এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় – এক অসঙ্গতির উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব)

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৬ আগস্ট ২০১৫ | ৪৬২০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • পর্ব দুই – বিরূপ না হওয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা

    ৭।

    অতি অবশ্যই সরকারি আখ্যানে রামধনির বয়ানই একমাত্র স্তম্ভ নয়। এ ছাড়াও ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে অন্যান্য সাক্ষ্য ছিল। সরকারি আখ্যানের দ্বিতীয় ধারাটি, এইরকমঃ ধনঞ্জয় হেতালকে বিরক্ত করত বলে, তার বাবা নগরদাস সিকিউরিটি এজেন্সিকে বলেন ধনঞ্জয়কে সরিয়ে নিতে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মার্চের চার তারিখে(খুনের আগেরদিন)সিকিউরিটি এজেন্সি ধনঞ্জয়কে একটি লিখিত ট্রান্সফার অর্ডার দেয়। ধনঞ্জয়কে আনন্দ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে সরিয়ে পরশ অ্যাপার্টমেন্ট নামক অন্য একটি বহুতলে ডিউটি দেওয়া হয়। বদলি হিসেবে পরশ অ্যাপার্টমেন্টের তৎকালীন নিরাপত্তারক্ষী বিজয় থাপাকে সরিয়ে আনা হয় আনন্দ অ্যাপার্টমেন্টে। এই ব্যবস্থাটি চালু হবার কথা ছিল পরের দিন, মার্চের পাঁচ তারিখ, অর্থাৎ খুনের দিন থেকে।

    কিন্তু বদলি হয়ে যাবার কথা থাকলেও ধনঞ্জয় খুনের দিনও আনন্দ অ্যাপার্টমেন্টেই সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত ডিউটি দেয়, প্রতিদিনের মতই। যশোমতী বেরিয়ে যাবার কিছুক্ষণ পরে ধনঞ্জয় পরের শিফটের নিরাপত্তারক্ষী দশরথ মুর্মুর কাছে এসে বলে সে সিকিউরিটি এজেন্সির অফিসে (যেখানে ধনঞ্জয় এবং দশরথ দুজনই কর্মরত) টেলিফোন করার জন্য হেতালদের ফ্ল্যাটে যাচ্ছে। এবং তারপর সে লিফট ধরে উপরে উঠে যায়। আরও সামান্য সময় পরে, ৫-৪৫ নাগাদ সিকিউরিটি এজেন্সির সুপারভাইজার প্রতাপচন্দ্র পতি আসেন ওই ফ্ল্যাটবাড়িতে। বিজয় থাপা আসেনি এবং ধনঞ্জয় প্রতিদিনের মতই কাজ করেছে শুনে তিনি ধনঞ্জয়ের খোঁজ করেন। প্রথমে ইন্টারকমে হেতালের ফ্ল্যাটে ফোন করা হয়। কেউ না ধরায় দশরথ মুর্মু চিৎকার করে ধনঞ্জয়ের নাম ধরে ডাকেন। ধনঞ্জয় চারতলায় হেতালের ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে ঝুঁকে পড়ে উত্তর দেয়, যে সে নিচে আসছে। নিচে নামার পর ধনঞ্জয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সে পরশ অ্যাপার্টমেন্টে কাজে যায়নি কেন। সে বলে, তার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল। তারপর সে আনন্দ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়, এবং পুলিশের হাতে নিজের গ্রামে প্রেপ্তার হওয়ার আগে পর্যন্ত তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

    এই বিবরণে সাক্ষ্যপ্রমাণের জায়গা তিনটি। এক, ধনঞ্জয়ের বদলি হয়ে যাওয়া এবং নিজের কাজের জায়গায় না যাওয়া। দুই, পরের শিফটের নিরাপত্তারক্ষী দশরথকে বলা, যে, সে হেতালদের ফ্ল্যাটে যাচ্ছে। তিন, অব্যর্থ প্রমাণ যেটি, ৫-৪৫ নাগাদ অকুস্থল, অর্থাৎ হেতালের ফ্ল্যাট থেকে দশরথ মুর্মু এবং প্রতাপচন্দ্র পতির উদ্দেশ্যে ধনঞ্জয়ের মুখ বাড়ানো। মূলত এই তিনটি সাক্ষ্যপ্রমাণই তৈরি করে সেই অব্যর্থ প্রমাণ শৃঙ্খল, যার জন্য বিরূপ সাক্ষী রামধনির বয়ানকে উপেক্ষা এবং সম্পাদনা করা যায়। তৃতীয় প্রমাণটি, অর্থাৎ, ব্যালকনি থেকে মুখ বাড়ানোই এই প্রমাণ শৃঙ্খলের স্তম্ভ। কারণ, এটিই মোক্ষম ভাবে প্রমাণ করে হেতালের ফ্ল্যাটে ধনঞ্জয়ের উপস্থিতিকে। বাকি দুটি তথ্য দিয়ে আলাদা করে সত্যিই কিছু প্রমাণিত হয়না, বদলি সত্ত্বেও অ্যাপার্টমেন্টে থেকে যাওয়া তো খুন প্রমাণ করেইনা, এমনকি ফ্ল্যাটে যাচ্ছি এই কথা বলাও ফ্ল্যাটে যাওয়ার প্রমাণ নয়। এই দুটি তথ্য তাই এই শৃঙ্খলের অংশ মাত্র। ফ্ল্যাটে উপস্থিতির প্রত্যক্ষ প্রমাণটিই এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অতএব, এই মূল স্তম্ভটিকে ধরেই আমরা আরেকদফা অনুসন্ধান শুরু করব। 

    ৮।

    গল্পের মধ্যে যেমন অনুগল্প, তেমনই খুনের সামগ্রিক আখ্যানের মধ্যে ব্যালকনি থেকে মুখ বাড়ানো একটি অনু-আখ্যান। সামগ্রিক আখ্যানটির মতো, এই অনু আখ্যানটির ক্ষেত্রেও আমাদের অনুসন্ধানের পদ্ধতি একই, অর্থাৎ, দেখব কাহিনীটি শুরু হল কোথা থেকে। কখন প্রথম জানা গেল, যে, বিকেলবেলায় চারতলার ব্যালকনি থেকে ধনঞ্জয় মুখ বাড়ায়। খুনের কয়েকঘন্টার মধ্যেই যে আখ্যান তৈরি হয়েছিল, এই অনুকাহিনীটি তার মধ্যে ছিল? নাকি এটি পরের সংযোজন? 

    তদন্তকারী সাব-ইন্সপেক্টর গুরুপদ সোমের আদালতে দেওয়া বয়ান অনুযায়ী খুনের রাতেই তিনি কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী দশরথ মুর্মুর বয়ান নেন, এবং ওই রক্ষীর কাছ থেকেই ঠিকানা নিয়েই ধনঞ্জয়ের খোঁজখবর শুরু করেন। অর্থাৎ ওই রাতেই দশরথের সঙ্গে গুরুপদর যথেষ্ট কথোপকথন হয়েছিল এবং দশরথ বিলক্ষণ জানতেন, যে, ধনঞ্জয়কে সম্ভাব্য অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে স্বাভাবিক এটাই, যে সেই রাতেই পুলিশের কাছে তিনি তাঁর প্রত্যক্ষদর্শনের কথা ব্যক্ত করবেন, এবং সেখান থেকেই শুরু হবে এই অনুকাহিনী। 

    এটা যৌক্তিকভাবেও স্বাভাবিক, কারণ, ধনঞ্জয়কে যে চূড়ান্ত দ্রুততায় সম্ভাব্য অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল খুনের রাতেই, সেটার জন্য কেবলমাত্র লিফটম্যান রামধনির সাক্ষ্য যথেষ্ট ছিলনা। আমরা আগেই দেখেছি, সেই সাক্ষ্যের কাহিনীতেও যথেষ্ট গোলমাল ছিল। রামধনির বক্তব্য যদি সঠিক হয় তাহলে তিনি পুলিশকে সে রাতে ধনঞ্জয়ের লিফটে ওঠার কাহিনী বলেননি। সেক্ষেত্রে অতি অবশ্যই সম্ভাব্য অপরাধীকে চিহ্নিত করতে গেলে অন্য একটি প্রত্যক্ষদর্শনের প্রয়োজন। আর রামধনি যদি মিথ্যা বলে থাকেন, সেক্ষেত্রেও শুধু “ধনঞ্জয় লিফটে চড়ে চারতলায় গিয়েছিল” এইটুকু দিয়ে সম্ভাব্য অপরাধী হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করা অসম্ভব। এই বয়ানের ভিত্তিতে যে লোকটি চারতলায় গিয়েছিল তার খোঁজখবর করা খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করাটা নয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, সম্ভাব্য অপরাধী হিসেবে ধনঞ্জয়কে চিহ্নিত করে যে আখ্যান, তার সূচনাবিন্দু ওই রাতেই, কয়েকঘন্টার ভিতরে। অতএব, আরেকটি প্রত্যক্ষদর্শনের আখ্যান যৌক্তিকভাবেই সেই রাতে নির্মিত হওয়া প্রয়োজন। প্রত্যক্ষদর্শনের যেহেতু দুটিই আখ্যান আছে এই কেসে, একটি রামধনির এবং অপরটি “মুখ বাড়ানো”র, তাই এই দ্বিতীয় অনু আখ্যানটিও সেই রাতেই নির্মিত হওয়া জরুরি। অর্থাৎ সমস্ত যৌক্তিক অনুমান আমাদের এক দিকেই ঠেলে দেয়, যে, “ধনঞ্জয় মুখ বাড়িয়েছিল” এই অনুকাহিনীটি ওই রাতেরই নির্মান।

    হোমসীয় কায়দায় নির্মিত আমাদের এই যৌক্তিক প্রতিপাদ্যটির অবশ্য তথ্যগত কোনো সমর্থন নেই। ওই রাতে তৈরি আখ্যানগুলির সহজলভ্য সূত্র হল পরদিনের সংবাদপত্রের বিবরণ। সেখানে ধনঞ্জয়ের নাম আছে। কিন্তু “ধনঞ্জয় মুখ বাড়িয়েছিল” এই অনু-গল্পের চিহ্নমাত্র নেই। সংবাদপত্রে, আমরা আগেই দেখেছি, রামধনির বয়ানের কথা আছে। পলাতক ধনঞ্জয়ের কথা আছে (“ঘটনার পরেই ওই অ্যাপার্টমেন্টের সিকিউরিটি গার্ড ধনঞ্জয় চ্যাটার্জি (২৬) উধাও হয়েছে”)। এবং, শুধু সেদিন নয়, পরের কয়েকদিনও সংবাদপত্রগুলি এই ঘটনার টানা খবর ছাপিয়ে গেছে। অর্থাৎ নির্মিত কাহিনীর পুলিশি সূত্রের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন ধরে সাংবাদিকদের মোলাকাত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই কয়েকদিনের কোনো সংবাদপত্রেই “ফ্ল্যাট থেকে মুখ বাড়ানোর” গল্পের চিহ্নমাত্র নেই। 

    এ দিয়ে অবশ্য প্রমাণ হয়না, যে গল্পটি সে রাতে নির্মিত হয়নি। তৈরি হতেই পারে, এবং কোনো কারণে সংবাদপত্র তার সন্ধান পায়নি, বা পেলেও ছাপেনি। সেক্ষেত্রে বড়জোর বলা যেতে পারে, যে, ব্যাপারটা খুব প্রত্যাশিত নয়। হয়তো এর পিছনে এমন কোনো কারণ ছিল সেটা আমরা জানিনা। কিন্তু সংবাদপত্রে ছাপা না হওয়া থেকে নিঃসংশয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছনো অসম্ভব।

    সিদ্ধান্তে পৌঁছতে গেলে এমন একটি সূত্র প্রয়োজন, যা সেই রাতে এই গল্পের উৎসের কি বক্তব্য ছিল সেটা পরিষ্কার করে জানিয়ে দেবে। সৌভাগ্যজনকভাবে এখানে কাহিনীর উৎসটি কে, সেটা আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি। অর্থাৎ প্রত্যক্ষদর্শী নিজে, যার নাম দশরথ মুর্মু। এবং সেই রাতেই ইনস্পেক্টর গুরুপদ সোমের সঙ্গে দশরথের কথা হয়। এটা হওয়াই যৌক্তিক, যে, দশরথ পুরো অনু আখ্যানটি তখনই গুরুপদকে জানান, এবং সেটাই এই গল্পের সূচনাবিন্দু। 

    এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়াই যেত, আমাদের প্রতিপাদ্যটিও দুয়ে-দুয়ে চার হয়ে মিলে যেত। কিন্তু সমস্যা হল দশরথ আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন তিনি ব্যাপারটা ভুলে গেছেন। জেরায় নির্দিষ্টভাবে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে দশরথ স্পষ্ট করেই বলেন, যে, তিনি ধনঞ্জয়ের সঙ্গে ইন্টারকমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন এবং ধনঞ্জয়কে নিচ থেকে ডেকেছিলেন, এই তথ্য তিনি পুলিশকে দিয়েছিলেন কিনা মনে করতে পারছেন না। ঘটনার অন্য প্রত্যক্ষদর্শী সিকিউরিটি এজেন্সির সুপারভাইজার প্রতাপচন্দ্র পতি। আদালতে প্রতাপও জানান, যে, ইন্টারকমে যোগাযোগ করার বিষয়টা পুলিশকে জানানো হয়েছিল কিনা তিনিও মনে করতে পারছেননা।  এই যৌথ বিস্মৃতির ফলে “মুখ বাড়ানো” অনুকাহিনীর দুই কথক প্রতাপ ও দশরথের কাছ থেকে এই আখ্যান নির্মানের সময়টি জেনে নেওয়া অসম্ভব। তাঁরা পুলিশকে কী বলেছিলেন তাঁরা মনে করতে পারেননি। 

    এই গণবিস্মৃতি বিস্ময়কর। পুলিশের কাছে দেওয়া দশরথের প্রাথমিক বয়ানটি উদ্ধার করা গেলে এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে আলোকপাত করা যেত। কিন্তু সেটি পাওয়া যায়নি (অর্থাৎ বর্তমান লেখকের কাছে নেই)। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই অনুসন্ধানটি একেবারে শূন্যে শেষ হয়না, কারণ কাহিনীতে শুধু কথক থাকেননা, অন্তত একজন শ্রোতাও থাকেন। এক্ষেত্রে শ্রোতাটি ছিলেন তদন্তকারী অফিসার গুরুপদ সোম। তিনিও আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেন। এবং আমাদের প্রতিপাদ্যের সম্পূর্ণ উল্টোদিকে গিয়ে জানান, দশরথ ইন্টারকমে যোগাযোগ করার কথাটি আদৌ গুরুপদকে বলেনই নি। নিচ থেকে ডাকার কথাটি কি বলা হয়েছিল? আদালতে গুরুপদ বলেন, যে, দশরথ তাঁকে বলেন, যে, তিনি “ডিউটির জায়গা” থেকে ধনঞ্জয়কে হাঁক পেড়েছিলেন। 

    অর্থাৎ, যাঁরা কাহিনীর কথক, তাঁরা মনে না রাখতে পারলেও, শ্রোতা ঠিকই মনে রেখেছেন কাহিনীর উৎসের কথা। এটা একটু বিস্ময়কর, কিন্তু কোনো কোনো অস্থির সময়ে তো বিস্ময়কর ঘটনাও ঘটে। পুলিশকে কিছু জানিয়ে জানানোর কথাটা দুজন মানুষ একই সঙ্গে ভুলে গেলেন, এটা খুবই বিরল সমাপতন, কিন্তু হয়তো একেবারে অসম্ভব নয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে কাহিনীর উৎস সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে, বিস্মৃতিজনিত কারণে অন্য কোনো ভুল হচ্ছে কিনা, সেটাও মিলিয়ে নেওয়া দরকার। অর্থাৎ পুলিশকে সে রাতে দেওয়া দশরথের বয়ানের সঙ্গে আদালতে দেওয়া বয়ানের কোনো পার্থক্য আছে কিনা সেটা দেখা প্রয়োজন। আদালতে যেটুকু নতুন তথ্য দেওয়া হচ্ছে (অর্থাৎ ইন্টারকমে যোগাযোগ), সেটা তো মেলানোর উপায় নেই, কারণ ওটা পুলিশকে বলাই হয়নি। কিন্তু যেটা বলা হয়েছে, অর্থাৎ নিচ থেকে হাঁক দেবার ব্যাপারটা আমরা মিলিয়ে নিতে পারি। এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শনের শ্রোতা গুরুপদ সোম কী বলেছেন, সেটা আগেই দেখেছি। গুরুপদর বয়ানানুযায়ী দশরথ তাঁকে বলেন, যে, তিনি “ডিউটির জায়গা” থেকে ধনঞ্জয়কে হাঁক পেড়েছিলেন। দশরথের বয়ানানুযায়ী জিনিসটা কেমন? দশরথ আদালতে বলেন, তিনি “ডিউটির জায়গা” নয়, “গেটের কাছ” থেকে ধনঞ্জয়ের উদ্দেশ্যে হাঁক পেড়েছিলেন। আর দশরথের সুপারভাইজার প্রতাপ আবার বলেন, ডাকা হয়েছিল “ডিউটির জায়গা” থেকেই। 

    বয়ানের এই অসঙ্গতি যৌথ বিস্মৃতির মতই বিস্ময়কর। পরবর্তীতে হাইকোর্টেও এই প্রসঙ্গটি ওঠে। হাইকোর্টের রায়ে এ সম্পর্কে বলা হয়, যে, এটা ঘটনা, দশরথ পুরো আখ্যানটি পুলিশের কাছে বলেননি। রায়ে আলাদা এবং স্পষ্ট করে বলা হয়, যে, ১) দশরথ যে ধনঞ্জয়ের সঙ্গে ইন্টারকমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলেন, এবং ২) নিচে গেটের কাছ থেকে চিৎকার করে ধনঞ্জয়কে ডেকেছিলেন, এই দুটোর কোনোটিই তিনি তদন্তকারী পুলিশকে জানাননি।

    ফলে অনুকাহিনীর সূচনাবিন্দু সম্পর্কে আমাদের যৌক্তিক প্রতিপাদ্যটি একেবারে অসঙ্গতিমুক্ত না। এ ব্যাপারে বয়ানের বিভিন্নতা এবং সমবেত বিস্মৃতিজনিত কিছু খটকা আছে। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়না, যে, অনু-আখ্যানটি সেই রাতেরই নির্মিতি। 

    ৯। 

    কিন্তু প্রশ্ন হল এই অসঙ্গতি বা বিস্ময়জনক আচরণ ঠিক কতটা গুরুত্ব দাবী করে? ইন্টারকমে যোগাযোগের ব্যাপারটা বলতে ভুলে যাওয়া নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। কোথা থেকে ডাকা হয়েছিল সে ব্যাপারেও অসঙ্গতি আছে। হতেই পারে ডাকার বিবরণ আখ্যানে পরে ঢুকেছে। এও হতে পারে, যে, ফ্ল্যাট থেকে ধনঞ্জয় মুখ বাড়িয়েছিল, এটাও কাহিনীর অংশ হিসেবে পরে যোগ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে করে মূল আখ্যানে যে অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে তা কি যৎসামান্য নয়? উল্টোদিকে এই পাদপূরণ তো গোটা আখ্যানকে আরও সম্পূর্ণতা দিয়েছে। দাঁড়িপাল্লায় বিচার করলে এই পরিপূর্ণতার তুলনায় অসঙ্গতিটুকু কি সত্যিই উপেক্ষণীয় নয়? “ডিউটির জায়গা” না “গেটের কাছ থেকে” কোথা থেকে ডাকা হয়েছিল, সেটুকুর বিবরণে যে পার্থক্য আছে, সেটা কি সত্যিই ছোটো নয়? 

    “ডিউটির জায়গা” এবং “গেটের কাছ থেকে” ডাকার তফাত ছোটো কিনা আমরা খুঁটিয়ে দেখব পরবর্তী পরিচ্ছেদে। কিন্তু  তার আগে এই অনুকাহিনীকে সামগ্রিক খুনের আখ্যানটির সঙ্গে একবার মিলিয়ে নেবার দরকার আছে। সেটা আমরা এই পরিচ্ছেদে করব। মিলিয়ে দেখব, পুরো প্রেক্ষিতটার সঙ্গে দেখলে এই অনু-আখ্যানটি  খুনের সামগ্রিক কাহিনীর সঙ্গে মিশে যায়, নাকি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যেখানে জোড়াতালির দাগগুলি দেখা যায়। 

    খুনের আদালত-স্বীকৃত আখ্যান অনুযায়ী হেতালকে খুন করা হয় নৃশংসভাবে। খুনের আগে বলপূর্বক ধর্ষণ করা হয়। এবং তারপরে অনেকগুলি আঘাত করা হয় মূলত শরীরের ঊর্ধ্বাংশে। হেতালের শরীরে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী মোট একুশটি আঘাত করা হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটি আঘাত নিজেই মৃত্যুর কারণ হতে পারত। যদিও, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী খুনটা আসলে করা হয়েছিল শ্বাসরোধ করে। এছাড়াও ঘরের আলমারি ছিল খোলা। সেখানে জিনিসপত্র হাটকানো হয়েছিল। অর্থাৎ সমগ্র প্রক্রিয়াটি ধর্ষণ, খুন এবং লুটপাটের ঘটনা। 

    এই পুরো প্রক্রিয়াটি, আদালত-স্বীকৃত আখ্যান অনুযায়ী ঘটায় ধনঞ্জয় একা। সে লিফটে করে একতলা থেকে উপরে ওঠে। দরজায় বেল বাজায়। দরজা খোলার পরে সে জামাকাপড় খুলে ধর্ষণ করে। তারপর একুশটি আঘাত করে হেতালের শরীরে। এবং সবশেষে শ্বাসরোধ করে খুন করে। তারপর জিনিসপত্র লুটপাট করার চেষ্টা করে। সবশেষে জামাকাপড় পরে বেরিয়ে যায়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় ধনঞ্জয়ের সময় লাগে কতক্ষণ? হেতালের মা ফ্ল্যাট থেকে বেরোন ৫-২০ নাগাদ। ফেরেন ৬-০৫ নাগাদ। তিনি যাতায়াতের পথে ধনঞ্জয়কে দেখেননি। ফলে সামগ্রিকভাবে ৪০ মিনিটের বেশি সময় পাওয়া যাচ্ছেনা। ধনঞ্জয় অভ্যস্ত ধর্ষক বা পেশাদার খুনি নয়। তার পক্ষে ঠান্ডা মাথায় মাত্র ৪০ মিনিটে পেশাদারি দক্ষতায় এতগুলো কাজ শেষ করে শান্তভাবে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব? হাইকোর্টের রায়ে কোনো অজ্ঞাত কারণে সময়টাকে অবশ্য কিঞ্চিৎ বাড়ানো হয়েছে। বলা হয়েছে ঘটনাটি ঘটে ৫-১৫ থেকে ৬-০৫ এর মধ্যে (“It is clear, therefore, that the ghastly crime was committed during the temporary absence of P.W.3 from about 5.15 to 6.05 pm.”)। সময়সীমা বাড়িয়ে ৫০ মিনিট করলে ব্যাপারটা তুলনায় বিশ্বাসযোগ্য শোনায়, যদিও ওই রায়েরই অন্যত্র যশোমতীর ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর সময় বলা হয়েছে ৫-২০ নাগাদ(“On the date of incident also i.e. 5.3.40 at about 5.20 p.m. she left for the aforsaid temple”)। 

    এই সামগ্রিক আখ্যানে নতুন “মুখ বাড়ানো” অনুগল্পটি যোগ হবার ফলশ্রুতি কি? একটিই, যে, নতুন অনুগল্পটি “আদালত-স্বীকৃত সময়সীমা”য় বিপর্যয় ঘটিয়ে দেয়। “আদালত-স্বীকৃত আখ্যান” অনুযায়ী ধনঞ্জয় খুন করতে যাবার আগে দশরথকে জানিয়ে যায়, যে, সে হেতালদের ফ্ল্যাটে যাচ্ছে। ফ্ল্যাটে যাবার আগে দশরথের সঙ্গে ধনঞ্জয়ের এই মোলাকাত কখন হয়? আদালতে দাঁড়িয়ে দশরথ বলেন, যে, সময়টা ৫-২৫ নাগাদ। নতুন অনুপ্রবিষ্ট আখ্যান অনুযায়ী এরপর সিকিউরিটি সুপারভাইজার প্রতাপচন্দ্র পতি ফ্ল্যাটবাড়িতে আসেন। দশরথ মুর্মুর সঙ্গে সামান্য দু-একটি কথার পরে ইন্টারকমে হেতালের ফ্ল্যাটে ফোন করা হয়। ফোনে না পেয়ে চিৎকার করে ডাকলে ধনঞ্জয় হেতালের ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে ঝুঁকে পড়ে সাড়া দেয়। প্রতাপের ফ্ল্যাটবাড়িতে আসার সময়টা কখন? আদালতে দাঁড়িয়ে প্রতাপ এবং দশরথ দুজনেই বলেন, সেটা ৫-৪৫ নাগাদ। 

    এখানে মনে রাখা দরকার, যে, হেতালকে খুন করা হয়েছিল শ্বাসরোধ করে। সেটা আধাখ্যাঁচড়া ফেলে রেখে ধনঞ্জয়ের পক্ষে বারান্দায় এসে সাড়া দেওয়া সম্ভব নয়। অতএব নতুন অনুপ্রবিষ্ট অনু-আখ্যান অনুযায়ী ধনঞ্জয় খুন সমাপ্ত করে জামাকাপড় পরে তারপর বারান্দায় আসে (আদালত-স্বীকৃত আখ্যান অনুযায়ী খুনটা ধনঞ্জয় করেছিল জামাকাপড় খোলা অবস্থায়, যে কারণে তার পোশাকে রক্তের দাগ ছিলনা)। এর সময়টা কটায়? প্রতাপ ফ্ল্যাটবাড়িতে আসার পরপরই, অর্থাৎ ৫-৪৫ নাগাদ। 

    অতএব নতুন “মুখ বাড়ানো” অনু-আখ্যানটি কাহিনীতে প্রবেশ করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে খুনের সময়সীমায় চূড়ান্ত অসঙ্গতি দেখা যায়। যশোমতী কখন বেরিয়েছেন আর কখন ঢুকেছেন, সময়সীমার ক্ষেত্রে সেটা তখন একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়। নতুন আখ্যানের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে হলে খুনের সময়সীমাকে মেলাতে হয় দশরথের সঙ্গে ধনঞ্জয়ের দেখা হবার টাইমটেবল অনুযায়ী। এবং সেটা করতে গেলে, দেখা যায়, যে কাজকর্মগুলির জন্য ৪০ মিনিট সময় পর্যাপ্ত মনে হচ্ছিল না, সেটাই কমে দাঁড়ায় ২০ বা বড়জোর ২৫ মিনিটে। একজন অনভ্যস্ত খুনি এইটুকু সময়ের মধ্যেই লিফটে চড়ে এসে বেল বাজিয়ে দরজা খুলিয়ে তারপর একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে, শরীরে অজস্র আঘাত করে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। সবশেষে জামাকাপড় পরে নিয়ে বারান্দায় এসে মুখ বাড়ায় ও স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেয়। এই সময়সীমা অবাস্তব মনে হলে “মুখ বাড়ানো” আখ্যানটিকে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে বাদ দিতে হয়। আর “মুখ বাড়ানো” আখ্যানটিকে গ্রহণ করলে আদালত-স্বীকৃত আখ্যানের ৪০-৫০ মিনিট সময়সীমাকে অবাস্তব ও অসঙ্গতিপূর্ণ বলে বাদ দিতে হয়।

    এর কোনটা করা হয়েছিল আদালতে? কোনোটাই না। কারণ উচ্চ আদালতে এই পয়েন্টটা ওঠেইনি।

    ১০।

    কিন্তু এহ বাহ্য। শুধু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়, কোথা থেকে হাঁক দিয়েছিলেন দশরথ, সে বিষয়ে প্রাথমিক অনুল্লেখ বা অসঙ্গতিও নিজেই গুরুত্বপূর্ণ। নিশিডাকের মতো যে চিৎকারে সাড়া দিয়েছিল ধনঞ্জয়, সেই ডাকটি, দেওয়া হয়েছিল কোথা থেকে? আমরা আগেই দেখেছি, পুলিশ যা জানত, তা হল “ডিউটির জায়গা” থেকে, দশরথই নাকি তেমন জানিয়েছিলেন। দশরথের সুপারভাইজার প্রতাপও আদালতে জানান, ডাকা হয়েছিল “ডিউটি জায়গা” থেকেই। আর আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে দশরথ জানান, তিনি ডেকেছিলেন গেটের কাছ থেকে। আর ধনঞ্জয় জবাব দিয়েছিল কিভাবে? দশরথ এবং প্রতাপের সাক্ষ্যে খুব স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে, যে, ধনঞ্জয় হেতালদের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে ঝুঁকে পড়ে(leaning out) উত্তর দেয়। সে ঝুঁকে পড়ে বলে নিচে আসছে, এবং একটু পরে নেমেও আসে। 

    এই ডাকাডাকির জায়গা নিয়ে অসঙ্গতি কেন? তার গুরুত্বই বা কতটা? আর এই “ডিউটির জায়গা” বনাম “গেটের কাছ” এই বৈপরীত্যেরই বা মূল্য কতটা? বিষয়টা আমরা ছেড়ে এসেছিলাম পূর্ববর্তী পরিচ্ছেদে, সেই দিকে এবার একটু নজর দেওয়া যাক। 

    পুরো চিত্রটা একবার ভেবে নেওয়া যাক। নিচ থেকে ডাকা এবং ঝুঁকে পড়ে উত্তর দেওয়া নিজেই একটি ছবি তৈরি করে। একটি ঝুলবারান্দা, তার ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে একজন নিরাপত্তারক্ষী। সে নিচ থেকে ডাকছে, এবং উত্তরটা ঝুঁকে পড়ে দেওয়া হচ্ছে, নইলে যে উত্তর দিচ্ছে নিচ থেকে তার মুখ দেখার কোনো উপায় নেই। বস্তুত আন্দাজটা ঠিকই। কারণ, ওই ফ্ল্যাটবাড়ির বারান্দাগুলি, বাড়িটির লে-আউট দেখলে বোঝা যায়, ফ্ল্যাটবাড়িতে যেমন হয় ঠিক তেমনই, অর্থাৎ সমান মাপের বারান্দাগুলি একটা ঠিক আরেকটার মাথায়-মাথায়। ফলে বারান্দার নিচ থেকে ডাকলে ঝুঁকে পড়ে উত্তর দেওয়া ছাড়া উপায় নেই, যদি অবশ্য উত্তরদাতার মুখ দেখতে হয়। অবশ্য মুখ দেখলেও ঠিক কোন তলা থেকে উত্তর দেওয়া হচ্ছে খেয়াল করে না দেখলে বোঝা কঠিন, কারণ সারিসারি বারান্দা উঠে গেছে উপর পর্যন্ত, তার মাঝখানে ঠিক কোন তলা থেকে একটি মুখ বেরিয়ে এসেছে বাইরে, সেটা আলাদা করে মনোযোগ না দিলে জানা যাবেনা। এই ক্ষেত্রে এতটাই মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল কি? এই “মুখ বাড়ানো”র অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী সুপারভাইজার প্রতাপকে নিম্ন আদালতে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি খুব স্পষ্ট করে বলেন, যে, একথা ঠিক যে, একই সারিতে বারান্দা গুলি পরপর উপরে উঠে গেছে। কিন্তু উপরের কোনো ব্যালকনি থেকে কেউ সাড়া দিলে, সেটা কোন ব্যালকনি নিচ থেকে বলা অসম্ভব, একথা একেবারেই সত্য নয়।

    অবশ্য প্রতাপ এবং দশরথ যে ব্যালকনির ঠিক নিচ থেকে ডাকছিলেন তা নাও হতে পারে। ব্যালকনির ঠিক নিচ থেকে ডাকলে যেটা বোঝা কঠিন, একটু সরে গিয়ে দূর থেকে ডাকলে সেটা আন্দাজ করা সহজতর হয়ে আসে। ওঁরা কি তাহলে সেটাই করেছিলেন? এটা যৌক্তিক আন্দাজ, কিন্তু আন্দাজটা খাঁজে খাঁজে মিলে যায় দশরথ এবং প্রতাপের বয়ানের সঙ্গে ফ্ল্যাটের লে-আউট মিলিয়ে দেখলে। দশরথ পুলিশের কাছে এবং প্রতাপ আদালতে বলেছেন, যে, ব্যালকনির ঠিক নিচ থেকে নয়, ধনঞ্জয়কে ডাকা হয়েছিল, “ডিউটির জায়গা” থেকে। লে-আউটে দেখা যায় ডিউটির জায়গাটা একটু পাশের দিকেই বটে। কিন্তু মজা হচ্ছে, আরও একটু খুঁটিয়ে দেখলে এও দেখা যায়, পাশের দিকে হলেও, ওটা আসলে বারান্দা সারির সামনের দিকে নয়, বিল্ডিং এর ভিতর দিকে, সিঁড়ির সারির পাশে। অর্থাৎ সেখান থেকে চারতলার বরান্দা দেখা সহজতর তো নয়ই, বরং অনেক কঠিন, যদি না অসম্ভব হয়। 

     

    এখানেই অসঙ্গতিটা প্রকটতর হয়ে ওঠে। “ডিউটির জায়গা” বনাম “গেটের কাছ” বৈপরীত্যটি আর উপেক্ষণীয় থাকেনা, বিশেষ করে প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যেই যখন এ নিয়ে মতভেদ থাকে। প্রসঙ্গত তিনজনের মধ্যে দুজন সাক্ষী বলছেন, ডাক দেওয়া হয়েছিল “ডিউটির জায়গা” থেকে, যেখান থেকে ডাকা এবং সাড়া পাওয়া অসম্ভব। 

    অবশ্য এও হতে পারে, “ডিউটির জায়গা” বলতে ঠিক ডিউটির জায়গাই বোঝানো হয়নি। কারণ স্বাভাবিকবুদ্ধিসম্পন্ন কোনো মানুষই তো বিল্ডিং এর ভিতর দিক থেকে বাইরের চারতলার বারান্দায় কাউকে ডাকার চেষ্টা সাধারণত করেনা। হয়তো ডিউটির জায়গা থেকে একটু সরে ব্যালকনির নিচে বা গেটের কাছে এসে ডাকা হয়েছিল। দশরথই আদালতে সেটা জানিয়েছেন। খুব হাল্কাভাবে হয়তো সেটাকেই প্রাথমিকভাবে “ডিউটির জায়গা” বলা হয়েছিল। সেটা হলে অবশ্য প্রতাপের সাক্ষ্যে “ব্যালকনির নিচ থেকে ডেকেছিলাম” বলাই স্বাভাবিক, “ডিউটির জায়গা” বলা নয়, বিশেষ করে যেখানে চারতলার বারান্দা থেকেই কেউ সাড়া দিয়েছিল সেটা বোঝা সম্ভব কিনা সে নিয়ে মতামত দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই প্রতাপের বয়ানের এই সমস্যাটুকুকে যদি উপেক্ষাও করা হয়, উপেক্ষা করা হয় দশরথের বয়ান পরিবর্তনকে, যদি ধরেই নেওয়া হয়, “ডিউটির জায়গা” থেকে সরে ব্যালকনির নিচ থেকে ডাকা হয়েছে, তাহলে ব্যাপারটা একেবারে অসম্ভব নয়। যদি উপরের বারান্দা থেকে অনেকটা (কতটা সেটা মাপজোক না করে বলা অসম্ভব) ঝুঁকে পড়ে কেউ উত্তর দেয়, তাহলে বারান্দার নিচ থেকে তাকে দেখা হয়তো একেবারে অসম্ভব নয়। যদিও কোন বারান্দা সেটা বোঝা একটু কঠিন হয়ে দাঁড়ায় ঠিকই। 

    এই “ঝুঁকে পড়ে” বারান্দা থেকে উত্তর দেওয়া দশরথ এবং প্রতাপের বয়ানের সঙ্গেও মেলে। দুজনেই খুব পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, যে ধনঞ্জয় বারান্দা থেকে ঝুঁকে পড়ে উত্তর দিয়েছিল। তাহলে কি বাকি অসঙ্গতিগুলো উপেক্ষা করে এইটুকু ধরে নেওয়া যায়, যে, কোনো অজ্ঞাত কারণে প্রতাপ এবং দশরথ যেমন নানা জিনিস ভুলে গেছেন, তেমনই কোনো অজ্ঞাত কারণে “ব্যালকনির নিচ” বা “গেটের কাছ”কে ভুল করে “ডিউটির জায়গা” বলে গেছেন নানা সময়ে? এ টুকু অবশ্যই আমাদের যৌক্তিক অনুমানের সঙ্গে মেলে।

    সমস্যা হল, শুধু এইটুকুতেও কোনো অসঙ্গতি তৈরি হল কিনা, সেটা আমাদের পক্ষে বলে দেওয়া সম্ভব না। তার জন্য কিঞ্চিত প্রত্যক্ষদর্শনের সাহায্য প্রয়োজন। এই লেখা মূলত আদালত এবং তদন্তের কার্যবিবরণীর উপর দাঁড়িয়ে নির্মিত। সেখানে এই প্রসঙ্গ সেভাবে ওঠেইনি। ফলে সে সময়ের কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য দিয়ে এই যৌক্তিক অনুমানের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো নিষ্পত্তিমূলক তথ্য পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে পরবর্তীকালের অন্য একটি প্রত্যক্ষদর্শনের সাহায্য আমরা পেয়ে যাই এক্ষেত্রে। ধনঞ্জয়ের ফাঁসির বিষয়টি নিয়ে বিগত দশ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন কলকাতার দুই অধ্যাপক প্রবাল চৌধুরী ও দেবাশিস সেনগুপ্ত। ঘটনাস্থল ঘুরে এসে সংক্ষিপ্ত যে প্রতিবেদন তাঁরা পেশ করেছেন, তাতে বাকি ঘটনার সঙ্গে ব্যালকনির আখ্যানেরও একটি অংশ আছে, এবং সেখানে তাঁরা নিজেদের বর্তমান প্রত্যক্ষদর্শনের কথা জানিয়েছেন। তাঁদের বর্ণনায় তাঁরা জানিয়েছেন “সাক্ষীরা যেখান থেকে তাকে দেখেছে বলেছে সেখান থেকে এই ঝুলবারান্দা দেখাই যায়না”। এটা অতি অবশ্যই আমাদের যৌক্তিক অনুমানকে সমর্থন করে, যে, দশরথ ও প্রতাপের “ডিউটির জায়গা” থেকে ব্যালকনি দেখা যায়না। অতএব তাঁদের বয়ানে অসঙ্গতি আছে। এবং সেটাকে উপেক্ষা করলে হাতে আর একটাই বিকল্প থাকে, যে, তাঁরা ডিউটির জায়গা নয়, একটু এগিয়ে ব্যালকনির নিচ থেকে ধনঞ্জয়কে ডেকেছিলেন, এবং ধনঞ্জয় তার উত্তর দেয় “ঝুঁকে পড়ে”। এই “ঝুঁকে পড়া” তাঁদের বয়ানের সঙ্গেও মেলে। 

    ঘটনাচক্রে প্রবাল ও দেবাশিষের অনুসন্ধানে বারান্দারও বর্ণনা আছে। তাঁরা বলছেন “ধনঞ্জয় যে বেসরকারি সংস্থার সিকিউরিটি গার্ড ছিল, তারই আর এক সিকিউরিটি গার্ড এবং এক সুপারভাইজার দাবী করে যে তারা ধনঞ্জয়কে ওই সময় সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দেখেছিল এবং তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সে হেতালদের ফ্ল্যাটের ঝুলবারান্দা দিয়ে ঝুঁকে কথাবার্তাও বলেছিল। আমরা দেখেছি যে সেই ঝুলবারান্দা গ্রিল দিয়ে মোড়া; সেখান থেকে ঝুঁকে সাড়া দেওয়া সম্ভব নয়।”

    বলাবাহুল্য, আদালতে এই প্রসঙ্গটি ওঠেনি। ডিউটির জায়গা থেকে কী করে বারান্দা দেখা গেল, গ্রিল দেওয়া বারান্দা থেকে কীভাবে ঝুঁকে পড়া সম্ভব, এই প্রশ্নগুলি কেউ তোলেনইনি।

    ১১।

    এর পরে অনুগল্প সম্পর্কিত আমাদের যৌক্তিক প্রতিপাদ্যটি ভেঙে পড়ে। অর্থাৎ অনুগল্পের উৎস খুনের রাত হওয়া খুবই মুশকিল, যৌক্তিকভাবেই। কারণ, এক, ইন্টারকমে ডাকার ব্যাপারটা সে রাতে পুলিশ জানতই না। দুই, পুলিশ জানত ধনঞ্জয়কে একবার হাঁক পাড়া হয়েছিল, কিন্তু সেটা এমন জায়গা থেকে (অর্থাৎ ডিউটির জায়গা), যেখান থেকে ডাকা বা সাড়া পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ঘটনাস্থলে উপস্থিত তদন্তকারী কোনো ব্যক্তির পক্ষে এই সম্ভাব্যতার অভাব চোখে পড়েনি, এটা হওয়াও কঠিন। বস্তুত কেউ যদি শুধু আদালতের কার্যবিবরণী খুঁটিয়ে পড়েন, তাহলে কীসের ভিত্তিতে সেদিন রাতেই সম্ভাব্য অপরাধী হিসেবে ধনঞ্জয় চিহ্নিত হয়ে গেল, সেটা আন্দাজ করাই কঠিন হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শন তো হাতে গোনা। শুরু হচ্ছে একজন “বিরূপ” লিফটম্যানকে দিয়ে, যিনি আদালতের বয়ানানুযায়ী ধনঞ্জয়কে হেতালের ফ্ল্যাটে ঢুকতে “দেখেননি”। শেষ হচ্ছে দুজন নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়ে, যাঁরা ফ্ল্যাটে ফোন করেননি (অর্থাৎ করেছিলেন বলেননি)। এমন জায়গা থেকে হাঁক পেড়েছিলেন, যেখান থেকে ডাকা অসম্ভব (পুলিশ সে রাতে “ডিউটির জায়গা”র কথাই জানত)। আর ধনঞ্জয় এমন বারান্দা থেকে ঝুঁকে পড়ে উত্তর দিয়েছিল যা গ্রিলে মোড়া (প্রবাল ও দেবাশিসের বক্তব্যানুযায়ী)। 

    এই সম্ভাব্য চরম অসঙ্গতিগুলির কয়েকটি আদালতে উপস্থাপিত হয়নি। কয়েকটি হয়। রামধনির বয়ানের অসঙ্গতির মতই দশরথ ও প্রতাপের বয়ানের পরিবর্তন ও অসঙ্গতি হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। আদালত তাঁদের প্রাথমিক বয়ানে এই অনুগল্পটির আংশিক অনুপস্থিতিকে “অনুল্লেখ” বা “অমিশন” আখ্যা দেয়। এবং আদালতের মতে, এই অনুল্লেখ এক্ষেত্রে বিবেচ্য নয় এবং নিরাপদে উপেক্ষা করা যায় (“These ommissions are not in material particulars and may be safely ignored”)। 

    আদালত এই ব্যাপারে খুব স্পষ্ট করেই জানায়, যে, একবার “ফোন করেছি” বলা এবং অন্যবার না বলার মধ্যে বিশেষ স্ববিরোধ নেই। কোথা থেকে হাঁক দিয়েছিলেন দশরথ, সে বিষয়ে প্রাথমিক অনুল্লেখকেও কোর্ট গুরুত্ব দেয়না। দশরথের বয়ানকে একেবারে আক্ষরিক অর্থে নেবার কোনো প্রয়োজন নেই, এবং ছোটো ডিটেলে অসঙ্গতি থাকলে তা এড়িয়ে যাওয়াই যেতে পারে, এই হল এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের বক্তব্য (“The statement of P.W.6 need not be taken too literally. At any rate, the discripancy in a minor detail may be overlooked.”)। 

    এখানে কর্মবাচ্যের প্রয়োগটি লক্ষ্যণীয়। কিসের সঙ্গে অসঙ্গতি উপেক্ষণীয়, দশরথের নিজের বক্তব্যের সঙ্গে অসঙ্গতি, নাকি সামগ্রিক কাহিনীসূত্রের সঙ্গে দশরথের বয়ানের অসঙ্গতি? সেটা বাচ্যের প্রয়োগে ঠিক স্পষ্ট নয়। কিন্তু যেটা স্পষ্ট, সেটা হল রামধনির সাক্ষ্যকে যেমন সম্পাদনা করা হয়েছিল ঠিক একই ভাবে দশরথের বয়ানের ছোটো অসঙ্গতিগুলিকে এড়িয়ে গেলে, তবেই তা একটি পূর্বনির্ধারিত আখ্যানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে মিলে যায়। “সরকারি আখ্যান” নামক হাইপোথিসিসটির সঙ্গে অবিকৃত আকারে রামধনি বা দশরথ কারো প্রত্যক্ষদর্শনই খুঁতহীনভাবে মিলে মিশে যায়না। “সরকারি আখ্যান” এর “আদালত-স্বীকৃত আখ্যান” হয়ে ওঠার পদ্ধতিতে এক্ষেত্রে অতি অবশ্যই মিশে আছে কিছু কাটাকাটি, গ্রহণ-বর্জন এবং সম্পাদনার কাজ, যা অবিকৃত সাক্ষ্যগুলিকে ছেঁটে-কেটে মূল আখ্যানের উপযুক্ত করে তুলবে। অর্থাৎ, কেমন যেন মনে হয়, আখ্যানটি পূর্বনির্ধারিত, বিচারের সমগ্র প্রক্রিয়াটিই হাইপোথিসিস পরীক্ষার পদ্ধতির বদলে পূর্বনিরাধারিত আখ্যানের সঙ্গে মিলিয়ে দেবার জন্য পারিপার্শ্বিকতাকে সম্পাদনার কাজ। 

    ১২।

    এই পর্ব শেষ করার আগে আরেকটি প্রসঙ্গ উত্থাপন করা দরকার। এই “মুখ বাড়ানো” অনুকাহিনীটির মূল স্তম্ভটিকে নিয়েই আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম। কিন্তু এর মানে এই নয়, এই কাহিনীর বাকি শৃঙ্খলগুলি সন্দেহের ঊর্ধ্বে। যেমন, আনন্দ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ধনঞ্জয়ের বদলির বিষয়টি নিজেই ধোঁয়াটে। আগেই বলা হয়েছে, আদালত-স্বীকৃত আখ্যান অনুযায়ী, ধনঞ্জয়কে আনন্দ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বদলি করে দেওয়া হয় পরশ অ্যাপর্টমেন্টে এবং পরশ অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তারক্ষী বিজয় থাপাকে আনা হয় ধনঞ্জয়ের জায়গায়। যদিও ধনঞ্জয় বদলির দিন পরশ অ্যাপার্টমেন্টে আদৌ যায়নি। এবং, শুধু যায়নি তাইই নয়, রামধনির সাক্ষ্য অনুযায়ী সে আনন্দ অ্যাপার্টমেন্টের একটি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রামধনির সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। যে ছেলেটি কেবলমাত্র খুনের উদ্দেশ্যে ফ্ল্যাটবাড়িতে থেকে গিয়েছিল, সে হঠাৎ ওই ফ্ল্যাটের খুঁটিনাটি নিয়ে ঝগড়া করবে কেন? উত্তর জানা যায়নি। এবং আরও মজা হচ্ছে, এই নির্দেশভঙ্গের দায় কেবলমাত্র ধনঞ্জয়ের একার না, ধনঞ্জয় শুধু ডিউটি করতে যায়নি তাই নয়, ধনঞ্জয়ের বদলি বিজয় থাপাও আনন্দ অ্যাপার্টমেন্টে ডিউটি করতে আসেনি। এই যুগপৎ অনুপস্থিতি একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতির দিকে আঙুল তোলে, যে, ধনঞ্জয় এবং বিজয় থাপা, কারো কাছেই বদলি সংক্রান্ত কোনো খবর ছিলনা। এই দুজনের একজন, ধনঞ্জয় আদালতে দাঁড়িয়ে বলে, বদলির কোনো খবরই সে পায়নি। অন্যজন, অর্থাৎ বিজয় থাপাকে আদালতে ডাকাই হয়নি। বস্তুত  গোটা মামলায় সরকার পক্ষ ২৯ জন সাক্ষীকে হাজির করলেও আসামী পক্ষে একজনও সাক্ষী ছিলনা। এটা নিঃসন্দেহে এই কেসের আরও একটি দিক, যেটা দেখিয়ে দেয় নিম্ন আদালতে ধনঞ্জয়ের পক্ষ সমর্থন অত্যন্ত দুর্বল ছিল। বদলির বিষয়টা নিয়ে নিম্ন আদালতে কোনো প্রশ্নই তোলা হয়নি। এমনকি ধনঞ্জয়ের উকিল জেরার সময় হেতালের বাবা নগরদাসকে বলেন, যে, ধনঞ্জয়ের সঙ্গে বদলির ব্যাপারে নগরদাসের তর্কাতর্কি হয়, যে কারণে নগরদাস ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনছেন। এটা পরোক্ষে বদলির প্রসঙ্গটি মেনে নেওয়াই। পরে উচ্চ আদালতে বিজয় থাপার প্রসঙ্গটি ওঠে। এবং এই পরোক্ষে মেনে নেবার পয়েন্টটি তুলে আদালত বিষয়টি খারিজ করে। “Non-examination of Bijoy Thapa is of little consequece in view of the clear proof of service of the transfer order of the accused”. 

    বিষয়টা একটু অদ্ভুতই। বস্তুত ধনঞ্জয়ের উকিলই যখন ধনঞ্জয়ের বয়ানের উল্টো কথা বলেন, তখন মনে হয়, এ যেন শুধু নিয়মরক্ষার খেলা। আখ্যানটি পূর্বনির্ধারিতই আছে। যারা এই আখ্যানের বিরোধিতা করছেন, সে শুধু বিরোধিতা করার জন্য। আসলে তাঁরাও অন্য কোনো আখ্যানে বিশ্বাস করেননা। এবং বিরোধিতাটাও শুধু নিয়মরক্ষার্থে এবং সেটাও পূর্বনির্ধারিত এই আখ্যানেরই অংশ। এই সেই আখ্যান যেখানে উকিল ধনঞ্জয়ের পক্ষের সমর্থন করতে গিয়ে এমন কথা বলবেন, যা, ধনঞ্জয়ের বয়ানকেই মিথ্যে প্রমাণ করে সরকারি আখ্যানের ভাষ্যকে জোরদার করবে। দুজন প্রধান প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের অসঙ্গতিগুলিকে উপেক্ষা কিংবা সম্পাদনা করে এমন মাপে নিয়ে আসা হবে, যাতে তারা খাপে খাপে মিলে যায় আদালত-স্বীকৃত আখ্যানের সঙ্গে। যেন জিগস পাজল মেলাতে বসা হয়েছে হাতে একটি র‌্যাঁদা নিয়ে। এখানে সমাধানটি পূর্বনির্ধারিত। যদি কোনো টুকরো না মেলে, তাকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে, কিংবা ছেঁটে করে নেওয়া হবে মাপমতো। বিরোধিতাটাও হতে হবে, বিচারপ্রক্রিয়ার স্বার্থে। কিন্তু সেটাও মাপমতো, যাতে সেটা মূল আখ্যানের পক্ষে যায়, বা সরাসরি পক্ষে না গেলেও মূল আখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করার মতো বিপজ্জনক না হয়। বিপজ্জনক স্ববিরোধিতাগুলি কেউ কেউ গুরুত্বই পাবেনা আদালত চত্বরে।

    ফলে মূল আখ্যানের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। যেমন অবশ্যম্ভাবী ধনঞ্জয়ের ফাঁসি। 


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৬ আগস্ট ২০১৫ | ৪৬২০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • a | 186.126.237.214 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০২:৫২86628
  • স্কেপগোট বানানোর জন্য পারেখরা কতো টাকার বখরা দিয়েছিল সেটাও দেখা উচিত। তখন তো বাংলা লাল।
  • Ipocrita compagno | 195.26.182.40 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৩:০৭86629
  • কী প্রেডিকশন বাপরে। ২৪ ঘন্টাও লাগলো না।
  • কল্লোল | 125.242.182.247 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৩:০৮86649
  • এই জামাকাপড় খোলাটা চূড়ান্ত।
    একটা সিকিওরিটি গার্ড। জামা খুললো, বেল্ট খুললো, প্যান্ট খুললো, জাঙ্গিয়া খুললো (গেন্জি বাদ দিলাম)। প্যান্ট খুলতে গেলে জুতো-ও খুলতে হয়। এতে অন্ততঃ মিনিট তিনেক লাগে। হেতাল ততক্ষন কি করছিলো?
  • কল্লোল | 125.185.158.158 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৭86630
  • এই টইটকে একটু লাল-নীলের বাইরে রাখলে ভালো হয়।
  • a | 186.126.237.214 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৪:১৯86631
  • লাল-নীল কেন? এটা পরিষ্কার যে স্কেপগোট বানানো হয়েছিল আর প্রশাসন তৎপরতার সাথে স্ক্পেগোট বানানোর কাজে নেবেছিলো। এটাও জানা যে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া না হলে এভাবে নাবে না, যা পরে টোডির কেসে দেখা যাবে। সেই নির্দেশ দেওয়ানোর জন্য টাকা হস্তান্তর হয়েছিল দেখা দরকার।
  • কল্লোল | 125.185.158.158 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৩২86632
  • প্রশাসন দায়ী হলে দায় সরকারের উপর আসবেই। তাতে আলাদা করে লাল-নীল দেখার দরকার নেই। তাই।
  • a | 186.126.237.217 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৪৩86633
  • তখন সরকার লাল ছিল তাই লালের কথা উঠেছে। নীল থাকলে নীলের কথা উঠতো। টাকা না ছড়ালে এভাবে স্কেপগোট বানানো হয় না। তাছাড়া পারেখ আর টোডি দুটোতেই আরেকটা কমন ট্রেন্ড নান্দনিক ভদ্রলোকের উপস্থিতি।
  • pi | 127.194.8.133 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৪৯86634
  • জাস্ট একটা কথা এখন বলে যাই। বাকি লেখা শেষ হবার পরে। ওঁদের লেখা পড়ে বা ওঁদের সাথে কথা বলে এটা কখনো মনে হয়নি, ওঁরা হেতাল পরিবার-পুলিশ-প্রশাসন-জুডিশিয়ারি সন মিলিয়ে একটা গ্র্যাণ্ড কন্সপিরেসির দিকে আঙুল তুলছেন বা ইঙ্গিতও করছেন। ধনঞ্জয় নির্দোষ জানা সত্ত্বেও পুলিশ-বিচার ব্যবস্থা তাকে দোষী বানালো, এমন বক্তব্যও নেই বলেই মনে হয়েছে। পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা ধনঞ্জয়কে দোষী ধরেই নিয়েছিল ও সেটা প্রমাণের দিকে এগিয়েছে, তার জন্য যা সাজানোর, সাজিয়েছে। বরং এটাকে ওঁরা এই সিস্টেম, বিচারব্যবস্থার একটা ফ্ল হিসেবে দেখাচ্ছেন, যেখানে এগুলো হয়েই থাকে, হতেই পারে। নানাকিছু মিলে জুলে ধনঞ্জয়ের কেসের মত কোন কেসে এক্সট্রিমে চলে যেতে পারে।
  • a | 186.126.237.214 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৫৮86635
  • নানাকিছুর মধ্যে টাকা থাকার সম্ভাবনা খুব বেশী। পারেখ আর টোডি দুটো ক্ষেত্রেই ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডের মিল লক্ষণীয়। আর দুটো ক্ষেত্রেই ফ্যামিলিকে আড়াল করতে প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষণীয়। ধনঞ্জয় নির্দোষ জানা সত্ত্বেও পুলিশ-বিচার ব্যবস্থা তাকে দোষী বানালো কেন, অন্য অনেক কেসে এরকম হয়্না কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে টাকা থাকার সম্ভাবনা খুব বেশী।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৫:০০86636
  • আসলে দুটো ইস্যু আছে, যা গুলিয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
    এক হল, বিচারব্যবস্থার ফ্ল।
    আর একটা হল, মৃত্যুদন্ড।

    বিচারব্যব্স্থা ফ্ললেস হলেও মৃত্যুদন্ড ভার্সেস যাবজ্জীবন - একটা বিতর্ক।

    কিন্তু, এখানে কথা হল, তদন্তে ফ্ল থাকলে সেটা কোনোরকমে চাপাচুপি দিয়ে কেস ক্লোজ করার জন্য মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলে সেটা আরো সাংঘাতিক।
  • he he party | 104.0.230.198 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৫:০৮86650
  • wait korchilo raped aar murdered hobar jonyo, soja proshner soja uttor bujhte etokhon lage? court sei kobe bujhe giyechilo
  • a | 186.126.237.214 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৫:০৮86637
  • তদন্তে ফ্ল থাকলে সেটা কোনোরকমে চাপাচুপি দিয়ে কেস ক্লোজ করার জন্য মৃত্যুদন্ড দেওয়া - ভাইটাল পয়েন্ট। কারা চাপাচাপি করেছিল? কেন করেছিল? এই প্রশ্নগুলো এই কেসে সমান গুরুত্বপূর্ণ কেননা একদিকে যেমন প্রশাসন একটা ফ্যামিলিকে আড়াল করার জন্য স্কেপগোট বানাচ্ছিল আরেকদিকে সেটা করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল। ওপর থেকে চাপ দেওয়া না হলে তো প্রশাসন এভাবে নড়েনা। কিসের বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছিল?
  • a x | 138.249.1.198 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৫:১৬86651
  • সত্যি বলতে কি এখানের কাটাছেঁড়া গুলো কিছু কম দুঃখজনক লাগছেনা। কল্লোলদাও, মন্তব্যটা অন্যভাবে ফ্রেম করতে পারতেন। মেয়েটি খুন হয়েছে। হয়ত ধনঞ্জয় খুন করেনি। কিন্তু কেউ করেছে। হয়ত একজন মা হঠাৎ একদিন বাড়ি ফিরে যা অকল্পনীয়, তার সাক্ষী হয়েছেন। হয়ত।
    আরুশির কেসও সকলেরই মনে পড়ে।
  • sumeet | 96.98.116.122 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৫০86652
  • হেতাল ততক্ষন কি করছিলো?
    এ প্রশ্ন উকিলরা প্রফেসনাল কারণে করে, ইনি তো দেখি;
    এতদিন এনাকে উন্মাদ জানতাম, দেখছি শয়তান ও বটে।
  • রৌহিন | 113.42.125.92 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৬:৩৫86653
  • "হেতাল কি করছিল" প্রশ্নটা তো মোস্ট লজিকাল? উত্তরটা দেওয়া হয়নি কারণ লেখাটা শেষ হয়নি এবং কমক্লুসনে আসার সময়ও হয়নি কিন্তু লজিকাল উত্তর তো এটাই যে হেতালের কিছু করার প্রশ্নই ওঠে না কারণ ঘটনাটা আদৌ এভাবে ঘটেইনি। এটা একটা আষাঢ়ে গপ্প যা আদালত বিশ্বাস করেছে (মতামত প্রকাশ করছি না - বিশ্লেষণ করছি - নইলে বিশ্বাস করতে চেয়েছেটাও যোগ করতাম)। "হয়ত একজন মা হঠাৎ একদিন বাড়ি ফিরে যা অকল্পনীয়, তার সাক্ষী হয়েছেন। হয়ত।" - বা হয়তো না। রামধনি লিফটে ওঠার সময়ে যদি তাকে ধনঞ্জয়ের তাদের ফ্ল্যাটে যাবার কথা না জানিয়ে থাকে (যদি) তাহলে তিনি তড়ঘড়ি দরজা ভাঙিয়েছিলেন কেন জানতে হবে। মেয়ে মারা গেছে জানতে পারলেন সাড়ে ছ'টার মধ্যে, তারপরেও দাদা ফিরলেন সাড়ে সাতটা নাগাদ এবং বাবা সাড়ে আটটা নাগাদ এবং পুলিশে ফোন করলেন সাওয়া ন'টা নাগাদ - কেন তা জানা প্রয়োজন। এতক্ষণ কি করছিলেন তারা এটাও। এবার আমিও একটা আষাঢ়ে গপ্প ফাঁদার কথা ভাবছি - এটা অনার কিলিং নয় তো? এবং তার কন্টিনিউয়েশন হিসাবেই ধনঞ্জয়কে ফাঁসিতে ঝোলানোর এত তৎপরতা নয় তো? (মানে একটা থিয়োরি পেলাম কি না যে কেবল নিজেদের অপরাধ ঢাকতেই ক্ষমতাশালিরা টাকা খরচ করে থাকেন)। আষাঢ়ে গপ্পটা শ্রাবণী হয়ে উঠবে কি না আমার জানা নেই - দেখা যাক কি বলেন? আরো দু'টো পর্ব বাকি। আলোচনা আপাততঃ মূলতুবী থাক?
  • T-ReX | 233.223.151.253 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৬:৩৫86654
  • Hetal ki korchilo... !!.. prosno ta .. kichu bolte perchi na.. mane ki bole uchit.. !!!.. jak tobu apnader jonyo kichu songbadpotrika ebong police er samvabyo boyan ja chilo tai bole jai.. !!.. simple she was so badly hurt that she never had the chance to defend herself.. khusi eber.??
  • রৌহিন | 113.42.125.92 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৬:৫২86655
  • না দাদা খুশী হতে পারলাম না - তার মানে বলছেন ধনঞ্জয় জামাকাপড় খোলার আগেই হেতাল "ব্যাডলি হার্ট" হয়েছিল? তাহলে আবার সেই আগের প্রশ্ন - তাহলে ধনঞ্জয়ের জামায় রক্তের দাগ নেই কেন?
  • aranya | 154.160.226.92 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৭:৫৬86656
  • 'মেয়ে মারা গেছে জানতে পারলেন সাড়ে ছ'টার মধ্যে, তারপরেও দাদা ফিরলেন সাড়ে সাতটা নাগাদ এবং বাবা সাড়ে আটটা নাগাদ ' - এটা সত্যিই খুবই আশ্চর্যের
  • ranjan roy | 192.69.150.184 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৮:০৯86638
  • এই দেখুন, আজকেই নীতীশ কাটারা কেসে সুপ্রীম কোর্ট বিকাশ যাদবদের আপীল ঠুকরে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে। সুপ্রীম কোর্ট খেয়াল করেছে যে ইউপির ডি পি যাদব পরিবারের এমনই ক্লাউট--পলিটিক্যাল, আর্থিক, মাসল পাওয়ার ইত্যাদি-- যে একজন ছাড়া সমস্ত প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হোস্টাইল হয়ে গিয়েছে।
    হাইকোর্ট বলেছে যে পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় খুনটা করা হয়েছে। কিন্তু ফাঁসি নয়, যাবজ্জীবন কারাবাস, তবে ৩০ বছরের আগে কোন গ্রাউন্ডেই মুক্তি দেওয়া যাবে না--এটাও বলা আছে।
    আমার এটা বলার দুটো উদ্দেশ্যঃ
    ১) যাবজ্জীবন মানেই ১৪ বছর বাদে বেরিয়ে আসা নয়, কোর্ট চাইলেই এমন রাইডার দিতে পারে।
    ২) প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকলেও ধনকুবেরদের ছেলেমেয়েদের প্রাণদন্ড না হওয়াটাই দস্তুর। আর কেবল মাত্র সারকামস্ট্যান্সিয়াল এভিডেন্সের ভিত্তিতেই গরীব প্রতিপত্তিহীন ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়। রাষ্ট্রপতিও মাপ করেন না।
    ৩) যদিও সেই রাষ্ট্রপতিই পরে মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে সওয়াল করে বলেছেন যে ওনার মতে বেশির ভাগ গরীব পিছিয়ে পরা গোষ্ঠীর লোকেরাই ফাঁসিতে ঝোলে।
  • T-Rex | 233.223.147.160 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৮:১৯86657
  • Uhu prosnota ami vul vabe bujhechilum.. !!.. fole uttor tao vul vabe dewa hoyechilo.. :) sarcasm ta jaruri chilo na ekhetre.. !!.. anyway rouhinda .. tomar prosner uttor o ekta galper madhyome dewa jay.. !!.. tobe saikat da jehetu aro duto porbo likhbe tai sei galpogulo amra ektu pore vabte pari.. !!.. apatotoh uttor ta oivabe dewa ta uddesyo chilo na.. etukui bolchi..
  • pi | 127.194.8.133 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৪১86639
  • ' ধনঞ্জয় নির্দোষ জানা সত্ত্বেও পুলিশ-বিচার ব্যবস্থা তাকে দোষী বানালো কেন' ...a কি আমার আগের পোস্টটা পড়ে এটা লিখলেন ?

    'ধনঞ্জয় নির্দোষ জানা সত্ত্বেও' কথাটা কোত্থেকে এল ? মানে, কীকরে জানা গেল যে পুলিশ বিচার ব্যবস্থা জানতো উনি নির্দোষ ? আমি তো আগের পোস্টে লিখলাম ই, প্রবালবাবু, দেবাশিসবাবুর বক্তব্য শুনে এটা মনে হয়নি যে ওঁরা সেকথা বলছেন। বাড়ি থেকে ধনঞ্জয়কে দোষী বানানো হয়েছে, সেটাতে বিশ্বাস ক'রে বাকি সব কিছু এগিয়েছে। এবং তার জন্য কেস সাজিয়েছে, নানা রকম ফাঁক ফোকর ভর্তি না করেই !
    সেটা প্রমাণ করা ও শাস্তির জন্য চাপ থাকতেই পারে।

    এখানে মৃত্যুদ্ণ্ডের পয়েন্টটা সেভাবে আসছেই না, ধনঞ্জয় যাবজ্জীবন পেলেও এই প্রশ্ন তোলা ভ্যালিড। যে কোন নিরপরাধের যেকোন শাস্তি হওয়া নিয়েই ভ্যালিড। ইচ্ছে করে কাউকে ফাঁসানো বলেই নয়, এই পাকেচক্রে সবচে ভালনারেবল (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা আর্থ সামাজিক ভাবে নিচু স্তরের লোক হন )কাউকে অপরাধী ধরেই নেওয়া এবং সেটা প্রমাণ করার জন্য কেস সাজানো, আপত্তিটা সেখানে। আর এটা ধনঞ্জয় বলে নয়, এই বিচার ব্যবস্থায় বহু কেসেই এরকমটা ঘটে থাকে। সৈকতদাও যেটা লিখছে, হাইপোথেসিস বানিয়ে নিয়ে সেটাকেই সত্য প্রমাণের জন্য এগোনো।
  • pi | 127.194.8.133 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৪৩86640
  • লিখে মনে হল, এখানে এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের পয়েন্টটা সেভাবে আসছে না, এরকমটাও ঠিক নয়। একটা ইর্রিভার্সিবল প্রসেস কেন আপত্তিকর , এরকম কোন ভুল জাজমেন্ট এর সম্ভাবনাসম্পূর্ণ কেস সেটা আরো বেশি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৫২86641
  • এ,
    কোর্টের জাজমেন্টকে প্রভাবিত করবার জন্য অর্থ প্রয়োগের সঙ্গে সবসময় রাজনৈতিক সংযোগের দরকার নেই। বছর খানেক আগে, আউটলুক বা ফ্রন্টলাইন কোনো পত্রিকার এক লেখায় পড়েছিলাম কিভাবে দিল্লিতে খুনের কেস থেকে রেহাই পাওয়া যায় কয়েক কোটি টাকা খরচা করলে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের জাজমেন্ট-ও বায় আউট করা যায়। নো কানেকশন রিকোয়ার্ড, জাস্ট পে দ্য মানি এন্ড বায় জাজমেন্ট।

    কে খুনী সেটা নিশ্চিত ভাবে না জেনে, এইরকম অসংলগ্ন প্রমাণের ভিত্তিতে একজনকে (তাও আবার ধনঞ্জয়ের মতন সম্বলহীন একজনকে) সাজা দেবার জন্য একগাদা অর্থ খরচের জাস্টিফিকেশন তো কিছু একটা থাকবে। এক যদি না এই যুক্তি হয়, যে যাও টাকা দিচ্ছি কাউকে একজনকে ধরে এনে ফাঁসিতে লটকাও।
    আর জেনারেলি, প্রভাবশালী লোকজন অর্থবল প্রয়োগ করে কোনো অপরাধ থেকে নিজেদের বা প্রিয়জনকে মুক্ত করবার জন্যে।
  • pi | 127.194.8.133 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৫৭86642
  • ধর্ষণ , খুনের মত কেসের কিনারা করার চাপ তো ছিলই। আর শুনলাম, পিটার ব্লিচের কথায় ধনঞ্জয় পিটিশন লেখাতে এই নিয়ে নেড়ে চেড়ে বসা হয় ও তারপর অতিতৎপরতা চলে আসে, যা ধনঞ্জয়ের বিপরীতে যায়।
  • সিকি | 233.176.185.191 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৯:০৮86643
  • ধনঞ্জয় নির্দোষ - এমন বোধ হয় কখনও দাবি করা হয় নি। সে দোষী ছিল, এইটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায় নি। তাই এত কথা। হতেই পারে সে দোষীই ছিল, হতে পারে অন্য কেউ দোষী, ধনঞ্জয় আংশিক দোষী বা নির্দোষ ছিল। সেটা প্রমাণসাপেক্ষ ছিল।
  • amit | 230.245.40.15 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ১০:৫৮86644
  • অবাক লাগছে যেখানে ডিএনএ টেস্ট করলে সত্যি চোখের সামনে বেরিয়ে আসে, সেখানে ফরেনসিক করা হলো না কেন। সেটা হলে তো এটা একটা ওপেন এন্ড শাট কেস হয়ে যেত। নাকি তখন ডিএনএ টেস্ট এর টেকনোলজি ছিল না ?

    তবে যদি ধরে নি ধনজয় আদৌ দোষী নয়, তাকে ফাসানো হলেও তার ফাঁসি হবে এটা ১৯৯০-তে অন্তত অকল্পনীয় ছিল। তার আগে বহু খুন হয়েছে এবং কোনো কেসেই ফাঁসি হয় নি। তাই ওনাকে যদি ফাসানো হয়েও থাকে, তার যাবজ্জীবন এর সম্ভাবনাই বেশি ছিল। তাহলে তাকে ফাসিয়ে কার কি লাভ ? lcm- এর যুক্তিটা খুব সত্যি বোধ হচ্ছে , "জেনারেলি, প্রভাবশালী লোকজন অর্থবল প্রয়োগ করে কোনো অপরাধ থেকে নিজেদের বা প্রিয়জনকে মুক্ত করবার জন্যে", ধনঞ্জয় যদি যাবজ্জীবন পেত, তাহলে কার কি লাভ ?

    নেট এ সুপ্রিম কোর্ট এর জাজমেন্ট তা পেলুম, লেখক হয়ত এটাই রেফার করেছেন। পরে মনে হলো অনেকটা ফাক আছে যুক্তিতে, কিন্তু ধনঞ্জয় এর উকিল এতগুলো স্টেজ এ কি একই ছিল ?

    http://indiankanoon.org/doc/1328822/

    অন্যদিকে ধনঞ্জয়ের নিজের ডায়রী অন্য কথা বলছে, যদি না এটাও বানানো হয়ে থাকে।

    http://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/Dhananjay-admits-to-murder-but-not-rape/articleshow/757510.cms
  • ranjan roy | 192.69.150.184 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৫ ০১:২৭86666
  • শ্রীমান ডট্‌ বললেন-
    টইটা বেশ রসে টইটম্বুর অবস্থায় পৌচেছে। হেতাল কি করছিল, ধনঞ্জয় এনজয় করছিল কিনা, অনার কিলিং, চার ঘন্টায় কি হয়েছিল, সব নিয়ে ইমোশন মাখোমাখো ব্যাপার।

    -- ভালো লাগল না, কেউ জানতে চায় নি "ধনঞ্জয় এনজয় করছিল কিনা"! কোন রসের ব্যাপারই নেই। দুটো মৃত্যু। একটা আততায়ীর হাতে, একটি আদালতের নির্দেশে। সেখানে সরকারী থিওরির ফাঁক নিয়ে চর্চা হচ্ছে কারণ এ নিয়ে অনেক আইনবিদরাও প্রশ্ন তুলেছেন।
  • ranjan roy | 192.69.150.184 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৫ ০১:৫২86667
  • আচ্ছা, ধনঞ্জয় আলমারি হান্ডুল পান্ডুল করে শুধু একটা ৩৫০ টাকা দামের রিকো ঘড়িই চুরি করল?
  • amit | 190.148.69.210 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৫ ০৩:৩১86661
  • হেতাল এর বাবার এত দেরী করে ফেরা এবং পুলিশকে এত দেরী করে জানানো সত্যি সন্দেহজনক। অলসো প্রতিবেশীরা কেও কেন পুলিশ কে ফোন করলেননা সেটাও সমান সন্দেহজনক। রায়ে বলা আছে, বিল্ডিং এই একজন ডাক্তার হেতালকে পরীক্ষা করেন তার মার কোলে থাকা অবস্থায়, তার অনেক পরে বাবা আসেন। সেই ডাক্তার কেন পলিসেকে জানালেন না ? কারোর বাড়িতে তো ফোন ছিল নিশ্চয় । বাড়িসুদ্ধু এতগুলো লোক , কারোর আচরণ স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এটাও আর একটা আরুশি কেস মনে হচ্ছে।
  • sm | 233.223.154.168 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৫ ০৪:১৮86662
  • একজন একটা প্রশ্ন করেছে; যেটা লজিক্যাল। কিন্তু তার জন্য সেই ব্যক্তি কে উন্মাদ, শয়তান বলাটা কি রকম ভদ্রতা?
    প্রশ্ন টাকে গুরুত্ব দিন; প্রশ্নের টোন ভালো না লাগলে,কিরকম হওয়া উচিত ছিল বলুন; কিন্তু অযথা ব্যক্তি আক্রমন- বেশ আপত্তি জনক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন