এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক

  • হিন্দুত্বের রঙ গেরুয়া - আর সেই গেরুয়া রঙের আড়ালে বাংলায় আরএসএসের কীর্তিকলাপ (প্রথম পর্ব)

    শৈবাল দাশগুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ০১ অক্টোবর ২০১৭ | ৩৮২৯ বার পঠিত
  • প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব

    নাট্যকার এবং ঔপন্যাসিক শৈবাল দাশগুপ্ত তাঁর উপন্যাসের প্লটের সন্ধানে কৌশল করে ঢুকে পড়েন আরএসএসের মেশিনারির ভেতর – যেখানে সচরাচর কেউ ঢুকতে পায় না, এবং বের করে আনেন বেশ কিছু অজানা তথ্য। আরএসএস এবং বিজেপি, বিভিন্ন সংগঠন আর নকল প্রোফাইল বা নামের আড়ালে কীভাবে তাদের সাম্প্রদায়িকতার সাম্রাজ্য বিস্তার করে চলেছে বাংলা জুড়ে – এ লেখা তার সরাসরি খতিয়ান। ন্যাশনাল হেরাল্ডের অনুমতিক্রমে মূল ইংরেজি প্রবন্ধ থেকে প্রথম পর্বটি অনুবাদ করেছেন অচল সিকি। সমস্ত ছবি ন্যাশনাল হেরাল্ডের অনুমতিক্রমে পাওয়া।




    গত বছরের কথা। ২০১৬-র গ্রীষ্মকাল। একটা নাটক লিখেছিলাম, যেখানে একজন মন্ত্রীর চরিত্র তাঁর পিএ-কে বলছেন, গণেশঠাকুরের কেসটাই দুনিয়ার প্রথম "হেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট"। নাটকের আরেক অংশে সেই মন্ত্রী বলছেন, কুতুব মিনার আসলে ছিল বিষ্ণু-স্তম্ভ। দর্শকেরা উপর্যুপরি হতভম্ব হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই আমি একটা নিবন্ধ পড়লাম এই মর্মে যে, এইসব জিনিস সত্যিসত্যিই আরএসএসের স্কুলের পাঠ্যবইতে পড়ানো হয়। আমি সময়ে একটা উপন্যাসের প্লট ভাঁজছিলাম মাথার মধ্যে। নিবন্ধটা পড়েই মনে হল, আরে, এগুলো তো আমার উপন্যাসের প্লটে আমি ব্যবহার করতে পারি। অবশ্য এর জন্য আমাকে এইসব স্কুলের শিক্ষক আর ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলা দরকার।

    খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম, এই আরএসএস পরিচালিত স্কুলগুলো বাইরের কোনও লোককে তাদের স্কুল ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকতে দেয় না। সুতরাং, স্কুলের শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে গেলে একমাত্র রাস্তা হচ্ছে, সঙ্ঘের ভেতরে ঢুকে পড়া। আর সেই সময়ে আমার কাজটা আরও সহজ হয়ে গেছিল, কারণ তখন আরএসএস বেপরোয়াভাবে চেষ্টা করছিল পশ্চিমবঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটাবার, আর সেজন্য তারাও নব্য কনভার্টদের খুঁজে বেড়াচ্ছিল।

    আমি তক্ষুনি একটা অনলাইন আবেদনপত্র ভরে সাবমিট করলাম, আর করার সাথে সাথে কোনও এক আরএসএস সদস্যের ফোন নম্বর সমেত একটা অটোমেটেড রিপ্লাই পেলাম। পরের দিন আমার সবিস্তারে টেলিফোনের মাধ্যমে ইন্টারভিউ নেওয়া হল। এর পর একাধিক ব্যক্তির থেকে একাধিক ফোন এল পর পর। আমি যে সত্যিই একজন নাট্যকার, এই তথ্যটা তাদের বিশ্বাস করানো মনে হল খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তাদের মূল চিন্তার বিষয় ছিল, আমি আসলে ছদ্মবেশে কোনও জার্নালিস্ট তো নই? – যাই হোক, শেষ পর্যন্ত আমাকে জানানো হল, আপাতত আমার পছন্দ করা যে কোনও একটা এলাকা বেছে নিয়ে সেখানকার দৈনিক আরএসএস শাখায় আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে।

    আমি যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেছিলাম। ওদের আমি আমার যে নাম দিয়েছিলাম সেটার ইংরেজি বানান ছিল Saibal Majumdar। ওরা যদি Saibal Dasgupta দিয়েও সার্চ করত, ওরা একই নামে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একজন জার্নালিস্টকে পেত, যাঁর নাম আর আমার নাম একই, কেবল আমি আমার নামটা ইংরেজিতে লিখি Soibal - O দিয়ে। 'শৈবাল মজুমদার' নামটা একশো শতাংশ গুগল-প্রুফ ছিল আর সেই কারণেই আমি একেবারে নিশ্চিত ছিলাম যে আমার এই নকল পরিচয় ওরা ধরতে পারবে না।

    চিনার পার্কের শাখায় আমি যাওয়া শুরু করলাম। সেখানে আমরা গান গাইতাম আর একটা ময়লা হয়ে যাওয়া গেরুয়া পতাকাকে স্যালুট ঠুকতাম – যেটা সম্ভবত গত দু এক বছরের মধ্যে কখনও কেচে সাফ করা হয় নি। আমাদের হাল্কা শরীরচর্চাও করতে হত। সেখানে ধর্ম বা রাজনীতি – কোনওটারই আলোচনা চলত না। একদম বেঁধে দেওয়া রোজনামচা ছিল সেখানে এবং দৈনিক বক্তৃতার বিষয় হত, কী ভাবে আরএসএস নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে মানুষের বিকাশ ঘটায়, অথবা, দেশের সেবা করার প্রয়োজনীয়তা কী।

    অবশ্য, এসবের শেষে আমরা প্রতিদিনই হাত পা নাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গুণকীর্তনের আদানপ্রদানে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। আনঅফিশিয়ালি, আমাদের হাতে আরএসএস প্রমুখ মোহন ভাগবতের ভাষণের ভিডিও ক্লিপ সরবরাহ করা হত, হিন্দু সংস্কৃতির ওপর, দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদের ওপর তাঁর বক্তৃতাসমূহের ভিডিও।

    বলতে গেলে সঙ্ঘের কাজকর্ম আমার বেশ পছন্দ হতে শুরু করেছিল শুরুর দিকে। এই সময়ে আমি আমার বেশির ভাগ সময় ব্যয় করতাম দক্ষিণপন্থী হিন্দু লেখাপত্র পড়ার কাজে। ধীরে ধীরে আমি বাংলায় আরএসএসের 'ইনার সার্কল'এর কাছে পৌঁছতে শুরু করলাম। আমাকে ততদিনে আর কেউ বহিরাগত বলে মনে করত না।

    তবে, সবথেকে খারাপ লাগত যেটা, সেটা হচ্ছে এদের বেশির ভাগেরই বাংলা আর বাঙালিদের সম্বন্ধে একটা নিচু দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে চলা। এদের কাছে বাংলায় কথা বলা যে-কোনও লোকই বাংলাদেশি, যারা সঙ্ঘের জয়যাত্রাকে রুখে দেবার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে অবিরাম। আমি একবার শুনেছিলাম, আশুতোষ ঝা নামে এক নামী ল কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রকে ভোপালের বাসিন্দা জনৈক ময়াঙ্ক জৈন টাস্ক দিচ্ছে, হয় অন্তত ৫০ জন বাংলাদেশিকে পিটিয়ে এসো, নয় তো সঙ্ঘ ছেড়ে দাও।

    এঁদের অনেকেই খোলাখুলি অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে রাখতে উৎসাহ দিতেন, যাতে কিনা দরকার পড়লে মুসলমানদের আর রাজ্যের পুলিশদের সাথে টক্কর দেওয়া যায়।

    আমার ভাগ্য ভালো বলতে হবে, আমি কিছু বর্ষীয়ান সঙ্ঘ সদস্যের সুনজরে পড়ে গেছিলাম। প্রশান্ত ভাট থেকে ডক্টর বিজয় পি ভাটকর, প্রায় যতজন বর্ষীয়ান সঙ্ঘ বুদ্ধিজীবিকে আমি জানতাম, প্রত্যেকেই হিন্দুত্বের ওপর আমার কাজকর্মের খুব প্রশংসা করেছিলেন।


    বিজ্ঞান ভারতীর প্রধান এবং নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বিজয় ভাটকরের সাথে লেখক

    এইখানে এটা স্বীকার করে নেওয়া উচিত যে, আমি সঙ্ঘকে আমার নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। আমি একজন উঠতি লেখক যার রোজগারের কোনও স্থিরতা নেই। সবসময়ে আমার মাথায় এটা ঘুরত যে আমি আমার লব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করে বই লিখতে পারি আর সঙ্ঘকে দিয়ে সেগুলো বিক্রির ব্যবস্থাও করতে পারি। আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত এমন যে কারুর লেখা বই কিনতে উৎসাহী, এমন লোকের সংখ্যা এ দেশে কম নয়।

    কিন্তু, সব কিছুর ওপরে ছিল আমার মনুষ্যত্ববোধ, যা আমি পয়সার বিনিময়ে বিক্রি করতে পারি নি। আজ আমার কাছে আরএসএসের বেশ কিছু নেতার কথোপকথন আর বিবৃতি রেকর্ড করা অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু আমি সেগুলোকে শুধুমাত্র আমার পরবর্তী উপন্যাসের কাজে ব্যবহার করতে চাই, সম্ভবত Unfettered নামে আমার পরবর্তী উপন্যাস এ বছরের শেষের দিকে প্রকাশিত হতে চলেছে।

    ওয়র্ল্ড আয়ুর্বেদ কংগ্রেস (WAC) ২০১৬

    চাকা ঘুরল যখন আমি ২০১৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হতে চলা ওয়র্ল্ড আয়ুর্বেদ কংগ্রেসের উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার কাজে যুক্ত হলাম। আমার চোখ খুলে গেল ঐ পাঁচদিনে।

    শুরু হবার আগের দিন আমাকে নিয়ে যাওয়া হল সল্টলেকের ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিট্যুট অফ আয়ুর্বেদিক ড্রাগ ডেভেলপমেন্টে (NRIADD)। আরএসএসের যে বন্ধুটি আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছিল সে আমাকে খুব গর্বের সাথে জানিয়েছিল যে ইন্সটিট্যুটের আধিকারিককে সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তিনি বিজ্ঞান ভারতীর সমস্ত আদেশ মেনে চলেন। "আমাদের পার্টি কেন্দ্রে শাসন করছে", দাঁত বের করে পরম সন্তুষ্টির সাথে সে বলছিল, সাথে আরও জানিয়েছিল যে ক্যাম্পাসের মধ্যে একটা ঘর আরএসএস সদস্যদের জন্য ছেড়ে রাখার ব্যাপারে ইনস্টিট্যুটকে নির্দেশ দেওয়া আছে। সেই ঘরটা, আমি যা দেখলাম, সত্যিই প্রশাসনিক ব্লকে স্বয়ং বিজ্ঞান ভারতী দখল করে বসে আছেন।

    এর পরে আমরা গেলাম সায়েন্স সিটিতে, যেখানে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল। আমার সাথে আলাপ করিয়ে দেওয়া হল এক সিনিয়র আরএসএস সদস্য, আনন্দ পান্ডের সাথে, যিনি ঘনিষ্ঠ মহলে বিশেষ নামকরা এই কারণে – যে, তিনি নাকি শুধুমাত্র দুগ্ধজাত পদার্থ সেবন করেই বেঁচে আছেন। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম বোঝাতে যে আমি এই তথ্যটা জেনে খুবই ইমপ্রেসড, এমনকি চোখ বড়বড় করে জানতেও চাইলাম ঠিক কী রুটিন পালন করে তিনি এই রকম ভাবে টিকে আছেন। পাণ্ডে অবিশ্যি খুবই সুন্দর ব্যবহার করলেন এবং কথায় কথায় জানালেন যে তিনি সকলের জন্য সমানাধিকারে বিশাস করেন। বেশ খোলামনের লোক বলেই মনে হল তাঁকে।

    তবে একটা সমস্যা দেখা দিচ্ছিল – দলে ইংরেজি জানা চৌখশ লোকের প্রচণ্ড অভাব। NASYA-র অর্ক জানা আমাকে অনুরোধ করলেন আন্তর্জাতিক অভ্যাগতদের অভ্যর্থনা জানাবার দলে তাঁর সাথে যুক্ত হতে। আমার ইংরেজি খুবই ভালো কিন্তু আমি ঠিক ফর্মাল পোষাকে ছিলাম না। পূজা সাভারওয়াল নামে একজন মহিলা বেশ রূঢ়ভাবে আমাদের ফর্মাল পোশাক পরে আসতে বললেন, এবং সবাইকে গলায় টাই বাঁধার পরামর্শ দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

    একজন মজা করে বললেন, কলকাতার ওয়েদার তো ঠিক ফর্মাল পোশাকের জন্য উপযুক্ত নয়। ডক্টর জানা যখন বললেন, ট্র্যাডিশনাল বাঙালি পোশাকে সবাই সাজলে কেমন হয়, আমাদের তখন আরও হেয় করা হল। "ট্র্যাডিশনাল আবার কী জিনিস?", জনৈক অফিশিয়াল ভুরু কোঁচকালেন, "আপনারা কি হাওয়াই চপ্পল পরে আন্তর্জাতিক অভ্যাগতদের স্বাগত জানাতে যাবেন?" উপস্থিত সকলে হো-হো করে হেসে উঠল এবং সকলেই একমত হল যে বাঙালিরা যেখানেই যায় হাওয়াই চপ্পল পরেই যায়। "ওপর থেকে নিচুতলা, সক্কলে এখানে হাওয়াই চপ্পল পরে ঘোরে" – অফিশিয়ালটি জানালেন।

    আমার সেই মুহূর্তে মনে পড়ল রোহিত ভেমুলাকে। এই লোকগুলো আমাকে সবার সামনে আমার বাঙালি পরিচয়কে হ্যাটা করল। উপস্থিত যতজন বাঙালি ছিলাম সেখানে, মুখে একটি কষ্টকৃত হাসি ঝুলিয়ে আমরা দাঁড়িয়ে থাকলাম, ততক্ষণ আমাদের উপলক্ষ্য করে সমস্ত বাঙালিদের অপমান করে চলছিলেন আয়োজকরা – বাঙালিদের চেহারা, তাদের পোশাক, তাদের অভ্যেস – সমস্ত কিছু নিয়ে। আর এই পুরো ঘটনাটা ঘটে চলেছিল অন্তত পাঁচজন প্রবীণ বাঙালি সঙ্ঘ সদস্যের উপস্থিতিতে।

    এই ইভেন্টে আমি দেবেশ পাণ্ডের সাথেও পরিচিত হলাম, শুনলাম সে সঙ্ঘের তরুণতম সদস্যদের মধ্যে এমন একজন, যে মোহন ভাগবতের সঙ্গে একলা কথা বলার সুযোগ পেয়েছে।


    দেবেশ পাণ্ডের (মাঝখানে) সাথে লেখক - যিনি বলেছিলেন বাঙালি সংস্কৃতি আদতে বিকৃতিবিশেষ

    সে আমাকে বুঝিয়ে বলল কেন একজন লোক একসাথে বাঙালি আর হিন্দু – দুটোই হতে পারে না। সে হয় বাঙালি হবে, নয় হিন্দু হবে। "বাঙালি সংস্কৃতি আদপেই আর কোনও সংস্কৃতি নয়, ওটা একটা বিকৃতিবিশেষ", সে বলেছিল, "স্রেফ ১০ শতাংশ বাঙালি হিন্দুকে ঠিকঠাক হিন্দু বলা যায়।"

    বিজেপি এবং আরএসএস সদস্যদের মধ্যে এটা সাধারণভাবেই বিশ্বাস করা হয় যে বাঙালী হিন্দুরা হিন্দিভাষী হিন্দুদের থেকে সব অর্থে নিকৃষ্ট। এসব হজম করা সত্যিই খুব কষ্টকর, কিন্তু যতদিন আমি সঙ্ঘের মধ্যে সময় কাটিয়েছিলাম, ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছিলাম যে বাঙালি সঙ্ঘ সদস্যদের কাছে দুটোই মাত্র পছন্দ বেছে নেবার জন্য, হয় হিন্দিভাষীদের উৎকৃষ্ট বলে মেনে নাও, নয় তো বাঙালিদের নিকৃষ্ট বলে মেনে নাও। বর্ষীয়ান বিজেপি কার্যকর্তা এবং বেঙ্গল স্টেট বিজেওয়াইএমের সহসভাপতি উমেশ রাইয়ের ভাই রমেশ রাইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে মূলত হিন্দিভাষী নেতাদের বোলবোলাওই চলে।

    কোনও রকমের দায়িত্বশীল পদ বাঙালিদের নিতে দেওয়া হয় নি, উদ্যোক্তাদের দুজন জানিয়েছিলেন। যে সব স্টল বানানো হয়েছিল তার বেশির ভাগই ফাঁকা পড়ে ছিল, কিন্তু আমন্ত্রিত সমস্ত গরীব গ্রামের হাতুড়েদের, যাঁদের বেশির ভাগই দলিত সম্প্রদায়ের ছিলেন, তাঁদের মাটিতে বসতে দেওয়া হয়েছিল, অন্যদিকে কিছু দক্ষিণপন্থী সংস্থার সদস্যদের, যাঁদের সাথে আয়ুর্বেদের দূর দূর পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই, তাঁদের বসতে দেওয়া হয়েছিল স্টলে। এই বৈষম্য একেবারে খোলাখুলি দেখা যাচ্ছিল।

    আইটি মিলনে নিমন্ত্রণ

    WAC ২০১৬ শেষ হবার পরে আমি আবার শাখায় যাতায়াত শুরু করলাম। কয়েকদিন পরেই কেষ্টপুরে আইটি মিলন অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমি আমন্ত্রণ পেলাম। আমাকে বলা হয়েছিল এটা একটা সাপ্তাহিক মিলন অনুষ্ঠান, তবে কোনও সাধারণ মানুষের সেখানে প্রবেশাধিকার ছিল না। শাখা যেমন চলে খোলা মাঠে, এই মিলন চলে একটা বাড়ির মধ্যে এবং বাইরে এর বিষয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করা হয় না। এই মিলন বা মিটিংএর বিষয়বস্তু হচ্ছে প্রোপাগান্ডা তৈরি করা, পরবর্তী প্ল্যান বানানো এবং উচ্চস্তরের মস্তিষ্কপ্রক্ষালন – ব্রেনওয়াশিং।

    এইখানে আমি দেখা পেলাম প্রশান্ত ভাটের – যিনি আরএসএস কলকাতার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমরা শান্তভাবেই কথা বললাম, যদিও তার মধ্যেই ভাট ভারতীয় সমাজে কোনও রকমের বৈচিত্র্যের উপস্থিতি বার বার অস্বীকার করছিলেন। আমরা প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে জাতীয়তাবাদ আর ধর্মের বিষয়ে আলোচনা করলাম, এর পরে আমাদের আরেকটা ঘরে ডাকা হল – সেখানে তখন মোহন ভাগবতকে স্বাগত জানাবার প্রস্তুতি চলছিল। আমরা কিছু ড্রিল করলাম, যেগুলো তাঁর উপস্থিতিতে করে দেখানো হবে। এর পরে, প্রশান্ত ভাটের পরিচালনায় আমরা একটা বাংলা গান শিখলাম। গানের সুরটা খুবই সুন্দর এবং ভাটের গলাও অত্যন্ত সুন্দর। আরএসএসের প্রতি বাঙালিদের সমর্থন ছিল গানের মূল বক্তব্য, যদিও সেখানে উপস্থিত অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন অবাঙালি।

    প্রস্তুতিপর্ব সমাপ্ত হলে পরে বৌধিক বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রিচিং শুরু হল, যার পরিচালনায় ছিলেন বিপিন পাঠক (বা বিপিন বিহারী), একজন স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবি এবং তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। আমি তাঁকে সাথে সাথে চিনতে পেরেছিলাম, কিন্তু আমার ভাগ্য ভালো তিনি আমাকে চিনতে পারে নি। ২০১৬র জানুয়ারি মাসে কলকাতা বইমেলায় আমরা রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার প্রতিবাদ করছিলাম, তখন এঁর সাথে আমাদের দলের একটা তর্কাতর্কি হয়।

    তিনি আমাকে খুব আন্তরিকভাবে স্বাগত জানালেন, আর যখন জানলেন যে আমি আদতে একজন নাট্যকার, সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমার কাছে আবদার করলেন একটা স্ক্রিপ্ট লিখে দিতে, যাতে মুসলমানদের "অন্য গোষ্ঠী" হিসেবে দেখানো হবে। তিনি আমাকে প্লটও বলে দিলেন, তাতে একটা বাচ্চা বড় হয়ে জানতে পারবে যে, সে যে সুন্দর মায়ের কাছে বড় হয়েছে, সেই মা আসলে তার সৎমা, তার আসল মা প্রকৃতপক্ষে একজন ডাইনি, অবশ্যই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলা। এই পুরো আলোচনাটা হচ্ছিল সঙ্ঘের বাকি সমস্ত সদস্যদের সামনেই, প্রশান্ত ভাট নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।


    বিপিন পাঠকের সাথে লেখক

    বিপিন জানালেন যে তাঁর কাছে সব কিছু তৈরি আছে – একটা ইউটিউব চ্যানেল, কলাকুশলী, দর্শক এবং স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ভিডিও বানানো হলে সেগুলো বিভিন্ন সোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করার জন্য লোক। তাঁর একমাত্র যেটা দরকার, সেটা হল – একটা স্ক্রিপ্ট।

    "প্লটটা তো দুর্দান্ত", আমি খুবই অবাক হয়ে বললাম, "একদিন তা হলে বসা যাক কোথাও এটা নিয়ে"। তিনি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলেন এবং পরের সপ্তাহেই আমাদের মিটিংএর তারিখ পাকা হল, সল্টলেক সেক্টর পাঁচে।

    মীটিং শেষ হয়ে যাবার পরে বাকিরা চলে গেলেন, আমি আরও কিছুক্ষণ থেকে গেলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রশান্ত ভাটের সাথে আবার দেখা করলাম এবং একে অপরের ফোন নম্বর নিলাম।

    সেদিন রাতে ভাটের এক সঙ্ঘ সদস্যের বাড়িতে ডিনারের নিমন্ত্রণ ছিল, কিন্তু ভাট সেখানে যেতে খুব একটা উৎসাহী ছিলেন না, কারণ সেই সদস্যটি ছিলেন দক্ষিণ ভারতীয়। চলে আসার আগে আমাকে ভাটের কিছু সর্দারজি আর সাউথ ইন্ডিয়ান চুটকি শুনতে হল যেগুলো শুনে আমার একটুও মজা লাগছিল না। কিন্তু উনি নিজেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলেন এই দুটি সম্প্রদায়ের ওপর আরোপিত বোকামোর চুটকিতে মজা পেয়ে।

    এক সপ্তাহ বাদে, প্ল্যানমাফিক, আমি সল্টলেকের সেক্টর পাঁচে বিপিন বিহারীর সাথে দেখা করলাম। দু ঘণ্টা ধরে প্লট নিয়ে আলোচনা করলাম, আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আলোচনা করলাম মুসলমানদের প্রতি তাঁর মানসিকতা নিয়ে। মুসলমানরা কেন "বন্দে মাতরম্‌" বলে না, তাই নিয়ে তাঁর প্রচণ্ড ক্ষোভ। তিনি দাবি করলেন আমার স্ক্রিপ্টে একজন বড় দাদাকে (হিন্দু) ঢোকানো হোক যে তার সৎভাইয়ের (মুসলমান) সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করবে কারণ সে তাদের মা-কে "মা" বলে ডাকতে অস্বীকার করবে।

    মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাঁর বিষোদ্গার চলতেই থাকল এবং বার বার তিনি এটা বোঝাবার চেষ্টা করে যেতেই থাকলেন, কেন হিন্দুদের স্বার্থে এ রকমের একটা ফিল্ম বানানো একান্তই দরকার। তিনি আরও দাবি করলেন আমার স্ক্রিপ্টে এমন কিছু ডায়ালগ ঢোকানো হোক, যেখানে বাঙালি হিন্দুরা যে হিন্দুত্বের বিষয়ে কিস্যু জানে না – সেইটা ফুটিয়ে তুলবে।

    ভেতরের খবরের সন্ধানে

    আমাকে রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী অপূর্বানন্দের সাথে যোগাযোগ রেখে চলতে বলা হয়েছিল। সঙ্ঘীদের নিজস্ব বৃত্তে ইনি খুবই শ্রদ্ধেয় একজন সন্ন্যাসী, আলাপ হবার পরে আমি জানলাম যে ইনি আগে গুজরাতের ভদোদরাতে আত্মানন্দ অবধূত বাবাজি নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর কথায় কথায় জাত তুলে বিষোদ্গার করার প্রবণতা দেখে আমি প্রচণ্ডই অবাক হয়েছিলাম প্রথমে, কিন্তু এই মানসিকতা তো সঙ্ঘের আদর্শে ঠিকঠাকই খাপ খেয়ে যায়।

    গত অনেক বছর ধরেই আরএসএস আর বিজেপি রামকৃষ্ণ মিশনকে ব্যবহার করে আসছে। রামকৃষ্ণ মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বামী প্রাভানন্দজীর নামে একটি ফেক প্রোফাইল সোশাল মিডিয়াতে লোককে উৎসাহিত করে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদানের জন্য। ফেসবুকে এনার ফলোয়ারের সংখ্যা পাঁচ হাজারের ওপর এবং এঁর পোস্ট হাজারে হাজারে শেয়ার হয়।

    স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ নামে জনৈক স্বঘোষিত শিক্ষাবিদ এবং বাংলায় বিজেপির মুখপাত্র, সন্ন্যাসীদের মত সাজপোশাকে সেজে রামকৃষ্ণ মিশনের কাজকর্ম পরিচালনা করেন। রাজ্য বিজেপি খোলাখুলিই স্বীকার করে যে ইনি রামকৃষ্ণ মিশনের সাথে যুক্ত। গেরুয়া আলখাল্লা আর টুপি পরে এঁকে ঠিক রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের মতই দেখতে লাগে, যদিও নিয়মানুযায়ী মিশনের সন্ন্যাসীদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া একেবারে মানা। সন্ন্যাসীদের ব্রহ্মচারীও থাকতে হয় আজীবন। তবে নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া নিজের ব্যক্তিগত বিবরণ অনুযায়ী, স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ সন্ন্যাসীও নন, ব্রহ্মচারীও নন। এ রকম কত শত নকলি ব্রহ্মচারী আর সন্ন্যাসী যে বাংলার বাজারে আরএসএস আর বিজেপি ছেড়ে রেখেছে, আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি।

    আরও কয়েক মাস চলে গেল। যদিও বাংলা বিজয়ের জন্য বিজেপির অনেক গোপন প্ল্যান আমি ততদিনে জেনে ফেলেছি, কিন্তু আরএসএসের স্কুলে ঢোকার জন্য কোনও রাস্তা আমি তখনও তৈরি করে উঠতে পারি নি। তবে, এর পরেই এল সুযোগ। আমি হাতিয়াড়ার সরস্বতী শিশু মন্দিরে কল্পতরু উৎসবে যোগদানের জন্য আমন্ত্রিত হলাম।

    বাগুইহাটি থেকে প্রায় তিন চার কিলোমিটার হাঁটার পর একটা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় পৌঁছলাম আমরা। কেশবজী নামে এক বরিষ্ঠ প্রচারকের সাথে আমাদের পরিচয় হল। আমরা তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলাম, কিন্তু আমাদের আশীর্বাদ করার সময়ে তাঁর মুখের বিরক্তি আমার চোখ এড়ায় নি। ভয়টা পেলাম এর পরে, যখন আমাদের একসঙ্গে একটা ফটো তোলার জন্য দাঁড়াতে বলা হল। এমনিতে, এতদিন আমি কোনও না কোনওভাবে আমার ফটো তোলার ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছি, কিন্তু আজ মনে হল, আর বোধ হয় এড়ানো যাবে না। তাড়াতাড়ি আমি আমার সঙ্গীকে অন্যদিকে নিয়ে গিয়ে বললাম, আমার তাড়া আছে – যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেন আমার সাথে শিক্ষকদের কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন উনি। ... ফন্দিটা কাজ করল, এবং ফটো না তুলেই আমরা দ্রুত সেখান থেকে সরে গেলাম।

    এর পর আমার সামনেই এক বিচ্ছিরি ঘটনা ঘটল। একজন মহিলা, কেশবজীর কাছে এসেছিলেন কোনও এক সিনিয়র অবাঙালি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তাঁর সাথে দেখা করতে। তাঁকে প্রকাশ্যে হেনস্থা করা হল এবং আমার সামনেই তাঁকে টানতে টানতে সরিয়ে নিয়ে গেল কয়েকটা ছেলে – বয়েসে যারা তাঁর সন্তানতুল্য হবে। কেশবজী, যেন কিছুই হয় নি – এ রকম মুখ করে হাসলেন, পাশ থেকে কেউ একজন টিপ্পনী কাটলেন – 'পাগল হ্যায়'।

    স্কুলের সম্পাদক, শিক্ষকদের সাথে আমার কথা বলবার অনুরোধ শুনে খুব একটা খুশি হলেন না। তাঁর সন্দেহ হচ্ছিল, তবে "এ তো সঙ্ঘেরই লোক" বলে আমার সঙ্গী আমার হয়ে ওকালতি করায় শেষমেশ অনুমতি দিলেন। একজনমাত্র শিক্ষকের সাথে আমি কথা বলবার সুযোগ পেয়েছিলাম এবং তিনি আমার সামনেই সাম্প্রদায়িক বিষোদ্গার করছিলেন। খুব নতুন কিছু নয় – সঙ্ঘের মধ্যে এই মানসিকতা খুবই কমন।

    কয়েকদিন বাদে আমি কেশব ভবনে গিয়ে প্রশান্ত ভাটের সাথে আবার দেখা করলাম এবং জানালাম যে আমি সঙ্ঘের স্কুলের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে তার ওপর একটা প্রবন্ধ লিখতে চাই কোনও একটা বিজেপি-পন্থী খবরের কাগজে। ভাট আমাকে কোনওভাবেই সন্দেহ করেন নি, কারণ ততদিনে তিনি আমার হিন্দু শাস্ত্রবিদ্যার জ্ঞানের পরিচয় পেয়ে যারপরনাই মুগ্ধ। তাঁর হস্তক্ষেপে এবার অনুমতি জুটে গেল সহজেই।

    সরস্বতী শিশুমন্দিরে

    বলা হয়েছিল বাগুইহাটি থেকে 30C নম্বর বাস ধরে শেষ স্টপেজে নামতে। বলা হয়েছিল, বাসস্টপ থেকে একটু হাঁটাপথের দূরত্বেই স্কুল। কিন্তু নেমে দেখা গেল, সেখানে সরস্বতী শিশু মন্দিরের নাম কেউই শোনে নি। একজন দোকানদার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি মিশনের ইস্কুল খুঁজছি কিনা। আমি বললাম, না, বলে সেখান থেকে আরও এগিয়ে গেলাম। মোবাইলে গুগল ম্যাপেও কিছু দেখাচ্ছে না। এলাকার প্রায় কেউই এই নামে কোনও স্কুলের কথা জানে না।


    হাতিয়াড়ার সরস্বতী শিশুমন্দিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

    এর পরে আমি যখন জানতে চাইলাম এ রকম কোনও স্কুল আছে কিনা যার ভেতরে একটা মন্দির আছে, তখন লোকে আমাকে স্কুলের রাস্তা দেখিয়ে দিল। স্কুলের কোঅর্ডিনেটর, মধ্য-পঞ্চাশের কালিদাস ভট্টাচার্য আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁকে বললাম কেন আমার পৌঁছতে প্রায় এক ঘণ্টা দেরি হল। "আপনার জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল। লোকে এটাকে মিশনের স্কুল বলেই জানে" - খুব নিষ্পাপ মুখে তিনি জানালেন। আমি আবারও প্রমাণ পেলাম যে আরএসএস একটা আস্ত স্কুল চালাচ্ছে নকল পরিচয়ের আড়ালে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব
  • ধারাবাহিক | ০১ অক্টোবর ২০১৭ | ৩৮২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • রানা | 228.248.49.2 (*) | ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ১০:২৮83352
  • একটা অশনি সংকেত যেন দেখতে পাচ্ছি। '৪৭ থেকে '৭১ পাঞ্জাবি মুসলমান বাঙালী মুসলমানকে কম মুসলমান ভাবত আর বাঙালি সংস্ক্রিতিকে হেয় করত। তার ফল কি হইল জানে শ্যামলাল।
  • de | 69.185.236.54 (*) | ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ১০:৩৪83353
  • বাপরে - আমার তো এই সাংবাদিকের জন্য ভয় হচ্চে -

    লেখাটা খুবই সময়োপযোগী, সিকিও ভালো অনুবাদ করে -

    সারা ভারত জুড়েই তো এই চোরা বাঙালী বিদ্বেষ আছে - কোথায় নেই? ইদানীংকালে আরো বেড়েছে -

    ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়,বাংলাভাষাভাষী লোকজন যদি ধর্ম-টর্ম ভুলে শুধু বাঙালী হিসেবেই এক হয়, তাহলে বড়ো ভালো হয় -
  • dc | 132.174.70.116 (*) | ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ১০:৪৪83354
  • ইংরেজি লেখা আর সিকির অনুবাদ, দুটোই পড়লাম। পবতে কয়েক বছর ধরেই আরেসেস চুপচাপ কাজ করে চলেছে, এটা আমার কিছু বন্ধুবান্ধবের কাছেও শুনতে পাই। ক বছর আগে কলকাতা গিয়ে গড়িয়ার দিকে দেখেওছিলাম বেশ কিছু রাস্তার ধারের মন্দিরে জয় সিয়া রাম বলে স্লোগান চলছে।
  • সিকি | 132.177.195.228 (*) | ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ১২:২১83356
  • ওখানেও*
  • সিকি | 132.177.195.228 (*) | ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ১২:২১83355
  • দাদারা দিদিরা, এর একটা দ্বিতীয় পর্বও আছে। ওখানেই দুচাল্লাইন লিখে আসবেন।
  • aranya | 172.118.16.5 (*) | ০৬ অক্টোবর ২০১৭ ১২:৩০83358
  • সাংবাদিকের জন্য আমারও ভয় হচ্ছে। আর দে-র সাথে একমত - ধর্ম ব্যাপারটা মানুষ ভুলতে পারলে ভাল হত
  • প্রতিভা | 561212.96.6790012.3 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৮ ১০:৫৮83359
  • এটা নিয়ে এখন খুব লেখালিখি হচ্ছে। কিন্তু সঙ্গেই সঙ্গেই গুরুতে বেরিয়েছিল দেখছি। পড়েওছিলাম তখন। কিন্তু শুধু হেরাল্ডের কথাই মনে আসছিল। এই লেখাটা সেরা।
  • অভিজিৎকুমারসেন | 103.144.173.226 | ০৯ এপ্রিল ২০২১ ২০:৫৬104567
  • আরও পড়তে চাই। এই লেখা হোয়াটসএপে শেয়ার কিভাবে হবে? 

  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন