এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • পিছুটান

    শ্রাবণী লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১১ মার্চ ২০১২ | ৮১১ বার পঠিত
  • ঘুম ভেঙে গেল রানুর। পাশে শোয়া দিদিমনির নাক ডাকছে আর বুকটা জোরে জোরে হাপরের মত ওঠানামা করছে। ঘরে আলো নেই, লন্ঠনটা নেভানো। এমনিতে দিদিমনি আলোটা কমিয়ে রাখে একেবারে নেভায় না। কিন্তু কাল রাতে নিভিয়ে দিয়েছিল। রাত পুরোলেই বিয়ে মেয়ের, কী দরকার যদি কোনো অগ্নিকান্ড হয়। বিয়ে! কথাটা মনে হতেই রানুর বুকের মধ্যেটা কেমন হা হা করে উঠল।

    এই ঘরটায় জানালা নেই, দিনের বেলাও অন্ধকার। দুটো ছোট ছোট ঘুলঘুলি কাটা, তাতে বাঁশের বাতার গরাদ, কোনোরকমে নি:শ্বাস চলাচলের ব্যবস্থা। শীতে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস আসে। ছেঁড়া ট্যানাটুনি, খড় দিয়ে বন্ধ করেও আটকানো যায় না। দিদিমনির হাঁপের কষ্ট আছে। একএক দিন তো কত রাত্তির অবধি জেগে বসে থাকে, ঘুমোতে পারেনা। রানু তখন লন্ঠনের মাথায় তেলের বাটি রেখে, গরম তেল ঘসে দিদিমনির বুকে। বড় খারাপ লাগে এই বদ্ধ ঘরে বুড়ো মানুষটার অবস্থা দেখে। ওরই যেন দম বন্ধ হয়ে আসে।

    সেই সময়গুলোতে রানুর একটা বিশাল বিশাল জানালা ঘেরা ঘরে থাকতে ইচ্ছে করে। চারিদিক থেকে হাওয়া দেবে, জাহাজের মত। জাহাজে সে কোনোদিন চড়েনি বা দেখেনি, শুধু বইয়ে পড়েছে। তবু অনেক হাওয়ার কথা ভাবলে কেন জানিনা তার জাহাজের কথাই মনে হয়।

    পড়াশোনায় যে সে ভালো তা নয়। তবে একেবারে দুচ্ছাই ও নয়। কখনোসখনো এক আধ বিষয়ে ফেলটেল করলেও নাইন অবধি ঠিকঠাকই পৌঁছেছে। আর মনেহয় পড়া হবেনা। শ্বশুরবাড়ীতে কি আর পড়াবে! শুনেছে তাদের এমন বউ চাই, যে সংসারের কাজকম্ম করতে পারবে। তা নাহলে আর তার মত মেয়ের সঙ্গে কেন বিয়ে দেবে ছেলের? তাতে অবিশ্যি ওর কোনো আপত্তি নেই, পড়তে ওর এমন কিছু ভালো লাগেনা।

    ভোর হতে বোধহয় দেরী আছে, হলে মেঝেতে সরু আলোর রেখা পড়বে ঘুলঘুলি দিয়ে। কাল মা তাড়াতাড়ি শুইয়ে দিয়ে বলেছিল খুব ভোরে উঠতে হবে, দধিমঙ্গল আছে। তখন খুব ভয় হচ্ছিল, উঠতে পারবে তো! সময়মত না উঠলে কথা শুনতে হবে। অবিশ্যি মামীদের কাছে কথা শুনতে তাকে নিত্যিই হয়, অভ্যেস আছে। তবু মা আর দিদিমনি, এরা এখনো শুনলে দু:খ পায়, কাঁদে। এমনিতেই গত এক হপ্তা ধরে মা একটু বেশী চুপচাপ, চোখে শুধুই জল। কাল রাতে মায়ের বোধহয় ইচ্ছে ছিল ওর পাশে শোয়ার, কিন্তু তাহলে দিদিমনি কোথায় যায়? ওদিকের নতুন বাড়ীটায় ওপর নীচে দুটো ছোট ছোট ঘর, নীচে মালপত্র,ভাঙা আসবাবে ঠাসা গুদোম আর ওপরে দাদু খাটে শোয় ভাইকে নিয়ে, মেঝেতে ছোটমামা। এই পুরনো বাড়ীতে তো রান্না ভাঁড়ার ছাড়া তিনখানা ঘর, সবই মেজ সেজ দুইমামার পরিবারের দখলে।

    ছোট্ট ভাঁড়ার ঘরটায় সে আর দিদিমনি কোনোরকমে শোয়। মেঝেটা এবড়োখেবড়ো, অনেককাল মাটি লেপা হয়না। রাজ্যের জিনিসপত্রে ভরা। মাটির দেওয়ালে গর্তের ফাঁকফোকর দিয়ে ইঁদুর, ছুঁচো আরও না জানি কত কী ঢোকে। রোজ রাতে দিদিমনি "তক্ষক তক্ষক" বলে মাথায় হাত ছুঁইয়ে তবে শুতে যায়। এ ঘরে অন্য কাউকে শুতে দেওয়া যাবেনা। বিয়েবাড়ী ধুমধামের না হলেও আত্মীয়স্বজন তো কিছু এসেইছে। বাড়ীতে সবার জায়গা হয়নি। মা কাল রাতে অনেকক্ষণ বসেছিল রুনুর মাথায় হাত দিয়ে। রুনু কিছু বলেনি, অস্বস্তি হয়েছিল,এরকম আদরে সে অভ্যস্ত নয়। শেষে দিদিমনি শুতে এলে মা চলে গেল পাশে ছোটদাদুর বাড়ীতে।

    অন্ধকারে চিৎ হয়ে শুয়ে কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল কাল সে চলে যাবে। তারপর থেকে মা এখানে শুতে পারবে, দিদিমনির পাশে। মাকে ছোটদাদুদের বাড়ী শুতে যেতে হবেনা। অবিশ্যি ও বাড়ীর সব ব্যবস্থা খুব ভালো, খাটে শোয় মা সেখানে দিপুর সাথে, তোষক বিছানা সব ধবধব করে। তাদের এখানে এই ছোট্ট তক্তপোষে ছেঁড়া মাদুরের ওপর একটা কাঁথা পাতা। রুনুর শোয়া ভাল আর দিদিমনি ছোটখাট মানুষ, তাই হয়ে যায়। তেলচিটে বালিশ দিয়ে গন্ধ বেরোয়, রোদে দিলেও গন্ধ যায়না, ওয়াড়কে সোডায় সেদ্ধ করলেও না। সোডার সাথে বেশী করে সাবান না দিলে আবার ঠিকমত কাচা হয় নাকি! বাসরঘর হবে মানুমামাদের সদর ঘরে, দিপু বলেছে। পাড়ায় বিয়ে হলে বাসর ওখেনেই হয়। দিপুর মা, ছোটদিদা বাসর সাজাবে। তোষকের ওপর ওদের লালহলুদ সুজনি চাদর পাতা হবে। কোলবালিশ, বালিশ সব দিদা ওদের তোলা বিছানা থেকে বার করবে। রানু এই তেলচিটে বিছানায় শুয়ে যেন সেই বাসরের গন্ধ পায়। আ: কী সুন্দর সাবান কাচা গন্ধ!

    দিদিমনি ঘুমের মধ্যে নড়েচড়ে পাশ ফিরল। সে কান খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করে বাইরে কারোর সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে কিনা। মা এলে তো সদর দরজায় কড়া নাড়বে। কে করবে দধিমঙ্গল কে জানে! মামীরা তার জন্যে কাকভোরে উঠতে যাবে বলে মনে হয়না। সবাই বলছিল মেজমামীরই করা উচিৎ, এবাড়ীর বড় বউ তো এখন সেই। ছোটদিদা খালি বলেছিল দিদিমনির করার কথা, সবার বড় এয়োস্ত্রী মানুষ! এমনি সব এয়োদের যা যা করণীয় মামীরাই কেউ না কেউ করছে। মা তো সব আচার অনুষ্ঠান শুধু দুর থেকে ব্যবস্থা করছে,ধারেপাশেও আসছেনা। বিধবার ছায়া পড়লে মেয়ের অকল্যান হবে ভেবে। বিয়ের পরে রানুও এয়োস্ত্রী হয়ে যাবে। তখন বিয়েবাড়ী হলে এয়োকামানে তার ডাক পড়বে। ওকে মায়ের মত সব বিয়েবাড়ীতে আচার অনুষ্ঠান থেকে দুরে দুরে থাকতে হবেনা কোনোদিন। ভেবেই কেমন লাগে,সেও মামীদের মতো মাসিদের মতো মাথায় সিঁদুর ভরে খড়মড়ে রঙচঙে শাড়ী পরে স্ত্রীআচার করবে এবার থেকে!

    আইবুড়োভাত নম নম করে সারা হয়েছিল কাল। নতুনবাড়ির বীথিদিদির আইবুড়োভাতের দিনের বড় মাছের মুড়োটার কথা মনে পড়েছিল তার, একপাশে রাখা চারা মাছের ঝাল দেখে। মুড়োর চোখ খেতে তার খুব ভাল লাগে। আগে দাদুকে মুড়ো দেওয়া হলে দাদু ওকে চোখটা খেতে দিত। এখন তো আর দাদু দাঁতের জন্য কাঁটা খেতে পারবেনা বলে মামী মুড়ো দেয়না। বীথিদিদির থালার পাশে সার সার বাটি ছিল, কত কিছু! সব খেয়ে উঠতে পারছিলনা, তবু সবাই জোর করছিল। রানু জীবনে বাটিতে তরকারি খেয়েছে বলে মনে পড়েনা। পাতের পাশে রাখা ডাল মাছ আর পায়েসের বাটিকেই তার অনেক বেশী বেশী মনে হচ্ছিল। ছোটদিদা যেন একটু নীচু স্বরে দু:খ করেছিল, নিয়মরক্ষে তেতো দেওয়া হয়নি বলে। হলেই বা কী হত! তেলমশলায় রসা শুক্তো তো আর হতনা। ট্যালটেলে ঝোলের মত তিতকুটে উচ্ছের তরকারী খাওয়ার চেয়ে না খাওয়া ভাল। রানুকে কেউ খেতে জোর করছিলনা। তবু সে অনেকটাই খেয়ে নিয়েছিল। এমনই খাওয়া যে সারাদিন আর কিছু খেতে পারলনা। রাতে ভাতের থালা নিয়ে বসেছিল এই পজ্জন্ত। বলে জম্মের শোধ বাপের বাড়ির খাওয়া! যাগ্গে, এ তো আর তার বাপের বাড়ী নয়,মামাবাড়ী, আইবুড়োভাত হল যে এই না ঢের!

    দিদিমনি তো অনেককাল রান্নাঘরে যায়না। সেই দাদু ইস্কুল থেকে রিটায়ার করার পর থেকেই রান্নাঘর মেজমামী নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিল। তার আগে দিনের রান্না দিদিমনি দেখত রাতেরটা মামীরা। একদিন ভাঁড়ারের আলমারির চাবিটাও চেয়ে নিল, আর ফেরত দিলনা।

    যতদিন দিদিমনি রাঁধত তাদের ভাইবোনের পাতে মাছটুকু অন্তত পড়ত। ইস্কুল থেকে ফিরে এসে ভাত খেত মামাতো ভাইবোনদের সাথে। লুকিয়ে চুরিয়ে এটাওটা খাওয়াত তাদের, মাছের ডিমের বড়া, দুধের চাঁছি। এখন তো মামীরা তাকে দেবার বেলায় বেশীরভাগ দিনই আস্ত মাছ খুঁজে পায়না, ভাঙা কাঁটাকুটো। ভাই চিৎকার চেঁচামেচি করে দাদুর কানে তুলে দিতে পারে, সেইজন্যে তার বরাদ্দি এক আধ গোটা টুকরো । রানু শান্ত চাপা মেয়ে, কিছু বলেনা, কোনো নালিশ নেই। মাছ না জুটলে ওর ভাগের চাষের কুমড়োর ঘ্যাঁট আর খেসারির ডাল দিয়েই খেয়ে নেয়।

    সেই দিদিমনি নাতনীর আইবুড়োভাত বলে পায়েস রাঁধতে ঢুকেছিল আজ এতকাল বাদে। তা নিয়েও মামীদের মুখভার। বাড়ীর গোয়ালের গরুর দুধ। দাদুর জন্য একটু আলাদা জ্বাল দিয়ে রেখে বাকী সব তারা নিজের নিজের ঘরে ঢুকিয়ে ছেলেমেয়ে বর কে খাইয়ে দেয়। পায়েসের দুধ দিদিমনি নিজে নিয়ে এসেছিল গোয়ালঘর থেকে গরু দুইয়ে। তাই নিয়ে কত কথা, দুধ না খেলে তাদের কচি ছেলেমেয়ে গুলো বাঁচে কী করে! হাসি পায় শুনে, কচি আবার এ বাড়ীতে কোন ছেলেমেয়ে! সবচেয়ে ছোট তো তার ভাই। তা সে তো বোধহয় দুধের বাটি চোখেও দেখেনা কখনো। দুয়ারে বসে আলতা পরতে পরতে রানু দেখল মামীরা পায়েসের দুধ থেকে বাটীতে করে দুধ তুলে নিয়ে জল ঢেলে এল।

    দিদিমনি যত্ন করে রাঁধলে কী হবে ঐ জলো দুধে পায়েস হল দুধভাতের মত। পায়েস ভালবাসে রানু, কিন্তু সে পায়েস ছোটদিদার বাড়ীর ঘন দুধের লাল পায়েস, এলাচ কাজু কিসমিস দেওয়া। এই সাদা দুধভাতের গন্ধে রানুর বমি উঠে আসে, তাই এক চামচ পায়েস মুখে দিয়েই আর খাবেনা বলে ঘাড় নাড়তে যাচ্ছিল। তখনই চোখ পড়ল ছানিপড়া চোখদুটোর দিকে। পোকাধরা কালো কালো দাঁতে, ঝুরিপড়া গালে এক গাল হাসি নিয়ে, তার দিকে তাকিয়ে আছে। এককালে দিদিমনির রান্না সারা পাড়ায় বিখ্যাত ছিল, এই নিয়ে খুব গুমর বুড়ির। ঐ মুখের দিকে তাকিয়ে শেষে কষ্ট করে পিতলের জামবাটিটা তুলে নিয়েছিল। তারপরে নাক বন্ধ করে এক চুমুকে পায়েস শেষ করেছিল। সবাই ওর খাওয়ার তাড়া দেখে হাসছিল। দিদিমনি কী খুশী ওর পায়েস খাওয়া দেখে! মা ওর খাওয়ার কাছে আসেনি, দুরে দাঁড়িয়েছিল। ও হাত ধুতে পুকুরে গেলে পিছন পিছন গিয়ে গামছায় ওর মুখ মুছিয়ে মুখে লবঙ্গ এলাচ মুখশুদ্ধি দিয়ে দিল।

    "আস্তে আস্তে চুষতে থাক, গা বমি কেটে যাবে।'

    মায়ের চোখে জল। মা কি জানে ওর গা বমি করে দুধভাতের গন্ধে! কী করে জানতে পারে, ও তো বলেনি কখনো?

    কোন ছোটবেলা থেকে তারা মামাবাড়ীতে, বাবা মরে যাওয়ার পর চলে এসেছে। বাবার মুখ ওর মনেই পড়েনা। ফটোটটোও নেই, শুধু কাগজে একটা পায়ের ছাপ নীল কালির। মায়ের ট্রাঙ্কে রাখা থাকত, কোনো কিছুতে মা সেইটা বার করে ওদের প্রণাম করাত। বাবা শব্দটা শুনলেই ওর চোখে ঐ পায়ের ছাপটা ভাসে। কেমন যেন গা শিরশির করে, মরা মানুষের পায়ের ছাপ! কদিন আগে মা আবার ছাপটা বাঁধিয়ে এনেছে। দাদুর ঘরের দেওয়ালে টাঙানো আছে। মা আকারে ইঙ্গিতে বলেছে পরে চাইলে সে ওটা নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারে। রানু চুপ করে থেকেছে। ওর কোনো তাগিদ নেই ঐ ছাপ নিজের কাছে রাখার। বরং হাতে পয়সা এলে ফোটোর দোকান থেকে লোক ডেকে সে দাদু, দিদিমনি আর মায়ের ফোটো তুলে নিজের কাছে নিয়ে রাখবে। ওদের পায়ের ছাপ কিছুতেই রাখবেনা কোনোদিন!

    ছোট থেকে দেখেছে মাকে উদয়াস্ত খাটতে মামাদের সংসারে। শেষকালে আর পারলনা, রাতদিন গঞ্জনা সহ্য করে টিকে থাকতে এখানে। তিনটে লোকের খরচ তো আর কম নয়, তার ওপর ছেলেমেয়ের লেখাপড়া। মামাদের নিজেদের সংসার আছে, কোথা থেকে এত জোটায় তারা। দাদুর ঐ অল্প মাইনেতে আর কী হয়! মা কলকাতা চলে গেল লোকের বাড়ি কাজ করে তাদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে। রানু শান্ত মেয়ে। মেজমামার মেয়ে ঝাঁপি ওর কাছাকাছি বয়সী, ঝগড়াটী বলে পাড়ায় বদনাম, নানাভাবে রানুকে জ্বালাতন করে। তার চেয়ে একটু বড়ই হবে, তবু এখনো ক্লাস এইটে। ওর মাস্টার আছে, তাও ফিবছর দুটো তিনটে বিষয়ে ফেল করে। মামা মাস্টারদের তোয়াজ টোয়াজ করে ক্লাসে উঠিয়ে দেয়। মামী সর্বদা মেয়ের ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া, সাজপোশাক এসব যোগাতে ব্যস্ত থাকে। তবু ঝাঁপির চেহারা দেখে গ্রামের লোকে আড়ালে তাড়কা নাম দিয়েছে।

    রানুর তেল পড়েনা সাবান পড়েনা, একঢাল কালো চুল। না বেঁধে না আঁচড়ে চুলে উকুনের বাসা। আগে মা বাড়ি এলেই প্রথমে রানুর চুল নিয়ে বসত। ওষুধ মাখিয়ে উকুন তাড়াত তার আর দিদিমনির চুল থেকে। তার পাশে শুয়ে দিদিমনির মাথায়ও যে উকুন ধরে যায়। তারপরে ভাল করে সোডা সাবান দিয়ে মাথা ঘষে রাজ্যের তেলকালি বার করত। যতদিন মা থাকত রোজ বিকেলে চুলে তেল দিয়ে বেঁধে দিত। মামীরা ওর চুলের দিকে বিষনজরে তাকায়, পুকুরপারের কেশুত গাছের ঝোপ খালি করেও ঝাঁপির শ্যাম্পু করা কটা চুলে গোছ আসেনা।

    চুল ছাড়া মার আর একটা দিকে নজর থাকত, ওদের পড়াশোনা। রানু যেটুকু পড়ত শুধু মায়ের জন্যই। ভাইটা ঠিকমত পড়াশোনা করেনা, খেলা পাগল। মার একটাই আশা, ওরা পড়াশোনা করে চাকরী করবে। ছোটদাদু তো বলেই দিয়েছিল ওরা ইস্কুল পাশ দিলেই ওকে ছোটোদের পড়ানোর ট্রেনিং এ ভর্তি করে দেবে আর ভাইকে কলকাতায় নিয়ে যাবে। ভাই দিনে দাদুর ব্যবসায় কাজ করবে আর রাতে কলেজে পড়বে। মায়ের শখ ছিল কলকাতায় একটা ছোট বাসা করে ওদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে একদম নিজের একটা সংসারে থাকবে। মাঝে মাঝে দিদিমনিও যাবে ওদের বাসায়, ওরা আপিস চলে গেলে দিদিমনি আর মা মিলে কালীঘাট দক্ষিনেশ্বরে ঘুরে বেড়াবে।

    সব অন্যরকম হয়ে গেল এখন। তবে তাতে দু:খ নেই, ও ঠিক করেছে বিয়ের পরে মাকে মাঝে মাঝে নিয়ে যাবে ওর কাছে, দিদিমনিকেও। ওর শ্বশুরবাড়ী থেকে কলকাতা শুনেছে বেশী দুরে নয়। ছোটমামা আর মা গিয়েছিল। ছোটমামা তো খুব খুশী সব দেখেশুনে। শহরই বলতে গেলে, কলকাতা হয়ে যেতে হয়। শহরেরই মত পাকা একতলা বাড়ী। আবার গ্রামের মত বাড়ির লাগোয়া পুকুর বাগান আছে, কলাগাছ, নারকেল গাছ। সব রান্নাতে নাকি নারকোল দেয় ওরা। তা দিক, রানুর ভালই লাগে নারকোল দেওয়া তরকারী। সেই যে নতুনবাড়ির মামীমা অরন্ধনের সময় নারকেল দিয়ে চাপ চাপ খেসারির ডাল করে, কী ভাল খেতে হয়। মামীমা দাদুকে দিয়ে যায় আর ওরা ভাইবোন সেদিন দাদুর পাতে খায়।

    বরের বাড়ী বাঙাল বলে দাদুর প্রথমটায় আপত্তি ছিল। মিলবেনা আমাদের সাথে, মেয়েটা কষ্ট পাবে। ছোটদাদু আর মা দুজনে মিলে দাদুকে অনেক বুঝিয়ে রাজী করিয়েছে। আজকাল এসব নাকি আর কেউ মানেনা।

    ঘুরে এসে ছোটমামা সব ভাল বলেও শেষকালে হাসতে হাসতে বলেছিল, "একটাই সমস্যা,ওদের আদ্ধেক কথা বুঝতে পারা যায়না, কী সব খাইসে গেসে আলাম গালাম করে। রানুও এরপর থেকে এখানে এসে আনস নাই করস নাই করবে।'

    সেই শুনে মামীদের আর মামাতো ভাইবোনদের কী হাসি! রানু কোন সমস্যা দেখেনা, ওর চোখে একটা একতলা পাকাবাড়ী ভাসে, চারদিকে তার পুকুর বাগান। আর একটা ঘর, ঘরে খাট তক্তপোশ নয়, ছোটোদিদাদের মত পালঙ্ক। তাতে ফরসা চাদর পাতা, ওর নিজের ঘর। বর দেখেনি ও, দেখার ইচ্ছেও হয়নি। মা দেখে এসেছে। ভালো, তবে বয়স একটু বেশী। মামীদের সেটাই একটু সান্ত্বনা। নাহলে তো বিয়ের ঠিক হওয়া থেকে তাদের মুখ ভার। ওদের মা মেয়েকে দেখলেই ঠোঁট বেঁকে যাচ্ছে। কী যে বলে ছোটমামা! একবার গেলে কি আর রানু এখানে ফিরে আসবে?

    বিয়ের কথা পাকা হওয়ার থেকে মা আর কলকাতা যায়নি। বরের বাড়ি কী মনে করবে কে জানে মা লোকের বাড়ি কাজ করে জানলে! এখন মা এখানেই থেকে ছোটদিদাকে রান্না বান্নায় সাহায্য করে, ওদের বাড়িতেই খায়দায়। ওরা মাইনে হিসেবেও কিছু দিচ্ছে। কাজ করছে তো ঢের,বিয়ে ঠিক হওয়া থেকে মা তো খালি ঘুরেই বেড়াচ্ছে। এদিক ওদিকে যেখানে যা আত্মীয়স্বজন আছে তাদের কাছে যাচ্ছে বিয়ের খরচ যোগাড়ের জন্য। পণের টাকাটা সবাই অনেক বলেটলে কম করিয়েছে। ওটা এখন ছোটদাদু আর নতুনবাড়ির দাদু মিলে ধারে দিচ্ছে, পরে ভাই কাজ করে শোধ দেবে।

    পাড়ার সকলের বুদ্ধিতে দাদু মামাদের বলেছে বিয়ের তিনদিনের ঘর খরচা দিতে, নাহলে দাদু জমি বিক্রি করে সব খরচ করবে। ধানচাল ডাল আলু তো চাষের থেকেই আসে, শুধু বাকী খরচখরচার জন্য যা লাগবে। জমি বিক্রি হলে দাদুর মরার পর ভাগ কমে যাবে। তাই মামারা গাঁইগুই করে শেষমেশ রাজী হয়েছে। তার জন্যেই ঐ আইবুড়োভাতে চারা মাছ, তাও শুধু বাড়ির লোকেদের, পাড়ায় নেমন্তন্ন হয়নি।

    অবিশ্যি কেউ কিছু মনে করেনা, গরীবের মেয়ের বিয়ে! দাদুরা মাকে বলেছে যেখানে যে আছে সবাইকে শুধু সাহায্য চেয়ে চিঠি দিতে, এতলোককে নেমন্তন্ন করা সম্ভব নয়। কেউ অবুঝ নয়, সবাই মায়ের অবস্থা জানে। তবু বিয়ের রাতে পাড়ার লোককে বলা হয়েছে, গ্রামের সবার বাড়িতেও নিয়মরক্ষা একটি দুটি করে নেমন্তন্ন হয়েছে। বরযাত্রী আসবে বেশ কয়েকজন। ভাসুর এখানের বিডিও অফিসের বাবু, সেই সূত্রেই ছোটদাদুর সঙ্গে চেনাজানা ও বিয়ের প্রস্তাব আসে। ওদের ইস্কুলের পাশেই ভাসুরের বাসা, জা কোনসময় ওকে ইস্কুলের পথে দেখে পছন্দ করেছে। কী দেখে করেছে খোদা ই জানে! রানুর তো নিজেকে আয়নায় দেখে বিচ্ছিরি লাগে। ঐ চুলটাই যা একটু আছে, নাহলে তো কালোকিষ্টি। তবে সবাই বলছে বিয়ের জল গায়ে পড়লে রানুও বীথিদিদির মত ফরসা হয়ে যাবে। বিয়ের পর কি সবাই অন্যরকম জলে চান করে, কে জানে!

    ইস্কুলের লম্বা দালানটা মনে পড়ছে। সকালে পান্তা খেয়ে যেত বলে কিনা কে জানে ক্লাসে ওর খালি ঘুম পেত। কী করে যে চোখ টেনে টেনে পড়া শুনত সে ঐ জানে! তবে পড়া না পারলে বকুনি বেশী খেতনা। মাস্টাররা অনেকেই হয় প্রাইমারী ইস্কুলে দাদুর ছাত্র ছিল, নয়ত মামাদের বন্ধু, ওদের অবস্থা জানত। মাকেও সবাই খুব ভালবাসে। আগে মা বাড়ি এলেই ওদের স্কুলে গিয়ে মাস্টারদের সঙ্গে দেখা করতে যেত। ছোট বেকার মামাই একটু যা ওদের ভালবাসে দিদিমনি আর দাদু ছাড়া। তবে তার নিজেরও বেকার বলে কম হেনস্থা হয়না এ সংসারে। বড়মামা তো সেই কবেই মরে গেছে। দিদিমনি বলে, তার সেই ছেলেই সবচেয়ে ভাল ছিল, বড় চাকরি করত দুর্গাপুরে কারখানায়।

    মনে পড়ে সেই কবে, রানু তখন অনেক ছোট। এক দুপুরে দাদু ইস্কুল থেকে তাড়াতাড়ি ফিরেছিল। ঘরে ঢুকে উঠোনে মাথাটা নীচু করে দাঁড়িয়েছিল চুপচাপ। মেয়েদের খাওয়াদাওয়া শেষ, দুয়ারে পান সাজছিল মা, পাশে দিদিমনি, আরও সব কে কে মেয়েরা বসে। রানু একটু দুরে মুড়িভাজার দাওয়ায় বসে নারকেল পাতা থেকে কাঠি বার করছিল বোধহয়, কিংবা এমনিই বসে কাঠের উনুনের গন্ধ শুঁকছিল, ঠিক মনে নেই। কী যেন বলল দাদু, আর জোরে কান্নার রোল উঠল। সেই আওয়াজে ঘাবড়ে গিয়ে ও দৌড়ে মায়ের কাছে আসছিল, এমন সময় দেখল দিদিমনি উঠোনে নেমে এসেছে, মাথার আঁচল গেছে খসে। চোখ মুখ কেমন হয়ে গেছে, কিন্তু চোখ দিয়ে জল বেরোচ্ছে না। মা আর মামীদের চোখে আঁচল। দিদিমনি দাদুর দিকে একটু এগিয়ে গিয়েই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। মুখ দিয়ে শুধু সেই সাঁতেদের বাড়ির বোবা ছেলেটার কান্নার মতন গোঁ গোঁ একটা আওয়াজ বেরোচ্ছিল। মা গিয়ে দিদিমনিকে ধরতে চাইল, কিন্তু মায়ের হাত ছাড়িয়ে দিদিমনি লেবুতলায় বুক চাপড়ে চাপড়ে আছাড়িপিছাড়ি খেতে থাকল। দাদু শুধু "বড়বউ ধৈর্য্য ধর, সামলাও নিজেকে", এরকম কিছু বলতে বলতে বেরিয়ে গেল। পরে রানু বুঝেছিল দাদু সেই দৃশ্য সহ্য করতে পারছিলনা। রানুর কান্নাকাটি এমনিতে কম ছোট থেকেই। তবু সেদিন সে দিদিমনির কাছে বসে অনেকক্ষন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল। কেন তা আজও জানেনা! ভাবলে একটু কেমনই লাগে, কারণ সেদিন সে কিছুই বোঝেনি, বড়মামার মারা যাওয়ার ব্যাপারটা তার মাথায় ঢুকেছিল বেশ কিছুদিন পরে, একটু বড় হয়ে।

    বড়মামী ছেলেকে নিয়ে মামীর বাপের বাড়িতে থাকে। এখানে তারা এলেই অন্য মামা মামীরা অশান্তি শুরু করে, খারাপ ব্যবহার করে। ভাবে বড়মামী বোধহয় সম্পত্তিতে দখল নিতে এসেছে। আসলে ওরাও তো তেমন কিছু রোজগার করেনা,দাদুর জমিজমার আয়েই সংসার দাঁড়িয়ে আছে। আজকাল ওদের ভয়ে দাদু তাদের আসতে বারণ করে দিয়েছে। মা বিয়েতে খবর দিয়েছিল। কাল বড়মামীর ছেলে কানু এসেছে, একটা সুন্দর সিল্কের শাড়ী পাঠিয়েছে মামী রানুর জন্য। মামী বাচ্চাদের ইস্কুলে চাকরি করছে। কানুটা কী ভদ্র হয়েছে, কী সুন্দর কথাবার্তা। এখানের মামাতো ভাইগুলোর মত চোয়াড়ে নয়।

    সবাই বলাবলি করছে রানুর চোখে একটুও জল নেই, মনখারাপ নেই। আড়ালে নেমকহারাম পাষাণও বলছে কেউ কেউ। নাহয় তেমন আদিখ্যেতা ছিলনা, তবু অনাদর তো কিছু হয়নি এতকাল মামাবাড়ীতে। কারুর জন্যেই কষ্ট নেই গো! অন্যের কথা বাদ দিলেও নিজের মা ভাইয়ের জন্যও তো একটু চোখের জল ফেলে লোকে। সামনে না বললেও রানুর কানে উঠেছে এসব কথা। এখন মনে পড়তে একটু মনখারাপ করার চেষ্টা করতে থাকে। মার কথা ভাবে, মাকে ছেড়ে যেতে কি ওর কষ্ট হবে? না মনে হয়, সেই কবে থেকেই তো ওরা মাকে ছেড়ে থাকে। বরং খুশী খুশীই লাগছে একটু। চোখ বুজলেই ক্যালেন্ডারের কালীমন্দির ভেসে ওঠে চোখের সামনে, মন্দিরের চাতালে মা, দিদিমনি আর সে।

    উঠে বসে দিদিমনির ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকায়। কাল থেকে দিদিমনি একা! না: একা কী আর শোবে, মা থাকবে। এই বিছানার জন্য একটা চাদর আর দুটো বালিশ কিনতে পারলে বেশ হত। রাঙাদিদা বলছিল নাকি বুড়ো বরই ভাল, বউয়ের কথা শোনে। তা যদি হয় সে বরকে বলবে অষ্টমঙ্গলায় আসার সময় চাদর বালিশ কিনে আনতে। ভাই বলে রেখেছে বিয়ের পরে তাকে মাংসভাত খাওয়াতে। মাংস খেতে খুব ভালবাসে ভাই, কিন্তু এবাড়ীতে মাংস হলে বরাদ্দ একটা দুটো হাড়, একটা আলু আর পুকুরের জলের মত ঝোল। খাওয়ার লোক তো আর কম নয়, যা দাম মাংসের। ভাইটা তাইই হাপুস হুপুস করে হাত চেটে চেটে খায়। তখন এত কষ্ট হয়, ও লুকিয়ে ওর ভাগটাও ভাইকে খাইয়ে দেয়। বিয়ের পরে ভাই ওর ওখানে গেলে রোজ মাংস খাওয়াবে।

    মনখারাপ হলে কী রকম হয়? কে জানে!

    কাল বিকেলে তখন আলো পড়ে এসেছে, দুয়ারে বসে মা তার চুল বাঁধছে। হাঁসের ঘরের দিকে হঠাৎ চোখ চলে গেল, দেখে আগল খোলা। মায়ের হাতে চিরুনী, তার দাঁতে গোড়াবাঁধা দড়ির এক দিক, সেই অবস্থাতেই শাড়ী তুলে দৌড় দিল। পিছনে তখন সবাই চেঁচাচ্ছে "কী হল কী হল'। এক দৌড়ে ঘাটে গিয়ে বুক ঢিবঢিব, কিছু ঠাহর হচ্ছিলনা প্রথম চটকায়, চাদ্দিকে ঝোপ গাছপালা, কেমন অন্ধকার। একটু দম নিয়ে প্রাণপনে গলা তোলে "আ চৈ চৈ চৈ চৈ, আ আ চৈ চৈ'। জলের শব্দ আর ওর দিকে এগিয়ে আসা "প্যাঁক প্যাঁক' রবে হাঁসের দল, ধড়ে যেন প্রাণ আসে। ততক্ষণে ঝাঁপিও পুকুরধারে। দুজনে মিলে হাঁসেদের তাড়িয়ে ঘরের দিকে নিয়ে যেতে যেতে রানু একবার গুণে নেয়। বিশ্বাস নেই, মাঠের ধারে শেয়াল সবসময় ওত পেতে থাকে হাঁস তোলবার জন্য।

    মনে পড়ে বুকের ভেতরটা হাল্কা চিনচিন করেছিল,কাল থেকে ওরা ঠিক করে তুলবে তো হাঁসেদের?

    গতকাল বুলুমাসি এসেছে। ছোটদাদুর বড়মেয়ে। কলকাতায় কলেজে পড়ে, খুব ভাল পড়াশোনায়। এসেই মায়ের আর ছোটদাদুর ওপর চোটপাট করছিল, এত ছোটবয়সে বিয়ে দেওয়া নাকি ঠিক নয়। মাকে একটু অসহায় দেখাচ্ছিল মাসির সামনে। তখন উঠোনে জাঁতায় মেয়েরা ডাল ভাঙছিল। আর দুয়ারে পান সাজা হচ্ছিল। উপস্থিত বউ ঝিরা হাতের কাজ থামিয়ে বুলুমাসির বকুনি শুনছিল। কলেজে পড়া বড়লোকের মেয়ে, কথার ঢং ই আলাদা। মা দু একবার শুকনো হেসে মাসিকে থামাতে গেল, শেষে কেঁদে ফেলল। তখন মাসিও ঘাবড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়েটড়িয়ে একাকার। তারপরে ওর বেনারসী দেখাল সবাইকে। কলকাতা থেকে এনেছে, ছোটদিদার উপহার, ওটা পরেই বিয়েতে বসবে। রানু অবাক হয়ে দেখল তার বেনারসী আর বীথিদিদির বেনারসীটা প্রায় একই রকমের দামী,সস্তা জ্যালজেলে নয়। রঙটাও লাল নয় আর সবার মত, মাসি বলল এই নাকি আগুন রঙ। ভেতরে ভেতরে মজা লাগল, সে সারা শরীরে আগুন জড়িয়ে বিয়েতে বসবে। সব্বাই জ্বলে পুড়ে যাবে যে! রানু চাপা মেয়ে, মুখে কিছু বলেনা। বাইরে শুধু বড় বড় চোখ মেলে বুলুমাসির কথা শুনতে লাগল।

    আগে যখন তারা ছোট ছিল মা কলকাতা থেকে এসে শুধু ভাইকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। ভাই ঠিকমত খাচ্ছে কিনা, পড়ছে কিনা। তার জন্য শুধু একটা জামা, কখনও বা একটু পাউডারের কৌটো আর ভাইয়ের জন্য জামা জুতো বল ছবির বই আরো কত কী ! ভাইও মা এলে মাকে ছাড়তে চাইতনা, সঙ্গে যাবার জন্য বায়না করত। একটু বড় হওয়ার পর ছবিটা পাল্টে গেল। ভাই ছটপটে,খেলাধুলায় বন্ধুবান্ধবে মত্ত থাকে। ঘরে বিশেষ পাওয়া যায়না তাকে। মা এলে মার সঙ্গে একটু দেখা করেই এদিক ওদিক চলে যায়। বেটাছেলে,কিছু একটা হিল্লে হয়েই যাবে। মা ভাইকে নিয়ে চিন্তা কম করে তার দিকে মন দিতে শুরু করেছিল।

    ছোট থেকেই রানুর পাতলা ছোটখাটো চেহারা, মুখচোখ খারাপ নয় দিদিমাদের বলতে শুনেছে। বয়সের চেয়ে ছোটই দেখাত এতকাল। নতুন জামা তো বছরে একটা কি দুটো তাও সেগুলো তোলা থাকে। ঘরে পরার জন্য এখান ওখান থেকে পাওয়া অন্যের পুরনো ছোট জামা। বছরখানেক আগে শরীরে ভাঙাগড়ার পালা শুরু হল। হঠাৎ করে যেন বড় হয়ে গেল। লম্বায় দিদিমনিকে ছাড়িয়ে গেল, কিছু না খেয়েও চেহারা থেকে জেল্লা বেরোতে থাকল। পুরনো ছেড়াখোঁড়া জামায় আর শরীর আঁটেনা। তবু রক্ষে, ইস্কুলে যাওয়ার জন্যে এইট থেকেই ড্রেস,নীলপাড় শাড়ী, মা কিনে দিয়েছিল। মামীরা বড় রাস্তায় মুদির দোকানে পাঠালে যেন মনে হত চারিদিক থেকে জোড়াজোড়া চোখ গিলে খাচ্ছে। একদিন ছোটদিদা খেয়াল করে মামীদের বলল এতবড় মেয়েকে দোকান আর না পাঠাতে। বাড়িতে কুরুক্ষেত্র হয়ে গেল সেই কথা নিয়ে। তখন থেকে বাইরে বেরনোর সময় একটা ছেঁড়া গামছা গায়ে জড়িয়ে যেত। আর দিন গুণতো কবে মা এলে ঘরে পরার সায়া জামা কিনে দেবে, সে ঘরেও শাড়ী পরতে পারবে।

    মা বাইরে যাবার পর থেকেই রোজ সন্ধ্যেয় পড়া শেষ হলে প্রথমে দাদুর পায়ে গরম তেল লাগিয়ে আসে ওবাড়ীতে। আগে এই কাজটা মায়ের ছিল। তারপর এবাড়িতে এসে প্রথমে মেজমামার পরে সেজমামার পা টেপে যতক্ষণ না খাবার ডাক পড়ে। মেজমামা রোগাপাতলা মানুষ, একটু টেপার পরেই আহা উহু করে বন্ধ করতে বলে। সেজমামার দশাসই চেহারা, টিপতে টিপতে হাত ব্যথা হয়ে যায় তবু থামতে বলেনা।

    সেদিন সারাদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। দিনভর জল ছপছপ করে এ বাড়ী সে বাড়ী এ দুয়ার সে দুয়ার করেছে সে। কেমন যেন শীত শীত করছিল সন্ধ্যে থেকেই। দাদুর ঘর থেকে ফিরে মেজমামার কাছে গিয়ে দেখে মামা ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত মানুষের পায়ে হাত দিতে নেই জানে। তাই সোজা গিয়ে সেজমামার ঘরে ঢুকল। আলোটা কমানো ছিল তাও মামা ওর হাতে আলোটা দিয়ে বললে,

    -"বাইরে রেখে আয়, চোখে লাগছে।'

    আলোটা বারান্দার এক কোণে রেখে আবার ঘরে ঢোকে। অন্ধকারে ঠিকমত কিছু দেখা যাচ্ছিলনা, খাটের কোণটায় দড়াম করে পায়ের হাঁটুটা যায় ঠুকে। চোখ সইয়ে আন্দাজ করে খাটের ধারে বসতেই মামা ওর হাতটা এক ঝটকায় টেনে নিয়ে সারা গায়ে বুলিয়ে নেয়। রানু শিউরে ওঠে,কেমন সাপের মত ঠান্ডা খোলা গা, কোথাও এতটুকু সুতো নেই। ভয়ে কাঠ হয়ে হাত সরিয়ে নেয়। হাত সরাতেই চাপা ধমক আসে,

    "কী রে হাত গুটিয়ে রইলি কেন, টেপ।' ওর হাতটা জোর করে টেনে নিয়ে পায়ের ওপর রাখে।

    লজ্জা ঘেন্নায় কেমন যেন অসাড় হয়ে আসে ওর সমস্ত দেহমন। কিভাবে যে হাত চলে তা নিজেও টের পায়না। নীচে খাবার ডাক পড়তে যখন ছাড়া পায় তখন ওর আর চলার শক্তি নেই। কোনোরকমে শরীরটাকে টেনে বাইরে নিয়ে এসে বিছানায় গিয়ে লুটিয়ে পড়ে। দিদিমনি বারবার ডাকায় খেতে বসে কিন্তু গলা দিয়ে কিছু নামেনা। সারারাত জেগে থেকে ভোরে উঠে যা খেয়েছিল তাও বের করে দেয় হড়হড়িয়ে বমি করে।

    এরপর থেকে রোজ ঐ একভাবে দামড়া সাপটা জামাকাপড় খুলে গা পা টেপাতে থাকে তাকে দিয়ে। ঘেন্নায় অস্থির হয়ে ওঠে তবু কাকে বলবে, কী বলবে বুঝে উঠতে পারেনা। সন্ধ্যে হলেই রাজ্যের অজানা ভয় লজ্জা আর ঘেন্না এসে জড়ো হত বুকে,গা গুলিয়ে উঠত। কী মনে করে একটা ধারাল চুলের কাঁটা রাখত সঙ্গে। কাঁটাটা কেন রাখত তাও পরিস্কার ছিলনা, কেউ বলে দেয়নি, তবু রাখত। একটু যেন বল আসত মনে। আর দিনরাত শুধু ঠাকুর ডাকত, মাকে এনে দাও ঠাকুর, শীগগির আমার মাকে এনে দাও!

    **************************************

    ইরা বাড়ি এসে মেয়ের মুখের দিকে একবার তাকিয়েই কপালে হাত দিল। মুখ শুকনো, জ্বর টর হলনা তো। একটু রোগাও লাগছে, মুখেচোখে কেমন একটা ভাব। সুবিধের ঠেকল না ওর, কিছু নিশ্‌চয় হয়েছে মেয়ের। চাপা মেয়েদের নিয়ে এই এক সমস্যা, শত কষ্টেতেও মুখ খুলবেনা। যত বড় হচ্ছে ইরার ছেলের চেয়ে মেয়েকে নিয়ে চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। মামামামীদের অযত্ন অবহেলায় ছেলে চিৎকার করে, কেঁদেকেটে নালিশ করে মায়ের কাছে, দাদুর কাছে। কিন্তু মেয়ের মুখ দিয়ে কোনোদিন একটু টুঁও শোনা যায়না। মুখফুটে কিছু চায়না কখনও, যা এনে দেয় তাতেই খুশী। ছোট থেকেই ওর কান্নাকাটি কম। সারাদিন সংসারে ভুতের মত খাটে তবু সময় করে পড়াশোনা করে পাস দিচ্ছে। এই বয়সের মেয়ে, না খেলা, না সমবয়সীদের সঙ্গে বেড়ানো, গল্পগুজব করা। আর সেসবের সময়ই বা কোথায়? দিনরাত সংসারে নানাজনের ফাইফরমাস খাটছে এই কচি মেয়েটা। ওর মুখের দিকে তাকালে ইরার বুকটা ফেটে যায়। ওর বাবার বড় আদরের ছিল। যতদিন সে সুস্থ বেঁচে ছিল, ঘরে থাকলে কোল থেকে নামাতনা মেয়েকে। অদৃষ্টের ফের! নাহলে এই মেয়ের কি এভাবে মানুষ হওয়ার কথা! বাপ থাকলে মেয়েকে রাজকন্যের মত রাখত। সে নিজে তো সংসারের টানাপোড়েনে ছেলেমেয়েকে আদরই দিতে পারেনা ঠিকমত, বিশেষ করে মেয়েটাকে।

    রাত্রে মাকে বাবার কাছে শুতে পাঠিয়ে ইরা মেয়ের পাশে এসে শুল। লন্ঠনের আলোটা বাড়িয়ে দিয়ে মুখটা ভাল করে দেখে বলল,

    -"কী রে বল?'

    -"কী বলব মা? '

    -"কিছু বলার নেই তোর? '

    ঘাড় নেড়েও মেয়েটা কেমন একটা করে তাকিয়ে রইল, অনেকক্ষন পরে ঠোঁটে শুকনো হাসি এনে বলল,

    -"মা আমায় ঘরে পরার শাড়ী সায়া জামা কিনে দাও এবার, আমি আর ফ্রক পরবনা।'

    ইরার তীক্ষ্ম দৃষ্টি মেয়ের পানে,অপেক্ষায়। এরকম আবদারের স্বরে কখনো কথা বলেনা মেয়েটা। শেষমেষ সেই চোখের দিকে তাকিয়ে রানু আর পারল না, ঝরঝর করে কেঁদে উঠল।

    কখন মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল রানু জানেনা। সকালে ঘুম ভেঙে দেখল মা একইভাবে ওর মাথা কোলে নিয়ে থুম হয়ে বসে আছে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে। ও উঠতে মা যেন হুঁশ ফিরে পেল। কোনো কথা না বলে দড়ি থেকে গামছাটা আর কাপড়জামা নিয়ে দরজা খুলে দিপুদের বাড়ী গেল, ওদের পুকুরঘাটে কাপড় কাচবে বলে। সেই যে গেল, বেলা গড়িয়ে যায়, তখনও আসেনা। দিদিমনি মুড়ির কাঁসি নিয়ে বসেছিল, মা না এলে জল খেতে পারছিলনা। দিপু এসে খবর দিল মা কোথায় গেছে ছোটদাদুর সাথে, ফিরতে দেরী হবে। মা রা ফিরল সেই দুপুরে, রানু তখন ছোটদিদার কাছে বসেছিল ওদের বাড়ীতে। ওর খুব চিন্তা হচ্ছিল।

    যা ভেবেছিল তাই, মা বাড়ী না ঢুকে ছোটদাদুর বাড়িতেই এল। রানু ডাল তরকারী গরম করল স্টোভে, দিদা ওদের খাবার বেড়ে দিল। খাওয়াদাওয়ার পরে দাদু ওপরে শুতে চলে গেল। রানুকে দিদা পাঠাল ভাঁড়ারঘরে পান সাজতে। ঠান্ডা আধো অন্ধকার ঘরে মাটির মেঝেতে বসে পানের ডাবর টা খুলল। বোঁটা ছিঁড়ে দুভাগ করে সবুজ শিরা ওঠা পাতায় চুন ঘসে, সুপুরি খয়ের মৌরী সব দিল একে একে। সবশেষে দিদার হলুদ রঙের মিষ্টি খয়েরের ডিবে টা খুলল। খোলা ডিবের মুখটা নাকের কাছে নিয়ে এসে শুঁকল। আ: কী সুন্দর গন্ধটা! চোখ বন্ধ করে চুপচাপ থাকে কিছুক্ষণ, সারা শরীরে, ভেতর বাইর ভরে নেয় সুগন্ধে ।

    -"কাকী, তোমাদের ভরসাতেই সব ঠিক করে এলাম। রানুর বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেল।'

    -"সব দিক ভেবেছিস তো? এত কমবয়সে বিয়ে আজকাল কেউ দেয়না। স্কুলটা পেরোতে দিতিস অন্তত।'

    একটা চাপা কান্না জড়ানো স্বর হাহাকার করে উঠল,

    -"সব তো শুনলে, সব তো জানই। আমার সমস্ত স্বপ্ন আশা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল কাকী। কাল সারারাত অনেক ভেবে দেখলাম এছাড়া আর উপায় নেই। বুড়ো মাবাপ আর কদিন? কার ভরসায় আমি মেয়েকে এখানে রাখব মা? যদি কোনো সর্বনাশ হয়ে যায় কে বাঁচাবে, আমার যে সর্ষের মধ্যে ভুত গো!

    রানুর হাত থেমে যায়, পাথরের মত বসে থাকে। হাতে মিষ্টি খয়েরের কৌটো, পানে ঢালতে ভুলে যায়। মায়েরা কী সব বলছে,মায়েদের সব কথা যেন তার বোঝা উচিৎ, অথচ সে ঠিক বুঝতে পারছেনা। খয়েরের গন্ধে তার বমি উঠে আসে। ছি: বিচ্ছিরি গা মদকানো গন্ধ!

    আবছা আলোর রেখাগুলি বাতার গরাদ দিয়ে মেঝেতে একটু একটু করে ফুটে উঠছে। জোরে একটা দীর্ঘনি:শ্বাস ফেলে। হাল্কা ঠান্ডা বাতাসের আভাস আসে ঐ ছোট্ট ঘুলঘুলি গুলো দিয়ে। দিদিমনির দিকে তাকিয়ে দেখে বুকের ওঠানামাটা একটু কম হয়েছে। মুখ দেখে মনে হচ্ছে এখন একটু আরামে ঘুমোচ্ছে। ভোর হয়ে এসেছে। উঠে বসে আধো অন্ধকারে চারদিকটা দেখল একবার। একদিকে বরনডালা ঘট, সিঁথি, টোপর, বিয়ের আরো নানা সামগ্রী ডাঁই করা আছে। আর একদিকে বস্তায় ব্যাগে সারি সারি চাল আটা মশলাপাতি। খাটের তলায় খড় বিছিয়ে আলু রাখা আছে। তারই ওপর দিয়ে দুটো ধেড়ে ইঁদুর কিচকিচ করে ছুটে গেল। একটা আলুপচা গন্ধ মিশেছে চিরপরিচিত এই বিছানার তেলচিটে আর দিদিমনির দোক্তার গন্ধের সাথে। বাইরে কারা যেন কথা বলছে, দোরে কড়া নাড়ার আওয়াজ। রুনু একটানা লম্বা শ্বাসে অনেকটা চেনা গন্ধ নিয়ে শিরায় শিরায় মিশিয়ে দেয়। আর সে ফিরে আসবেনা এইসবের মাঝে। আ:, চিরদিনের মত মুক্তি পাবে এই গুমোট জেলখানার মত বিচ্ছিরি বদ্ধ ঘরটা থেকে। কোনো সম্পর্ক রাখবেনা সে আর এখানকার সঙ্গে, আর কখনো আসবে না।

    "টিক টিক টিক', দেওয়ালের টিকটিকিটা তিন সত্যি করে সায় দেয়।

    এমনিতে শান্ত মেয়েটা একটু উদ্ধত ভঙ্গিতে অনভ্যাসের নতুন শাড়ীর আঁচলটা কোমরে জড়িয়ে খিলের দিকে এগোয়।

    দরজা খুলে দাঁড়াতেই কাঠচাঁপা আর গন্ধরাজের গন্ধ মাখানো একঝলক ঠান্ডা হাওয়া এসে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। সামনে উঠোনে দেখে সেজমামী পিঁড়ি আঁকছে। খিড়কী দরজা দিয়ে মেজমামী পুকুর থেকে নেয়ে জলের ঘটি কাঁখে ঢুকল, দধিমঙ্গল করবে। ঝাঁপি শ্যাম্পু আর গামছা হাতে দাঁড়িয়ে আছে, চান করতে যাবে। নতুন কাজের মেয়েটা গিয়ে সদর দোর খুলেছে, মা সঙ্গে আরও কারা সব ঢুকছে কথা বলতে বলতে। ভোরের আকাশ হালকা লালচে ধূসর। সানাই বেজে ওঠে। ভাইয়েরা চাঁদা তুলে মাইক লাগিয়েছে। কেমন যেন মন খারাপ করা সুর, পুজোর বিসর্জনে যেমন হয় তেমনি। আজই শেষ? যাত্রার বিজ্ঞাপনে যেমন বলে "অদ্যই শেষ রজনী'!

    সেজমামীর চোখ পড়ল ওর দিকে। হেসে কী একটা বলে ওঠে মামী। কানে আসে কিন্তু শুনতে পায় না। রুনুর সামনে এত বছরের পরিচিত দৃশ্যাবলী। নিকানো উঠোনে তুলসীমঞ্চ,নিজের হাতে লাগানো বেলফুলের গাছ,হাঁসেদের ঘরে প্রিয় হংসিনীর ডাক, গোয়ালে গরুদের হাম্বা। সে যেতে চায় বাইরে সবার কাছে কিন্তু পা ওঠেনা, গাল গলা শরীর সব যেন ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টির ধারায়। আস্তে আস্তে দরজার পাল্লাটা ধরে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়তে পড়তে শুনতে পায় মায়ের গলা,

    -"রানু রানু, এমন কচ্ছিস কেন? এই রানু ওঠ, ওঠ মা। কী হল ........................... '।

    মাকে কী বলতে যায়, গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোয় না। বুক ভার হয়ে আসছে, কেমন যেন দম বন্ধ লাগছে। কী যে হচ্ছে?

    -"মাথা ঘুরে মুচ্ছো গেছে গো। দুব্বল মেয়েটা,একে বিয়ের চিন্তা তায় ঠিকমত খাওয়াদাওয়া নেই। জল দাও, একটু জল দাও'।

    মা ওকে এসে ধরে, মেজমামী ঘটি থেকে নিয়ে ওর মুখে জলের ছিটে দেয়। কে একজন গেলাসে জল নিয়ে ওর মুখে দেয় একটু একটু করে। ধাতস্থ হয়ে মাথাটা মায়ের কোলে গুঁজে দিতে দিতে বুঝতে পারে আজ এই প্রথম ওর সবকিছুর জন্য, সবার জন্য কষ্ট হচ্ছে, ভীষণ কষ্ট। মায়ের হাত ধরে উঠে চৌকাঠ পেরিয়ে বাইরে যেতে যেতে পিছন ফিরে নরম ভেজা চোখে বিচ্ছিরি বদ্ধ ঘরটাকে দেখে নেয়, একবার শেষবারের মত।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ১১ মার্চ ২০১২ | ৮১১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন