এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  টাটকা খবর

  • খালপাড়ের লোকজনেরা ঃ উন্নতির নামে উচ্ছেদ (দ্বিতীয় পর্ব - বাস্তব কী বলে?)

    admin লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | টাটকা খবর | ০৪ মে ২০১০ | ৫৭৬ বার পঠিত
  •                                                       (প্রথম পর্বের পর)

    কেন এই উচ্ছেদ?

    কলকাতার দক্ষিণ পূর্বে আর দক্ষিণ পশ্চিমে সাতখানা খালের পাড়ের বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, ওঁদের অন্য জায়গায় সরাবার কথা হচ্ছে কেননা পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা শুধরানো দরকার, পরিবেশের উন্নতির দরকার। এই বস্তি গুলো ভেঙে ফেলে শহরের নর্দমা আর জল নিকাশী ব্যবস্থার উন্নয়নের কাজ করা হবে।

    উচ্ছেদ কি অনিবার্য্য?

    খালপাড়ের বস্তিতে যাঁরা থাকেন তাঁদের ভোটার আই ডি কার্ড আছে, র‌্যাশন কার্ড আছে, বাচ্চাদের জন্মের সার্টিফিকেট আছে, এঁদের মধ্যে অনেকের বাড়িতেই ইলেক্ট্রিক আর জল ব্যবহার করার জন্য মিটার আছে, এঁরা রীতিমতো আয়করও দিয়ে থাকেন। যেকোনো মিটিং মিছিলে হাজিরা বাড়ানোর সময় রাজনৈতিক দলের দাদারা এঁদের দ্বারস্থ হন। কিন্তু অন্য সময়ে এঁদের শুধুমাত্র জবরদখলকারী হিসেবে দেখা হয়। খালের সংস্কারের কাজের সময়ে কেউ ভেবেও দেখেনা যে এঁদের উচ্ছেদ না করে অন্য কোনো উপায়ে কাজ করা সম্ভব কিনা। কুৎসিত-দর্শন বস্তিগুলোকে লোকজনের চোখের সামনে থেকে সরিয়ে শহরকে সাজিয়ে তোলাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। এডিবি'র পলিসিতে স্পষ্ট করেই লেখা আছে যে নিতান্ত নিরুপায় না হলে কোনো বসতি যেন উৎখাত করা না হয়, কিন্তু কলকাতা কর্পোরেশন কি সেকথা মাথায় রেখে এগোচ্ছেন? উত্তরও তো জানা - "আদৌ না'। খালপাড়ের বস্তিবাসীরা তো কর্পোরেশনের চোখে সেই বেআইনী জবরদখলকারীই, কাজেই তাঁদের হঠিয়ে দেওয়াটাই সমীচিন।



                                    চিত্র ১ : উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বস্তিবাসীদের পোস্টার

    খালপাড়ের বস্তিবাসীর দিন গুজরানের উপায় কী?

    খালের ধারে ধারে এই বস্তি গড়ে উঠেছিলো শুধুমাত্র এই সব লোকেদের মাথা গোঁজার উদ্দেশ্যে নয়। এই বস্তির সাথে এঁদের আর্থ-সামাজিক জীবন জড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের সাথেই এঁদের রোজকার দিন গুজরান জড়িয়ে আছে।খালের ধারে ছোট ছোট দোকানের সংখ্যা প্রচুর। পান-বিড়ির দোকান, মুদীর দোকান, চুন-বালির দোকান,চায়ের দোকান, টেলিফোনের বুথ,রাস্তায় সাজিয়ে বসা মাছ -তরকারীর দোকান। বস্তিবাসীদের বেশির ভাগই হয় এই রকম দোকানের কর্মচারী বা মালিক। বাকিরাও এমন সব কাজ করেন যা এই বস্তি অঞ্চলের সাথেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। কেউ রিক্সাচালক, কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ ইলেক্ট্রিকের মিস্ত্রী, কেউ বা সব্জিওয়ালা, হকার, জেলে, কেউ রান্নার কাজ করেন লোকের বাড়িতে,কেউ বা ভিক্ষা করেন।এই বস্তি শুধু ওঁদের থাকারই জায়গা নয়, এই বস্তি অঞ্চল এঁদের রোজগারের উপায়।

    কোথায় হচ্ছে পুনর্বাসন?

    কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের "পুনর্বাসন পরিকল্পনার নথি'তে লেখা আছে যে "বস্তিবাসীদের যেখানে পুনর্বাসিত করা হবে তার কোনটিই ওঁদের পুরনো বাসথান থেকে আড়াই কিলোমিটারের বেশী দূরে নয়। পুরনো বাসস্থানের কাছাকাছিই ওঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে যাতে পুরনো পেশাই বহাল রাখা ওঁদের পক্ষে সম্ভব হয়। কাজেই কারুরই রোজগারে কোনরকম বাধা পড়বেনা।' (১)
    কিন্তু এই কাজের সময় দেখা গেছে যে এই কথাটি সর্বৈব মিথ্যা। একমাত্র মনিখালি খালের বস্তিবাসীদের শম্পা মির্জানগরে যে নতুন আবাসন দেওয়া হয়েছে তা আড়াই কিলোমিটার দূরে। বাকি সমস্ত পুনর্বাসন যেখানে হয়েছে পুরনো বস্তি থেকে তার দূরত্ব তিন থেকে ছয় কিলোমিটার। এডিবি'র পলিসিতে বলা আছে যে "পুনর্বাসনের ফলে কোনভাবে যদি বস্তিবাসীর রোজগারের উপায় বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে অথবা তাঁদের জন্য এমন কোন সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে যাতে উচ্ছেদের আগে ওঁরা যতখানি রোজগার করতেন সেই রকমই এখনও করতে পারেন'। কিন্তু সরকারী নথিতে দূরত্ব নিয়ে ঐ মিথ্যে কথা লেখার ফলে বস্তির মানুষ পলিসি অনুযায়ী সাহায্য পাবার অধিকার হারাচ্ছেন। বস্তিবাসীদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকের পেশাই এমন যে বাড়ির কাছাকাছি থাকাটা খুবই জরুরী। কারু বা কাজের সময় এমন যে বারবার যাওয়া আসা করতে হয়। আর বিশেষ করে মহিলাদের বেশির ভাগেরই বাড়িতে ছোট বাচ্চা আছে, বা বয়স্ক মানুষজন আছেন যাঁদের দেখাশোনার জন্য দিনে দুই থেকে পাঁচবার কাজের ফাঁকে বাড়ি আসা নিতান্ত দরকার। এখন যদি কর্মস্থল বাড়ি থেকে ৪-৬ কিলোমিটার দূরে হয় তাহলে এই ভাবে যাওয়া আসা করে এঁদের পক্ষে সে কাজ টিকিয়ে রাখাই অসম্ভব।

    আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পুনর্বাসন হওয়া উচিৎ ০.৮ থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে। কিন্তু চড়িয়াল খালের বস্তিবাসীদের তা সত্বেও কেন পাঁচ কিলোমিটার দূরে কালাগাছিয়াতে নিয়ে যাওয়া হলো তা বোঝা সত্যিই কঠিন, বিশেষত যখন একেবারে কাছেই কালুয়া মৌজাতে যখন পাঁচ বিঘা জমি পাওয়া যাচ্ছিলো। কলকাতার দক্ষিণ-পূর্বে খালের ধারের বস্তির লোকেদের জন্য যেখানে নতুন আবাসন গড়ার কথা ছিলো সেই জমি একটি ফিল্ম ইনস্টিট্যুটকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর বস্তিবাসীদের পাঠানো হয়েছে চার কিলোমিটার দূরে।



                                              চিত্র ২ : যেখানে পুনর্বাসন হচ্ছে



                                              চিত্র ৩ : আগে যা ছিল



                                              চিত্র ৪ : যা হতে চলেছে

    প্রকল্পের কাজে নামার আগে বস্তিবাসীদের কী জানানো হয়েছিলো?

    সেই ২০০০ সাল থেকেই বস্তিবাসীদের সামনে খুবই ধোঁয়াটে ভাবে সবকিছু আনা হয়। সেই সময়ে ফোটো আইডেন্টিটি কার্ড দেওয়া হচ্ছিলো। কার্ডে সরকারী দপ্তরের নাম লেখা ছিলো কিন্তু সেগুলো সই করে বিলি করেছিলেন কোনো একটি এনজিও। এই কার্ড থাকার আসল উদ্দেশ্য যে কি তা কারুর কাছেই পরিষ্কার হয়নি। পুরো ব্যপারটা নিয়েই চূড়ান্ত অব্যবস্থা হয়েছিলো, অভিযোগও উঠেছিলো প্রচুর।

    পরে পুনর্বাসনের সময়ে কখনওই হিসেব করা হয়নি যে একেক পরিবারে কতজন সদস্য আছেন, বা পরিবারের মধ্যে পুর্ণবয়স্ক মানুষ ক'জন। পরে দেখা গেলো যে ৫-১০ সদস্যের একেকটি পরিবারকে থাকার জন্য একটাই মাত্র ঘর দেওয়া হয়েছে।

    পুনর্বাসন পরিকল্পনা কাজে লাগাবার আগে কাউকেই খুলে কিছু বলা হয়নি। ওঁদের বলা হয়েছিলো যে ওঁরা আসলে বেআইনী বাসিন্দা, তবু এখন ওঁদের নিজেদের ফ্ল্যাট দেওয়া হচ্ছে। এইই শেষ সুযোগ। এখন না নিলে ওঁদের পরে ফ্ল্যাট তো দেওয়া হবেইনা, উল্টে ২০০২ সালে টালি নালা আর বেলেঘাটা খালের বস্তিবাসীদের মত ওঁদেরও জবরদস্তি তাড়িয়ে দেওয়া হবে। বলা হয়েছিলো যে এই পুনর্বাসনে নাম লেখালেই একমাত্র ওঁরা এই শহরের বৈধ বাসিন্দা হতে পারবেন। এই ভাবে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে পুনর্বাসনের "গাজর' ওঁদের সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। যে সব জমায়েতে এই সব কথা বলা হয়েছে তার ছবিও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, সম্ভবত ফান্ডিং এজেন্সীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য।

    "পুনর্বাসন পরিকল্পনা' আসলে কি রকম?

    প্রথমে বলা হয়েছিলো যে প্রতি পাঁচজনের পরিবারকে মূল বসতি থেকে ৮০০ মিটারের মধ্যে ১৮৩ বর্গফুট জমি দেওয়া হবে। কোনো পরিবারে তিনজনের বেশি পুর্ণবয়স্ক মানুষ থাকলে তাঁদের ২১৫ বর্গফুট জমিঅ দেওয়া হবে। এত ছোট পরিসরের জমিতে কি করে কারুর পক্ষে থাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব তা নিয়ে তর্ক করে অবশ্য লাভ নেই, কারণ কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এই 'জমি ভিত্তিক পুনর্বাসন' পরিকল্পনা বাতিল করে দেন।

    পরে কর্পোরেশন ঠিক করেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের VAMAY (Valmiki Ambedkar Awas Yojna) ও BSUP (Basic Service for Urban Poor) যোজনার সাহায্যে খালপাড় বাসিন্দাদের জন্য ফ্ল্যাট তৈরী করে দেওয়া হবে। শেষ পর্য্যন্ত দেখা যায় যে প্রত্যেক পরিবারকে এক কামরার একেকটি ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে, তা সে পরিবারের সদস্য সংখ্যা যতই হোক না কেন। প্রতি ফ্ল্যাটের মাপ ১৬৩ থেকে ১৯০ বর্গফুট।
    এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা উচিৎ যে এখন কেন্দ্রীয় সরকারের "জওহরলাল নেহেরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন' ( JNNURM ) অনুযায়ী সারা দেশে যে নিয়ম চালু হয়েছে তাতে বলা আছে যে বস্তিবাসী প্রত্যেক পরিবারকে অন্তত পক্ষে ২৬৯ বর্গফুটের আবাসন দিতে হবে যার মধ্যে দুটি ঘর ও একটি বাথরুম থাকা বাধ্যতামূলক।

    এই "ফ্ল্যাট' গুলি কীরকম?

    একেকটা বিল্ডিং তিন কি চারতলার। প্রত্যেক তলায় আটটা করে ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটের মধ্যে একটি মাত্র ঘর, যার মাপ সাড়ে পনেরো বাই দশ ফুট। আর আছে লাগোয়া ছ'ফুট বাই তিন ফুট মাপের বারান্দা। আর একটি বাথরুম,চার ফুট বাই পাঁচ ফুট দস ইঞ্চি মাপের। এই বাথরুমের খানিকটা আবার মূল ঘরের মধ্যে ঠেলে ঢুকে রয়েছে, ঘরের আড়াই ফুট বাই চার ফুট জায়গা তাতে যায়। ঘরের উচ্চতা ন'ফুট দুই ইঞ্চি। সদর দরজা সিমেন্টের তৈরী, তাতে লোহার কব্জা। বাথরুমের দরজা ফাইবারের। ঘরে একটিই মাত্র জানলা, পাঁচ ফুট বাই চার ফুট মাপের, তাতে লোহার ফ্রেমে কাঁচ বসানো। এখানে বলা দরকার যে আলাদা কোন রান্নাঘর কিন্তু নেই। জলের কল ও বিদ্যুতের লাইন আছে। প্রতি ফ্ল্যাটে আলাদা বিদ্যুতের মিটার আছে।

    দখল নেবার ৩-৪ মাস পরেই কোনো কোনো ফ্ল্যাটের বাইরের দিককার দেওয়ালে ভিজে ভিজে ছোপ ধরতে শুরু করে। বর্ষার সময়ে ছাদেও স্যাঁতসেঁতে ছাপ ধরে। ওপর তলার ফ্ল্যাটগুলোতে ঘর আর বারন্দার ছাদ দিয়ে জল পড়া শুরু হয়। অনেক বারন্দাতেই গর্ত দেখা যায়। জানলার কার্নিশে চিড় ধরতে থাকে। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনো রকম মেরামতির ব্যবস্থা করা হয়নি। অনেক ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদেরই নিজেদের পয়সা খরচ করে মেরামতির কাজ করাতে হয়েছে। তার কিছুদিনের মধ্যেই নিচের তলার অনেক ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরে, সিমেন্টের দরজাতেও চিড় ধরে যায়।



                                                        চিত্র ৫ : নতুন ফ্ল্যাটের নমুনা



                                                        চিত্র ৬ : নতুন ফ্ল্যাটের নমুনা

    এখানে সুযোগ সুবিধা কী কী রয়েছে?

    প্রতি বিল্ডিং এর ছাদে একটি করে জলের ট্যাংক আছে। কয়েকটি ব্লকের জন্য একটা করে জল তোলার পাম্প থাকার কথা। ব্যবস্থা মতো ঠিক হয়েছিলো যে সবাই চাঁদা করে এই পাম্পের খরচ আর বিদ্যুতের বিল দেবেন। কিন্তু নোনাডাঙা 'ই' ব্লকে দেখা গেছে যে ছাব্বিশটি ব্লক অর্থাৎ ২০৮ টি ফ্ল্যাটের জন্য একটি মাত্র জলের পাম্প আছে। বাসিন্দাদের একজন দিনে তিনবার দু' ঘন্টা করে এই পাম্প চালাবার কাজ করেন, কিন্তু এর জন্য তাঁকে কোনো খরচপত্র দেওয়া হয়নি।

    খাবার জলের অভাব সব জায়গাতেই আছে। শম্পা মির্জানগরে তো খাবার জলের কোনো বন্দোবস্তই নেই। সেখানকার বাসিন্দারা আধ কিলোমিটার দূরে রাস্তার কোনো জলের পাইপে লীক হয়ে জল বেরিয়ে পড়ে তাই কলসী ভরে নিয়ে আসেন। নোনডাঙায় যে খাবার জল সরবরাহ করা হয় তা অত্যন্ত নোন্তা। রাস্তার কলে দিনের বিশেষ সময়ে যে জল আসে তাই ব্যবহার করতে হয়, কিন্তু সে কল প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। বাড়ির মেয়েরা কাজে যাবার সময় সঙ্গে করে বোতল নিয়ে যান, ফেরার পথে ঐ কল থেকে সেই বোতলে জল ভরে এনে কাজ চালান।

    ময়লা ফেলার জন্য কোনো ডাস্টবিন বা কিছুর ব্যবস্থা নেই। কোন জমাদারও নেই। বাসিন্দারাই মাঝে মাঝে পালা করে জঞ্জাল পরিষ্কার করেন। সেপ্টিক ট্যাংক গুলি এতই অগভীর যে নোনাডাঙা 'ই' ব্লকের ট্যাংক এর মধ্যেই উপচে পড়ছে, কিন্তু মিউনিসিপ্যালিটি থেকে তার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। রাস্তার ধারে খোলা নর্দমা এমন ভাবে রয়েছে যে একটু বৃষ্টি হলেই জল উল্টো দিকে বইতে থাকে। বেশি বৃষ্টিতে নর্দমার জল উপচে এক হাঁটু অব্দি ওঠে, তিন চারদিন ধরে সে জল আর নামেনা। নিচের তলার অনেক বাড়িতেই জল ঢুকে যায়।

    এই সব আবাসনে সব মিলিয়ে হাজারের ওপর লোকজন থাকেন, কিন্তু তাঁদের জন্য কোনো খোলা জায়গা নেই, বাচ্চাদের খেলার কোনো জায়গাও নেই। না আছে রাস্তার আলো, না কোনো চিকিৎসার সুবিধা। বাচ্চারা যে ইশকুলে পড়তো সেখানে যেতে হলে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়।

    বাসিন্দাদের বক্তব্য কী?

    বাসিন্দাদের প্রায় সবাইই মনে করেন যে মাথা গোঁজার একটা আস্তানা ওঁদের দেওয়া হয়েছে বটে কিন্তু এ প্রায় না থাকরই সমিল। যদিও ওঁদের চাহিদা খুব কমই ছিলো, তবু এই বাড়িগুলি সেটুকুও পূরণ করতে পারেনা। ওঁরা ভয় পান যে এখনই এই অবস্থা তাহলে সব দখলদারেরা এসে গেলে না জানি কি হাল হবে। যাঁরা এখনও আসেননি তাঁদের অনেকেই পাঁচ হাজার টাকা শুরুতেই যে জমা দেবার কথা তা আর দিচ্ছেননা। যাঁরা টাকা দিয়েছেন তাঁদের মধ্যেও অনেকে আর এখানে আসতে রাজী নন। অনেকেই মনে করেন যে এর থেকে তাঁদের পুরনো ডেরাতে ফিরে যাওয়াই ভালো। প্রায় সবারই বক্তব্য যে পুনর্বাসনের নামে এই প্রহসনের ফলে ওঁদের জীবনে, জীবিকায় বড় রকমের একটা ক্ষতি হলো। ওঁদের নিজের কথায় ওঁদের বক্তব্য নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি তৃতীয় পর্বে।

    **নাগরিক মঞ্চের এই প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন সুদেবী রায়।

    তথ্য সূত্র (১) - Resettlement Planning Document: India: KEIP prepared by KMC available on ADB website:
    http://www.adb.org/Documents/Resettlement_Plans/IND/29466/29466-IND-RP.PDF

    ৪ঠা মে, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ০৪ মে ২০১০ | ৫৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন