে হয় ওদের আজ গাঁয়ে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও ফিরে যাবে না। মানুষ অভ্যাসের দাস। সেই খাঁচার পাখি, বনের পাখি গল্প।
আবার রোড শো। দুই দশক আগে সিপিএম এর নিয়ন্ত্রণে থাকা ভারত জ্ঞান-বিজ্ঞান সমিতির একি হাল! বিজেপি রাজত্বে ওদের দিন গেছে। খালি নানারকম ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সংস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাগরিক হলে ওদের আয়োজন। গান্ধীজির জন্মদিন আজ । তাই নিয়ে নানান বক্তিমে এবং চোখ ধাঁধানো বস্তারের মুরিয়া-মারিয়া লোকনৃত্য। মশাল মিছিল। এবার দান্তেওয়াড়া কলেক্টরের প্রাঙ্গণে হলঘরে সভা। কলেক্টর জানালেন এখানে বিজ্ঞান পড়তে বা ইনজিনিয়ারিং, ডাক্তারি পড়তে স্থানীয় ছেলেরা বিশেষ আসে না। ডিজি বল্লেন-- তাতে কি? আমাদের উচিত আদিবাসীদের জলজঙ্গল, ইকোলজি নিয়ে ট্র্যাডিশনাল নলেজের খোঁজ করে তার মধ্যে যতটুকু আমাদের নেয়ার তাকে সংরক্ষিত করা। কালেক্টর জানালেন যে উনি নবসাক্ষরদের অনেককে সরকারি চাকরি দিয়েছেন। ডিজির চোখ কপালে,-- কি ধরণের চাকরি?
-- এই মালী, চৌকিদার, রাঁধুনি, এস পি ও (স্পেশাল পোলিস ফোর্স)।
-- আমাদের সাক্ষরতা অভিযানের উদ্দেশ্য সরকারি চাকরি পাইয়ে দেয়ার চেয়েও পেশাগত দক্ষতা হাসিল করে সেল্ফ এমপ্লয়মেন্টের দিকে যাওয়া। আর শিক্ষিত কে? যে লোকটি এম বি এ করে দিল্লিতে মাল্টিন্যাশনালে চাকরি করে রাত্তিরে মত্ত অবস্থায় বৌকে পেটায় সেই শিক্ষিত?
এবার সার্কিট হাউসে ফিরতে হবে পেটপূজোর জন্যে। এস পি অফিসের কাছে রাস্তায় খুব বড় করে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সরকারের মস্ত বড় হোর্ডিং। কিন্তু মাও না বলে বলা হয়েছে নকশালপন্থী।
যেমনঃ
নকশালপন্থীরা তোমাদের কি দিয়েছে? হত্যা, গোলামি, আধপেটা খাওয়া, অনিশ্চিত জীবন, বেকারি, পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, পলাতকের ভবঘুরে জীবন?
সরকার তোমাদের কি দিয়েছে? শিক্ষা, শস্তা বাসস্থান, রোজগার, ভয়মুক্ত সম্মানের সামাজিক জীবন?
ঘরে ফিরে এস ছেলেরা, মা ডাকছে যে!
আজ মহাষষ্ঠী। এখানকার রাজপরিবারের কুলদেবী দন্তেওয়াড়ার জাগ্রতদেবী দন্তেশ্বরীমাঈয়ের মন্দিরে দর্শনার্থীদের দু'কিলোমিটার লম্বা দুটি বিশাল লাইন। আজ রাজপরিবারের সবাই এসেছেন পূজো অর্চনা করতে। এখন প্রজারা ঢুকতে পারবে না। ওনাদের শেষ হলে তবে জনসাধারণের অধিকার। তায় মন্দিরে ঢুকতে হলে নিজেদের জামাকাপড় ছেড়ে মন্দিরের দ্বারপ্রান্তে ওয়াঁদের দেয়া সেলাই না করা শ্বেতবস্ত্র পরিধান করে তবে ঢোকা যাবে। সেই ষাটের দশকের মঝামাঝি মধ্যপ্রদেশ সরকারের পুলিশ তৎকালীন মহারাজা প্রবীরচন্দ্র ভঞ্জদেওকে হাজারখানেক আদিবাসীকে পুলিশের ওপর হামলা করতে ওসকানোর অপরাধে জগদলপুর রাজপ্রাসাদের বারান্দায় গুলি করে মারে। তারপর থেকে রাজপরিবারের ক্ষমতা ও প্রভাব বেশ কমেছে। তবে স্থানীয় গরীব আদিবাসীদের চোখে ওঁদের স্থান ভগবানের পরেই।
দু'দিন ধরে দেখতে দেখতে আসছি যে নবরাত্রিতে দেবীদর্শনের জন্যে লোকজন দূর দূর থেকে খালি পায়ে হেঁটে চলেছে। ওরা হাঁটে রাত্তিরে, হাঁটে ভোরবেলায়, রোদ চড়লে গাছের ছায়ায় বা রাজপথের ওপর কোন জনপদে বিভিন্ন ক্লাব, সমিতি বা পঞ্চায়েতের এই উপলক্ষে তীর্থযাত্রীদের জন্যে বানানো শিবিরে। এছাড়া মানত করা কেউ কেউ দন্ডী দিচ্ছে, মানে রাস্তার ওপর শুয়ে বুকে হেঁটে চলছে। রোদ্দূরে পিচগলা রাস্তা তেতে রয়েছে। তাই ওদের আত্মীয়স্বজন সঙ্গে চলেছে ছোট তোষক হাতে নিয়ে ওর সামনে রাস্তায় সেই তোষক পেতে দিচ্ছে যার ওপর বুক চেপে দন্ডী দেয়া চলছে। এইভাবে ওরা চলেছে জগদলপুর থেকে দন্তেওয়াড়া, প্রায় আশি কিলোমিটার। ক্রান্তিকালে কি মানুষের ধর্মচেতনা বা দেবীর জন্যে কষ্ট স্বীকার করার মানসিক আবেগ বেড়ে যায়? কিষেণজীরাই ভাল বলতে পারবেন!
প্রেস কনফারেন্সে ডিজিকে বারুদ গন্ধের মাঝখানে আজকের বস্তারের মৃত্যু উপত্যকায় 'অ-- অনার কে, আ- আমকে, ই-- ইমলীকে, ঈ--ঈখকে' করার সার্থকতা জিগ্যেস করলে উনি বল্লেন যে বামপন্থী উগ্রবাদকে ঠেকাতে হলে স্থায়ী রণনীতি হল গরীব-গুর্বো, পিছিয়ে পড়া লোকজনকে শিক্ষিত করে তোলা। ওরা যত চারদিকে কি হচ্ছে জানতে পারবে, তত গরীবি দূর করার জন্যে মাওবাদীদের হাতুড়ে দাওয়াইকে অস্বীকার করবে।
রাত্তিরে আমরা ফিরে আসি জগদলপুরে। কোনরকমে স্বাক্ষরতা টিমের থেকে ছাড়া পেয়ে খুঁজে বের করি গ্রামীণ ব্যাংকের দুই অফিসারকে, আমার তিরিশ বছরের পুরনো বন্ধুর দল। ওদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াই, গাড়িতে, পায়ে হেঁটে রাতের জগদলপুরে। কখনো কোন রেস্তোরাঁর বাইরের ফুটপাথে বসে কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে দেখি নবরাত্রির উৎসবমুখর শহর, কেনাকাটা করে ঘরে ফেরা হাসিখুশি পরিবার আর ঝলমলে পোশাকে নবযৌবনা নন্দিনীদের। সেই হোটেল, মল, অফিস, কার, মোটরাসাইকেল, সোনার গয়না ও কম্পিউটার দোকান, ইলেকট্রনিক্সের বিপণী। সেই ব্যাংক, কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, ফ্ল্যাটবাড়ি। সেই সিভিল লাইনসে প্রশাসনিক রাজপুরুষদের সরকারি আবাস। কোন মতেই ছত্তিশগড়ের অন্য বড় শহরগুলোর, যেমন রায়পুর, বিলাসপুর, কোরবা, মহাসমুন্দ, থেকে আলাদা মনে হয় না। আমার বিশবছর আগের দেখা জগদলপুর কোথায় হারিয়ে গেছে। সব নারীই যদি হেমা মালিনীর ক্লোন হয়ে যায়!
তবে কি আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে নেই? বন্ধুরা হাসে, বলে এই জগদলপুর গোটা বস্তার নয়। মাঝে মাঝে এরকম ঠান্ডা পরিবেশ তৈরি হয় বটে, কিন্তু ধোঁকা খাসনে, আবার হটাৎ শুরু হয়ে যায়। এর মাঝেই জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ সবই চলতে থাকে।
পরের দিন সকালে জগদলপুর কেন্দ্রীয় জেলে কয়েদিদের মধ্যে অ্যাডাল্ট এডুকেশন সেন্টারের উদ্ঘাটন। সিনেমায় কয়েদিদের যেমনি করে জেলে ঢোকায় তেমনি করে বিশাল বন্ধ দরজার পেটের কাছে ছোট একটু ফাঁক দিয়ে আমাদের ঢোকাল। পুরনো সাজাপ্রাপ্ত এক কয়েদি ভলান্টিয়ার শিক্ষক। আন্ডারট্রায়লদের স্বাভাবিক পোষাক, শাস্তিপ্রাপ্তদের ডোরাকাটা জেলের পোষাক। কথা হল, স্টেট রিসোর্স সেন্টার থেকে আমাদের আরও কয়েকবার এদের মধ্যে আসতে হবে। কথা উঠল এইভাবে শিক্ষা পেয়ে ওদের ভবিষ্যত জীবনে মুক্ত পৃথিবীতে কোন বিশেষ কাজে আসবে কি না!
ডিজি বল্লেন, -- এখানে উপস্থিত ভদ্রলোকেরা বলুন! আপনাদের মধ্যে কয়জন জেল থেকে ছাড়া পাওয়া লোকজনকে নিজেদের ঘরের বা দোকানের কাজে লাগাতে সাহস পাবেন?
এবার ফেরার পালা। রাস্তায় কোন্ডাগাঁও, কেশকাল ও কাঁকের এ প্রথামত নবসাক্ষরদের নিয়ে অ্যাডাল্ট এডুকেশন সেন্টারগুলোর জন্যে জনসভা হল। ডিজি সরকারি আমলাদের এড়িয়ে মঞ্চে ডাকলেন ক্লাস টেন ও টুলেভের মেয়েদের। কথা বল্লেন ভলান্টিয়ার হিসেবে নিজেদের ঘরে এবং তারপর পাড়ায় সাক্ষরতার অভিযান চালাতে। রাত্তিরে কাফিলা ফিরে এল রায়পুর শহরে। কোথাও কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। ঘরের লোকের চিন্তা যাচ্ছিল না। বোঝালাম, বাস্তব রণক্ষেত্র আরও দূরে। নদীর ওপারে পাহাড় -জঙ্গলের আড়ালে। আর মাওবাদীরা বোধহয় এখন সরকারের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের কথা ভাবছে। বেশ কয়েকমাস ধরে কোন বড় হামলা হয়েছে বলে খবর নেই।
ভুল ভাঙল চারদিন পর রাত্তিরের টিভি নিউজে।
ন্যাশনাল হাইওয়ে ৬৩তে জগদলপুর থেকে গীদম যাওয়ার পথে বাস্তানারে হাইওয়ের ওপর সকাল নটায় ছুটিতে আসামে নিজেদের ঘরে ফিরতে উৎসুক সি আরপি'র ছয়জন জোয়ানকে মাওবাদীরা ব্লাস্ট করে উড়িয়ে দিয়েছে। এর জন্যে ওরা দিন পাঁচেক আগে পিচ রাস্তায় পাঁচ ফুট নীচে ড্রিলিং করে পাইপের মধ্যে অ্যামোনিয়াম সালফাইড ভরে পুঁতে রেখে ছিল।আজ রিমোট ব্যবহার করতেই আতংক আর হাহাকারের পরিবেশ। গত রোববারই আমাদের কাফিলা সকাল ন'টার সময়েই বাস্তানার পেরিয়েছিল।
কয় সপ্তাহ পরে জগদলপুরের থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরে হাইওয়ের ওপর বনবিভাগের বাংলোতে রাত্তিরে হামলা করে ভাঙচুর করে, আগুন লাগায়। পরদিন দুপুর বারোটায় আটটি মোটরবাইকে চড়ে ষোলজন পুলিশ রাত্রের হামলার তদন্ত করতে আসে। কাজ শেষ করে ফেরার পথে রেস্ট হাইউস থেকে মাত্র তিনশ' মিটার দূরে ওদের ওপর হামলা হয়। তাতে জনা আটেক মারা যায়। এদের মধ্যে থানাদার মহেন্দ্র সোড়ীর নাম গতবছর কেলেংগায় দুজন আপাতনির্দোষ গ্রামীণকে এনকাউন্টারের অছিলায় মারার জন্যে মাওবাদীদের হিটলিস্টে ছিল।
মনে পড়ে তাড়মেটলা,গীদম আর পালনার , -- সবগুলো ঘটনাতেই সার্চ করে ফেরার পথে হামলা হয়েছে।
খবরে প্রকাশ, মাওবাদীদের দুটি ডিভিশন এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। ওদের রণনৈতিক লক্ষ্য ধীরে ধীরে জগদলপুরকে ঘিরে ফেলা। দরভা ডিভিশনাল কমিটি ঘিরছে ইস্ট , নর্থ এবং ওয়েস্ট দিয়ে, আর দন্তেওয়াড়া ডিভিশন সাউথ দিয়ে।
এদিকে কাঁকের এ জঙ্গল ওয়ারফেয়র ট্রেনিং কলেজে আড়াইহাজার জওয়ান আগামী দুমাসের বিশেষ ট্রেনিং নিচ্ছে। আর মিলিটারি এবার ট্রেনিং এর জন্যে গোপনে কোন্ডাগাঁও এর আগে প্রথম টেন্ট লাগাবে। আর এইভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে সিআরপি ও রাজ্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সামরিক বাহিনী ক্রমশঃ এগিয়ে যাচ্ছে অবুঝমারের দিকে।
আমরা সত্যিই রণক্ষেত্রে আছি।
(সমাপ্ত)
(সমাপ্ত)