এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অপর বাংলা

  • লং মার্চের ডায়েরি - তৃতীয় কিস্তি

    নাসরিন সিরাজ লেখকের গ্রাহক হোন
    অপর বাংলা | ১২ ডিসেম্বর ২০১০ | ৭২৫ বার পঠিত
  • ২৪ অক্টোবর। লং মার্চের প্রথম দিন। সকাল ৭ টায় মেহেদীর ফোন আসে। 'সব ঠিক আছে তো ?' ফোন ধরতে ধরতে মনে মনে ভাবি আমি।
    'উঠসো ঘুম থেকে? রাস্তায় কিন্তু ভয়াবহ জ্যাম। শিগগির বুড়োর (আনু মুহাম্মদের) বাসার দিকে রওনা দাও। তা না হলে দেরী হয়ে যাবে।' মেহেদীর উৎফুল্ল গলা পাই ফোনের অপর প্রান্তে। এরই মধ্যে সে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে।
    সেদিন ছিল রোববার। দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস। ঢাকায় ছুটির দিনে বা হরতালের দিনে সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় যেখানে যেতে ১৫ মিনিট লাগে, সেটা জ্যামে পড়ে সাধারনত: লাগে ঘন্টা দুয়েক। তাই মেহেদীর এই তাগাদাটুকু দরকার ছিল। তাছাড়া আমি গুলশান থেকে রওনা হব, যেখানে প্রাইভেট কারের মালিকের সংখ্যা বেশী বলে আরও বেশী জ্যাম থাকে।

    লং মার্চ উপলক্ষে জাতীয় কমিটি কিছু সাদা টি-শার্ট আর লাল টুপি করেছে। এর মধ্যে এক সেট আমি স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য হিসেবে পেয়েছি। যদিও জাতীয় কমিটির কয়েকজন তরুণ নেতার কাছে টি-শার্ট তৈরির বিষয়টিকে আমি 'শুধু শুধু বাড়তি খরচ' বলে আপত্তি জানিয়েছিলাম (এই মন্তব্যটুকু আসলে আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না), কিন্তু সকালে আয়নায় নিজেকে 'লং মার্চের' বেশভূষায় ভালই লাগছিল। আমার খুশী আরও বাড়ল যখন রাস্তায় একজন পথচারী আমার টি-শার্ট থেকে জোরে জোরে পড়েন, 'উন্মুক্ত না, রপ্তানী না, বিদেশী না!' মনে মনে ভাবলাম, 'জাতীয় কমিটির শ্লোগানের ভালই প্রচারণা হচ্ছে তো!'

    সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই আনু স্যারের বাসায় পৌঁছে গিয়ে দেখি স্যার তৈরী হচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর জরুরী কিছু কাগজ প্রিন্ট করতে মেহেদী সেখানে আসেন, তার সাথে আনহা খান। বলা ভাল, কোন শরীক দলের সদস্য না হয়েও স্বাধীনভাবে যে কয়জন মেয়ে জাতীয় কমিটির সাথে কাজ করছে, আনহা তাদের মধ্যে অন্যতম। ২০০৯ এর ২ সেপ্টেম্বর পেট্রোবাংলা ভবনের সামনে জাতীয় কমিটির মিছিলে পুলিশী হামলার দিন আনহা বিশেষভাবে আমার নজরে পড়ে। সেদিন আনু মুহাম্মদকে পুলীশ যখন রাস্তায় ফেলে দল বেঁধে লাঠি দিয়ে মারপিট করছিল, তখন আনহা কয়েকজন পুলিশকে হ্যঁ¡চকা টান দিয়ে সরিয়ে আনু স্যারকে লাঠির বাড়ি থেকে রক্ষা করতে নিজের পিঠ পেতে দেয়। পত্রিকায় ওর ছবি দেখে অনেকে ভাবতে পারেন, সে বুঝি একজন কিশোর। তার জিন্সের প্যান্ট, শার্ট আর উল্টো করে পরা টুপি দেখে 'ও ছেলে, না মেয়ে' এ নিয়ে বাচ্চা ছেলেদের আমি বাজি ধরতেও দেখেছি। আনহা আসলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। পরীক্ষার কারণে এবারের লং মার্চের পুরোটা সময় সে থাকতে পারছে না। কিন্তু চটপটে হওয়ার কারণে মেহেদী ওকে লং মার্চের প্রথম দিন বেশ কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। ওই সকালে আনু স্যারের পড়ার ঘর থেকে কিছু কাগজ-পত্র প্রিন্ট করে নিয়ে ওরা দ্রুত বেরিয়ে পড়ে।

    আমার এর মধ্যে দুটি ব্যাগ হয়েছে। একটিতে কাপড়-চোপড়, অন্যটিতে ল্যপটপ, ক্যামেরা, নোটবুক -- এই সব জরুরী জিনিষপত্র। আনু স্যার তৈরি হয়ে নেওয়ার ফাঁকে বাপ্পি আপা (আনু স্যারের স্ত্রী) আমার কাছে স্যারের পা মালিশের তেল রাখতে দেন। পুলিশের প্রহারের পর স্যারের পা বেশ জখম হয়েছিল। বেশী হাঁটলে বা দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিলে স্যারের পা ফুলে যায়-- তার সঙ্গে সফর করতে গিয়ে এটি আগেও আমি লক্ষ্য করেছি।

    স্যারের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় যখন তিনি স্যান্ডেল পরছিলেন, তখন বাপ্পি আপা খেয়াল করলেন এই স্যান্ডেলই সেদিন পুলিশী হামলার দিন স্যার পরেছিলেন। খবরের কাগজে হামলার ওই ছবি ছাপা হয়েছিল বলে আমিও স্যান্ডেলটি খেয়াল করেছিলাম। আমি দুষ্টুমী করে বলি, 'আজকেও যদি পুলিশী হামলা হয়, তাহলে বুঝতে হবে স্যারের স্যান্ডেলটাই কুফা।' তখন মনে মনে ভাবছিলাম, 'পুলিশ হামলা করলে পিঠের ব্যাগটাকে যে করেই হোক বাঁচাতে হবে। ল্যাপটপে আমার সব ডেটা ফাইল রয়েছে। এর কিছু হলে আমি একেবারে শেষ। ...আচ্ছা, পুলিশ যদি পিঠে বাড়ি দেয়, তাহলে তেলের শিশিটা ভেঙে গেলে নোট বইটাও তো যাবে!'

    বাসা থেকে বের হয়েই আমরা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা পেয়ে গেলাম। 'মুক্তাঙ্গনের' দিকে যেতে যেতে আমি জানতে চেষ্টা করি গত রাতে কি নিয়ে জাতীয় কমিটির মিটিং-এ হৈ চৈ হয়েছে। স্যার জানালেন, লং মার্চে যোগ দিতে আজ জাতীয় কমিটির বড় শরীক দলগুলোর বড় বড় নেতারা আসবেন। আর তারা সকলে আসলেই উৎকন্ঠা বাড়ে। প্রোটোকল রক্ষা করতে গিয়ে ঝামেলা বাঁধতে পারে, মিছিলের নেতৃত্ব কে কে দেবেন-- তা নিয়েও ধাক্কাধাক্কি হতে পারে, আর যদি সবাই বক্তৃতা দিতে চান, তাহলে লং মার্চের মিছিল বের করতে দেরী হবে। গত রাতে মিটিং-এ এসবই আলোচনা হচ্ছিল। স্যারের কথা শুনে আমি নিশ্চিন্ত হলাম, 'যাই হোক, লং মার্চ বানচাল হওয়ার মত কোন আলোচনা হয়নি।'

    মুক্তাঙ্গনে পৌঁছে দেখি সেদিন মাঠটির অন্য রকম চেহারা। রেন্ট-এ-কারের গাড়িগুলো না থাকায় জায়গাটাকে বেশ বড় মনে হচ্ছে। এর মধ্যে শঞ্চখানেক লোক চলে এসেছে। লাল আর সাদা রং এর ব্যনার আর ফেস্টুনে জায়গাটায় কেমন একটা উৎসব-উৎসব ভাব চলে এসেছে। অনেক শরীক দল নিজস্ব টি-শার্ট করেছে, সেখানেও লাল আর সাদা'র প্রাধান্য। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) করেছে লাল রং-এর টি-শার্ট। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) করেছে সাদা রং-এর টি-শার্ট । আর সকলে মাথায় পরেছেন লাল রং-এর টুপি। তবে ছাত্র ইউনিয়ন, ওয়ার্কার্স পার্টির টি-শার্ট ও জাতীয় কমিটির ব্যনার-ফেস্টুন ছিল নীল রঙের। মেয়েরা শাড়ী বা সালোয়ার কামিজের উপরেই টি-শার্ট পরেছেন।

    মুক্তাঙ্গনের একটি গাছের ছায়ার নীচে দেখি একটা পিক-আপ ভ্যানে পাঁচ-সাত জন মেয়ের একটি দল জারি গানের সুরে গান করছে, 'উন্মুক্ত না, রপ্তানী না, বিদেশীদের না। রক্ত দেবো, জীবন দেবো, কয়লা দেবো না।'... দলটির নাম চারণ শিল্পী গোষ্ঠী। কর্মীদের ছোটাছুটিতে বুঝলাম এরা মূলত: বাসদের কর্মী। দীর্ঘ গানটিতে প্রায় সকল রাজনৈতিক দাবীর কথাই বলা হচ্ছিল। এক সময়ে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি নামে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। আর এখন তেল, গ্যাস, কয়লা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের লোভে বিদেশীদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের কয়লা এশিয়া এনার্জি ৯৪ ভাগ নিয়ে যাবে-- এই শর্তে কূপ খনন হতে যাচ্ছে। বিদেশীদের জন্য লাখ লাখ মানুষকে বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হবে-- এসবই বলা হচ্ছিল তাদের গানে।

    লং মার্চের প্রথম দিনের পরিকল্পনা ছিল, মুক্তাঙ্গন থেকে মিছিল শুরু করে তেজগাঁর নাবিস্কোর-মোড়ে প্রথম পথ সমাবেশ হবে। এরপর বনানীর কাকলীর-মোড় ও আবদুল্লাহপুরে পথ সমাবেশ করে আমরা মিছিল নিয়ে যাবো টঙ্গীতে। দুপুরে টঙ্গীতে বিশ্রাম ও খাবার খেয়ে আমরা পথ সমাবেশ করবো বোর্ড বাজারে। সবশেষে চান্দিনা চৌরাস্তায় সমাবেশ করে আমরা রাত্রিযাপন করবো গাজীপুরে।

    যাত্রা শুরুর জন্য অপেক্ষা করার ফাঁকে আমি মুক্তাঙ্গনে ঘুরে ঘুরে সবার সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করি, পূর্ব-পরিচিতদের সাথে কুশল বিনিময় করি, আর আনু মুহাম্মদ স্যারকে চোখে চোখে রাখি (স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এটিই আমার সেদিনের দায়িত্ব) এবং পুলিশের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করি। ভীড়ের কারণে শেষোক্ত দুটি কাজ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। পুলিশ, বিশেষ পোষাকের দাঙ্গা-পুলিশ, নারী-পুলিশসহ অসংখ্য পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি স্বত্ত্বেও তাদের গতিবিধি ছিল স্বাভাবিক। বেলা আরেকটু বাড়তেই আমি আনু স্যারকে ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে ফেলি।

    আপাত: দৃষ্টিতে সকলে বিশৃংখলভাবে ঘোরাঘুরি করছে বলে মনে হলেও আসলে সবই ছিল পরিকল্পিত। শরীক সংগঠনগুলো নিজেদের কর্মীদের নিয়ে নিজ নিজ ব্যনারের পেছনে দাঁড়াবে, কোন মিছিল আগে বা পেছনে থাকবে (বড় শরীক দলগুলো সামনের দিকে আর ছাত্র সংগঠনগুলো দাঁড়াবে পেছনের দিকে)-- ইত্যাদি সবই ছিল পূর্ব নির্ধারিত। এর মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের দল জাতীয় কমিটির ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে একটি পিক-আপ ভ্যান সাজাতে থাকে। এই পিক-আপ ভ্যানটি লং মার্চের সামনে থাকবে, ট্রাফিক জ্যাম পরিষ্কার করবে ও পুরো মিছিলটিকে দিক নির্দেশনা দেবে। পিক আপ ভ্যানটিতে এক লাখেরও বেশী লিফলেট রাখা হয় পথে পথে বিলি করার জন্য। এছাড়া বিক্রি করার জন্য সেখানে মোট ১৫ হাজারের মত বুকলেটও নেওয়া হয়।

    আর দশটা রাজনৈতিক কর্মসূচীর জ্ঞনিরাপত্তাঞ্চ বিধানের মতো সেদিন মুক্তাঙ্গনে যেমন ছিল পুলিশ, তেমনি ঘটনার খবরা-খবর জানতে সেখানে সাংবাদিকরাও এসেছিলেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে আমার কুশল বিনিময় হয়, লং মার্চের খবর আদান-প্রদানের সুবিধার্থে তাদের সাথে আমার ফোন নম্বর বিনিময়ও হয়। একজন সাংবাদিক (এক সময়ে তার সাথে আমি চাকরীও করেছি) আমার কাছে জাতীয় কমিটির প্রেস রিলিজ চাইলেন। আমি তার দিকে লিফলেট এগিয়ে দিলে তিনি বলেন, 'আচ্ছা আপনারা যে সাত দফার কথা বলছেন, এখানে কিন্তু সেগুলো আলাদা করে দেওয়া হয়নি।' তার জানার আগ্রহ থাকায় আমি তাকে 'জাতীয় সম্পদ ও মালিকানা বিষয়ে জাতীয় কমিটির বক্তব্য, প্রশ্ন ও উত্তর' বুকলেটটি বিক্রি করি। এর দাম পাঁচ টাকা। আরেকজন সাংবাদিক বললেন, 'আপনি তো এখানে আছেন। আমি যাচ্ছি, আমার আরেকটা অ্যাসাইনমেন্ট আছে। কিছু হলে আমাকে একটা ফোন কইরেন। আমি চলে আসবো।' আমি রসিকতা করে পাল্টা জবাব দিলাম, 'আমরা এখানে পুলিশের মার খাবো, আর আপনারা আমাদের ফেলে চলে যাচ্ছেন?'

    প্রায় ১২ টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। পিক-আপ ভ্যানে লাগানো ব্যানারকে পেছনে রেখে নেতৃবৃন্দ দাঁড়িয়ে লং মার্চ শুরুর ঘোষণা দিচ্ছেন। তাদের ঘিরে থাকা সাংবাদিক ও অন্যান্য নেতা-কর্মীদের ভীড়ে আমি নেতাদের কাউকেই দেখতে পাচ্ছিলাম না। সমাবেশ চলাকালে হঠাৎ ভীষণ হৈ চৈ আর ধাক্কাধাক্কি শুরু হল। 'কী হল? কী হল?' অনেকেই বোঝার চেষ্টা করেন। 'ওহ নাহ, তেমন কিছু নয়। রাশেদ খান মেনন এসেছেন।' এ টুকু জেনে আবার নিশ্চিন্ত হই আমরা। আসলে লং মার্চে নতুন বলে হয়তো আমিই সবচেয়ে বেশী ছিলাম উৎকন্ঠিত। আমার সাথে জাতীয় কমিটির যে সব কর্মী দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারা এসব ধাক্কাধাক্কিতে কিন্তু মোটেই বিচলিত হচ্ছিলেন না। তাদের হাবভাবে মনে হল, এটাই স্বাভাবিক। এই ধাক্কাধাক্কির মধ্যে একজন যুব নেতা, 'আমার নেতার গায়ে হাত দিয়েছে ! এতো বড় সাহস! ও (একজন ছাত্র নেতা) চেনে না আমি কে?' বলে হুংকার দিয়ে উঠলেও কর্মীরা স্বাভাবিকই থাকেন। একজন আমাকে বলেন, 'এসব কিছুই না। এক লং মার্চে তো নিজেদের মধ্যে মারামারিও হয়েছে। সে তুলনায় এবারের লং মার্চ অনেক সুপরিকল্পিত আর সুশৃংখল।'

    সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় কমিটির আহবায়ক শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ, বিচারপতি গোলাম রাব্বানী, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণ সংহতির প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী, গণ ফ্রন্টের টিপু বিশ্বাসসহ আরো কয়েকজন নেতা।

    অক্টোবরের শেষের দিকে সাধারণত: গরম কমে আসে। কিন্তু এ বছর অস্বাভাবিক গরম পড়েছিল। লং মার্চের প্রথম দিন এক দিকে প্রখর রোদে গা পুড়ে যাচ্ছিল, অন্যদিকে ভ্যাপসা গরমে ঘামছি তো ঘামছিই। ...নেতাদের বক্তব্য শেষ হতেই হুড়োহুড়ি করে মিছিল বেরিয়ে পড়ল। আমিও ছুটলাম সবার পেছন পেছন। হঠাৎ দেখি, আমার পরিচিত কেউ আশে-পাশে নেই। ভালো করে তাকিয়ে দেখি আমি কমিউনিস্ট পার্টির মিছিলে হাঁটছি। কর্মীরা কোন ব্যনারটা সামনে যাবে বা কোনটা পেছনে থাকবে -- হাঁটতে হাঁটতেই তা সাজাচ্ছেন। তাদের মিছিলের সামনে বাংলাদেশের একটি বিশাল আকৃতির পতাকা সমান্তরাল করে কর্মীরা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মিছিলের মধ্যে দলটির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলামের সাথে আমার সৌজন্যমূলক হাসি বিনিময় হয়।

    সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি জিরো পয়েন্টের ভাস্কর্‌যের উপর একদল লোক ক্যামেরা নিয়ে মিছিলের ছবি তুলছেন। এদের মধ্যে আমি আনহাকেও দেখতে পাই। ফটো সাংবাদিক ও টিভি নিউজ ক্যামেরাম্যান ছাড়াও বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী নিজেরাই লং মার্চ-এর দৃশ্য ধারণ করেতে থাকেন। এদের মধ্যে কয়েকজন শরীক সংগঠনের কর্মীও ছিলেন।

    জিরো পয়েন্টের ভাস্কর্‌যের বেদীর ওপর চড়লে মিছিলের মাথা থেকে লেজ পর্‌যন্ত এক নজর দেখার সুযোগ ছিল। সে সুযোগ হারানোর পর আমি পরের সুযোগের জন্য অপেক্ষায় থাকি। এর মধ্যে দেখি আমার মোবাইল ফোনে বাপ্পি আপার মিসড্‌ কল । 'নিশ্চয়ই স্যারকে না পেয়ে মিছিলের খবর জানতে ফোন করেছিলেন' ভাবি আমি। স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্যতম সদস্য এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের নেতা আতিকের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পাই সদস্য সচিব (আনু স্যার) ও আহবায়ক (শহীদুল্লাহ ভাই) একটি মাইক্রোবাসে ভ্রমন করছেন এবং তাঁরা অনেকটা এগিয়ে গেছেন।

    পুরো মিছিলটিকে দেখবো বলে আমি পুরনো পল্টনে রোড ডিভাইডারের উপর গিয়ে দাঁড়াই । আমার ছোট্ট সাইবার শট ভিডিও ক্যামেরায় পুরো মিছিলের মাথা থেকে লেজ পর্‌যন্ত ফুটেজ নিতে প্রায় ছয় মিনিট সময় লাগে।

    মিছিলটি যেনো সুশৃংখলভাবে চলতে পারে এ জন্য কর্মীরা দৌড়ে দৌড়ে বিভিন্ন রাস্তার রিক্সা, বাস, প্রাইভেট কার, টেম্পো থামাচ্ছিলেন। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও এ কাজে বিশেষভাবে সহায়তা করছিলেন। নিয়মমত পুলিশের একটি গাড়ীও মিছিলের পেছন পেছন চলছিল। পুলিশের এই তৎপরতা মিছিলের অনেকের মনে কৌতুকের সৃষ্টি করে। পরে চায়ের আড্ডায় এক জন লং মার্চার রসিকতা করে বলেন, 'আসলে পুলিশেরাই আজকে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেছে। যেন মিছিলটি সহজেই ঢাকা থেকে বের হতে পারে, সে জন্য ওরা খুব খাটা-খাটুনি করেছে। আমার এক আত্মীয় তো পুলিশের কর্মকর্তা। তিনি আমাকে বলেছেন, তোমরা ঢাকার বাইরে গেলে তো আমরা খুশী। তা না হলে প্রতিদিন মুক্তাঙ্গনে দুনিয়ার মজদুর এক হও -- বলে ভীড় জমিয়ে ফেল তোমরা।'

    আসলে ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম এতো বিভীষিকাময় যে খুব সহজেই জ্যাম বৃদ্ধির দায় এই মিছিলের উপর পড়ার সম্ভাবনা ছিল। আটকে পড়া বাসের যাত্রীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করতে করতে আরেক মার্চার মন্তব্য করেন, 'লোকগুলা তো মনে মনে বলতেছে, আরে রাখ তোদের তেল-গ্যাস। এই জ্যামে আমাদেরই তেল বের হয়্যা যাইতেছে।'

    আমি এবারে মন দিই মিছিলের শ্লোগানের দিকে। ততক্ষণে আবারো আমি মিছিলের লেজের দিকে এসে পড়েছি, সবার সাথে হাঁটছি, লিফলেট বিতরণ করছি, মাঝে মাঝে রিক্সাগুলোকে মিছিলের ভেতর ঢুকে পড়তে বাধাও দিচ্ছি। মিছিলের এই অংশে দুটো ছাত্র সংগঠন পর পর যাচ্ছে। এদের মধ্যে ছাত্র ফেডারেশনের প্রীতম শ্লোগান ধরেছে, 'জাতীয় কমিটির কোন খবর আছে?' মিছিলকারীরা সমবেত কণ্ঠে জবাব দেয়, 'আছে!' এ ভাবে তালে তালে চলতে থাকে শ্লোগান।
    -কোন সে খবর?

    --লং মার্চ!

    -জোর হল না।

    --লং মার্চ!

    -আরো জোরে।

    --লং মার্চ!

    -ঢাকা থেকে...

    --লং মার্চ!

    -ফুলবাড়ী...

    --লং মার্চ!

    -সম্পদ রক্ষায়...

    --লং মার্চ!

    -কয়লা রক্ষায়...

    --লং মার্চ!

    -জীবন রক্ষায়...

    --লং মার্চ!

    অন্য রকম সুরে আরেক জন শ্লোগান ধরে, 'বসত বাড়ি ধ্বংস করে' (লীড শ্লোগান), 'কয়লা খনি হবে না' (সমবেত)। এভাবে একই সুরে শ্লোগান চলতে থাকে, আর আমরা এগুতে থাকি। -বসত বাড়ি ধ্বংস করে... (লীড শ্লোগান)

    --কয়লা খনি চাই না! (সমবেত)

    -ঘরে ঘরে গ্যাস নাই...

    --রপ্তানীর সুযোগ নাই!

    -রক্ত দেবো, জীবন দেবো...

    --তেল-গ্যাস দেবো না!

    -পাইপ লাইনে মন্ত্রী যাবে...

    --তেল-গ্যাস যাবে না!

    -পাইপ লাইনে আমলা যাবে...

    --তেল-গ্যাস যাবে না!

    -আমার দেশের সম্পদ...

    --আমার দেশেই থাকবে!

    শ্লোগান দিতে দিতে আমরা মৌচাক মোড়, মগবাজার মোড়, তেজগাঁর সাত রাস্তার মোড় পার হলাম। এর পরের পয়েন্ট নাবিস্কো মোড়। মিছিলের সামনের অংশটি তখনও আমার দেখার সুযোগ হয়নি। এক টিভি চ্যানেলের একজন সাংবাদিক মোটর সাইকেলে করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তার সাইকেলে চড়ে কিছুটা সামনে যাই। নাবিস্কোর মোড়ে পৌঁছাতে পৌছাতে দেখি শহীদুল্লাহ ভাই পিক-আপ ভ্যানের উপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। পথের উপর বসে পড়ে লং মার্চাররা সে বক্তব্য শুনছেন। পানির পিপাসা আর ভ্যাপসা গরমে আমার পক্ষে তখন আর দাঁড়ানো সম্ভব ছিল না। আমি রাস্তার পাশের ছোট ছোট চা দোকানের দিকে ছুটলাম।

    চায়ের দোকানগুলো ততক্ষণে মিছিলকারীদের দখলে। চা-সিগারেট-কলা-পাউরুটি-বিস্কুটের চাহিদা সবচেয়ে বেশী এসব দোকানে। আমি একটা রেস্তে?ঁরায় ঢুকে এক বোতল স্প্রাইট কিনি। গরম আর তৃষ্‌ণা মোকাবিলায় ঠান্ডা স্প্রাইটেই লবণ ঢেলে দেই। ততক্ষনে দোকানের ক্যাশিয়ার-ওয়েটার মিলে প্রশ্ন করা শুরু করেছেন। উত্তর দেন আমার সঙ্গী সবুজ ভাই। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে মজুরী আদায়ের দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগঠিত করতে কাজ করছেন।
    -ভাই, এটা কিসের মিছিল? (প্রথম জন)

    --এই যে আপনাদের বিদ্যুতের সমস্যা হচ্ছে, সরকার যেন সেটার সমাধান করে,

    এটা তার দাবির মিছিল।

    -ভাই, এই যদি ব্যপার হয় তাহলে আপনাদের সাথে আমি আছি। (দ্বিতীয় জন)

    -আপনারা কতদূর যাবেন? (তৃতীয় জন)

    --আমরা ফুলবাড়ি পর্‌যন্ত যাবো। দিনাজপুর, ফুলবাড়ি।

    এরই মধ্যে আমি জেনেছি, আমাদের পরিকল্পনায় খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা বাসে উঠবো মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে। রেস্তে?ঁরায় কথা সেরে তাই ফুটপাথ ধরে হেঁটে সেদিকেই এগুতে থাকি। যেতে যেতে দেখি ফুটপাথের ধার ঘেঁষে মোটর ওয়ার্কশপ, সেলুন বা চায়ের দোকানে ভীড় করে থাকা লোকজনের হাতে হাতে জাতীয় কমিটির লিফলেট। কারও কারও হাতে বা বুক পকেটে ৫ টাকা দামের বুকলেটও আছে।

    লং মার্চের প্রস্তুতি-সভাগুলোতে 'লং মার্চ যে পথ দিয়ে যাবে, সে পথে যেন সবার হাতে হাতে জাতীয় কমিটির লিফলেট থাকে' এ রকম একটি নির্দেশ সব শরীক দলের প্রতিনিধিদের দেওয়া হয়েছিল। লং মার্চ-এর জন্য তৈরী শৃংখলা বিষয়ক নীতিমালাতেও উল্লেখ ছিল যে, কোন দল নিজেদের প্রচারণার জন্য লিফলেট বা বুকলেট বিলি করতে পারবেন; কিন্তু লং মার্চ চলার সময় সবাই শুধুমাত্র জাতীয় কমিটির লিফলেটই বিতরণ করবেন। আর প্রতিদিন লং মার্চ শেষে সন্ধ্যায় যে জনসভা হবে, সেখানে প্রত্যেক দল নিজস্ব স্টল নিয়ে বসে তাদের প্রচারণা কাজ চালাতে পারবেন।

    লং মার্চের জন্য ভাড়া করা ১০টি বাস সারি করে মাহাখালী বাস টার্মিনালের বিপরীত দিকের সড়কের উপর রাখা ছিল। আমার সীট পড়ল ১০ নম্বর বাসে। প্রায় এক ঘন্টা দেরীতে বাসটি আসলো। ড্রাইভারকে দেরীর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, 'রাস্তায় জ্যাম। আপনাগো লাইগ্যাই তো জ্যাম আরো বাড়ছে।' এর মধ্যে আমার স্বামী ফোন করে জানতে চায়, আমি কোথায় আছি। মহাখালীতে লং মার্চ অবস্থান করছে শুনে ও বলে, 'আগামী দুই ঘন্টায় ওই দিকে যাওয়া যাবে না!'

    বাস যখন চলতে শুরু করে তখন আমি প্রথম বারের মত স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম, 'যাক বাবা! কোন ঝামেলা ছাড়াই লং মার্চ শুরু হল।'

    (চলবে....)


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অপর বাংলা | ১২ ডিসেম্বর ২০১০ | ৭২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন